“বহুমূল্য রক্ত” দ্বারা উদ্ধার পাওয়া
“মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে”
“বহুমূল্য রক্ত” দ্বারা উদ্ধার পাওয়া
যিহোবার প্রেমের সবচেয়ে মহৎ কাজ ছিল তাঁর একজাত পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে তাঁর সিদ্ধ মানব জীবন উৎসর্গ করার জন্য পাঠানো। পাপী মানুষ হিসেবে, আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করার জন্য এই ধরনের মুক্তির মূল্য খুবই দরকার, কারণ কোনো অসিদ্ধ মানুষই “কোন মতে ভ্রাতাকে মুক্ত করিতে পারে না, কিম্বা তাহার প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বরকে কিছু দিতে পারে না, . . . যেন সে নিত্যজীবী হয়।” (গীতসংহিতা ৪৯:৬-৯) আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে, ঈশ্বর “আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।”—যোহন ৩:১৬.
মুক্তির মূল্য কীভাবে আমাদেরকে উদ্ধার করে? যিহোবা ঈশ্বরের প্রেমের এই মহৎ কাজের ফলে আমরা যে-চারটে ক্ষেত্রে স্বাধীনতা লাভ করি, আসুন আমরা সেগুলো বিবেচনা করি।
মুক্তির মূল্য দ্বারা মুক্তি পাওয়া
প্রথমত, যিশুর বলিদান আমাদেরকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ থেকে উদ্ধার করতে পারে। আমরা সকলেই পাপে জন্মগ্রহণ করেছি। হ্যাঁ, এমনকি যিহোবার আইন লঙ্ঘন করার আগেই, আমরা পাপী। কীভাবে? রোমীয় ৫:১২ পদ বলে: “এক মনুষ্য [আদম] দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল।” পাপী আদমের সন্তান হিসেবে, উত্তরাধিকারসূত্রে আমরা তার অসিদ্ধ অবস্থাগুলো ভোগ করছি। কিন্তু, মুক্তির মূল্য প্রদান, আমাদের জন্য উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভবপর করে। (রোমীয় ৫:১৬) আদমের বংশধরদের জন্য পাপের পরিণতিগুলো ভোগ করে যিশু ‘সকলের নিমিত্ত মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করিয়াছিলেন।’—ইব্রীয় ২:৯; ২ করিন্থীয় ৫:২১; ১ পিতর ২:২৪.
দ্বিতীয়ত, মুক্তির মূল্য আমাদেরকে পাপের মারাত্মক ফলাফল থেকে মুক্ত করতে পারে। “পাপের বেতন মৃত্যু।” (রোমীয় ৬:২৩) পাপের শাস্তি হল মৃত্যু। ঈশ্বরের পুত্র তাঁর বলিদানমূলক মৃত্যুর দ্বারা বাধ্য মানবজাতির জন্য অনন্তজীবন লাভ করা সম্ভবপর করেছেন। বস্তুত, “যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্ত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না।”—যোহন ৩:৩৬.
লক্ষ করুন যে, আমরা যদি ঈশ্বরের পুত্রে বিশ্বাস করি, একমাত্র তা হলেই পাপের প্রভাবগুলো থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি। এর অন্তর্ভুক্ত, আমাদের জীবনে পরিবর্তনগুলো আনা এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা। আমাদের অবশ্যই আমরা হয়তো অনুধাবন করে চলেছি এমন যেকোনো ভুল পথ পরিহার করতে হবে আর যা ঈশ্বরকে খুশি করে তা করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রেরিত পিতর বলেছিলেন যে, আমাদেরকে ‘মন ফিরাইতে ও ফিরিতে’ হবে ‘যেন আমাদের পাপ মুছিয়া ফেলা হয়।’—প্রেরিত ৩:১৯.
তৃতীয়ত, যিশু যে-বলি উৎসর্গ করেছিলেন, তা আমাদেরকে এক দোষী বিবেকের হাত থেকে মুক্ত করে। যিহোবার কাছে যারা নিজেদেরকে উৎসর্গ করে ও তাঁর পুত্রের বাপ্তাইজিত শিষ্য হয়, তারা সকলেই সান্ত্বনা লাভ করে। (মথি ১১:২৮-৩০) আমাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও, আমরা এক শুদ্ধ বিবেক নিয়ে ঈশ্বরকে সেবা করে অতিশয় আনন্দ খুঁজে পাই। (১ তীমথিয় ৩:৯; ১ পিতর ৩:২১) যখন আমরা আমাদের পাপ স্বীকার করে সেগুলো ত্যাগ করি, তখন আমরা করুণা পাই এবং বিবেকের দংশনের হাত থেকে স্বস্তি লাভ করি।—হিতোপদেশ ২৮:১৩.
সাহায্য ও আশা প্রদান করা
পরিশেষে, মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস করার দ্বারা আমরা ঈশ্বরের সম্মুখে আমাদের অবস্থানের বিষয়ে ভয় পাওয়া থেকে মুক্ত হই। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “যদি কেহ পাপ করে, তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি . . . যীশু খ্রীষ্ট।” (১ যোহন ২:১) এক সহায় হিসেবে যিশুর ভূমিকা সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যাহারা তাঁহা দিয়া ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পরিত্রাণ করিতে পারেন, কারণ তাহাদের নিমিত্ত অনুরোধ করণার্থে তিনি সতত জীবিত আছেন।” (ইব্রীয় ৭:২৫) যতদিন আমাদের মধ্যে পাপের যেকোনো প্রবণতা থাকে, ততদিন আমাদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে এক সঠিক অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করার জন্য আমাদের মহাযাজক যিশু খ্রিস্টের সেবার প্রয়োজন হবে। যিশু কীভাবে আমাদের জন্য একজন মহাযাজক হিসেবে কাজ করেছেন?
সাধারণ কাল ৩৩ সালে, তাঁর পুনরুত্থানের চল্লিশ দিন পর, যিশু স্বর্গারোহণ করেছিলেন, যেখানে তিনি ঈশ্বরের কাছে তাঁর ‘বহুমূল্য রক্তের’ মূল্য অর্পণ করেছিলেন। এর ফলে, যিশু শীঘ্রই বাধ্য মানবজাতিকে পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত করবেন। * (১ পিতর ১:১৮, ১৯) তাই, আপনি কি একমত নন যে, যিশু খ্রিস্ট আমাদের ভালবাসা ও বাধ্যতা লাভ করার যোগ্য?
সেইসঙ্গে যিহোবা ঈশ্বরও আমাদের ভালবাসা ও বাধ্যতা লাভ করার যোগ্য। তিনি প্রেমের সঙ্গে আমাদেরকে “মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে মুক্ত” করা সম্ভবপর করেছেন। (১ করিন্থীয় ১:৩০, NW) আমরা যে-জীবন নিয়ে এখন বেঁচে আছি শুধু সেটার জন্যই নয় কিন্তু অনন্তজীবন উপভোগ করার যে-প্রত্যাশা আমাদের রয়েছে, সেটার জন্যও আমরা তাঁর কাছে ঋণী। তাই, আমাদের ‘মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিবার’ উপযুক্ত কারণ রয়েছে।—প্রেরিত ৫:২৯.
[পাদটীকা]
^ যিহোবার সাক্ষিদের ২০০৬ সালের ক্যালেন্ডার (ইংরেজি), মার্চ/এপ্রিল দেখুন।
[৯ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
আপনি কি জানতেন?
• যিশু জৈতুন পর্বত থেকে স্বর্গারোহণ করেছিলেন।—প্রেরিত ১:৯, ১২.
• একমাত্র যিশুর বিশ্বস্ত প্রেরিতরাই তাঁর স্বর্গারোহণের সাক্ষি ছিল।—প্রেরিত ১:২, ১১-১৩.