সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“এই দ্রাক্ষালতার তত্ত্ব কর”!

“এই দ্রাক্ষালতার তত্ত্ব কর”!

“এই দ্রাক্ষালতার তত্ত্ব কর”!

 বারো জন গুপ্তচর প্রতিজ্ঞাত দেশের বিভিন্ন জায়গা পর্যটন করেছিল। মোশি তাদেরকে সেখানকার অধিবাসীদের পর্যবেক্ষণ করতে বলেছিলেন এবং সেই দেশের কিছু উৎপাদিত দ্রব্য সঙ্গে করে নিয়ে আসতে বলেছিলেন। কোন উৎপাদিত দ্রব্যটা বিশেষ করে তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল? হিব্রোণের কাছেই তারা এক দ্রাক্ষাক্ষেত্র পেয়েছিল, যেখানকার দ্রাক্ষাফলগুলো এত বড় বড় ছিল যে, দ্রাক্ষাফলের কেবল একটা থলুয়া বা থোকা বয়ে নিয়ে আসতে দুজন গুপ্তচরের প্রয়োজন হয়েছিল। সেই এলাকার উৎপাদিত দ্রব্য এতটাই লক্ষণীয় ছিল যে, গুপ্তচররা ওই উর্বর এলাকাকে ‘ইষ্কোল উপত্যকা’ অর্থাৎ দ্রাক্ষার থোকা নাম দিয়েছিল।—গণনাপুস্তক ১৩:২১-২৪.

উনবিংশ শতাব্দীতে প্যালেস্টাইনে পরিদর্শনকারী একজন পর্যটক রিপোর্ট করেছিলেন: “ইষ্কোল বা দ্রাক্ষা উপত্যকা . . . এখনও দ্রাক্ষালতায় ভরা আর এখানকার দ্রাক্ষাফলগুলো হচ্ছে প্যালেস্টাইনের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ও সবচেয়ে বড়।” বাইবেলের সময়ে, যদিও ইষ্কোলের দ্রাক্ষালতা বিখ্যাত ছিল কিন্তু প্যালেস্টাইনের অধিকাংশ জায়গায় ভাল জাতের দ্রাক্ষাফল উৎপন্ন হতো। মিশরীয় নথিগুলো ইঙ্গিত করে যে, মিশরের রাজারা কনান থেকে দ্রাক্ষারস আমদানি করত।

“নুড়ি পাথুরে মাটি ও সূর্যালোক, গ্রীষ্মের উত্তাপ এবং শীতকালে বৃষ্টির জলের দ্রুত নিষ্কাশন সবকিছু একত্রে, [প্যালেস্টাইনের] শিলাময় পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত জমিকে অদ্বিতীয়ভাবে দ্রাক্ষালতার অঞ্চল করে তোলে,” বাইবেলের প্রাকৃতিক ইতিহাস (ইংরেজি) বই ব্যাখ্যা করে। যিশাইয় ইঙ্গিত করেছিলেন যে, কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় এক হাজারের মতো দ্রাক্ষালতা ছিল।—যিশাইয় ৭:২৩.

“দ্রাক্ষালতার অঞ্চল”

ইস্রায়েল জাতিকে মোশি বলেছিলেন যে, তারা ‘দ্রাক্ষালতা, ডুমুর গাছ ও দাড়িম্বের’ এক দেশে বাস করবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৮) বেকার এনসাইক্লোপিডিয়া অভ্‌ বাইবেল প্ল্যান্টস অনুসারে, “প্রাচীন প্যালেস্টাইনে এত প্রচুর পরিমাণে দ্রাক্ষালতা ছিল যে, খনন করা এলাকার সব জায়গায় না হলেও অধিকাংশ জায়গাতেই দ্রাক্ষাফলের বিচি পাওয়া গিয়েছে।” প্রতিজ্ঞাত দেশের দ্রাক্ষালতা এত বেশি উৎপাদনশীল ছিল যে, এমনকি সা.কা.পূ. ৬০৭ সালের মধ্যে যখন নবূখদ্‌নিৎসরের সৈন্যবাহিনী যিহূদাকে ধ্বংস করেছিল, তখন সেই দেশে বিদ্যমান অবশিষ্ট লোকেরা “অপর্য্যাপ্ত দ্রাক্ষারস ও গ্রীষ্মের ফল সঞ্চয় করিতে লাগিল।”—যিরমিয় ৪০:১২; ৫২:১৬.

পর্যাপ্ত পরিমাণ দ্রাক্ষারস উৎপাদনের জন্য ইস্রায়েলীয় কৃষকদের তাদের দ্রাক্ষালতার খুব ভালভাবে যত্ন নিতে হতো। যিশাইয়ের বইটি বর্ণনা করে যে, কীভাবে একজন আদর্শ ইস্রায়েলীয় দ্রাক্ষাপালক তার “উত্তম দ্রাক্ষালতা” রোপণ করার আগে পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত জমি খোঁড়েন এবং বড় বড় পাথরগুলোকে সরিয়ে ফেলেন। এরপর তিনি হয়তো মাটি থেকে সরিয়ে ফেলা পাথরগুলো দিয়ে একটা বেড়া বা দেওয়াল তৈরি করেন। এই দেওয়াল তার দ্রাক্ষাক্ষেত্রকে গবাদি পশুদের দ্বারা দলিত হওয়া থেকে ও সেইসঙ্গে শিয়াল, বুনো শূকর এবং চোরদের হাত থেকে কিছুটা সুরক্ষা জোগায়। এ ছাড়া, তিনি হয়তো এক দ্রাক্ষাকুণ্ড খোঁড়েন এবং একটা ছোট দুর্গ নির্মাণ করেন, যেটা শস্যচ্ছেদনের সময় যখন দ্রাক্ষালতাগুলোকে পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তখন এক শীতল মনোরম আশ্রয় হিসেবে কাজে লাগে। শুরুর দিকে করা এই সমস্ত কাজের পর, তিনি দ্রাক্ষাফলের উত্তম ফলন আশা করতে পারতেন।—যিশাইয় ৫:১, ২. *

ফলন যাতে উত্তম হয় সেইজন্য কৃষক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নিয়মিতভাবে দ্রাক্ষালতাগুলোকে ছেঁটে দিতেন এবং আগাছা, কাঁটাগাছের ঝোপ ও কাঁটাবন না হওয়ার জন্য মাটিকে আলগা করতেন। বসন্তকালের বৃষ্টি যদি মাটিকে যথেষ্ট আর্দ্র না করত, তা হলে তিনি হয়তো গরমের মাসগুলোতে দ্রাক্ষাক্ষেত্রে জল দিতেন।—যিশাইয় ৫:৬; ১৮:৫: ২৭:২-৪.

গ্রীষ্মের শেষে দ্রাক্ষা ছেদনের সময়টা ছিল অত্যন্ত আনন্দের এক সময়। (যিশাইয় ১৬:১০) তিনটে গীতে শীর্ষলিখন রয়েছে, যাতে “স্বর, গিত্তীৎ” এই বাক্যাংশটি অন্তর্ভুক্ত। (গীতসংহিতা ৮, ৮১ এবং ৮৪ অধ্যায়) সংগীত সংক্রান্ত এই অনিশ্চিত অভিব্যক্তিকে সেপ্টুয়াজিন্ট সংস্করণে “দ্রাক্ষাকুণ্ড” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে আর এটা ইঙ্গিত করতে পারে যে, ইস্রায়েলীয়রা দ্রাক্ষা ছেদনের সময় এই গীতগুলো গাইত। যদিও দ্রাক্ষাফল মূলত দ্রাক্ষারস তৈরির জন্য ব্যবহার করা হতো কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা টাটকা দ্রাক্ষাফলও খেত বা সেগুলোকে শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করত, যেগুলো দিয়ে হয়তো তারা পিঠা বানাত।—২ শমূয়েল ৬:১৯; ১ বংশাবলি ১৬:৩.

ইস্রায়েলের দ্রাক্ষালতা

বেশ কয়েক বার বাইবেল ঈশ্বরের লোকেদের দ্রাক্ষালতা হিসেবে বর্ণনা করে—ইস্রায়েলীয়দের কাছে দ্রাক্ষালতার গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এক উপযুক্ত উপমা। গীতসংহিতা ৮০ অধ্যায়ে আসফ ইস্রায়েল জাতিকে এমন এক দ্রাক্ষালতার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যেটাকে যিহোবা কনান দেশে রোপণ করেছিলেন। সেই দেশকে পরিষ্কার করা হয়েছিল, যাতে ইস্রায়েলের দ্রাক্ষালতা সেখানে শিকড় ছড়াতে পারে ও শক্তিশালী হতে পারে। কিন্তু, বছর গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর সুরক্ষামূলক দেওয়ালগুলো ভেঙে পড়েছিল। সেই জাতি আর যিহোবার ওপর নির্ভর করেনি এবং তিনি তাদেরকে আর সুরক্ষা প্রদান করেননি। এক বুনো শূকর যেমন দ্রাক্ষাক্ষেত্রকে লণ্ডভণ্ড করে, তেমনই শত্রু জাতিগুলো ইস্রায়েলের সম্পদকে গ্রাস করে চলেছিল। আসফ প্রার্থনা করেছিলেন যেন যিহোবা সেই জাতিকে সাহায্য করেন, যাতে এই জাতির পূর্বের গৌরব পুনর্স্থাপিত হয়। “এই দ্রাক্ষালতার তত্ত্ব কর” বা যত্ন নাও, তিনি এই সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছিলেন।—গীতসংহিতা ৮০:৮-১৫.

যিশাইয় ‘ইস্রায়েল-কুলকে’ এমন এক দ্রাক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যা ধীরে ধীরে “বুনো আঙ্গুর” বা দুর্গন্ধময় (পচা) দ্রাক্ষাফল উৎপন্ন করেছিল। (যিশাইয় ৫:২, ৭) বুনো আঙুর, চাষ করা আঙুরের চেয়ে বেশ ছোট এবং তাতে খুব কম শাঁস থাকে, পুরো আঙুরই বিচিতে ভরা। বুনো আঙুর দিয়ে দ্রাক্ষারস তৈরি করা যায় না বা সেগুলো খাওয়াও যায় না—এক ধর্মভ্রষ্ট জাতির জন্য এক উপযুক্ত প্রতীক, যার মধ্যে ধার্মিকতার পরিবর্তে অধর্মের ফল ধরে। এই বাজে ফল দ্রাক্ষালতার কৃষকের ভুলের কারণে হয়নি। যিহোবা সেই জাতিকে ফলবতী করার জন্য যথাসম্ভব সমস্তকিছুই করেছিলেন। “আমার দ্রাক্ষাক্ষেত্রের প্রতি এমন আর কি করিতে পারা যাইত, যাহা আমি করি নাই?” তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন।—যিশাইয় ৫:৪.

যেহেতু ইস্রায়েলের দ্রাক্ষালতা অনুর্বর প্রমাণিত হয়েছিল, তাই যিহোবা তাদের সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর লোকেদের চারিদিকে যে-সুরক্ষামূলক দেওয়াল নির্মাণ করেছিলেন, সেটা তিনি ভেঙে ফেলবেন। তিনি তাঁর রূপক দ্রাক্ষালতাগুলোকে আর ছেঁটে দেবেন না বা এর মাটিকে আলগা করবেন না। যে-বৃষ্টির ওপর শস্যের ফলন নির্ভর করত, সেই বসন্তের বৃষ্টি আর হবে না এবং দ্রাক্ষাক্ষেত্র কাঁটাবন ও আগাছায় ভরে যাবে।—যিশাইয় ৫:৫, ৬.

মোশি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ইস্রায়েলের ধর্মভ্রষ্টতা এমনকি তাদের আক্ষরিক দ্রাক্ষাক্ষেত্রগুলোকেও শুকিয়ে ফেলবে। “তুমি দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার পাইট করিবে, কিন্তু দ্রাক্ষারস পান করিতে কি দ্রাক্ষাফল চয়ন করিতে পাইবে না; কেননা কীটে তাহা খাইয়া ফেলিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:৩৯) দ্রাক্ষালতার প্রধান কাণ্ডের মধ্যে যদি একটা কীট ঢোকে ও ভিতরের অংশটা খেয়ে ফেলে, তা হলে একটা দ্রাক্ষালতা কয়েক দিনের মধ্যে শুকিয়ে যেতে পারে।—যিশাইয় ২৪:৭.

“প্রকৃত দ্রাক্ষালতা”

ঠিক যেমন যিহোবা আক্ষরিক ইস্রায়েলকে এক দ্রাক্ষালতার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, তেমনই যিশুও অনুরূপ এক উপমা ব্যবহার করেছিলেন। সাধারণত শেষ ভোজ নামে পরিচিত ঘটনার সময় যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “আমি প্রকৃত দ্রাক্ষালতা, এবং আমার পিতা কৃষক।” (যোহন ১৫:১) যিশু তাঁর শিষ্যদের দ্রাক্ষালতার শাখার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। একটা আক্ষরিক দ্রাক্ষালতার শাখাগুলো যেমন এর প্রধান কাণ্ড থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, তেমনই খ্রিস্টের শিষ্যদের তাঁর সঙ্গে থাকতে হবে, যাতে আধ্যাত্মিক শক্তি সংগ্রহ করতে পারে। “আমা ভিন্ন তোমরা কিছুই করিতে পার না,” যিশু বলেছিলেন। (যোহন ১৫:৫) কৃষকরা ফলের জন্য দ্রাক্ষালতার চাষ করে আর যিহোবা আশা করেন যে, তাঁর লোকেরা আধ্যাত্মিক ফল উৎপন্ন করবে। এটা দ্রাক্ষালতার কৃষক ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট ও মহিমান্বিত করে।—যোহন ১৫:৮.

এক আক্ষরিক দ্রাক্ষালতার ফলপ্রসূতা নির্ভর করে ছেঁটে দেওয়া ও পরিষ্কার করার ওপর আর যিশু এই দুটো কাজের বিষয়ই উল্লেখ করেন। একজন দ্রাক্ষাপালক সর্বাধিক ফল সংগ্রহ করার জন্য হয়তো বছরে দুবার দ্রাক্ষালতাগুলোকে ছেঁটে দেন। শীতের মাসগুলোতে, দ্রাক্ষালতার অনেক শাখাকেই হয়তো কেটে ফেলা হয়ে থাকে। কৃষক আগের বছরের অধিকাংশ শাখাই বাদ দিয়ে দেন। তিনি সম্ভবত কাণ্ডে তিনটে বা চারটে মূল শাখাই রেখে দেন, যেগুলোর প্রতিটা শাখায় একটা বা দুটো কচি ডগা রয়েছে। আগের বছরের ডগাগুলোর অনুরূপ এই কচি ডগাগুলো পরের গ্রীষ্মের সময় ফল উৎপাদনকারী শাখা হয়ে উঠবে। শেষ পর্যন্ত, শাখাগুলো ছেঁটে ফেলার কাজ যখন শেষ হয়, তখন দ্রাক্ষাপালক ছেঁটে ফেলা শাখাগুলোকে পুড়িয়ে দেন।

অধিকমাত্রায় ছেঁটে ফেলা শাখাগুলো সম্বন্ধে যিশু এভাবে বর্ণনা করেন: “কেহ যদি আমাতে না থাকে, তাহা হইলে শাখার ন্যায় তাহাকে বাহিরে ফেলিয়া দেওয়া যায় ও সে শুকাইয়া যায়; এবং লোকে সেগুলি কুড়াইয়া আগুনে ফেলিয়া দেয়, আর সে সকল পুড়িয়া যায়।” (যোহন ১৫:৬) এই অবস্থায় দ্রাক্ষালতাকে দেখে যদিও শাখাহীন মনে হতে পারে কিন্তু বসন্তকালে এগুলোকে আরেকবার ছেঁটে ফেলা হয়।

“আমাতে স্থিত যে কোন শাখায় ফল না ধরে, তাহা তিনি কাটিয়া ফেলিয়া দেন,” যিশু বলেছিলেন। (যোহন ১৫:২) এটা দ্বিতীয়বার ছেঁটে ফেলার সময়কে হয়তো উল্লেখ করে, যখন সেই দ্রাক্ষালতা প্রচুর পরিমাণ নতুন শাখা উৎপন্ন করে এবং যখন দ্রাক্ষাফলের ছোট ছোট থোকাকে স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা যায়। দ্রাক্ষাপালক খুব মনোযোগ দিয়ে প্রত্যেকটা নতুন শাখা পরীক্ষা করেন, যাতে কোন কোন শাখায় ফল ধরেছে এবং কোনগুলো নিষ্ফলা শাখা, তা আলাদা করতে পারেন। নিষ্ফলা শাখাগুলোকে যদি ছেঁটে ফেলা না হয়, তা হলে এগুলো কাণ্ড থেকে পুষ্টি ও জল শুঁষে নেবে। তাই, কৃষক এই নিষ্ফলা শাখাগুলোকে ছেঁটে ফেলেন, যাতে দ্রাক্ষালতার পুষ্টি শুধুমাত্র ফল উৎপাদনকারী শাখাগুলোতেই যায়।

শেষে যিশু দ্রাক্ষালতা পরিষ্কার করার প্রক্রিয়ার বিষয় উল্লেখ করেন। “যে কোন শাখায় ফল ধরে, তাহা পরিষ্কার করেন, যেন তাহাতে আরও অধিক ফল ধরে।” (যোহন ১৫:২) ফলহীন শাখাগুলোকে কেটে ফেলার পর, দ্রাক্ষাপালক প্রত্যেকটা ফল উৎপাদনকারী শাখাকে ভালভাবে পরীক্ষা করেন। ফল উৎপাদনকারী শাখার গোড়ায় তিনি প্রতিবারই ছোট ছোট নতুন কচি ডগা দেখতে পান, যেগুলোকেও ছেঁটে ফেলার প্রয়োজন হয়। সেগুলোকে যদি না ছেঁটে ফেলা হয়, তা হলে সেগুলো দ্রাক্ষালতা থেকে সেই রস শুষে নেবে, যে-রস হয়তো দ্রাক্ষাফলের জন্য অপরিহার্য আর্দ্রতা জোগাতো। একইভাবে, ছোট ছোট কচি দ্রাক্ষাফলগুলো যাতে ভালমতো সূর্যের আলো পেতে পারে, সেইজন্য কিছু বড় বড় পাতাকেও ছেঁটে ফেলতে হয়। ফল উৎপাদনকারী শাখাগুলো যাতে প্রচুর পরিমাণ ফল উৎপন্ন করতে পারে, সেইজন্য এই সমস্ত পদক্ষেপ খুবই সাহায্যকারী।

“তোমরা প্রচুর ফলে ফলবান্‌ হও”

‘প্রকৃত দ্রাক্ষালতার’ রূপক শাখাগুলো অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের চিত্রিত করে। তবে ‘আরও মেষদেরও’ প্রমাণ করতে হবে যে, তারা খ্রিস্টের ফল উৎপাদনকারী শিষ্য। (যোহন ১০:১৬) তারাও ‘প্রচুর ফল’ উৎপন্ন করতে এবং তাদের স্বর্গীয় পিতাকে মহিমান্বিত করতে পারে। (যোহন ১৫:৫, ৮) প্রকৃত দ্রাক্ষালতা সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্ত আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পরিত্রাণ নির্ভর করে খ্রিস্টের সঙ্গে আমাদের থাকা ও উত্তম আধ্যাত্মিক ফল উৎপন্ন করার ওপর। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আমার আজ্ঞা সকল পালন কর, তবে আমার প্রেমে অবস্থিতি করিবে, যেমন আমিও আমার পিতার আজ্ঞা সকল পালন করিয়াছি, এবং তাঁহার প্রেমে অবস্থিতি করিতেছি।”—যোহন ১৫:১০.

সখরিয়ের দিনে, ইস্রায়েলীদের এক বিশ্বস্ত অবশিষ্টাংশকে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, সেই দেশে আরও একবার “শান্তিযুক্ত বীজ হইবে, দ্রাক্ষালতা ফলবতী হইবে, ভূমি আপন শস্য উৎপন্ন করিবে।” (সখরিয় ৮:১২) খ্রিস্টের সহস্র বছরের রাজত্বের সময় ঈশ্বরের লোকেরা যে-শান্তি উপভোগ করবে, তা বর্ণনা করতে গিয়েও দ্রাক্ষালতা ব্যবহৃত হয়। মীখা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না; কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভুর মুখ ইহা বলিয়াছে।”—মীখা ৪:৪.

[পাদটীকা]

^ এনসাইক্লোপিডিয়া জুডাইকা অনুসারে, ইস্রায়েলীয় কৃষকরা সরেক নামে পরিচিত দ্রাক্ষালতাগুলো পছন্দ করত, যেগুলোতে লালচে-কালো দ্রাক্ষাফল ধরত আর এই ধরনের দ্রাক্ষালতার বিষয়ই যিশাইয় ৫:২ পদে উল্লেখ করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এই দ্রাক্ষাফলগুলো দিয়ে মিষ্টি লাল দ্রাক্ষারস তৈরি করা হতো।

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

সাম্প্রতিক শুকিয়ে যাওয়া দ্রাক্ষালতা

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

শীতকালীন ছেঁটে ফেলার কাজ

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেটে ফেলা শাখাগুলোকে পোড়ানো হচ্ছে