কীভাবে আপনি ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?
কীভাবে আপনি ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?
যুক্তরাষ্ট্রে এক ভদ্রলোক ২৫,০০০ মার্কিন ডলারের একটা চেক নিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন। তিনি সেটা ফিক্সড ডিপোজিট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সেই ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাকে সেই অর্থ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পরামর্শ দেন, এই দাবি করে যে, শেয়ার বাজারে কখনোই এর মূল্য কমে যায় না। সেই ভদ্রলোক তার পরামর্শ শোনার সিদ্ধান্ত নেন। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যে তার বিনিয়োগে বড় ধরনের লোকসান হয়।
এই অভিজ্ঞতা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু জীবনে আমাদের যে-বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে হয়, সেগুলোর বিষয়ে কী বলা যায়? অনেক সিদ্ধান্তের ফলাফল হতে পারে সাফল্য অথবা ব্যর্থতা—আর আজ হোক বা কাল হোক, জীবন বা মৃত্যু। তা হলে, কীভাবে আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারি যে, আমরা বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিচ্ছি?
“এই পথ”
কী খাব, কী পরব, কোথায় যাব ও এইরকম আরও অন্যান্য বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। কিছু কিছু সিদ্ধান্তকে হয়তো সামান্য ব্যাপার বলে মনে হতে পারে কিন্তু সেগুলো এক গুরুতর পরিণতি নিয়ে আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথমবার সিগারেট খাওয়া ধূমপানের এক আজীবন অভ্যাসে পরিণত হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে ছোট সিদ্ধান্ত বলে মনে হলেও, আমাদের কখনো এর গুরুত্বকে ছোট করে দেখা উচিত নয়।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়, এমনকি আপাতদৃষ্টিতে ছোট বলে মনে হয় এমন বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও, আমরা কার ওপর নির্ভর করতে পারি? যখন আমরা কোনো কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হই, তখন আমাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য একজন নির্ভরযোগ্য উপদেষ্টা থাকলে, তা কত চমৎকারই না হবে! আপনি এইরকম এক উপদেষ্টা খুঁজে পেতে পারেন। বর্তমান সময়ের জন্য এক বার্তাসহ প্রাচীন একটি বই এই কথা বলে: “তোমার কর্ণ পশ্চাৎ হইতে এই বাণী শুনিতে পাইবে, এই পথ, তোমরা এই পথেই চল।” (যিশাইয় ৩০:২১) এই কথাগুলো কার? আর আপনি কীভাবে নিশ্চিত হতে পারেন যে, তাঁর নির্দেশনা নির্ভরযোগ্য?
ওপরের আশ্বাসবাণীটি বাইবেলে পাওয়া যায়, যে-বইটিকে লক্ষ লক্ষ লোক অধ্যয়ন করেছে এবং উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, এটি সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) যিহোবা জানেন যে, আমরা কীভাবে নির্মিত আর তাই তিনিই হলেন আমাদের নির্দেশনার সর্বোত্তম উৎস। এ ছাড়া, তিনি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধেও জানতে পারেন কারণ তিনি ‘শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করেন, যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে জানান, আর বলেন, আমার মন্ত্রণা স্থির থাকিবে।’ (যিশাইয় ৪৬:১০) তাই, একজন গীতরচক যিহোবার বাক্যের ওপর তার নির্ভরতাকে এভাবে প্রকাশ করেছিলেন: “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।” (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) তা সত্ত্বেও, কীভাবে যিহোবা আজকের জগতের সমস্যাপূর্ণ জলের মধ্যে দিয়ে আমাদের পথকে নিরাপদে পরিচালিত করেন? কীভাবে আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারি?
বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করুন
যিহোবা ঈশ্বর খ্রিস্টানদের ঐশিক নীতিগুলো দিয়েছেন যাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারে। বাইবেলের নীতিগুলো শেখা এবং সেগুলো প্রয়োগ করাকে একটা ভাষা শেখা ও তা বলার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সেই ভাষার ওপর দক্ষ হয়ে গেলে, আপনি প্রায়ই বলতে পারেন যে, কখন একজন ব্যক্তি ব্যাকরণগত ভুলগুলো করেছে কারণ তিনি যা বলেছেন, তা সঠিক শোনায়নি। আপনি হয়তো সেই কথার মধ্যে ঠিক কী কী ব্যাকরণগত ভুল হয়েছে, তা বলতে পারবেন না কিন্তু আপনি জানেন যে, তা ভুল। আপনি যখন বাইবেলের নীতিগুলো শিখে আপনার জীবনে প্রয়োগ করার মতো অবস্থানে পৌঁছান, তখন আপনি সাধারণত বলতে পারেন যে, কখন একটা সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি ও ঐশিক নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রাখেনি।
উদাহরণস্বরূপ, একজন যুবক হয়তো তার হেয়ারস্টাইল বাছাই করার ক্ষেত্রে যে-সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হতে পারে, তা বিবেচনা করুন। বাইবেলের কোনো আদেশই নির্দিষ্টভাবে কোনো হেয়ারস্টাইলকে খারাপ বলে না। তা সত্ত্বেও, বাইবেলের একটি নীতি বিবেচনা করুন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “নারীগণও সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করুক; বেণীবদ্ধ কেশপাশে ও স্বর্ণ বা মুক্তা বা বহুমূল্য পরিচ্ছদ দ্বারা নয়, কিন্তু—যাহা ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারিণী নারীগণের যোগ্য—সৎক্রিয়ায় ভূষিতা হউক।” (১ তীমথিয় ২:৯, ১০) এখানে পৌল নারীদের বিষয় লিখছেন কিন্তু সেই নীতিটি নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি প্রযোজ্য। এখানে নীতিটি কী? আমাদের বেশভূষায় সলজ্জ বা শালীনতা এবং সুবুদ্ধি প্রকাশ পাওয়া উচিত। তাই, একজন যুবক নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারে, ‘আমার হেয়ারস্টাইল কি একজন খ্রিস্টানের জন্য উপযুক্ত এমন শালীনতা প্রকাশ করবে?’
অধিকন্তু, একজন যুবক ব্যক্তি, শিষ্য যাকোবের এই কথাগুলো থেকে কোন সাহায্যকারী নীতিটি বের করে আনতে পারে? “হে ব্যভিচারিণীগণ, তোমরা কি জান না যে, জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা? সুতরাং যে কেহ জগতের মিত্র হইতে বাসনা করে, সে আপনাকে ঈশ্বরের শত্রু করিয়া তুলে।” (যাকোব ৪:৪) খ্রিস্টানরা জগতের বন্ধু হওয়ার—যা তাদেরকে ঈশ্বরের শত্রু করে তোলে—চিন্তাভাবনাকে ঘৃণা করে। তার বন্ধুরা যে-ধরনের হেয়ারস্টাইল পছন্দ করে, সেটা কি তাকে ঈশ্বরের বন্ধু বলে মনে করাবে নাকি জগতের বন্ধু বলে মনে করাবে? যে-যুবক হেয়ারস্টাইলের বিষয়ে প্রশ্নটা নিয়ে চিন্তা করছে, সে এক বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এই ধরনের বাইবেলভিত্তিক নীতিগুলো কাজে লাগাতে পারে। হ্যাঁ, ঐশিক নীতিগুলো আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। আর যখন আমরা ঈশ্বরীয় নীতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তগুলো নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠি, তখন সেই বিজ্ঞ উপসংহারে আসা সহজতর হয়ে ওঠে, যেগুলোর কোনো নেতিবাচক পরিণতি থাকবে না।
আমরা ঈশ্বরের বাক্যে অনেক নীতি খুঁজে পেতে পারি। অবশ্য, আমরা হয়তো এমন কোনো শাস্ত্রপদ না-ও আদিপুস্তক ৪:৬, ৭, ১৩-১৬; দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৫-২০; ১ করিন্থীয় ১০:১১) এই ধরনের বিবরণ পড়ে ও ফলাফলগুলোকে বিশ্লেষণ করে আমরা সেই ঐশিক নীতিগুলোকে উপলব্ধি করতে পারব, যেগুলো আমাদের এমন সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করবে, যা ঈশ্বরকে খুশি করে।
পেতে পারি, যেটি নির্দিষ্টভাবে আমাদের পরিস্থিতির প্রতি প্রযোজ্য। তা সত্ত্বেও, কীভাবে কিছু লোক ঐশিক নির্দেশনার বাধ্য হয়েছিল এবং কীভাবে অন্যেরা ঐশিক সাবধানবাণীগুলোকে উপেক্ষা করছিল, সেই বিষয়ে আমরা পড়তে পারি। (উদাহরণ হিসেবে, প্রেরিত পিতরের সঙ্গে যিশু খ্রিস্টের যে-সংক্ষিপ্ত কথাবার্তা হয়েছিল, তা বিবেচনা করুন। যে-লোকেরা আধুলি বা কর আদায় করত, তারা পিতরকে জিজ্ঞেস করেছিল: “তোমাদের গুরু কি আধুলি দেন না?” পিতর উত্তর দিয়েছিলেন: “দিয়া থাকেন।” এর কিছুক্ষণ পরই যিশু পিতরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “পৃথিবীর রাজারা কাহাদের হইতে কর বা রাজস্ব গ্রহণ করিয়া থাকেন? কি আপন সন্তানদের হইতে, না অন্য লোক হইতে?” পিতর যখন বলেছিলেন: “অন্য লোক হইতে,” তখন যিশু তাকে বলেছিলেন: “তবে সন্তানেরা স্বাধীন। তথাপি আমরা যেন উহাদের বিঘ্ন না জন্মাই, এই জন্য তুমি সমুদ্রে গিয়া বড়শী ফেল, তাহাতে প্রথমে যে মাছটী উঠিবে, সেইটি ধরিয়া তাহার মুখ খুলিলে একটী টাকা পাইবে; সেইটী লইয়া আমার এবং তোমার নিমিত্ত উহাদিগকে দেও।” (মথি ১৭:২৪-২৭) এই বিবরণে আমরা কোন ঐশিক নীতিগুলো পাই?
পর পর কয়েকটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে যিশু পিতরকে এভাবে যুক্তি করতে সাহায্য করেছিলেন: ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে যিশু করমুক্ত ছিলেন। যদিও পিতর প্রথমে সেই বিষয়টা বুঝতে পারেননি কিন্তু যিশু তাকে তা বুঝতে সদয়ভাবে সাহায্য করেছিলেন। অন্যেরা কোনো ভুল করলে কর্কশভাবে তাদের ভুলটা ধরিয়ে না দিয়ে বা তাদেরকে তিরস্কার না করে, আমরা হয়তো যিশুকে অনুকরণ করে তাদের প্রতি সমবেদনার সঙ্গে ব্যবহার করতে চাইব।
এরপরই পিতর কর দেওয়ার কারণটা বুঝতে পেরেছিলেন আর সেটা হল, অন্যেরা যেন বিঘ্ন না পায়। এই বিবরণ থেকে আমরা আরেকটি নীতি শিখতে পারি। আমাদের অধিকারগুলোর বিষয়ে নাছোড়বান্দা হওয়ার চেয়ে অন্যদের বিবেকের কথা বিবেচনা করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কী আমাদের এমন সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করবে, যেগুলো অন্যদের বিবেকের প্রতি সম্মান দেখাবে? আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি ভালবাসা। যিশু খ্রিস্ট শিখিয়েছিলেন যে, প্রতিবেশীকে নিজের মতো করে ভালবাসা হচ্ছে গুরুত্বের দিক দিয়ে সেই আজ্ঞার চেয়ে দ্বিতীয়, যা হল সর্বান্তঃকরণে ঈশ্বরকে ভালবাসতে হবে। (মথি ২২:৩৯) কিন্তু, আমরা এক আত্মকেন্দ্রিক জগতে বাস করি আর আমাদের পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলো আমাদের স্বার্থপর হওয়ার দিকে পরিচালিত করে। তাই, একজন ব্যক্তি যদি তার প্রতিবেশীকে নিজের মতো করে ভালবাসতে চায়, তা হলে তাকে তার মনকে নতুন করতে হবে।—রোমীয় ১২:২.
অনেকে এইরকম পরিবর্তনগুলো করেছে আর তারা ছোট বা বড় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় অন্যের কথা বিবেচনা করে। পৌল লিখেছিলেন: “কারণ, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা স্বাধীনতার জন্য আহূত হইয়াছ; কেবল দেখিও, সেই স্বাধীনতাকে মাংসের পক্ষে সুযোগ করিও না, বরং প্রেমের দ্বারা এক জন অন্যের দাস হও।” (গালাতীয় ৫:১৩) আমরা কীভাবে তা করতে পারি? একজন যুবতীর কথা চিন্তা করুন, যে লোকেদেরকে ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করার জন্য এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছিল। লোকেদের সঙ্গে কথা বলার সময় সে লক্ষ করেছিল যে, যদিও তার পোশাক শহুরে ফ্যাশন অনুযায়ী মার্জিতই ছিল কিন্তু তার পোশাক-আশাক নিয়ে সেখানে সবাই সমালোচনা করছিল। তার পোশাক ও সাজগোজ মার্জিত ছিল কিন্তু তারপরেও সে কম রংচঙে পোশাক পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, “যেন ঈশ্বরের বাক্য নিন্দিত না হয়।”—তীত ২:৫.
আপনার সাজগোজ বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হলে আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন? আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, যিহোবা খুবই খুশি হবেন, যখন আপনার সিদ্ধান্তগুলো অন্যদের বিবেকের প্রতি আপনার চিন্তাকে প্রতিফলিত করে।
এক সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলুন
বাইবেলের নীতিগুলো ও অন্যদের বিবেকের বিষয়টা ছাড়াও, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমরা হয়তো আর কী বিবেচনা করতে পারি? যদিও খ্রিস্টানদের পথ অমসৃণ ও সংকীর্ণ কিন্তু ঈশ্বর তাঁর নির্ধারিত সীমার মধ্যেই তাদেরকে অনেক স্বাধীনতা প্রদান করেন। (মথি ৭:১৩, ১৪) আমাদের বিবেচনা করতে হবে যে, কীভাবে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতে আমাদের আধ্যাত্মিক, মানসিক, আবেগগত এবং শারীরিক মঙ্গলকে প্রভাবিত করবে।
ধরুন, আপনি কোনো চাকরি করার কথা ভাবছেন। হয়তো আপনার কাজের মধ্যে অনৈতিক বা ভুল কিছুই নেই। আপনি খ্রিস্টীয় সভাগুলো ও সম্মেলনগুলোতে যোগ দিতে পারবেন। বেতন আপনার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি হবে। নিয়োগকর্তা আপনার দক্ষতাকে খুবই মূল্য দেন এবং তিনি আপনাকে যথাসম্ভব পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে চান। এর পাশাপাশি, আপনিও কাজটাকে পছন্দ করেন। কোনোকিছুর দ্বারা কি আপনার সেই প্রস্তাবটা গ্রহণ করা থেকে বিরত হওয়া উচিত? কী হবে যদি আপনি আগে থেকেই বুঝতে পারেন যে, আপনার পক্ষে সেই কাজের প্রেমে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে? আপনাকে বলা হয়েছে যে, আপনাকে ওভারটাইম করার জন্য জোর করা হবে না। কিন্তু, কোনো প্রকল্প শেষ করার জন্য আপনি কি আপনার নির্ধারিত কাজের সময়ের চেয়ে আরও বেশি সময় দিতে ইচ্ছুক হবেন? এইরকম ওভারটাইম কি প্রায়ই করতে হবে? সেটা কি আপনাকে আপনার পরিবার ও পরিশেষে আধ্যাত্মিক কাজগুলো থেকে সরিয়ে ফেলতে পারে, যেগুলো কখনোই আপনার বাদ দেওয়া উচিত নয়?
জিম নামে একজন ব্যক্তি তার চাকরির ব্যাপারে কীভাবে এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা বিবেচনা করুন। তিনি অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করেছিলেন এবং তার ক্রমাগত পদোন্নতি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি পুরো প্রাচ্যে তার কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক হয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এই কোম্পানির শাখায় প্রধান নির্বাহী আধিকারিক হয়েছিলেন এবং ইউরোপে এর কর্মক্ষেত্রে পরিচালক বোর্ডের একজন সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু, জাপানে যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, টাকাপয়সা ও ক্ষমতার পিছনে ছোটা কতখানি নিষ্ফল। তার কষ্টার্জিত টাকাপয়সা শীঘ্রই ফুরিয়ে গিয়েছিল। তিনি তার জীবনের উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘এখন থেকে দশ বছর পর আমি কী করব?’ এরপর তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, তার স্ত্রী ও সন্তানরা আরও বেশি অর্থপূর্ণ লক্ষ্যগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে তারা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করছিল। তার পরিবার যে-সুখ ও পরিতৃপ্তি উপভোগ করছিল, জিমও তার অংশী হতে চেয়েছিলেন। তাই, তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন।
শীঘ্রই জিম বুঝতে পেরেছিলেন যে তার জীবনযাত্রা তাকে একজন খ্রিস্টান হিসেবে উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছিল। এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে ক্রমাগত ভ্রমণ করার কারণে তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করার ও সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করার মতো যথেষ্ট সময় পাননি। তিনি একটা সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন: ‘আমি কি বিগত ৫০ বছর ধরে যেভাবে জীবনযাপন করেছি, সেভাবেই জীবনযাপন করব নাকি আমি জীবনের এক নতুন পথ অনুধাবন করব?’ তিনি প্রার্থনাপূর্বক তার সিদ্ধান্তের সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিবেচনা করেছিলেন এবং কেবল একটা ছাড়া বাকি সমস্ত কাজ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাতে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য সময় পান। (১ তীমথিয় ৬:৬-৮) তার সিদ্ধান্ত তাকে আরও বেশি সুখী করেছে, তাকে খ্রিস্টীয় কাজকর্মে ব্যস্ত থাকার সুযোগ করে দিয়েছে।
ছোট বা বড় যা-ই হোক না কেন, আপনার সিদ্ধান্তগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আজ আপনি যে-সিদ্ধান্ত নেন, তা ভবিষ্যতে হয়তো সাফল্য বা ব্যর্থতা, এমনকি জীবন বা মৃত্যু নিয়ে আসতে পারে। আপনি যদি বাইবেলের নীতিগুলো, অন্যদের বিবেকের বিষয় এবং আপনার কাজের সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্বন্ধে বিবেচনা করেন, তা হলে আপনি বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারবেন। ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্তগুলো নিন।
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপাতদৃষ্টিতে ছোট বলে মনে হওয়া সিদ্ধান্তগুলোর পরিণতি গুরুতর হতে পারে
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
কীভাবে বাইবেলের নীতিগুলো তাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশু পিতরের সঙ্গে সমবেদনা দেখিয়ে কথা বলেছিলেন