সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

রাজা খ্রিস্টকে অনুগতভাবে সেবা করা

রাজা খ্রিস্টকে অনুগতভাবে সেবা করা

রাজা খ্রিস্টকে অনুগতভাবে সেবা করা

“তাঁহাকে কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও রাজত্ব দত্ত হইল; লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদীকে তাঁহার সেবা করিতে হইবে।”—দানিয়েল ৭:১৪.

১, ২. কীভাবে আমরা জানি যে, সা.কা. ৩৩ সালে খ্রিস্ট পুরোপুরিভাবে রাজ্যের ক্ষমতা গ্রহণ করেননি?

 কোন শাসকই বা তার প্রজাদের জন্য নিজের জীবন দান করতে ও রাজা হিসেবে শাসন করার জন্য আবার জীবিত হয়ে উঠতে পারেন? কোন রাজাই বা পৃথিবীতে বাস করে তার প্রজাদের নির্ভরতা ও আনুগত্য গড়ে তুলতে এবং এরপর স্বর্গ থেকে শাসন করতে পারেন? একমাত্র যে-ব্যক্তি এগুলো—এবং আরও কিছু—করতে পারেন, তিনি হলেন যিশু খ্রিস্ট। (লূক ১:৩২, ৩৩) খ্রিস্টের মৃত্যু, পুনরুত্থান এবং স্বর্গারোহণের পর, সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে ঈশ্বর “তাঁহাকেই সকলের উপরে উচ্চ মস্তক করিয়া মণ্ডলীকে দান করিলেন।” (ইফিষীয় ১:২০-২২; প্রেরিত ২:৩২-৩৬) এভাবে খ্রিস্ট শাসন করতে শুরু করেন, তবে তা আংশিকভাবে। তাঁর প্রথম প্রজারা ছিল আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা, যাদের নিয়ে আত্মিক ইস্রায়েল অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ গঠিত।—গালাতীয় ৬:১৬; কলসীয় ১:১৩.

সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর সেই দিন থেকে প্রায় ৩০ বছর পর, প্রেরিত পৌল এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিলেন যে, খ্রিস্ট তখনও পুরোপুরিভাবে রাজ্যের ক্ষমতা গ্রহণ করেননি কিন্তু তিনি “ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন, এবং তদবধি অপেক্ষা করিতেছেন, যে পর্য্যন্ত তাঁহার শত্রুগণ তাঁহার পাদপীঠ না হয়।” (ইব্রীয় ১০:১২, ১৩) এরপর, সা.কা. প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে বৃদ্ধ প্রেরিত যোহন একটা দর্শনে দেখেছিলেন যে, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম যিহোবা নবপ্রতিষ্ঠিত স্বর্গীয় রাজ্যের রাজা হিসেবে যিশুকে অভিষিক্ত করছেন। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫; ১২:১-৫) ইতিহাসের এই সময়ে আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা সেই স্পষ্ট প্রমাণ সম্বন্ধে পুনরালোচনা করতে পারি, যা নিশ্চিত করে যে ১৯১৪ সালে মশীহ রাজা হিসেবে খ্রিস্ট শাসন করতে শুরু করেছেন। *

৩. (ক) সেই ১৯১৪ সাল থেকে রাজ্যের সুসমাচারে কোন নতুন দিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে? (খ) নিজেদেরকে আমরা কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?

হ্যাঁ, ১৯১৪ সাল থেকে রাজ্যের সুসমাচারে এক রোমাঞ্চকর নতুন দিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। খ্রিস্ট সক্রিয়ভাবে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের রাজা হিসেবে শাসন করছেন, যদিও তা “[তাঁহার] শত্রুদের মধ্যে।” (গীতসংহিতা ১১০:১, ২; মথি ২৪:১৪; প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-১২) এ ছাড়া, পৃথিবীব্যাপী তাঁর অনুগত প্রজারা মানব ইতিহাসে অতুলনীয় এক বিশ্বব্যাপী বাইবেল শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাঁর কর্তৃত্বের প্রতি উৎসুকভাবে সাড়া দিচ্ছে। (দানিয়েল ৭:১৩, ১৪; মথি ২৮:১৮) “রাজ্যের সন্তানগণ” অর্থাৎ আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা ‘খ্রীষ্টের পক্ষে রাজ-দূত’ হিসেবে কাজ করে। তাদেরকে খ্রিস্টের ‘আরও মেষের’ এক বৃদ্ধিরত দল অনুগতভাবে সমর্থন করে, যারা ঈশ্বরের রাজ্যের দূত হিসেবে কাজ করে। (মথি ১৩:৩৮; ২ করিন্থীয় ৫:২০; যোহন ১০:১৬) তা সত্ত্বেও, আলাদা আলাদাভাবে আমরা প্রত্যেকে সত্যিই খ্রিস্টের কর্তৃত্ব স্বীকার করি কি না, তা আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে। আমরা কি তাঁর প্রতি অটলভাবে অনুগত? কীভাবে আমরা এমন একজন রাজার প্রতি আনুগত্য দেখাতে পারি, যিনি স্বর্গে শাসন করেন? কিন্তু, এর আগে আসুন আমরা প্রথমে আলোচনা করি যে, খ্রিস্টের প্রতি অনুগত হওয়ার কোন কোন কারণ আমাদের রয়েছে।

যে-রাজা আনুগত্য দেখাতে অনুপ্রাণিত করেন

৪. যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে মনোনীত রাজা হিসেবে কী সম্পাদন করেছিলেন?

খ্রিস্টের প্রতি আমাদের আনুগত্যের ভিত্তি হচ্ছে, তিনি যা কিছু করেছেন সেগুলোর প্রতি উপলব্ধি ও সেইসঙ্গে তাঁর উল্লেখযোগ্য গুণাবলি। (১ পিতর ১:৮) পৃথিবীতে থাকাকালীন মনোনীত রাজা হিসেবে যিশু খ্রিস্ট ক্ষুদ্র আকারে দেখিয়েছেন যে, ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে শাসনরত রাজা হিসেবে পৃথিবীব্যাপী তিনি কী করবেন। তিনি ক্ষুধার্তদের খাইয়েছিলেন। অসুস্থ, অন্ধ, অক্ষম, বধির এবং বোবাদের সুস্থ করেছিলেন। তিনি এমনকি কয়েক জন মৃত ব্যক্তিকে জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলেন। (মথি ১৫:৩০, ৩১; লূক ৭:১১-১৬; যোহন ৬:৫-১৩) অধিকন্তু, যিশুর পার্থিব জীবন সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়া পৃথিবীর ভবিষ্যৎ শাসক হিসেবে তাঁর গুণাবলি সম্বন্ধে জানতে সমর্থ করে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল তাঁর আত্মত্যাগমূলক প্রেম। (মার্ক ১:৪০-৪৫) এই বিষয়ে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছিলেন: “আলেকজান্ডার, সিজার, শারলেমেন এবং আমি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছি, তবে কীসের ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের মহৎ কাজগুলো করেছি? ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে। একমাত্র যিশু খ্রিস্টই প্রেমের ওপর ভিত্তি করে তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছেন আর এখনও পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি তাঁর জন্য মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত।”

৫. কেন যিশুর ব্যক্তিত্ব অন্যদেরকে আকৃষ্ট করেছিল?

যিশু মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত ছিলেন বলে যারা চাপ এবং বোঝার দ্বারা ভারাক্রান্ত ছিল, তারা তাঁর বিভিন্ন গঠনমূলক শিক্ষা ও সদয় ব্যক্তিত্বের দ্বারা সতেজ হয়েছিল। (মথি ১১:২৮-৩০) শিশুরা তাঁর সান্নিধ্যে স্বচ্ছন্দবোধ করত। নম্র এবং বিচক্ষণ পুরুষরা তাঁর শিষ্য হয়েছিল। (মথি ৪:১৮-২২; মার্ক ১০:১৩-১৬) তাঁর বিবেচনাপূর্ণ এবং সম্মানজনক আচরণের কারণে তিনি অনেক ঈশ্বরভয়শীল নারীদের আনুগত্য জয় করেছিলেন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন তাঁর পরিচর্যাকালে তাঁর যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের সময়, প্রচেষ্টা এবং বস্তুগত সম্পদ দান করেছিল।—লূক ৮:১-৩.

৬. লাসার যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন যিশু কোমল অনুভূতির কোন কোন দিক প্রকাশ করেছিলেন?

তাঁর প্রিয় বন্ধু লাসার যখন মারা গিয়েছিলেন, তখন খ্রিস্ট তাঁর অত্যন্ত কোমল অনুভূতির কয়েকটা দিক প্রকাশ করেছিলেন। মরিয়ম এবং মার্থার নিদারুণ যন্ত্রণা দেখে তিনি এত গভীরভাবে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি তীব্র শোকাচ্ছন্ন উত্তেজনাকে রোধ করতে পারেননি আর তাই তিনি “কাঁদিলেন।” তিনি ‘উদ্বিগ্ন হইয়াছিলেন’—প্রচণ্ড দুঃখে দুঃখিত হয়েছিলেন—এমনকি যদিও তিনি জানতেন যে, একটু পরেই তিনি লাসারকে জীবনে ফিরিয়ে আনবেন। এরপর, প্রেম এবং সমবেদনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যিশু তাঁর ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করেছিলেন এবং লাসারকে মৃত্যু থেকে উত্থাপন করেছিলেন।—যোহন ১১:১১-১৫, ৩৩-৩৫, ৩৮-৪৪.

৭. কেন যিশু আমাদের আনুগত্য পাওয়ার যোগ্য? (এ ছাড়া, ৩১ পৃষ্ঠার বাক্সও দেখুন।)

যা সঠিক, সেটার প্রতি যিশুর অটল প্রেম এবং কপটতা ও দুষ্টতার প্রতি তাঁর তীব্র ঘৃণার জন্য আমাদের সশ্রদ্ধ ভয় রয়েছে। লোভী ব্যবসায়ীদের মন্দির পরিষ্কার করার জন্য দুবার তিনি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। (মথি ২১:১২, ১৩; যোহন ২:১৪-১৭) অধিকন্তু, পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে তিনি সমস্ত ধরনের দুর্দশা ভোগ করেছিলেন, যা তাঁকে আমরা যে-চাপ এবং সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, সেগুলো সম্বন্ধে ব্যক্তিগতভাবে অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ দিয়েছিল। (ইব্রীয় ৫:৭-৯) যিশু এও জানতেন যে, ঘৃণা এবং অবিচারের শিকার হলে কেমন লাগে। (যোহন ৫:১৫-১৮; ১১:৫৩, ৫৪; ১৮:৩৮–১৯:১৬) অবশেষে, তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য এবং তাঁর প্রজাদের অনন্তজীবন দেওয়ার জন্য সাহসের সঙ্গে নিষ্ঠুর মৃত্যুকে মেনে নিয়েছিলেন। (যোহন ৩:১৬) খ্রিস্টের এই ধরনের গুণাবলি কি আপনাকে ক্রমাগত অনুগতভাবে তাঁর সেবা করতে অনুপ্রাণিত করে না? (ইব্রীয় ১৩:৮; প্রকাশিত বাক্য ৫:৬-১০) কিন্তু, রাজা খ্রিস্টের একজন প্রজা হওয়ার জন্য কীসের প্রয়োজন?

প্রজা হওয়ার জন্য যোগ্য হওয়া

৮. খ্রিস্টের প্রজাদের কীসের প্রয়োজন?

এই তুলনা সম্বন্ধে চিন্তা করুন: অন্য একটা দেশের নাগরিক হওয়ার জন্য সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু মৌলিক যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। সম্ভাব্য নাগরিকদের হয়তো উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হয় এবং নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়। একইভাবে, খ্রিস্টের প্রজাদেরও উচ্চ নৈতিক মান এবং উত্তম আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে।—১ করিন্থীয় ৬:৯-১১; গালাতীয় ৫:১৯-২৩.

৯. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা খ্রিস্টের প্রতি অনুগত?

এ ছাড়া, উপযুক্তভাবেই যিশু খ্রিস্ট চান যেন তাঁর প্রজারা তাঁর এবং তাঁর রাজ্যের প্রতি অনুগত থাকে। পৃথিবীতে থাকাকালীন মনোনীত রাজা হিসেবে তিনি যা কিছু শিখিয়েছিলেন, সেগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার মাধ্যমে তারা এই ধরনের আনুগত্য দেখায়। উদাহরণস্বরূপ, তারা রাজ্যের বিষয়গুলো এবং ঈশ্বরের ইচ্ছাকে বস্তুগত ধনসম্পদের আগে রাখে। (মথি ৬:৩১-৩৪) এ ছাড়া, তারা এমনকি সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিগুলোতেও আন্তরিকভাবে খ্রিস্টতুল্য ব্যক্তিত্ব প্রতিফলিত করার চেষ্টা করে। (১ পিতর ২:২১-২৩) অধিকন্তু, অন্যদের জন্য ভাল কাজ করার পদক্ষেপ নিয়ে খ্রিস্টের প্রজারা তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করে।—মথি ৭:১২; যোহন ১৩:৩-১৭.

১০. কীভাবে খ্রিস্টের প্রতি আনুগত্য দেখানো যেতে পারে (ক) পরিবারে এবং (খ) মণ্ডলীতে?

১০ এ ছাড়া, যিশুর অনুসারীরা পরিবারের মধ্যে তাঁর গুণাবলি প্রতিফলিত করার মাধ্যমেও তাঁর প্রতি তাদের আনুগত্য দেখায়। উদাহরণস্বরূপ, স্বামীরা তাদের স্ত্রী এবং সন্তানদের সঙ্গে খ্রিস্টতুল্য উপায়ে আচরণ করার মাধ্যমে তাদের স্বর্গীয় রাজার প্রতি আনুগত্য দেখায়। (ইফিষীয় ৫:২৫, ২৮-৩০; ৬:৪; ১ পিতর ৩:৭) স্ত্রীরা বিশুদ্ধ আচারব্যবহার এবং “মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা” প্রদর্শন করার মাধ্যমে খ্রিস্টের প্রতি আনুগত্য দেখায়। (১ পিতর ৩:১-৪; ইফিষীয় ৫:২২-২৪) সন্তানরা বাধ্যতার ক্ষেত্রে খ্রিস্টের উদাহরণ অনুসরণ করে তাঁর প্রতি অনুগত থাকে। একজন অল্পবয়স্ক হিসেবে যিশু তাঁর বাবামার বাধ্য ছিলেন, এমনকি যদিও তারা অসিদ্ধ ছিল। (লূক ২:৫১, ৫২; ইফিষীয় ৬:১) ‘পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক, স্নেহবান্‌ হইবার’ মাধ্যমে খ্রিস্টের প্রজারা অনুগতভাবে তাঁকে অনুকরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। তারা খ্রিস্টের মতো ‘নম্রমনা হইবার, মন্দের পরিশোধে মন্দ এবং নিন্দার পরিশোধে নিন্দা না করিবার’ জন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা করে।—১ পিতর ৩:৮, ৯; ১ করি. ১০:৩৪.

আইনমান্যকারী প্রজা

১১. খ্রিস্টের প্রজারা কোন আইনগুলোর প্রতি বশীভূত হয়?

১১ একটা দেশের সম্ভাব্য নাগরিকদের যেমন নতুন দেশের আইনগুলো মেনে চলতে হয়, তেমনই খ্রিস্টের প্রজারা যিশু যা কিছু শিখিয়েছিলেন এবং আদেশ দিয়েছিলেন, সেগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার মাধ্যমে ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থার’ প্রতি বশীভূত হয়। (গালাতীয় ৬:২) মূলত, তারা অনুগতভাবে প্রেমের “রাজকীয় ব্যবস্থা” অনুযায়ী জীবনযাপন করে। (যাকোব ২:৮) এই ব্যবস্থা বা আইনগুলোর সঙ্গে কী জড়িত?

১২, ১৩. কীভাবে আমরা ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থার’ প্রতি বশীভূত হই?

১২ খ্রিস্টের প্রজারা অসিদ্ধতা এবং দোষত্রুটি থেকে মুক্ত নয়। (রোমীয় ৩:২৩) তাই, তারা যাতে ‘অন্তঃকরণে পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম করিতে’ পারে, সেইজন্য তাদের নিষ্কপট বা ‘অকল্পিত ভ্রাতৃপ্রেম’ গড়ে তুলতে হবে। (১ পিতর ১:২২) “যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে,” তা হলে খ্রিস্টানরা ‘পরস্পর সহনশীল হইবার এবং পরস্পর ক্ষমা করিবার’ মাধ্যমে অনুগতভাবে খ্রিস্টের ব্যবস্থা কাজে লাগায়। এই ব্যবস্থা মেনে চলা তাদেরকে অসিদ্ধতাগুলো উপেক্ষা করতে এবং পরস্পরকে ভালবাসার কারণ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। আপনি কি তাদের মধ্যে থাকতে পেরে আনন্দিত নন, যারা আমাদের প্রেমময় রাজার প্রতি অনুগতভাবে বশীভূত থাকার মাধ্যমে “সিদ্ধির যোগবন্ধন” প্রেম পরিধান করে?—কলসীয় ৩:১৩, ১৪.

১৩ অধিকন্তু, যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন যে নিজের উদাহরণের মাধ্যমে তিনি যে-প্রেম দেখিয়েছিলেন, তা লোকেরা পরস্পরের প্রতি সাধারণত যে-প্রেম দেখিয়ে থাকে, তার চেয়ে আরও মহৎ। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) আমরা যদি শুধুমাত্র যারা আমাদের ভালবাসে তাদেরকে ভালবাসি, তা হলে আমরা কোনো ‘অধিক কর্ম্ম’ করছি না। সেই ক্ষেত্রে আমাদের ভালবাসা হবে অসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ। যে-শত্রুরা আমাদের ঘৃণা এবং তাড়না করে, এমনকি তাদের প্রতিও নীতির দ্বারা চালিত প্রেম দেখিয়ে তাঁর পিতার প্রেমকে অনুকরণ করার জন্য যিশু আমাদেরকে জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন। (মথি ৫:৪৬-৪৮) এ ছাড়া, এই প্রেম রাজ্যের প্রজাদেরকে তাদের প্রধান কাজ অনুগতভাবে চালিয়ে যেতেও অনুপ্রাণিত করে। সেই কাজটা কী?

আনুগত্য পরীক্ষিত হয়

১৪. কেন প্রচার কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?

১৪ ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজাদের এখন “ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে সাক্ষ্য” দেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। (প্রেরিত ২৮:২৩) তা করা গুরুত্বপূর্ণ কারণ মশীহ রাজ্য যিহোবার সার্বিক সার্বভৌমত্বকে প্রতিপাদন করবে। (১ করিন্থীয় ১৫:২৪-২৮) আমরা যখন সুসমাচার প্রচার করি, তখন শ্রোতাদের ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা হওয়ার সুযোগ থাকে। অধিকন্তু, বার্তার প্রতি লোকেরা যেভাবে সাড়া দেয়, তা এমন এক কষ্টিপাথর অথবা মানদণ্ড হয়ে ওঠে, যার দ্বারা রাজা খ্রিস্ট মানবজাতির বিচার করতে পারেন। (মথি ২৪:১৪; ২ থিষলনীকীয় ১:৬-১০) তাই, যে-প্রধান উপায়ে আমরা খ্রিস্টের প্রতি আমাদের আনুগত্য দেখাই সেটা হল, রাজ্য সম্বন্ধে অন্যদেরকে জানানোর যে-আদেশ তিনি দিয়েছেন, তা মেনে চলে।—মথি ২৮:১৮-২০.

১৫. কেন খ্রিস্টানদের আনুগত্য পরীক্ষিত হয়?

১৫ অবশ্য, শয়তান প্রচার কাজ বন্ধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে এবং মানব শাসকরা খ্রিস্টের ঈশ্বরদত্ত কর্তৃত্বকে স্বীকার করে না। (গীতসংহিতা ২:১-৩, ৬-৮) তাই, যিশু তাঁর শিষ্যদের সাবধান করে দিয়েছিলেন: “‘দাস আপন প্রভু হইতে বড় নয়;’ লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে।” (যোহন ১৫:২০) অতএব, খ্রিস্টের অনুসারীরা এক আধ্যাত্মিক যুদ্ধে রত আছে, যেটার দ্বারা তাদের আনুগত্য পরীক্ষিত হয়।—২ করিন্থীয় ১০:৩-৫; ইফিষীয় ৬:১০-১২.

১৬. রাজ্যের প্রজারা কীভাবে “ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে” দেয়?

১৬ তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজারা মানব কর্তৃপক্ষদের অসম্মান না করে তাদের অদৃশ্য রাজার প্রতি অনুগত থাকে। (তীত ৩:১, ২) যিশু বলেছিলেন: “কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও।” (মার্ক ১২:১৩-১৭) তাই, খ্রিস্টের প্রজারা সেই সরকারি আইনগুলো মেনে চলে, যেগুলো ঈশ্বরের আইনগুলোর সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে না। (রোমীয় ১৩:১-৭) কিন্তু, যিশুর শিষ্যদেরকে প্রচার বন্ধ করার আদেশ দেওয়ার মাধ্যমে যিহুদি উচ্চ আদালত যখন ঈশ্বরের আইনকে অসম্মান করেছিল, তখন তারা দৃঢ় অথচ সম্মানপূর্ব্বকভাবে বলেছিল যে তাদেরকে “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।”—প্রেরিত ১:৮; ৫:২৭-৩২.

১৭. কেন আমরা সাহসের সঙ্গে আনুগত্যের পরীক্ষাগুলো মোকাবিলা করতে পারি?

১৭ অবশ্য, তাড়নার মধ্যেও তাদের রাজার প্রতি অনুগত থাকার জন্য খ্রিস্টের প্রজাদের যথেষ্ট সাহসের প্রয়োজন। তা সত্ত্বেও, যিশু বলেছিলেন: “ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] তোমরা, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদিগকে নিন্দা ও তাড়না করে, এবং মিথ্যা করিয়া তোমাদের বিরুদ্ধে সর্ব্বপ্রকার মন্দ কথা বলে। আনন্দ করিও, উল্লাসিত হইও, কেননা স্বর্গে তোমাদের পুরস্কার প্রচুর।” (মথি ৫:১১, ১২) খ্রিস্টের প্রাথমিক অনুসারীরা এই কথাগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। এমনকি রাজ্যের প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদেরকে যখন মারধর করা হয়েছিল, তখন তারা আনন্দ করেছিল “কারণ তাঁহারা সেই নামের জন্য অপমানিত হইবার যোগ্যপাত্র গণিত হইয়াছিলেন। আর তাঁহারা প্রতিদিন ধর্ম্মধামে ও বাটীতে উপদেশ দিতেন, এবং যীশুই যে খ্রীষ্ট, এই সুসমাচার প্রচার করিতেন, ক্ষান্ত হইতেন না।” (প্রেরিত ৫:৪১, ৪২) দুঃখকষ্ট, অসুস্থতা, শোক অথবা তাড়না ভোগ করে আপনি যখন আনুগত্যের একই মনোভাব দেখান, তখন আপনিও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।—রোমীয় ৫:৩-৫; ইব্রীয় ১৩:৬.

১৮. পন্তীয় পীলাতকে বলা যিশুর কথাগুলো কী ইঙ্গিত দেয়?

১৮ যিশু মনোনীত রাজা থাকা সত্ত্বেও রোমীয় দেশাধ্যক্ষ পন্তীয় পীলাতের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমার রাজ্য এ জগতের নয়; যদি আমার রাজ্য এ জগতের হইত, তবে আমার অনুচরেরা প্রাণপণ করিত, যেন আমি যিহূদীদের হস্তে সমর্পিত না হই; কিন্তু আমার রাজ্য ত এখানকার নয়।” (যোহন ১৮:৩৬) তাই, স্বর্গীয় রাজ্যের প্রজারা কারো বিরুদ্ধে কোনো অস্ত্র তুলে নেয় না অথবা কোনো মানবদ্বন্দ্বেও কারো পক্ষ নেয় না। ‘শান্তিরাজের’ প্রতি অনুগত থেকে তারা জগতের বিভেদ সৃষ্টিকারী বিষয়গুলোতে পুরোপুরিভাবে নিরপেক্ষ থাকে।—যিশাইয় ২:২-৪; ৯:৬, ৭.

অনুগত দাসদের জন্য অনন্তজীবনের পুরস্কার

১৯. কেন খ্রিস্টের প্রজারা আস্থা সহকারে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারে?

১৯ “রাজাদের রাজা” খ্রিস্টের অনুগত প্রজারা আস্থা সহকারে ভবিষ্যতের প্রত্যাশা করে। তারা উৎসুকভাবে তাঁর আসন্ন অতিপ্রাকৃত রাজকীয় ক্ষমতা দেখার জন্য প্রত্যাশা করে আছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১–২০:৩; মথি ২৪:৩০) অনুগত, আত্মায় অভিষিক্ত ‘রাজ্যের সন্তানগণের’ অবশিষ্টাংশ, স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে রাজা হিসেবে তাদের অমূল্য উত্তরাধীকারের জন্য অপেক্ষা করে আছে। (মথি ১৩:৩৮; লূক ১২:৩২) খ্রিস্টের অনুগত “আরও মেষ” তাদের রাজার এই অনুমোদনযোগ্য ঘোষণার জন্য উৎসুকভাবে অপেক্ষা করে আছে: “আইস, আমার পিতার আশীর্ব্বাদ-পাত্রেরা, জগতের পত্তনাবধি যে [পার্থিব পরমদেশ] রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার অধিকারী হও।” (যোহন ১০:১৬; মথি ২৫:৩৪) সুতরাং, রাজ্যের সমস্ত প্রজা যেন অনুগতভাবে রাজা খ্রিস্টকে ক্রমাগত সেবা করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়।

[পাদটীকা]

^ দয়া করে যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের পরিশিষ্টের ২১৫-২১৮ পৃষ্ঠার “১৯১৪ সাল—বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীতে এক তাৎপর্যপূর্ণ বছর” দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কেন খ্রিস্ট আমাদের আনুগত্য পাওয়ার যোগ্য?

• কীভাবে খ্রিস্টের প্রজারা তাঁর প্রতি তাদের আনুগত্য দেখায়?

• কেন আমরা রাজা খ্রিস্টের প্রতি অনুগত হতে চাই?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৩১ পৃষ্ঠার বাক্স]

খ্রিস্টের আরও কিছু উল্লেখযোগ্য গুণ

পক্ষপাতহীনতাযোহন ৪:৭-৩০.

সমবেদনামথি ৯:৩৫-৩৮; ১২:১৮-২১; মার্ক ৬:৩০-৩৪.

আত্মত্যাগমূলক প্রেমযোহন ১৩:১; ১৫:১২-১৫.

আনুগত্যমথি ৪:১-১১; ২৮:২০; মার্ক ১১:১৫-১৮.

সহমর্মিতামার্ক ৭:৩২-৩৫; লূক ৭:১১-১৫; ইব্রীয় ৪:১৫, ১৬.

যুক্তিবাদিতামথি ১৫:২১-২৮.

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখানোর মাধ্যমে আমরা অনুগতভাবে ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থার’ প্রতি বশীভূত হই

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রিস্টের গুণাবলি কি আপনাকে তাঁকে অনুগতভাবে সেবা করতে অনুপ্রাণিত করে?