সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কতটা সুখী?

আপনি কতটা সুখী?

আপনি কতটা সুখী?

 হ্যাঁ,আপনি হয়তো নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘আমি কতটা সুখী?’ আপনি বা অন্যেরা কীভাবে উত্তর দেবেন, তা জানার জন্য সমাজবিজ্ঞানীরা কঠোর চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু তাদের এই কাজ সহজ নয়। আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির সুখ পরিমাপ করাকে হয়তো একজন ব্যক্তির তার স্ত্রীর প্রতি কতখানি ভালবাসা রয়েছে অথবা পরিবারে একজনের মৃত্যুর কারণে কতখানি শোক করা হয়, সেটার পরিমাপের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আবেগকে নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা সহজ কাজ নয়। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা একটা মৌলিক সত্যকে স্বীকার করে: সব মানুষেরই সুখী হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

সুখী হওয়ার সহজাত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, গুরুতর সমস্যাগুলো চরম অসুখী অবস্থা নিয়ে এসেছে। এই উদাহরণটা বিবেচনা করুন: কিছু শহরের কবরস্থান এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি মারা যাওয়া ব্যক্তিদেরকে পুরোনো কবরে সমাহিত করার অনুমতি দিচ্ছে। আফ্রিকার কিছু কিছু জায়গায় প্রধান চাকরি হচ্ছে কফিন তৈরি করা। আর আপনি যেখানেই বাস করুন না কেন, আপনি দেখেছেন যে, যারা গুরুতর রোগে ভুগছে এবং যারা মৃত্যুতে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব হারিয়েছে, তাদের মুখের হাসি বলতে গেলে বিলীন হয়ে গিয়েছে।

ধনী দেশগুলো সম্বন্ধে কী বলা যায়? হঠাৎ করে কোনো এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা আর্থিক নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে, যার জন্য হয়তো তারা প্রস্তুত ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক অবসরপ্রাপ্ত লোক আবারও কর্মক্ষেত্রে ফিরে গিয়েছে কারণ তারা অবসরকালীন ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে প্রায়ই একটা পরিবারের সমস্ত সঞ্চয় শেষ হয়ে যায়। “আপনি যখন দেখতে পাবেন যে, এই লোকেরা প্রচুর ব্যয় সংক্রান্ত এবং নানা শারীরিক সমস্যার ব্যাপারে উপদেশের জন্য আসে, তখন আপনি মর্মাহত হবেন,” একজন আইন উপদেষ্টা বলেন। “অনেকবার তাদেরকে বলতে হয় যে, ‘আপনি শীঘ্রই আপনার বাড়ি হারাতে যাচ্ছেন।’” কিন্তু, তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যাদের টাকাপয়সা নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হয় না? তারাও কি অসুখী হতে পারে?

কিছু কিছু লোকের জীবনধারা বিখ্যাত গীতিকার রিচার্ড রজার্জের মতো। তার সম্বন্ধে বলা হয়েছিল: “হাতে গোনা অল্প কয়েক জন ব্যক্তিই, অনেক লোককে বেশ আনন্দ দিয়েছে।” যদিও তার গানগুলো অন্যদের আনন্দ দিয়েছে কিন্তু তিনি নিজেই দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতায় ভুগেছিলেন। তিনি সেই দুটো লক্ষ্যে পৌঁছেছিলেন যেগুলোর জন্য অনেকে আকাঙ্ক্ষা করে—অর্থ ও খ্যাতি—কিন্তু তিনি কি আসলে সুখী ছিলেন? একজন জীবনীলেখক বলেছিলেন: “[রজার্জ] তার কাজে অসাধারণ সাফল্য লাভ করেছিলেন, প্রাচুর্যপূর্ণ জীবনধারা উপভোগ করেছিলেন এবং দুটো পুলিৎজার পুরস্কার অন্য আরেকজনের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন। তারপরও তিনি বেশির ভাগ সময়ই অসুখী এবং বিষণ্ণ ছিলেন।”

আপনি হয়তো দেখেছেন যে, সুখের জন্য ধনসম্পদের ওপর নির্ভর করা প্রায়ই প্রতারণাপূর্ণ হয়। কানাডার টরোন্টোর দ্যা গ্লোব আ্যন্ড মেইল খবরের কাগজের একজন বিনিয়োগ রিপোর্টার, অনেক বিত্তবান লোক যে-“একাকিত্ব এবং শূন্যতা” সহ্য করে থাকে, তা বর্ণনা করেছিলেন। একজন অর্থ উপদেষ্টার মতে, ধনী বাবামারা যখন তাদের সন্তানদের অনেক টাকাপয়সা ও উপহার দেয়, তখন “প্রায়ই এমন বীজ বপন করা হয়ে থাকে, পরবর্তী সময়ে যেটার ফল দুঃখজনক হয়।”

সুখের জন্য কি কোনো দৃঢ় ভিত্তি রয়েছে?

একটা ফুল গাছের বৃদ্ধির জন্য উত্তম মাটি, জল এবং উপযুক্ত জলবায়ু দরকার। একইভাবে গবেষকরা জানে যে, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিগুলো সুখের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। এর অন্তর্ভুক্ত শারীরিক সুস্থতা; অর্থপূর্ণ কাজ; পর্যাপ্ত খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান; সৃজনশীল আকাঙ্ক্ষাগুলোর পূরণ; এবং প্রকৃত বন্ধু।

একজন ব্যক্তির সুখী হওয়ার প্রত্যাশার ওপর উপরোক্ত পরিস্থিতিগুলোর যে-প্রভাব রয়েছে, সেই বিষয়ে আপনি সম্ভবত কোনো দ্বিমত পোষণ করবেন না। কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় রয়েছে। সেটা হচ্ছে “পরম ধন্য [“সুখী,” NW] ঈশ্বরের” জ্ঞান, যাঁর নাম হল যিহোবা। (১ তীমথিয় ১:১১) কীভাবে সেই জ্ঞান সাহায্য করে? যিহোবা আমাদের সৃষ্টিকর্তা আর তিনি আমাদের সুখী হওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। যুক্তিযুক্তভাবেই তিনি জানেন যে, কী আমাদের প্রকৃতই সুখী করতে পারে। যেকোনো জায়গা বা পরিস্থিতির লোকেদের এক স্থায়ী সুখী জীবনের দিকে পরিচালিত করার বিষয়ে তাঁর উপায় সম্বন্ধে পরবর্তী প্রবন্ধ বর্ণনা করে।

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

একটা ফুল গাছের মতো, সুখের বৃদ্ধির জন্যও উপযুক্ত পরিস্থিতিগুলো দরকার

[৩ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

© Gideon Mendel/CORBIS