সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলতে পারেন?

আপনি কি নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলতে পারেন?

আপনি কি নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলতে পারেন?

 ষাট লক্ষেরও বেশি লোক দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৫টা জায়গায় নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলে। (ফিলিপীয় ১:২০; ১ তীমথিয় ৩:১৩; ইব্রীয় ৩:৬; ১ যোহন ৩:২১) নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলার সঙ্গে কী জড়িত? কী আমাদের নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলতে সাহায্য করে? ভাববিনিময়ের কোন ক্ষেত্রগুলোতে এটা আমাদের কোনোরকম বাধা ছাড়াই কথা বলার সুযোগ করে দিতে পারে?

সাহস বা স্পষ্টবাদিতাকে কাঠখোট্টা বা রূঢ়তার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। “তোমাদের বাক্য সর্ব্বদা অনুগ্রহ সহযুক্ত হউক,” বাইবেল বলে। (কলসীয় ৪:৬) নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে কৌশলী হওয়া ও একই সময়ে হতাশাজনক পরিস্থিতিগুলোর বা লোকভয়ের কারণে আমাদের কথা বলাকে বন্ধ হতে না দেওয়া।

নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলা কি আমাদের জন্মগত অধিকার? প্রেরিত পৌল ইফিষের খ্রিস্টানদের যা লিখেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। তিনি বলেছিলেন: “আমি সমস্ত পবিত্রগণের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা ক্ষুদ্রতম হইলেও আমাকে এই অনুগ্রহ দত্ত হইয়াছে, যাহাতে পরজাতিদের কাছে আমি খ্রীষ্টের সেই ধনের বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করি, যে ধনের সন্ধান করিয়া উঠা যায় না।” পৌল আরও বলেছিলেন যে, যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমেই “আমরা তাঁহার উপরে বিশ্বাস দ্বারা সাহস, এবং দৃঢ় প্রত্যয়পূর্ব্বক উপস্থিত হইবার ক্ষমতা, পাইয়াছি।” (ইফিষীয় ৩:৮-১২) নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলা এক সহজাত অধিকার নয়, বরং যিশু খ্রিস্টের ওপর বিশ্বাসের ভিত্তিতে যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ফলে তা আমরা লাভ করি। আসুন আমরা দেখি যে, কী আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে এবং প্রচার করা, শিক্ষা দেওয়া ও প্রার্থনা করার সময় কীভাবে আমরা এটা প্রদর্শন করতে পারি।

কী আমাদের সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে সাহায্য করে?

নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে যিশু খ্রিস্ট হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ। তিনি উদ্যোগী ছিলেন বলে প্রচার করার সুযোগগুলো গ্রহণ করতে পরিচালিত হয়েছিলেন। বিশ্রাম নেওয়ার সময়, কারোর বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করার সময় বা রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় তিনি ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে কথা বলার প্রতিটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিলেন। উপহাসের বা সরাসরি বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়া কোনোটাই যিশুকে নীরব থাকার জন্য ভয় দেখাতে পারেনি। এর পরিবর্তে, তিনি সাহসের সঙ্গে তাঁর দিনের মিথ্যা ধর্মীয় নেতাদের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন। (মথি ২৩:১৩-৩৬) এমনকি যিশুকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ও তিনি বিচারিত হয়েছিলেন, তখনও তিনি নির্ভীকভাবে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।—যোহন ১৮:৬, ১৯, ২০, ৩৭.

যিশুর প্রেরিতরাও একইরকমভাবে স্পষ্টবাদী ছিল। সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে, পিতর ৩,০০০ জনের বেশি লোকের সামনে নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। উল্লেখযোগ্য বিষয়টা হচ্ছে, এই ঘটনার মাত্র অল্প কিছুদিন আগে তাকে যখন একজন দাসী চিনে ফেলেছিলেন, তখন পিতর ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। (মার্ক ১৪:৬৬-৭১; প্রেরিত ২:১৪, ২৯, ৪১) পিতর ও যোহনকে যখন ধর্মীয় নেতাদের সামনে হাজির করা হয়েছিল, তখন তারা ভয়ে কুঁকড়ে যায়নি। কোনোরকম দ্বিধা না করেই তারা সাহসের সঙ্গে পুনরুত্থিত যিশু খ্রিস্টের সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল। বস্তুতপক্ষে, পিতর ও যোহনের সাহস বা স্পষ্টবাদিতাই ধর্মীয় নেতাদের এটা শনাক্ত করতে পরিচালিত করেছিল যে, এই লোকেরা যিশুর সঙ্গে ছিল। (প্রেরিত ৪:৫-১৩) কী তাদেরকে এতটা সাহসের সঙ্গে কথা বলতে সমর্থ করেছিল?

যিশু তাঁর প্রেরিতদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “যখন লোকে তোমাদিগকে সমর্পণ করিবে, তখন তোমরা কিরূপে কি বলিবে, সে বিষয়ে ভাবিত হইও না; কারণ তোমাদের যাহা বলিবার, তাহা সেই দণ্ডেই তোমাদিগকে দান করা যাইবে। কেননা তোমরা কথা বলিবে, এমন নয়, কিন্তু তোমাদের পিতার যে আত্মা তোমাদের অন্তরে কথা কহেন, তিনিই বলিবেন।” (মথি ১০:১৯, ২০) যেকোনো ধরনের লজ্জা বা ভয়, যা তাদের নির্দ্বিধায় কথা বলার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারত, তা কাটিয়ে উঠতে পবিত্র আত্মা পিতর ও অন্যান্যদের সাহায্য করেছিল। সেই শক্তিশালী আত্মার প্রভাব আমাদের ক্ষেত্রেও একইভাবে সাহায্য করতে পারে।

এ ছাড়া, যিশু তাঁর অনুসারীদের শিষ্য তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এটা উপযুক্ত ছিল কারণ তিনিই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যাঁকে “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত্ব” দেওয়া হয়েছে। আর ‘তিনি তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন।’ (মথি ২৮:১৮-২০) যিশুর সমর্থন সম্বন্ধে অবগত থাকা প্রাথমিক শিষ্যদের সেই কর্তৃপক্ষদের মুখোমুখি হতে আস্থা জুগিয়েছিল, যারা তাদের প্রচার কাজকে বন্ধ করার জন্য বদ্ধপরিকর ছিল। (প্রেরিত ৪:১৮-২০; ৫:২৮, ২৯) আমাদেরও এই বিষয়ে অবগত থাকা একইভাবে সাহায্য করতে পারে।

স্পষ্টবাদী হওয়ার আরেকটা কারণকে শনাক্ত করতে গিয়ে পৌল প্রত্যাশাকে “সম্পূর্ণ সাহস” দেখানোর সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। (ফিলিপীয় ১:২০) যেহেতু প্রত্যাশার বার্তা এত চমৎকার যে তা শুধু নিজেদের মধ্যেই চেপে রাখা যায় না, তাই খ্রিস্টানদের অবশ্যই এই বিষয়টা অন্যদেরকে বলতে হবে। বাস্তবিকই, নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলা চালিয়ে যাওয়ার একটা কারণ হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।—ইব্রীয় ৩:৬.

সাহসের সঙ্গে প্রচার করা

এমনকি সম্ভাব্য ভীতিজনক পরিস্থিতিগুলোতেও কীভাবে আমরা সাহসের সঙ্গে প্রচার করতে পারি? প্রেরিত পৌলের উদাহরণটা বিবেচনা করুন। রোমে একজন বন্দি হিসেবে থাকার সময় তিনি তার সহবিশ্বাসীদের প্রার্থনা করতে বলেছিলেন যেন ‘মুখ খুলিবার উপযুক্ত বক্তৃতা তাকে দেওয়া যায়, যাহাতে তিনি যেমন কথা বলা তাহার উচিত, তেমনি যেন সেই বিষয়ে সাহস দেখাইতে পারেন।’ (ইফিষীয় ৬:১৯, ২০) সেই প্রার্থনার উত্তর কি তিনি পেয়েছিলেন? হ্যাঁ! বন্দি থাকার সময়, পৌল “সম্পূর্ণ সাহসপূর্ব্বক ঈশ্বরের রাজ্যের কথা প্রচার করিতেন, . . . কেহ তাঁহাকে বাধা দিত না।”—প্রেরিত ২৮:২৯, ৩০.

কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে বা ভ্রমণ করার সময় সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করা আমাদের নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলাকে পরীক্ষা করতে পারে। লজ্জা, অন্যেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে সেই ভয় বা আমাদের ক্ষমতা সম্বন্ধে আস্থার অভাব হয়তো আমাদেরকে কথা বলা থেকে বিরত রাখতে পারে। এই ক্ষেত্রেও প্রেরিত পৌল উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন। “আমরা আমাদের ঈশ্বরে সাহসী হইয়া অতিশয় প্রাণপণে তোমাদের কাছে ঈশ্বরের সুসমাচারের কথা বলিয়াছিলাম,” তিনি লিখেছিলেন। (১ থিষলনীকীয় ২:২) পৌল যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন বলেই তিনি সেই বিষয়গুলো করতে পেরেছিলেন, যেগুলো তার নিজ শক্তিতে তিনি করতে পারতেন না।

প্রার্থনা শেরি নামের একজন মহিলাকে রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্যদানের এক সুযোগ আসার সময়ে সাহস সঞ্চয় করতে সাহায্য করেছিল। একদিন শেরি, একটা নির্দিষ্ট কাজ থেকে তার স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষা করার সময় দেখেছিলেন যে, আরেকজন মহিলাও অপেক্ষা করছেন। “অত্যন্ত ঘাবড়ে গিয়ে আমার গলায় কথা আটকে যাওয়ায়,” শেরি বলেছিলেন, “আমি সাহস চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম।” শেরি যখন সেই মহিলার কাছে এগিয়ে গিয়েছিলেন, সেই মুহূর্তে একজন ব্যাপ্টিস্ট পরিচারক সেখানে এসেছিলেন। শেরি একজন পাদরির মুখোমুখি হবেন বলে আশা করেননি। কিন্তু, তিনি আবার প্রার্থনা করেছিলেন এবং সাক্ষ্য দিতে পেরেছিলেন। তিনি সেই মহিলাকে সাহিত্য দিতে পেরেছিলেন ও পুনর্সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করেছিলেন। যখন আমরা সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করি, তখন আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবার ওপর নির্ভর করা আমাদের স্পষ্টবাদী হতে সাহায্য করবে।

শিক্ষা দেওয়ার সময়

নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলা শিক্ষাদানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মণ্ডলীর “যাঁহারা উত্তমরূপে পরিচারকের কার্য্য করিয়াছেন” তাদের বিষয়ে বাইবেল বলে: “তাঁহারা আপনাদের জন্য সুপ্রতিষ্ঠা, এবং খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাসে অতিশয় সাহস লাভ করেন।” (১ তীমথিয় ৩:১৩) তারা অন্যদের যা শিক্ষা দেয়, তা নিজেরা পালন করে বলে নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলতে পারে। তাদের তা করা মণ্ডলীকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করে।

আমরা যখন এভাবে নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমাদের পরামর্শ আরও বেশি কার্যকারী হয় এবং খুব সম্ভবত তা পালনও করা হয়। এর ফলে একজনের খারাপ উদাহরণের দ্বারা বিক্ষিপ্ত হওয়ার পরিবর্তে, শ্রোতারা তাদের যা শেখানো হচ্ছে, সেটার ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখে উৎসাহিত হয়। এভাবে নির্দ্বিধায় কথা বলা আত্মিক বা আধ্যাত্মিক যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কোনো সমস্যা বড় হয়ে ওঠার আগেই ‘তাহাদের ভ্রাতাকে সুস্থ [“পুনঃসমন্বয়,” NW] করিতে’ সাহায্য করে। (গালাতীয় ৬:১) এর বৈসাদৃশ্যে, যে-ব্যক্তি খারাপ উদাহরণ রাখেন, তিনি হয়তো পরামর্শ দিতে ইতস্তত করতে পারেন, কারণ তিনি জানেন যে, কোনো পরামর্শ দেওয়ার অধিকার তার নেই। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে দেরি করা হয়তো সাংঘাতিক পরিণতিগুলো নিয়ে আসতে পারে।

সাহসের সঙ্গে কথা বলার অর্থ সমালোচনামূলক বা গোঁড়া হওয়া নয়। পৌল “প্রেম প্রযুক্ত” ফিলীমনকে বিনতি করেছিলেন। (ফিলীমন ৮, ৯) আর প্রেরিত পৌলের কথাগুলোকে ভালভাবে গ্রহণ করে নেওয়া হয়েছিল বলে মনে হয়। বাস্তবিকই, একজন প্রাচীনের দেওয়া যেকোনো পরামর্শ প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত!

পরামর্শ দেওয়ার সময় নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলা নিশ্চিতভাবেই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য সময়েও এটা গুরুত্বপূর্ণ। পৌল করিন্থের মণ্ডলীকে লিখেছিলেন: “তোমাদের কাছে আমার বড়ই সাহস। তোমাদের পক্ষে আমি বড়ই শ্লাঘা করি।” (২ করিন্থীয় ৭:৪) তার ভাইবোনেরা যখন প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কাজ করেছিল, তখন পৌল তাদের প্রশংসা করতে কোনোরকম দ্বিধা করেননি। প্রেম তাকে তার সহবিশ্বাসীদের উত্তম গুণাবলির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে প্রেরণা দিয়েছিল, যদিও তিনি তাদের ভুলগুলো সম্বন্ধে অবগত ছিলেন। আজকে প্রাচীনরা যখন খোলাখুলিভাবে তাদের ভাইবোনদের প্রশংসা করে ও উৎসাহ দেয়, তখন একইভাবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে গেঁথে তোলা হয়।

শিক্ষাদানে কার্যকারী হওয়ার জন্য সমস্ত খ্রিস্টানের নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলা দরকার। আগে উল্লেখিত শেরি তার ছেলেমেয়েদের স্কুলে সাক্ষ্য দিতে উৎসাহিত করতে চেয়েছিলেন। “যদিও আমি সত্যে বড় হয়ে উঠেছি,” তিনি স্বীকার করেন, “কিন্তু আমি স্কুলে সাক্ষ্য দিইনি বললেই চলে। আর আমি খুব কমই রীতিবহির্ভূতভাবে সাক্ষ্যদান করি। আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘আমি আমার ছেলেমেয়েদের জন্য কী ধরনের উদাহরণ রাখছি?’” এই বিষয়টা শেরিকে রীতিবহির্ভূতভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রচেষ্টা করতে প্রেরণা দিয়েছিল।

হ্যাঁ, অন্যেরা আমাদের কাজগুলো লক্ষ করে এবং আমরা যা শিক্ষা দিই তা পালন করতে যদি ব্যর্থ হই, তা হলে সেটা তারা দেখতে পায়। তাই, আসুন আমাদের কথার সঙ্গে মিল রেখে কাজগুলো করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করে নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলার দক্ষতা অর্জন করি।

প্রার্থনায়

যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময় নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এই আস্থা নিয়ে নির্দ্বিধায় যিহোবার কাছে মন খুলে কথা বলতে পারি কারণ তিনি আমাদের প্রার্থনা শোনেন এবং সেগুলোর উত্তর দেবেন। এর ফলে, আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে এক উষ্ণ, অন্তরঙ্গ সম্পর্ক উপভোগ করি। আমরা খুবই নগণ্য এইরকম মনে করে যিহোবার নিকটবর্তী হতে আমাদের কখনোই ইতস্তত বোধ করা উচিত নয়। কী হবে যদি কোনো অন্যায় বা পাপের কারণে দোষী মনে করার অনুভূতি আমাদের আন্তরিক অভিব্যক্তি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে বাধা দিয়ে থাকে? এরপরও কি আমরা নিখিলবিশ্বের সার্বভৌমের সামনে উপস্থিত হতে পারি?

মহাযাজক হিসেবে যিশুর উচ্চীকৃত স্থান, আস্থার সঙ্গে প্রার্থনা করার আরও কারণ জোগায়। ইব্রীয় ৪: ১৫, ১৬ পদে আমরা পড়ি: “আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে। অতএব আইস, আমরা সাহসপূর্ব্বক অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই, যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই।” যিশুর মৃত্যুর ও মহাযাজক হিসেবে তাঁর ভূমিকার মূল্য এতখানিই।

আমরা যদি আন্তরিকভাবে যিহোবার বাধ্য হওয়ার চেষ্টা করি, তা হলে আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, তিনি আমাদের কথা অনুগ্রহ দেখিয়ে শুনবেন। প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “প্রিয়তমেরা, আমাদের হৃদয় যদি আমাদিগকে দোষী না করে, তবে ঈশ্বরের উদ্দেশে আমাদের সাহস লাভ হয়; এবং যে কিছু যাচ্ঞা করি, তাহা তাঁহার নিকটে পাই; কেননা আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি, এবং তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা যাহা প্রীতিজনক, তাহা করি”।—১ যোহন ৩:২১, ২২.

নির্দ্বিধায় যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার অর্থ হচ্ছে, আমরা তাঁকে যেকোনো কিছুই বলতে পারি। যে-ভয়ই আমাদের থাকুক না কেন, যে-চিন্তা, উদ্বেগ বা শঙ্কাই আমাদের জর্জরিত করুক না কেন, আমরা যিহোবার কাছে তা বলতে পারি, এই আস্থা নিয়ে যে তিনি সবসময় আমাদের আন্তরিক প্রার্থনা শুনবেন। এমনকি যদি আমরা গুরুতর পাপও করে থাকি, তবুও যদি আমরা আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হই, তা হলে দোষী বোধ করার অনুভূতি আমাদের প্রার্থনা করায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলার অযাচিত উপহার সত্যিই মূল্যবান। এর দ্বারা আমরা আমাদের প্রচার ও শিক্ষাদানের কাজে ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে পারি এবং প্রার্থনায় তাঁর আরও বেশি নিকটবর্তী হতে পারি। আসুন আমরা ‘আমাদের সেই সাহস ত্যাগ না করি, যাহা মহাপুরস্কারযুক্ত’—অনন্তজীবনের পুরস্কারযুক্ত।—ইব্রীয় ১০:৩৫.

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রেরিত পৌল সাহসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কার্যকারীভাবে শিক্ষাদানের জন্য নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রার্থনায় নির্দ্বিধায় ও সাহসের সঙ্গে কথা বলা অপরিহার্য