বাইবেল বুঝতে পারা আপনার প্রাপ্তিসাধ্য এক আনন্দ
বাইবেল বুঝতে পারা আপনার প্রাপ্তিসাধ্য এক আনন্দ
বাইবেলে ঈশ্বরের দেওয়া মূল্যবান সত্যগুলো রয়েছে। এটি আমাদেরকে জীবনের উদ্দেশ্য, মানুষের দুঃখকষ্টের কারণ এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানায়। এটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, কীভাবে সুখ পাওয়া যায়, কীভাবে বন্ধু তৈরি করা যায় এবং কীভাবে সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করা যায়। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল, আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও স্বর্গীয় পিতা যিহোবা সম্বন্ধে জানতে পারি। এই ধরনের জ্ঞান আমাদের আনন্দিত করে এবং জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে।
ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়াকে বাইবেলে খাবার খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। যিশু বলেছিলেন: “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।” (মথি ৪:৪; ইব্রীয় ৫:১২-১৪) আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যেমন প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অপরিহার্য, তেমনই অনন্তজীবন সম্বন্ধে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা থেকে উপকার লাভ করার জন্য নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্য পড়াও অপরিহার্য।
আমরা খাবার খাওয়া উপভোগ করি কারণ আমাদেরকে এভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে আর এটা আমাদের একটা মৌলিক চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু, আরেকটা মৌলিক চাহিদা রয়েছে, যা সুখী হতে চাইলে আমাদের অবশ্যই পূরণ করতে হবে। যিশু বলেছিলেন, “ধন্য [“সুখী,” NW] যাহারা আত্মাতে দীনহীন” বা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন। (মথি ৫:৩) সুখ লাভ করা সম্ভব কারণ ঈশ্বরের বাক্য বুঝতে পারার মাধ্যমে সেই চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে।
এটা ঠিক যে, কেউ কেউ বাইবেল বোঝাকে কঠিন বলে মনে করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার হয়তো সেই পদগুলোর ক্ষেত্রে সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে, যেগুলোতে অপরিচিত প্রথাগুলোর উল্লেখ রয়েছে অথবা রূপক অভিব্যক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রতীকী ভাষায় লিখিত এমন ভবিষ্যদ্বাণীগুলো রয়েছে, যেগুলো কেবলমাত্র বাইবেলের সেইসব পদের সাহায্যে বোঝা যেতে পারে, যা একই বিষয় নিয়ে আলোচনা দানিয়েল ৭:১-৭; প্রকাশিত বাক্য ১৩:১, ২) তা সত্ত্বেও, আপনি প্রকৃতপক্ষে বাইবেল বুঝতে পারেন। কীভাবে আপনি সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেন?
করে। (সকলের প্রাপ্তিসাধ্য এক আনন্দ
বাইবেল হল ঈশ্বরের বাক্য। এর মধ্যে ঈশ্বর আমাদের কাছে তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ঈশ্বর কি এমন একটি বই প্রদান করবেন, যা বোঝা অসম্ভব অথবা যেটি কেবলমাত্র উচ্চশিক্ষিত লোকেরাই বুঝতে পারবে? না, যিহোবা এতটা নির্দয় হবেন না। খ্রিস্ট যিশু বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে এমন পিতা কে, যাহার পুত্ত্র রুটী চাহিলে তাহাকে পাথর দিবে? কিম্বা মাছ চাহিলে মাছের পরিবর্ত্তে সাপ দিবে? কিম্বা ডিম চাহিলে তাহাকে বৃশ্চিক দিবে? অতএব তোমরা মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:১১-১৩) তাই, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, বাইবেল বুঝতে পারার ক্ষমতা আপনার নাগালের মধ্যেই রয়েছে আর আপনি যদি ঈশ্বরের কাছে আন্তরিকভাবে যাচ্ঞা করেন, তা হলে তাঁর বাক্য বোঝার জন্য যে-সাহায্য আপনার প্রয়োজন, তা তিনি জোগাবেন। বস্তুতপক্ষে, বাইবেলের মৌলিক শিক্ষাগুলো এমনকি শিশুরাও উপলব্ধি করতে ও বুঝতে পারে।—২ তীমথিয় ৩:১৫.
যদিও বাইবেল বোঝার জন্য প্রচেষ্টার দরকার কিন্তু তা করা আমাদের ওপর এক জোরালো, উৎসাহজনক প্রভাব ফেলতে পারে। পুনরুত্থানের পর যিশু তাঁর দুজন শিষ্যকে দেখা দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর বিষয়ে বলেছিলেন। লূকের বিবরণ বলে: “মোশি হইতে ও সমুদয় ভাববাদী হইতে আরম্ভ করিয়া সমুদয় শাস্ত্রে তাঁহার নিজের বিষয়ে যে সকল কথা আছে, তাহা তাঁহাদিগকে বুঝাইয়া দিলেন।” এর ফল কী হয়েছিল? শিষ্যরা যা শিখেছিল, সেদিন সন্ধ্যায় তা নিয়ে চিন্তা করার সময় তারা একে অন্যকে বলেছিল: “পথের মধ্যে যখন তিনি আমাদের সহিত কথা বলিতেছিলেন, আমাদের কাছে শাস্ত্রের অর্থ খুলিয়া দিতেছিলেন, তখন আমাদের অন্তরে আমাদের চিত্ত কি উত্তপ্ত হইয়া উঠিতেছিল না?” (লূক ২৪:১৩-৩২) ঈশ্বরের বাক্য বুঝতে পারা তাদেরকে আনন্দিত করেছিল কারণ এটি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর প্রতি তাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তাদেরকে এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল।
কেবলমাত্র গতানুগতিক এক কাজ হওয়ার পরিবর্তে ঈশ্বরের বাক্য বুঝতে পারা আগ্রহজনক এবং উপকারজনক, এক পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মতোই আনন্দদায়ক। এই ধরনের বোঝার ক্ষমতা অর্জন করার জন্য আপনার কী করা আবশ্যক? পরবর্তী প্রবন্ধ দেখায় যে, কীভাবে আপনি ‘ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানে’ আনন্দ পেতে পারেন।—হিতোপদেশ ২:১-৫.
[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন প্রেমময় পিতার মতো, যিহোবা বাইবেল বুঝতে সাহায্য করার জন্য আমাদের পবিত্র আত্মা দান করেন