সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘জীবন মনোনীত কর, যেন বাঁচিতে পার’

‘জীবন মনোনীত কর, যেন বাঁচিতে পার’

‘জীবন মনোনীত কর, যেন বাঁচিতে পার’

“আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্ব্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি . . . বাঁচিতে পার।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯.

১, ২. কোন কোন দিক দিয়ে মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছিল?

 “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি।” এই ঐশিক বিবৃতি বাইবেলের প্রথম অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। পরে, “ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন,” আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭ পদ বলে। এভাবে, প্রথম মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টি থেকে আলাদা ছিল। সে তাঁর সৃষ্টিকর্তার মতো ছিল এই অর্থে যে, যুক্তি করার এবং প্রেম, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা ও শক্তি দেখানোর ক্ষেত্রে সে ঈশ্বরকে অনুকরণ করতে পারত। তার সেই বিবেকের ক্ষমতা ছিল, যা তাকে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য সাহায্য করতে পারত, যে-সিদ্ধান্ত তার জন্য উপকার নিয়ে আসবে ও সেইসঙ্গে তার স্বর্গীয় পিতাকে খুশি করবে। (রোমীয় ২:১৫) সংক্ষেপে বললে, আদমের স্বাধীন ইচ্ছা ছিল। তাঁর পার্থিব পুত্রের গঠনশৈলী দেখে যিহোবা তাঁর সৃষ্টি সম্বন্ধে এই মূল্যায়ন করেছিলেন: “সে সকলই অতি উত্তম।”—আদিপুস্তক ১:৩১; গীতসংহিতা ৯৫:৬.

আদমের বংশধর হিসেবে আমাদেরও ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে এবং তাঁরই মতো করে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু, আমরা কী করব, তা কি আসলেই আমরা বাছাই করতে পারি? যদিও, ভবিষ্যতে কী ঘটবে সেই সম্বন্ধে আগে থেকে জানার ক্ষমতা যিহোবার রয়েছে কিন্তু তিনি আমাদের প্রত্যেকের কাজ ও পরিণতি পূর্বনির্ধারণ করে রাখেননি। তিনি কখনো তাঁর পার্থিব সন্তানদেরকে নিয়তির হাতে ছেড়ে দেন না। সঠিক বাছাইগুলো করার ক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করার গুরুত্ব সম্বন্ধে বোঝার জন্য আসুন প্রথমে আমরা ইস্রায়েল জাতি থেকে একটা শিক্ষা লাভ করি।—রোমীয় ১৫:৪.

ইস্রায়েলীয়দের বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা ছিল

৩. দশ আজ্ঞার প্রথম আজ্ঞাটি কী ছিল আর কীভাবে বিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়রা সেটির প্রতি বাধ্য থাকার বিষয়টা বেছে নিয়েছিল?

“আমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি মিসর দেশ হইতে, দাস-গৃহ হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিলেন,” ইস্রায়েলীয়দেরকে যিহোবা এই কথা বলেছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৬) সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে, ইস্রায়েল জাতি মিশরীয় দাসত্ব থেকে অলৌকিকভাবে উদ্ধার লাভ করেছিল আর তাই এই কথাগুলো নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণই ছিল না। দশ আজ্ঞার প্রথম আজ্ঞাতে যিহোবা তাঁর মুখপাত্র মোশির মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন: “আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক।” (যাত্রাপুস্তক ২০:১, ৩) সেই সময় ইস্রায়েল জাতি বাধ্য থাকার বিষয়টা বেছে নিয়েছিল। তারা স্বেচ্ছায় যিহোবাকে তাদের একাগ্র ভক্তি দিয়েছিল।—যাত্রাপুস্তক ২০:৫; গণনাপুস্তক ২৫:১১.

৪. (ক) ইস্রায়েলকে মোশি কোন বাছাইয়ের কথা জানিয়েছিলেন? (খ) আজকে আমাদের জন্য কোন বাছাই রয়েছে?

প্রায় ৪০ বছর পর, মোশি ইস্রায়েলীয়দের আরেক প্রজন্মকে যে-বিষয়টা মনোনীত বা বাছাই করতে হবে, সেই বিষয়টা জোরালোভাবে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। “আমি অদ্য তোমাদের বিরুদ্ধে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি যে,” তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্ব্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯) একইভাবে আজকেও আমরা বেছে নিতে পারি। হ্যাঁ, হয় আমরা অনন্তজীবনের কথা মনে রেখে যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করা বেছে নিতে পারি নতুবা তাঁর অবাধ্য হয়ে পরিণতি ভোগ করা বেছে নিতে পারি। এমন লোকেদের দুটো উদাহরণ বিবেচনা করুন, যারা ভিন্ন ভিন্ন বাছাই করেছিল।

৫, ৬. যিহোশূয় কোন বাছাই করেছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?

সাধারণ কাল পূর্ব ১৪৭৩ সালে যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যিহোশূয় তার মৃত্যুর আগে এক জোরালো উপদেশ দেওয়ার সময়, সম্পূর্ণ জাতিকে অনুরোধ করেছিলেন: “যদি সদাপ্রভুর সেবা করা তোমাদের মন্দ বোধ হয়, তবে যাহার সেবা করিবে, তাহাকে অদ্য মনোনীত কর; নদীর ওপারস্থ তোমাদের পিতৃপুরুষদের সেবিত দেবগণ হয় হউক, কিম্বা যাহাদের দেশে তোমরা বাস করিতেছ সেই ইমোরীয়দের দেবগণ হয় হউক।” এরপর, তার পরিবারের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছিলেন: “আমি ও আমার পরিজন আমরা সদাপ্রভুর সেবা করিব।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫.

এর আগে, যিহোশূয়কে যিহোবা সাহসী ও বলবান হওয়ার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি বাধ্যতা দেখানো থেকে সরে না যেতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর পরিবর্তে, দিবারাত্র ব্যবস্থাপুস্তক পাঠ করার মাধ্যমে যিহোশূয় তার পথকে সফল করতে পারবেন। (যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৭, ৮) আর সেটাই সত্যি হয়েছিল। যিহোশূয়ের এই বাছাই আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল। “সদাপ্রভু ইস্রায়েলকুলের কাছে যে সকল মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটী বাক্যও নিষ্ফল হইল না,” যিহোশূয় ঘোষণা করেছিলেন। “সকলই সফল হইল।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ২১:৪৫.

৭. যিশাইয়ের দিনে কিছু ইস্রায়েলীয় কোন বাছাই করেছিল আর এর পরিণতি কী হয়েছিল?

এর বৈসাদৃশ্যে, প্রায় ৭০০ বছর পরে ইস্রায়েলের পরিস্থিতি সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। সেই সময়ে, অনেক ইস্রায়েলীয় পৌত্তলিক প্রথাগুলো পালন করছিল। উদাহরণস্বরূপ, বছরের শেষ দিনে লোকেরা ভোজের জন্য মিলিত হতো, যেখানে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার ও মিষ্টি দ্রাক্ষারস থাকত। এটা কোনো সাধারণ পারিবারিক সমাবেশ ছিল না। এটা ছিল দুই পৌত্তলিক দেব-দেবীর সম্মানে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ভাববাদী যিশাইয় এই অবিশ্বস্ততা সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি লিপিবদ্ধ করেছেন: “তোমরা যাহারা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিতেছ, আমার পবিত্র পর্ব্বত ভুলিয়া যাইতেছ, ভাগ্য [দেবের] জন্য মেজ সাজাইয়া থাক, এবং নিরূপণী [দেবীর] উদ্দেশে মিশ্র সুরা পূর্ণ করিয়া থাক।” তারা মনে করত যে, বছরের ফলন যিহোবার আশীর্বাদের ওপর নয় বরং ‘ভাগ্য [দেব]’ ও ‘নিরূপণী [দেবীকে]’ সন্তুষ্ট করার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু, তাদের বিদ্রোহী কাজ ও স্বেচ্ছাকৃত বাছাই আসলে তাদের মন্দ পরিণতিকে নিশ্চিত করেছিল। “তোমাদিগকে আমি খড়্গের জন্য নিরূপণ করিলাম,” যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন, “আর তোমরা সকলে বধ্য-স্থানে অবনত হইবে; কারণ আমি ডাকিলে তোমরা উত্তর দিতে না, আমি কথা কহিলে শুনিতে না; কিন্তু আমার দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিতে, এবং যাহাতে আমার প্রীতি নাই, তাহাই মনোনীত করিতে।” (যিশাইয় ৬৫:১১, ১২) তাদের অবিবেচনাপূর্ণ বাছাই তাদের জন্য ধ্বংস নিয়ে এসেছিল আর নিরূপণী দেবী ও ভাগ্য দেবের তা রোধ করার কোনো ক্ষমতাই ছিল না।

সঠিক বাছাই করা

৮. দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:২০ পদ অনুযায়ী সঠিক বাছাই করার সঙ্গে কী জড়িত?

মোশি যখন ইস্রায়েলীয়দেরকে জীবন বেছে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন, তখন তিনি এমন তিনটে পদক্ষেপ সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যা তাদের নেওয়া উচিত: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর, তাঁহার রবে অবধান কর, ও তাঁহাতে আসক্ত হও।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:২০) আসুন আমরা এক এক করে এগুলো বিবেচনা করি, যাতে আমরা সঠিক বাছাই করতে পারি।

৯. কীভাবে আমরা যিহোবার প্রতি আমাদের ভালবাসা দেখাতে পারি?

আমাদের ঈশ্বর যিহোবাকে প্রেম করে: আমরা যিহোবাকে সেবা করা বেছে নিয়েছি কারণ আমরা তাঁকে ভালবাসি। ইস্রায়েলের দিনের সতর্কতামূলক উদাহরণগুলোতে মনোযোগ দিয়ে আমরা অনৈতিক কাজ করার সমস্ত প্রলোভন প্রতিরোধ করি ও সেই জীবনধারা পরিহার করি, যা হয়তো আমাদেরকে জগতের বস্তুবাদিতার ফাঁদে ফেলতে পারে। (১ করিন্থীয় ১০:১১; ১ তীমথিয় ৬:৬-১০) আমরা যিহোবাতে আসক্ত থাকি এবং তাঁর বিধিকলাপ পালন করি। (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:৮; গীতসংহিতা ১১৯:৫, ৮) ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার আগে, মোশি তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন: “দেখ, আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাকে যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, আমি তোমাদিগকে সেইরূপ বিধি ও শাসন শিক্ষা দিয়াছি; যেন, তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, সেই দেশের মধ্যে তদনুসারে ব্যবহার কর। অতএব তোমরা সে সমস্ত মান্য করিও, ও পালন করিও; কেননা জাতি সকলের সমক্ষে তাহাই তোমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিস্বরূপ হইবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৫, ৬) যিহোবার ইচ্ছাকে আমাদের জীবনে প্রথম স্থানে রেখে তাঁর প্রতি ভালবাসা দেখানোর সময় এখনই। আমরা যদি তা করা বেছে নিই, তা হলে নিশ্চিতভাবেই আমরা আশীর্বাদ লাভ করতে পারব।—মথি ৬:৩৩.

১০-১২. নোহের দিনে যা ঘটেছিল, তা বিবেচনা করার মাধ্যমে আমরা কোন শিক্ষাগুলো পাই?

১০ ঈশ্বরের রব শুনে: নোহ ছিলেন “ধার্ম্মিকতার প্রচারক।” (২ পিতর ২:৫) জলপ্লাবনের পূর্বে প্রায় সমস্ত লোক বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিল এবং নোহের সতর্কবাণী “বুঝিতে পারিল না।” পরিণতি কী হয়েছিল? “বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।” যিশু সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ‘মনুষ্যপুত্ত্রের আগমনের’ সময়ে আমাদের দিনও তদ্রূপ হবে। নোহের দিনে যা ঘটেছিল, তা আজকে সেইসমস্ত লোকের জন্য এক জোরালো সতর্কবাণী হিসেবে কাজ করে, যারা ঈশ্বরের বার্তায় মনোযোগ না দেওয়া বেছে নেয়।—মথি ২৪:৩৯.

১১ আধুনিক দিনের ঈশ্বরের দাসদের দ্বারা ঘোষিত ঐশিক সতর্কবাণী নিয়ে যারা উপহাস করে, তাদের বোঝা উচিত যে সতর্কবাণীতে মনোযোগ না দেওয়ার অর্থ কী হবে। এই ধরনের উপহাসকদের বিষয়ে প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “সেই লোকেরা ইচ্ছাপূর্ব্বক ইহা ভুলিয়া যায় যে, আকাশমণ্ডল, এবং জল হইতে ও জল দ্বারা স্থিতিপ্রাপ্ত পৃথিবী ঈশ্বরের বাক্যের গুণে প্রাক্কালে ছিল; তদ্দ্বারা তখনকার জগৎ জলে আপ্লাবিত হইয়া নষ্ট হইয়াছিল। আবার সেই বাক্যের গুণে এই বর্ত্তমান কালের আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী অগ্নির নিমিত্ত সঞ্চিত রহিয়াছে, ভক্তিহীন মনুষ্যদের বিচার ও বিনাশের দিন পর্য্যন্ত রক্ষিত হইতেছে।”—২ পিতর ৩:৩-৭.

১২ নোহ ও তার পরিবার এর বিপরীত বিষয়টা বাছাই করেছিল। “বিশ্বাসে নোহ, যাহা যাহা তখন দেখা যাইতেছিল না, এমন বিষয়ে আদেশ পাইয়া ভক্তিযুক্ত ভয়ে আবিষ্ট হইয়া আপন পরিবারের ত্রাণার্থে এক জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন।” তিনি সতর্কবাণীতে মনোযোগ দেওয়ার ফলে তার পরিবার রক্ষা পেয়েছিল। (ইব্রীয় ১১:৭) আমরা যেন ঈশ্বরের বার্তা শুনে বাধ্যতার সঙ্গে তাতে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সত্বর হই।—যাকোব ১:১৯, ২২-২৫.

১৩, ১৪. (ক) কেন ‘সদাপ্রভুতে আসক্ত থাকা’ গুরুত্বপূর্ণ? (খ) কীভাবে আমরা “আমাদের কুম্ভকার” যিহোবাকে আমাদেরকে গঠন করতে দিই?

১৩ যিহোবাতে আসক্ত থেকে: ‘জীবন মনোনীত করিবার ও বাঁচিয়া থাকিবার’ জন্য আমাদের শুধু যিহোবাকে ভালবাসতে এবং তাঁর কথায় মনোযোগ দিতেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের ‘সদাপ্রভুতে আসক্ত থাকিতে’ অর্থাৎ অধ্যবসায়ের সঙ্গে তাঁর ইচ্ছা পালন করতে হবে। যিশু বলেছিলেন, “তোমরা নিজ নিজ ধৈর্য্যে আপন আপন প্রাণ লাভ করিবে।” (লূক ২১:১৯) আসলে, এই ক্ষেত্রে আমরা যে-বাছাইটা করি, তা আমাদের হৃদয়ে কী রয়েছে, সেটা প্রকাশ করে। হিতোপদেশ ২৮:১৪ পদ বলে, “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে সর্ব্বদা ভয় রাখে; কিন্তু যে হৃদয় কঠিন করে, সে বিপদে পড়িবে।” প্রাচীন মিশরের ফরৌণ ছিলেন এর একটা উদাহরণ। মিশরের ওপর দশটা আঘাতের প্রতিটা আঘাত আসার পর ফরৌণ ঈশ্বরীয় ভক্তি দেখানোর পরিবর্তে তার হৃদয়কে কঠিন করেছিলেন। যিহোবা ফরৌণকে অবাধ্য হতে জোর করেননি বরং সেই গর্বিত শাসককে বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। যা-ই হোক, যিহোবার ইচ্ছা সম্পাদিত হয়েছিল, যেমনটা প্রেরিত পৌল ফরৌণ সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি এই জন্যই তোমাকে উঠাইয়াছি, যেন তোমাতে আমার পরাক্রম দেখাই, আর যেন সমস্ত পৃথিবীতে আমার নাম কীর্ত্তিত হয়।”—রোমীয় ৯:১৭.

১৪ ফরৌণের নিয়ন্ত্রণ থেকে উদ্ধার পাওয়ার কয়েক শতাব্দী পরে ভাববাদী যিশাইয় ঘোষণা করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি আমাদের পিতা; আমরা মৃত্তিকা, আর তুমি আমাদের কুম্ভকার; আমরা সকলে তোমার হস্তকৃত বস্তু।” (যিশাইয় ৬৪:৮) আমরা যখন আমাদের ব্যক্তিগত অধ্যয়ন ও তাঁর বাক্য প্রয়োগ করার মাধ্যমে যিহোবাকে আমাদেরকে গঠন করতে দিই, তখন আমরা ধীরে ধীরে নতুন ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলি। আমরা আরও নম্র ও নমনীয় হই আর তা আমাদের জন্য যিহোবার প্রতি অনুগতভাবে আসক্ত থাকাকে আরও সহজ করে তোলে কারণ আমরা আন্তরিকভাবে তাঁকে খুশি করতে চাই।—ইফিষীয় ৪:২৩, ২৪; কলসীয় ৩:৮-১০.

“তাহা শিক্ষা দেও”

১৫. দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৯ পদ অনুসারে মোশি ইস্রায়েলীয়দের কোন দুটো দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন?

১৫ সমবেত ইস্রায়েল জাতি, যারা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুত, তাদেরকে মোশি বলেছিলেন: “তুমি নিজের-বিষয়ে সাবধান, তোমার প্রাণের বিষয়ে অতি সাবধান থাক; পাছে তুমি যে সকল ব্যাপার স্বচক্ষে দেখিয়াছ, তাহা ভুলিয়া যাও; আর পাছে জীবন থাকিতে তোমার হৃদয় হইতে তাহা লুপ্ত হয়; তুমি আপন পুত্ত্র পৌত্ত্রদিগকে তাহা শিক্ষা দেও।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৯) যিহোবার আশীর্বাদ ও সেইসঙ্গে যে-দেশ তারা অধিকার করতে যাচ্ছে, সেই দেশে সমৃদ্ধি লাভ করার জন্য লোকেদেরকে তাদের ঈশ্বর যিহোবার সামনে দুটো দায়িত্ব পরিপূর্ণ করতে হয়েছিল। তাদের চোখের সামনে যিহোবা যে-বিস্ময়কর বিষয়গুলো করেছিলেন, তা তারা অবশ্যই ভুলে যাবে না ও সেইসঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে হবে। আজকে ঈশ্বরের লোক হিসেবে আমাদেরও একই বিষয় করতে হবে, যদি আমরা ‘জীবন মনোনীত করিতে ও বাঁচিয়া থাকিতে’ চাই। যিহোবা আমাদের জন্য সম্পাদন করেছেন এমন কী আমরা নিজ চোখে দেখেছি?

১৬, ১৭. (ক) গিলিয়েড প্রশিক্ষিত মিশনারিরা রাজ্যের প্রচার কাজে কোন বিষয়টা সম্পাদন করতে সমর্থ হয়েছে? (খ) যারা উদ্যোগ বজায় রেখেছিল, তাদের কোন উদাহরণ সম্বন্ধে আপনি জানেন?

১৬ আমাদের প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজে যিহোবা কীভাবে আশীর্বাদ করেছেন, তা দেখে আমরা রোমাঞ্চিত। ১৯৪৩ সালে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অভ গিলিয়েড শুরু হওয়ার পর থেকে, মিশনারিরা অনেক দেশে শিষ্য তৈরির কাজে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। সেই সময় থেকে এই স্কুলে প্রথম দিকে যারা গ্র্যাজুয়েট হয়েছিল, তারা রাজ্যের প্রচার কাজের জন্য উদ্যোগ বজায় রেখেছে, যদিও এখন তাদের অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে এবং কেউ কেউ শারীরিক সমস্যার কারণে বেশি একটা প্রচারে যেতে পারে না। এর একটা উদাহরণ হল মেরি ওলসন, যিনি ১৯৪৪ সালে গিলিয়েড থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন। তিনি প্রথমে উরুগুয়ে, এরপর কলম্বিয়া আর এখন পুয়ের্টো রিকোতে মিশনারি হিসেবে সেবা করেছেন। যদিও বার্ধক্যের কারণে শারীরিক সমস্যা থাকায় তিনি বেশি প্রচারে বের হতে পারেন না, কিন্তু বোন ওলসন প্রচার কাজের প্রতি তার উদ্যম বজায় রেখেছেন। স্প্যানিশ ভাষা শিখেছেন বলে প্রতি সপ্তাহে স্থানীয় প্রকাশকদের সঙ্গে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাওয়ার জন্য সময় আলাদা করে রাখেন।

১৭ ন্যান্সি পোর্টার নামে এক বিধবা বোন, যিনি ১৯৪৭ সালে গিলিয়েড স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন, তিনি এখনও বাহামাতে সেবা করছেন। তিনি হলেন আরেকজন মিশনারি, যিনি প্রচার কাজে ব্যস্ত আছেন। “অন্যদেরকে বাইবেলের সত্য শেখানোই হল আমার আনন্দের এক আসল উৎস,” বোন পোর্টার তার জীবনকাহিনীতে বলেন। * “এর ফলে আমি একটা সুশৃঙ্খল আধ্যাত্মিক তালিকা বজায় রাখতে পেরেছি, যা আমার জীবনে নির্দিষ্ট পথ এবং স্থিরতা এনে দিয়েছে।” বোন পোর্টার এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত দাসেরা যখন তাদের অতীত নিয়ে চিন্তা করে, তখন যিহোবা যা করেছেন, তা তারা ভুলে যায় না। আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমাদের এলাকায় যিহোবা যেভাবে রাজ্যের কাজে আশীর্বাদ করেছেন, সেটাকে কি আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে দেখি?—গীতসংহিতা ৬৮:১১.

১৮. মিশনারিদের জীবনকাহিনী পড়ার মাধ্যমে আমরা কোন শিক্ষা পেতে পারি?

১৮ যিহোবার সেবায় অনেক বছর পার করে দিয়েছে এমন ব্যক্তিরা যা সম্পাদন করেছে এবং এখনও করছে, তা দেখে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। তাদের জীবনকাহিনী পড়া আমাদের জন্য উৎসাহের এক উৎস কারণ আমরা যখন দেখি যে, এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জন্য যিহোবা কী করেছেন, তখন এটা যিহোবাকে সেবা করার জন্য আমাদের সঙ্কল্পকে শক্তিশালী করে। প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় প্রকাশিত এই রোমাঞ্চকর বিবরণগুলো আপনি কি নিয়মিতভাবে পড়েন এবং সেগুলো নিয়ে ধ্যান করেন?

১৯. খ্রিস্টান বাবামারা কীভাবে প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় লিপিবদ্ধ জীবনকাহিনীগুলোর উত্তম ব্যবহার করতে পারে?

১৯ মোশি ইস্রায়েলীয়দের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, যিহোবা তাদের জন্য যা কিছু করেছেন, তা যেন তারা ভুলে না যায় এবং তাদের জীবনকালে এগুলো যেন তাদের হৃদয় থেকে লুপ্ত না হয়। এরপর তিনি আরও পদক্ষেপ সম্বন্ধে বলেছিলেন: “তুমি আপন পুত্ত্র পৌত্ত্রদিগকে তাহা শিক্ষা দেও।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৯) সত্য ঘটনার এক বিশেষ আবেদন রয়েছে। যে-অল্পবয়স্করা বড় হচ্ছে, তাদের উত্তম উত্তম উদাহরণ সম্বন্ধে জানা প্রয়োজন। অবিবাহিত বোনেরা সেইসমস্ত বয়স্ক বোনের বিশ্বস্ত উদাহরণ থেকে বিভিন্ন শিক্ষা লাভ করতে পারে, যাদের জীবনকাহিনী প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় এসেছে। নিজের দেশে বিদেশিভাষী এলাকায় সেবা করা, ভাই ও বোনদের উভয় দলকেই সুসমাচার প্রচার কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগগুলোকে বাড়ানোর ব্যবস্থা করে দেয়। খ্রিস্টান বাবামারা, আপনাদের সন্তানদেরকে পূর্ণসময়ের পরিচর্যার জীবনকে বেছে নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে বিশ্বস্ত গিলিয়েড মিশনারি এবং অন্যদের অভিজ্ঞতাগুলো ব্যবহার করুন না কেন?

২০. “জীবন মনোনীত” করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?

২০ তা হলে, কীভাবে আমরা প্রত্যেকে ‘জীবন মনোনীত করিতে’ পারি? আমরা যে যিহোবাকে ভালবাসি, তা দেখানোর জন্য স্বাধীন ইচ্ছার অপূর্ব উপহার ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং ততদিন পর্যন্ত তাঁর সেবায় সবসময় আমাদের যথাসাধ্য করার মাধ্যমে, যতদিন পর্যন্ত তিনি আমাদের তাঁর সেই বিশেষ সুযোগ দেন। “কেননা” মোশি যেমন ঘোষণা করেছিলেন যে, যিহোবাই “তোমার জীবন ও তোমার দীর্ঘ পরমায়ুস্বরূপ।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০.

[পাদটীকা]

^ ২০০১ সালের ১লা জুন প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৩-৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত “হৃদয়বিদারক বিচ্ছেদ সত্ত্বেও আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ” প্রবন্ধটি দেখুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• আমরা যে-বৈসাদৃশ্যমূলক বাছাইগুলো সম্বন্ধে বিভিন্ন উদাহরণ বিবেচনা করেছি, তা থেকে আপনি কী শিখেছেন?

• “জীবন মনোনীত” করার জন্য আমাদের অবশ্যই কোন পদক্ষেপগুলো নিতে হবে?

• কোন দুটো দায়িত্ব পরিপূর্ণ করার জন্য আমাদের জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

“আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু . . . রাখিলাম”

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের রব শোনা নোহ ও তার পরিবারের জন্য পরিত্রাণ নিয়ে এসেছিল

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

মেরি ওলসন

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

ন্যান্সি পোর্টার