সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অক্ষমতা সত্ত্বেও সানন্দে সেবা করা

অক্ষমতা সত্ত্বেও সানন্দে সেবা করা

জীবন কাহিনী

অক্ষমতা সত্ত্বেও সানন্দে সেবা করা

বলেছেন ভারনাভেস স্পেটসিঅটিস

১৯৯০ সালে, ৬৮ বছর বয়সে আমি পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তবুও, প্রায় ১৫ বছর ধরে আমি সাইপ্রাস দ্বীপে পূর্ণসময়ের একজন পরিচারক হিসেবে সানন্দে সেবা করছি। আমার অক্ষমতা সত্ত্বেও, যিহোবার সেবায় সক্রিয় থাকতে কী আমাকে শক্তি জুগিয়েছে?

 আমি ১৯২২ সালের ১১ই অক্টোবর জন্মগ্রহণ করি। আমরা পরিবারে মোট নয় ছেলেমেয়ে—চার ছেলে ও পাঁচ মেয়ে—ছিলাম। আমরা সাইপ্রাসের কেসিলফাগু গ্রামে বাস করতাম। যদিও আমার বাবামা মোটামুটি অবস্থাপন্ন ছিল কিন্তু তবুও এক বিরাট পরিবারের ভরণপোষণ করার জন্য তাদের খেতের কাজে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো।

আমার বাবা আনডোনিস, অধ্যবসায়ী ও কৌতূহলী স্বভাবের ছিলেন। আমার জন্মের অল্প কিছুসময় পর, বাবা গ্রামের স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাইবেল ছাত্রদের (যে-নামে যিহোবার সাক্ষিরা তখন পরিচিত ছিল) দ্বারা প্রকাশিত লোকেদের পুলপিট (ইংরেজি) নামে একটা ট্র্যাক্ট দেখতে পেয়েছিলেন। তিনি সেটা পড়তে শুরু করেছিলেন এবং শীঘ্রই এর বিষয়বস্তুর মধ্যে ডুবে গিয়েছিলেন। এর ফলে, সেই দ্বীপে যারা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করেছিল তাদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি ছিল বাবা ও আনথ্রিয়াস ক্রিসটু নামে তার একজন বন্ধু।

বিরোধিতা সত্ত্বেও বৃদ্ধি

কিছু সময় পর, তারা দুজনে যিহোবার সাক্ষিদের কাছ থেকে আরও বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা নিয়েছিল। শীঘ্রই, বাবা ও আনথ্রিয়াস বাইবেলের যে-সত্য শিখছিল, তা তাদের গ্রামের লোকেদের কাছে জানাতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। তাদের প্রচার কাজের ফলে গ্রিক অর্থোডক্স পাদরি ও অন্যান্যদের কাছ থেকে প্রচণ্ড বিরোধিতা এসেছিল, যারা যিহোবার সাক্ষিদের এক ক্ষতিকর প্রভাব বলে মনে করত।

কিন্তু, স্থানীয় লোকেদের অনেকেই এই দুজন বাইবেল শিক্ষকের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে থাকতে পারেনি। আমার বাবা তার দয়ালু মনোভাব ও উদারতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। প্রায়ই, তিনি গরিব পরিবারগুলোকে সাহায্য করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি মাঝরাতে চুপিচুপি ঘর থেকে বেরিয়ে অভাবী পরিবারগুলোর দরজায় গম বা রুটি রেখে আসতেন। এই ধরনের নিঃস্বার্থ খ্রিস্টীয় আচরণ এমনকি এই দুজন পরিচারকের বার্তাকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছিল।—মথি ৫:১৬.

এর ফলে প্রায় বারোজন ব্যক্তি বাইবেলের বার্তার প্রতি সাড়া দিয়েছিল। সত্যের প্রতি তাদের উপলব্ধি যতই বাড়তে থাকে, তারা এক দল হিসেবে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য বিভিন্ন বাড়িতে মিলিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছিল। প্রায় ১৯৩৪ সালে, নিকস মাথেয়াকিস নামে গ্রিসের একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক সাইপ্রাসে এসেছিলেন এবং কেসিলফাগু দলটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ভাই মাথেয়াকিস, ধৈর্য ধরে ও দৃঢ়তার সঙ্গে সেই দলটিকে সংগঠিত করতে সাহায্য করেছিলেন এবং শাস্ত্র সম্বন্ধে আরও বোধগম্যতা লাভ করতে সাহায্য জুগিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, এই দলটি সাইপ্রাসে যিহোবার সাক্ষিদের প্রথম মণ্ডলী হয়ে উঠেছিল।

যেহেতু প্রচার কাজ অগ্রসর হতে থাকে এবং অনেক লোক বাইবেলের সত্য গ্রহণ করতে থাকে, তাই ভাইয়েরা সভাগুলো করার জন্য একটা স্থায়ী জায়গার প্রয়োজন অনুভব করেছিল। আমার বড় দাদা জর্জ ও তার স্ত্রী এলিনি একটা বাড়ি দান করেছিল, যেটাকে তারা গোলাঘর হিসেবে ব্যবহার করছিল। তাদের বাড়ির লাগোয়া এই বাড়িটাকে মেরামত করে সভাগুলোর জন্য উপযুক্ত এক জায়গায় পরিণত করা হয়েছিল। এভাবেই, ভাইয়েরা সেই দ্বীপে তাদের প্রথম কিংডম হল পেয়েছিল। তারা কতই না কৃতজ্ঞ ছিল! আর পরবর্তী বৃদ্ধির জন্য এটা কত উদ্দীপনাই না জুগিয়েছিল!

সত্যকে নিজের করে নেওয়া

১৯৩৮ সালে, ১৬ বছর বয়সে আমি একজন ছুতোর মিস্ত্রি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাই, বাবা আমাকে সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়াতে পাঠিয়ে দেন। দূরদর্শিতা দেখিয়ে, তিনি নিকস মাথেয়াকিসের সঙ্গে আমার থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই বিশ্বস্ত ভাইয়ের উদ্যোগ ও আতিথেয়তার জন্য সেই দ্বীপের অনেকে আজও তাকে মনে রেখেছে। শুরুর সেই দিনগুলোতে, সাইপ্রাসের যেকোনো খ্রিস্টানের জন্যই তার এই প্রবল উদ্যোগ ও অটল সাহসের মতো গুণগুলোর প্রয়োজন ছিল।

ভাই মাথেয়াকিস আমাকে বাইবেলের জ্ঞানের এক দৃঢ় ভিত্তি অর্জন করার ও আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য প্রচুর সাহায্য করেছিলেন। তার সঙ্গে থাকার সময় আমি তার বাড়িতে অনুষ্ঠিত সমস্ত সভায় যোগ দিতাম। সেই সময়ই প্রথম আমি অনুভব করেছিলাম যে, যিহোবার প্রতি আমার ভালবাসা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আমি ঈশ্বরের সঙ্গে এক অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে দৃঢ়সংকল্প হয়েছিলাম। কয়েক মাসের মধ্যে, আমি ভাই মাথেয়াকিসকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, আমি তার সঙ্গে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যোগ দিতে পারব কি না। সেই সময়টা ছিল ১৯৩৯ সাল।

কিছু সময় পর, আমি আমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম। বাবার সঙ্গে কিছু সময় থাকার ফলে আমি এই বিষয়ে আরও বেশি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, আমি সত্য ও জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছি। ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। আমার বয়সি অনেক যুবক স্বেচ্ছায় যুদ্ধে গিয়েছিল কিন্তু বাইবেলের নির্দেশনাকে মেনে চলে আমি নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। (যিশাইয় ২:৪; যোহন ১৫:১৯) সেই বছরই আমি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলাম এবং ১৯৪০ সালে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। সেই সময়ই প্রথম আমি অনুভব করেছিলাম যে, লোকভয় থেকে আমি মুক্ত!

১৯৪৮ সালে আমি ইফপ্রেপিয়াকে বিয়ে করি। আমাদের চারটে ছেলেমেয়ে হয়েছিল। শীঘ্রই আমরা উপলব্ধি করেছিলাম যে, তাদেরকে “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে” বড় করে তোলার জন্য আমাদেরকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। (ইফিষীয় ৬:৪) আমাদের প্রার্থনা ও প্রচেষ্টা মূলত আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যিহোবার প্রতি গভীর ভালবাসা এবং তাঁর নিয়ম ও নীতিগুলোর প্রতি সম্মান গড়ে তোলার মধ্যেই কেন্দ্রীভূত ছিল।

স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে দাঁড়ায়

১৯৬৪ সালে, ৪২ বছর বয়সে আমি অনুভব করতে শুরু করেছিলাম যেন আমার ডান হাত ও পা অবশ হয়ে পড়ছে। ধীরে ধীরে আমার বাঁ দিকেও এটা ছড়িয়ে পড়েছিল। পরীক্ষা করে জানা যায় যে, আমার মাসল আট্রফি হয়েছে, এক দুরারোগ্য ব্যাধি যা শেষপর্যন্ত একজনকে পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে ফেলে। এটা শুনে আমি খুবই বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলাম। সমস্তকিছু খুব তাড়াতাড়ি ও হঠাৎ করে ঘটেছিল! রাগ ও বিরক্তির অনুভূতি দ্বারা জর্জরিত হয়ে, আমি ভেবেছিলাম: ‘আমার প্রতিই কেন এইরকমটা ঘটল? কেন এই শাস্তি আমাকেই দেওয়া হচ্ছে?’ তবে, সময়েরসঙ্গে সঙ্গে আমি প্রথম প্রথম যে-আঘাত পেয়েছিলাম, তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। এরপর আমার মধ্যে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তার অনুভূতি জাগতে শুরু করেছিল। নানা প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরছিল। আমি কি পুরোপুরি পক্ষাঘাতী হয়ে যাব এবং অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ব? কীভাবে আমি এর সঙ্গে মোকাবিলা করব? আমি কি আমার পরিবারের—আমার স্ত্রী ও চারটে ছেলেমেয়ের—ভরণপোষণ করতে পারব? এই ধরনের চিন্তাভাবনা করে আমি সত্যিই খুব কষ্ট পেতাম।

আমার জীবনের এই চরম পরিস্থিতিতে আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার এবং হৃদয় খুলে আমার সমস্ত চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা তাঁকে জানানোর প্রয়োজনীয়তা এতটাই বোধ করেছিলাম, যা আগে কখনো করিনি। আমি দিনরাত চোখের জল ফেলে তাঁর কাছে প্রার্থনা করতাম। অল্প সময়ের মধ্যেই আমি সান্ত্বনা পেয়েছিলাম। ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ পদের সান্ত্বনাজনক কথাগুলো আমার ক্ষেত্রে অতি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি, তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।”

পক্ষাঘাতের সঙ্গে মোকাবিলা করা

আমার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমাকে আমার নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে শীঘ্রই মানিয়ে নিতে হবে। আমি যেহেতু একজন ছুতোর মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে আর পারছিলাম না, তাই আমি কম কষ্টকর কাজ খোঁজার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যেটা আমার শারীরিক অবস্থার উপযুক্ত হবে এবং যেটার মাধ্যমে আমি আমার পরিবারের ভরণপোষণও করতে পারব। প্রথমদিকে, আমি একটা ছোট্ট ভ্যানে করে আইসক্রিম বিক্রি করতাম। প্রায় ছয় বছর ধরে, যতদিন পর্যন্ত না রোগের কারণে আমাকে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতে হয়েছিল, ততদিন পর্যন্ত আমি এটা করেছিলাম। এরপর আমি আরও হালকা ধরনের বিভিন্ন কাজ করতে শুরু করেছিলাম, যেগুলো আমার সাধ্যের মধ্যে ছিল।

১৯৯০ সাল থেকে আমার স্বাস্থ্য এতটাই খারাপ হয়ে পড়েছিল যে, আমি আর কোনো ধরনেরই চাকরি করতে পারছিলাম না। বর্তমানে, আমি অন্যদের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল, এমনকি সেই কাজগুলোর জন্যও যেগুলো একজন সুস্থ ব্যক্তি সাধারণভাবে করে থাকেন। বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার, স্নান করার ও জামাকাপড় পরার জন্যও আমার সাহায্যের প্রয়োজন হয়। খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য আমাকে হুইলচেয়ারে ঠেলে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে সেটাতে তুলেও দিতে হয়। কিংডম হলে পৌঁছে, আমাকে গাড়ি থেকে বের করে আবার হুইলচেয়ারে বসিয়ে ভিতরে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। সভা চলাকালীন আমার পাশে একটা ইলেকট্রিক হিটার রাখা হয় যাতে আমার পায়ের তলাটা উষ্ণ থাকে।

কিন্তু, পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থাতেও আমি সমস্ত সভায় প্রায় নিয়মিত যোগ দিই। আমি উপলব্ধি করি যে, এখানেই আমাদেরকে যিহোবা শিক্ষা দিচ্ছেন এবং আমার আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের সংস্পর্শে থাকাই হচ্ছে প্রকৃত আশ্রয় এবং সাহায্য ও উৎসাহের এক উৎস। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিপক্ব সহবিশ্বাসীদের নিয়মিত পরিদর্শন, আমাকে ক্রমাগত সাহায্য জুগিয়েছে। সত্যিই, দায়ূদের মতো আমিও অনুভব করি: “আমার পানপাত্র উথলিয়া পড়িতেছে।”—গীতসংহিতা ২৩:৫.

আমার প্রিয় স্ত্রী এই সময়গুলোতে একজন চমৎকার সহকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আমার ছেলেমেয়েরাও অনেক সাহায্য করেছে। আজ পর্যন্ত বেশ কয়েক বছর ধরে, তারা আমাকে প্রতিদিনের কাজগুলো করতে সাহায্য করছে। তারা যা করছে তা সহজ নয় এবং যতই সময় পেরিয়ে যাচ্ছে আমার যত্ন নেওয়া দিন দিন ততই কঠিন হয়ে পড়ছে। ধৈর্য দেখানোর ও নিজেদেরকে বিলিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সত্যিই উদাহরণযোগ্য এবং যিহোবার কাছে আমার প্রার্থনা এই যে, তিনি যেন তাদেরকে সবসময় আশীর্বাদ করে যান।

তাঁর দাসদের শক্তিশালী করার জন্য যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া আরেকটা চমৎকার ব্যবস্থা হচ্ছে প্রার্থনা। (গীতসংহিতা ৬৫:২) আমার আন্তরিক অনুরোধের প্রতি সাড়া দিয়ে যিহোবা আমাকে এই সমস্ত বছর বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য শক্তি প্রদান করেছেন। বিশেষ করে আমি যখন নিরুৎসাহিত বোধ করি, তখন প্রার্থনা করার দ্বারা আমি স্বস্তি পাই এবং এটা আমাকে আমার আনন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করে। যিহোবার সঙ্গে অবিরত কথা বলা আমাকে সতেজ করে এবং তা করে যাওয়া আমার দৃঢ়সংকল্পকে পুনরুজ্জীবিত করে। আমি পুরোপুরি দৃঢ়নিশ্চিত যে, যিহোবা তাঁর দাসদের প্রার্থনা শোনেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় মনের শান্তি প্রদান করেন।—গীতসংহিতা ৫১:১৭; ১ পিতর ৫:৭.

সর্বোপরি, আমি প্রতিবারই পুনরুজ্জীবিত হই যখন আমি স্মরণ করি যে, শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর তাদের সবাইকে সুস্থ করবেন, যারা তাঁর পুত্র, যিশু খ্রিস্টের রাজ্য শাসনের অধীনে পরমদেশে জীবন লাভ করবে। যখনই আমি সেই অপূর্ব আশা সম্বন্ধে ধ্যান করি, আমার চোখ থেকে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ে।—গীতসংহিতা ৩৭:১১, ২৯; লূক ২৩:৪৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

একজন পূণসময়ের পরিচারক হিসেবে সেবা করা

প্রায় ১৯৯১ সালে, আমি আমার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার পর উপলব্ধি করেছিলাম যে, আত্মকরুণা বোধ করা এড়িয়ে চলার সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে, অমূল্য রাজ্যের সুসমাচার অন্যদেরকে জানানোর কাজে ব্যস্ত থাকা। সেই বছরই আমি একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে সেবা করতে শুরু করেছিলাম।

যেহেতু আমি পঙ্গু, তাই বেশির ভাগ সময় আমি চিঠি লিখেই সাক্ষ্যদান করে থাকি। কিন্তু আমার জন্য চিঠি লেখাও সহজ নয়; এটার জন্যও কঠোর প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। মাসল আট্রফির জন্য হাত দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে কলম ভাল করে ধরাও আমার কাছে কঠিন। তা সত্ত্বেও, অধ্যবসায় ও প্রার্থনার দ্বারা আমি ১৫ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে ক্রমাগত চিঠি লেখার মাধ্যমে সাক্ষ্যদান করে আসছি। এ ছাড়া, আমি টেলিফোনের মাধ্যমেও লোকেদের কাছে প্রচার করি। আমি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী যারা আমার সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে আসে, তাদের কাছে নতুন জগৎ ও পরমদেশ পৃথিবীর প্রত্যাশা সম্বন্ধে কথা বলার যেকোনো সুযোগকে কখনো হারাই না।

এর ফলে, আমি বহু উৎসাহজনক অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। আমার নাতিনাতনির মধ্যে একজনকে, যার সঙ্গে আমি প্রায় ১২ বছর আগে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলাম, তাকে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করতে ও বাইবেলের সত্যের প্রতি উপলব্ধি প্রকাশ করতে দেখে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম। সে বাইবেল প্রশিক্ষিত বিবেকের দ্বারা চালিত হয়ে খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার ব্যাপারে এখনও আনুগত্য ও দৃঢ়তা বজায় রেখেছে।

যে-লোকদের কাছে আমি চিঠি লিখি তারা যখন বাইবেল সম্বন্ধে আরও তথ্য জানার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখন আমি বিশেষভাবে খুশি হই। মাঝেমধ্যে, কেউ কেউ আরো বাইবেল সাহিত্যাদির জন্য অনুরোধ জানায়। উদাহরণস্বরূপ, একজন মহিলা তার স্বামীকে লেখা আমার একটা উৎসাহজনক চিঠির জন্য আমাকে টেলিফোন করে ধন্যবাদ জানান। সেই চিঠিতে লেখা বিষয়গুলো তার কাছে খুবই আগ্রহজনক লেগেছিল। এর ফলে আমার বাড়িতে সেই মহিলা ও তার স্বামীর সঙ্গে বহুবার বাইবেল আলোচনা হয়েছে।

এক চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গি ও আশা

বছরের পর বছর ধরে, আমি পৃথিবীর এই অংশে রাজ্য প্রকাশকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে দেখেছি। আমার দাদা জর্জের বাড়ির পাশে ছোট্ট কিংডম হলটাকে বড় করা ও বেশ কয়েক বার মেরামত করা হয়েছে। যিহোবার সাক্ষিদের দুটো মণ্ডলী এই সুন্দর উপাসনাস্থলটি ব্যবহার করে।

১৯৪৩ সালে ৫২ বছর বয়সে বাবা মারা যান। কিন্তু কী এক আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারই না তিনি রেখে গিয়েছেন! তার আট জন ছেলেমেয়ে সত্যকে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং এখনও যিহোবাকে সেবা করছে। বাবা যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই কেসিলফাগু গ্রামে এবং আশেপাশের গ্রামগুলোতে এখন তিনটে মণ্ডলী রয়েছে, যেখানে মোট প্রকাশকের সংখ্যা হচ্ছে ২৩০ জন!

এইরকম অপূর্ব ফলাফল আমার আনন্দের এক উৎস হয়ে এসেছে। এখন ৮৩ বছর বয়সে, আমি দৃঢ়নিশ্চিতভাবে গীতরচকের এই কথাগুলোর সঙ্গে একমত: “যুবসিংহদের অনাটন ও ক্ষুধায় ক্লেশ হয়, কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অন্বেষণ করে, তাহাদের কোন মঙ্গলের অভাব হয় না।” (গীতসংহিতা ৩৪:১০) আমি অধীর আগ্রহে সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যখন যিশাইয় ৩৫:৬ পদের কথাগুলো সত্য প্রমাণিত হবে: “তৎকালে খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে।” সেই সময় পর্যন্ত, আমার অক্ষমতা সত্ত্বেও আমি সানন্দে যিহোবাকে সেবা করে যাওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।

[১৭ পৃষ্ঠার মানচিত্র]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

তুরস্ক

সিরিয়া

লেবানন

সাইপ্রাস

নিকোসিয়া

কেসিলফাগু

ভূমধ্য সাগর

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেসিলফাগুতে প্রথম কিংডম হল, যেটা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ইফপ্রেপিয়ার সঙ্গে ১৯৪৬ সালে ও বর্তমানে

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

টেলিফোনে ও চিঠি লিখে সাক্ষ্যদান করে আমি আনন্দ খুঁজে পাই