সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনাদের হস্ত সবল হোক

আপনাদের হস্ত সবল হোক

আপনাদের হস্ত সবল হোক

“ভাববাদীদের মুখে এই বর্ত্তমান কালে এই সকল কথা শুনিতে পাইতেছ যে তোমরা, তোমাদের হস্ত সবল হউক।”—সখরিয় ৮:৯.

১, ২. হগয় এবং সখরিয়ের বইগুলো কেন আমাদের মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য?

 ভাববাদী হগয় এবং সখরিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যদিও প্রায় ২,৫০০ বছর আগে লেখা হয়েছে কিন্তু নিশ্চিতভাবে সেগুলো আপনার জীবনের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এই দুটো বইয়ে বাইবেলের যে-বিবরণগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো শুধুমাত্র ইতিহাস নয়। এগুলো ‘পূর্ব্বকালে যাহা যাহা আমাদের শিক্ষার নিমিত্ত লিখিত হইয়াছিল’ সেগুলোর অংশ। (রোমীয় ১৫:৪) হগয় এবং সখরিয়ের বইয়ে আমরা যা পড়ি, তা বেশির ভাগই আমাদেরকে সেই প্রকৃত অবস্থাগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করতে পরিচালিত করে, যেগুলো ১৯১৪ সালে স্বর্গে রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে ঘটে চলেছে।

দীর্ঘকাল আগে ঈশ্বরের লোকেরা যে-ঘটনাবলি এবং পরিস্থিতিগুলো সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, সেই বিষয়ে উল্লেখ করে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “এই সকল তাহাদের প্রতি দৃষ্টান্তস্বরূপে ঘটিয়াছিল, এবং আমাদেরই চেতনার জন্য লিখিত হইল; আমাদের, যাহাদের উপরে যুগকলাপের অন্ত আসিয়া পড়িয়াছে।” (১ করিন্থীয় ১০:১১) তাই, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘আমাদের দিনে হগয় এবং সখরিয় বইগুলোর কোন মূল্য রয়েছে?’

৩. হগয় এবং সখরিয় কীসের ওপর মনোযোগ দিয়েছিল?

আগের প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছিল যে, হগয় এবং সখরিয়ের ভবিষ্যদ্বাণী সেই সময়কে অন্তর্ভুক্ত করেছিল, যখন যিহুদিরা বাবিলের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে তাদের ঈশ্বরদত্ত দেশে ফিরে এসেছিল। এই দুজন ভাববাদী মন্দির পুনর্নিমাণ কাজের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিল। যিহুদিরা সা.কা.পূ. ৫৩৬ সালে মন্দিরের ভিত্তিমূল স্থাপন করেছিল। যদিও কিছু বৃদ্ধ যিহুদি অতীতের দিকে মনোযোগ দিয়েছিল, তবুও সার্বিকভাবে সেখানে অনেক ‘আনন্দের জয়ধ্বনি’ হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, আমাদের সময়ে আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটেছে। কীভাবে?—ইষ্রা ৩:৩-১৩.

৪. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পরই কী ঘটেছে?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পরই, যিহোবার অভিষিক্ত ব্যক্তিরা মহতী বাবিলের বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছিল। এটা যিহোবার সাহায্যের এক বড় ইঙ্গিত দিয়েছিল। প্রথমে মনে হয়েছিল, ধর্মীয় নেতারা এবং তাদের রাজনৈতিক সঙ্গীরা বাইবেল ছাত্রদের জনসাধারণ্যে প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজকে শেষ করে দিয়েছিল। (ইষ্রা ৪:৮, ১৩, ২১-২৪) কিন্তু, প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার কাজে প্রতিবন্ধকতাগুলো যিহোবা ঈশ্বর সরিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯১৯ সাল থেকে দশকের পর দশক জুড়ে রাজ্যের কাজ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কোনো কিছুই এর অগ্রগতিকে রোধ করতে পারেনি।

৫, ৬. সখরিয় ৪:৭ পদ কোন মহান সম্পাদনের বিষয়ে নির্দেশ করে?

আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমাদের দিনে যিহোবার বাধ্য দাসদের মাধ্যমে করা প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজ তাঁরই সাহায্যে ক্রমাগত এগিয়ে যাবে। সখরিয় ৪:৭ পদে আমরা পড়ি: “‘প্রীতি, প্রীতি, ইহার প্রতি’, এই হর্ষধ্বনির সহিত সে মস্তকস্বরূপ প্রস্তরখানি বাহির করিয়া আনিবে।” আমাদের সময়ের জন্য এটা কোন মহান সম্পাদনকে নির্দেশ করে?

সখরিয় ৪:৭ পদ সেই সময়কে নির্দেশ করে, যখন সার্বভৌম প্রভুর সত্য উপাসনা তাঁর আত্মিক মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণে এর পূর্ণতায় পৌঁছাবে। খ্রিস্ট যিশুর পাপার্থক প্রায়শ্চিত্তের ওপর ভিত্তি করে উপাসনায় যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য এই আত্মিক মন্দির হল তাঁরই আয়োজন। এটা ঠিক যে, সা.কা. প্রথম শতাব্দী থেকেই মহান আত্মিক মন্দির অস্তিত্বে রয়েছে। কিন্তু, সত্য উপাসনা এর পার্থিব প্রাঙ্গণে পূর্ণতায় পৌঁছানো এখনও বাকি রয়েছে। লক্ষ লক্ষ উপাসক এখন আত্মিক মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণে সেবা করছে। এরা এবং অসংখ্য পুনরুত্থিত ব্যক্তি যিশু খ্রিস্টের হাজার বছরের রাজত্বের সময়ে পূর্ণতায় বা সিদ্ধতায় পৌঁছাবে। হাজার বছরের রাজত্বের শেষে, শুধুমাত্র ঈশ্বরের সত্য উপাসকরা পরিচ্ছন্ন পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে।

৭. আমাদের দিনে সত্য উপাসনাকে এর পূর্ণতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যিশুর কোন ভূমিকা রয়েছে এবং কেন সেটাকে আমাদের উৎসাহজনক বলে মনে করা উচিত?

দেশাধ্যক্ষ সরুব্বাবিল এবং মহাযাজক যিহোশূয় সা.কা.পূ. ৫১৫ সালে মন্দির নির্মাণ কাজের শেষ দেখার জন্য উপস্থিত ছিল। সত্য উপাসনাকে এর পূর্ণতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যিশুর তুলনীয় ভূমিকার বিষয়ে সখরিয় ৬:১২, ১৩ পদ এই বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, সেই পুরুষ, যাঁহার নাম ‘পল্লব’, তিনি আপন স্থানে পল্লবের ন্যায় বৃদ্ধি পাইবেন, এবং সদাপ্রভুর মন্দির গাঁথিবেন; হাঁ, . . . তিনিই প্রভা ধারণ করিবেন, আপন সিংহাসনে বসিয়া কর্ত্তৃত্ব করিবেন, এবং আপন সিংহাসনের উপরে উপবিষ্ট যাজক হইবেন।” যিশু, যিনি স্বর্গে রয়েছেন এবং দায়ূদ বংশের রাজাদের পল্লবিত করেন, তিনিই যেখানে আত্মিক মন্দিরে রাজ্যের কাজকে সমর্থন করেন, সেখানে আপনার কি মনে হয় কেউ এর অগ্রগতিতে বাধা দিতে পারে? কখনোই না! তাই, রোজকার চিন্তাভাবনার দ্বারা বিপথগামী না হয়ে আমাদের কি পরিচর্যায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য এই বিষয়টার দ্বারা উৎসাহিত হওয়া উচিত নয়?

অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো

৮. কেন আমাদের অবশ্যই আত্মিক মন্দিরে কাজ করাকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখতে হবে?

যিহোবার সাহায্য ও আশীর্বাদ লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই আত্মিক মন্দিরে কাজ করাকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখতে হবে। যে-যিহুদিরা বলেছিল, ‘সময়, উপস্থিত হয় নাই,’ তাদের মতো না হয়ে আমরা অবশ্যই মনে রাখব যে, আমরা “শেষ কালে” বাস করছি। (হগয় ১:২; ২ তীমথিয় ৩:১) যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তাঁর অনুগত অনুসারীরা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার এবং শিষ্য তৈরি করবে। আমরা অবশ্যই আমাদের সেবার বিশেষ সুযোগকে উপেক্ষা না করার বিষয়ে সতর্ক থাকব। প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজ, যা জগতের বিরোধিতার দ্বারা সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল, তা ১৯১৯ সালে পুনরায় আরম্ভ হয়েছিল, তবে তা সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, তা অবশ্যই সম্পন্ন হবে!

৯, ১০. কীসের ওপর যিহোবার আশীর্বাদ নির্ভর করে আর আমাদের জন্য এর অর্থ কী?

আমরা যতখানি আন্তরিকভাবে কাজ করে চলব, সেই অনুযায়ী আশীর্বাদ লাভ করব—একটা দল হিসেবে এবং একজন ব্যক্তি বিশেষ হিসেবে। যিহোবার প্রতিজ্ঞা লক্ষ করুন, যা থেকে আমরা আশ্বাস পেতে পারি। যিহুদিরা যখন পূর্ণহৃদয়ের উপাসনায় পুনরায় রত হয়েছিল এবং আন্তরিকভাবে মন্দিরের ভিত্তিমূলের কাজ পুনরায় আরম্ভ করেছিল, তখন যিহোবা বলেছিলেন: “অদ্যাবধি আমি আশীর্ব্বাদ করিব।” (হগয় ২:১৯) তারা তাঁর অনুগ্রহের সম্পূর্ণ পুনর্স্থাপন থেকে উপকার লাভ করতে পেরেছিল। এখন ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞায় যে-আশীর্বাদ রয়েছে, তা বিবেচনা করুন: “শান্তিযুক্ত বীজ হইবে, দ্রাক্ষালতা ফলবতী হইবে, ভূমি আপন শস্য উৎপন্ন করিবে, ও আকাশ আপন শিশির দান করিবে; আর আমি এই লোকদের অবশিষ্টাংশকে এই সকলের অধিকারী করিব।”—সখরিয় ৮:৯-১৩.

১০ যিহোবা যেমন যিহুদিদেরকে আধ্যাত্মিক ও বস্তুগতভাবে আশীর্বাদ করেছিলেন, ঠিক তেমনই আমরা যদি অধ্যবসায়ের সঙ্গে এবং আনন্দিত হৃদয়ে তাঁর দেওয়া কাজ করি, তা হলে তিনি আমাদেরও আশীর্বাদ করবেন। এই আশীর্বাদগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল, আমাদের মধ্যে শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি। কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবা যেভাবে চান সেভাবে আত্মিক মন্দিরে আমাদের কাজ করার ওপর ঈশ্বরের ক্রমাগত আশীর্বাদ নির্ভর করে।

১১. কীভাবে আমরা নিজেদের বিশ্লেষণ করতে পারি?

১১ এখনই ‘আমাদের আপন আপন পথ আলোচনা করিবার’ সময়। (হগয় ১:৫, ৭) কিছুটা সময় নিয়ে আমাদের জীবনের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা উচিত। আজকে আমাদের ওপর যিহোবার আশীর্বাদ, আমরা যিহোবার নামকে কতটা মহিমান্বিত করছি এবং তাঁর আত্মিক মন্দিরে আমাদের কাজ কতটা এগিয়ে নিয়ে চলেছি, সেটার ওপর নির্ভর করে। আপনি হয়তো নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘আমার অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো কি পরিবর্তিত হয়েছে? আমি যখন বাপ্তাইজিত হয়েছিলাম, সেই সময়ের উদ্যোগের সঙ্গে তুলনা করলে এখন যিহোবা, তাঁর সত্য এবং তাঁর কাজের প্রতি আমার উদ্যোগ কেমন? আরামআয়েশের এক জীবনের প্রতি আগ্রহ কি যিহোবা ও তাঁর রাজ্যের প্রতি আমি যে-মনোযোগ দিচ্ছি, সেটার ওপর প্রভাব ফেলছে? লোকভয়—অন্যেরা কি মনে করবে সেই বিষয়ে চিন্তা করা—কি আমাকে কিছুটা বাধা দিচ্ছে?’—প্রকাশিত বাক্য ২:২-৪.

১২. হগয় ১:৬, ৯ পদে যিহুদিদের কোন পরিস্থিতি সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে?

১২ আমরা চাই না যে, ঈশ্বরের নামকে মহিমান্বিত করার কাজকে উপেক্ষা করার কারণে তিনি তাঁর অপরিমেয় আশীর্বাদ তুলে নিন। মনে করে দেখুন যে, উদ্যোগের সঙ্গে মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করার পর, ফিরে আসা যিহুদিরা “প্রত্যেক জন আপন আপন গৃহে দৌড়িয়া” গিয়েছিল, যেমন হগয় ১:৯ পদ বলে। তারা নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো এবং জীবনধারা নিয়ে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল। এর ফলে, “অল্প সঞ্চয়,” উত্তম খাবার ও পানীয়ের স্বল্পতা এবং উষ্ণ পোশাকের ঘাটতি ছিল। (হগয় ১:৬) যিহোবা তাঁর আশীর্বাদ তুলে নিয়েছিলেন। এখানে কি আমাদের জন্য কোনো শিক্ষা রয়েছে?

১৩, ১৪. কীভাবে আমরা হগয় ১:৬, ৯ পদ থেকে পাওয়া শিক্ষাটা কাজে লাগাতে পারি আর কেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ?

১৩ আপনি কি একমত নন যে, ক্রমাগত ঐশিক আশীর্বাদ উপভোগ করতে চাইলে আমাদেরকে অবশ্যই যিহোবার উপাসনাকে উপেক্ষা করে নিজেদের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের প্রচেষ্টা করাকে প্রতিরোধ করতে হবে? আমাদের তা করতে হবে, তা সেটা আমাদের মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করে এমন যেকোনো কাজ অথবা আগ্রহ যা-ই হোক না কেন, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল ধনসম্পদ, দ্রুত ধনী হওয়ার বিভিন্ন প্রকল্প, উচ্চাভিলাষ এবং এই বিধিব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত এক কেরিয়ার লাভ করার জন্য আধুনিক শিক্ষা লাভের পরিকল্পনাগুলো অথবা ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির পিছনে ছোটা।

১৪ এই বিষয়গুলো হয়তো পাপ নয়। কিন্তু, অনন্তজীবনের দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি কি বুঝতে পারেন না যে, এগুলো আসলে “মৃত ক্রিয়াকলাপ”? (ইব্রীয় ৯:১৪) কোন অর্থে? এগুলো আধ্যাত্মিকভাবে মৃত, মূল্যহীন অথবা নিষ্ফল। একজন ব্যক্তি যদি এগুলোতে লেগে থাকেন, তা হলে এই কাজগুলো আধ্যাত্মিক মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে। প্রেরিত পৌলের দিনে কিছু অভিষিক্ত খ্রিস্টানের বেলায় এমনটা হয়েছিল। (ফিলিপীয় ৩:১৭-১৯) আমাদের দিনেও কারো কারো ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে। আপনি হয়তো এমন কয়েক জনকে জানেন, যারা খ্রিস্টীয় কাজকর্ম এবং মণ্ডলী থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে গিয়েছে; তারা এখন যিহোবার সেবায় ফিরে আসার কোনো প্রবণতা দেখায় না। নিশ্চিতভাবেই, আমরা আশা করি যে এই ধরনের ব্যক্তিরা যিহোবার কাছে ফিরে আসবে কিন্তু প্রকৃত বিষয়টা হল যে, “মৃত ক্রিয়াকলাপ” অনুধাবন করার ফল হবে যিহোবার অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ হারানো। আর আপনি দেখতে পারবেন যে, তা কত দুঃখজনক এক ঘটনা হবে। এর অর্থ হবে, ঈশ্বরের আত্মা যে-আনন্দ এবং শান্তি উৎপন্ন করে, তা হারানো। আর কল্পনা করে দেখুন যে, উষ্ণ খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের অংশ না হতে পারা কী বিরাট এক ক্ষতিই না হবে!—গালাতীয় ১:৬; ৫:৭, ১৩, ২২-২৪.

১৫. কীভাবে হগয় ২:১৪ পদ আমাদের উপাসনার গুরুত্ব সম্বন্ধে দেখায়?

১৫ এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। হগয় ২:১৪ পদ থেকে লক্ষ করুন যে, যিহোবা সেইসমস্ত যিহুদিদের কীভাবে দেখেছিলেন, যারা আক্ষরিকভাবে হোক বা রূপকভাবে হোক, তাদের নিজেদের গৃহ তৈরি করার দ্বারা তাঁর উপাসনা গৃহকে উপেক্ষা করেছিল। “সদাপ্রভু বলেন, আমার সম্মুখে এই বংশ তদ্রূপ ও এই জাতি তদ্রূপ; তাহাদের হস্তের সমস্ত কর্ম্মও তদ্রূপ; এবং ঐ স্থানে তাহারা যাহা উৎসর্গ করে, তাহা অশুচি।” যতদিন পর্যন্ত সত্য উপাসনাকে উপেক্ষা করা হয়েছিল, ততদিন পর্যন্ত অর্ধহৃদয়ের যিহুদিরা যিরূশালেমের অস্থায়ী বেদিতে যা কিছু নামমাত্র উৎসর্গ করেছিল, সেগুলোর সবই অগ্রাহ্য হয়েছিল।—ইষ্রা ৩:৩.

নিশ্চিত সাহায্য

১৬. সখরিয়কে দেওয়া দর্শনগুলোর ওপর ভিত্তি করে কোন বিষয়ে যিহুদিরা নিশ্চিত থাকতে পারত?

১৬ যেসমস্ত বাধ্য যিহুদিরা ঈশ্বরের মন্দির পুনর্নিমাণের কাজ করেছিল, তারা ঐশিক সাহায্যের বিষয়ে আশ্বাস পেয়েছিল, যেমনটা ঈশ্বর সখরিয়কে দেওয়া আটটি ধারাবাহিক দর্শনের মাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। প্রথম দর্শন, যে পর্যন্ত যিহুদিরা বাধ্যতার সঙ্গে তাদের কাজ চালিয়ে যাবে, সেই পর্যন্ত মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন এবং যিরূশালেম ও যিহূদার সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দিয়েছিল। (সখরিয় ১:৮-১৭) দ্বিতীয় দর্শন সেইসমস্ত সরকারের ধ্বংস সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করেছিল, যেগুলো সত্য উপাসনার বিরোধিতা করেছিল। (সখরিয় ১:১৮-২১) অন্যান্য দর্শন নির্মাণের কাজে ঐশিক সুরক্ষা, অনেক জাতির লোকেদের যিহোবার সম্পূর্ণ নির্মিত উপাসনা গৃহের দিকে প্রবাহিত হওয়া, প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা, ঈশ্বরদত্ত কাজের প্রতি আপাতদৃষ্টিতে পর্বততুল্য বাধাগুলোকে সমতল করা, দুষ্টতার উচ্ছেদ এবং স্বর্গদূতদের তত্ত্বাবধান ও সুরক্ষা জোগানোর বিষয়টা নিশ্চিত করেছে। (সখরিয় ২:৫, ১১; ৩:১০; ৪:৭; ৫:৬-১১; ৬:১-৮) আপনি হয়তো বুঝতে পারেন যে, কেন এই ধরনের ঐশিক সমর্থনের নিশ্চয়তা থাকায় বাধ্য লোকেরা তাদের জীবনধারাকে সমন্বয় করেছে এবং সেই কাজের প্রতি তাদের মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত করেছে, যা করার জন্য ঈশ্বর তাদের মুক্ত করেছিলেন।

১৭. আমাদের যে-নিশ্চয়তা রয়েছে, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের কী জিজ্ঞেস করা উচিত?

১৭ একইভাবে, সত্য উপাসনার নিশ্চিত বিজয় সম্বন্ধে আমাদের যে-নিশ্চয়তা রয়েছে, সেটার দ্বারা আমাদের কাজ করার জন্য উদ্দীপিত হওয়া এবং যিহোবার উপাসনা গৃহ সম্বন্ধে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে পরিচালিত হওয়া উচিত। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘যদি আমি বিশ্বাস করি যে, এখনই রাজ্যের সুসমাচার প্রচার এবং শিষ্য করার সময়, তা হলে আমার লক্ষ্যগুলো এবং জীবনধারা কি আমার দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে মিল রাখে? আমি কি ঈশ্বরের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্য অধ্যয়ন করার জন্য উপযুক্ত সময় ব্যয় করি, সেগুলোকে আমার চিন্তার বিষয় করি এবং সহবিশ্বাসী ও যাদের সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করি, তাদের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করি?’

১৮. সখরিয় ১৪ অধ্যায় অনুসারে ভবিষ্যতে কী রয়েছে?

১৮ সখরিয় মহতী বাবিলের ধ্বংস সম্বন্ধে উল্লেখ করেন, যেটার পরেই হর্‌মাগিদোনের যুদ্ধ হবে। আমরা পড়ি: “সে অদ্বিতীয় দিন হইবে, সদাপ্রভুই তাহার তত্ত্ব জানেন; তাহা দিবসও হইবে না, রাত্রিও হইবে না, কিন্তু সন্ধ্যাকালে দীপ্তি হইবে।” হ্যাঁ, যিহোবার দিন পৃথিবীতে তাঁর শত্রুদের জন্য প্রকৃতই অন্ধকারময়, নিরুত্তাপের এক দিন হবে! কিন্তু, যিহোবার বিশ্বস্ত উপাসকদের জন্য এর অর্থ হবে ক্রমাগত জ্যোতি ও অনুগ্রহ লাভ করা। এ ছাড়া, সখরিয় বর্ণনা করেন যে, নতুন জগতে সমস্তকিছু কীভাবে যিহোবার পবিত্রতা ঘোষণা করবে। পৃথিবীতে একমাত্র উপাসনা হবে ঈশ্বরের মহান আত্মিক মন্দিরের সত্য উপাসনা। (সখরিয় ১৪:৭, ১৬-১৯) কী অপূর্ব এক নিশ্চয়তা! যা ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, সেটার পরিপূর্ণতা আমরা উপভোগ করব এবং যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা দেখতে পাব। যিহোবার অধিকারভুক্ত সেই দিন কতই না অতুলনীয় হবে!

স্থায়ী আশীর্বাদগুলো

১৯, ২০. সখরিয় ১৪:৮, ৯ পদ আপনার কাছে কেন উৎসাহজনক?

১৯ সেই বিস্ময়কর সমাপ্তির পর, শয়তান ও তার মন্দ দূতেরা এক অগাধলোকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১-৩, ৭) এরপর খ্রিস্টের হাজার বছর রাজত্বকালে প্রচুর পরিমাণে আশীর্বাদ বর্ষিত হবে। সখরিয় ১৪:৮, ৯ পদ বলে: “সেই দিন যিরূশালেম হইতে জীবন্ত জল নির্গত হইবে, তাহার অর্দ্ধেক পূর্ব্বসমুদ্রের দিকে ও অর্দ্ধেক পশ্চিমসমুদ্রের দিকে যাইবে; তাহা গ্রীষ্ম ও শীতকালে থাকিবে। আর সদাপ্রভু সমস্ত দেশের উপরে রাজা হইবেন; সেই দিন সদাপ্রভু অদ্বিতীয় হইবেন, এবং তাঁহার নামও অদ্বিতীয় হইবে।”

২০ “জীবন্ত জল” বা “জীবন-জলের নদী” জীবনের জন্য যিহোবার ব্যবস্থাকে চিত্রিত করে, যা মশীহ রাজ্যের আসন থেকে বিরামহীনভাবে প্রবাহিত হবে। (প্রকাশিত বাক্য ২২:১, ২) হর্‌মাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত যিহোবার উপাসকদের এক বিস্তর লোক আদমের মৃত্যুর দণ্ডাদেশ থেকে মুক্ত হয়ে উপকৃত হবে। এমনকি যারা ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে, তারা পুনরুত্থানের মাধ্যমে উপকৃত হবে। এটা পৃথিবীর ওপর যিহোবার শাসনের এক নতুন পর্ব শুরু করবে। পৃথিবীব্যাপী লোকেরা যিহোবাকে নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম এবং একমাত্র উপাস্য ব্যক্তি হিসেবে স্বীকার করবে।

২১. আমাদের দৃঢ়সংকল্প কী হওয়া উচিত?

২১ হগয় ও সখরিয় যেসমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল এবং যেসকল পরিপূর্ণ হয়েছে সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে, ঈশ্বর তাঁর আত্মিক মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণে আমাদের করার জন্য যে-কার্যভার দিয়েছেন, তাতে এগিয়ে যাওয়ার জোরালো কারণ রয়েছে। সত্য উপাসনা এর পূর্ণতায় না পৌঁছানো পর্যন্ত আমরা সকলে যেন রাজ্যের আগ্রহকে প্রথম স্থানে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। সখরিয় ৮:৯ পদ আমাদেরকে জোরালো পরামর্শ দেয়: “ভাববাদীদের মুখে এই বর্ত্তমান কালে এই সকল কথা শুনিতে পাইতেছ যে তোমরা, তোমাদের হস্ত সবল হউক।”

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কোন ঐতিহাসিক সাদৃশ্য হগয় এবং সখরিয় বইগুলোকে আজকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে?

• হগয় এবং সখরিয়ের বইগুলো আমাদেরকে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো সম্বন্ধে কোন শিক্ষা প্রদান করে?

• হগয় এবং সখরিয়ের বইগুলো বিবেচনা করা কেন আমাদেরকে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আস্থা রাখার কারণ জোগায়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

হগয় এবং সখরিয় যিহুদিদেরকে পূর্ণহৃদয়ে কাজ করে আশীর্বাদ লাভ করার জন্য উৎসাহিত করেছিল

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি ‘আপন আপন গৃহে দৌড়িয়া যাইতেছেন’?

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবা একটা আশীর্বাদের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং তিনি তা দিয়েছিলেন