সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বলিভিয়ার বিচ্ছিন্ন শহরগুলো সুসমাচার শুনতে পায়

বলিভিয়ার বিচ্ছিন্ন শহরগুলো সুসমাচার শুনতে পায়

বলিভিয়ার বিচ্ছিন্ন শহরগুলো সুসমাচার শুনতে পায়

 আমরা প্রায় ২০ জন, নদীর উৎসমুখে অবস্থিত গ্রামগুলো পরিদর্শন করার জন্য একদিনের যাত্রা করার আকুল অপেক্ষায় সমুদ্র সৈকতে জড়ো হয়েছিলাম। আমরা আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে আমাজন নদীর অববাহিকায় বিশাল সমতল ভূমিতে বেনি নদী এসে মিলেছে। এই জায়গাটা অপূর্ব সুন্দর।

তবে, আমরা কোনো পর্যটক নই। আমাদের মধ্যে কয়েক জন স্থানীয় অধিবাসী; আবার অনেকে দূরদূরান্তের বড় বড় শহর থেকে সুন্দর এক ছোট্ট শহর রুরেনাবাকিতে থাকতে এসেছিলাম, যেখানে ফুলগাছ, খড়ের তৈরি বাড়িগুলো রয়েছে আর যেখানকার রাস্তাগুলো মাঝেমধ্যে চলন্ত মোটরসাইকেল ট্যাক্সির আওয়াজ ছাড়া একেবারেই শান্ত। কেন আমরা এই যাত্রা করছি?

এখানে যা ঘটছে তা বলিভিয়ার আরও অন্যান্য জায়গায় যে-উন্নতি ঘটছে, সেটারই এক বৈশিষ্ট্য। বড় বড় শহর ও অন্যান্য দেশ থেকে আসা যিহোবার সাক্ষিরা এই ছোট শহরগুলোতে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার পৌঁছে দিচ্ছে।—মথি ২৪:১৪.

বলিভিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার কেন্দ্রে অবস্থিত। এই দেশের স্থলভাগ ফ্রান্সের চেয়ে দ্বিগুণ কিন্তু এর জনসংখ্যা ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগের চেয়ে একটু বেশি। বলিভিয়ার অধিবাসীদের অধিকাংশই বড় বড় শহরগুলোতে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচু খনি শহরগুলোতে কিংবা উপত্যকার কৃষি কেন্দ্রগুলোতে বসবাস করে। কিন্তু, নিম্ন ক্রান্তিয় অঞ্চলগুলো বিস্তৃত অরণ্যে ভরা, যার ফলে ছোট শহরগুলো ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে।

১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকে, বেটি জ্যাকসন, এলসি মায়িনবার্গ, পামেলা মোজলি ও শারলট টোমাশ্যাফস্কির মতো সাহসী মিশনারি অনেক বিচ্ছিন্ন শহরে প্রচার কাজকে পরিচালনা করেছিল। তারা সৎহৃদয়ের লোকেদের বাইবেলের সত্য শিখিয়েছিল এবং ছোট ছোট মণ্ডলী স্থাপন করতে সাহায্য করেছিল। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ এর দশকের মধ্যে প্রধানত ছোট ছোট শহরে যিহোবার সাক্ষিদের সংখ্যা ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখন শহরের প্রতিটা এলাকায় মণ্ডলী রয়েছে। এই মণ্ডলীগুলো আপনি সমৃদ্ধশীল জেলাগুলোতেও পাবেন, যেখানে লোকেরা বহুতলবিশিষ্ট অফিসগুলোতে কাজ করে, বিলাশবহুল বাসভবনে থাকে এবং সুপারমার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করে। কিন্তু, সেইসঙ্গে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতেও মণ্ডলী রয়েছে, যেখানে লোকেরা রোদে-পোড়ানো ইটের তৈরি ঘরগুলোতে বাস করে, হাটবাজারগুলোতে কেনাকাটা করে এবং রংচঙে আঞ্চলিক ধাঁচের জামাকাপড় পরে। তবে, বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলোতে বসবাসকারী আরও অনেক লোককে যিহোবার সম্বন্ধে জানার জন্য সাহায্য করতে কী করা যেতে পারে?

শহুরে জীবনের সুযোগসুবিধা ত্যাগ করা

গত দুই দশকের মধ্যে, বলিভিয়ার খনিবহুল শহর ও গ্রামগুলো থেকে বিরাট সংখ্যক লোক বড় বড় শহরে চলে গিয়েছে। লোকেরা যে উলটো দিকে—বড় বড় শহর থেকে গ্রামের দিকে—যাচ্ছে, এটা দেখা খুবই অদ্ভুত। অনেক গ্রামে কেবল একটা টেলিফোন রয়েছে এবং দিনে মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ থাকে। যে-সাক্ষিরা এই ছোট শহরগুলোতে বসবাস করে, তারা কেবল বার্ষিক সম্মেলনগুলোতেই তাদের সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে দেখা করতে পারে আর এই সম্মেলনগুলোর জন্য যাত্রা করা খুবই ব্যয়বহুল, বিপদজনক ও ক্লান্তিকর। গ্রামের স্কুলগুলো কেবল মৌলিক শিক্ষা প্রদান করে থাকে। তা হলে, কোন বিষয়টা বেশ কিছু সংখ্যক যিহোবার সাক্ষিকে বড় বড় শহর থেকে গ্রামগুলোতে চলে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে?

“লা পাজ শহরে একটা ভাল চাকরি করার সুযোগ আমার ছিল,” সম্প্রতি লুইস বলেছিলেন। “কিন্তু, সবসময় আমার বাবামা শিষ্য তৈরির কাজকে সবচেয়ে ভাল কেরিয়ার হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। তাই, আমি বাড়ি নির্মাণ কাজের ওপর একটা ছোট্ট কোর্স করেছিলাম। রুরেনাবাকিতে ছুটি কাটানোর সময় আমি লক্ষ করেছিলাম যে, সুসমাচার শোনার প্রতি লোকেদের খুবই আগ্রহ রয়েছে। আমি যখন দেখেছিলাম যে, মাত্র অল্প কয়েক জন ভাই সেখানে রয়েছে, তখন আমি অনুভব করেছিলাম যে, সেখানে গিয়ে আমার সাহায্য করতে হবে। এখন আমি ১২টা গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছি। উদাহরণ হিসেবে, আমি একজন অল্পবয়সী ব্যক্তি ও তার স্ত্রীর সঙ্গে অধ্যয়ন করছি, যাদের চারটে ছেলেমেয়ে রয়েছে। তিনি একসময় অনেক মদ খেতেন ও জুয়া খেলতেন কিন্তু তিনি সমস্তকিছু ছেড়ে দিয়েছেন এবং যিহোবার সম্বন্ধে তিনি যা শিখছেন তা তার বন্ধুবান্ধবদের বলতে শুরু করেছেন। তিনি সবসময় তার অধ্যয়নের পাঠটা আগে থেকে প্রস্তুত করে থাকেন। কাঠের গুঁড়ি সংগ্রহ করতে তাকে যখন তিন চার দিনের জন্য জঙ্গলে যেতে হয়, তখন তার খুব মন খারাপ করে কারণ তিনি অধ্যয়ন ও সভাগুলোতে আলোচিত বিষয়গুলো থেকে বঞ্চিত হতে চান না। আমি তাদের সকলকে যখন খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত হতে দেখি, তখন আমি অনুভব করি যে, এখানে আসার জন্য করা ত্যাগস্বীকারের মূল্য রয়েছে।”

হুয়ানা হলেন একজন একক মা। “আমি লা পাজে একজন গৃহ পরিচারিকার কাজ করতাম,” তিনি বলেন। “আমার ছেলে যখন ছোট, তখন আমি সেই শহরে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করেছিলাম। একবার রুরেনাবাকিতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, এখানে চলে এলে আমি আরও কত বেশিই না সম্পাদন করতে পারব। তাই, আমরা এখানে চলে এসেছিলাম এবং আমি পরিচারিকার কাজ পেয়েছিলাম। প্রথম প্রথম, গরম আবহাওয়া ও পোকামাকড় সহ্য করা বেশ কষ্টকর ছিল। তবে, সাত বছর ধরে আমরা এখানে আছি। আমি প্রতি সপ্তাহে অনেক বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করতে পারি এবং অনেক ছাত্র-ছাত্রী সভাগুলোতে এসে তাদের উপলব্ধি প্রকাশ করে।” হুয়ানা ও তার ছেলে সেই ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে, যারা নদীর উৎসমুখে যাওয়ার জন্য নৌকাতে চড়ছে। আপনাকেও সঙ্গে আসার জন্য স্বাগত জানানো হচ্ছে।

নদীর উৎসমুখে যাত্রা

নৌকাটা ছাড়ে আর আমরা পাহাড়ের মাঝখানের সরু ফাঁকের দিকে এগিয়ে যাই। এক ঝাঁক টিয়াপাখি কিচিরমিচির করতে শুরু করে, যেন আমাদের উপস্থিতিতে তারা আপত্তি জানাচ্ছে। পাহাড়গুলো থেকে আসা কাদামিশ্রিত জল আমাদের নৌকার চারপাশে যখনই প্রবল বেগে ঘূর্ণির আকার নিতে থাকে, তখন নৌকা চালক দক্ষতার সঙ্গে স্রোতের প্রতিকূলে নৌকা চালিয়ে নিয়ে যান। বেলার দিকে আমরা একটা ছোট্ট গ্রামে নামতে যাচ্ছিলাম। সেখানে আমরা রুরেনাবাকি মণ্ডলীর একজন অধ্যক্ষ বা প্রাচীনের সঙ্গে দেখা করি আর তিনিই দেখিয়ে দেন যে, কোথায় আমাদের প্রচার করতে হবে।

গ্রামবাসীরা আমাদেরকে গাছের ছায়ায় কিংবা বাঁশ দিয়ে তৈরি ও তাল পাতার ছাউনি দেওয়া ঘরের ভিতরে বসতে দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। শীঘ্রই এক অল্পবয়সি দম্পতির সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, যারা স্থানীয়ভাবে তৈরি কাঠের মেশিনে আখ থেকে রস বের করায় ব্যস্ত ছিল। আখের রস এক তামার পাত্রে পড়ে। পরে, তারা সেই রস ততক্ষণ পর্যন্ত ফুটাবে যতক্ষণ না সেটা গুড়ে পরিণত হয় আর এই গুড় তারা শহরে বিক্রি করবে। তারা আমাদেরকে তাদের বাড়িতে ডাকে এবং বাইবেল সম্বন্ধে বহু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে।

আমরা নদীর ওপর দিয়ে নৌকায় করে এগিয়ে যাই এবং গ্রামে গ্রামে প্রচার করি। অনেকে পীড়া বা রোগব্যাধি এবং মৃত্যুর শেষ সম্বন্ধে বাইবেলে যা বলা আছে, তা শুনে খুশি হয়। (যিশাইয় ২৫:৮; ৩৩:২৪) এই অঞ্চলগুলো যেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, সেখানে অধিকাংশ পরিবারের সন্তান হারানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। যে-কৃষক ও জেলেরা তাদের ব্যাবসা করে কোনোরকমে বেঁচে থাকে, তাদের জীবন খুবই কঠিন ও অনিশ্চিত। তাই এমন এক সরকার, যা দরিদ্রতা দূর করবে সেই বিষয়ে গীতসংহিতা ৭২ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাকে অনেকে খুবই আগ্রহজনক বলে মনে করে। তবুও, আপনার কি মনে হয় যে, এই ধরনের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলোতে বসবাসরত আগ্রহী ব্যক্তিরা খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার কোনো প্রচেষ্টা করবে? এই প্রশ্নটা এরিক ও ভিকিকে চিন্তিত করে, যারা পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে সান্টা রোজায় কাজ করে, যে-জায়গাটা আমাজন নদীর অববাহিকার দিকে গাড়ি করে আরও তিন ঘন্টার পথ।

আগ্রহী ব্যক্তিরা কি আসবে?

এরিক ও ভিকি ১২ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বলিভিয়ায় আসে। একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ তাদের সান্টা রোজাতে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। “সেই শহরে মাত্র দুটো টেলিফোন রয়েছে এবং ইন্টারনেটের কোনো যোগাযোগ নেই,” ভিকি বলেন। “অনেক বন্যপ্রাণী রয়েছে। আমরা যখন আমাদের মোটরসাইকেলে করে দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে যাই, তখন প্রায়ই আমরা কুমির, উটপাখি ও বড় বড় সাপ দেখি। তবে, জন্তুজানোয়ারের চেয়ে যা বেশি আকৃষ্ট করে তা হল লোকেরা। আমরা ভাকা নামে এক অল্পবয়সি দম্পতির সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করি, যাদের চারটে ছোট ছেলেমেয়ে রয়েছে। তারা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে থাকে। পরিবারের বাবা একসময় মাতাল ছিলেন কিন্তু এখন তিনি পরিবর্তিত হয়েছেন। প্রত্যেক সপ্তাহে তিনি তার পুরো পরিবার ও তার ছোট বোনকে কিংডম হলে নিয়ে আসেন। তিনি তার স্ত্রী ও ছোট বাচ্চাকে তার বড় সাইকেলের পিছনের ও সামনের ক্যারিয়ারে বসিয়ে নিয়ে আসেন। অন্য আরেকটা সাইকেলে নয় বছর বয়সি ছেলেটি তার ছোট বোনকে নিয়ে আসে এবং আট বছর বয়সি ছেলেটি নিজেই সাইকেল চালিয়ে আসে। সেখানে আসতে তাদের তিন ঘন্টা লাগে।” সেই পরিবার যিহোবাকে সত্যিই ভালবাসে এবং মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করতে তাদের যথাসাধ্য করে।

মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে, ৩ জন বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হয়ে ওঠে আর প্রায় ২৫ জন সান্টা রোজার নতুন কিংডম হলে আসে। যদিও অনেকে বাইবেল অধ্যয়ন করতে চায়, তবে অনেককে যিহোবাকে সেবা করার জন্য বড় বড় বাধা অতিক্রম করতে হবে।

বিবাহকে বৈধ করার প্রতিবন্ধকতা

বলিভিয়া ও ব্রাজিলের সীমান্তের কাছাকাছি এক বিচ্ছিন্ন শহরে মিশনারি হিসেবে কার্যরত মারিনা ও অসনি ব্যাখ্যা করে যে, এখানে অনেকে বিবাহকে এক স্থায়ী বন্ধন হিসেবে দেখে না। তারা তাদের সঙ্গী পালটাতে থাকে। “এটা এক সমস্যা, যা আধ্যাত্মিক উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করে,” অসনি বলেন। “লোকেরা যখন সত্য খ্রিস্টান হতে চায়, তখন তা এক জটিল ও ব্যয়বহুল পদ্ধতি। কয়েক জনকে পূর্বের সঙ্গীদের ত্যাগ করতে হয় আর তবেই তারা বৈধভাবে বিবাহ করতে পারে। তা সত্ত্বেও, উপযুক্তভাবে বিবাহ রেজিস্ট্রি করা হল এক শাস্ত্রীয় চাহিদা, তা উপলব্ধি করে কিছু ব্যক্তি এতে জড়িত খরচপত্রের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করেছে।”—রোমীয় ১৩:১, ২; ইব্রীয় ১৩:৪.

মারিনা, নরবারটো নামে একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতা বলেন। “তিনি পাঁউরুটি, বিস্কুট তৈরি করতেন এমন একজন মহিলার সঙ্গে বাস করার আগে বহু মহিলার সঙ্গে থেকেছিলেন। সেই মহিলা তার চেয়ে প্রায় ৩৫ বছরের ছোট ছিল এবং তার এক ছেলে ছিল, যাকে নরবারটো দত্তক নিয়েছিলেন। ছেলেটি যখন বড় হতে থাকে, নরবারটো তার সামনে এক ভাল উদাহরণ স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। তাই, একজন সাক্ষি যখন বেকারিতে আসেন ও বিনামূল্যে গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করার প্রস্তাব দেন, তখন নরবারটো তাতে রাজি হন, যদিও তিনি পড়তে জানতেন না এবং তার বয়স ইতিমধ্যেই ৭০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। নরবারটো ও তার সঙ্গী যখন যিহোবার শর্তগুলো সম্বন্ধে শিখেছিল, তখন তারা তাদের বিবাহকে বৈধ করেছিল এবং পরে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। সেই ছেলেটি এক দায়িত্ববান খ্রিস্টীয় যুবক হয়ে উঠেছে—তার সৎবাবা ঠিক যেমনটা ঘটবে বলে আশা করেছিলেন। নরবারটো পড়তে শিখেছেন এবং তিনি এমনকি মণ্ডলীর সভাগুলোতে বক্তৃতাও দিয়েছেন। বয়সের কারণে দুর্বল হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, তিনি সুসমাচারের একজন উদ্যোগী প্রচারক।”

যিহোবার আত্মা দ্বারা শক্তিশালী

যিশু তাঁর প্রাথমিক অনুসারীদের বলেছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা . . . পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।” (প্রেরিত ১:৮) এটা দেখা কতই না উৎসাহজনক যে, ঈশ্বরের আত্মা খ্রিস্টান নারী-পুরুষদের প্রান্ত বা দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে যেতে অনুপ্রাণিত করছে! উদাহরণস্বরূপ, ২০০৪ সালে প্রায় ৩০ জন উদ্যোগী খ্রিস্টান, বিশেষ অগ্রগামী পরিচারক হিসেবে বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোতে অস্থায়ী কার্যভার গ্রহণ করেছিল। তারা প্রায় ১৮০ জন বিদেশি ব্যক্তির উদাহরণকে উপলব্ধি করে, যারা অগ্রগামী, সীমা বা ভ্রমণ অধ্যক্ষ, বেথেল স্বেচ্ছাসেবক বা মিশনারি হিসেবে সেবা করার জন্য বলিভিয়াতে এসেছে। বলিভিয়ার ১৭,০০০ জন রাজ্য প্রকাশক আগ্রহী ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে প্রায় ২২,০০০টা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করে।

এই ভাইয়েরা এটা অনুভব করে প্রচুর আনন্দ পায় যে, তারা যিহোবার আত্মা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, রবার্ট ও ক্যাথি কামিরিতে মিশনারি হিসেবে সেবা করার কার্যভার গ্রহণ করেছিল। নদীর ধারে সবুজ শ্যামল ছোট ছোট পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত কামিরি সবসময়ই এক বিচ্ছিন্ন শহর। “মনে হয় যে, আমরা একেবারে সঠিক সময়ে এখানে এসেছি,” রবার্ট বলেন। “দুবছরের মধ্যে প্রায় ৪০ জন ব্যক্তি সুসমাচারের প্রকাশক হয়ে উঠেছে।”

একজন মাতাল জুয়াড়ি শোনেন

বাইবেল অধ্যয়ন করে এমন ব্যক্তিদের পরিবর্তনগুলো করতে দেখে শহরের অনেক লোক প্রভাবিত হয়। উদাহরণ হিসেবে, চার বছর আগে একদিন এরিয়েল নামে একজন মাতাল অনেক মদ খেয়ে বেহুস হয়ে পড়েন। জুয়াড়ি হিসেবে যদিও তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন কিন্তু তারপরও ঋণের বোঝা, সমস্যাপূর্ণ বিবাহ এবং অবহেলিত মেয়েদের দুশ্চিন্তা তাকে দিন দিন উদ্বিগ্ন করে তোলে। তার এই উদ্বিগ্নতা শেষ হয়, যখন একজন যিহোবার সাক্ষি ঘরে ঘরে প্রচার করতে এসে তার কাছে আসেন। সেই ভাই যখন শাস্ত্র ব্যাখ্যা করেন, তখন এরিয়েল খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনেন। শীঘ্রই এরিয়েল এক সুখী পারিবারিক জীবন, পরমদেশ ও ঈশ্বরের সেবা করার বিষয়ে পড়তে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন।

মিশনারিরা কামিরিতে এসে পৌঁছানোর মধ্যে এরিয়েলের স্ত্রী, আরমিন্ডাও অধ্যয়ন করছিলেন কিন্তু তিনি ততটা আগ্রহী ছিলেন না। “তার মদ খাওয়া বন্ধ করতে আমি সমস্তরকম চেষ্টা করব,” তিনি বলেছিলেন। “কিন্তু এতে আদৌ কোনো ভাল হবে কি না, সেই ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। তাকে নিয়ে কোনো আশাই নেই।” কিন্তু, তিনি যতটা আশা করেছিলেন, বাইবেল অধ্যয়নটি তার চেয়ে বেশি আগ্রহজনক ছিল। এক বছরের মধ্যে তিনি বাপ্তিস্ম নেন ও তার পরিবারের কাছে সাক্ষ্য দিতে শুরু করেন। খুব শীঘ্রই, তার বেশ কয়েক জন আত্মীয় যিহোবার কাছে তাদের জীবন উৎসর্গ করে।

তবে, এরিয়েলের জন্য মদ খাওয়া, ধূমপান করা ও জুয়া খেলা বন্ধ করা খুবই কঠিন ছিল। সন্ধিক্ষণটা তখনই আসে, যখন তিনি তার পরিচিতদের যিশুর মৃত্যুর স্মরণার্থ সভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তিনি স্থির করেন: “যারা আসবে না, আমি তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দেব। যারা আসবে, তাদের সঙ্গে আমি বাইবেল অধ্যয়ন করব।” এভাবে তিনি তিনটে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। এরিয়েল এমনকি মণ্ডলীর একজন সদস্য হওয়ার আগেই একজন আত্মীয়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেন, যে-আত্মীয় উন্নতি করেন এবং এরিয়েলের সঙ্গে একই দিনে বাপ্তিস্ম নেন। আরমিন্ডা বলেন: “মনে হয় যেন পূর্বের এরিয়েলের কোনো অস্তিত্বই নেই।”

রবার্ট রিপোর্ট করেন: “শেষবারের গণনা অনুযায়ী, এই পরিবারের ২৪ জন সদস্য নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছে। দশ জন বাপ্তিস্ম নিয়েছে এবং অন্য আট জন অবাপ্তাইজিত প্রকাশক। এ ছাড়া, যারা তাদের পরিবর্তিত আচারব্যবহার লক্ষ করেছে, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছে এবং মণ্ডলীর সভাগুলোতে আসছে। উপস্থিতির সংখ্যা বেড়ে ১০০ থেকে ১৯০ হয়েছে। ক্যাথি ও আমি ৩০টা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছি এবং তারা সকলেই সভাগুলোতে যোগ দেয়। এখানে এসে আমরা খুবই পরিতৃপ্ত।”

বলিভিয়ার বিচ্ছিন্ন শহরগুলোতে যা ঘটছে, তা পৃথিবীব্যাপী সংগ্রহের কাজের এক ছোট্ট অংশ মাত্র, যে-কাজ সম্বন্ধে প্রকাশিত বাক্য ৭ অধ্যায়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা আছে, যে-অধ্যায়টি “প্রভুর দিনে” সেই লোকেদের সংগ্রহ করার বিষয়ে বলে, যারা মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাবে। (প্রকাশিত বাক্য ১:১০; ৭:৯-১৪) মানব ইতিহাসে এর আগে কখনোই সমস্ত জাতি থেকে লক্ষ লক্ষ লোক, ঐক্যবদ্ধভাবে একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরের উপাসনা করেনি। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতা যে-সন্নিকট, তার কী এক চমৎকার প্রমাণ!

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

বেটি জ্যাকসন

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

এলসি মায়িনবার্গ

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

পামেলা মোজলি

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

শারলেট টোমাশ্যাফস্কি, একেবারে ডান দিকে

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রত্যেক সপ্তাহে ভাকা পরিবার তিন ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে কিংডম হলে আসে

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

এরিক ও ভিকি, যেখানে রাজ্য প্রকাশকদের বেশি প্রয়োজন, সেখানে সেবা করতে আসে

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

বেনি নদীর কাছাকাছি বসবাসরত গ্রামবাসীরা মনোযোগ দিয়ে সুসমাচার শোনে

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

রবার্ট ও ক্যাথি কামিরিতে মিশনারি হিসেবে সেবা করে