সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা তাঁর পালের জন্য পালকদের প্রশিক্ষণ দেন

যিহোবা তাঁর পালের জন্য পালকদের প্রশিক্ষণ দেন

যিহোবা তাঁর পালের জন্য পালকদের প্রশিক্ষণ দেন

“সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন, তাঁহারই মুখ হইতে জ্ঞান ও বুদ্ধি নির্গত হয়।”—হিতোপদেশ ২:৬.

১, ২. কেন বাপ্তাইজিত পুরুষরা মণ্ডলীতে আরও বেশি দায়িত্ব পেতে চায়?

 “আমাকে যখন একজন প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলাম,” নিক নামে একজন ভাই বলেন, যিনি সাত বছর ধরে একজন অধ্যক্ষ হিসেবে সেবা করছেন। “আমি এটাকে যিহোবার প্রতি আমার সেবাকে বাড়ানোর এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যেন তিনি আমার জন্য যা কিছু করেছেন, সেই সমস্তকিছুর জন্য আমি ঋণী এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে বাধ্য। এ ছাড়া, আমি মণ্ডলীর সদস্যদেরও যতটা সম্ভব পূর্ণরূপে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম, অন্য প্রাচীনরা আমাকে যেভাবে সহযোগিতা করেছিল, আমিও তাদেরকে একইভাবে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম।” কিন্তু, আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে তিনি কিছুটা চিন্তিতও ছিলেন। নিক আরও বলেন, “আমাকে যখন নিযুক্ত করা হয়েছিল, তখন আমার বয়স যেহেতু মাত্র ২০ এর কোঠার শেষের দিকে ছিল, তাই আমি এই ভেবে উদ্বিগ্ন হয়েছিলাম যে, আমার মধ্যে মণ্ডলীকে কার্যকারীভাবে পালন করার জন্য যে-দক্ষতাগুলোর—বিচক্ষণতা এবং প্রজ্ঞার—প্রয়োজন, সেগুলোর অভাব দেখা দেবে।”

যিহোবা যাদেরকে তাঁর পালের যত্ন নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেন, তাদের সুখী হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। প্রেরিত পৌল ইফিষের প্রাচীনদের সুখী হওয়ার একটা কারণ সম্বন্ধে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, যখন তিনি যিশুর এই কথাগুলো উদ্ধৃতি করে বলেছিলেন: “পাওয়ার চেয়ে দেওয়ারই মধ্যে বেশি সুখ।” (প্রেরিত [শিষ্যচরিত] ২০:৩৫, বাংলা জুবিলী বাইবেল) বাপ্তাইজিত পুরুষরা একজন পরিচারক দাস অথবা একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করার মাধ্যমে যিহোবা এবং সেইসঙ্গে মণ্ডলীকে দান করার আরও সুযোগ লাভ করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, পরিচারক দাসেরা প্রাচীনদের সঙ্গে কাজ করে থাকে। এ ছাড়া, এই দাসেরা প্রয়োজনীয় আরও অন্যান্য অনেক কার্যভারের দেখাশোনা করে থাকে, যেগুলোর জন্য যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন। এই ভাইয়েরা মূল্যবান সেবা প্রদান করার জন্য ঈশ্বর এবং প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়।—মার্ক ১২:৩০, ৩১.

৩. কেন কেউ কেউ মণ্ডলীর বিশেষ সুযোগগুলো পেতে চাওয়ার ব্যাপারে ইতস্ততবোধ করে?

একজন খ্রিস্টান ব্যক্তি সম্বন্ধে কী বলা যায়, যিনি হয়তো নিজেকে অযোগ্য মনে করার কারণে একজন দাস এবং পরে একজন প্রাচীন হওয়ার বিশেষ সুযোগ পেতে চাওয়ার ব্যাপারে ইতস্ততবোধ করেন? নিকের মতো তিনি হয়তো এই ভেবে উদ্বিগ্ন হতে পারেন যে, একজন কার্যকারী পালক হওয়ার জন্য যে-দক্ষতাগুলোর প্রয়োজন, সেগুলো তার নেই। একজন বাপ্তাইজিত ভাই হিসেবে আপনিও কি তাদের মধ্যে রয়েছেন, যারা এইরকম মনে করে? এই ধরনের চিন্তা ভিত্তিহীন নয়। নিযুক্ত পালকরা পালের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করে, সেটার জন্য যিহোবা তাদের কাছ থেকে নিকাশ নেবেন। যিশু বলেছিলেন: “যে কোন ব্যক্তিকে অধিক দত্ত হইয়াছে, তাহার নিকটে অধিক দাবি করা যাইবে; এবং লোকে যাহার কাছে অধিক রাখিয়াছে, তাহার নিকটে অধিক চাহিবে।”—লূক ১২:৪৮.

৪. যিহোবা তাঁর মেষদের যত্ন নেওয়ার জন্য যাদেরকে নিযুক্ত করেছেন, তাদেরকে তিনি কীভাবে সহযোগিতা করেন?

যিহোবা কি চান যে, যাদেরকে তিনি দাস এবং প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, তারা নিজেরাই বাড়তি দায়িত্বভার বহন করুক? কখনোই না, কারণ তিনি ব্যবহারিক সাহায্য জুগিয়ে থাকেন, যা তাদেরকে কেবল সেগুলো বহন করতেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে সফল হতেও সমর্থ করে। আগের প্রবন্ধে যেমন আলোচনা করা হয়েছে যে, যিহোবা তাদেরকে তাঁর পবিত্র আত্মা দান করেন, যার ফলগুলো তাদেরকে মেষদের কোমলভাবে যত্ন নিতে সাহায্য করে। (প্রেরিত ২০:২৮; গালাতীয় ৫:২২, ২৩) অধিকন্তু, যিহোবা তাদেরকে প্রজ্ঞা, জ্ঞান এবং বুদ্ধি বা বিচক্ষণতা দান করেন। (হিতোপদেশ ২:৬) কীভাবে তিনি তা দান করেন? আসুন আমরা তিনটে উপায় সম্বন্ধে বিবেচনা করি, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবা তাঁর মেষদের যত্ন নেওয়ার জন্য যাদেরকে নিযুক্ত করেছেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেন।

অভিজ্ঞ পালকদের দ্বারা প্রশিক্ষিত

৫. কেন পিতর এবং যোহন কার্যকারী পালক ছিল?

প্রেরিত পিতর এবং যোহন যখন মহাসভার সামনে দাঁড়িয়েছিল, তখন সেই আদালতে জগতের বিজ্ঞ বিচারকরা তাদের সামনে উপস্থিত এই ব্যক্তিদের “অশিক্ষিত সামান্য” বা সাধারণ বলে গণ্য করেছিল। আসলে, তারা লিখতে ও পড়তে পারত কিন্তু শাস্ত্র অধ্যয়নের ব্যাপারে তারা রব্বিদের মতো কোনো প্রশিক্ষণ লাভ করেনি। তা সত্ত্বেও, পিতর ও যোহন এবং সেইসঙ্গে অন্যান্য শিষ্য কার্যকারী শিক্ষক হিসেবে প্রমাণ দিয়েছিল এবং যারা তাদের কথা শুনেছিল, তাদের অনেককে বিশ্বাসী হতে পরিচালিত করেছিল। কীভাবে এই সাধারণ ব্যক্তিরা এইরকম অসাধারণ শিক্ষকে পরিণত হয়েছিল? পিতর এবং যোহনের কথা শোনার পর, আদালত “চিনিতে পারিলেন যে, ইহাঁরা যীশুর সঙ্গে ছিলেন।” (প্রেরিত ৪:১-৪, ১৩) এটা ঠিক যে, তারা পবিত্র আত্মা লাভ করেছিল। (প্রেরিত ১:৮) কিন্তু, সেইসঙ্গে এটা—এমনকি আধ্যাত্মিকভাবে অন্ধ বিচারকদের কাছেও—স্পষ্ট ছিল যে, যিশু সেই ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। যিশু যখন তাদের সঙ্গে পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি প্রেরিতদের কেবল মেষতুল্য ব্যক্তিদের একত্রিত করতেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে একবার তারা পালের অংশ হওয়ার পর কীভাবে তাদের পালন করতে হয়, সেই বিষয়েও শিক্ষা দিয়েছিলেন।—মথি ১১:২৯; ২০:২৪-২৮; ১ পিতর ৫:৪.

৬. অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যিশু এবং পৌল কোন উদাহরণ স্থাপন করেছে?

পুনরুত্থিত হওয়ার পর, যিশু তাদেরকে ক্রমাগত প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যাদেরকে তিনি পালক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ১:১; ২:১–৩:২২) উদাহরণস্বরূপ, তিনি ব্যক্তিগতভাবে পৌলকে বাছাই করেছিলেন এবং তার প্রশিক্ষণের বিষয়টা দেখাশুনা করেছিলেন। (প্রেরিত ২২:৬-১০) পৌল যে-প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন, সেটার প্রতি তিনি উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন এবং যা শিখেছিলেন, তা অন্য প্রাচীনদেরও শিখিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২০:১৭-৩৫) উদাহরণস্বরূপ, তিনি তীমথিয়কে ঈশ্বরের সেবায় এমন “কার্য্যকারী” হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে যথেষ্ট সময় এবং শক্তি ব্যয় করেছিলেন, “যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই।” (২ তীমথিয় ২:১৫) তাদের মধ্যে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধন গড়ে উঠেছিল। এর আগে, তীমথিয় সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “পিতার সহিত সন্তান যেমন, আমার সহিত ইনি তেমনি সুসমাচারের নিমিত্ত দাস্যকর্ম্ম করিয়াছেন।” (ফিলিপীয় ২:২২) তীমথিয় অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে পৌল তার নিজের শিষ্য করার চেষ্টা করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি ‘যেমন খ্রীষ্টের অনুকারী, তেমনি তাহার অনুকারী হইবার’ জন্য সহবিশ্বাসীদের উৎসাহিত করেছিলেন।—১ করি. ১০:৩৪.

৭, ৮. (ক) কোন অভিজ্ঞতা সেই উপকার সম্বন্ধে তুলে ধরে, যা প্রাচীনরা যিশু এবং পৌলকে অনুকরণ করার ফলে হয়ে থাকে? (খ) কখন প্রাচীনদের সম্ভাব্য পরিচারক দাস এবং প্রাচীনদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করা উচিত?

যিশু ও পৌলকে অনুকরণ করে, অভিজ্ঞ পালকরা বাপ্তাইজিত ভাইদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়ে থাকে আর তা একই উত্তম ফল নিয়ে আসে। চ্যাডের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করুন। তিনি ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত পরিবারে বড় হয়েছিলেন কিন্তু সম্প্রতি তাকে একজন প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন: “বছরের পর বছর ধরে, কয়েক জন অভিজ্ঞ প্রাচীন আমাকে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি লাভ করতে সাহায্য করেছে। যেহেতু আমার বাবা একজন অবিশ্বাসী ছিলেন, তাই সেই প্রাচীনরা আমার প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছিল এবং তারা আমার আধ্যাত্মিক বাবার মতো হয়ে উঠেছিল। পরিচর্যায় আমাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তারা সময় করে নিয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে মূলত একজন প্রাচীন আমাকে মণ্ডলীতে আমি যে-দায়িত্বগুলো পেয়েছিলাম, সেগুলোর দেখাশোনা করতে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল।”

চ্যাডের অভিজ্ঞতা যেমন দেখায় যে, বিচক্ষণ পালকরা সম্ভাব্য পরিচারক দাস এবং প্রাচীনদের এই ধরনের বিশেষ সুযোগগুলোর ক্ষেত্রে যোগ্য হয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট উন্নতি করার অনেক আগে থেকেই তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। কেন? কারণ বাইবেল আদেশ দেয় যে, পরিচারক দাস এবং প্রাচীন উভয়েই যেন সেবা করার জন্য নিযুক্ত হওয়ার আগেই উচ্চ নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক মান অর্জন করে। তাদেরকে অবশ্যই ‘অগ্রে পরীক্ষা করিতে’ হবে।—১ তীমথিয় ৩:১-১০.

৯. পরিপক্ব পালকদের কোন দায়িত্ব রয়েছে এবং কেন?

বাপ্তাইজিত ভাইদের যদি পরীক্ষা করা হয়, তা হলে প্রথমে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া উপযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ: স্কুলে একজন ছাত্রকে যদি এমন একটা কঠিন পরীক্ষা দিতে বলা হয়, যার জন্য শিক্ষকরা নির্দিষ্ট কোনো প্রশিক্ষণ দেয়নি, তা হলে সেই ছাত্র কি পরীক্ষায় কৃতকার্য হবে? খুব সম্ভবত সে কৃতকার্য হবে না। তাই, প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তবে, বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষকরা ছাত্রদের কেবল পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্যই নয় বরং সেইসঙ্গে ছাত্ররা যে-জ্ঞান অর্জন করে, তা ব্যবহার করতেও প্রশিক্ষণ দেয়। একইভাবে, অধ্যবসায়ী প্রাচীনরা বাপ্তাইজিত ভাইদের নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে নিযুক্ত ব্যক্তি হওয়ার জন্য যে-গুণাবলির প্রয়োজন, সেগুলো গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে সাহায্য করে। আর তারা তা শুধু এই ভাইদেরকে সেবা করার জন্য নিযুক্ত হতেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাদেরকে যথাযথভাবে পালের যত্ন নিতে সাহায্য করার জন্যও তা করে থাকে। (২ তীমথিয় ২:২) অবশ্য, বাপ্তাইজিত ভাইদেরকে একজন পরিচারক দাস অথবা প্রাচীন হওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতাগুলো পূরণ করার জন্য প্রচেষ্টা এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। (তীত ১:৫-৯) তা সত্ত্বেও, মণ্ডলীতে যারা দায়িত্ব পেতে চায়, তাদেরকে ইচ্ছুকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে অভিজ্ঞ পালকরা তাদেরকে আরও দ্রুত উন্নতি করার জন্য সাহায্য করতে পারে।

১০, ১১. কীভাবে পালকরা অন্যদেরকে আরও দায়িত্বের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পারে?

১০ মূলত, কীভাবে অভিজ্ঞ পালকরা মণ্ডলীর দায়িত্বগুলোর দেখাশোনা করার জন্য অন্যদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে? প্রথমত, মণ্ডলীর ভাইদের প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে—ক্ষেত্রের পরিচর্যায় তাদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে কাজ করে এবং “সত্যের বাক্য যথার্থরূপে” ব্যবহার করার জন্য তাদের ক্ষমতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। (২ তীমথিয় ২:১৫) অন্যদের সেবা করার মাধ্যমে যে-আনন্দ আসে এবং আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো স্থাপন ও অর্জন করার মাধ্যমে তারা যে-পরিতৃপ্তি লাভ করে, তা পরিপক্ব পালকরা সেই ভাইদের সঙ্গে আলোচনা করে। এ ছাড়া, কীভাবে একজন ভাই “পালের আদর্শ” হওয়ার ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে, সেই বিষয়েও তারা সদয়ভাবে নির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়ে থাকে।—১ পিতর ৫:৩, ৫.

১১ একজন ভাই যখন পরিচারক দাস হিসেবে নিযুক্ত হন, তখন বিজ্ঞ পালকরা ক্রমাগত তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে যায়। ব্রুস, যিনি কয়েক দশক ধরে একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছেন, তিনি বলেন: “আমি নবনিযুক্ত একজন দাসের সঙ্গে বসে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের দ্বারা প্রকাশিত নির্দেশনা পুনরালোচনা করে থাকি। এ ছাড়া, আমরা তার নির্দিষ্ট দায়িত্বের সঙ্গে যুক্ত যেকোনো নির্দেশনা পড়ি এবং এরপর তিনি তার দায়িত্বগুলোর সঙ্গে পরিচিত না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে কাজ করি।” একজন দাস অভিজ্ঞতা অর্জন করার সঙ্গে সঙ্গে পালকের কাজ করার জন্যও প্রশিক্ষিত হতে পারেন। ব্রুস বলে চলেন, “আমি যখন একজন পরিচারক দাসকে আমার সঙ্গে পালকীয় সাক্ষাতে নিয়ে যাই, তখন তাকে সেই নির্দিষ্ট শাস্ত্রপদগুলো বাছাই করতে সাহায্য করি, যেগুলো সেই ব্যক্তি বা পরিবারকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে, যাদের সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি। একজন দাস যদি কার্যকারী পালক হতে চান, তা হলে হৃদয়কে স্পর্শ করে এমন উপায়ে শাস্ত্র ব্যবহার করতে শেখা অত্যাবশ্যক।”—ইব্রীয় ৪:১২; ৫:১৪.

১২. কীভাবে অভিজ্ঞ পালকরা নবনিযুক্ত প্রাচীনদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে?

১২ এ ছাড়া, নবনিযুক্ত পালকরাও আরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রচুররূপে উপকৃত হয়। আগে উল্লেখিত নিক বলেন: “মূলত দুজন বয়স্ক অধ্যক্ষের কাছ থেকে আমি যে-প্রশিক্ষণ পেয়েছিলাম, তা অত্যন্ত উপকারী ছিল। এই ভাইয়েরা সাধারণত বুঝতে পারত যে, কিছু কিছু বিষয় কীভাবে সম্পন্ন করা উচিত। তারা সবসময় ধৈর্য ধরে আমার কথা শুনত এবং আমার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করত—এমনকি যদিও তারা সেটার সঙ্গে একমত না-ও থাকত। মণ্ডলীর ভাই ও বোনদের সঙ্গে তারা যেভাবে নম্র ও সম্মানপূর্ণ উপায়ে আচরণ করত, তা পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে আমি অনেক কিছু শিখেছি। বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করার অথবা উৎসাহ দেওয়ার সময় দক্ষতার সঙ্গে বাইবেল ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে এই প্রাচীনরা আমার ওপর ছাপ ফেলেছে।”

ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা প্রশিক্ষিত

১৩. (ক) কার্যকারী পালক হওয়ার জন্য একজন ভাইয়ের কীসের প্রয়োজন? (খ) কেন যিশু বলেছিলেন: “আমার উপদেশ আমার নহে”?

১৩ বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলে সেইসমস্ত আইন, নীতি এবং উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো একজন পালকের “পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” হওয়ার জন্য প্রয়োজন। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) একজন ভাই হয়তো অনেক জাগতিক পড়াশোনা করেছেন কিন্তু শাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান এবং যেভাবে তিনি তা ব্যবহার করেন, সেটাই তাকে একজন কার্যকারী পালক হতে সাহায্য করে। যিশুর উদাহরণ বিবেচনা করুন। পৃথিবীর মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকালের সবচেয়ে জ্ঞানী, সবচেয়ে বিচক্ষণ এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ আধ্যাত্মিক পালক; অথচ, যিহোবার মেষদের শিক্ষা দেওয়ার সময় তিনি এমনকি তাঁর নিজের প্রজ্ঞার ওপরও নির্ভর করেননি। তিনি বলেছিলেন: “আমার উপদেশ আমার নহে, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার।” কেন যিশু তার স্বর্গীয় পিতাকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন? তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যে আপনা হইতে বলে, সে আপনারই গৌরব চেষ্টা করে।”—যোহন ৭:১৬, ১৮.

১৪. কীভাবে প্রাচীনরা নিজেদের গৌরব লাভের চেষ্টা করা এড়িয়ে চলে?

১৪ অনুগত পালকরা নিজেদের গৌরব লাভের চেষ্টা করা এড়িয়ে চলে। তারা নিজেদের প্রজ্ঞার ওপর নয় বরং ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে পরামর্শ এবং উৎসাহ দেয়। তারা এটা উপলব্ধি করে যে, একজন পালকের দায়িত্ব হল মেষদেরকে সাহায্য করা, যাতে তারা “খ্রীষ্টের মন” লাভ করতে পারে, প্রাচীনদের মন নয়। (১ করিন্থীয় ২:১৪-১৬) উদাহরণস্বরূপ, কোনো দম্পতিকে বৈবাহিক সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করছেন এমন একজন প্রাচীন যদি বাইবেলের বিভিন নীতি এবং ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি না করে বরং নিজ অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে পরামর্শ দেন, তা হলে কী? (মথি ২৪:৪৫) তার পরামর্শ হয়তো স্থানীয় প্রথার দ্বারা অতিরিক্ত প্রভাবিত হতে পারে এবং তার সীমিত জ্ঞানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। এটা ঠিক যে, কিছু প্রথা খারাপ নয় এবং সেই প্রাচীনের হয়তো জীবন সম্বন্ধে অনেক অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। কিন্তু, মেষেরা তখনই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়, যখন পালকরা মানুষের চিন্তাভাবনা অথবা স্থানীয় প্রথার নিয়মনীতি মেনে চলার পরিবর্তে বরং তাদেরকে যিশুর রব এবং যিহোবার বাক্য শুনতে উৎসাহিত করে থাকে।—গীতসংহিতা ১২:৬; হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা প্রশিক্ষিত

১৫. ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসকে’ যিশু কোন দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং দাস শ্রেণীর সাফল্যের একটা কারণ কী?

১৫ পিতর, যোহন এবং পৌলের মতো পালকরা সকলে সেই দলের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাকে যিশু “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই দাস শ্রেণী পৃথিবীতে যিশুর আত্মায় অভিষিক্ত ভাইদের নিয়ে গঠিত, যাদের স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করার আশা রয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ৫:৯, ১০) এই বিধিব্যবস্থার শেষকালে, পৃথিবীতে খ্রিস্টের অবশিষ্ট ভাইদের সংখ্যা অবশ্যম্ভাবীভাবে হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু, যিশু তাদের যে-দায়িত্ব—শেষ আসার আগে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজ—সম্পাদন করতে দিয়েছিলেন, তা এখন আগের চেয়ে আরও ব্যাপক আকারে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও, দাস শ্রেণী উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে! কেন? এর আংশিক কারণ হল, তারা ‘আরও মেষের’ সদস্যদের প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। (যোহন ১০:১৬; মথি ২৪:১৪; ২৫:৪০) আজকে, এই কাজের বিরাট অংশ এই অনুগত দলের দ্বারা সম্পাদিত হচ্ছে।

১৬. কীভাবে দাস শ্রেণী নিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেয়?

১৬ কীভাবে দাস শ্রেণী এই প্রশিক্ষণ দেয়? প্রথম শতাব্দীতে দাস শ্রেণীর প্রতিনিধিদেরকে মণ্ডলীতে অধ্যক্ষদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার এবং তাদেরকে নিযুক্ত করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল আর এর ফলে অধ্যক্ষরা মেষদের প্রশিক্ষণ দিত। (১ করিন্থীয় ৪:১৭) আজকেও একই বিষয় সত্য। পরিচালক গোষ্ঠী—অভিষিক্ত প্রাচীনদের ছোট্ট দল, যারা দাস শ্রেণীকে প্রতিনিধিত্ব করে—এর প্রতিনিধিদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার এবং পৃথিবীব্যাপী হাজার হাজার মণ্ডলীর দাস ও প্রাচীনদের নিযুক্ত করার অধিকার দিয়েছে। অধিকন্তু, কীভাবে মেষদের সর্বোত্তম উপায়ে যত্ন নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে শাখা কমিটির সদস্য, ভ্রমণ অধ্যক্ষ, প্রাচীন এবং পরিচারক দাসদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পরিচালক গোষ্ঠী বিভিন্ন স্কুলের ব্যবস্থা করেছে। এগুলো ছাড়াও চিঠি, প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধ এবং অন্যান্য প্রকাশনা যেমন, যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য সংগঠিত (ইংরেজি) বইয়ের মাধ্যমে নির্দেশনা জোগানো হয়। *

১৭. (ক) যিশু কীভাবে দাস শ্রেণীর প্রতি তাঁর আস্থা দেখিয়েছেন? (খ) আধ্যাত্মিক পালকরা কীভাবে দেখাতে পারে যে, দাস শ্রেণীর ওপর তাদের আস্থা রয়েছে?

১৭ দাস শ্রেণীর ওপর যিশুর এতটাই আস্থা ছিল যে, তিনি এই দাসকে তার “সর্ব্বস্বের”—অর্থাৎ পৃথিবীতে সমস্ত আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর—ওপর নিযুক্ত করেছিলেন। (মথি ২৪:৪৭) নিযুক্ত পালকরা পরিচালক গোষ্ঠীর কাছ থেকে যে-নির্দেশনাগুলো লাভ করে, সেগুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে প্রমাণ দেয় যে, তাদেরও দাস শ্রেণীর ওপর আস্থা রয়েছে। হ্যাঁ, পালকরা যখন অন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়, ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা নিজেদের প্রশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ দেয় এবং দাস শ্রেণীর জোগানো প্রশিক্ষণ কাজে লাগায়, তখন তারা পালের মধ্যে একতা বৃদ্ধি করে। আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর প্রত্যেক সদস্যের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করে।

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কীভাবে পরিপক্ব আধ্যাত্মিক পালকরা অন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়?

• কেন পালকরা নিজেদের চিন্তাভাবনার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা দেয় না?

• কীভাবে এবং কেন পালকরা দাস শ্রেণীর ওপর আস্থা দেখায়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রিস্টান প্রাচীনরা মণ্ডলীর অল্পবয়স্ক ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেন

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

“বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” প্রাচীনদের জন্য প্রচুর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে