সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাইবেল বুঝতে পারা কী আপনাকে সাহায্য করবে?

বাইবেল বুঝতে পারা কী আপনাকে সাহায্য করবে?

বাইবেল বুঝতে পারা কী আপনাকে সাহায্য করবে?

 “তুমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের হইতে এই সকল বিষয় গুপ্ত রাখিয়া শিশুদের নিকটে এই সকল প্রকাশ করিয়াছ।” (লূক ১০:২১) তাঁর স্বর্গীয় পিতার উদ্দেশে বলা যিশুর এই কথাগুলো ইঙ্গিত করে যে, বাইবেল বোঝার জন্য আমাদের সঠিক মনোভাব থাকা আবশ্যক। যিহোবার প্রজ্ঞা এই বিষয়টার মধ্যেই প্রকাশিত হয় যে, তিনি এমন এক পুস্তক জুগিয়েছেন যা কেবলমাত্র নম্র, শিখতে ইচ্ছুক লোকেরাই প্রকৃতপক্ষে বুঝতে পারে।

আমাদের অধিকাংশের পক্ষেই নম্রতা দেখানো সহজ নয়। আমাদের সকলেরই উত্তরাধিকারসূত্রে অহংকারী হয়ে ওঠার প্রবণতা রয়েছে। এ ছাড়া, আমরা “শেষ কালে” এমন লোকেদের মধ্যে বাস করছি, যারা “আত্মপ্রিয়, . . . দুঃসাহসী, গর্ব্বান্ধ।” (২ তীমথিয় ৩:১-৪) এগুলো হল সেই মনোভাব, যেগুলো ঈশ্বরের বাক্য বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা দেয়। দুঃখের বিষয় যে, আমরা সবাই কিছুটা হলেও আমাদের চারপাশের লোকেদের মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত হই। তা হলে, কীভাবে আপনি বাইবেল বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় মনোভাব অর্জন করতে পারেন?

হৃদয় ও মনকে তৈরি করা

ঈশ্বরের লোকেদের প্রাচীন নেতা ইষ্রা, ‘সদাপ্রভুর ব্যবস্থা অনুশীলন করিতে আপন অন্তঃকরণ সুস্থির করিয়াছিলেন’ বা তৈরি করেছিলেন। (ইষ্রা ৭:১০) এমন কিছু উপায় কি রয়েছে, যেগুলো আমাদের হৃদয়কে তৈরি করতে পারে? হ্যাঁ, রয়েছে। শাস্ত্রের প্রতি এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা তা শুরু করতে পারি। প্রেরিত পৌল সহখ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন: “আমাদের কাছে ঈশ্বরের বার্ত্তারূপ বাক্য প্রাপ্ত হইয়া তোমরা মনুষ্যদের বাক্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া তাহা গ্রহণ করিয়াছিলে; তাহা ঈশ্বরের বাক্যই বটে।” (১ থিষলনীকীয় ২:১৩) যদিও শাস্ত্র লেখার জন্য মানুষকে ব্যবহার করা হয়েছিল কিন্তু তারা যা লিখেছিল, তা যিহোবার কাছ থেকেই ছিল। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা স্বীকার করা আমাদেরকে, আমরা যা পড়ি তা গ্রহণ করার জন্য আরও আগ্রহী করে তুলবে।—২ তীমথিয় ৩:১৬.

আমাদের হৃদয়কে তৈরি করার আরেকটা উপায় হল, প্রার্থনা করা। যেহেতু পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় বাইবেল লেখা হয়েছিল, তাই সেই আত্মার সাহায্যেই আমরা এর বার্তা বুঝতে পারব। এই ধরনের সাহায্যের জন্য আমাদের অবশ্যই প্রার্থনা করতে হবে। লক্ষ করুন যে, গীতরচকের জন্য এটা কতটা চিন্তার বিষয় ছিল, যিনি লিখেছিলেন: “আমাকে বিবেচনা দেও, আমি তোমার ব্যবস্থা মানিব, সর্ব্বান্তঃকরণে তাহা পালন করিব।” (গীতসংহিতা ১১৯:৩৪) যা লেখা রয়েছে, তা বোঝার জন্য আমরা কেবল বোঝার ক্ষমতা চেয়েই প্রার্থনা করব না কিন্তু সেইসঙ্গে হৃদয়ের এমন এক মনোভাবও চাইব, যা আমাদেরকে তা মেনে নিতে সাহায্য করবে। বাইবেল বোঝার জন্য সত্যকে গ্রহণ করে নিতে আমাদের আগ্রহী হতে হবে।

সঠিক মনোভাব লাভ করার জন্য ধ্যান করার সময়, বাইবেল অধ্যয়ন আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারে, সেই বিষয়ে বিবেচনা করুন। ঈশ্বরের বাক্য পড়ার জন্য আমাদের চমৎকার কারণগুলো রয়েছে কিন্তু অন্য যেকোনো কারণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণটা হল, এটি আমাদেরকে যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে। (যাকোব ৪:৮) বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যিহোবা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, যারা তাঁকে ভালবাসে তাদেরকে যেভাবে মূল্য দেন এবং যারা তাঁকে পরিত্যাগ করে তাদের সঙ্গে তিনি যেমন আচরণ করেন, সেই বিষয়গুলো যখন আমরা পড়ি, তখন আমরা বুঝতে পারি যে তিনি কী ধরনের ব্যক্তি। বাইবেল পড়ার ক্ষেত্রে সবসময়ই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, ঈশ্বরকে আরও ভালভাবে জানা আর এভাবে তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করা।

সঠিক মনোভাব রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো

কোন বিষয়টা হয়তো ঈশ্বরের বাক্য বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের বাধা দিতে পারে? একটা প্রতিবন্ধক হল, ভুল বিষয়ের প্রতি আনুগত্য দেখানো। উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের বিশ্বাস ও মতামতগুলো ধরে রাখতে পারেন। কিন্তু, এই ব্যক্তিরা যদি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের বাক্যের সত্যকে সমর্থন না করে বা মূল্য না দেয়, তা হলে কী হবে? এই ধরনের পরিস্থিতিতে বাইবেল প্রকৃতপক্ষে যা শিক্ষা দেয়, তা বোঝা এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তাই, বাইবেল আমাদের সেই বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করতে উৎসাহিত করে, যা আমাদের শেখানো হয়েছে।—১ থিষলনীকীয় ৫:২১.

যিশুর মা মরিয়ম এই ধরনের এক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি যিহুদিদের পরম্পরাগত বিশ্বাস অনুসারে বড় হয়েছিলেন। তিনি সতর্কতার সঙ্গে মোশির ব্যবস্থা মেনে চলতেন এবং কোনো সন্দেহ নেই যে, তিনি সমাজগৃহে যেতেন। পরবর্তী জীবনে মরিয়ম উপলব্ধি করেছিলেন যে, তার বাবামা তাকে যে-উপায়ে উপাসনা করতে শিক্ষা দিয়েছিল, ঈশ্বরের কাছে সেটা আর গ্রহণযোগ্য ছিল না। ফলস্বরূপ, তিনি যিশুর শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রথম সদস্যদের মধ্যে ছিলেন। (প্রেরিত ১:১৩, ১৪) এটা করা তার বাবামার প্রতি বা তাদের পরম্পরাগত বিশ্বাসের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেনি; বরং এটা ছিল ঈশ্বরের প্রতি তার ভালবাসার এক অভিব্যক্তি। আমরা যদি বাইবেল থেকে উপকার লাভ করতে চাই, তা হলে মরিয়মের মতো আমাদেরও অবশ্যই অন্য যেকারো চেয়ে বরং ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য দেখাতে হবে।

দুঃখের বিষয় যে, অনেক লোক বাইবেলের সত্যকে তেমন মূল্য দেয় না। কেউ কেউ এমন সব ধর্মীয় পরম্পরাগত বিশ্বাস অনুসরণ করে সন্তুষ্ট থাকে, যেগুলো মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে স্থাপিত। অন্যেরা তাদের কথাবার্তা এবং জীবনধারার মাধ্যমে সত্যের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। অতএব, বাইবেলের সত্য গ্রহণ করার জন্য কিছু ত্যাগস্বীকার করতে হয়: এটা হয়তো আপনার বন্ধু, প্রতিবেশী, সহকর্মী আর এমনকি আপনার পরিবারের সঙ্গেও মতবিরোধ নিয়ে আসতে পারে। (যোহন ১৭:১৪) তা সত্ত্বেও, একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি লিখেছিলেন: “সত্য ক্রয় কর, বিক্রয় করিও না।” (হিতোপদেশ ২৩:২৩) আপনি যদি সত্যকে মহামূল্যবান বলে মনে করেন, তা হলে যিহোবা আপনাকে বাইবেল বুঝতে সাহায্য করবেন।

বাইবেলের বার্তা বোঝার ক্ষেত্রে আরেকটা যে-প্রতিবন্ধক রয়েছে তা হল, এটি যা বলে তা পালন করতে অনিচ্ছুক মনোভাব। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “স্বর্গরাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব সকল তোমাদিগকে জানিতে দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু তাহাদিগকে দেওয়া হয় নাই। কেননা এই লোকদের হৃদয় অসাড় হইয়াছে, শুনিতে তাহাদের কর্ণ ভারী হইয়াছে।” (মথি ১৩:১১, ১৫) যিশু যাদের কাছে প্রচার করেছিলেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই সাড়া দেয়নি, পরিবর্তন করতে অনিচ্ছুক ছিল। যিশুর বলা এক দৃষ্টান্তের বণিকের চেয়ে তা কতই না আলাদা! একটি মহামূল্য মুক্তা দেখতে পেয়ে তা কেনার জন্য সেই বণিক সঙ্গে সঙ্গে তার সর্বস্ব বিক্রি করে দিয়েছিলেন। বাইবেলের সত্যগুলো বুঝতে পারা আমাদের কাছে একইরকম মূল্যবান হওয়া উচিত।—মথি ১৩:৪৫, ৪৬.

শিখতে ইচ্ছুক মনোভাবের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা

বাইবেল বোঝার ক্ষেত্রে এক বিরাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হল, শিখতে ইচ্ছুক মনোভাব থাকা। একজন ব্যক্তির পক্ষে হয়তো এমন একজনের কাছ থেকে নতুন ধারণাগুলো গ্রহণ করে নেওয়া কঠিন হতে পারে, যিনি সামাজিক বা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে তার চেয়ে নিচু। কিন্তু, যিশু খ্রিস্টের প্রেরিতরা “অশিক্ষিত সামান্য লোক” ছিল। (প্রেরিত ৪:১৩) এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পৌল লিখেছিলেন: “হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদের আহ্বান দেখ, যেহেতুক মাংস অনুসারে জ্ঞানবান্‌ অনেক নাই, পরাক্রমী অনেক নাই, উচ্চ পদস্থ অনেক নাই; কিন্তু ঈশ্বর জগতীস্থ মূর্খ বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন জ্ঞানবান্‌দিগকে লজ্জা দেন।” (১ করিন্থীয় ১:২৬, ২৭) আপাতদৃষ্টিতে একজন নিচু ব্যক্তির কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করার ক্ষেত্রে নম্রতা দেখানো যদি আপনার জন্য এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে মনে হয়, তা হলে মনে রাখবেন যে, সেই পুরুষ বা নারী কেবল ঈশ্বরের দ্বারা আপনাকে শিক্ষা প্রদানের এক উপায় মাত্র। আমাদের “সর্বমহান শিক্ষক” যিহোবার দ্বারা শিক্ষা লাভ করার বিশেষ সুযোগের চেয়ে মহৎ আর কীই বা হতে পারে?—যিশাইয় ৩০:২০, NW; ৫৪:১৩.

অরামীয় সেনাপতি নামান ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যার পক্ষে তার চেয়ে নিচু শ্রেণীর একজন ব্যক্তির কাছ থেকে নির্দেশনা লাভ করাকে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলে মনে হয়েছিল। তার কুষ্ঠরোগ থেকে আরোগ্য লাভের চেষ্টায় তিনি যিহোবার ভাববাদী ইলীশায়ের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু, আরোগ্য লাভের বিষয়ে ঈশ্বরের নির্দেশনা নামানের কাছে একজন দাসের মাধ্যমে এসেছিল। সেই খবর এবং যে-উপায়ে এটা জানানো হয়েছিল, তা নামানের নম্রতাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলেছিল আর তাই প্রথমে তিনি ঈশ্বরের ভাববাদীর বাক্য মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন। পরে, নামান তার মনোভাব পরিবর্তন করেছিলেন এবং সুস্থ হয়েছিলেন। (২ রাজাবলি ৫:৯-১৪) যখন আমরা বাইবেলের শিক্ষার প্রতি মনোযোগ দিই, তখন আমরাও একই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হই। আমরা হয়তো শিখি যে, আধ্যাত্মিক ও নৈতিকভাবে আরোগ্য লাভের জন্য আমাদের এক নতুন জীবনধারা অনুসরণ করতে হবে। আমাদের যা করতে হবে তা শিক্ষা দেওয়ার জন্য কাউকে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কি নম্রতা বজায় রাখব? শিখতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরাই কেবলমাত্র বাইবেল বুঝতে পেরে আনন্দিত হতে পারে।

ইথিওপিয়ার কান্দাকি রানির অধীন উচ্চপদস্থ একজন ব্যক্তি চমৎকার মনোভাব প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি যখন নিজের রথে চড়ে আফ্রিকায় ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন শিষ্য ফিলিপ দৌড়ে তার কাছে এসেছিলেন এবং কথা বলেছিলেন। ফিলিপ সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তিনি যা পড়ছিলেন তা বুঝতে পেরেছেন কি না। সেই কর্মকর্তা যথেষ্ট নম্রভাবে উত্তর দিয়েছিলেন: “কেহ আমাকে বুঝাইয়া না দিলে কেমন করিয়া বুঝিতে পারিব?” ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে বোধগম্যতা অর্জন করার পর সেই ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। এরপর তিনি “আনন্দ করিতে করিতে আপন পথে চলিয়া গেলেন।”—প্রেরিত ৮:২৭-৩৯.

যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে অধিকাংশই সাধারণ লোক। প্রতি সপ্তাহে তারা ষাট লক্ষেরও অধিক লোকের ঘরে গিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করে। যেহেতু বাইবেল সর্বোত্তম জীবনের পথ সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়, মানবজাতির জন্য একমাত্র নিশ্চিত আশা সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে এবং দেখায় যে কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি, তাই লক্ষ লক্ষ লোক বাইবেল অধ্যয়ন করে ও এটি যা বলে তা বুঝতে পারাকে এক অপরিমেয় আনন্দ বলে মনে করে। এটা আপনার প্রাপ্তিসাধ্য এক আনন্দ।

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

নামান আপাতদৃষ্টিতে নিচু একজন দাসের কাছ থেকে নির্দেশনা গ্রহণ করাকে কঠিন বলে মনে করেছিলেন

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাইবেল বুঝতে পারা আমাদের হৃদয়কে আনন্দিত করে