সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তোমার সাক্ষ্যকলাপ আমার হর্ষজনক”

“তোমার সাক্ষ্যকলাপ আমার হর্ষজনক”

“তোমার সাক্ষ্যকলাপ আমার হর্ষজনক”

“পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল।”—রোমীয় ১৫:৪.

১. যিহোবা কীভাবে আমাদের বিভিন্ন অনুস্মারক প্রদান করেন এবং কেন আমাদের সেগুলো প্রয়োজন?

 এই কঠিন সময়ের চাপগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করতে যিহোবা তাঁর লোকেদেরকে সাক্ষ্যকলাপ বা বিভিন্ন অনুস্মারক জুগিয়েছেন। এই ধরনের কিছু অনুস্মারক ব্যক্তিগত বাইবেল পাঠের সময় জোগানো হয়, আবার অন্যগুলো খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে তথ্য অথবা মন্তব্যের আকারে তুলে ধরা হয়। এই সময়গুলোতে আমরা যা পড়ি বা শুনি, সেগুলোর বেশির ভাগই আমাদের কাছে নতুন নয়। আমরা হয়তো একই তথ্য আগেও বিবেচনা করেছি। কিন্তু, যেহেতু আমাদের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাই যিহোবার বিভিন্ন উদ্দেশ্য, আইন ও নির্দেশনা সম্বন্ধে আমাদের স্মরণশক্তিকে সবসময় ঝালিয়ে নেওয়া উচিত। ঈশ্বরের দেওয়া বিভিন্ন অনুস্মারকের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। এগুলো আমাদেরকে সেই কারণগুলোর প্রতি মনোযোগী হতে সাহায্য করার মাধ্যমে উৎসাহিত করে থাকে, যেগুলো আমাদের ঈশ্বরীয় জীবনধারা গ্রহণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। এই কারণে, গীতরচক যিহোবার উদ্দেশে গেয়েছিলেন: “তোমার সাক্ষ্যকলাপ আমার হর্ষজনক।”—গীতসংহিতা ১১৯:২৪.

২, ৩. (ক) কেন যিহোবা বাইবেলের চরিত্রের জীবনকাহিনী আমাদের দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রেখেছেন? (খ) এই প্রবন্ধে শাস্ত্রের কোন ঘটনাগুলো বিবেচনা করা হবে?

শত শত বছর আগে লেখা সত্ত্বেও, ঈশ্বরের বাক্য কার্যসাধক। (ইব্রীয় ৪:১২) এটি বাইবেলের বিভিন্ন চরিত্রের জীবনী সম্বন্ধে সত্য ঘটনাগুলো তুলে ধরে। যদিও বাইবেলের সময় থেকে বিভিন্ন প্রথা এবং দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে কিন্তু আমাদের যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়, সেগুলো প্রায়ই সেই সময়ের মতো একই। বাইবেলের যে-কাহিনীগুলো আমাদের উপকারের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই সেই ব্যক্তিদের মর্মস্পর্শী উদাহরণগুলো তুলে ধরে, যারা যিহোবাকে ভালবাসত এবং বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করে গিয়েছিল। অন্য ঘটনাগুলো সেই আচরণগুলোকে চিহ্নিত করে, যেগুলোকে ঈশ্বর ঘৃণা করেন। যিহোবা ভাল ও মন্দ এইসমস্ত ব্যক্তিগত ঘটনাগুলো অনুস্মারক হিসেবে বাইবেলে লিপিবদ্ধ করিয়েছেন। এটা প্রেরিত পৌলের দ্বারা লিখিত এই কথাগুলোর অনুরূপ: “পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল, যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।”—রোমীয় ১৫:৪.

আসুন আমরা শাস্ত্রের তিনটে ঘটনার প্রতি মনোযোগ দিই: শৌলের সঙ্গে দায়ূদের আচরণের ঘটনা, অননিয় ও সাফীরার ঘটনা এবং পোটীফরের স্ত্রীর সঙ্গে যোষেফের আচরণের ঘটনা। এই প্রত্যেকটা কাহিনী আমাদেরকে বিভিন্ন মূল্যবান শিক্ষা দিয়ে থাকে।

ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য

৪, ৫. (ক) রাজা শৌল ও দায়ূদের মধ্যে কোন পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল? (খ) শৌলের শত্রুতার প্রতি দায়ূদ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

রাজা শৌল যিহোবার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁর লোকেদের ওপর শাসন করার ক্ষেত্রে নিজেকে অযোগ্য প্রমাণ করেছিলেন। তাই, ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেছিলেন এবং ইস্রায়েলের ভাবী রাজা হিসেবে দায়ূদকে অভিষিক্ত করার জন্য ভাববাদী শমূয়েলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। দায়ূদ যখন একজন যোদ্ধা হিসেবে অসাধারণ দক্ষতা ও সাহস দেখিয়েছিলেন এবং লোকেদের কাছ থেকে প্রশংসা লাভ করেছিলেন, তখন শৌল দায়ূদকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে শুরু করেছিলেন। শৌল বার বার তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, প্রতিবারই দায়ূদ রক্ষা পেয়েছিলেন কারণ যিহোবা তার সহবর্তী ছিলেন।—১ শমূয়েল ১৮:৬-১২, ২৫; ১৯:১০, ১১.

কয়েক বছর ধরে দায়ূদ একজন পলাতক হিসেবে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। দায়ূদের যখন শৌলকে হত্যা করার বিভিন্ন সুযোগ এসেছিল, তখন তার সঙ্গীরা তাকে এই ধরনের কথা বলে তা করার জন্য জোর করেছিল যে, যিহোবা দায়ূদের শত্রুকে তার হাতে সমর্পণ করেছেন। তা সত্ত্বেও, দায়ূদ তা করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যিহোবার প্রতি তার আনুগত্য ও ঈশ্বরের লোকেদের ওপর মনোনীত রাজা হিসেবে শৌলের অবস্থানের প্রতি তার সম্মানই তাকে এভাবে কাজ করতে পরিচালিত করেছিল। যিহোবাই কি শৌলকে ইস্রায়েলের রাজা হিসেবে মনোনীত করেননি? তাই, যিহোবাই তাকে অপসারণ করবেন, যখন তিনি তা করা উপযুক্ত বলে মনে করবেন। দায়ূদ যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তার নেই। এই পরিস্থিতিগুলোতে তার প্রতি শৌলের শত্রুতাকে কমানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করার পর, দায়ূদ এই উপসংহার করেছিলেন: “সদাপ্রভুই উহাঁকে আঘাত করিবেন, কিম্বা উহাঁর দিন উপস্থিত হইলে উনি মরিবেন, কিম্বা সংগ্রামে গিয়া হত হইবেন। আমি যে সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে হস্ত বিস্তার করি, সদাপ্রভু এমন না করুন।”—১ শমূয়েল ২৪:৩-১৫; ২৬:৭-২০.

৬. কেন দায়ূদ ও শৌলের কাহিনী আমাদের কাছে আগ্রহজনক?

এই ঘটনার মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। আপনি কি কখনো নিজেকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছেন যে, কেন মণ্ডলীতে কিছু সমস্যা দেখা দেয়? এটা হতে পারে, একজন ব্যক্তি হয়তো এমনভাবে আচরণ করছেন, যা ঠিক নয়। তার আচরণ হয়তো কোনো গুরুতর অপরাধ নয় কিন্তু এতে আপনি বিরক্ত হয়েছেন। আপনার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত? আপনার সেই খ্রিস্টান ভাইয়ের প্রতি বিবেচনা দেখাতে চান বলে এবং যিহোবার প্রতি আনুগত্যের কারণে আপনি হয়তো সেই ব্যক্তিকে জয় করার লক্ষ্য নিয়ে তার সঙ্গে সদয়ভাবে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু, সমস্যা যদি থেকেই যায়, তা হলে কী? যুক্তিযুক্তভাবে আপনার যথাসাধ্য করার পর, আপনি হয়তো বিষয়টা যিহোবার হাতে ছেড়ে দিতে চাইবেন। দায়ূদ ঠিক তা-ই করেছিলেন।

৭. আমরা যদি অবিচার অথবা ধর্মীয় ভেদাভেদ ভোগ করি, তা হলে দায়ূদকে অনুকরণ করে আমাদের কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?

অথবা আপনি হয়তো সামাজিক অবিচার বা ধর্মীয় ভেদাভেদের মতো সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে পারেন। সম্ভবত এই মুহূর্তে আপনার এই ব্যাপারে সামান্যই করার আছে অথবা কিছুই করার নেই। এইরকম এক পরিস্থিতি সহ্য করা অনেক কঠিন হতে পারে কিন্তু অবিচারের প্রতি দায়ূদের প্রতিক্রিয়া আমাদেরকে একটা শিক্ষা প্রদান করে। দায়ূদ যে-গীতগুলো লিখেছেন, তা কেবল শৌলের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা থেকে তাকে দূরে রাখার জন্য ঈশ্বরের কাছে আন্তরিক প্রার্থনাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে যিহোবার প্রতি তার দয়া বা আনুগত্যের এবং ঈশ্বরের নামের মহিমার জন্য তাঁর চিন্তারও এক মর্মস্পর্শী বিবরণ। (গীতসংহিতা ১৮:১-৬, ২৫-২৭, ৩০-৩২, ৪৮-৫০; ৫৭:১-১১) শৌল অনেক বছর ধরে দায়ূদের সঙ্গে অন্যায্য উপায়ে আচরণ করে যাওয়া সত্ত্বেও দায়ূদ যিহোবার প্রতি অনুগত ছিলেন। আমরা যে-অবিচারই ভোগ করি না কেন এবং অন্যেরা যা-ই করুক না কেন, আমাদেরও যিহোবা ও তাঁর সংগঠনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা উচিত। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের পরিস্থিতি সম্বন্ধে পুরোপুরি অবগত আছেন।—গীতসংহিতা ৮৬:২.

৮. যিহোবার প্রতি যখন তাদের আনুগত্য পরীক্ষিত হয়েছিল, তখন মোজাম্বিকের যিহোবার সাক্ষিরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

মোজাম্বিকের খ্রিস্টানরা হল সেই ব্যক্তিদের কিছু আধুনিক উদাহরণ, যারা পরীক্ষার সময় অনুগতভাবে যিহোবার প্রতি আসক্ত ছিল। ১৯৮৪ সালে, তাদের গ্রামের ওপর প্রতিরোধ আন্দোলনের সশস্ত্র সদস্যরা বার বার আকস্মিক আক্রমণ চালিয়েছিল, যারা ডাকাতি করত, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিত এবং হত্যা করত। নিজেদের রক্ষা করার জন্য এই সত্য খ্রিস্টানদের তেমন কিছুই করার ছিল না বলে মনে হয়েছিল। সেই এলাকার অধিবাসীদেরকে জঙ্গি আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য অথবা অন্য কোনো উপায়ে এটাকে সমর্থন করার জন্য জোর করা হয়েছিল। তা করাকে যিহোবার সাক্ষিরা তাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার অবস্থান অনুযায়ী অসংগত বলে মনে করেছিল। তারা প্রত্যাখ্যান করায় সেই আন্দোলন আরও প্রবল হয়ে উঠেছিল। যদিও সেই অশান্ত সময়ে প্রায় ৩০ জন সাক্ষিকে হত্যা করা হয়েছিল কিন্তু এমনকি মৃত্যুর হুমকিও ঈশ্বরের লোকেদের আনুগত্যকে ভাঙতে পারেনি। * দায়ূদের মতো তারা অবিচার সহ্য করেছিল কিন্তু অবশেষে জয়ী হয়েছিল।

এক সতর্কতামূলক অনুস্মারক

৯, ১০. (ক) কীভাবে আমরা নির্দিষ্ট কিছু শাস্ত্রীয় উদাহরণ থেকে উপকার লাভ করতে পারি? (খ) অননিয় ও সাফীরার কাজের মধ্যে ভুল কী ছিল?

শাস্ত্রে উল্লেখিত কিছু ব্যক্তি বিশেষ সেই আচরণ সম্বন্ধে সতর্কতামূলক অনুস্মারক জুগিয়ে থাকে, যা আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। বস্তুতপক্ষে, বাইবেলে এমন অনেক লোকের ঘটনা রয়েছে, এমনকি ঈশ্বরের দাসদের মধ্যেও কেউ কেউ রয়েছে, যারা অন্যায় করে তার পরিণতি ভোগ করেছে। (১ করিন্থীয় ১০:১১) এইরকম একটা ঘটনা হল অননিয় ও সাফীরা নামে এক বিবাহিত দম্পতির ঘটনা, যারা প্রথম শতাব্দীতে যিরূশালেম মণ্ডলীর সদস্য ছিল।

১০ সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের পর, সেইসমস্ত নতুন বিশ্বাসীকে বস্তুগত সাহায্য দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল, যারা প্রেরিতদের সাহচর্য থেকে উপকার লাভ করার জন্য যিরূশালেমে রয়ে গিয়েছিল। মণ্ডলীর কিছু সদস্য তাদের জায়গাসম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিল, যাতে কারো অভাব না থাকে। (প্রেরিত ২:৪১-৪৫) অননিয় ও সাফীরা একটা জমি বিক্রি করে সেই টাকার কিছু অংশ এনে প্রেরিতদের দিয়ে এই দাবি করেছিল যে, বিক্রির সমস্ত টাকাই তারা দান হিসেবে দিয়েছে। এটা ঠিক যে, অননিয় ও সাফীরার তাদের ইচ্ছেমতো বেশি বা কম দেওয়ার অধিকার ছিল কিন্তু তাদের মনোভাব ভুল ছিল এবং তাদের কাজ অসৎ ছিল। তারা উত্তম ধারণা দিতে চেয়েছিল এবং যতটা না করেছিল, তার চেয়ে বেশি দেখাতে চেয়েছিল। পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় প্রেরিত পিতর তাদের অসততা ও কপটতা প্রকাশ করে দিয়েছিলেন আর যিহোবা তাদেরকে আঘাত করেছিলেন।—প্রেরিত ৫:১-১০.

১১, ১২. (ক) সততা সম্বন্ধে কিছু অনুস্মারক কী? (খ) সৎ হলে কোন উপকারগুলো আসে?

১১ লোকেদেরকে আমাদের সম্বন্ধে ভাল ধারণা দেওয়ার প্রচেষ্টায় আমরা যদি কখনো সত্যকে বিকৃত করার জন্য প্রলোভিত হই, তা হলে অননিয় ও সাফীরার কাহিনী যেন আমাদের জন্য এক জোরালো অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। আমরা হয়তো সহমানবদের প্রতারিত করতে পারি কিন্তু যিহোবাকে নয়। (ইব্রীয় ৪:১৩) শাস্ত্র বার বার আমাদেরকে পরস্পরের প্রতি সৎ হওয়ার জোরালো পরামর্শ দেয় কারণ অধার্মিকতাহীন এক পৃথিবীতে মিথ্যাবাদীদের কোনো স্থান থাকবে না। (হিতোপদেশ ১৪:২; প্রকাশিত বাক্য ২১:৮; ২২:১৫) এর কারণ সম্বন্ধে আমাদের স্পষ্ট হওয়া উচিত। সমস্ত অসত্যের উদ্যোক্তা শয়তান দিয়াবল ছাড়া আর কেউই নয়।—যোহন ৮:৪৪.

১২ সৎ জীবনযাপন করা আমাদের জন্য অনেক উপকার নিয়ে আসে। এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল, এক শুদ্ধ বিবেক এবং অন্যদের নির্ভরতা অর্জন করার পরিতৃপ্তি। অনেক ক্ষেত্রে খ্রিস্টানরা সৎ বলে চাকরি পেয়েছে অথবা তাদের চাকরি ধরে রাখতে পেরেছে। কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকার হল, সততার কারণে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বন্ধুত্ব লাভ করা যায়।—গীতসংহিতা ১৫:১, ২.

শুদ্ধতা বজায় রাখা

১৩. যোষেফ কোন পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন এবং তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

১৩ কুলপতি যাকোবের ছেলে যোষেফকে ১৭ বছর বয়সে দাসত্ব করার জন্য বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তিনি মিশরের রক্ষক সেনাপতি পোটীফরের বাড়িতে কাজ করেন, যেখানে যোষেফের প্রতি তার প্রভুর স্ত্রীর মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছিল। তিনি সুদর্শন যুবক যোষেফের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন এবং দিনের পর দিন তাকে এই কথা বলে জোরাজুরি করেই গিয়েছিলেন: “আমার সহিত শয়ন কর।” যোষেফ তার পরিবার থেকে অনেক দূরে এমন একটা দেশে ছিলেন, যেখানে কেউই তাকে চিনত না। তিনি সহজেই অন্য লোকেদের অগোচরে এই মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারতেন। কিন্তু, পোটীফরের স্ত্রী অবশেষে যখন তাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন, তখন যোষেফ পালিয়ে গিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ৩৭:২, ১৮-২৮; ৩৯:১-১২.

১৪, ১৫. (ক) কেন যোষেফের কাহিনী আমাদের কাছে আগ্রহজনক? (খ) কেন একজন খ্রিস্টান মহিলা ঈশ্বরের অনুস্মারকের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিল বলে কৃতজ্ঞ?

১৪ যোষেফ এক ঈশ্বরভয়শীল পরিবারে বড় হয়েছিলেন এবং তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, একে অন্যের স্বামী ও স্ত্রী নয় এমন লোকেদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক করা অন্যায়। “আমি কিরূপে এই মহা দুষ্কর্ম্ম করিতে ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করিতে পারি?” তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন। তার এই উপসংহার সম্ভবত এদনে প্রকাশিত মানুষের জন্য ঈশ্বরের মান অর্থাৎ একবিবাহ সম্বন্ধে জ্ঞানের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। (আদিপুস্তক ২:২৪) সেই পরিস্থিতিতে যোষেফ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর মাধ্যমে আজকে ঈশ্বরের লোকেরা উপকার পেতে পারে। কিছু কিছু জায়গায়, যৌনসম্পর্ক সম্বন্ধে লোকেদের মনোভাব এতটাই প্রশ্রয়ী যে, যে-অল্পবয়স্করা অনৈতিকতায় জড়িত হওয়া প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে সঙ্গীরা উপহাস করে। বিয়ের বাইরে যৌনসম্পর্ক করা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে খুবই সাধারণ। তাই, যোষেফের কাহিনী আমাদের জন্য সময়োপযোগী অনুস্মারক। ঈশ্বরের মান অনুযায়ী, ব্যভিচার ও পারদারিকতা এখনও পাপ। (ইব্রীয় ১৩:৪) অবৈধ যৌনসম্পর্কে রত হওয়ার চাপের মুখে নতিস্বীকার করেছে এমন অনেকে একমত যে, তা না করার অনেক দৃঢ়প্রত্যয় উৎপাদনকারী যুক্তি রয়েছে। অবাঞ্ছিত পরিণামগুলোর মধ্যে থাকতে পারে মর্যাদাহানি, দোষী বিবেক, ঈর্ষা, গর্ভবতী হওয়া এবং যৌনবাহিত রোগব্যাধি। শাস্ত্র যেমন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যে-ব্যক্তি ব্যভিচার করে চলে, সে “নিজ দেহের বিরুদ্ধে পাপ করে।”—১ করিন্থীয় ৫:৯-১২; ৬:১৮; হিতোপদেশ ৬:২৩-২৯, ৩২.

১৫ ঈশ্বরের অনুস্মারকের জন্য জেনি * নামে অবিবাহিত এক যিহোবার সাক্ষির কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণ রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে একজন সুদর্শন সহকর্মী তার প্রতি রোমান্টিক আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। জেনি যখন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি, তখন সেই সহকর্মী তার মনোযোগকে আকৃষ্ট করার জন্য আরও প্রচেষ্টা করেছিলেন। “শুদ্ধ থাকার জন্য আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে,” জেনি স্বীকার করেন, “কারণ বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তি যখন আপনার দিকে মনোযোগ দেয়, তখন তা আগ্রহের সৃষ্টি করে থাকে।” কিন্তু, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই ব্যক্তি কেবল সেই মহিলাদের সংখ্যার মধ্যে তাকে যোগ করার চেষ্টা করছিলেন, যাদের সঙ্গে তার যৌনসম্পর্ক হয়েছিল। প্রতিরোধ করার জন্য তার সংকল্পের ক্ষেত্রে তিনি যখন নিজেকে দুর্বল মনে করতেন, তখন তিনি বিশ্বস্ত থাকার জন্য তাকে সাহায্য করতে যিহোবার কাছে বিনতি জানিয়েছিলেন। জেনি দেখেছিল যে, বাইবেল ও খ্রিস্টীয় প্রকাশনাদি গবেষণা করে তিনি যা শিখেছিলেন, সেগুলো ছিল এমন অনুস্মারকের মতো যা তাকে সতর্ক রাখার জন্য উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছিল। সেই অনুস্মারকগুলোর মধ্যে একটা ছিল যোষেফ ও পোটীফরের স্ত্রীর কাহিনী। “যতদিন আমি ক্রমাগত নিজেকে মনে করিয়ে দেব যে, যিহোবাকে আমি কতটা ভালবাসি” তিনি উপসংহারে বলেন, “আমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই যে, আমি তাঁর বিরুদ্ধে এই মহা দুষ্কর্ম ও পাপ করব।”

ঈশ্বরের অনুস্মারকের প্রতি মনোযোগ দিন!

১৬. বাইবেলে উল্লেখিত ব্যক্তি বিশেষের জীবনী সম্বন্ধে পুনরালোচনা ও ধ্যান করে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?

১৬ কেন যিহোবা আমাদের জন্য কিছু ঘটনা শাস্ত্রে সংরক্ষিত করে রেখেছেন, তা বোঝার চেষ্টা করার মাধ্যমে আমরা সকলে যিহোবার মানগুলোর প্রতি আমাদের উপলব্ধি বাড়াতে পারি। সেগুলো আমাদের কী শিক্ষা দেয়? বাইবেলের চরিত্রগুলোর মাধ্যমে দৃষ্টান্তস্বরূপ তুলে ধরা কোন কোন গুণ অথবা প্রবণতা আমাদের অনুকরণ করতে হবে অথবা এড়িয়ে চলতে হবে? আক্ষরিকভাবে, শত শত ব্যক্তির ঘটনা ঈশ্বরের বাক্যে লিপিবদ্ধ রয়েছে। যারা ঐশিক নির্দেশনা ভালবাসে, তাদের সকলের জীবনদায়ী প্রজ্ঞার প্রতি ও সেইসঙ্গে যিহোবা যত্নের সঙ্গে যে-উদাহরণগুলো সংরক্ষণ করে রেখেছেন, সেগুলো থেকে আমরা যে-শিক্ষা লাভ করতে পারি, সেগুলোর প্রতি আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত। এই পত্রিকায় প্রায়ই সেই ব্যক্তি বিশেষদের সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রবন্ধ তুলে ধরা হয়েছে, যাদের কাহিনী আমাদেরকে কোনো না কোনো শিক্ষা দেয়। সেগুলো পুনরালোচনা করার জন্য সময় করে নিন না কেন?

১৭. যিহোবার অনুস্মারক সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন এবং কেন?

১৭ যিহোবার সেই প্রেমময় চিন্তার জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি, যা তিনি সেই ব্যক্তিদের প্রতি দেখান, যারা তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে! নিশ্চিতভাবেই আমরা সিদ্ধ নই ঠিক যেমন বাইবেলে উল্লেখিত নারী ও পুরুষরা সিদ্ধ ছিল না। কিন্তু, তাদের কাজের লিখিত বিবরণ আমাদের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। যিহোবার অনুস্মারকের প্রতি মনোযোগ দিয়ে আমরা গুরুতর ভুলগুলো এড়াতে পারি এবং সেই ব্যক্তিদের উত্তম উদাহরণগুলো অনুকরণ করতে পারি, যারা ধার্মিকতার পথে চলত। আমরা যদি তা করি, তা হলে গীতরচকের সঙ্গে এই গান গাইতে পারব: “ধন্য তাহারা, যাহারা [সদাপ্রভুর] সাক্ষ্যকলাপ পালন করে; যাহারা সর্ব্বান্তঃকরণে তাঁহার অন্বেষণ করে। আমার প্রাণ তোমার সাক্ষ্যকলাপ পালন করিয়াছে, আমি সে সকল অতিশয় ভালবাসি।”—গীতসংহিতা ১১৯:২, ১৬৭.

[পাদটীকা]

^ যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ১৯৯৬ (ইংরেজি) এর ১৬০-২ পৃষ্ঠা দেখুন।

^ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• শৌলের প্রতি দায়ূদের মনোভাব থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

• অননিয় ও সাফীরার ঘটনা আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

• যোষেফের জীবনকাহিনী কেন আজকে বিশেষ আগ্রহের বিষয়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেন দায়ূদ শৌলকে হত্যা করা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন?

[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

অননিয় ও সাফীরার ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

কী যোষেফকে অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে সাহায্য করেছিল?