সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি!”

“আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি!”

“আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি!”

“আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।”—গীতসংহিতা ১১৯:৯৭.

১, ২. (ক) একশো উনিশ গীতের অনুপ্রাণিত লেখক কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন? (খ) তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন এবং কেন?

 একশো উনিশ গীতের লেখক এক চরম পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন। ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে অবজ্ঞা করে এমন অহংকারী শত্রুরা তাকে বিদ্রূপ করেছিল এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলেছিল। অধ্যক্ষরা তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণা করেছিল ও সেইসঙ্গে তাকে তাড়না করেছিল। দুষ্টরা তাকে ঘিরে ধরেছিল আর তার জীবন হুমকির মুখে ছিল। এই সমস্তকিছুর কারণে তিনি “দুঃখে গলিয়া” পড়েছিলেন। (গীতসংহিতা ১১৯:৯, ২৩, ২৮, ৫১, ৬১, ৬৯, ৮৫, ৮৭, ১৬১) এই পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, গীতরচক গেয়েছিলেন: “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।”—গীতসংহিতা ১১৯:৯৭.

আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, “ঈশ্বরের ব্যবস্থা কীভাবে গীতরচকের কাছে সান্ত্বনার এক উৎস হয়ে উঠেছিল?” যিহোবা যে তার প্রতি আগ্রহী ছিলেন, এই বিষয়ে তার আস্থাই তাকে টিকিয়ে রেখেছিল। ঈশ্বর প্রেমের সঙ্গে যে-ব্যবস্থা দিয়েছেন, তা কাজে লাগানোর উপকারগুলো সম্বন্ধে ভালভাবে জানাই গীতরচককে তার বিরোধীদের কাছ থেকে আসা দুঃখকষ্ট সত্ত্বেও সুখী করে তুলেছিল। তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, যিহোবা তার সঙ্গে মঙ্গল ব্যবহার করেছেন। অধিকন্তু, ঈশ্বরের ব্যবস্থা থেকে নির্দেশনা কাজে লাগানোর ফলে গীতরচক তার শত্রুদের চেয়ে আরও জ্ঞানবান হয়ে উঠেছিলেন আর তা এমনকি তাকে সঞ্জীবিত করে তুলেছিল। ব্যবস্থা মেনে চলায় তিনি শান্তি ও এক উত্তম বিবেক লাভ করেছিলেন।—গীতসংহিতা ১১৯:১, ৯, ৬৫, ৯৩, ৯৮, ১৬৫.

৩. বর্তমানে খ্রিস্টানদের জন্য ঈশ্বরীয় মান অনুসারে জীবনযাপন করা কেন কঠিন?

বর্তমানে ঈশ্বরের কিছু দাসও বিশ্বাসের চরম পরীক্ষা ভোগ করছে। আমরা হয়তো গীতরচকের মতো এমন মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি হই না কিন্তু আমরা ‘শেষ কালের বিষম সময়ে’ বাস করছি। প্রতিদিন যে-লোকেদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, তাদের অনেকেরই আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলোর প্রতি কোনো ভালবাসাই নেই—তাদের লক্ষ্যগুলো আত্মকেন্দ্রিক ও বস্তুবাদিতাপূর্ণ এবং তাদের মনোভাব হল উদ্ধত ও অসম্মানজনক। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) খ্রিস্টান যুবক-যুবতীদের প্রতিনিয়ত তাদের নৈতিক নীতিনিষ্ঠার ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ এমন বিষয়গুলোর মুখোমুখি হতে হয়। এইরকম এক পরিস্থিতির মধ্যে যিহোবা ও সেইসঙ্গে যা সঠিক, সেই বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের ভালবাসা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। কীভাবে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি?

৪. কীভাবে গীতরচক ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন আর খ্রিস্টানদেরও কি একইভাবে উপলব্ধি দেখানো উচিত?

গীতরচক যে-চাপগুলো ভোগ করেছিলেন, সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য যে-বিষয়টা তাকে সাহায্য করেছিল সেটা হল, তিনি উপলব্ধি সহকারে ঈশ্বরের ব্যবস্থা নিয়ে একাগ্রভাবে বিবেচনা করার জন্য সময় করে নিয়েছিলেন। এভাবে তিনি ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি করেছিলেন। বস্তুতপক্ষে, ১১৯ গীতের প্রায় প্রতিটা পদই যিহোবার ব্যবস্থার কিছু দিক তুলে ধরে। * বর্তমানে খ্রিস্টানরা আর মোশির ব্যবস্থার অধীন নয়, যা ঈশ্বর প্রাচীন ইস্রায়েল জাতিকে দিয়েছিলেন। (কলসীয় ২:১৪) কিন্তু, সেই ব্যবস্থার মধ্যে প্রকাশিত নীতিগুলো এখনও মূল্যবান। এই নীতিগুলো গীতরচকের কাছে সান্ত্বনাজনক ছিল আর এগুলো ঈশ্বরের সেই দাসদের জন্যও সান্ত্বনাস্বরূপ হতে পারে, যারা আধুনিক জীবনের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

৫. ব্যবস্থার কোন দিকগুলো আমরা এখন বিবেচনা করতে যাচ্ছি?

আসুন আমরা দেখি যে, মোশির ব্যবস্থার মাত্র তিনটে দিক থেকে আমরা কোন উৎসাহ পেতে পারি আর সেগুলো হল, বিশ্রামবারের ব্যবস্থা, পতিত শস্য কুড়ানোর ব্যবস্থা এবং লোভের বিরুদ্ধে আজ্ঞা। প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমরা দেখব যে, আমরা যদি আমাদের সময়কার প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মোকাবিলা করতে চাই, তা হলে এই আইনগুলোর পিছনে যে-নীতিগুলো রয়েছে, সেগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখানো অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করা

৬. সমস্ত লোকের কোন মৌলিক চাহিদাগুলো রয়েছে?

মানবজাতিকে বেশ কয়েকটা চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যদি উত্তম দৈহিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে চান, তা হলে খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থান অপরিহার্য। তবে, মানুষকে তার ‘আধ্যাত্মিক চাহিদার’ প্রতিও যত্ন নিতে হবে। তা না হলে, সে সত্যিকারের সুখী হতে পারবে না। (মথি ৫:৩, NW) এই সহজাত চাহিদা পূরণ করাকে যিহোবা এতটাই মৌলিক বলে বিবেচনা করেছিলেন যে, তিনি তাঁর লোকেদেরকে প্রতি সপ্তাহে পুরো একটা দিন তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছিলেন, যাতে তারা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে পারে।

৭, ৮. (ক) কীভাবে ঈশ্বর বিশ্রামবার এবং অন্যান্য দিনের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করেছিলেন? (খ) বিশ্রামবার কোন উদ্দেশ্য সাধন করেছিল?

বিশ্রামবারের ব্যবস্থা আধ্যাত্মিক বিষয় অনুধাবন করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিল। বাইবেলে প্রথম উল্লেখিত “বিশ্রামবার” শব্দটি প্রান্তরে মান্না জোগানোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ইস্রায়েলীয়দের বলা হয়েছিল যে, তারা যেন ছয় দিনের জন্য এই অলৌকিক খাবার সংগ্রহ করে। ষষ্ঠ দিনে তাদের “দুই দিনের খাদ্য” সংগ্রহ করতে হতো কারণ সপ্তম দিনে কোনো খাবার জোগানো হতো না। সপ্তম দিন হবে “সদাপ্রভুর উদ্দেশে পবিত্র বিশ্রামবার,” যে-দিনে প্রত্যেকের নিজ নিজ স্থানে থাকা উচিত। (যাত্রাপুস্তক ১৬:১৩-৩০) দশ আজ্ঞার একটাতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, বিশ্রামবারে কোনো ধরনের কাজ করা যাবে না। সেই দিন ছিল পবিত্র। এই আদেশ পালন না করার শাস্তি ছিল মৃত্যু।—যাত্রাপুস্তক ২০:৮-১১; গণনাপুস্তক ১৫:৩২-৩৬.

বিশ্রামবারের আইন তাঁর লোকেদের দৈহিক ও আধ্যাত্মিক মঙ্গলের বিষয়ে যিহোবার চিন্তাকে প্রকাশ করেছিল। যিশু বলেছিলেন, “বিশ্রামবার মনুষ্যের নিমিত্তই হইয়াছে।” (মার্ক ২:২৭) এটা ইস্রায়েলীয়দের শুধু বিশ্রাম নেওয়ারই সুযোগ করে দেয়নি কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের সৃষ্টিকর্তার নিকটবর্তী হওয়ার ও তাঁর প্রতি তাদের প্রেম দেখানোরও সুযোগ করে দিয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১২) এই দিনটা পুরোপুরিভাবে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য নিয়োজিত ছিল, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত পারিবারিক উপাসনা, প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের ব্যবস্থা নিয়ে ধ্যান করা। এই ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দেরকে বস্তুগত বিষয়গুলোর পিছনে তাদের সমস্ত সময় ও শক্তি ব্যয় করার হাত থেকে সুরক্ষা করেছিল। বিশ্রামবার তাদেরকে মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্কই হল তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যিশু এই অপরিবর্তনীয় নীতি সম্বন্ধে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “লেখা আছে, ‘মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।’”—মথি ৪:৪.

৯. বিশ্রামবারের ব্যবস্থা খ্রিস্টানদের জন্য কোন শিক্ষা প্রদান করে?

ঈশ্বরের লোকেদের এখন আর ২৪ ঘন্টার আক্ষরিক বিশ্রামবার পালন করার প্রয়োজন নেই, তবে এই বিশ্রামবারের ব্যবস্থা ঐতিহাসিক দিক দিয়ে এক আগ্রহজনক বিষয়ের চেয়ে আরও বেশি কিছু। (কলসীয় ২:১৬) এটা কি এক অনুস্মারক নয় যে, আমাদেরও আধ্যাত্মিক কাজকর্মকে প্রথমে রাখতে হবে? বস্তুগত বিষয়গুলোতে ডুবে থাকার অথবা আমোদপ্রমোদের পিছনে ছোটার কারণে আমাদের পবিত্র বিষয়গুলো যেন চাপা পড়ে না যায়। (ইব্রীয় ৪:৯, ১০) তাই, আমরা হয়তো নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: “আমার জীবনে কোন বিষয়টা প্রথম স্থানে রয়েছে? আমি কি অধ্যয়ন, প্রার্থনা, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান এবং রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করাকে প্রথম স্থানে রাখছি? নাকি অন্যান্য বিষয়ের ভিড়ে এই কাজকর্ম চাপা পড়ে যাচ্ছে?” আমরা যদি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে আমাদের জীবনে প্রথমে রাখি, তা হলে যিহোবা আমাদের আশ্বাস দেন যে, জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর অভাব আমাদের হবে না।—মথি ৬:২৪-৩৩.

১০. আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য সময় দেওয়ার মাধ্যমে কীভাবে আমরা উপকার লাভ করতে পারি?

১০ বাইবেল এবং বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাদি অধ্যয়ন করার ও সেইসঙ্গে সেখানে দেওয়া বার্তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য আমরা যে সময় ব্যয় করে থাকি, তা আমাদের যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করতে পারে। (যাকোব ৪:৮) সুজান নামে এক বোন, যিনি প্রায় ৪০ বছর আগে থেকে নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়নের জন্য সময় আলাদা করে রাখতে শুরু করেছেন, তিনি স্বীকার করেন যে, প্রথম প্রথম তা করা উপভোগ্য ছিল না। বরং ক্লান্তিকর ছিল। কিন্তু যতই তিনি পড়তে থাকেন, ততই উপভোগ করতে থাকেন। এখন যদি কোনো কারণে তিনি ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করতে না পারেন, তা হলে সত্যিই তার খুব খারাপ লাগে। “অধ্যয়ন আমাকে যিহোবাকে একজন পিতা হিসেবে জানতে সাহায্য করেছে,” তিনি বলেন। “আমি তাঁর ওপর আস্থা রাখতে, তাঁর ওপর নির্ভর করতে এবং প্রার্থনায় স্বচ্ছন্দে তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি। এটা দেখা সত্যিই অপূর্ব যে, যিহোবা তাঁর দাসদের কতটা ভালবাসেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি কীভাবে আমার যত্ন নেন এবং কীভাবে তিনি আমার পক্ষে কাজ করেন।” নিয়মিতভাবে আমাদের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আমরাও কত আনন্দই না পেতে পারি!

পতিত শস্য কুড়ানোর বিষয়ে ঈশ্বরের আইন

১১. পতিত শস্য কুড়ানোর ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করেছিল?

১১ মোশির ব্যবস্থার দ্বিতীয় যে-দিকটা তাঁর লোকেদের মঙ্গলের প্রতি ঈশ্বরের চিন্তাকে প্রতিফলিত করেছিল সেটা হল, পতিত শস্য কুড়ানোর অধিকার। যিহোবা আদেশ দিয়েছিলেন যে, একজন ইস্রায়েলীয় কৃষক যখন তার জমির শস্য কাটবেন, তখন শস্যছেদকরা যেগুলো ফেলে রেখে যাবে, সেগুলো অভাবী ব্যক্তিদের সংগ্রহ করতে দিতে হবে। কৃষকরা তাদের জমির কিনারার শস্য নিঃশেষে কাটতে অথবা অবশিষ্ট দ্রাক্ষাফল বা জিতবৃক্ষের ফল সংগ্রহ করতে পারবে না। জমিতে অনিচ্ছাকৃতভাবে ফেলে আসা শস্যের আঁটি তুলে নেওয়া যাবে না। দরিদ্র, বিদেশি, অনাথ ও বিধবাদের জন্য এটা ছিল এক প্রেমময় ব্যবস্থা। এটা ঠিক যে, তাদের জন্য পতিত শস্য কুড়ানো অনেক পরিশ্রমের কাজ ছিল কিন্তু এর মাধ্যমে তারা ভিক্ষা করা এড়াতে পারত।—লেবীয় পুস্তক ১৯:৯, ১০; দ্বিতীয় বিবরণ ২৪:১৯-২২; গীতসংহিতা ৩৭:২৫.

১২. পতিত শস্য কুড়ানোর ব্যবস্থা কৃষকদের কোন সুযোগ করে দিয়েছিল?

১২ পতিত শস্য কুড়ানোর আইনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি যে, অভাবী ব্যক্তিদের জন্য কৃষকরা কতটুকু পরিমাণ রেখে যাবে। জমির চারিদিকের কিনারায় না কাটা শস্যের সীমানা কী প্রশস্ত হবে নাকি সংকীর্ণ হবে, তা তাদের ওপর নির্ভর করত। এভাবে এই ব্যবস্থা উদারতার বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিল। এটা ফসলের জোগানদাতার প্রতি কৃষকদের উপলব্ধি দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছিল, যেহেতু “যে দরিদ্রের প্রতি দয়া করে, সে [তাহার নিম্মার্তাকে] সম্মান করে।” (হিতোপদেশ ১৪:৩১) বোয়স ছিলেন এমনই একজন, যিনি তা করেছিলেন। তিনি সদয়ভাবে এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিলেন যে, রূৎ নামে এক বিধবা যিনি তার জমিতে পতিত শস্য কুড়াতেন, তিনি যেন প্রচুর পরিমাণে শস্য সংগ্রহ করতে পারেন। বোয়সের উদারতার জন্য যিহোবা তাকে প্রচুররূপে পুরস্কৃত করেছিলেন।—রূতের বিবরণ ২:১৫, ১৬; ৪:২১, ২২; হিতোপদেশ ১৯:১৭.

১৩. পতিত শস্য কুড়ানোর বিষয়ে প্রাচীনকালের আইন আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

১৩ পতিত শস্য কুড়ানোর আইনের পিছনে যে-নীতি রয়েছে, তা পরিবর্তিত হয়নি। যিহোবা চান তাঁর দাসেরা যাতে উদার হয়, বিশেষ করে অভাবীদের প্রতি। আমরা যত বেশি উদার হব, তত বেশি আশীর্বাদ লাভ করব। “দেও, তাহাতে তোমাদিগকেও দেওয়া যাইবে,” যিশু বলেছিলেন। “লোকে বিলক্ষণ পরিমাণে চাপিয়া ঝাঁকরিয়া উপচিয়া তোমাদের কোলে দিবে; কারণ তোমরা যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদেরও নিমিত্তে পরিমাণ করা যাইবে।”—লূক ৬:৩৮.

১৪, ১৫. কীভাবে আমরা উদারতা দেখাতে পারি আর তা নিজেদের ও যাদেরকে আমরা সাহায্য করি, তাদের উভয়ের জন্য সম্ভাব্য কোন উপকারগুলো নিয়ে আসে?

১৪ প্রেরিত পৌল সুপারিশ করেছেন যেন আমরা “সকলের প্রতি, বিশেষতঃ যাহারা বিশ্বাস-বাটীর পরিজন, তাহাদের প্রতি সৎকর্ম্ম করি।” (গালাতীয় ৬:১০) তাই, যখনই সহবিশ্বাসীরা তাদের বিশ্বাসের পরীক্ষার মুখোমুখি হয়, তখনই তারা যেন আধ্যাত্মিক সাহায্য পায়, সেই বিষয়ে নিশ্চিতভাবেই আমাদের চিন্তা করতে হবে। কিন্তু, তাদের কি ব্যবহারিক সাহায্যেরও প্রয়োজন রয়েছে যেমন কিংডম হলে আসার অথবা মুদির দোকানে কেনাকাটা করার জন্য সাহায্য? আপনার মণ্ডলীতে এমন কোনো বয়স্ক, অসুস্থ অথবা স্বাস্থ্যগত কারণে ঘরেই থাকতে হয় এমন ব্যক্তি রয়েছে, যার সঙ্গে উৎসাহমূলক সাক্ষাৎ করা হলে অথবা তাকে সাহায্য করলে তিনি সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখাবেন? আমরা যদি এই ধরনের চাহিদাগুলোর প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার প্রচেষ্টা করি, তা হলে যিহোবা হয়তো এমন ব্যক্তির প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার জন্য আমাদের ব্যবহার করতে পারবেন, যার সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। যদিও পরস্পরের যত্ন নেওয়া এক খ্রিস্টীয় বাধ্যবাধকতা, কিন্তু তা করলে সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরও সাহায্য হয়। সহউপাসকদের প্রতি অকৃত্রিম প্রেম দেখানো হল প্রচুর আনন্দ ও গভীর পরিতৃপ্তির উৎস, যা যিহোবার অনুমোদন নিয়ে আসে।—হিতোপদেশ ১৫:২৯.

১৫ আরেকটা যে-গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে খ্রিস্টানরা এক নিঃস্বার্থপর মনোভাব দেখায়, সেটা হল ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলার জন্য তাদের সময় ও শক্তি ব্যবহার করে। (মথি ২৮:১৯, ২০) অন্য ব্যক্তিকে যিহোবার প্রতি উৎসর্গ করার পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করার আনন্দ যার রয়েছে, তিনি যিশুর এই কথাগুলোর সত্যতা জানেন: “পাওয়ার চেয়ে দেওয়ারই মধ্যে বেশি সুখ।”—প্রেরিত (শিষ্যচরিত) ২০:৩৫, বাংলা জুবিলী বাইবেল।

লোভের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা

১৬, ১৭. দশম আজ্ঞায় কোন বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে এবং কেন?

১৬ ইস্রায়েলকে দেওয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থার তৃতীয় যে-দিকটা নিয়ে আমরা এখন বিবেচনা করব সেটা হল দশম আজ্ঞা, যেখানে লোভ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ব্যবস্থায় বলা ছিল: “তোমার প্রতিবাসীর গৃহে লোভ করিও না; প্রতিবাসীর স্ত্রীতে, কিম্বা তাহার দাসে কি দাসীতে, কিম্বা তাহার গোরুতে কি গর্দ্দভে, প্রতিবাসীর কোন বস্তুতেই লোভ করিও না।” (যাত্রাপুস্তক ২০:১৭) কোনো মানুষই এই ধরনের এক আজ্ঞা আরোপ করতে পারে না যেহেতু কেউই হৃদয় পড়তে পারে না। কিন্তু, সেই আদেশ ব্যবস্থাকে এমন এক পর্যায়ে উচ্চীকৃত করে, যা মানব বিচারব্যবস্থা থেকে উচ্চতর। এটা প্রত্যেক ইস্রায়েলীয়কে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তিনি সরাসরি ঈশ্বরের কাছে নিকাশ দিতে বাধ্য, যিনি হৃদয়ের প্রবণতা পড়তে পারেন। (১ শমূয়েল ১৬:৭) অধিকন্তু, এই আজ্ঞা অনেক অবৈধ কার্যকলাপের মূল কারণ সম্বন্ধে তুলে ধরেছিল।—যাকোব ১:১৪.

১৭ লোভের বিরুদ্ধে আইন ঈশ্বরের লোকেদেরকে বস্তুবাদিতা, লালসা এবং তাদের নিজ পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ না করার বিষয়ে উৎসাহিত করেছিল। এ ছাড়া, এটা তাদেরকে চুরি অথবা অনৈতিক কাজ করার প্রলোভন থেকে সুরক্ষা করেছিল। সবসময়ই এমন ব্যক্তিরা থাকবে, যাদের বস্তুগত সম্পত্তি দেখে আমরা মুগ্ধ হই অথবা যাদের কোনো না কোনো দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে আরও সফল বলে মনে হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা যদি আমাদের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হই, তা হলে আমরা অসুখী হয়ে পড়তে পারি ও অন্যদের প্রতি ঈর্ষা বোধ করতে পারি। বাইবেল লোভকে ‘ভ্রষ্ট মতির’ প্রকাশ বলে অভিহিত করে। তাই, লোভী না হওয়াই আমাদের জন্য আরও অনেক ভাল।—রোমীয় ১:২৮-৩০.

১৮. আজকের জগতে কোন মনোভাব বিদ্যমান আর তা কোন নেতিবাচক প্রভাব উৎপন্ন করতে পারে?

১৮ আজকে জগতে যে-মনোভাব বিদ্যমান রয়েছে, তা বস্তুবাদিতা ও প্রতিযোগিতাকে জাগিয়ে তোলে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাণিজ্য জগৎ নতুন পণ্যগুলো পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলে এবং প্রায়ই এই ধারণা প্রকাশ করে যে, সেটা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা সুখী হতে পারব না। এটা ঠিক সেই ধরনের মনোভাব, যেটাকে যিহোবার ব্যবস্থা নিন্দা করে থাকে। এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হচ্ছে, যেকোনো মূল্যেই হোক জীবনে উন্নতি করার আকাঙ্ক্ষা ও ধনসম্পদ সঞ্চয় করা। প্রেরিত পৌল সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে। কেননা ধনাসক্তি সকল মন্দের একটা মূল; তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।”—১ তীমথিয় ৬:৯, ১০.

১৯, ২০. (ক) যারা যিহোবার ব্যবস্থাকে ভালবাসে, তাদের কাছে কোন বিষয়গুলো সত্যিই মূল্যবান? (খ) পরের প্রবন্ধের বিষয়বস্তু কী?

১৯ যারা ঈশ্বরের ব্যবস্থাকে ভালবাসে, তারা বস্তুবাদিতাপূর্ণ মনোভাবের বিভিন্ন বিপদ সম্বন্ধে জানে এবং সেগুলো থেকে তারা সুরক্ষিত। উদাহরণস্বরূপ, গীতরচক যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন: “তোমার সাক্ষ্যকলাপের প্রতি আমার হৃদয় ফিরাও, লোভের প্রতি ফিরাইও না। তোমার মুখের ব্যবস্থা আমার পক্ষে উত্তম, সহস্র সহস্র স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা অপেক্ষা উত্তম।” (গীতসংহিতা ১১৯:৩৬, ৭২) এই কথাগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়া আমাদেরকে সেই ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে, যা বস্তুবাদিতা, লোভ এবং আমাদের জীবনের পরিস্থিতি নিয়ে অসুন্তষ্ট হওয়ার ফাঁদগুলো এড়ানোর জন্য প্রয়োজন। সম্পদ সঞ্চয় করা নয় বরং “ঈশ্বরীয় ভক্তি” হল সম্ভাব্য মহালাভের চাবিকাঠি।—১ তীমথিয় ৬:৬, NW.

২০ প্রাচীন ইস্রায়েল জাতিকে দেওয়া যিহোবার ব্যবস্থার পিছনে যে-নীতিগুলো রয়েছে, সেগুলো আমাদের এই কঠিন সময়ে ঠিক ততটাই মূল্যবান, যতটা সেই সময়ও ছিল যখন যিহোবা মোশিকে সেই ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। আমাদের জীবনে আমরা এই নীতিগুলো যত বেশি প্রয়োগ করব, ততই আমরা সেগুলোকে আরও বেশি উপলব্ধি করব, সেগুলোকে ভালবাসব এবং আরও সুখী হব। ব্যবস্থার মধ্যে আমাদের জন্য অনেক মূল্যবান শিক্ষা রয়েছে আর এই শিক্ষাগুলোর মূল্য বাইবেলে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনী ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েক জনের ঘটনা পরের প্রবন্ধে বিবেচনা করা হবে।

[পাদটীকা]

^ এই গীতের ১৭৬টা পদের মধ্যে ৪টা পদ ছাড়া বাকি সমস্ত পদে হয় যিহোবার আজ্ঞা, শাসনকলাপ, ব্যবস্থা, নির্দেশমালা, বিধিকলাপ, সাক্ষ্যকলাপ বা অনুস্মারক, বচন, বিধি, পথ নতুবা বাক্য সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কেন ১১৯ গীতের লেখক যিহোবার ব্যবস্থা ভালবাসতেন?

• বিশ্রামবারের ব্যবস্থা থেকে খ্রিস্টানরা কী শিখতে পারে?

• পতিত শস্য কুড়ানো সম্বন্ধে ঈশ্বরের আইনের কোন চিরস্থায়ী মূল্য রয়েছে?

• লোভের বিরুদ্ধে আজ্ঞা কীভাবে আমাদের সুরক্ষা করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিশ্রামবারের আইন কোন বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছিল?

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

পতিত শস্য কুড়ানোর আইন আমাদের কী শিক্ষা দেয়?