সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করে পরিতৃপ্তি লাভ করুন

বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করে পরিতৃপ্তি লাভ করুন

বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করে পরিতৃপ্তি লাভ করুন

 কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি একটা বিড়ালকে কুঁকড়ে শুয়ে ঘড় ঘড় শব্দ করতে দেখেছেন—স্পষ্টতই এক পরিতৃপ্তিজনক দৃশ্য। বিড়ালটার মতো কুঁকড়ে শুয়ে থাকা ও একইরকম পরিতৃপ্তি লাভ করা কতই না উত্তম হবে! কিন্তু অনেকের জন্যই, পরিতৃপ্তি লাভ করা কঠিন আর তা ক্ষণস্থায়ী। কেন?

কারণ অসিদ্ধ বলে আমরা প্রায়ই ভুল করে থাকি আর অন্যদের ভুলত্রুটিকেও আমাদের সহ্য করতে হবে। অধিকন্তু, আমরা এমন সময়ে বাস করছি, যে-সময়কে বাইবেল ‘শেষ কাল’ বলে আর এটা ‘বিষম সময়ের [“যেটার সঙ্গে মোকাবিলা করা কঠিন,” NW]’ দ্বারা চিহ্নিত হবে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) এমনকি যদিও আমরা ছোটোবেলার পরিতৃপ্তিজনক কিছু আনন্দের স্মৃতিকে মূল্যবান বলে মনে করি কিন্তু আমাদের মধ্যে অধিকাংশই এখন এই ‘বিষম সময়ের’ দরুন প্রচণ্ড চাপ বোধ করি। আমাদের দিনে কি পরিতৃপ্তি লাভ করা সম্ভব?

লক্ষ করুন শাস্ত্র বলে যে, এই বিষম সময়ের সঙ্গে মোকাবিলা করা কঠিন হবে কিন্তু অসম্ভব নয়। বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করে আমরা এর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। আমরা হয়তো সবসময় আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারব না কিন্তু আমরা কিছুটা পরিতৃপ্তি লাভ করব। আসুন আমরা এই ধরনের তিনটে নীতি পরীক্ষা করে দেখি।

এক বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন

পরিতৃপ্তি লাভ করার জন্য, আমাদের অবশ্যই নিজেদের ও অন্যদের সীমাবদ্ধতাগুলো সম্বন্ধে এক বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে হবে। রোমীয়দের উদ্দেশে তার চিঠিতে, প্রেরিত পৌল বলেন: “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌবর-বিহীন হইয়াছে।” (রোমীয় ৩:২৩, ২৪) যিহোবার গৌরবের বহু দিক আমাদের বোধগম্যতার বাইরে। একটা উদাহরণ হচ্ছে, সেই সহজ বিষয়টি যেটি আদিপুস্তক ১:৩১ পদে বর্ণনা করা হয়েছে: “ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।” যিহোবা যা কিছু করেছেন সেই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি যখনই চিন্তা করেন, তিনি সবসময়ই বলতে পারেন যে, “সকলই অতি উত্তম।” কিন্তু, কোনো মানুষ সবসময় তা দাবি করতে পারে না। আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো স্বীকার করা হচ্ছে পরিতৃপ্তি লাভ করার প্রথম ধাপ। কিন্তু, আরও কিছু দরকার। কোনো বিষয় সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বুঝতে ও মেনে নিতে হবে।

‘পাপ’ হিসেবে অনুবাদিত গ্রিক শব্দটি, যে-মূল শব্দ থেকে এসেছে সেটার অর্থ লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া। (রোমীয় ৩:৯) উদাহরণস্বরূপ: এমন কারো কথা কল্পনা করুন, যিনি একটা তির দিয়ে লক্ষ্যভেদ করে পুরস্কার জেতার আশা করছেন। তার কাছে তিনটে তিব রয়েছে। তিনি প্রথম তিরটা ছোঁড়েন কিন্তু এক মিটারের জন্য সেটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিনি দ্বিতীয় তিরটা দিয়ে আরও ভাল করে লক্ষ্য স্থির করেন কিন্তু তবুও ৩০ সেন্টিমিটারের জন্য তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তিনি শেষ তিরটা ছোঁড়েন কিন্তু মাত্র ২ সেন্টিমিটারের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এটা প্রায় লক্ষ্যেই পৌঁছাচ্ছিল, তবুও এটাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

আমরা সকলে সেই হতাশ তিরন্দাজের মতো। কখনো কখনো আমরা অনেকখানির জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছি বলে মনে হতে পারে। অন্য সময়ে, আমরা লক্ষ্যের একেবারে কাছাকাছি এসে পড়ি কিন্তু তবুও লক্ষ্যভ্রষ্ট হই। আমরা হতাশ হয়ে পড়ি কারণ আমরা অনেক কঠোর প্রচেষ্টা করেছি কিন্তু তবুও তা যথেষ্ট ছিল না। আসুন এখন আমরা আবার সেই তিরন্দাজের দৃষ্টান্তে ফিরে যাই।

তিনি ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছেন, আনন্দ হারিয়ে ফেলছেন, কারণ সত্যি সত্যিই তিনি সেই পুরস্কারটা পেতে চেয়েছিলেন। হঠাৎ-ই, সেই প্রতিযোগিতার তত্ত্বাবধায়ক তাকে ডাকেন এবং তার হাতে একটা পুরস্কার দিয়ে বলেন: “আমি আপনাকে এটা দিতে চাই কারণ আমি আপনাকে পছন্দ করি এবং আমি দেখেছি যে, আপনি কতখানি প্রচেষ্টা করেছেন।” তিরন্দাজ খুবই আনন্দিত হন!

তিরন্দাজ সত্যিই আনন্দিত হন! যারা ঈশ্বরের কাছ থেকে সিদ্ধ অবস্থায় অনন্তজীবনের “অনুগ্রহ-দান” লাভ করে, তারা সকলেই একইরকম অনুভব করবে। (রোমীয় ৬:২৩) এরপর, তারা যা কিছুই করবে সমস্তই উত্তম হবে—তারা আর কখনো লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে না। তারা পুরোপুরিভাবে পরিতৃপ্ত হবে। এই সময়ের মধ্যে, আমরা যদি এই দৃষ্টিভঙ্গিটা মাথায় রাখি, তা হলে আমরা নিজেদের ও আমাদের চারপাশে যারা রয়েছে তাদের সম্বন্ধে আরও ভাল বোধ করব।

উপলব্ধি করুন যে, সমস্তকিছুর জন্য সময়ের দরকার

এটা সত্য যে, প্রত্যেকটা বিষয়ের জন্য সময়ের দরকার। কিন্তু আপনি কি লক্ষ করেছেন যে, আপনি যখন এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন, যেটা প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে আরও বেশি সময় নেবে বলে মনে হয় অথবা যখন অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি আপনি যেমনটা আশা করেছিলেন তার চেয়ে আরও বেশি দিন ধরে রয়েছে বলে মনে হয়, তখন পরিতৃপ্ত থাকা কতখানি কঠিন হয়ে পড়ে? তবুও, এই ধরনের পরিস্থিতিতে কেউ কেউ পরিতৃপ্তি বজায় রাখতে পেরেছে। যিশুর উদাহরণ বিবেচনা করুন।

পৃথিবীতে আসার পূর্বে, যিশু স্বর্গে আজ্ঞাবহতার এক আদর্শ ছিলেন। কিন্তু, তিনি পৃথিবীতে “আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করিলেন।” কীভাবে? “যে সকল দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, তদ্দ্বারা।” পূর্বে, তিনি অন্যদের দুঃখকষ্ট ভোগ করতে দেখেছিলেন কিন্তু তিনি নিজে কখনো তা ভোগ করেননি। পৃথিবীতে থাকাকালীন, বিশেষ করে যর্দন নদীতে তাঁর বাপ্তিস্মের সময় থেকে গল্‌গথায় তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত, তিনি অনেক কষ্টকর পরিস্থিতি সহ্য করেছিলেন। যিশু কীভাবে এই ক্ষেত্রে ‘সিদ্ধ হইয়াছিলেন’ সেই সম্বন্ধে আমরা সমস্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জানি না কিন্তু আমরা এটা জানি যে, তা শেখার জন্য সময় লেগেছিল।—ইব্রীয় ৫:৮, ৯.

যিশু সফল হয়েছিলেন কারণ তিনি “আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের,” তাঁর বিশ্বস্ততার পুরস্কার নিয়ে ধ্যান করেছিলেন। (ইব্রীয় ১২:২) তা সত্ত্বেও, কখনো কখনো তিনি “প্রবল আর্ত্তনাদ ও অশ্রুপাত সহকারে . . . প্রার্থনা ও বিনতি উৎসর্গ করিয়াছিলেন।” (ইব্রীয় ৫:৭) আমরাও কখনো কখনো একইভাবে প্রার্থনা করে থাকি। যিহোবা এটাকে কীভাবে দেখেন? সেই একই পদ দেখায় যে, যিহোবা যিশুর প্রার্থনার “উত্তর” দিয়েছিলেন। ঈশ্বর আমাদের জন্যও একই বিষয় করবেন। কেন?

কারণ যিহোবা আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো জানেন আর তাই তিনি আমাদের সাহায্য করেন। প্রত্যেকেরই সহ্য করার সীমা রয়েছে। আফ্রিকার বেনিনের লোকেরা বলে থাকে: “জল অতিরিক্ত পরিমাণে হলে এমনকি ব্যাঙরাও ডুবে মরবে।” আমরা কখন প্রায় আমাদের সীমায় পৌঁছাব, তা আমাদের চেয়ে যিহোবা আরও ভাল জানেন। তিনি প্রেমের সঙ্গে “দয়া . . . এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ” প্রদান করেন। (ইব্রীয় ৪:১৬) তিনি যিশুর জন্য তা করেছিলেন এবং আরও অগণিত ব্যক্তির জন্য তা করেছেন। এই ক্ষেত্রে মনিকার যে-অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা বিবেচনা করুন।

মনিকা হাসিখুশি স্বভাবের দুর্ভাবনাহীন, প্রাণবন্ত একজন ব্যক্তি হিসেবে বড় হয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে, যখন তার বয়স ২০-র কোঠার প্রথম দিকে, তখন তার মালটিপাল স্ক্লেরোসিস রোগ হয়েছে জেনে তিনি খুবই মর্মাহত হয়েছিলেন, যে-রোগের ফলে সাধারণত শরীর কিছুটা প্যারালাইসিস হয়ে যায়। এটা তার জীবনকে পুরোপুরি পালটে দিয়েছিল আর এর জন্য তার পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় বড় বড় রদবদল করার দরকার হয়েছিল। মনিকা উপলদ্ধি করেছিলেন যে, এটা দীর্ঘস্থায়ী এক রোগ। ষোলো বছর পরে তিনি বলেছিলেন: “আমার রোগটা এখনও সারেনি আর ঈশ্বরের নতুন বিধিব্যবস্থা সমস্তকিছুকে নতুন না করা পর্যন্ত হয়তো এটা দুরারোগ্যই থেকে যাবে।” তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, এটা সহজ ছিল না: “যদিও আমার বন্ধুবান্ধবরা বলে যে, আমি আমার হাসিখুশি স্বভাব বজায় রেখেছি আর আমি সবসময়ই হাসিখুশি থাকি, . . . কিন্তু আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবরা জানে যে, কখনো কখনো অঝোরে আমার চোখের জল পড়তে থাকে।”

কিন্তু তিনি বলেছিলেন: “আমি ধৈর্য ধরতে এবং আমার স্বাস্থ্যের সামান্য উন্নতিতে আনন্দ করতে শিখেছি। রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে মানুষ যে কতটা অসহায় তা নিজে দেখার ফলে যিহোবার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। একমাত্র যিহোবাই সম্পূর্ণ আরোগ্য করতে পারেন।” যিহোবার সাহায্যে, মনিকা পরিতৃপ্তি বজায় রেখেছেন এবং এখন তিনি ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পূর্ণসময়ের পরিচর্যার কথা গভীরভাবে চিন্তা করতে পারেন।

এটা স্বীকার করতেই হবে যে, মনিকার মতো পরিস্থিতিগুলো সহজ নয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, আপনি যদি উপলব্ধি করেন যে, কিছু কিছু বিষয় হয়তো আপনি যতটা আশা করেন তার চেয়ে বেশি সময় নিতে পারে, তা হলে আপনি আরও বেশি পরিতৃপ্ত হতে পারবেন। মনিকার মতো, আপনিও ‘উপযোগী সময়ে’ যিহোবার ‘উপকার’ সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে পারেন।”

তুলনা করবেন না —বাস্তবসম্মত লক্ষ্যগুলো স্থাপন করুন

আপনি একজন অদ্বিতীয় ব্যক্তি। একেবারে আপনার মতো কেউ নেই। একটা প্রবাদ এই বিষয়টা সহজভাবে প্রকাশ করে: “হাতের পাঁচটা আঙুল সমান নয়।” তাই একটা আঙুলকে অন্যটার সঙ্গে তুলনা করা বোকামি হবে। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে, যিহোবা আপনাকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করুন আর তিনি কখনোই তা করবেন না। কিন্তু, অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার প্রবণতা মানুষের মধ্যে সাধারণ বিষয় এবং তা লোকেদের পরিতৃপ্তিকে হরণ করতে পারে। লক্ষ করুন যিশু কত জোরালোভাবে এটা উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন, যেমন আমরা মথি ২০:১-১৬ পদে পড়ি।

যিশু একজন ‘কর্ত্তার’ সম্বন্ধে বলেছিলেন, যার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের জন্য অনেক মজুর দরকার ছিল। তিনি কয়েক জন নিষ্কর্মা লোককে খুঁজে পেয়েছিলেন এবং “প্রভাত কালে,” সম্ভবত সকাল ৬টায় তাদেরকে কাজে লাগিয়েছিলেন। তারা স্বাভাবিক দৈনিক মজুরিতে রাজি হয়েছিল, দিনে ১২ ঘন্টা কাজের জন্য এক সিকি। কোনো সন্দেহ নেই যে, এই লোকেরা কাজ পেয়ে আর তা স্বাভাবিক মজুরিতে পেয়ে আনন্দিত হয়েছিল। পরে, কর্তা অন্যান্য নিষ্কর্মা ব্যক্তির দলকে খুঁজে পেয়েছিলেন এবং তাদেরকে সকাল ৯:০০টায়, দুপুর ১২:০০টায়, বিকেল ৩:০০টেয় এবং এমনকি সবচেয়ে দেরিতে বিকেল ৫:০০টায়ও কাজে লাগিয়েছিলেন। এই দলগুলোর কেউ-ই পুরো একটা দিনের জন্য কাজ করবে না। মজুরি দেওয়ার ব্যাপারে, কর্তা তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন “যাহা ন্যায্য,” তা-ই দেবেন আর মজুররা রাজি হয়েছিল।

দিনের শেষে, কর্তা তার দেওয়ানকে মজুরি দেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি মজুরদের ডাকতে বলেছিলেন এবং যাদেরকে শেষে কাজে লাগানো হয়েছিল, তাদেরকে প্রথমে মজুরি দিতে বলেছিলেন। এই লোকেরা মাত্র এক ঘন্টা কাজ করেছিল কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে, তারা পুরো দিনের মজুরি পেয়েছিল। এর ফলে যে-উত্তেজনাকর আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল, আমরা তা কল্পনা করতে পারি। যারা পুরো ১২ ঘন্টা কাজ করেছিল, তারা এই উপসংহারে পৌঁছেছিল যে, তারা তদনুসারে বেশি মজুরি পাবে। কিন্তু, তারাও একই পরিমাণ অর্থ পেয়েছিল।

তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? মজুরি “পাইয়া তাহারা সেই গৃহকর্ত্তার বিরুদ্ধে বচসা করিয়া কহিতে লাগিল, শেষের ইহারা ত এক ঘন্টামাত্র খাটিয়াছে আমরা সমস্ত দিন খাটিয়াছি ও রৌদ্রে পুড়িয়াছি, আপনি ইহাদিগকে আমাদের সমান করিলেন।”

কিন্তু, কর্তা বিষয়গুলোকে ভিন্নভাবে দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তারা যে-মজুরিতে রাজি হয়েছিল সেটাই তারা পেয়েছে, এর চেয়ে কম পায়নি। অন্যদের কথা বললে, তিনি তাদেরকে পুরো একদিনের মজুরি দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন, নিঃসন্দেহে তারা যতটুকু আশা করেছিল, তার চেয়ে বেশি। বস্তুতপক্ষে, তারা যে-মজুরিতে রাজি হয়েছিল কেউ-ই তার চেয়ে কম পায়নি; প্রকৃতপক্ষে, অনেকেই তারা যা আশা করেছিল তার চেয়ে বরং বেশি পেয়েছিল। তাই, উপসংহারে কর্তা জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমার নিজের যাহা, তাহা আপনার ইচ্ছামতে ব্যবহার করিবার অধিকার কি আমার নাই?”

এখন কল্পনা করুন যে, সেই দেওয়ান যদি প্রথম দলটাকে প্রথমেই মজুরি দিতেন, তা হলে তারা সঙ্গে সঙ্গে চলে যেত। তারা নিশ্চয় সন্তুষ্ট বা পরিতৃপ্ত থাকত। অসন্তোষ একমাত্র তখনই দেখা দিয়েছিল, যখন তারা দেখেছিল যে, অন্যেরা কম কাজ করে একই মজুরি পেয়েছে। এটা তাদেরকে ক্রুদ্ধ করেছিল, এমনকি এতদূর পর্যন্ত যে, তারা কর্তার বিরুদ্ধে বচসা করেছিল, যার প্রতি মূলত তাদের খুবই কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিল কারণ তিনিই তাদেরকে কাজে লাগিয়েছিলেন।

এটা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, আমরা যখন নিজেদেরকে অন্যদের সঙ্গে তুলনা করি, তখন কী হয়। আপনি যদি যিহোবার সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং তিনি যেভাবে আপনাকে আশীর্বাদ করেন সেই বিষয় নিয়ে ধ্যান করেন, তা হলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন। অন্যদের পরিস্থিতির সঙ্গে আপনার পরিস্থিতি তুলনা করবেন না। যদি মনে হয় যে, যিহোবা অন্যদের জন্য বেশি কিছু করার বিষয় স্থির করেছেন, তা হলে সেইজন্য খুশি হোন এবং তাদের সঙ্গে আনন্দ করুন।

কিন্তু, যিহোবা আপনার কাছ থেকে কিছু আশা করেন। কী আশা করেন? গালাতীয় ৬:৪ পদ বলে: “প্রত্যেক জন নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে।” অন্য কথায়, নিজে যুক্তিযুক্ত লক্ষ্যগুলো স্থাপন করুন। বাস্তবসম্মতভাবে আপনি যতটুকু করতে পারেন ততটুকুই করার পরিকল্পনা করুন এবং তারপর তা করুন। লক্ষ্য যদি যুক্তিযুক্ত হয় এবং আপনি সেই লক্ষ্যে পৌঁছান, তা হলে আপনি ‘শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবেন।’ আপনি পরিতৃপ্তি লাভ করবেন।

অনেক আশীর্বাদ পাওয়া যাবে

যে-তিনটে নীতি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি সেগুলো দেখায় যে, এমনকি এই শেষকালে এবং অসিদ্ধতা সত্ত্বেও, বাইবেলের নীতিগুলো প্রয়োগ করে সত্যিই পরিতৃপ্তি লাভ করা যেতে পারে। আপনার দৈনিক বাইবেল পাঠের সময়, সেই ধরনের নীতিগুলোকে খুঁজে নিন না কেন, যেগুলো হয় সরাসরি বলা হয়েছে অথবা গল্প ও দৃষ্টান্তগুলোতে পরোক্ষভাবে প্রকাশ করা হয়েছে?

আপনার যদি মনে হয় যে, আপনার পরিতৃপ্তির অনুভূতি কমে যাচ্ছে, তা হলে এর প্রকৃত কারণ খোঁজার জন্য প্রচেষ্টা করুন। এরপর সেই নীতিগুলোকে খুঁজে নিন, যেগুলো আপনি পরিস্থিতিকে শুধরানোর জন্য প্রয়োগ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো ‘ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি উপকারী’ * (ইংরেজি) বইটির ১১০-১১ পৃষ্ঠা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। সেখানে, হিতোপদেশ বইটি আলোচনা করা হয়েছে আর আপনি ১২টা উপশিরোনামের অধীনে নীতি ও উপদেশের এক বড় বিভাগের তালিকা খুঁজে পাবেন। দ্যা ওয়াচটাওয়ার পাবলিকেশনস্‌ ইনডেক্স* এবং সিডি-রমে ওয়াচটাওয়ার লাইব্রেরি* হচ্ছে তথ্যের চমৎকার উৎস। এগুলোকে নিয়মিতভাবে ব্যবহার করে, আপনি প্রয়োগযোগ্য নীতিগুলোকে খুঁজে বের করার ব্যাপারে দক্ষ হয়ে উঠবেন।

সেই সময় আসতে চলেছে, যখন যিহোবা এক পরমদেশ পৃথিবীতে সিদ্ধ অবস্থায় যোগ্য ব্যক্তিদের অনন্তজীবন দেবেন। তাদের জীবন তখন পুরোপুরিভাবে পরিতৃপ্ত হবে।

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

[১২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।”—রোমীয় ৩:২৩, ২৪

[১৩ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

যিশু “যে সকল দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, তদ্দ্বারা আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করিলেন।”—ইব্রীয় ৫:৮, ৯

[১৫ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়।”—গালাতীয় ৬:৪