অহংকার ওনম্রতা সম্বন্ধে এক শিক্ষা
অহংকার ওনম্রতা সম্বন্ধে এক শিক্ষা
রাজা দায়ূদের জীবনের একটা ঘটনা প্রকৃত নম্রতা ও অহংকারের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে। দায়ূদ যিরূশালেমকে জয় করে সেই শহরকে রাজধানী বানানোর পরই এই ঘটনাটা ঘটেছিল। দায়ূদ যিহোবাকে ইস্রায়েলের প্রকৃত রাজা হিসেবে দেখেছিলেন আর তাই তিনি সিন্দুকটি, যেটি ঈশ্বরের উপস্থিতিকে চিত্রিত করত, সেটিকে সেই শহরে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই ঘটনাটা দায়ূদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, যাজকরা যখন সিন্দুকটিকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি তাদের পিছন পিছন যাওয়ার দ্বারা তার আনন্দ প্রকাশ্যে দেখিয়েছিলেন। যিরূশালেমের অধিবাসীরা তাদের রাজাকে ‘যথাশক্তি নৃত্য করিতে’ দেখেছিল।—২ শমূয়েল ৬:১১-১৬; ১ বংশাবলি ১৫:১৫, ১৬, ২৯.
কিন্তু, দায়ূদের স্ত্রী মীখল সেই আনন্দপূর্ণ শোভাযাত্রায় যোগ দেননি। তিনি বাতায়ন বা জানালা দিয়ে দেখছিলেন এবং দায়ূদ যেভাবে যিহোবাকে প্রশংসা করছিলেন, সেটার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পরিবর্তে, মীখল ‘তাহাকে মনে মনে তুচ্ছ করিলেন।’ (২ শমূয়েল ৬:১৬) কেন মীখল এইরকম মনে করেছিলেন? স্পষ্টতই, তিনি ইস্রায়েলের প্রথম রাজা শৌলের কন্যা এবং বর্তমানে ইস্রায়েলের দ্বিতীয় রাজার স্ত্রী হিসেবে, তার পদমর্যাদা নিয়ে খুবই গর্বিত ছিলেন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন যে, তার স্বামী, যিনি হচ্ছেন রাজা, তার নিজেকে এভাবে সাধারণ লোকেদের পর্যায়ে নিচু করা এবং তাদের মতো করে আনন্দ করা উচিত হয়নি। তার এই ধরনের অহংকারের মনোভাব, দায়ূদ যখন ঘরে ফিরে এসেছিলেন, তখন দায়ূদের প্রতি তার সম্ভাষণে প্রকাশ পেয়েছিল। তীব্র ব্যঙ্গ করে তিনি বলেছিলেন: “অদ্য ইস্রায়েলের রাজা কেমন সমাদৃত হইলেন; কোন অসারচিত্ত লোক যেমন প্রকাশ্যরূপে বিবস্ত্র হয়, তদ্রূপ তিনি অদ্য আপন দাসগণের দাসীদিগের সাক্ষাতে বিবস্ত্র হইলেন।”—২ শমূয়েল ৬:২০.
এই সমালোচনার প্রতি দায়ূদ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? দায়ূদ মীখলকে এই বলে ভর্ৎসনা করেছিলেন যে, যিহোবা দায়ূদের প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়ে মীখলের পিতা শৌলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। দায়ূদ আরও বলেছিলেন: “আমি . . . ইহা অপেক্ষা আরও লঘু হইব, এবং আমার নিজের দৃষ্টিতে আরও নীচ হইব; কিন্তু তুমি যে দাসীদের কথা কহিলে, তাহাদের কাছে সমাদৃত হইব।”—২ শমূয়েল ৬:২১, ২২.
হ্যাঁ, দায়ূদ নম্রভাবে যিহোবাকে সেবা করে যেতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এই মনোভাব আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কেন যিহোবা দায়ূদকে “আমার মনের মত লোক” বলেছিলেন। (প্রেরিত ১৩:২২; ১ শমূয়েল ১৩:১৪) বাস্তবিকপক্ষে, দায়ূদ নম্রতার সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ অনুসরণ করছিলেন—সেটা হচ্ছে স্বয়ং যিহোবা ঈশ্বরের উদাহরণ। আগ্রহজনক বিষয়টা হচ্ছে, দায়ূদ যে-অভিব্যক্তি ব্যবহার করে মীখলকে বলেছিলেন যে, ‘আমি আরও নীচ হইব,’ তা এক ইব্রীয় মূল ক্রিয়াপদ থেকে নেওয়া হয়েছে, যা মানবজাতির প্রতি ঈশ্বরের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করতেও ব্যবহৃত হয়। যদিও যিহোবা হলেন নিখিলবিশ্বের সর্বমহান ব্যক্তি কিন্তু গীতসংহিতা ১১৩:৬, ৭ পদ তাঁর সম্বন্ধে বর্ণনা করে যে, তিনি “অবনত হইয়া [একজন নিকৃষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তাঁর পদ বা মর্যাদা থেকে নিচু হয়ে] দৃষ্টিপাত করেন আকাশে ও পৃথিবীতে। তিনি ধূলি হইতে দীনহীনকে তুলেন, সারের ঢিবী হইতে দরিদ্রকে উঠান।”
যিহোবা যেহেতু নম্র, তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, তিনি অহংকারী লোকেদের ‘উদ্ধত দৃষ্টিকে’ ঘৃণা করেন। (হিতোপদেশ ৬:১৬, ১৭) এই মন্দ গুণ প্রদর্শন করার এবং ঈশ্বর যাকে রাজা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন, তার প্রতি অসম্মান দেখানোর কারণে মীখলকে দায়ূদের জন্য পুত্র প্রসব করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তিনি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। আমাদের জন্য কতই না গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা! যারাই ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে চায়, তাদের অবশ্যই এই কথাগুলো মেনে চলতে হবে: “তোমরা . . . এক জন অন্যের সেবার্থে নম্রতায় কটিবন্ধন কর, কেননা ‘ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।’”—১ পিতর ৫:৫.