সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

 পৌল যখন বলেছিলেন যে, স্ত্রীলোকদের ‘মণ্ডলীতে নীরব থাকা’ উচিত, তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?

পৌল করিন্থের খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে লিখেছিলেন: “যেমন পবিত্রগণের সমস্ত মণ্ডলীতে হইয়া থাকে, স্ত্রীলোকেরা মণ্ডলীতে নীরব থাকুক, কেননা কথা কহিবার অনুমতি তাহাদিগকে দেওয়া যায় না।” (১ করিন্থীয় ১৪:৩৩, ৩৪) এই বিষয়টা আমাদের সঠিকভাবে বুঝতে হলে, পৌলের পরামর্শের প্রসঙ্গ বিবেচনা করা সাহায্যকারী।

১ করিন্থীয় ১৪ অধ্যায়ে, পৌল খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সভাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি এই ধরনের সভাগুলোতে কী নিয়ে আলোচনা করা উচিত, তা বর্ণনা করেছেন এবং কীভাবে তাদের আচরণ করা উচিত সেই বিষয়ে সুপারিশ করেছেন। (১ করিন্থীয় ১৪:১-৬, ২৬-৩৪) অধিকন্তু, তিনি খ্রিস্টীয় সভাগুলোর উদ্দেশ্য—“মণ্ডলীকে গাঁথিয়া তুলিবার”—সম্বন্ধেও জোর দিয়েছিলেন।—১ করিন্থীয় ১৪:৪, ৫, ১২, ২৬.

‘নীরব থাকিবার’ বিষয়ে পৌলের নির্দেশনা, ১ করিন্থীয় ১৪ অধ্যায়ে তিন বার এসেছে। প্রতিবার কথাগুলো মণ্ডলীর আলাদা আলাদা দলের উদ্দেশে বলা হয়েছে কিন্তু সমস্ত ক্ষেত্রে তা একই কারণের জন্য দেওয়া হয়েছে আর সেটা হল, যেন ‘সকলই শিষ্ট ও সুনিয়মিতরূপে করা হয়।’—১ করিন্থীয় ১৪:৪০.

প্রথমত, পৌল বলেছিলেন: “যদি কেহ বিশেষ ভাষায় কথা বলে, তবে দুই জন, কিম্বা অধিক হইলে তিন জন বলুক, পালানুক্রমেই বলুক, আর এক জন অর্থ বুঝাইয়া দিউক। কিন্তু অর্থকারক না থাকিলে সেই ব্যক্তি মণ্ডলীতে নীরব হইয়া থাকুক, কেবল আপনার ও ঈশ্বরের উদ্দেশে কথা বলুক।” (১ করিন্থীয় ১৪:২৭, ২৮) এর অর্থ এই ছিল না যে, সেই ব্যক্তি কখনোই সভাগুলোতে কথা বলতে পারত না বরং এমন কিছু সময় ছিল, যখন তাকে নীরব থাকতে হতো। বস্তুতপক্ষে, তিনি যদি এমন এক ভাষায় কথা বলতেন, যে-ভাষা কেউই বুঝতে পারে না, তা হলে সভার উদ্দেশ্য—পরস্পরকে গেঁথে তোলা—সম্পাদিত হতো না।

দ্বিতীয়ত, পৌল বলেছিলেন: “ভাববাদীরা দুই কিম্বা তিন জন করিয়া কথা বলুক, অন্য সকলে বিচার করুক। কিন্তু এমন আর কাহারও কাছে যদি কিছু প্রকাশিত হয়, যে বসিয়া রহিয়াছে, তবে প্রথম ব্যক্তি নীরব থাকুক।” এর অর্থ এই ছিল না যে, প্রথম ভাববাদীকে সভাগুলোতে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হতো বরং এর অর্থ ছিল কখনো কখনো তাকে চুপ থাকতে হতো। এরপর, যে-ব্যক্তির কাছে অলৌকিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, তিনি মণ্ডলীর উদ্দেশে কথা বলতে পারতেন আর এতে সভার উদ্দেশ্য—যেন “সকলেই আশ্বাসিত হয়”—সম্পাদিত হতো।—১ করিন্থীয় ১৪:২৬, ২৯-৩১.

তৃতীয়ত, পৌল শুধু খ্রিস্টান স্ত্রীলোকদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “স্ত্রীলোকেরা মণ্ডলীতে নীরব থাকুক, কেননা কথা কহিবার অনুমতি তাহাদিগকে দেওয়া যায় না, বরং . . . তাহারা বশীভূতা হইয়া থাকুক।” (১ করিন্থীয় ১৪:৩৪) কেন পৌল বোনদেরকে এই আদেশ দিয়েছিলেন? মণ্ডলীতে যেন শৃঙ্খলা বজায় থাকে। তিনি বলেন: “আর যদি তাহারা কিছু শিখিতে চায়, তবে নিজ স্বামীকে ঘরে জিজ্ঞাসা করুক, কারণ মণ্ডলীতে স্ত্রীলোকের কথা বলা লজ্জার বিষয়।”—১ করিন্থীয় ১৪:৩৫.

সম্ভবত কোনো কোনো বোন, মণ্ডলীতে যা বলা হতো, সেটা নিয়ে আপত্তি করত। পৌলের পরামর্শ বোনদেরকে এই ধরনের বিশৃঙ্খল মনোভাব এড়িয়ে চলতে এবং যিহোবার মস্তক ব্যবস্থার মধ্যে, বিশেষ করে তাদের স্বামীদের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান নম্রভাবে মেনে নিতে সাহায্য করেছিল। (১ করিন্থীয় ১১:৩) অধিকন্তু, নীরব থেকে বোনেরা দেখাত যে, তারা মণ্ডলীতে শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে না। পৌল যখন তীমথিয়কে লিখেছিলেন তখন তিনি দেখিয়েছিলেন যে, একজন স্ত্রীলোকের পক্ষে শিক্ষকের ভূমিকা গ্রহণ করা অনুপযুক্ত হবে: “আমি উপদেশ দিবার কিম্বা পুরুষের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবার অনুমতি নারীকে দিই না, কিন্তু মৌনভাবে থাকিতে বলি।”—১ তীমথিয় ২:১২.

এই কথার অর্থ কি এই যে, একজন খ্রিস্টান স্ত্রীলোক মণ্ডলীর সভাতে কখনো কথা বলতে পারবে না? না। পৌলের দিনে কখনো কখনো খ্রিস্টান স্ত্রীলোকেরা সম্ভবত পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মণ্ডলীতে প্রার্থনা করেছিল অথবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। এই সময়গুলোতে, তারা মাথায় কাপড় দিয়ে তাদের অবস্থানকে স্বীকার করত। * (১ করিন্থীয় ১১:৫) তা ছাড়া, পৌলের দিনে এবং আজকে ভাইদের সঙ্গে বোনদেরও তাদের প্রত্যাশার অঙ্গীকার ঘোষণা করার জন্য জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। (ইব্রীয় ১০:২৩-২৫) ক্ষেত্রের পরিচর্যায় তা করা ছাড়াও যখন আমন্ত্রণ জানানো হয়, তখন বোনেরা তাদের সুচিন্তিত মন্তব্য করে এবং নমুনায় ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত বক্তৃতায় অংশগ্রহণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করে মণ্ডলীর সভাগুলোতে তাদের আশা ঘোষণা করে এবং অন্যদের উৎসাহিত করে।

তাই, একজন পুরুষের ভূমিকা গ্রহণ করা এবং মণ্ডলীকে নির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করা থেকে বিরত হয়ে, খ্রিস্টান স্ত্রীলোকেরা ‘নীরব থাকে।’ উদাহরণস্বরূপ, তারা এমন বিতর্কমূলক প্রশ্ন উত্থাপন করে না, যা সেইসমস্ত ব্যক্তির কর্তৃত্ব নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে, যারা শিক্ষা দিয়ে থাকে। মণ্ডলীতে তাদের সঠিক ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে খ্রিস্টান বোনেরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক বিরাট অবদান রাখে, যেখানে ‘সকলই [মণ্ডলীর সভাগুলোতে] গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত হয়।’—১ করিন্থীয় ১৪:২৬, ৩৩.

[পাদটীকা]

^ আধুনিক সময়ে, পরিপক্ব বোনেরা সেই একই উদাহরণ অনুসরণ করে, যখন পরিস্থিতির কারণে তাদেরকে কোনো মণ্ডলীতে একজন বাপ্তাইজিত পুরুষের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে হয়।—২০০২ সালের ১৫ই জুলাই প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৬ পৃষ্ঠা দেখুন।