সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

 মোশির ব্যবস্থায় কেন নির্দিষ্ট কিছু স্বাভাবিক যৌনক্রিয়া একজন ব্যক্তিকে “অশুচি” করে এমনভাবে দেখা হতো?

ঈশ্বর মানবজাতির বংশবৃদ্ধি ও বিবাহিত দম্পতিদের আনন্দ দান, উভয় কারণের জন্য যৌনাঙ্গ সৃষ্টি করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১:২৮; হিতোপদেশ ৫:১৫-১৮) কিন্তু, লেবীয় পুস্তক ১২ ও ১৫ অধ্যায়ে আমরা রেতঃপাত, রজস্বলা ও গর্ভধারণের কারণে অশুচি হওয়ার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিভিন্ন নিয়ম খুঁজে পাই। (লেবীয় পুস্তক ১২:১-৬; ১৫:১৬-২৪) প্রাচীন ইস্রায়েলকে দেওয়া এই নিয়মগুলো এক সুস্থ জীবনযাত্রা অনুধাবন করতে পরিচালিত করেছিল, উচ্চ নৈতিক মানকে তুলে ধরেছিল এবং রক্তের পবিত্রতা ও পাপের প্রায়শ্চিত্তের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিল।

অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে যৌনক্রিয়া সম্বন্ধে মোশির ব্যবস্থার চাহিদাগুলো ইস্রায়েলীয় সমাজের সার্বিক স্বাস্থ্যকে ভাল রেখেছিল। বাইবেল ও আধুনিক চিকিৎসা (ইংরেজি) বইটি বলে: “ঋতুস্রাব চলাকালীন যৌনমিলন করা থেকে বিরত থাকার নিয়ম, কিছু নির্দিষ্ট যৌনরোগের বিরুদ্ধে এক কার্যকারী প্রতিষেধক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে . . . আর সেইসঙ্গে জরায়ুর বিভিন্ন ক্যান্সার ও তা বৃদ্ধি রোধ করার ক্ষেত্রে এক নির্দিষ্ট প্রতিরোধক হিসেবে কাজে এসেছে।” এই নিয়মগুলো ঈশ্বরের লোকেদের সেই সমস্ত রোগ থেকে রক্ষা করেছিল, যেগুলো হয়তো তাদের কাছে অজানা ছিল অথবা তারা এমনকি তখনও পর্যন্ত সেগুলো আবিষ্কারও করেনি। যৌনতা সংক্রান্ত উপকারজনক স্বাস্থ্যবিধি সেই জাতির জন্মদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল, যে-জাতিকে ঈশ্বর বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে আশীর্বাদ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৫:৫; ২২:১৭) এ ছাড়া, ঈশ্বরের লোকেদের মানসিক স্বাস্থ্যও জড়িত ছিল। এই নিয়মগুলোর বাধ্য হয়ে স্বামী ও স্ত্রীরা যৌন কামনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছিল।

তবে, যৌনতা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ফলে ঘটিত বিভিন্ন ধরনের অশুচিতার সঙ্গে যে-প্রধান বিষয়টা জড়িত ছিল সেটা হল রক্ত প্রবাহ বা রক্তক্ষরণ। রক্ত সম্বন্ধীয় যিহোবার নিয়মগুলো ইস্রায়েলীয়দের মনে, শুধুমাত্র রক্তের পবিত্রতার বিষয়ই নয় কিন্তু একই সময়ে যিহোবার উপাসনায়, মূলত বলি উৎসর্গ বা পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার সময়, রক্তের যে-বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, সেই বিষয়ের ওপরও ছাপ ফেলেছিল।—লেবীয় পুস্তক ১৭:১১; দ্বিতীয় বিবরণ ১২:২৩, ২৪, ২৭.

তাই, এই ব্যাপারে ব্যবস্থার চাহিদাগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ মানব অসিদ্ধতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। ইস্রায়েলীয়রা জানত যে, আদম ও হবা—তাদের পাপ করার পর—সিদ্ধ সন্তান জন্ম দিতে পারত না। তাদের সমস্ত বংশধর উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের প্রভাবগুলো—অসিদ্ধতা ও মৃত্যু—ভোগ করবে। (রোমীয় ৫:১২) এই কারণে বাবামারা কেবল অসিদ্ধ ও পাপী জীবনই দান করতে পারত, যদিও বাস্তবে মানুষের প্রজনন অঙ্গগুলোকে বিবাহ ব্যবস্থার দ্বারা সিদ্ধ জীবন দান করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল।

এভাবে ব্যবস্থায় শুচিকরণ সম্বন্ধীয় চাহিদাগুলো ইস্রায়েলীয়দের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের বিষয়ই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে পাপকে ঢাকার জন্য মুক্তির মূল্যরূপ এক বলিদানের ও মানব সিদ্ধতা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধেও মনে করিয়ে দিয়েছিল। অবশ্য, তারা যে-পশুবলি উৎসর্গ করত, সেটা তা সম্পাদন করেনি। (ইব্রীয় ১০:৩, ৪) মোশির ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে খ্রিস্টের দিকে পরিচালিত করা এবং তাদেরকে এটা উপলব্ধি করতে সাহায্য করা যে, একমাত্র যিশুর সিদ্ধ জীবন বলি দেওয়ার মাধ্যমেই প্রকৃত ক্ষমা পাওয়া সম্ভবপর ছিল আর তা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জন্য অনন্তজীবনের পথ খুলে দিয়েছে।—গালাতীয় ৩:২৪; ইব্রীয় ৯:১৩, ১৪.