সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিদেশি ভাষার এক মণ্ডলীতে সেবা করা

বিদেশি ভাষার এক মণ্ডলীতে সেবা করা

বিদেশি ভাষার এক মণ্ডলীতে সেবা করা

 “আমি আর এক দূতকে দেখিলাম,” প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, “তিনি আকাশের মধ্যপথে উড়িতেছেন, তাঁহার কাছে অনন্তকালীন সুসমাচার আছে, যেন তিনি পৃথিবী-নিবাসীদিগকে, প্রত্যক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও প্রজাবৃন্দকে, সুসমাচার জানান।” (প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬) এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শনের পরিপূর্ণতায়, ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন ভাষায় প্রচারিত হচ্ছে। এই সমস্ত ভাষার অনেকগুলোই সেই অভিবাসীরা বলে থাকে, যারা তাদের নিজের দেশ থেকে দূরে বসবাস করছে। এই ব্যক্তিরাও সেই সমস্ত যিহোবার উদ্যোগী সাক্ষির কাছ থেকে সুসমাচার শুনছে, যারা আরেকটা ভাষা শিখেছে।

আপনি কি সেই সাক্ষিদের মধ্যে রয়েছেন, যারা বিদেশি ভাষার এক মণ্ডলীতে সেবা করছে? অথবা আপনি কি সম্ভবত তা করার সম্বন্ধে চিন্তা করছেন? আপনার প্রচেষ্টায় সফল হতে হলে, আপনার এক নিঃস্বার্থ উদ্দেশ্য ও সঠিক মনোভাব থাকা দরকার। যেহেতু আপনার লক্ষ্য হল ঈশ্বরের বাক্য থেকে অন্যদের সত্য শিখতে সাহায্য করা, তাই আপনার এক উত্তম উদ্দেশ্য—ঈশ্বরের ও প্রতিবেশীর জন্য ভালবাসা—রয়েছে। (মথি ২২:৩৭-৩৯; ১ করিন্থীয় ১৩:১) অন্যদেরকে ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করার ইচ্ছা, শুধুমাত্র আরেকটা জাতি বা দলের লোকেদের সঙ্গে নিছক মেলামেশা, খাবারদাবার এবং সংস্কৃতি উপভোগ করার চেয়েও আরও জোরালো প্রেরণা জোগায়। অন্য ভাষা শেখার সম্ভাবনা কি আপনার কাছে কঠিন বলে মনে হচ্ছে? যদি তা-ই হয়, তা হলে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সাহায্যকারী হবে। “ভাষাটা যেন আপনার মধ্যে ভয় না জন্মায়,” জেমস বলেন, যিনি জাপানি ভাষা শিখেছেন। আপনার আগে অনেকেই সফল হয়েছে, একথা উপলব্ধি করা আপনাকে চেষ্টা করে চলতে এবং এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। তা হলে, কীভাবে আপনি একটা নতুন ভাষা শিখতে পারেন? সেই ভাষার একটা মণ্ডলীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে কী আপনাকে সাহায্য করবে? আর আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী থাকার জন্য আপনাকে অবশ্যই কী করতে হবে?

ভাষার সঙ্গে মোকাবিলা করা

একটা ভাষা শেখার অনেক উপায় রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শেখার ও শেখানোর পদ্ধতিতে ভিন্নতা রয়েছে। তবুও অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীর জন্য, একজন যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকার নেওয়া কয়েকটা ক্লাসে যোগদান করা শেখাকে দ্রুত ও সহজতর করে তোলে। বাইবেল ও বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলো আপনার নতুন ভাষায় পড়া এবং যেসমস্ত ক্যাসেট ও সিডি পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো শোনা শব্দজ্ঞান এবং ঈশতান্ত্রিক অভিব্যক্তিগুলো সম্বন্ধে আপনার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করবে। এ ছাড়া, রেডিও, টিভি এবং ভিডিও কার্যক্রমগুলোর উপযুক্ত বিষয়বস্তুও আপনাকে সেই ভাষা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে আনতে পারে। কতক্ষণ ধরে অধ্যয়ন করতে হবে, সেই বিষয়ে বলা যায় যে, কষ্ট করে দীর্ঘক্ষণ অনিয়মিতভাবে অধ্যয়ন করার চেয়ে বরং প্রতিদিন অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ অধ্যয়ন করা সাধারণত আরও বেশি কার্যকারী।

একটা ভাষা শেখা হল সাঁতার শেখার মতো। শুধুমাত্র একটা বই পড়ে আপনি সাঁতার শিখতে পারেন না। আপনাকে জলে নামতে হবে এবং হাতপা ঝাপটাতে হবে। একটা ভাষা শেখার ব্যাপারটাও একইরকম। শুধুমাত্র অধ্যয়ন করে তা শেখা কঠিন। যখনই পারেন লোকেদের সঙ্গে আপনার কথা বলতে হবে—তাদের কথা শুনুন, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করুন এবং যেকোনোভাবেই হোক কথা বলুন! খ্রিস্টীয় কাজকর্ম এর জন্য উপযুক্ত সুযোগ প্রদান করে। প্রায়ই, আপনি যা শেখেন সঙ্গে সঙ্গে তা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় প্রয়োগ করতে পারেন। “এটা করতে হয়তো একটু ভয় লাগতে পারে,” মিডোরি বলেন, যিনি চাইনিজ ভাষা শিখছেন, “কিন্তু গৃহকর্তারা বুঝতে পারবে যে, আমরা সাক্ষিরা কঠোর প্রচেষ্টা করছি। এটা তাদেরকে আমাদের কথা শুনতে পরিচালিত করতে পারে। আমরা যদি তাদের ভাষায় শুধু এটা বলি যে, ‘নমস্কার, আমার নাম . . . আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই’ আর তাতেই তাদের চোখেমুখে যেন আনন্দ ফুটে ওঠে!”

খ্রিস্টীয় সভাগুলোও অনেক সাহায্যকারী। প্রতিটা সভায়, অন্তত একটা মন্তব্য করার চেষ্টা করুন। প্রথম প্রথম তা করতে যতই ভয় লাগুক না কেন, চিন্তা করবেন না। মণ্ডলী চায় আপনি যেন সফল হোন! মনিফা, যিনি কোরিয়ান ভাষা শিখছেন, তিনি বলেন: “আমি সেই বোনের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ, যিনি সভার সময় আমার পাশে বসেন এবং নির্দিষ্ট কিছু শব্দের অর্থ আমাকে লিখে দেন। যে-আন্তরিকতা ও ধৈর্যের সঙ্গে তিনি আমাকে সাহায্য করেন, তা সত্যিই আমার উপকার করে।” আপনার শব্দজ্ঞান যতই বৃদ্ধি পায়, ততই আপনি নতুন ভাষায় চিন্তা করা শুরু করতে পারেন—মনে মনে প্রতিটা শব্দ অনুবাদ করার চেয়ে বরং সেই শব্দগুলো যা চিত্রিত করে, সেইভাবে সেগুলোকে সরাসরি প্রকাশ করতে পারেন।

ভাষা সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত ‘যাহা সহজে বুঝা যায়, এমন কথা বলা।’ (১ করিন্থীয় ১৪:৮-১১) যদিও লোকেরা হয়তো আপনার প্রচেষ্টার প্রতি সহানুভূতি দেখাতে পারে কিন্তু ভুল শব্দ অথবা ভিন্ন উচ্চারণভঙ্গি হয়তো তাদেরকে আপনার বার্তা শোনা থেকে বিক্ষিপ্ত করতে পারে। একেবারে শুরু থেকেই সঠিক উচ্চারণ ও ব্যাকরণের প্রতি মনোযোগ দেওয়া আপনাকে সেই খারাপ অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে বাধা দেবে, যেগুলো পরিত্যাগ করা কঠিন হয়। মার্ক, যিনি সোয়াহিলি ভাষা শিখেছেন, তিনি পরামর্শ দেন: “যারা সঠিকভাবে সেই ভাষায় কথা বলে তাদেরকে আপনার উচ্চারণের গুরুতর ভুলগুলোকে শুধরে দেওয়ার জন্য বলুন এবং তা করার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানান!” অবশ্য, এইভাবে যারা আপনাকে সাহায্য করে তাদের সময় ও শক্তির প্রতি বিবেচনা দেখান। যদিও আপনি হয়তো কাউকে আপনার বক্তৃতা এবং মন্তব্যগুলো পরীক্ষা করে দেখার জন্য বলতে পারেন কিন্তু যে-শব্দগুলো আপনি ইতিধ্যেই জানেন অথবা দেখেছেন সেগুলো ব্যবহার করে আপনার বক্তৃতা এবং মন্তব্যগুলো প্রস্তুত করার চেষ্টা করুন। এটা আপনার শেখার গতিকে বৃদ্ধি করে এবং আপনাকে আস্থার সঙ্গে কথা বলতে সাহায্য করে।

উন্নতি করে চলুন

“অন্য ভাষা শেখা হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন কাজ, যেধরনের কাজ আমি আগে কখনো করিনি,” মনিফা বলেন। “মাঝে মাঝে আমার তা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি মনে করি যে, বাইবেল ছাত্র-ছাত্রীরা আমার বলা সহজ-সরল কোরিয়ান ভাষায় গভীর আধ্যাত্মিক সত্যগুলো শুনতে কত ভালবাসে এবং আমি যখন উন্নতি করি এমনকি সামান্য হলেও, ভাইবোনেরা কত আনন্দ প্রকাশ করে।” বিষয়টা হল যে, অল্পতেই হাল ছেড়ে দেবেন না। আপনার লক্ষ্য হল, অন্যদেরকে জীবনরক্ষাকারী শাস্ত্রীয় সত্যগুলো শেখাতে সক্ষম হওয়া। (১ করিন্থীয় ২:১০) তাই, অন্য ভাষায় বাইবেল শিক্ষা দেওয়া শেখার জন্য মনোযোগপূর্ণ, দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা দরকার। উন্নতি করার সময়, নিজেকে অন্যদের সঙ্গে নেতিবাচকভাবে তুলনা করার দ্বারা আপনার উন্নতিকে পরিমাপ করা এড়িয়ে চলুন। যারা নতুন ভাষা শিখছে তাদের উন্নতি করার গতি ও উপায় আলাদা। তবে, আপনার নিজের উন্নতি সম্বন্ধে অবগত থাকা উপকারজনক। (গালাতীয় ৬:৪) “একটা ভাষা শেখা হল সিঁড়ি দিয়ে হাঁটার মতো,” যুন বলেন, যিনি চাইনিজ ভাষা শিখছেন। “ঠিক যখন আপনার মনে হয় যে, আপনি কোনো উন্নতিই করছেন না, তখনই হঠাৎ আপনি উপলব্ধি করেন যে, আপনি এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন।”

একটা নতুন ভাষা শেখার কোনো শেষ নেই। তাই, নতুন ভাষা শেখা উপভোগ করুন এবং নিখুঁততা আশা করবেন না। (গীতসংহিতা ১০০:২) ভুল হবেই। এগুলো শিক্ষা প্রক্রিয়ার অংশ। একজন খ্রিস্টান ইতালীয় ভাষায় প্রচার শুরু করার সময়, এক গৃহকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আপনি কি জানেন জীবনের ঝাড়ু কী?” তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, “জীবনের উদ্দেশ্য।” একজন খ্রিস্টান যিনি পোলিশ ভাষা শিখছেন, তিনি মণ্ডলীকে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে কুকুরকে গাইতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আর চাইনিজ ভাষা শিখছেন এমন একজন ব্যক্তি তার গলার স্বরে সামান্য তারতম্যের ফলে, শ্রোতাদের যিশুর মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস রাখার পরিবর্তে যিশুর বইয়ের তাকে বিশ্বাস রাখার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই সমস্ত ভুলের উপকারজনক দিকটা হচ্ছে, যে-সঠিক শব্দগুলো আপনি শেখেন, সেগুলো সম্ভবত আর কখনোই ভুলবেন না।

মণ্ডলীর সঙ্গে কাজ করা

ভাষার ভিন্নতাই কেবল লোকেদের বিভক্ত করে না। সাংস্কৃতিক, বর্ণগত এবং জাতিগত পার্থক্য প্রায়ই মানবজাতিকে আরও বেশি করে বিভক্ত করে। তবে এই প্রতিবন্ধকগুলো অতিক্রম করা যায়। একজন পণ্ডিত ব্যক্তি, যিনি ইউরোপে চাইনিজ ভাষার বিভিন্ন ধর্মীয় দল সম্বন্ধে গবেষণা করছেন তিনি বলেছিলেন যে, যিহোবার সাক্ষিরা হল, “জাতি বা রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে।” তিনি লক্ষ করেছিলেন যে, সাক্ষিদের মাঝে, “জাতীয়তা কোনো মুখ্য বিষয়ই নয় আর ভাষা কেবল ঈশ্বরের বাক্য বোঝার একটা মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই নয়।” বস্তুত, বাইবেলের নীতিগুলো পালন করাই সত্য খ্রিস্টানদের জাতিগত পার্থক্য কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। যারা ‘নূতন মনুষ্য’ বা ব্যক্তিত্বকে পরিধান করে, তাদের কাছে ‘গ্রীক কি যিহূদী কি বর্ব্বর [“বিদেশী,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] বলিয়া কিছু নাই।’—কলসীয় ৩:১০, ১১.

তাই একতা বৃদ্ধির জন্য মণ্ডলীর সকলের কাজ করা উচিত। এর জন্য একজনের নতুন চিন্তাধারা, ভাবপ্রবণতাকে গ্রহণ করতে এবং নতুনভাবে বিষয়গুলো করতে ইচ্ছুক থাকা দরকার। ব্যক্তিগত পছন্দের প্রতি অত্যধিক মনোযোগ না দিয়ে আপনি জাতিগত পার্থক্যকে দলাদলি সৃষ্টির কারণ হওয়া থেকে রোধ করতে পারেন। (১ করিন্থীয় ১:১০; ৯:১৯-২৩) সমস্ত সংস্কৃতির সবচেয়ে ভাল দিকগুলো উপভোগ করতে শিখুন। মনে রাখবেন, নিঃস্বার্থ প্রেম হল উত্তম সম্পর্ক ও প্রকৃত একতার চাবিকাঠি।

অধিকাংশ বিদেশি ভাষার মণ্ডলীই ছোট ছোট দল হিসেবে শুরু হয়, প্রায়ই নতুন ভাষা শিখছে এমন ব্যক্তিদের ও সেইসঙ্গে অতি সম্প্রতি বাইবেলের নীতিগুলো শিখতে শুরু করেছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে ওঠে। এর ফলে, প্রতিষ্ঠিত কোনো বড় মণ্ডলীর চেয়ে এই ধরনের ছোট ছোট দলে সম্ভবত ভুল বোঝাবুঝি বেশি হয়ে থাকে। তাই পরিপক্ব খ্রিস্টানদের, মণ্ডলীকে সুস্থিরভাবে টিকিয়ে রাখার মতো প্রভাব ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। কথা ও কাজের দ্বারা প্রেম ও দয়া দেখানো, এমন এক গঠনমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে, যেখানে নতুন ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।

যারা বিদেশি ভাষার কোনো মণ্ডলীকে সাহায্য করার জন্য স্বেচ্ছায় নিজেদের বিলিয়ে দেয়, তাদেরকে অন্যদের কাছ থেকে কিছু আশা করার ব্যাপারে অবশ্যই ভারসাম্যপূর্ণও হতে হবে। এইরকম একটা মণ্ডলীর একজন প্রাচীন রিক ব্যাখ্যা করেন: “কিছু নতুন সাক্ষি হয়তো, স্থানীয় ভাষার সুপ্রতিষ্ঠিত মণ্ডলীগুলোতে যারা বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে ভালভাবে প্রশিক্ষিত হয়েছে তাদের মতো প্রশিক্ষিত নয়। কিন্তু যে-কাজগুলো করার সক্ষমতা তাদের নেই, সেগুলো তাদের প্রেম ও উদ্যমের দ্বারা পূরণ হয়ে যায়। আর অনেক আগ্রহী ব্যক্তি সত্যে আসছে।” নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে ও মণ্ডলীর কাজকর্মে উপস্থিত হয়ে এবং যেভাবে পারেন সেইভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে, আপনি সত্যিই মণ্ডলীকে উপকৃত করবেন, এমনকি যদিও এখনও আপনি ভাষা শিখছেন। একসঙ্গে কাজ করে, সকলেই মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।

আধ্যাত্মিক দৃঢ়তা বজায় রাখা

একজন ভাই যিনি বিদেশি ভাষার একটা মণ্ডলীতে তুলনামূলকভাবে নতুন ছিলেন, তিনি শুনেছিলেন যে, একজন মা তার বাচ্চাকে একটা উত্তর প্রস্তুত করতে সাহায্য করছেন। “কিন্তু মা, আমার উত্তরটা কি আরও ছোট করা যায় না?” বাচ্চাটি অনুরোধ করছিল। “না, সোনা,” মা উত্তর দিয়েছিলেন। “ছোট উত্তরগুলো আমাদের তাদের জন্য রাখতে হবে, যারা ভাষা শিখছে।”

একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য, কয়েক মাস অথবা এমনকি কয়েক বছর ধরে সাবলীলভাবে ভাববিনিময় করতে না পারা, তাদেরকে মানসিকভাবে, আবেগগতভাবে এবং আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল করে দিতে পারে। “আমার নিজের সীমাবদ্ধতাগুলোর দরুন আমি সহজেই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম,” জেনেট স্মরণ করে বলেন, যিনি এখন সাবলীলভাবে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেন। হিরোকো, যিনি ইংরেজি ভাষা শিখেছিলেন, তিনি তার সেই উদ্বিগ্নতার কথা স্মরণ করেন: ‘এমনকি এলাকার কুকুর-বিড়ালগুলো আমার চেয়ে ভাল ইংরেজি বোঝে।’ আর ক্যাথি বলেন: “আমি যখন একটা স্প্যানিশ ভাষার মণ্ডলীতে চলে এসেছিলাম, তখন আমি বেশ কিছু বাইবেল অধ্যয়ন এবং অনেক পুনর্সাক্ষাৎ থাকা এক মণ্ডলী থেকে এমন একটা মণ্ডলীতে চলে এসেছিলাম, যেখানে আমার কোনোকিছুই ছিল না। আমার মনে হয়েছিল যে, আমি কিছুই করছিলাম না।”

এখানেই ইতিবাচক মনোভাব থাকা অত্যাবশ্যক। হিরোকো যখন নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তেন, তখন তিনি যুক্তি দেখাতেন: “অন্যেরা যদি করতে পারে, তা হলে আমিও পারব।” ক্যাথি বলেন: “আমি আমার স্বামীর কথা চিন্তা করতাম, যিনি এত ভাল উন্নতি করছেন এবং মণ্ডলীর জন্য অনেক করছেন। সেটাই আমাকে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। এখনও অনেক কিছু শেখার আছে কিন্তু ধীরে ধীরে আমি প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার দক্ষতা অর্জন করছি আর সেটা আমাকে আনন্দিত করে।” তার স্বামী জেফ আরও বলেন: “ঘোষণাবলিতে এবং প্রাচীনদের সভাগুলোতে যা যা বলা হয়, তার প্রতিটা বুঝতে না পারা হতাশাজনক হতে পারে। আমাকে বিস্তারিত বিষয়গুলো জানার জন্য সৎ ও নম্র হয়ে জিজ্ঞেস করতে হয়, তবে ভাইয়েরা সাহায্য করে আনন্দ পায়।”

বিদেশি ভাষার একটা মণ্ডলীতে কাজ করার সময় আধ্যাত্মিক ক্লান্তি এড়াতে, আপনাকে অবশ্যই আপনার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে। (মথি ৫:৩) কাজুউকি, যিনি অনেক বছর ধরে পর্তুগিজ ক্ষেত্রে সেবা করেছেন, তিনি বলেন: “এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা যেন পর্যাপ্ত আধ্যাত্মিক পুষ্টি পাই। সেই কারণে পরিবারগতভাবে আমরা আমাদের নিজের ভাষায় ও সেইসঙ্গে পর্তুগিজ ভাষায় অধ্যয়ন করি ও সভাগুলোর জন্য প্রস্তুত হই।” কেউ কেউ মাঝে মাঝে তাদের নিজের ভাষার সভাগুলোতে যোগদান করে। এ ছাড়া, যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়াও অত্যাবশ্যক।—মার্ক ৬:৩১.

মূল্য হিসেব করা

আপনি যদি এমন একটা মণ্ডলীতে চলে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছেন যেখানে অন্য ভাষা বলা হয়, তা হলে তা করার জন্য আপনাকে অবশ্যই মূল্য হিসেব করতে হবে। (লূক ১৪:২৮) এই বিষয়ে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-ক্ষেত্রগুলো আপনাকে বিবেচনা করতে হবে সেগুলো হল, আপনার আধ্যাত্মিকতা এবং যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক। আপনার পরিস্থিতি সম্বন্ধে প্রার্থনা করুন। আপনার সাথি ও সন্তানদের কথা মাথায় রাখুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘এইরকম দীর্ঘমেয়াদী এক প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য আমার কি সেই পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয় আধ্যাত্মিক ও আবেগগত শক্তি রয়েছে?’ আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য আধ্যাত্মিকভাবে যা সর্বোত্তম, তা করাই হল বিজ্ঞের কাজ। একজন রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে আপনি যেখানেই সেবা করুন না কেন, অনেক কাজ করার আছে এবং তাতে অনেক আনন্দ পাওয়া যাবে।

যারা বিদেশি ভাষার একটা মণ্ডলীতে সেবা করতে পারে, তাদের পুরস্কার প্রচুর। “এটা হল আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের এক অভিজ্ঞতা,” বারবারা বলেন, যিনি তার স্বামীর সঙ্গে স্প্যানিশ ভাষার এক মণ্ডলীতে চলে এসেছিলেন। “এটা যেন পুনরায় সত্যে আসার মতো। এই সুযোগের জন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ, বিশেষ করে যেহেতু আমরা অন্য দেশে গিয়ে মিশনারি হতে পারব না।”

সারা পৃথিবীতে, সুসমাচারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার সাধারণ লোক অন্য ভাষা শেখার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে গ্রহণ করছে। আপনি যদি তাদের মধ্যে থাকেন, তা হলে আপনার উদ্দেশ্যকে নিঃস্বার্থ ও আপনার মনোভাবকে ইতিবাচক রাখুন। সর্বোপরি, আপনার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করার জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করুন।—২ করিন্থীয় ৪:৭.

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকার দ্বারা শেখানো ভাষার ক্লাসগুলোতে যোগদান করা শেখাকে দ্রুত ও সহজতর করে

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

একটা বিদেশি ভাষা শেখার সময় আপনার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যকে বিপদে ফেলা উচিত নয়