সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গীতসংহিতা বইয়ের প্রথম বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো

গীতসংহিতা বইয়ের প্রথম বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

গীতসংহিতা বইয়ের প্রথম বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো

 বাইবেলের যে-বইটিতে মূলত আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রশংসা গীত রয়েছে, সেটিকে গীতসংহিতা শিরোনাম দেওয়া একেবারে উপযুক্ত। বাইবেলের সবচেয়ে দীর্ঘ এই বইটিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে রচিত অনেক গীত রয়েছে, যেগুলো ঈশ্বরের চমৎকার গুণাবলি ও পরাক্রমী কাজগুলোকে বর্ণনা করে এবং অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণী তুলে ধরে। অনেক গীতই, সেগুলোর লেখকদের আবেগ প্রকাশ করে, যা তারা দুর্দশা ভোগ করার সময়ে অনুভব করেছিল। এই গীতের কথাগুলো প্রায় এক হাজার বছরের সময়কালকে অন্তর্ভুক্ত করে—ভাববাদী মোশির সময় থেকে শুরু করে যিহুদিদের নির্বাসন থেকে ফিরে আসার সময় পর্যন্ত। এর লেখকরা ছিল মোশি, রাজা দায়ূদ এবং আরও অন্যান্য ব্যক্তি। যাজক ইষ্রা এই বইয়ের চূড়ান্ত রূপ বিন্যস্ত করেছেন।

প্রাচীনকাল থেকেই গীতসংহিতা বইটিকে গানের পাঁচটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে: (১) গীতসংহিতা ১-৪১, (২) গীতসংহিতা ৪২-৭২, (৩) গীতসংহিতা ৭৩-৮৯, (৪) গীতসংহিতা ৯০-১০৬ এবং (৫) গীতসংহিতা ১০৭-১৫০. এই প্রবন্ধে প্রথম বিভাগটি আলোচনা করা হয়েছে। এই বিভাগে তিনটি গীত ছাড়া বাকি সবই প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ লিখেছেন। ১, ১০ ও ৩৩ গীতের রচয়িতা কারা, তা জানা যায়নি।

“মম ঈশ্বর, মম দৃঢ় শৈল”

(গীতসংহিতা ১:১–২৪:১০)

যে-ব্যক্তি যিহোবার ব্যবস্থায় আমোদ করেন তিনি সুখী, এই বিষয়টি প্রথম গীতে ঘোষণা করার পর দ্বিতীয় গীতে নির্দিষ্টভাবে রাজ্যের বিষয়ে বলা হয়েছে। * গীতসংহিতা বইয়ের এই বিভাগে মূলত ঈশ্বরের প্রতি মিনতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গীতসংহিতা ৩-৫, ৭, ১২, ১৩ এবং ১৭ অধ্যায় হচ্ছে শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়ার অনুরোধ। যিহোবার মহত্ত্বের তুলনায় মানুষ কতটা ক্ষুদ্র, গীতসংহিতা ৮ অধ্যায় সেই বিষয়ের ওপর জোর দেয়।

যিহোবাকে তাঁর লোকেদের রক্ষাকর্তা হিসেবে বর্ণনা করে, দায়ূদ গেয়ে ওঠেন: “মম ঈশ্বর, মম দৃঢ় শৈল, আমি তাঁহার শরণাগত।” (গীতসংহিতা ১৮:২) গীতসংহিতা ১৯ অধ্যায়ে যিহোবাকে সৃষ্টিকর্তা ও ব্যবস্থাপক হিসেবে, গীতসংহিতা ২০ অধ্যায়ে ত্রাণকর্তা হিসেবে এবং গীতসংহিতা ২১ অধ্যায়ে তাঁর অভিষিক্ত রাজার ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। গীতসংহিতা ২৩ অধ্যায় তাঁকে সর্বমহান পালক হিসেবে বর্ণনা করে আর ২৪তম গীত তাঁকে একজন প্রতাপশালী রাজা হিসেবে চিত্রিত করে।

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

২:১, ২—জাতিগণ কোন “অনর্থক বিষয়” নিয়ে ধ্যান করে? এই “অনর্থক বিষয়” হল, নিজেদের কর্তৃত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য মানব সরকারগুলোর অবিরত উদ্বিগ্নতা। এটা অনর্থক কারণ তাদের উদ্দেশ্য নিষ্ফল হবেই। “সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে ও তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে” দণ্ডায়মান হয়ে জাতীয় দলগুলো কি প্রকৃতপক্ষে সফল হওয়ার আশা করতে পারে?

২:৭—‘সদাপ্রভুর বিধি’ কী? এই বিধি হচ্ছে একটা রাজ্যের জন্য চুক্তি, যা যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্র যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে করেছেন।—লূক ২২:২৮, ২৯, NW.

২:১২—কোন উপায়ে জাতিগণের শাসকরা ‘পুত্ত্রকে চুম্বন করিতে’ পারে? বাইবেলের সময়কালে চুম্বন ছিল বন্ধুত্ব ও বিশ্বস্ততার এক অভিব্যক্তি। এটা ছিল অতিথিদের স্বাগত জানানোর এক উপায়। পৃথিবীর রাজাদের পুত্রকে চুম্বন করতে—অর্থাৎ মশীহ রাজা হিসেবে তাঁকে স্বাগত জানাতে—আদেশ দেওয়া হয়েছে।

৩:শীর্ষলিখন—গীতসংহিতার কিছু অধ্যায়ে দেওয়া শীর্ষলিখনের উদ্দেশ্য কী? শীর্ষলিখন মাঝে মাঝে লেখককে শনাক্ত করে এবং/অথবা যে-পরিস্থিতিতে গীতটি রচনা করা হয়েছিল, সেই বিষয়ে তথ্য প্রদান করে, যেমনটা গীতসংহিতা ৩ অধ্যায়ে দেখা যায়। শীর্ষলিখন হয়তো নির্দিষ্ট গীতের উদ্দেশ্য বা ব্যবহার (গীতসংহিতা ৪ ও অধ্যায়) ও সেইসঙ্গে সংগীত সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো দিতে পারে (গীতসংহিতা ৬ অধ্যায়)।

৩:২“সেলা” কী? এই শব্দটি সাধারণত নীরবে ধ্যান করার এক বিরতিকে চিত্রিত করে বলে মনে হয় আর তা হয় শুধু গান গাওয়ার সময় অথবা গান গাওয়া ও বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সময়ে দেওয়া বিরতিকে বোঝায়। কোনো একটি গীতের মূল ধারণা বা আবেগকে আরও বেশি হৃদয়গ্রাহী করে তোলার জন্য একটু বিরতি দেওয়া হতো। কিন্তু, জনসাধারণের সামনে গীতসংহিতা বই থেকে পড়ার সময় এই শব্দটিকে জোরে উচ্চারণ করার দরকার নেই।

১১:৩—কোন মূলবস্তু সকল উৎপাটিত হয়? এগুলো হল ঠিক সেই মূলবস্তু, যেগুলোর ওপর মানবসমাজ নির্ভর করে থাকে—আইন, শৃঙ্খলা এবং ন্যায়বিচার। যখন এগুলো সুসংগঠিত থাকে না, তখন সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং ন্যায়বিচার বলে কিছু থাকে না। এইরকম পরিস্থিতিতে “ধার্ম্মিক” ব্যক্তিকে অবশ্যই ঈশ্বরের ওপর পূর্ণরূপে নির্ভর করতে হবে।—গীতসংহিতা ১১:৪-৭.

২১:৩—“সুবর্ণমুকুট” সম্বন্ধে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়টা কী? মুকুটটা আক্ষরিক ছিল নাকি দায়ূদ বহু বিজয়লাভের ফলে যে-প্রচুর গৌরব পেয়েছিলেন, সেটাকে রূপকভাবে চিত্রিত করছিল, সেটার উল্লেখ নেই। কিন্তু, এই পদটি ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে রাজপদের মুকুটকে নির্দেশ করে, যা যিশু ১৯১৪ সালে যিহোবার কাছ থেকে লাভ করেছিলেন। সেই মুকুটটা সোনার তৈরি, এই বিষয়টা ইঙ্গিত করে যে, তাঁর শাসন হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ।

২২:১, ২—কেন দায়ূদের মনে হয়েছিল যে, যিহোবা হয়তো তাকে পরিত্যাগ করেছেন? দায়ূদ তার শত্রুদের থেকে এত প্রচণ্ড চাপ অনুভব করছিলেন যে, তার ‘হৃদয় মোমের ন্যায় হইয়াছিল এবং অন্ত্রের মধ্যে গলিত হইয়াছিল।’ (গীতসংহিতা ২২:১৪) তার হয়তো এইরকম মনে হয়েছিল যে, যিহোবা তাকে পরিত্যাগ করেছেন। যিশুকে যখন বিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন যিশুও এইরকম মনে করেছিলেন। (মথি ২৭:৪৬) দায়ূদের কথাগুলো তার দুর্দশাপূর্ণ পরিস্থিতিতে তার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে প্রতিফলিত করে। কিন্তু, গীতসংহিতা ২২:১৬-২১ পদে লিপিবদ্ধ তার প্রার্থনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, দায়ূদ ঈশ্বরের ওপর তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেননি।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

১:১. যারা যিহোবাকে ভালবাসে না, তাদের সংসর্গ বা তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা এড়িয়ে চলা উচিত।—১ করিন্থীয় ১৫:৩৩.

১:২. আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো বিবেচনা করিনি এমন একটা দিনও আমরা অতিবাহিত হতে দেব না।—মথি ৪:৪.

৪:৪. অত্যন্ত “রেগে” (বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) গেলে আমরা যাতে এমন কিছু বলে না ফেলি, যার জন্য পরে দুঃখ করি। তাই আমাদের জিহ্বাকে দমন করার দ্বারা আমরা বিজ্ঞতা দেখাই।—ইফিষীয় ৪:২৬.

৪:৫. আমাদের আধ্যাত্মিক বলিগুলো একমাত্র তখনই “ধার্ম্মিকতার বলি” হয়, যদি সেগুলোর উদ্দেশ্য সঠিক থাকে এবং যিহোবার চাহিদাগুলোর সঙ্গে আমাদের আচরণের মিল থাকে।

৬:৫. বেঁচে থাকার জন্য এর চেয়ে ভাল কারণ আর কী-ই বা হতে পারে?—গীতসংহিতা ১১৫:১৭.

৯:১২. যিহোবা রক্তপাতের দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য রক্তপাতের অনুসন্ধান করেন কিন্তু তিনি “দুঃখীদিগের ক্রন্দন” স্মরণে রাখেন।

১৫:২, ৩; ২৪:৩-৫. সত্য উপাসকদের অবশ্যই সত্য কথা বলতে হবে এবং মিথ্যা শপথ ও পরীবাদ করা বা অপবাদ দেওয়া পরিহার করতে হবে।

১৫:৪. যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা উপলব্ধি করি যে, আমরা এক অশাস্ত্রীয় প্রতিজ্ঞা করেছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের কথা রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব, এমনকি যদি তা করা অত্যন্ত কঠিনও হয়ে থাকে।

১৫:৫. যিহোবার উপাসক হিসেবে, আমাদের টাকাপয়সা অপচয় করার বিরুদ্ধে সাবধান হতে হবে।

১৭:১৪, ১৫. ‘সাংসারিক [“এই বিধিব্যবস্থার,” NW] মনুষ্যরা’ উত্তমভাবে জীবনযাপন করার, পরিবারের ভরণপোষণ করার এবং উত্তরাধিকার রেখে যাওয়ার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেয়। দায়ূদের জীবনে প্রধান চিন্তার বিষয় ছিল, ঈশ্বরের সঙ্গে এক সুনাম অর্জন করা, যাতে তিনি ‘তাঁহার মুখ দর্শন করেন’ বা যিহোবার অনুগ্রহ লাভ করেন। যিহোবার প্রতিজ্ঞা ও আশ্বাসের দ্বারা “জাগিয়া” দায়ূদ ‘তাঁহার মূর্ত্তিতে তৃপ্ত হন’ বা আনন্দ করেন যেন যিহোবা তার মাঝে উপস্থিত রয়েছেন। দায়ূদের মতো, আমাদেরও কি আধ্যাত্মিক সম্পদের প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা উচিত নয়?

১৯:১-৬. সৃষ্টি, যেগুলো কিনা কথা বলতে বা যুক্তি করতে পারে না, সেগুলো যদি যিহোবাকে প্রতাপ বা গৌরব প্রদান করে, তা হলে আমরা যারা চিন্তা করতে, কথা বলতে এবং উপাসনা করতে পারি, আমাদের কি আরও বেশি করা উচিত নয়?—প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.

১৯:৭-১১. যিহোবার চাহিদাগুলো—আমাদের জন্য কতই না উপকারজনক!

১৯:১২, ১৩. ভুলভ্রান্তি এবং দুঃসাহস বা অহংকারজনিত কাজগুলো হচ্ছে এমন পাপ, যেগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক হতে হবে।

১৯:১৪. আমাদের শুধুমাত্র আমরা কী করি, তা-ই নয় কিন্তু আমরা কী বলি ও ভাবি, সেই ব্যাপারেও চিন্তিত হওয়া উচিত।

“তুমি আমার নীতিনিষ্ঠায় আমাকে ধরিয়ে রাখিয়াছ”

(গীতসংহিতা ২৫:১–৪১:১৩)

এই বিভাগের প্রথম দুটো গীতে দায়ূদ তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার কত আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা ও জোরালো দৃঢ়সংকল্পই না প্রকাশ করেন! “কিন্তু আমি নিজ সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠায়,” NW] চলিব,” তিনি গেয়ে ওঠেন। (গীতসংহিতা ২৬:১১) পাপের ক্ষমার জন্য তার প্রার্থনায় তিনি স্বীকার করেন: “আমি যখন চুপ করিয়াছিলাম, আমার অস্থি সকল ক্ষয় পাইতেছিল, কারণ আমি সমস্ত দিন আর্ত্তনাদ করিতেছিলাম।” (গীতসংহিতা ৩২:৩) যিহোবার অনুগত ব্যক্তিদের দায়ূদ এই আশ্বাস দেন: “ধার্ম্মিকগণের প্রতি সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে, তাহাদের আর্ত্তনাদের প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে।”—গীতসংহিতা ৩৪:১৫.

গীতসংহিতা ৩৭ অধ্যায়ে দেওয়া উপদেশ ইস্রায়েলীয়দের এবং আমরা যারা এই বিধিব্যবস্থার “শেষ কালে” বাস করছি, আমাদের উদ্দেশে কতই না মূল্যবান! (২ তীমথিয় ৩:১-৫) যিশু খ্রিস্টের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে গীতসংহিতা ৪০:৭, ৮ পদ বলে: “দেখ, আমি আসিয়াছি; গ্রন্থখানিতে আমার বিষয় লিখিত আছে। হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত, আর তোমার ব্যবস্থা আমার অন্তরে আছে।” এই বিভাগের শেষ গীতটি যিহোবার সাহায্যের জন্য দায়ূদের অনুরোধ সম্বন্ধে জানায়, যা তিনি বৎশেবার সঙ্গে পাপ করার পর তার দুর্দশাপূর্ণ বছরগুলোতে করেছিলেন। তিনি গেয়ে ওঠেন: “তুমি আমার সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠায়,” NW] আমাকে ধরিয়া রাখিয়াছ।”—গীতসংহিতা ৪১:১২.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

২৬:৬—দায়ূদের মতো, আমরা কীভাবে যিহোবার যজ্ঞবেদি প্রদক্ষিণ করতে পারি? যজ্ঞবেদি মানবজাতিকে মুক্ত করার জন্য যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান গ্রহণ করার বিষয়ে যিহোবার ইচ্ছাকে প্রতিনিধিত্ব করে। (ইব্রীয় ৮:৫; ১০:৫-১০) আমরা সেই বলিদানে বিশ্বাস করে চলার দ্বারা যিহোবার যজ্ঞবেদি প্রদক্ষিণ করি।

২৯:৩-৯—যিহোবার রবকে এক বজ্রনাদের সঙ্গে তুলনা করার দ্বারা কী চিত্রিত করা হয়েছে, যে-বজ্রনাদের ফলে প্রচণ্ড ভয় সৃষ্টি হয়? এটা সাধারণভাবে যিহোবার প্রবল শক্তিকে চিত্রিত করে।

৩১:২৩—কীভাবে একজন গর্বিত ব্যক্তি অনেক প্রতিফল পান? একজন ধার্মিক ব্যক্তি যখন অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেন, তখন যিহোবার কাছ থেকে শাসনের আকারে প্রতিফল পান। কিন্তু একজন গর্বিত ব্যক্তি তার মন্দ পথ থেকে ফিরে না আসায়, প্রতিফল হিসেবে তিনি প্রচুর শাস্তি পেয়ে থাকেন।—হিতোপদেশ ১১:৩১; ১ পিতর ৪:১৮.

৩৩:৬—যিহোবার মুখের ‘শ্বাস’ কী? এই শ্বাস হচ্ছে ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি বা পবিত্র আত্মা, যা তিনি আক্ষরিক আকাশমণ্ডল সৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১:১, ২, NW) এটাকে তার মুখের শ্বাস বলা হয়েছে কারণ শক্তিশালী শ্বাসের মতো, এটাকে দূরে থাকা বিষয়গুলো সম্পাদন করার জন্য পাঠানো যেতে পারে।

৩৫:১৯—দায়ূদকে যারা দ্বেষ করে তাদের “ভ্রূকুটি করিতে [“চোখ টিপতে,” NW]” না দেওয়ার বিষয়ে তার অনুরোধের অর্থ কী? চোখ টেপা ইঙ্গিত করে যে, দায়ূদের শত্রুরা তার বিরুদ্ধে করা তাদের বিদ্বেষপূর্ণ ষড়যন্ত্র সফল হওয়ার ফলে আনন্দ করছিল। দায়ূদ অনুরোধ করেছিলেন যেন এমনটা না ঘটে।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

২৬:৪. আমরা ছদ্মবেশীদের সঙ্গে মেলামেশা করা এড়িয়ে চলে বিজ্ঞ হই, যারা ইন্টারনেট চ্যাট রুমগুলোতে তাদের পরিচয় লুকায়, স্কুলে বা কর্মস্থলে যারা প্রতারণাপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের বন্ধু হওয়ার ভান করে, যে-ধর্মভ্রষ্টরা আন্তরিকতার মুখোশ পরে এবং যারা দ্বৈত জীবনযাপন করে।

২৬:৭, ১২; ৩৫:১৮; ৪০:৯. আমাদের প্রকাশ্যে খ্রিস্টীয় সমাবেশগুলোতে যিহোবার প্রশংসা করতে হবে।

২৬:৮; ২৭:৪. আমরা কি খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে ভালবাসি?

২৬:১১, NW. নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য তার দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে দায়ূদ মুক্তির জন্যও প্রার্থনা করেছিলেন। হ্যাঁ, আমাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও, আমরা আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারি।

২৯:১০. “জলপ্লাবনে” সমাসীন হয়ে বা বসে যিহোবা ইঙ্গিত করেন যে, তাঁর শক্তির ওপর তাঁর পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।

৩০:৫. যিহোবার প্রধান গুণ হচ্ছে প্রেম—ক্রোধ নয়।

৩২:৯. যিহোবা চান না যে, আমরা একটা অশ্বতর বা গাধার মতো হই, যেটা একটা বল্‌গা বা চাবুকের কারণে বশ মানে। বরং, তিনি চান যেন আমরা তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে বোধগম্যতা লাভ করার কারণে স্বেচ্ছায় তাঁর বাধ্য হই।

৩৩:১৭-১৯. মনুষ্যনির্মিত কোনো ব্যবস্থাই, তা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, আমাদের পরিত্রাণ নিয়ে আসতে পারে না। আমরা অবশ্যই যিহোবা ও তাঁর রাজ্যের ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করব।

৩৪:১০. রাজ্যের বিষয়গুলোকে যারা তাদের জীবনে প্রথম স্থানে রাখে, তাদের জন্য এটা কতই না আশ্বাসজনক!

৩৯:১, ২. যখন দুর্জন বা দুষ্টরা আমাদের সহবিশ্বাসীদের ক্ষতি করার জন্য তথ্য জানার চেষ্টা করে, তখন আমরা ‘আমাদের মুখে জাল্‌তি বাঁধিয়া রাখিয়া’ এবং নীরব থেকে বিজ্ঞতার কাজ করি।

৪০:১, ২. যিহোবার অপেক্ষা করা বা তাঁর ওপর আশা রাখা আমাদেরকে বিষণ্ণতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে ও “বিনাশের গর্ত্ত হইতে, পঙ্কময় ভূমি হইতে” বের হয়ে আসতে সাহায্য করতে পারে।

৪০:৫, ১২. আমরা যদি ভুলে না যাই যে, আমাদের আশীর্বাদগুলোকে “গণনা করা যায় না,” তা হলে বিপদ অথবা ভুলত্রুটি, সেগুলো যত অধিকই হোক না কেন, কোনোটাই আমাদের জর্জরিত করবে না।

“ধন্য সদাপ্রভু”

প্রথম বিভাগের ৪১টি গীত কতই না সান্ত্বনাদায়ক ও উৎসাহজনক! আমরা বিভিন্ন পরীক্ষা ভোগ করি বা এক দোষী বিবেকের দ্বারা জর্জরিত হই, আমরা ঈশ্বরের কার্যসাধক বাক্যের এই অংশটুকু থেকে শক্তি ও উৎসাহ লাভ করতে পারি। (ইব্রীয় ৪:১২) এই গীতগুলোতে সেই তথ্য রয়েছে, যা বেঁচে থাকার জন্য নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা জোগায়। আমাদের বার বার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, আমরা যে-কঠিন পরিস্থিতিতেই পড়ি না কেন, যিহোবা আমাদের পরিত্যাগ করবেন না।

গীতসংহিতার প্রথম বিভাগটি এই কথাগুলো দিয়ে শেষ হয়: “ধন্য সদাপ্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, অনাদিকাল হইতে অনন্তকাল পর্য্যন্ত। আমেন ও আমেন।” (গীতসংহিতা ৪১:১৩) এই বিভাগটি বিবেচনা করার পর, আমরা কি যিহোবাকে ধন্যবাদ দিতে বা তাঁর প্রশংসা করতে প্রেরণা পাই না?

[পাদটীকা]

^ দায়ূদের দিনে গীতসংহিতা ২ অধ্যায়ের প্রাথমিক পরিপূর্ণতা হয়েছিল।

[১৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

যদি জড় সৃষ্টি যিহোবাকে গৌরব প্রদান করতে পারে, তা হলে আমাদের আরও কত বেশি করা উচিত!

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

দায়ূদ প্রথম ৪১টি গীতের অধিকাংশ গীতই রচনা করেছিলেন

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি জানেন যে, কোন গীতটি যিহোবাকে সর্বমহান পালক হিসেবে চিত্রিত করে?

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো বিবেচনা না করে একটা দিনও অতিবাহিত হতে দেবেন না

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

তারকারাজি: Courtesy United States Naval Observatory

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

তারকারাজি, ১৮ এবং ১৯ পৃষ্ঠা: Courtesy United States Naval Observatory

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

তারকারাজি: Courtesy United States Naval Observatory