সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা “শেষের বিষয় আদি অবধি” জানান

যিহোবা “শেষের বিষয় আদি অবধি” জানান

যিহোবা “শেষের বিষয় আদি অবধি” জানান

“আমি শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করি, যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে জানাই।”—যিশাইয় ৪৬:১০.

১, ২. বাবিলের পতনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঘটনাগুলো সম্বন্ধে লক্ষণীয় বিষয়টা কী আর এই বিষয়টা যিহোবা সম্বন্ধে কী ইঙ্গিত দেয়?

 মধ্যরাতে, শত্রুপক্ষীয় সেনাবাহিনী ইউফ্রেটিস নদীগর্ভের মধ্যে দিয়ে গোপনে তাদের লক্ষ্যবস্তু, পরাক্রমী বাবিল নগরের দিকে এগিয়ে যায়। তারা যখন নগরের প্রবেশপথে উপস্থিত হয়, তখন এক আশ্চর্যজনক দৃশ্য তাদের চোখে পড়ে। বাবিলের প্রাচীরের মধ্যেকার দুই কবাটবিশিষ্ট বিশাল দরজা খোলা রয়েছে! তারা নদীগর্ভের মধ্যে থেকে উঠে আসে; এরপর নগরের মধ্যে প্রবেশ করে। রাতারাতি সেই নগরের পতন ঘটে। তাদের নেতা কোরস অবিলম্বে সেই পরাজিত দেশ অধিকার করেন এবং পরবর্তী সময়ে বন্দি ইস্রায়েলীয়দের মুক্ত করার আদেশ জারি করেন। যিরূশালেমে যিহোবার উপাসনা পুনর্স্থাপন করার জন্য হাজার হাজার বন্দি নিজ দেশে ফিরে আসে।—২ বংশাবলি ৩৬:২২, ২৩; ইষ্রা ১:১-৪.

সাধারণ কাল পূর্ব ৫৩৯-৫৩৭ সালের সেই ঘটনাগুলো এখন ইতিহাসবেত্তাদের দ্বারা প্রকৃত সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় বিষয়টা হল, প্রায় ২০০ বছর আগেই এই ঘটনাগুলো জানা ছিল। যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিশাইয়কে এতটা আগে থেকেই বাবিলের পতন সম্বন্ধে বর্ণনা করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। (যিশাইয় ৪৪:২৪–৪৫:৭) ঈশ্বর কেবল বাবিলের পতনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিস্থিতিগুলোই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে বিজয়ী নেতার নামও প্রকাশ করেছিলেন। * সেই সময়ে যারা তাঁর সাক্ষি ছিল, সেই ইস্রায়েলীয়দের উদ্দেশে যিহোবা বলেছিলেন: “সেকালের পুরাতন কার্য্য সকল স্মরণ কর; কারণ আমিই ঈশ্বর, আর কেহ নয়; আমি ঈশ্বর, আমার তুল্য কেহ নাই। আমি শেষের বিষয় আদি অবধি জ্ঞাত করি, যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে জানাই।” (যিশাইয় ৪৬:৯, ১০ক) সত্যিই, যিহোবা হলেন এমন একজন ঈশ্বর, যিনি ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা আগে থেকেই জানতে পারেন।

৩. এখন কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর বিবেচনা করা হবে?

ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ঈশ্বর কতটা জানেন? আমরা প্রত্যেকে কী করব, তা কি যিহোবা আগে থেকেই জানেন? বস্তুতপক্ষে, আমাদের ভবিষ্যৎ কি পূর্বনির্ধারিত? আমরা এই প্রবন্ধে এবং পরের প্রবন্ধে বাইবেল থেকে এই প্রশ্নগুলোর ও সেইসঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর বিবেচনা করব।

যিহোবা—ভবিষ্যদ্বাণীর এক ঈশ্বর

৪. বাইবেলে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর উৎস কে?

ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আগে থেকে জানতে সমর্থ হওয়ায়, যিহোবা বাইবেলের সময় তাঁর ভাববাদীদের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী লিপিবদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যে-বিষয়টা আমাদেরকে যিহোবা যা করবেন বলে ঠিক করেছেন, তা জানার সুযোগ করে দেয়। “দেখ, পূর্ব্বকার বিষয় সকল সিদ্ধ হইল; আর আমি নূতন নূতন ঘটনা জ্ঞাত করি,” যিহোবা ঘোষণা করেন। “অঙ্কুরিত হইবার পূর্ব্বে তোমাদিগকে তাহা জানাই।” (যিশাইয় ৪২:৯) ঈশ্বরের লোকেরা কী এক বিশেষ সুযোগই না পেয়েছে!

৫. যিহোবা কী করবেন, তা আগে থেকে জানা কোন দায়িত্ব নিয়ে আসে?

ভাববাদী আমোষ আমাদেরকে আশ্বাস দেন: “প্রভু সদাপ্রভু আপনার দাস ভাববাদিগণের নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না।” আগে থেকে জানার এই বিষয়টা একটা দায়িত্ব নিয়ে এসেছিল। আমোষ এরপর যে-জোরালো দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেন, তা লক্ষ করুন: “সিংহ গর্জ্জন করিল, কে না ভয় করিবে?” একটা সিংহের গর্জন এর আশেপাশে থাকা কোনো ব্যক্তি ও পশু উভয়ের মধ্যে যেমন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে, তেমনই আমোষের মতো ভাববাদীরাও অবিলম্বে যিহোবার ঘোষণাগুলো প্রচার করেছিলেন। “প্রভু সদাপ্রভু কথা কহিলেন, কে না ভাববাণী বলিবে?”—আমোষ ৩:৭, ৮.

যিহোবার ‘বাক্য সিদ্ধার্থ’ হয়েছে

৬. বাবিলের পতনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যিহোবার “মন্ত্রণা” কীভাবে সফল হয়েছিল?

যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে বলেছিলেন: “আমার মন্ত্রণা স্থির থাকিবে, আমি আপনার সমস্ত মনোরথ সিদ্ধ করিব।” (যিশাইয় ৪৬:১০খ) বাবিলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঈশ্বরের “মন্ত্রণা” অর্থাৎ তাঁর ইচ্ছা অথবা উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল, বাবিলকে জয় করার এবং এর পতন ঘটানোর জন্য কোরসকে পারস্য থেকে ডেকে আনা। যিহোবা তাঁর এই উদ্দেশ্য অনেক আগে থেকেই ঘোষণা করেছিলেন। ইতিমধ্যেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, সা.কা.পূ. ৫৩৯ সালে এটা অব্যর্থভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল।

৭. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবার “বাক্য” সবসময় সফল হয়?

কোরস বাবিলকে জয় করার প্রায় চারশো বছর আগে যিহূদার রাজা যিহোশাফট, অম্মোন ও মোয়াবের যৌথ সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি আস্থা সহকারে প্রার্থনা করেছিলেন: “হে আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, তুমি কি স্বর্গস্থ ঈশ্বর নহ? তুমি কি জাতিগণের সমস্ত রাজ্যের কর্ত্তা নহ? আর শক্তি ও পরাক্রম তোমারই হস্তে, তোমার বিপক্ষে দাঁড়াইতে কাহারও সাধ্য নাই।” (২ বংশাবলি ২০:৬) যিশাইয়ও একইরকম আস্থা দেখিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “বাহিনীগণের সদাপ্রভুই মন্ত্রণা করিয়াছেন, কে তাহা ব্যর্থ করিবে? তাঁহারই হস্ত বিস্তারিত হইয়াছে, কে তাহা ফিরাইবে?” (যিশাইয় ১৪:২৭) পরবর্তী সময়ে, একটা নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত মস্তিষ্কবিকৃতির পরে বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসরকে যখন বোধশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি নম্রভাবে স্বীকার করেছিলেন: “এমন কেহ নাই যে, [ঈশ্বরের] হস্ত থামাইয়া দিবে, কিম্বা তাঁহাকে বলিবে, তুমি কি করিতেছ?” (দানিয়েল ৪:৩৫) হ্যাঁ, যিহোবা তাঁর লোকেদের আশ্বাস দেন: “আমার . . . বাক্য . . . তাহা নিষ্ফল হইয়া আমার কাছে ফিরিয়া আসিবে না, কিন্তু আমি যাহা ইচ্ছা করি, তাহা সম্পন্ন করিবে, এবং যে জন্য তাহা প্রেরণ করি, সে বিষয়ে সিদ্ধার্থ হইবে।” (যিশাইয় ৫৫:১০, ১১) আমরা পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবার “বাক্য” সবসময় সত্য হবে। ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবেই হবে।

ঈশ্বরের ‘যুগপর্য্যায়ের সঙ্কল্প’

৮. ঈশ্বরের ‘যুগপর্য্যায়ের সঙ্কল্প’ কী?

ইফিষীয় খ্রিস্টানদের প্রতি লেখা চিঠিতে প্রেরিত পৌল ঈশ্বর সম্বন্ধে উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, তাঁর ‘যুগপর্য্যায়ের সঙ্কল্প’ বা উদ্দেশ্য রয়েছে। (ইফিষীয় ৩:১১) মানবজাতি ও পৃথিবীর জন্য যিহোবার যে-আদি উদ্দেশ্য ছিল, সেটা সম্পাদন করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। (আদিপুস্তক ১:২৮) তাঁর উদ্দেশ্য যে পরিপূর্ণ হবেই, তা বোঝার জন্য বাইবেলে লিপিবদ্ধ প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীটি বিবেচনা করুন।

৯. কীভাবে আদিপুস্তক ৩:১৫ পদ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

আদিপুস্তক ৩:১৫ পদের প্রতিজ্ঞাটি ইঙ্গিত করে যে, আদম ও হবা পাপ করার সঙ্গে সঙ্গে যিহোবা স্থির করেছিলেন যে তাঁর প্রতীক নারী এক বংশের অথবা পুত্রের জন্ম দেবে। এ ছাড়া, যিহোবা তাঁর নারীর সঙ্গে শয়তানের ও সেইসঙ্গে তাদের পরস্পর বিরোধী বংশের মধ্যে যে-শত্রুতা থাকবে, তার পরিণতি সম্বন্ধে আগেই জানতে পেরেছিলেন। যিহোবা যদিও ঈশ্বরের নারীর বংশের পাদমূল চূর্ণ হতে দেবেন কিন্তু সেই বংশ ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে সর্প বা শয়তান দিয়াবলের মস্তক চূর্ণ করবে। এরই মধ্যে, প্রতিজ্ঞাত মশীহ হিসেবে যিশুর আবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত মনোনীত বংশধারার মাধ্যমে যিহোবার উদ্দেশ্য অব্যর্থভাবে এগিয়ে গিয়েছিল।—লূক ৩:১৫, ২৩-৩৮; গালাতীয় ৪:৪.

যিহোবা যা পূর্বে নিরূপিত করেন

১০. যিহোবা কি প্রথম থেকেই পূর্বনির্ধারণ করে রেখেছিলেন যে, আদম ও হবা পাপ করবে? ব্যাখ্যা করুন।

১০ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে যিশু যে-ভূমিকা পালন করেছেন, সেই সম্বন্ধে বলতে গিয়ে প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তিনি [যিশু] জগৎপত্তনের অগ্রে পূর্ব্বলক্ষিত ছিলেন, কিন্তু কালের পরিণামে তোমাদের নিমিত্ত প্রকাশিত হইলেন।” (১ পিতর ১:২০) যিহোবা কি প্রথম থেকেই পূর্বনির্ধারণ করে রেখেছিলেন যে, আদম ও হবা পাপ করবে এবং যিশু খ্রিস্টের দ্বারা জোগানো মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন হবে? না। ‘পত্তন’ শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে, যেটির আক্ষরিক অর্থ হল “বংশ নিক্ষেপ করা।” আদম ও হবা পাপ করার আগে কী “বংশ নিক্ষেপ করা” হয়েছিল অথবা মানব সন্তানকে গর্ভে ধারণ করা হয়েছিল? না। তাদের অবাধ্যতাপূর্ণ কাজের পর আদম ও হবার দ্বারা সন্তান গর্ভে ধারণ করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৪:১) তাই, বিদ্রোহ করার পর কিন্তু আদম ও হবার দ্বারা গর্ভসঞ্চার হওয়ার আগে, যিহোবা ‘বংশের’ আবির্ভাবের বিষয়টা পূর্বে নিরূপিত করে রেখেছিলেন। যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান সেই মুক্তির মূল্যের প্রেমময় ব্যবস্থা জুগিয়েছিল, যার মাধ্যমে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ এবং শয়তানের সমস্ত প্রচেষ্টা বিলুপ্ত করা হবে।—মথি ২০:২৮; ইব্রীয় ২:১৪; ১ যোহন ৩:৮.

১১. যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা ঘটবে বলে পূর্বে নিরূপিত করে রেখেছিলেন?

১১ ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় ঘটবে বলে পূর্বে নিরূপিত করে রেখেছিলেন। ইফিষীয়দের প্রতি পৌলের লেখা কথাগুলোর মধ্যে সেটার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে আর তা হল ঈশ্বর “স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্তই খ্রীষ্টেই সংগ্রহ” করবেন। এরপর, ‘স্বর্গস্থ সমস্তই’ অর্থাৎ খ্রিস্টের সঙ্গে অধিকার লাভ করবে এমন মনোনীত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যিনি সকলই আপন ইচ্ছার মন্ত্রণানুসারে সাধন করেন, তাঁহার সঙ্কল্প অনুসারে আমরা পূর্ব্বে নিরূপিত হইয়াছিলাম।” (ইফিষীয় ১:১০, ১১) হ্যাঁ, যিহোবা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছিলেন যে, এক সীমিত সংখ্যক মানুষ ঈশ্বরের নারীর বংশের গৌণ অংশ গঠন করবে এবং খ্রিস্টের সঙ্গে মুক্তির মূল্যের উপকারগুলো প্রয়োগ করবে। (রোমীয় ৮:২৮-৩০) প্রেরিত পিতর তাদেরকে “পবিত্র জাতি” বলে উল্লেখ করেন। (১ পিতর ২:৯) প্রেরিত যোহন একটা দর্শনে তাদের সংখ্যা জানার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন, যারা খ্রিস্টের সহদায়াদ হবে—১,৪৪,০০০. (প্রকাশিত বাক্য ৭:৪-৮; ১৪:১, ৩) রাজা হিসেবে খ্রিস্টের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা “ঈশ্বরের প্রতাপের প্রশংসা” করে।—ইফিষীয় ১:১২-১৪.

১২. কীভাবে আমরা জানি যে, ১,৪৪,০০০ জন আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে পূর্বনির্ধারিত নয়?

১২ এক লক্ষ চুয়াল্লিশ সহস্র জনকে পূর্বে নিরূপিত করে রাখার অর্থ এই নয় যে, নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষকে এভাবে বিশ্বস্ততা সহকারে ঈশ্বরের সেবা করার জন্য পূর্বনির্ধারিত করে রাখা হয়েছিল। বস্তুতপক্ষে, খ্রিস্টান গ্রিক শাস্ত্রের উপদেশ মূলত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার ও সেইসঙ্গে তাদের স্বর্গীয় আহ্বান অনুযায়ী নিজেদেরকে যোগ্য রাখার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেওয়ার এবং শক্তিশালী করার জন্য লেখা হয়েছিল। (ফিলিপীয় ২:১২; ২ থিষলনীকীয় ১:৫, ১১; ২ পিতর ১:১০, ১১) যিহোবা আগে থেকেই জানেন যে, ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তি তাঁর উদ্দেশ্য পালন করার ক্ষেত্রে যোগ্য হবে। কারা সেই যোগ্য ব্যক্তি হবে, তা নির্ভর করে সেই আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা কীভাবে আলাদা আলাদাভাবে তাদের জীবনযাপন করা বেছে নেয় সেটার ওপর, যে-সিদ্ধান্ত তাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে নিতে হবে।—মথি ২৪:১৩.

যিহোবা যা আগে থেকেই জানেন

১৩, ১৪. যিহোবা যেভাবে তাঁর পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করেন, তা কীসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং কেন?

১৩ যেহেতু যিহোবা হলেন ভবিষ্যদ্বাণীর ও সেইসঙ্গে উদ্দেশ্যপরায়ণ এক ঈশ্বর, তাই কীভাবে তিনি তাঁর পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করেন? প্রথমত, আমাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, ঈশ্বরের সমস্ত পথ সত্য, ধার্মিক ও প্রেমময়। সা.কা. প্রথম শতাব্দীর ইব্রীয় খ্রিস্টানদের কাছে লেখার সময় প্রেরিত পৌল নিশ্চিত করেছিলেন যে, ঈশ্বরের শপথ ও তাঁর প্রতিজ্ঞা হল, ‘এমন অপরিবর্ত্তনীয় দুই ব্যাপার যে ব্যাপারে মিথ্যাকথা বলা ঈশ্বরের অসাধ্য।’ (ইব্রীয় ৬:১৭, ১৮) শিষ্য তীতের প্রতি তার চিঠিতেও পৌল এই ধারণা প্রকাশ করেছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন যে ঈশ্বর “মিথ্যাকথনে অসমর্থ।”—তীত ১:২.

১৪ অধিকন্তু, যদিও যিহোবার অসীম ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু তিনি কখনো অন্যায্যভাবে কাজ করেন না। মোশি যিহোবাকে এভাবে বর্ণনা করেছেন, “বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) যিহোবা যা কিছু করেন, সেগুলোর সবই তাঁর অপূর্ব ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁর কাজগুলো প্রকাশ করে যে, সেগুলো তাঁর মৌলিক গুণাবলি যেমন প্রেম, প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার ও শক্তির সঙ্গে নিখুঁতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

১৫, ১৬. এদন উদ্যানে আদমের সামনে যিহোবা কোন বাছাইগুলো রেখেছিলেন?

১৫ এই গুণাবলি এদন উদ্যানের ঘটনাগুলোর সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত, তা বিবেচনা করুন। একজন প্রেমময় পিতা হিসেবে যিহোবা মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্তকিছু জুগিয়েছেন। তিনি আদমকে চিন্তা করার, কোনো বিষয়ে যুক্তি করার এবং উপসংহারে পৌঁছানোর ক্ষমতা দিয়েছিলেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যারা সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারা পরিচালিত হয়, সেই পশুপাখির বিপরীতে আদমের বেছে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। আদমকে সৃষ্টি করার পর, ঈশ্বর তাঁর স্বর্গীয় সিংহাসন থেকে নীচে তাকিয়ে “আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের” প্রতি দৃষ্টি দিয়েছিলেন “আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।”—আদিপুস্তক ১:২৬-৩১; ২ পিতর ২:১২.

১৬ যিহোবা যখন আদমকে ‘সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক বৃক্ষের’ ফল না খাওয়ার বিষয়ে আদেশ দিয়েছিলেন, তখন তিনি যথেষ্ট নির্দেশনা জুগিয়েছিলেন যাতে আদম কী করবে, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তিনি আদমকে শুধু একটা গাছের ফল ছাড়া “উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের” ফল খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন ও সেইসঙ্গে সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার মারাত্মক পরিণাম সম্বন্ধে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ২:১৬, ১৭) তিনি আদমকে তার কাজের পরিণতি সম্বন্ধে জানিয়ে দিয়েছিলেন। আদম কী করেছিল?

১৭. কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করবেন কি না, তা বাছাই করে থাকেন?

১৭ স্পষ্টতই, যিহোবা আগে থেকেই আদম—ও হবা—কী করবে, তা দেখা বেছে নেননি যদিও সমস্তকিছু আগে থেকে জানার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। তাই, যিহোবা আগে থেকে ভবিষ্যৎ দেখতে পারেন কি না, সেটা নয় বরং তিনি তা করা বেছে নেন কি না, সেটাই হল প্রশ্ন। অধিকন্তু, আমরা এই যুক্তি করতে পারি যে, প্রেমময় এক ঈশ্বর হওয়ায় যিহোবা জেনেশুনে এবং নিষ্ঠুরভাবে পূর্বনির্ধারণ করে রাখেননি যে, ভবিষ্যতে সেই বিদ্রোহ—ও সেইসঙ্গে এর সমস্ত দুঃখজনক পরিণতি—ঘটবে। (মথি ৭:১১; ১ যোহন ৪:৮) এভাবে, যিহোবা পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করবেন কি না, তা বাছাই করে থাকেন।

১৮. যিহোবা পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করবেন কি না, তা বাছাই করা কেন এই বিষয়কে ইঙ্গিত করে না যে, তাঁর কোনো কিছুর অভাব রয়েছে?

১৮ যিহোবা তাঁর পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করবেন কি না, তা বাছাই করার অর্থ কি এই যে, তাঁর কোনো কিছুর অভাব রয়েছে? না। মোশি যিহোবাকে “শৈল” বলে বর্ণনা করার পর আরও বলেছিলেন: “তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ।” মানুষের পাপের পরিণতিগুলোর জন্য তাঁকে দায়ী করা যায় না। আজকে আমরা সকলে যে-দুর্দশামূলক ফলগুলো ভোগ করছি, সেগুলো অবাধ্যতার অধার্মিক কাজ থেকে শুরু হয়েছে। প্রেরিত পৌল স্পষ্টভাবে যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪, ৫; রোমীয় ৫:১২; যিরমিয় ১০:২৩.

১৯. পরের প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে?

১৯ আমাদের আলোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, যিহোবার মধ্যে কোনো অবিচার নেই। (গীতসংহিতা ৩৩:৫) এর পরিবর্তে যিহোবার ক্ষমতা, নৈতিক গুণাবলি ও মানগুলো তাঁর উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (রোমীয় ৮:২৮) ভবিষ্যদ্বাণীর ঈশ্বর হিসেবে যিহোবা “শেষের বিষয় আদি অবধি . . . যাহা সাধিত হয় নাই, তাহা পূর্ব্বে” জানান। (যিশাইয় ৪৬:৯, ১০) আমরা এও দেখেছি যে, তিনি পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করবেন কি না, তা বাছাই করে থাকেন। তা হলে, কীভাবে সেটা আমাদের প্রভাবিত করে? কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমাদের সিদ্ধান্তগুলো ঈশ্বরের প্রেমময় উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? আর তা করা আমাদের জন্য কোন আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা হবে?

[পাদটীকা]

^ ১৯৯৮ সালের ১লা এপ্রিল প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৯, ২০ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• প্রাচীনকালের কোন উদাহরণগুলো প্রমাণ দেয় যে, ঈশ্বরের “বাক্য” সবসময় “সিদ্ধার্থ” হয়েছে?

• যিহোবা তাঁর ‘যুগর্য্যায়ের সঙ্কল্প’ অনুসারে কী পূর্বে নিরূপিত করে রেখেছেন?

• কোন উপায়ে যিহোবা তাঁর পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার ওপর যিহোশাফটের আস্থা ছিল

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর মৃত্যু ও পুনরুত্থান সম্বন্ধে ঈশ্বর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আদম ও হবা কী করবে, তা কি যিহোবা পূর্বে নিরূপিত করে রেখেছিলেন?