“আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি”
“আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি”
“সদাপ্রভুর দূত . . . কহিলেন, সদাপ্রভু কহেন, আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” —হগয় ১:১৩.
১. আমাদের দিনের জন্য কোন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সাদৃশ্যের বিষয়ে যিশু উল্লেখ করেছিলেন?
আমরা ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে বাস করছি। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতার দ্বারা যেমন প্রমাণিত হয়েছে, আমরা সেই ১৯১৪ সাল থেকে “প্রভুর দিনে” রয়েছি। (প্রকাশিত বাক্য ১:১০) আপনি হয়তো এই বিষয়বস্তু সম্বন্ধে ভালভাবে অধ্যয়ন করেছেন বলে জানেন যে, যিশু রাজ্যের ক্ষমতায় ‘মনুষ্যপুত্ত্রের সময়কে’ ‘নোহের সময়’ ও ‘লোটের সময়ের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। (লূক ১৭:২৬, ২৮) এভাবে বাইবেল ইঙ্গিত দেয় যে, এটা হল এক ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সাদৃশ্য। কিন্তু আরও একটা সাদৃশ্য রয়েছে, যা আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
২. হগয় এবং সখরিয়কে যিহোবা কোন দায়িত্ব দিয়েছিলেন?
২ আসুন আমরা এমন একটা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করি, যা ইব্রীয় ভাববাদী হগয় এবং সখরিয়ের দিনে বিদ্যমান ছিল। সেই দুজন বিশ্বস্ত ভাববাদী কোন বার্তা প্রদান করেছিল, যা আমাদের সময়ের যিহোবার লোকেদের জন্য নির্দিষ্টভাবে প্রযোজ্য? যিহুদিরা বাবিলের বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসার পর, তাদের কাছে হগয় এবং সখরিয় “সদাপ্রভুর দূত” হিসেবে এসেছিল। মন্দির পুনর্নিমাণে যিহোবা যে সাহায্য করবেন, সেই বিষয়ে ইস্রায়েলীয়দের নিশ্চিত করার জন্য তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। (হগয় ১:১৩; সখরিয় ৪:৮, ৯) যদিও হগয় এবং সখরিয়ের দ্বারা লিখিত বইগুলো ছোট কিন্তু সেগুলো ‘ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপির’ অংশ “[যা] শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী।”—২ তীমথিয় ৩:১৬.
সেগুলো আমাদের চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত
৩, ৪. হগয় এবং সখরিয়ের বার্তাগুলো কেন আমাদের কাছে আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত?
৩ নিঃসন্দেহে, হগয় এবং সখরিয়ের বার্তাগুলো তাদের দিনের যিহুদিদের জন্য উপকারী ছিল আর তাদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সেই সময়ে পরিপূর্ণ হয়েছিল। কিন্তু, কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আজকে এই বই দুটো আমাদের জন্যও চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত? ইব্রীয় ১২:২৬-২৯ পদে আমরা এই বিষয়ে একটা ইঙ্গিত খুঁজে পাই। সেখানে প্রেরিত পৌল হগয় ২:৬ পদ থেকে উদ্ধৃত করেছেন, যা বলে যে ঈশ্বর ‘আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে কম্পান্বিত করিবেন।’ পরিশেষে, সেই কম্পন ‘রাজগণের সিংহাসন উল্টাইয়া ফেলিবে, জাতিগণের সকল রাজ্যের পরাক্রম নষ্ট করিবে।’—হগয় ২:২২.
৪ হগয়ের বই থেকে উদ্ধৃত করে পৌল বলেন যে, “জাতিগণের সকল রাজ্যের” প্রতি কী ঘটবে ও সেইসঙ্গে তিনি সেই অকম্পনীয় রাজ্যের শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধেও তুলে ধরেন, যা অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা অধিকার লাভ করবে। (ইব্রীয় ১২:২৮) এখান থেকে আপনি দেখতে পারেন যে, হগয় এবং সখরিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো এমন একটা সময়কে নির্দেশ করে, যা আমাদের সাধারণ কালের প্রথম শতাব্দীতে যখন ইব্রীয় পুস্তক লেখা হয়েছিল, তখনও পরিপূর্ণ হয়নি। আজকে এখনও পৃথিবীতে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অবশিষ্টাংশরা রয়েছে, যারা যিশুর সঙ্গে মশীহ রাজ্যের উত্তরাধিকারী। তাই, আমাদের দিনে অবশ্যই হগয় এবং সখরিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর তাৎপর্য রয়েছে।
৫, ৬. কোন ঘটনাগুলো হগয় এবং সখরিয়কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পরিচালিত করেছিল?
৫ ইষ্রা বই কিছু ঐতিহাসিক পটভূমি সম্বন্ধে জানায়। সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে যিহুদিরা বাবিলের বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসার পর, দেশাধ্যক্ষ সরুব্বাবিল এবং মহাযাজক যিহোশূয় (অথবা যেশূয়) সা.কা.পূ. ৫৩৬ সালে নতুন মন্দিরের ভিত্তিমূল স্থাপনের কাজ দেখাশোনা করেছিল। (ইষ্রা ৩:৮-১৩; ৫:১) যদিও তা প্রচুর আনন্দের কারণ হয়েছিল কিন্তু শীঘ্রই যিহুদিরা ভয়ে জড়সড় হয়ে পড়েছিল। ইষ্রা ৪:৪ পদ বলে, “দেশের লোকেরা” অর্থাৎ বিরোধীরা “যিহূদার লোকদের হস্ত দুর্ব্বল করিতে ও নির্ম্মাণ-ব্যাপারে তাহাদিগকে উদ্বিগ্ন করিতে লাগিল।” এই শত্রুরা, বিশেষ করে শমরীয়রা যিহুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছিল। এই বিরোধীরা মন্দির নির্মাণ কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য পারস্যের রাজাকে প্ররোচিত করেছিল।—ইষ্রা ৪:১০-২১.
৬ মন্দিরের কাজে প্রথমে যে-আগ্রহ ছিল, তা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছিল। যিহুদিরা ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করেছিল। কিন্তু, মন্দিরের ভিত্তিমূল স্থাপন করার ১৬ বছর পর সা.কা.পূ. ৫২০ সালে মন্দিরের কাজ পুনরায় শুরু করার জন্য লোকেদের উদ্দীপিত করতে যিহোবা হগয় এবং সখরিয়কে কার্যভার দিয়েছিলেন। (হগয় ১:১; সখরিয় ১:১) ঈশ্বরের বার্তাবাহকদের মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে এবং যিহোবার সাহায্য সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ পেয়ে, যিহুদিরা পুনরায় মন্দিরের কাজ শুরু করে এবং সা.কা.পূ. ৫১৫ সালে তা সমাপ্ত করে।—ইষ্রা ৬:১৪, ১৫.
৭. ভাববাদীদের দিনের পরিস্থিতির সঙ্গে আধুনিক সময়ের কোন সাদৃশ্য রয়েছে?
৭ আমাদের জন্য এই সমস্তকিছুর তাৎপর্য কী, আপনি কি তা জানেন? আমাদের সেই কাজ করতে হবে, যা “রাজ্যের সুসমাচার” প্রচারের সঙ্গে যুক্ত। (মথি ২৪:১৪) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, সেই কাজের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। প্রাচীন যিহুদিরা যেমন বাবিলের আক্ষরিক বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়েছিল, তেমনই যিহোবার আধুনিক দিনের লোকেরা মহতী বাবিল অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়েছিল। ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তিরা প্রচার করার, শিক্ষা দেওয়ার এবং লোকেদেরকে সত্য উপাসনার দিকে পরিচালিত করার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছিল। সেই কাজ আজকে এমনকি আরও ব্যাপক মাত্রায় করা হচ্ছে আর আপনি হয়তো তাতে অংশ নিচ্ছেন। এখনই তা করার সময় কারণ দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ একেবারে কাছেই! ঈশ্বরদত্ত এই কাজ অবশ্যই ততদিন পর্যন্ত চলবে, যতদিন পর্যন্ত না যিহোবা ‘মহাক্লেশের’ সময় মানুষের বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করেন। (মথি ২৪:২১) এটা দুষ্টতাকে দূর করবে এবং এর ফলে সত্য উপাসনা পৃথিবীতে পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
৮. কেন আমাদের কাজের ওপর ঈশ্বরের সাহায্যের বিষয়ে আস্থা রাখতে পারি?
৮ হগয় এবং সখরিয়ের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যেমন দেখায়, আমরাও পূর্ণহৃদয়ে এই কাজে অংশ নেওয়ার সময়ে যিহোবার সাহায্য এবং আশীর্বাদের বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি। ঈশ্বরের দাসদের দমন করার অথবা তাদের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয়ে কারো কারো প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, কোনো সরকারই সুসমাচার প্রচার কাজের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে পারেনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, দশকের পর দশক ধরে ও আমাদের সময় পর্যন্ত যিহোবা যেভাবে রাজ্যের কাজে বৃদ্ধি দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন, তা চিন্তা করুন। তবে, এখনও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে।
৯. প্রাচীন কোন পরিস্থিতির প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং কেন?
৯ হগয় এবং সখরিয় বই থেকে আমরা যা শিখেছি, তা কীভাবে আমাদেরকে প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার ঐশিক আদেশের প্রতি আরও বাধ্য হতে উদ্দীপিত করতে পারে? আসুন আমরা কয়েকটা শিক্ষাতে মনোযোগ দিই, যেগুলো আমরা বাইবেলের এই দুটো বই থেকে পেতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, সেই মন্দির নির্মাণ কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু বিস্তারিত বিষয় বিবেচনা করুন, যা ফিরে আসা যিহুদিদের করতে হয়েছিল। যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে-যিহুদিরা বাবিল থেকে যিরূশালেমে ফিরে এসেছিল তারা মন্দিরে তাদের কাজ চালিয়ে যায়নি। ভিত্তিমূল স্থাপন করার পর তারা ধীর হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে কোন ভুল দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছিল? আর সেটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করা
১০. যিহুদিরা কোন ভুল দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছিল আর এর ফল কী হয়েছিল?
১০ ফিরে আসা যিহুদিরা বলেছিল: “সময়, উপস্থিত হয় নাই।” (হগয় ১:২) সাধারণ কাল পূর্ব ৫৩৬ সালে ভিত্তিমূল স্থাপন করে তারা যখন মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল, তখন তারা বলেনি যে, “সময় উপস্থিত হয় নাই।” কিন্তু, শীঘ্রই তারা প্রতিবেশীদের বিরোধিতা এবং শাসনকর্তার হস্তক্ষেপের দ্বারা নিজেদের প্রভাবিত হতে দিয়েছিল। যিহুদিরা তাদের নিজেদের ঘরবাড়ি এবং আরামআয়েশের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে শুরু করেছিল। উত্তম কাঠ দিয়ে তৈরি তাদের নিজেদের ঘরবাড়ির সঙ্গে অসমাপ্ত মন্দিরের বৈসাদৃশ্য দেখিয়ে যিহোবা জিজ্ঞেস করেছিলেন: “এই কি তোমাদের আপন আপন ছাদ আঁটা গৃহে বাস করিবার সময়? এই গৃহ ত উৎসন্ন রহিয়াছে।”—হগয় ১:৪.
১১. কেন যিহোবাকে হগয়ের সময়ের যিহুদিদের পরামর্শ দিতে হয়েছিল?
১১ হ্যাঁ, যিহুদিদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। মন্দির পুনর্নিমাণ করার বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্যকে প্রথম স্থানে রাখার পরিবর্তে, ঈশ্বরের লোকেরা নিজেদের প্রতি এবং তাদের বাসস্থানের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিল। ঈশ্বরের উপাসনা গৃহের কাজকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। হগয় ১:৫ পদে লিপিবদ্ধ যিহোবার বাক্য যিহুদিদের ‘আপন আপন পথ আলোচনা করিতে’ উৎসাহিত করেছিল। যিহোবা তাদের কাজ থেকে বিরত হতে এবং তারা যা করেছিল, সেই বিষয়ে ধ্যান করতে বলেছিলেন আর সেইসঙ্গে মন্দির নির্মাণের কাজ তাদের জীবনে প্রথমে না রাখায় তারা কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছিল, সেই বিষয়টা বিবেচনা করতে বলেছিলেন।
১২, ১৩. হগয় ১:৬ পদ কীভাবে যিহুদিদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে বর্ণনা করে এবং সেই পদের অর্থ কী?
১২ আপনি যেমন কল্পনা করতে পারেন যে, অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে ভুল জায়গায় স্থাপন করায় যিহুদিরা ব্যক্তিগতভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। হগয় ১:৬ পদে প্রকাশিত যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করুন: “তোমরা অনেক বীজ বপন করিয়াও অল্প সঞ্চয় করিতেছ, আহার করিয়াও তৃপ্ত হইতেছ না, পান করিয়াও আপ্যায়িত হইতেছ না, পরিচ্ছদ পরিয়াও উষ্ণ হইতেছ না, এবং বেতনজীবী লোক ছেঁড়া থলিতে বেতন রাখে।”
১৩ যদিও যিহুদিরা ঈশ্বর তাদেরকে যে-দেশ দিয়েছিলেন সেই দেশে ছিল, তবুও সেটা তাদের চাহিদামতো উৎপাদনশীল ছিল না। যিহোবা আশীর্বাদ করা থেকে বিরত ছিলেন, যে-বিষয়ে তিনি আগেই সাবধান করে দিয়েছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৩৮-৪৮) তাঁর সাহায্য ছাড়া যিহুদিরা বীজ বপন করেছিল কিন্তু অল্প শস্য পেয়েছিল অর্থাৎ তাদেরকে পরিতৃপ্ত করার মতো যথেষ্ট খাবার ছিল না। তাঁর আশীর্বাদ না থাকায় তারা উষ্ণ পোশাক পরিধান করতে পারেনি। এমনকি মনে হয়েছিল যে, তারা যে-অর্থ উপার্জন করত তা ছেঁড়া থলিতে রাখত, ফলে অর্থ উপার্জনকারীদের কোনো উপকারই হতো না। এই অভিব্যক্তিটির অর্থ কী: “পান করিয়াও আপ্যায়িত হইতেছ না”? এই অভিব্যক্তিটা যিহুদিদের প্রতি ঈশ্বরের আশীর্বাদ না থাকার আরেকটা উল্লেখ। তারা যে-দ্রাক্ষারসই তৈরি করুক না কেন, তা সীমিত থাকবে, তাদেরকে আপ্যায়িত করার মতো যথেষ্ট হবে না।
১৪, ১৫. হগয় ১:৬ পদ থেকে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করি?
১৪ এই সমস্তকিছু থেকে আমাদের যে-শিক্ষা লাভ করা উচিত, সেটা আমাদের ঘরবাড়ির নকশা অথবা সাজানোর বিষয়ে নয়। বন্দিত্বে যাওয়ার অনেক আগে, ভাববাদী আমোষ ইস্রায়েলের ধনী ব্যক্তিদেরকে তাদের ‘হস্তিদন্তের গৃহের’ এবং ‘হস্তিদন্তের শয্যায় শয়ন করিবার’ জন্য তিরস্কার করেছিলেন। (আমোষ ৩:১৫; ৬:৪) সেই বিলাসবহুল বাড়ি এবং সুসজ্জিত আসবাবপত্র স্থায়ী হয়নি। শত্রুরা তাদেরকে পরাজিত করে এগুলো লুঠ করে নিয়ে গিয়েছিল। অথচ, বেশ কয়েক বছর পর অর্থাৎ ৭০ বছর বন্দিত্বের পর, ঈশ্বরের অনেক লোক এই বিষয়টা থেকে শিক্ষা লাভ করেনি। আমরা কি করব? আমাদের প্রত্যেকের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উপযুক্ত হবে: ‘সত্যি করে বললে, আমার বাড়ি এবং এর সৌন্দর্যবৃদ্ধির ওপর আমি কতখানি গুরুত্ব দিই? কোনো কেরিয়ারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত পড়াশোনা করার ব্যবস্থা সম্বন্ধে কী বলা যায়, যদিও তা করার জন্য বেশ কয়েক বছরের বেশির ভাগ সময় চলে যেতে পারে আর এর ফলে আমার আধ্যাত্মিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো চাপা পড়ে যেতে পারে?’—লূক ১২:২০, ২১; ১ তীমথিয় ৬:১৭-১৯.
১৫ হগয় ১:৬ পদে আমরা যা পড়ি, সেটার দ্বারা আমাদের জীবনে ঈশ্বরের আশীর্বাদের প্রয়োজন সম্বন্ধে সতর্ক হওয়া উচিত। প্রাচীনকালের যিহুদিদের ঈশ্বরের আশীর্বাদের অভাব ছিল আর তাই তারা চরম ক্ষতি ভোগ করেছিল। আমাদের প্রচুর পরিমাণে বস্তুগত সম্পদ থাকুক বা না-ই থাকুক, আমরা যদি যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করতে ব্যর্থ হই, তা হলে সেটা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবেই করবে। (মথি ২৫:৩৪-৪০; ২ করিন্থীয় ৯:৮-১২) কিন্তু, কীভাবে আমরা সেই আশীর্বাদ লাভ করতে পারি?
যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে সাহায্য করেন
১৬-১৮. প্রাচীন পটভূমিতে সখরিয় ৪:৬ পদের অর্থ কী?
১৬ হগয়ের সহভাববাদী সখরিয় সেই মাধ্যম সম্বন্ধে তুলে ধরতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যার দ্বারা যিহোবা তখনকার ধার্মিক ব্যক্তিদের অনুপ্রাণিত এবং আশীর্বাদ করেছিলেন। আর এটা দেখায় যে, কীভাবে তিনি আপনাকেও আশীর্বাদ করবেন। আমরা পড়ি: “‘পরাক্রম দ্বারা নয়, বল দ্বারাও নয়, কিন্তু আমার আত্মা দ্বারা’, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু বলেন।” (সখরিয় ৪:৬) আপনি হয়তো প্রায়ই এই পদের উদ্ধৃতি শুনে থাকেন কিন্তু হগয় এবং সখরিয়ের দিনের যিহুদিদের জন্য এই পদের অর্থ কী ছিল আর আপনার জন্য এর অর্থ কী?
১৭ মনে করে দেখুন যে, সেই সময়ে হগয় এবং সখরিয়ের অনুপ্রাণিত বাক্যগুলোর এক চমৎকার প্রভাব ছিল। এই দুজন ভাববাদী যা বলেছিল, তা বিশ্বস্ত যিহুদিদের পুনরায় সতেজ করেছিল। হগয় সা.কা.পূ. ৫২০ সালের ষষ্ঠ মাসে ভবিষ্যদ্বাণী বলতে শুরু করেছিলেন। আর সখরিয় সেই বছরের অষ্টম মাসে ভবিষ্যদ্বাণী বলতে শুরু করেছিলেন। (সখরিয় ১:১) আপনি যেমন হগয় ২:১৮ পদ থেকে দেখতে পারেন যে, ভিত্তিমূল স্থাপনের কাজ নবম মাসে পূর্ণ উদ্যমে পুনরায় শুরু হয়েছিল। ফলে, যিহুদিরা কাজ করতে উদ্দীপিত হয়েছিল এবং যিহোবার সমর্থনে আস্থা রেখে তারা তাঁর বাধ্য হয়েছিল। সখরিয় ৪:৬ পদের কথাগুলো ঈশ্বরের সাহায্যের বিষয়ে বর্ণনা করে।
১৮ যিহুদিরা যখন সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে তাদের নিজ দেশে ফিরে এসেছিল, তখন তাদের কোনো পরাক্রম বা সৈন্যবাহিনী ছিল না। তবুও, যিহোবা তাদেরকে রক্ষা করেছিলেন এবং বাবিল থেকে তাদের যাত্রায় নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আর এর অল্প সময় পরে তারা যখন মন্দিরের কাজ শুরু করেছিল, তখন তাঁর আত্মা বিভিন্ন বিষয়ে পরিচালনা দিয়েছিল। একবার তারা যখন পূর্ণহৃদয়ে পুনরায় কাজ শুরু করেছিল, তখন তিনি তাঁর পবিত্র আত্মা দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেছিলেন।
১৯. ঈশ্বরের আত্মা কোন দৃঢ় প্রভাব কাটিয়ে উঠেছিল?
১৯ আটটি ধারাবাহিক দর্শনের মাধ্যমে সখরিয়কে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল যে, যিহোবা তাঁর সেই লোকেদের সঙ্গে থাকবেন, যারা বিশ্বস্তভাবে মন্দিরের কাজ শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন করবে। ৩ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ চতুর্থ দর্শনটি দেখায় যে, যিহুদিদের মন্দির নির্মাণ সমাপ্ত করার প্রচেষ্টাকে বাধা দেওয়ার জন্য শয়তান সক্রিয় ছিল। (সখরিয় ৩:১) মহাযাজক যিহোশূয় লোকেদের পক্ষে নতুন মন্দিরে সেবা করবে, শয়তান এটা দেখে কোনোভাবেই খুশি হতে পারে না। দিয়াবল যদিও যিহুদিদের মন্দির নির্মাণ করা থেকে বিরত করতে সক্রিয় ছিল, তবুও যিহোবার আত্মা বাধাগুলো সরিয়ে দেওয়ার এবং মন্দিরের কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়ার জন্য যিহুদিদের শক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
২০. কীভাবে পবিত্র আত্মা যিহুদিদেরকে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে সাহায্য করেছিল?
২০ মনে হয়েছিল যেন সেখানে বিরোধিতার এক অপ্রতিরোধ্য বাধা ছিল, যা সেই সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এসেছিল, যারা কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হওয়া এই ‘পর্ব্বতকে’ অপসারিত করে ‘সমভূমিতে’ পরিণত করা হবে। (সখরিয় ৪:৭) আর ঠিক তা-ই ঘটেছিল! রাজা দারিয়াবস ১ম এক অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন এবং কোরসের সেই লিখিত মূল নথি খুঁজে পেয়েছিলেন, যেখানে যিহুদিদেরকে মন্দির পুনর্নিমাণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাই দারিয়াবস নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন এবং কাজের খরচ প্রদানে সাহায্য করার জন্য রাজকীয় কোষাগার থেকে যিহুদিদের টাকাপয়সা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। কী এক বিস্ময়কর পরিবর্তন! যিহোবার আত্মা কি এতে কোনো ভূমিকা পালন করেছিল? আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, করেছিল। সা.কা.পূ. ৫১৫ সালে, দারিয়াবস ১ম এর শাসনের ষষ্ঠ বছরে মন্দিরের কাজ সমাপ্ত হয়েছিল।—ইষ্রা ৬:১, ১৫.
২১. (ক) প্রাচীনকালে কীভাবে ঈশ্বর “সর্ব্বজাতিকে কম্পাম্বিত” করেছিলেন আর কীভাবে “মনোরঞ্জন বস্তু সকল” এসেছিল? (খ) আধুনিক দিনে এর পরিপূর্ণতা কী?
২১ হগয় ২:৫ পদে, ভাববাদী যিহুদিদেরকে সেই চুক্তি সম্বন্ধে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, যেটা যিহোবা সীনয় পর্বতে তাদের সঙ্গে করেছিলেন, যখন ‘সমস্ত পর্ব্বত অতিশয় কাঁপিতেছিল।’ (যাত্রাপুস্তক ১৯:১৮) হগয় এবং সখরিয়ের দিনে যিহোবা ভিন্ন এক কম্পন সৃষ্টি করতে চলেছিলেন, যেমনটা ৬ ও ৭ পদে রূপক ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। পারস্য সাম্রাজ্যের বিভিন্ন পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল হয়ে উঠেছিল কিন্তু মন্দিরের কাজ এর সমাপ্তির দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। ন-যিহূদি অর্থাৎ “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল” পরিশেষে যিহুদিদের সঙ্গে সেই উপাসনাস্থলে ঈশ্বরের গৌরব করেছিল। আমাদের দিনে আমাদের খ্রিস্টীয় প্রচার কাজের মাধ্যমে ঈশ্বর বড় আকারে “সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত” করেছেন আর “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল” অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশের সঙ্গে ঈশ্বরের উপাসনার দিকে এসেছে। প্রকৃতপক্ষেই, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এবং আরও মেষ একত্রে বর্তমানে যিহোবার গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করছে। এই সত্য উপাসকরা বিশ্বাস সহকারে সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছে, যখন যিহোবা অন্য অর্থে “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে কম্পান্বিত” করবেন। জাতিগণের সকল রাজ্যের শক্তিকে পরাস্ত এবং সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য সেটা করা হবে।—হগয় ২:২২.
২২. কীভাবে জাতিগণ “কম্পান্বিত” হচ্ছে এবং এর ফলে কী হয়েছে আর এখনও কী ঘটার বাকি আছে?
২২ আমাদেরকে সেই বিরাট পরিবর্তন সম্বন্ধে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যা “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী এবং সমুদ্র ও শুষ্ক ভূমি” দ্বারা চিত্রিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘটেছে। একটা ক্ষেত্র হল, শয়তান দিয়াবল ও তার মন্দ দূতেদের পৃথিবীর সীমার মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-১২) এ ছাড়া, ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে প্রচার কাজ নিশ্চিতভাবেই এই বিধিব্যবস্থার পার্থিব ক্ষেত্রগুলোকে কম্পান্বিত করেছে। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮) তা সত্ত্বেও, সর্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকলের এক “বিস্তর লোক” যিহোবার সেবা করার জন্য আত্মিক ইস্রায়েলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০) অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সঙ্গে বিস্তর লোক রাজ্যের এই সুসমাচার প্রচার কাজ করছে যে, শীঘ্রই হরমাগিদোনে ঈশ্বর জাতিগুলোকে কম্পান্বিত করবেন। এই ঘটনা সত্য উপাসনাকে পৃথিবীব্যাপী এর পূর্ণতায় নিয়ে আসার পথ খুলে দেবে।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কখন এবং কোন পরিস্থিতিগুলোতে হগয় এবং সখরিয় পরিচর্যা করেছিল?
• হগয় এবং সখরিয় বইয়ের মধ্যে যে-বার্তা রয়েছে, তা আপনি কীভাবে কাজে লাগাতে পারেন?
• সখরিয় ৪:৬ পদকে কেন আপনি উৎসাহজনক বলে মনে করেন?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
হগয় এবং সখরিয়ের লেখাগুলো আমাদেরকে ঈশ্বরের সাহায্য সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেয়
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
“এই কি তোমাদের আপন আপন ছাদ আঁটা গৃহে বাস করিবার সময়? এই গৃহ ত উৎসন্ন রহিয়াছে”
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার লোকেরা ‘জাতিগণের মনোরঞ্জন ব্যক্তিদের’ কাছে পৌঁছানোর কাজে অংশ নেয়