সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নীতিনিষ্ঠার পথে চলার আনন্দ

নীতিনিষ্ঠার পথে চলার আনন্দ

নীতিনিষ্ঠার পথে চলার আনন্দ

“সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না।”—হিতোপদেশ ১০:২২.

১, ২. কেন আমাদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অতিরিক্ত চিন্তা করার বিরুদ্ধে সাবধান থাকা উচিত?

 ‘ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অতিরিক্ত চিন্তা করা, বর্তমানে আমাদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দ করতে বাধা দেয়,’ আমেরিকার একজন দার্শনিক এই কথাগুলো বলেছেন। এই বিষয়টা সেইসমস্ত ছেলেমেয়ের বেলায় সত্য, যারা বড় হয়ে কী করবে তা নিয়ে এত বেশি চিন্তা করে যে, তারা শৈশবের উপকারগুলোকে বড় না হওয়া পর্যন্ত উপেক্ষা করে চলে।

এমনকি যিহোবার উপাসকরাও এই ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত নয়। কী ঘটতে পারে, তা বিবেচনা করুন। পৃথিবীতে এক পরমদেশ নিয়ে আসার বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হতে দেখার জন্য আমরা আকাঙ্ক্ষা করে আছি। অসুস্থতা, বার্ধক্য, বেদনা এবং দুঃখকষ্টমুক্ত এক জীবনের জন্য আমরা উৎসুকভাবে অপেক্ষা করে আছি। যদিও এই ধরনের বিষয়গুলোর জন্য প্রত্যাশা করা উপযুক্ত কিন্তু আমরা যদি ভবিষ্যতের দৈহিক আশীর্বাদগুলো নিয়ে এতটাই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়ি যে, আমাদের বর্তমান দিনের আধ্যাত্মিক আশীর্বাদগুলো সম্বন্ধে বুঝতে ব্যর্থ হই, তা হলে কী? তা কত লজ্জাজনকই না হবে! আমরা সহজেই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারি এবং যতটুকু চিন্তা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি ‘আমাদের আশাসিদ্ধির বিলম্বের কারণে হৃদয়ের পীড়া’ বোধ করতে পারি। (হিতোপদেশ ১৩:১২) জীবনের সমস্যা এবং বাধাগুলো হয়তো আমাদেরকে নিরাশা অথবা আত্মকরুণার ফাঁদে ফেলতে পারে। মন্দ পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার পরিবর্তে, আমরা অভিযোগের এক মনোভাব গড়ে তুলতে পারি। এই সমস্তকিছুই এড়ানো যেতে পারে যদি আমরা আমাদের বর্তমান আশীর্বাদগুলো নিয়ে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে ধ্যান করি।

৩. এই প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়টার ওপর মনোযোগ দেব?

“সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে, এবং তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না,” হিতোপদেশ ১০:২২ পদ বলে। যিহোবার আধুনিক দিনের দাসদের আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধশালী অবস্থা কি আনন্দ করার মতো এক আশীর্বাদ নয়? আসুন আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধির কিছু দিক বিবেচনা করি এবং দেখি যে, সেগুলো ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জন্য কী অর্থ রাখে। “যে ধার্ম্মিক আপন সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠার পথে,” NW] চলে,” তার ওপর যিহোবা যে-আশীর্বাদগুলো বর্ষণ করেছেন, সেগুলো বিবেচনা করার জন্য সময় করে নেওয়া, আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে ক্রমাগত আনন্দের সঙ্গে সেবা করার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে সত্যিই শক্তিশালী করবে।—হিতোপদেশ ২০:৭.

এখনই ‘যে-আশীর্বাদগুলো আমাদের ধনবান করে’

৪, ৫. বাইবেলের কোন শিক্ষাটাকে আপনি বিশেষভাবে মূল্যবান বলে গণ্য করেন এবং কেন?

বাইবেলের শিক্ষাগুলো সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান। খ্রিস্টীয়জগতের ধর্মগুলো সাধারণত বাইবেল বিশ্বাস করে বলে দাবি করে। কিন্তু এটি যা শিক্ষা দেয়, তার সঙ্গে তারা একমত হতে ব্যর্থ হয়। এমনকি শাস্ত্র প্রকৃতপক্ষে যা শিক্ষা দেয়, সেই সম্বন্ধে একই ধর্মীয় দলের বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে প্রায়ই মতের ভিন্নতা দেখা যায়। যিহোবার দাসদের থেকে তাদের অবস্থা কতই না ভিন্ন! আমাদের জাতিগত, সাংস্কৃতিক অথবা সাম্প্রদায়িক পটভূমি যা-ই হোক না কেন, আমরা সেই ঈশ্বরকে সেবা করি, যাঁকে আমরা নামের মাধ্যমে জানি। তিনি কোনো রহস্যময় ত্রিত্ব ঈশ্বর নন। (যাত্রাপুস্তক ৩:১৫; দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪; গীতসংহিতা ৮৩:১৮; মার্ক ১২:২৯) আমরা এও জানি যে, ঈশ্বরের সর্বজনীন সার্বভৌমত্বের প্রধান বিচার্য বিষয়টা শীঘ্রই মীমাংসা হতে যাচ্ছে এবং তাঁর প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে সেই বিচার্য বিষয়ের সঙ্গে জড়িত আছি। আমরা মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে সত্যটা জানি ও সেইসঙ্গে আমরা এমন এক ঈশ্বর সম্বন্ধে আতঙ্কজনক ভয় থেকে মুক্ত, যাঁর বিষয়ে বলা হয় যে তিনি মানুষকে নরকাগ্নি অথবা পুরগাতরীর মধ্যে যন্ত্রণা দেন।—উপদেশক ৯:৫, ১০.

এ ছাড়া, এটা জানাও এক আনন্দের বিষয় যে, আমরা অন্ধ বিবর্তনবাদের আকস্মিক সৃষ্টি নই! এর পরিবর্তে, আমরা ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং আমাদেরকে তাঁর নিজ প্রতিমূর্তিতে তৈরি করা হয়েছে। (আদিপুস্তক ১:২৬; মালাখি ২:১০) “আমি তোমার স্তব করিব, কেননা আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত,” গীতরচক তাঁর ঈশ্বরের উদ্দেশে গেয়েছিলেন। “তোমার কর্ম্ম সকল আশ্চর্য্য, তাহা আমার প্রাণ বিলক্ষণ জানে।”—গীতসংহিতা ১৩৯:১৪.

৬, ৭. আপনার জীবনে অথবা আপনি জানেন এমন অন্যান্য ব্যক্তির জীবনের কোন পরিবর্তনগুলো আশীর্বাদ নিয়ে এসেছে?

ক্ষতিকর অভ্যাস এবং স্বভাব থেকে মুক্ত। ধূমপান, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান এবং বাছবিচারহীনভাবে যৌনসম্পর্ক করার বিপদগুলো সম্বন্ধে প্রচারমাধ্যমগুলোতে অনেক সতর্কবাণী দেওয়া হয়। বেশির ভাগ সময়ই, এই সতর্কবাণীগুলোকে উপেক্ষা করা হয়। কিন্তু, একজন আন্তরিক ব্যক্তি যখন জানতে পারেন যে, সত্য ঈশ্বর এই ধরনের বিষয়গুলোকে নিন্দা করেন এবং যারা এগুলো করে চলে, তারা ঈশ্বরকে দুঃখ দেয়, তখন কী ঘটে? তখন সেই ব্যক্তি নিজের জীবন থেকে এই ধরনের স্বভাব বাদ দেওয়ার জন্য পরিচালিত হন! (যিশাইয় ৬৩:১০; ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০; ২ করিন্থীয় ৭:১; ইফিষীয় ৪:৩০) যদিও তিনি মূলত যিহোবা ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য তা করে থাকেন কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি অন্যান্য উপকারও লাভ করেন আর সেগুলো হল উত্তম স্বাস্থ্য এবং মনের শান্তি।

মন্দ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করা অনেকের জন্য বেশ কঠিন। তা সত্ত্বেও, প্রতি বছর হাজার হাজার ব্যক্তি সেগুলো ত্যাগ করছে। তারা যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করে এবং জলে বাপ্তিস্ম নেয় আর এভাবে জনসমক্ষে জানিয়ে থাকে যে, তারা তাদের জীবন থেকে সেই স্বভাবগুলো ত্যাগ করেছে, যেগুলো ঈশ্বরকে অখুশি করে। আমাদের সকলের জন্য তা কতই না উৎসাহের বিষয়! পাপপূর্ণ এবং ক্ষতিকর আচরণের দাসত্ব থেকে মুক্ত থাকার বিষয়ে আমাদের দৃঢ়সংকল্প আরও শক্তিশালী হয়।

৮. বাইবেলভিত্তিক কোন পরামর্শ সুখী পারিবারিক জীবনে অবদান রাখে?

সুখী পারিবারিক জীবন। বহু দেশে পারিবারিক জীবন দুর্বল হয়ে পড়ছে। অনেক বিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে ভেঙে যায় আর এর ফলে প্রায়ই পিছনে রয়ে যায় আবেগগতভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত সন্তানরা। ইউরোপের কিছু দেশে, সমস্ত পরিবারের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ পরিবারই একক অভিভাবককে নিয়ে গঠিত। এই ক্ষেত্রে, কীভাবে যিহোবা আমাদেরকে নীতিনিষ্ঠার পথে চলতে সাহায্য করেন? দয়া করে ইফিষীয় ৫:২২–৬:৪ পদ পড়ুন এবং স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানদের ঈশ্বরের বাক্য যে-উত্তম পরামর্শ দেয়, তা লক্ষ করুন। এখানে এবং শাস্ত্রের অন্যান্য জায়গায় যা বলা হয়েছে, তা কাজে লাগানো নিশ্চিতভাবেই বিবাহবন্ধনকে শক্তিশালী করে, সন্তানদের সঠিকভাবে মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে বাবামাদের সাহায্য করে এবং সুখী পারিবারিক জীবনে অবদান রাখে। এটা কি আনন্দ করার মতো এক আশীর্বাদ নয়?

৯, ১০. ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে জগৎ থেকে আলাদা?

শীঘ্রই যে জগতের সমস্যাগুলোর মীমাংসা করা হবে, সেই বিষয়ে আশ্বাস। বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং কিছু নেতাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, বর্তমান দিনে জীবনের গুরুতর সমস্যাগুলো অমীমাংসিতই রয়ে গিয়েছে। বিশ্ব আর্থিক ফোরাম এর প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াব সম্প্রতি বলেছেন যে, “জগৎ যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, সেগুলোর তালিকা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে কিন্তু সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য হাতে সময় কমে আসছে।” তিনি এমন সব “বিপদের” কথা উল্লেখ করেছেন, “যেগুলো জাতিগত সীমানার ঊর্ধ্বে যেমন, সন্ত্রাসবাদ, পরিবেশের অবক্ষয় এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা।” শোয়াব উপসংহারে বলেন: “জগৎ এখন আগের চেয়ে আরও বেশি করে সেই বাস্তবতাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, যেগুলোর জন্য যৌথ এবং চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।” যদিও একবিংশ শতাব্দী এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মানবজাতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি অন্ধকারেই রয়ে গিয়েছে।

১০ এটা জানা কতই না আনন্দদায়ক যে, যিহোবা এমন একটা ব্যবস্থা করেছেন, যা মানবজাতির সমস্ত সমস্যা দূর করে দিতে সক্ষম আর সেটা হল, ঈশ্বরের মশীহ রাজ্য! এর মাধ্যমে, সত্য ঈশ্বর “যুদ্ধ নিবৃত্ত” করবেন এবং “প্রচুর শান্তি” নিয়ে আসবেন। (গীতসংহিতা ৪৬:৯; ৭২:৭) অভিষিক্ত রাজা যিশু খ্রিস্ট ‘দরিদ্রকে, এবং দুঃখী ও দীনহীনকে চাতুরী ও দৌরাত্ম্য হইতে উদ্ধার করিবেন।’ (গীতসংহিতা ৭২:১২-১৪) রাজ্য শাসনের অধীনে খাবারের কোনো অভাব থাকবে না। (গীতসংহিতা ৭২:১৬) যিহোবা “[আমাদের] সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) রাজ্য ইতিমধ্যেই স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং শীঘ্রই পৃথিবীর সমস্ত সমস্যার মীমাংসা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।—দানিয়েল ২:৪৪; প্রকাশিত বাক্য ১১:১৫.

১১, ১২. (ক) আমোদপ্রমোদের পিছনে ছোটা কি স্থায়ী সুখ নিয়ে আসে? ব্যাখ্যা করুন। (খ) কী প্রকৃত সুখ নিয়ে আসে?

১১ কী প্রকৃত সুখ নিয়ে আসে, তা জানা। কী প্রকৃত সুখ নিয়ে আসে? একজন মনোবিজ্ঞানী বলেছেন যে, সুখের তিনটে উপাদান রয়েছে আর সেগুলো হল, আমোদপ্রমোদ, রত হওয়া (কাজকর্মের মতো কোনকিছুতে ও পরিবারে জড়িত হওয়া) এবং উদ্দেশ্য (নিজের চেয়ে বরং কোনো উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের জন্য কাজ করা)। এই তিনটের মধ্যে আমোদপ্রমোদকে তিনি সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তালিকাবদ্ধ করেছেন এবং বলেছেন: “এটাই হল উল্লেখযোগ্য বিষয় কারণ অনেক লোক আমোদপ্রমোদকে ঘিরে তাদের জীবন গড়ে তুলেছে।” এই বিষয়ে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

১২ প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন বলেছিলেন: “আমি মনে মনে বলিলাম, ‘আইস, আমি এক বার আমোদের দ্বারা তোমার পরীক্ষা করি, তুমি সুখভোগ কর;’ আর দেখ, তাহাও অসার। আমি হাস্যের বিষয়ে কহিলাম, উহা ক্ষিপ্ত; এবং আমোদের বিষয়ে কহিলাম, উহা কি করিবে?” (উপদেশক ২:১, ২) শাস্ত্র অনুযায়ী, আমোদপ্রমোদের মাধ্যমে যে-সুখই পাওয়া যায় না কেন, তা কেবল ক্ষণস্থায়ী। কাজে জড়িত হওয়া সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমাদের জন্য সবচেয়ে অর্থপূর্ণ কাজ রয়েছে, যেটাতে আমরা জড়িত থাকতে পারি আর সেটা হল, রাজ্য প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) বাইবেলে উল্লেখিত পরিত্রাণের বার্তা সম্বন্ধে অন্যদেরকে বলার মাধ্যমে আমরা এমন একটা কাজে রত হই, যা আমাদের নিজেদের ও সেইসঙ্গে যারা আমাদের কথা শোনে তাদের জন্য পরিত্রাণ নিয়ে আসতে পারে। (১ তীমথিয় ৪:১৬) “ঈশ্বরেরই সহকার্য্যকারী” হিসেবে আমরা এই অভিজ্ঞতা লাভ করি যে, “পাওয়ার চেয়ে দেওয়ারই মধ্যে বেশি সুখ।” (১ করিন্থীয় ৩:৯; প্রেরিত [শিষ্যচরিত] ২০:৩৫, বাংলা জুবিলী বাইবেল) এই কাজ আমাদের জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে আর তা সৃষ্টিকর্তাকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ করে দেয়, যা তিনি যে তাঁকে টিটকারি দেয়, সেই বিদ্রূপকারী শয়তান দিয়াবলকে দিতে পারে। (হিতোপদেশ ২৭:১১) সত্যিই, যিহোবা আমাদের দেখিয়েছেন যে, ঈশ্বরীয় ভক্তি অকৃত্রিম এবং স্থায়ী সুখ নিয়ে আসে।—১ তীমথিয় ৪:৮.

১৩. (ক) কীভাবে ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় আমাদের জন্য এমন এক আশীর্বাদস্বরূপ, যার জন্য আমরা আনন্দ করতে পারি? (খ) কীভাবে আপনি ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় থেকে উপকার লাভ করেছেন?

১৩ গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকারী এক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। গেরহার্ট নামে এক ভাই যিহোবার সাক্ষিদের একটা মণ্ডলীতে প্রাচীন হিসেবে সেবা করেন। তার ছোটবেলার কথা মনে করে তিনি বলেন: “আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন কথা বলার ক্ষেত্রে আমার বিরাট সমস্যা ছিল। চাপের মুখে পড়লে আমি একেবারেই স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারতাম না এবং তোতলাতে শুরু করতাম। আমি নিজেকে ছোট মনে করতাম এবং হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমার বাবামা কথা বলার দক্ষতা গড়ে তুলতে আমার জন্য একটা কোর্সের ব্যবস্থা করেছিলেন কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। আমার সমস্যা ছিল মনে, শরীরে নয়। কিন্তু, যিহোবার কাছ থেকে এক উত্তম ব্যবস্থা ছিল—ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়। এই স্কুলে নাম লেখানোর ফলে আমি পুনরায় সাহস অর্জন করতে পেরেছিলাম। আমি যা শিখতাম, তা কাজে লাগানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম। আর তা কার্যকারী হয়েছিল! আমি সাবলীলভাবে কথা বলতে শুরু করি, সেইসঙ্গে আমার আর হতাশ লাগে না এবং পরিচর্যায় আরও সাহসী হয়ে উঠি। এখন আমি এমনকি জনসাধারণের উদ্দেশে বক্তৃতাও দিই। আমি সত্যিই যিহোবার কাছে কৃতজ্ঞ, যিনি আমাকে এই স্কুলের মাধ্যমে এক নতুন জীবন দিয়েছেন।” যিহোবা যেভাবে তাঁর কাজ করার জন্য আমাদের প্রশিক্ষণ দেন, তা কি আনন্দিত হওয়ার এক কারণ নয়?

১৪, ১৫. দুদর্শার সময়গুলোতে কোন সাহায্য সহজেই পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করুন।

১৪ যিহোবার সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক ভ্রাতৃসমাজের কাছ থেকে সমর্থন। জার্মানিতে বসবাসরত কারটিন নামে এক বোন যখন মারাত্মক ভূমিকম্প এবং এর ফলে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় যে-সুনামি হয়েছে, তার রিপোর্ট শুনেছিলেন, তখন তিনি অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তার মেয়ে যখন থাইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিল, তখন সেই বিপর্যয় ঘটেছিল। প্রায় ৩২ ঘন্টা ধরে এই মা জানতেন না যে, তার মেয়ে বেঁচে আছে নাকি সেই হতাহতদের মধ্যে রয়েছে, যাদের সংখ্যা ঘন্টায় ঘন্টায় বেড়ে চলছিল। অবশেষে, যখন একটা টেলিফোন কলের মাধ্যমে তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে তার মেয়ে নিরাপদে রয়েছে, তখন কারটিন কত স্বস্তিই না পেয়েছিলেন!

১৫ উদ্বেগের সেই মুহূর্তগুলোতে কী কারটিনকে সাহায্য করেছিল? তিনি লেখেন: “আমি সেই সময় প্রায় প্রতিটা মুহূর্তে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে কাটিয়েছিলাম। আমি লক্ষ করেছি যে, তা করা বার বার আমাকে কত শক্তি এবং মনের শান্তি প্রদান করেছে। অধিকন্তু, প্রেমময় আধ্যাত্মিক ভাইবোনেরা আমাকে দেখতে এসেছিল এবং আমার পাশে পাশে ছিল।” (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) তার পরিস্থিতি কত খারাপই না হতে পারত যদি তাকে এই যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্তগুলো যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার উপকার এবং প্রেমময় আধ্যাত্মিক ভ্রাতৃসমাজের কাছ থেকে পাওয়া সান্ত্বনা ছাড়াই কাটাতে হতো! যিহোবা এবং তাঁর পুত্রের সঙ্গে আমাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ও সেইসঙ্গে খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ মেলামেশা এক অদ্বিতীয় আশীর্বাদ, এতটাই মূল্যবান যে তা হালকাভাবে নেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়।

১৬. পুনরুত্থানের আশার মূল্য সম্বন্ধে তুলে ধরে এমন একটা উদাহরণ দিন।

১৬ মৃত প্রিয়জনদের পুনরায় দেখার আশা। (যোহন ৫:২৮, ২৯) ম্যাটিয়াস নামে এক যুবক একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বড় হয়েছিলেন। কিন্তু, তার আশীর্বাদগুলো সম্বন্ধে উপলব্ধি না থাকায় তিনি কিশোর বয়সে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি লিখেছেন: “আমার বাবার সঙ্গে আসলে আমার কখনো গভীর আলোচনা হতো না। বছরের পর বছর ধরে, আমি অনেক তর্কবিতর্ক করেছি। তা সত্ত্বেও, বাবা সবসময়ই আমার জন্য সবচেয়ে ভালটাই চাইতেন। তিনি আমাকে খুবই ভালবাসতেন, যা আমি সেই সময় বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। ১৯৯৬ সালে, তার বিছানার পাশে বসে তার হাত ধরে আমি অনেক কেঁদে কেঁদে তাকে বলেছিলাম যে আমি যা কিছু করেছি, তার জন্য খুবই দুঃখিত এবং আমি তাকে অত্যন্ত ভালবাসি। কিন্তু, তিনি আমার কথা শুনতে পাননি। কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর তিনি মারা গিয়েছিলেন। আমি যদি পুনরুত্থানে আমার বাবাকে দেখার জন্য বেঁচে থাকি, তা হলে আমরা অতীতের অভাবগুলো পূরণ করে নেব। আর নিশ্চয়ই তিনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আমি এখন একজন প্রাচীন হিসেবে সেবা করছি এবং আমার স্ত্রী ও আমি অগ্রগামী হিসেবে সেবা করার বিশেষ সুযোগ পেয়েছি।” পুনরুত্থানের আশা আমাদের জন্য কী এক আশীর্বাদ!

“তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না”

১৭. কীভাবে যিহোবার আশীর্বাদগুলো নিয়ে ধ্যান করা আমাদের সাহায্য করে?

১৭ যিশু খ্রিস্ট তাঁর স্বর্গীয় পিতা সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তিনি ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” (মথি ৫:৪৫) যিহোবা যদি এমনকি অধার্মিক এবং দুষ্ট লোকেদের ওপর আশীর্বাদ বর্ষণ করতে পারেন, তা হলে যারা নীতিনিষ্ঠার পথে চলে, তাদেরকে তিনি আরও কত বেশি আশীর্বাদই না করবেন! “যাহারা সিদ্ধতায় [“নীতিনিষ্ঠার পথে,” NW] চলে, তিনি তাহাদের মঙ্গল করিতে অস্বীকার করিবেন না,” গীতসংহিতা ৮৪:১১ পদ বলে। যারা তাঁকে ভালবাসে তাদের প্রতি তিনি যে-বিশেষ যত্ন নিয়েছেন এবং চিন্তা দেখিয়েছেন, তা নিয়ে আমরা যখন ধ্যান করি, তখন আমাদের হৃদয় কতই না কৃতজ্ঞতায় এবং আনন্দে ভরে ওঠে!

১৮. (ক) কীভাবে বলা যেতে পারে যে, যিহোবা তাঁর আশীর্বাদের সঙ্গে কোনো মনোদুঃখ দেন না? (খ) কেন ঈশ্বরের অনেক অনুগত দাস কষ্টভোগ করে?

১৮ ‘সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদ’—এটাই তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি দিয়েছে। আর আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, “তিনি তাহার সহিত মনোদুঃখ দেন না।” (হিতোপদেশ ১০:২২) তা হলে, ঈশ্বরের অনুগত অনেক ব্যক্তির ওপর আসা পরীক্ষা এবং ক্লেশগুলো কেন তাদের জন্য অনেক বেদনা ও কষ্ট নিয়ে আসে? তিনটে প্রধান কারণের জন্য আমাদের ওপর সমস্যা এবং দুর্দশা আসে। (১) আমাদের পাপপূর্ণ প্রবণতা। (আদিপুস্তক ৬:৫; ৮:২১; যাকোব ১:১৪, ১৫) (২) শয়তান ও তার মন্দদূতেরা। (ইফিষীয় ৬:১১, ১২) (৩) দুষ্ট জগৎ। (যোহন ১৫:১৯) যদিও যিহোবা আমাদের ওপর মন্দ বিষয় ঘটার অনুমতি দেন কিন্তু তিনি সেগুলোর উৎস নন। বস্তুতপক্ষে, “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে, জ্যোতির্গণের সেই পিতা হইতে নামিয়া আইসে।” (যাকোব ১:১৭) যিহোবার আশীর্বাদের সঙ্গে কোনো মনোদুঃখ আসে না।

১৯. যারা ক্রমাগত নীতিনিষ্ঠার পথে চলে, তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে?

১৯ আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি লাভ করার সঙ্গে সবসময় ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া সম্পর্কযুক্ত। আমরা যখন তাঁর সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলি, তখন ‘আপনাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত করি, যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন’—অনন্তজীবন—‘তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারি।’ (১ তীমথিয় ৬:১২, ১৭-১৯) ঈশ্বরের ভাবী নতুন জগতে, আমাদের আধ্যাত্মিক সম্পদের সঙ্গে সঙ্গে দৈহিক আশীর্বাদগুলোও থাকবে। প্রকৃত জীবন তখন তাদের সকলের জন্য এমন এক জীবন হবে, যা যারা ‘সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত করিয়া’ চলে, তারা সকলে উপভোগ করবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:২) আরও শক্তিশালী দৃঢ়সংকল্পসহ আসুন আমরা আনন্দের সঙ্গে ক্রমাগত নীতিনিষ্ঠার পথে চলি।

আপনি কী শিখেছেন?

• ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অতিরিক্ত চিন্তা করা কেন বোকামি?

• আমরা এখন কোন আশীর্বাদগুলো উপভোগ করি?

• কেন ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা কষ্টভোগ করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]