সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মিথ্যা উপাসনা থেকে দূরে থাকুন!

মিথ্যা উপাসনা থেকে দূরে থাকুন!

মিথ্যা উপাসনা থেকে দূরে থাকুন!

“তোমরা তাহাদের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আইস, ও পৃথক্‌ হও, ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] কহিতেছেন, এবং অশুচি বস্তু স্পর্শ করিও না।”—২ করিন্থীয় ৬:১৭.

১. অনেক আন্তরিক ব্যক্তি কোন আধ্যাত্মিক অবস্থার মধ্যে রয়েছে?

 অনেক আন্তরিক ব্যক্তি ঈশ্বর সম্বন্ধে এবং মানবজাতির ভবিষ্যতের বিষয়ে সত্য কী, তা জানে না। তারা যে-গভীর আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে, সেগুলোর উত্তর না পাওয়ায় তারা দ্বিধাদ্বন্দ্ব এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করে। লক্ষ লক্ষ লোক সেই কুসংস্কার, ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠান এবং উদ্‌যাপনগুলোর দাসত্বে রয়েছে, যেগুলো আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে অসন্তুষ্ট করে। সম্ভবত আপনারও এমন প্রতিবেশী এবং আত্মীয়স্বজন রয়েছে, যারা নরকাগ্নি, ত্রিত্ব ঈশ্বর, আত্মার অমরত্ব অথবা অন্যান্য মিথ্যা শিক্ষায় বিশ্বাস করে।

২. ধর্মীয় নেতারা কী করেছে এবং এর ফল কী হয়েছে?

এই ব্যাপক আধ্যাত্মিক অন্ধকারের জন্য কোন বিষয়টা দায়ী? আশ্চর্যের বিষয় যে, এটা হল ধর্ম—নির্দিষ্টভাবে সেইসমস্ত ধর্মীয় সংগঠন এবং নেতারা, যারা ঈশ্বরের চিন্তার বিপরীত ধারণাগুলো শিক্ষা দিয়েছে। (মার্ক ৭:৭, ৮) এর ফলে, অনেক লোক এটা বিশ্বাস করতে পরিচালিত হয়েছে যে, তারা সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করে, যদিও আসলে তারা তাঁকে অসন্তুষ্ট করে থাকে। এই দুঃখজনক পরিস্থিতির জন্য মিথ্যা ধর্মই সরাসরি দায়ী।

৩. মিথ্যা ধর্মের প্রধান উদ্যোক্তা কে এবং তার সম্বন্ধে বাইবেলে কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে?

মিথ্যা ধর্মের পিছনে এক অদৃশ্য সত্তা রয়েছে। তার সম্বন্ধে উল্লেখ করে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “এই যুগের দেব অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে, যেন ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি যে খ্রীষ্ট, তাঁহার গৌরবের সুসমাচার-দীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয়।” (২ করিন্থীয় ৪:৪) “এই যুগের দেব” শয়তান দিয়াবল ছাড়া আর কেউই নয়। সে-ই হল মিথ্যা উপাসনার প্রধান উদ্যোক্তা। “শয়তান আপনি দীপ্তিময় দূতের বেশ ধারণ করে,” পৌল লিখেছিলেন। “সুতরাং তাহার পরিচারকেরাও যে ধার্ম্মিকতার পরিচারকদের বেশ ধারণ করে, ইহা মহৎ বিষয় নয়; তাহাদের পরিণাম তাহাদের ক্রিয়ানুসারে হইবে।” (২ করিন্থীয় ১১:১৪, ১৫) শয়তান মন্দ বিষয়গুলোকে ভাল বলে তুলে ধরে এবং লোকেদেরকে মিথ্যা বিষয়গুলো বিশ্বাস করানোর মাধ্যমে প্রতারিত করে।

৪. প্রাচীন ইস্রায়েলকে দেওয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থায় মিথ্যা ভাববাবীদের সম্বন্ধে কী বলা হয়েছিল?

তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে কেন বাইবেল জোরালোভাবে মিথ্যা ধর্মকে নিন্দা করে! উদাহরণস্বরূপ, মোশির ব্যবস্থা নির্দিষ্টভাবে ঈশ্বরের মনোনীত লোকদেরকে মিথ্যা ভাববাদীদের সম্বন্ধে সতর্ক করে দিয়েছিল। যেকেউ অসত্য শিক্ষাগুলো এবং মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা তুলে ধরবে, তাকে ‘প্রাণদণ্ড করিতে হইবে; কেননা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে সে বিপথগমনের কথা কহিয়াছে।’ ইস্রায়েলীয়দের আদেশ দেওয়া হয়েছিল তারা যেন “আপনার মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ” করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৩:১-৫) হ্যাঁ, মিথ্যা ধর্মকে যিহোবা দুষ্টাচার হিসেবে দেখেন।—যিহিষ্কেল ১৩:৩.

৫. আজকে আমাদের কোন সতর্কবাণীগুলোতে মনোযোগ দেওয়া উচিত?

যিশু খ্রিস্ট এবং তাঁর প্রেরিতরা মিথ্যা ধর্ম সম্বন্ধে যিহোবার তীব্র অনুভূতি প্রতিফলিত করেছিল। যিশু তাঁর শিষ্যদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “ভাক্ত ভাববাদিগণ হইতে সাবধান; তাহারা মেষের বেশে তোমাদের নিকটে আইসে, কিন্তু অন্তরে গ্রাসকারী কেন্দুয়া।” (মথি ৭:১৫; মার্ক ১৩:২২, ২৩) পৌল লিখেছিলেন যে, “ঈশ্বরের ক্রোধ স্বর্গ হইতে সেই মনুষ্যদের সমস্ত ভক্তিহীনতা ও অধার্ম্মিকতার উপরে প্রকাশিত হইতেছে, যাহারা অধার্ম্মিকতায় সত্যের প্রতিরোধ করে।” (রোমীয় ১:১৮) সত্য খ্রিস্টানদের এই সতর্কবাণীগুলোতে মনোযোগ দেওয়া এবং ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের প্রতিরোধ করে অথবা মিথ্যা শিক্ষাগুলো ছড়িয়ে দেয় এমন যেকারো কাছ থেকে দূরে থাকা কত গুরুত্বপূর্ণ!—১ যোহন ৪:১.

“মহতী বাবিল” থেকে পলায়ন করুন

৬. বাইবেলে ‘মহতী বাবিলকে’ কীভাবে চিত্রিত করা হয়েছে?

বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বই কীভাবে মিথ্যা ধর্মকে বর্ণনা করেছে, তা বিবেচনা করুন। এটাকে এক মত্তা বেশ্যা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যার অনেক রাজ্য এবং এর লোকেদের ওপর ক্ষমতা রয়েছে। এই রূপক নারী অনেক রাজার সঙ্গে ব্যভিচার করে এবং ঈশ্বরের সত্য উপাসকদের রক্তে মত্তা। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১, ২, ৬, ১৮) তার কপালে একটা নাম লেখা রয়েছে, যা তার নোংরা ও ঘৃণ্য আচরণের সঙ্গে মানানসই। সেই নাম হল “মহতী বাবিল, পৃথিবীর বেশ্যাগণের ও ঘৃণাস্পদ সকলের জননী।”—প্রকাশিত বাক্য ১৭:৫.

৭, ৮. কীভাবে মিথ্যা ধর্ম নিজেকে বেশ্যায় পরিণত করেছে এবং এর ফল কী হয়েছে?

মহতী বাবিলের শাস্ত্রীয় বর্ণনা জগতের মিথ্যা ধর্মের সমষ্টিগত দলকে উপযুক্তভাবে নির্দেশ করে। যদিও হাজার হাজার ধর্ম আনুষ্ঠানিকভাবে একটা বিশ্ব সংগঠন হিসেবে ঐক্যবদ্ধ নয় কিন্তু উদ্দেশ্য এবং কাজের ক্ষেত্রে তারা অবিচ্ছেদ্যভাবে এক। প্রকাশিত বাক্যে দুশ্চরিত্রা নারী হিসেবে চিত্রিত মিথ্যা ধর্মের, সরকারগুলোর ওপর অসাধারণ প্রভাব রয়েছে। বিয়ের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বস্ত নয় এমন একজন নারীর মতো মিথ্যা ধর্ম একটার পর একটা রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিজেকে বেশ্যায় পরিণত করেছে। “হে ব্যভিচারিণীগণ, তোমরা কি জান না যে, জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা?” শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন। “সুতরাং যে কেহ জগতের মিত্র হইতে বাসনা করে, সে আপনাকে ঈশ্বরের শত্রু করিয়া তুলে।”—যাকোব ৪:৪.

সরকারগুলোর সঙ্গে মিথ্যা ধর্মের মিশ্রণ মানুষের জন্য অনেক দুঃখকষ্ট নিয়ে এসেছে। আফ্রিকার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ওনেনা মানগু মন্তব্য করেছিলেন যে, “ধর্ম এবং রাজনীতির মিশ্রণের কারণে বিশ্ব ইতিহাসে ব্যাপক হত্যার উদাহরণ রয়েছে।” সম্প্রতি একটা সংবাদপত্রে বলা হয়েছে: ‘আজকে ধর্মকে কেন্দ্র করেই সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ও সবচেয়ে বিপদজনক তর্কবিতর্কগুলো হচ্ছে।’ ধর্ম সমর্থিত দ্বন্দ্বে লক্ষ লক্ষ লোক নিহত হয়েছে। মহতী বাবিল ঈশ্বরের সত্য উপাসকদের তাড়না করেছে এবং হত্যা করেছে, রূপকভাবে বলতে গেলে তাদের রক্তে মত্তা হয়েছে।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:২৪.

৯. প্রকাশিত বাক্য বইয়ে মিথ্যা উপাসনার প্রতি যিহোবার ঘৃণা কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে?

যিহোবা যে মিথ্যা উপাসনাকে ঘৃণা করেন, তা মহতী বাবিলের প্রতি যা ঘটবে, সেটা থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬ পদ বলে: “তুমি যে ঐ দশ শৃঙ্গ এবং পশুটা দেখিলে তাহারা সেই বেশ্যাকে ঘৃণা করিবে, এবং তাহাকে অনাথা ও নগ্না করিবে, তাহার মাংস ভক্ষণ করিবে, এবং তাহাকে আগুনে পোড়াইয়া দিবে।” প্রথমে, এক প্রকাণ্ড পশু তাকে ছিন্নভিন্ন করে হত্যা করে এবং তার মাংস ভক্ষণ করে। এরপর, তার বাকি অংশ সম্পূর্ণরূপে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে, শীঘ্রই জগতের সরকারগুলো মিথ্যা ধর্মের বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপ নেবে। আর তা নেওয়ার জন্য ঈশ্বর তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৭) মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য মহতী বাবিলের ধ্বংস অনিবার্য। “আর কখনও তাহার উদ্দেশ পাওয়া যাইবে না।”—প্রকাশিত বাক্য ১৮:২১.

১০. মিথ্যা ধর্মের বিষয়ে আমাদের অবস্থান কী হওয়া উচিত?

১০ মহতী বাবিলের বিষয়ে সত্য উপাসকদের কোন অবস্থান গ্রহণ করা উচিত? অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বাইবেল আদেশ দেয়: “হে আমার প্রজাগণ, উহা হইতে বাহিরে আইস, যেন উহার পাপ সকলের সহভাগী না হও, এবং উহার আঘাত সকল যেন প্রাপ্ত না হও।” (প্রকাশিত বাক্য ১৮:৪) যারা রক্ষা পেতে চায়, তাদেরকে অবশ্যই দেরি হওয়ার আগে মিথ্যা ধর্ম থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু খ্রিস্ট ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, শেষকালে অনেকে তাঁকে অনুসরণ করে বলে কেবল দাবি করবে। (মথি ২৪:৩-৫) এই ধরনের ব্যক্তিদের তিনি বলেন: “আমি কখনও তোমাদিগকে জানি নাই; হে অধর্ম্মাচারীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও।” (মথি ৭:২৩) এখন সিংহাসনে অধিষ্ঠিত রাজা যিশু খ্রিস্টের মিথ্যা ধর্মের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক নেই।

দূরে থাকুন—কীভাবে?

১১. মিথ্যা উপাসনা থেকে দূরে থাকার জন্য আমাদের কী করা উচিত?

১১ সত্য খ্রিস্টানরা মিথ্যা উপাসনা থেকে দূরে থাকে, মিথ্যা ধর্মীয় শিক্ষাগুলো প্রত্যাখ্যান করে। এর অর্থ হল যে, আমরা রেডিও এবং টেলিভিশনে সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো শুনি না বা দেখি না ও সেইসঙ্গে সেই ধর্মীয় সাহিত্যগুলো পড়ি না, যেগুলো ঈশ্বর ও তাঁর বাক্য সম্বন্ধে মিথ্যা বিষয়গুলো তুলে ধরে। (গীতসংহিতা ১১৯:৩৭) এ ছাড়া, আমরা বিজ্ঞতার সঙ্গে সেই সামাজিক অনুষ্ঠান এবং বিনোদনমূলক কার্যকলাপে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকি, যেগুলোর ব্যয়ভার মিথ্যা ধর্মের সঙ্গে যুক্ত কোনো সংগঠন গ্রহণ করে থাকে। অধিকন্তু, আমরা কোনোভাবেই মিথ্যা উপাসনাকে সমর্থন করি না। (১ করিন্থীয় ১০:২১) এই ধরনের পদক্ষেপ আমাদের সুরক্ষা করে যেন “দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা” কেউ আমাদের বন্দি করে নিয়ে না যায় কারণ “তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।”—কলসীয় ২:৮.

১২. কীভাবে একজন ব্যক্তি মিথ্যা ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে যেকোনো সম্পর্ক থেকে মুক্ত হতে পারেন?

১২ যিহোবার একজন সাক্ষি হতে চান এমন কোনো ব্যক্তি যদি সম্প্রতি মিথ্যা ধর্মের রেজিস্ট্রিভুক্ত সদস্য হয়ে থাকেন, তা হলে? সাধারণত, পদত্যাগপত্র একটা প্রমাণ হিসেবে কাজ করে যে, একজন ব্যক্তি আর মিথ্যা ধর্মের একজন সদস্য হিসেবে বিবেচিত হতে চান না। মিথ্যা উপাসনার দ্বারা যেকোনো ধরনের আধ্যাত্মিক কলুষতা পুরোপুরিভাবে এড়িয়ে চলার জন্য সেই ব্যক্তির চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একজন সম্ভাব্য সাক্ষির পদক্ষেপগুলো যেন ধর্মীয় সংগঠন এবং জনসাধারণের কাছে এই বিষয়টা স্পষ্ট করে তোলে যে, তিনি সেই ধর্মের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছেদ করেছেন।

১৩. মিথ্যা উপাসনা থেকে দূরে থাকার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বাইবেল কোন পরামর্শ দেয়?

১৩ “তোমরা অবিশ্বাসীদের সহিত অসমভাবে যোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। “কেননা ধর্ম্মে ও অধর্ম্মে পরস্পর কি সহযোগিতা? অন্ধকারের সহিত দীপ্তিরই বা কি সহভাগিতা? আর বলীয়ালের [পাপদেবের] সহিত খ্রীষ্টের কি ঐক্য? অবিশ্বাসীর সহিত বিশ্বাসীরই বা কি অংশ? আর প্রতিমাদের সহিত ঈশ্বরের মন্দিরেরই বা কি সম্পর্ক? . . . অতএব ‘তোমরা তাহাদের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আইস, ও পৃথক্‌ হও, ইহা যিহোবা কহিতেছেন, এবং অশুচি বস্তু স্পর্শ করিও না।’” (২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৭) মিথ্যা উপাসনা থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে আমরা এই কথাগুলোতে মনোযোগ দিই। পৌলের এই পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের কি মিথ্যা উপাসকদের থেকেও দূরে থাকা প্রয়োজন?

“বুদ্ধিপূর্ব্বক আচরণ কর”

১৪. যারা মিথ্যা উপাসনার সঙ্গে যুক্ত, তাদেরকে কি আমাদের সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে হবে? ব্যাখ্যা করুন।

১৪ সত্য উপাসকদের কি মিথ্যা উপাসনায় যুক্ত রয়েছে এমন লোকেদের সঙ্গে সমস্ত ধরনের সংস্পর্শ পরিহার করা উচিত? যারা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, তাদের থেকে কি আমাদের সম্পূর্ণরূপে পৃথক থাকা উচিত? এর উত্তর হল, না। দুটো সর্বমহান আজ্ঞার দ্বিতীয়টা বলে: “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।” (মথি ২২:৩৯) আমরা যখন আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার বলি, তখন নিশ্চিতভাবেই আমরা তাদের প্রতি প্রেম দেখাই। এ ছাড়াও, আমরা যখন তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করি এবং মিথ্যা উপাসনা থেকে তাদেরকে দূরে থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সচেতন করি, তখনও তাদের প্রতি আমাদের প্রেম দেখা যায়।

১৫. ‘জগতের না’ হওয়ার অর্থ কী?

১৫ যদিও আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে সুসমাচার প্রচার করি, তবুও যিশুর অনুসারী হিসেবে আমরা ‘জগতের নহি।’ (যোহন ১৫:১৯) এখানে ‘জগৎ’ শব্দটি ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন মানবসমাজকে নির্দেশ করে। (ইফিষীয় ৪:১৭-১৯; ১ যোহন ৫:১৯) আমরা এই অর্থে জগৎ থেকে পৃথক থাকি যে, আমরা সেই মনোভাব, কথাবার্তা এবং আচরণ এড়িয়ে চলি, যেগুলো যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করে। (১ যোহন ২:১৫-১৭) অধিকন্তু, “কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে,” এই নীতির সঙ্গে মিল রেখে আমরা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা এড়িয়ে চলি, যারা খ্রিস্টীয় মান অনুযায়ী জীবনযাপন করে না। (১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) জগতের অংশ না হওয়ার অর্থ হল, জগৎ বা ‘সংসার হইতে নিষ্কলঙ্ক’ থাকা। (যাকোব ১:২৭) তাই, জগৎ থেকে পৃথক থাকার অর্থ এই নয় যে, আমরা অন্য লোকেদের সঙ্গে সব ধরনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলব।—যোহন ১৭:১৫, ১৬; ১ করিন্থীয় ৫:৯, ১০.

১৬, ১৭. বাইবেলের সত্যের সঙ্গে যারা পরিচিত নয়, তাদের সঙ্গে আমাদের কীভাবে আচরণ করা উচিত?

১৬ তা হলে, বাইবেলের সত্যগুলোর সঙ্গে যারা পরিচিত নয়, তাদের সঙ্গে আমরা কীভাবে আচরণ করব? কলসীর মণ্ডলীর প্রতি পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা বাহিরের লোকদের প্রতি বুদ্ধিপূর্ব্বক আচরণ কর, সুযোগ কিনিয়া লও। তোমাদের বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত হউক, লবণে আস্বাদযুক্ত হউক, কাহাকে কেমন উত্তর দিতে হয়, তাহা যেন তোমরা জানিতে পার।” (কলসীয় ৪:৫, ৬) প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “হৃদয়মধ্যে খ্রীষ্টকে প্রভু বলিয়া পবিত্র করিয়া মান। যে কেহ তোমাদের অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু জিজ্ঞাসা করে, তাহাকে উত্তর দিতে সর্ব্বদা প্রস্তুত থাক। কিন্তু মৃদুতা ও ভয় সহকারে [“শ্রদ্ধার সঙ্গে,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] উত্তর দিও, সৎসংবেদ রক্ষা কর।” (১ পিতর ৩:১৪-১৬) পৌল খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যাতে তারা “কাহারও নিন্দা না করে, নির্ব্বিরোধ ও ক্ষান্তশীল হয়, সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা দেখায়।”—তীত ৩:২.

১৭ যিহোবার সাক্ষি হিসেবে আমরা অন্যদের প্রতি রূঢ় বা উদ্ধত হওয়া এড়িয়ে চলি। অন্য ধর্মের লোকেদের সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে নিশ্চিতভাবেই আমরা অমর্যাদাপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করি না। এর পরিবর্তে আমরা কৌশলী হই, এমনকি গৃহকর্তা, প্রতিবেশী অথবা সহকর্মীরা যদি নির্দয়ও হয় বা কটুক্তি করে।—কলসীয় ৪:৬; ২ তীমথিয় ২:২৪.

‘নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ ধারণ কর’

১৮. যারা মিথ্যা উপাসনায় ফিরে যায়, তারা কোন শোচনীয় আধ্যাত্মিক অবস্থা ভোগ করে?

১৮ বাইবেলের সত্যগুলো জানার পর, একজন ব্যক্তি যদি মিথ্যা উপাসনায় ফিরে যান, তা হলে সেটা কত দুঃখজনকই না হবে! বাইবেল তা করার দুঃখজনক পরিণতি সম্বন্ধে বর্ণনা করে, যখন এটি বলে: “কারণ আমাদের প্রভু ও ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের তত্ত্বজ্ঞানে সংসারের অশুচি বিষয়সমূহ এড়াইবার পর যদি তাহারা পুনরায় তাহাতে পাশবদ্ধ হইয়া পরাভূত হয়, তবে তাহাদের প্রথম দশা অপেক্ষা শেষ দশা আরও মন্দ হইয়া পড়ে। . . . তাহাদিগেতে এই সত্য প্রবাদ ফলিয়াছে,—‘কুকুর ফিরে আপন বমির দিকে,’ আর ধৌত শূকর ফিরে কাদায় গড়াগড়ি দিতে।”—২ পিতর ২:২০-২২.

১৯. কেন এমন যেকোনো বিষয়ের প্রতি সতর্ক থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে বিপন্ন করতে পারে?

১৯ আমাদের এমন যেকোনো বিষয়ের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে, যা আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে বিপন্ন করতে পারে। এই বিপদগুলো বাস্তব! প্রেরিত পৌল সতর্ক করেছিলেন: “আত্মা স্পষ্টই বলিতেছেন, উত্তরকালে কতক লোক ভ্রান্তিজনক আত্মাদিগেতে ও ভূতগণের শিক্ষামালায় মন দিয়া বিশ্বাস হইতে সরিয়া পড়িবে।” (১ তীমথিয় ৪:১) আমরা “উত্তরকালে” বা শেষ সময়ে বাস করছি। যারা মিথ্যা উপাসনা থেকে দূরে থাকে না, তারা “মনুষ্যদের ঠকামিতে, ধূর্ত্ততায়, ভ্রান্তির চাতুরীক্রমে তরঙ্গাহত এবং যে সে শিক্ষাবায়ুতে ইতস্ততঃ পরিচালিত” হতে পারে।—ইফিষীয় ৪:১৩, ১৪.

২০. মিথ্যা ধর্মের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে কীভাবে আমরা নিজেদের সুরক্ষা করতে পারি?

২০ মিথ্যা ধর্মের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে কীভাবে আমরা নিজেদের সুরক্ষা করতে পারি? যিহোবা যেসমস্ত বিষয় জুগিয়েছেন, সেগুলো বিবেচনা করুন। আমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল রয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) এ ছাড়া, যিহোবা ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে প্রচুর আধ্যাত্মিক খাদ্য জুগিয়েছেন। (মথি ২৪:৪৫) যতই আমরা সত্যে বৃদ্ধি পেতে থাকি, ততই আমাদের কি “কঠিন খাদ্য [যা] সিদ্ধবয়স্কদেরই” বা পরিপক্বদের জন্য, সেটার প্রতি স্বাদ বৃদ্ধি করার এবং যেখানে আমরা আধ্যাত্মিক সত্যগুলো শিখতে পারি, সেখানে একত্রিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত নয়? (ইব্রীয় ৫:১৩, ১৪; গীতসংহিতা ২৬:৮) আসুন আমরা যিহোবার ব্যবস্থাগুলো থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই যেন, আমরা ‘সেই নিরাময় বাক্য সমূহের আদর্শ ধারণ করিতে’ পারি, যা আমরা শুনেছি। (২ তীমথিয় ১:১৩) এভাবে আমরা মিথ্যা উপাসনা থেকে দূরে থাকতে পারি।

আপনি কী শিখেছেন?

• “মহতী বাবিল” কী?

• মিথ্যা ধর্ম থেকে দূরে থাকার জন্য আমাদের কী করতে হবে?

• আমাদের আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে কোন বিপদগুলো এড়িয়ে চলা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি জানেন যে, কেন ‘মহতী বাবিলকে’ একজন দুশ্চরিত্রা নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে?

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

‘মহতী বাবিলের’ ধ্বংস অনিবার্য

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

যারা আমাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী নয়, তাদের প্রতি আমরা ‘মৃদুতা ও শ্রদ্ধা’ প্রদর্শন করি