সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অল্পবয়স্করা, যিহোবাকে সেবা করা বেছে নাও

অল্পবয়স্করা, যিহোবাকে সেবা করা বেছে নাও

অল্পবয়স্করা, যিহোবাকে সেবা করা বেছে নাও

“যাহার সেবা করিবে, তাহাকে অদ্য মনোনীত কর।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৫.

১, ২. খ্রিস্টীয়জগতের মধ্যে কোন ধরনের ভুল বাপ্তিস্ম চালু রয়েছে?

 “যখন [ছোট ছেলেমেয়েরা] খ্রিস্টকে জানতে সমর্থ হয়, তখন তাদেরকে খ্রিস্টান হতে দিন।” সা.কা.পূ. দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষের দিকে টারটুলিয়ান নামে একজন লেখক এই কথাগুলো লিখেছিলেন। তিনি শিশু বাপ্তিস্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন, যে-রীতি তার দিনের ধর্মভ্রষ্ট খ্রিস্টধর্মের মধ্যে দৃঢ়ভাবে গেঁথে যাচ্ছিল। টারটুলিয়ান ও বাইবেলের বৈসাদৃশ্যে, গির্জার ফাদার অগাস্টিন দাবি করেছিলেন যে, বাপ্তিস্ম আদি পাপের কলঙ্ক দূর করে দেয় এবং যে-শিশুরা অবাপ্তাইজিত অবস্থায় মারা যায়, তারা নরকদণ্ড ভোগ করে। সেই বিশ্বাসই শিশুদের জন্মের পর পর যত শীঘ্রই সম্ভব তাদেরকে বাপ্তিস্ম দেওয়ার রীতি চালু করে।

খ্রিস্টীয়জগতের অনেক বড় বড় গির্জা এখনও নবজাত শিশুদের বাপ্তিস্ম দিয়ে থাকে। অধিকন্তু, ইতিহাস জুড়ে দেখা যায় যে, তথাকথিত খ্রিস্টান জাতিগুলোর শাসক ও ধর্মীয় নেতারা দখলকৃত “পৌত্তলিকদের” বাধ্যতামূলক বাপ্তিস্ম দিত। কিন্তু, শিশু বাপ্তিস্ম ও প্রাপ্তবয়স্কদের জোরপূর্বক বাপ্তিস্ম দেওয়ার কোনো ভিত্তি বাইবেলে নেই।

আজকে কোনো অনিচ্ছাকৃত উৎসর্গীকরণ নয়

৩, ৪. কোন বিষয়টা উৎসর্গীকৃত বাবামার ছেলেমেয়েদেরকে স্বেচ্ছায় উৎসর্গীকরণ করতে সাহায্য করতে পারে?

বাইবেল দেখায় যে, বাবামার মধ্যে এমনকি যদি একজনও বিশ্বস্ত খ্রিস্টান হয়ে থাকেন, তা হলেও ঈশ্বর তাদের অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের পবিত্র হিসেবে গণ্য করেন। (১ করিন্থীয় ৭:১৪) এটা কি সেই ছেলেমেয়েদের যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাস করে তোলে? না। কিন্তু, যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত বাবামারা যে-ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তোলে, তারা এমন প্রশিক্ষণ লাভ করে, যা তাদেরকে যিহোবার প্রতি স্বেচ্ছায় উৎসর্গীকরণ করতে পরিচালিত করে। জ্ঞানী রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “বৎস, তুমি আপন পিতার আজ্ঞা পালন কর, আপন মাতার ব্যবস্থা ত্যাগ করিও না। . . . গমনকালে সে তোমাকে পথ দেখাইবে, শয়নকালে তোমার প্রহরী হইবে, জাগরণকালে তোমার সহিত আলাপ করিবে। কেননা আজ্ঞা প্রদীপ ও ব্যবস্থা আলোক, এবং শিক্ষাজনক অনুযোগ জীবনের পথ।”—হিতোপদেশ ৬:২০-২৩.

খ্রিস্টান বাবামাদের পরিচালনা ছেলেমেয়েদের জন্য সুরক্ষাস্বরূপ হতে পারে, যদি তারা তা অনুসরণ করতে ইচ্ছুক হয়। শলোমন আরও বলেছিলেন: “জ্ঞানবান পুত্ত্র পিতার আনন্দজনক, কিন্তু হীনবুদ্ধি পুত্ত্র মাতার খেদজনক।” “বৎস, তুমি শুন, জ্ঞানবান হও, তোমার হৃদয় সৎপথে চালাও।” (হিতোপদেশ ১০:১; ২৩:১৯) হ্যাঁ অল্পবয়স্করা, তোমরা যদি বাবামার প্রশিক্ষণ থেকে উপকার লাভ করতে চাও, তা হলে তোমাদেরকে অবশ্যই ইচ্ছুকভাবে উপদেশ, পরামর্শ ও শিক্ষা বা শাসন গ্রহণ করতে হবে। তোমরা জ্ঞানবান হয়ে জন্মগ্রহণ করো না কিন্তু তোমরা ‘জ্ঞানবান হইতে’ এবং স্বেচ্ছায় “জীবনের পথ” অনুসরণ করতে পারো।

চেতনা প্রদান করা মানে কী?

৫. বাবা ও ছেলেমেয়েকে পৌল কোন পরামর্শ দিয়েছেন?

প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “সন্তানেরা, তোমরা প্রভুতে পিতামাতার আজ্ঞাবহ হও, কেননা তাহা ন্যায্য। ‘তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও,’—এ ত প্রতিজ্ঞাসহযুক্ত প্রথম আজ্ঞা—‘যেন তোমার মঙ্গল হয়, এবং তুমি দেশে দীর্ঘায়ু হও।’ আর পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।”—ইফিষীয় ৬:১-৪.

৬, ৭. ছেলেমেয়েদের ‘যিহোবার চেতনা প্রদানে’ মানুষ করে তোলার সঙ্গে কী জড়িত আর কেন এর অর্থ এই নয় যে, বাবামা তাদের ছেলেমেয়েদের অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করছে?

খ্রিস্টান বাবামারা যখন তাদের ছেলেমেয়েদের “যিহোবার শাসনে ও চেতনা প্রদানে” মানুষ করে তোলে, তখন তারা কি তাদেরকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করে থাকে? না। বাবামারা যেটাকে সঠিক ও নৈতিকভাবে উপকারী বলে মনে করে, তা তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য কেই বা তাদের সমালোচনা করতে পারে? নাস্তিক ব্যক্তিরা যখন তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বর বলে কেউ নেই, তখন তাদের সমালোচনা করা হয় না। রোমান ক্যাথলিকরা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে ক্যাথলিক বিশ্বাসে মানুষ করে তোলাকে কর্তব্য বলে মনে করে আর তা করার জন্য তারা যে প্রচেষ্টা করে থাকে, সেটার জন্য কখনোই তাদের সমালোচনা করা হয় না। একইভাবে, মৌলিক সত্য ও নৈতিক নীতিগুলো সম্বন্ধে যিহোবার চিন্তাভাবনাকে গ্রহণ করার জন্য সন্তানদেরকে মানুষ করে তোলার সময়, যিহোবার সাক্ষিরা তাদের সন্তানদের মনকে নিপুণভাবে পরিচালনা করে বলে তাদেরকে দোষ দেওয়া উচিত নয়।

থিওলজিক্যাল ডিকশনারি অভ্‌ দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট অনুসারে, ইফিষীয় ৬:৪ পদে যে-মূল গ্রিক শব্দটিকে ‘চেতনা প্রদান’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি এমন এক প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে যা, “মনকে সংশোধন করার, যেটা ভুল সেটাকে শুধরে দেওয়ার ও আধ্যাত্মিক মনোভাবকে উন্নত করার প্রচেষ্টা করে থাকে।” একজন অল্পবয়স্ক যদি সঙ্গীসাথিদের চাপ ও গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়ার ইচ্ছার কারণে বাবামার প্রশিক্ষণের বিরোধিতা করে, তা হলে কী? কে চাপ দিচ্ছে বলে বলা যেতে পারে—বাবামা নাকি সেই অল্পবয়স্ক ছেলে বা মেয়ের সঙ্গীসাথি? সঙ্গীসাথিরা যদি সেই অল্পবয়স্ককে মাদকদ্রব্য নেওয়ার, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যজাতীয় পানীয় পান করার অথবা অনৈতিক আচরণে জড়িয়ে পড়ার জন্য চাপ দেয়, তা হলে সন্তানের চিন্তাভাবনাকে রদবদল করতে ও তাকে এই ধরনের বিপদজনক আচরণের পরিণতিগুলো সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করতে চেষ্টা করার জন্য কি বাবামার সমালোচনা করা উচিত?

৮. তীমথিয়কে “প্রমাণ জ্ঞাত” করানোর সঙ্গে কী জড়িত ছিল?

প্রেরিত পৌল যুবক তীমথিয়কে লিখেছিলেন: “তুমি যাহা যাহা শিখিয়াছ ও যাহার যাহার প্রমাণ জ্ঞাত হইয়াছ, তাহাতেই স্থির থাক; তুমি ত জান যে, কাহাদের কাছে শিখিয়াছ। আরও জান, তুমি শিশুকাল অবধি পবিত্র শাস্ত্রকলাপ জ্ঞাত আছ, সে সকল খ্রীষ্ট যীশু সম্বন্ধীয় বিশ্বাস দ্বারা তোমাকে পরিত্রাণের নিমিত্ত জ্ঞানবান্‌ করিতে পারে।” (২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫) তীমথিয় একেবারে ছোট থাকতেই, তার মা ও দিদিমা পবিত্র শাস্ত্রের জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিয়েছিল। (প্রেরিত ১৬:১; ২ তীমথিয় ১:৫) পরবর্তী সময়ে তারা যখন খ্রিস্টান হয়েছিল, তখন তারা তীমথিয়কে বিশ্বাস করতে জোর করেনি বরং শাস্ত্রীয় জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে উপযুক্ত যুক্তির মাধ্যমে “প্রমাণ জ্ঞাত” করিয়েছিল।

যিহোবা তোমাকে বেছে নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান

৯. (ক) কীভাবে যিহোবা তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং কোন কারণে? (খ) কীভাবে ঈশ্বরের একজাত পুত্র তাঁর স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করেছিলেন?

যিহোবা তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদের রোবট হিসেবে তৈরি করতে পারতেন, তাদের মধ্যে নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করতে না দিয়ে শুধু তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য প্রোগ্রাম করে দিতে পারতেন। কিন্তু, তা না করে তিনি তাদেরকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়ে মর্যাদা দিয়েছিলেন। আমাদের ঈশ্বর স্বেচ্ছাকৃত প্রজা চান। তিনি তাঁর সৃষ্ট প্রাণী, যুবক-বৃদ্ধ সকলকে প্রেমের বশবর্তী হয়ে তাঁকে সেবা করতে দেখে আনন্দিত হন। ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি প্রেমের সঙ্গে বশীভূত হওয়ার সর্বোত্তম উদাহরণ হলেন তাঁর একজাত পুত্র, যাঁর সম্বন্ধে যিহোবা বলেছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইঁহাতেই আমি প্রীত।” (মথি ৩:১৭) এই প্রথমজাত পুত্র তাঁর পিতাকে বলেছিলেন: “হে আমার ঈশ্বর, তোমার অভীষ্ট সাধনে আমি প্রীত, আর তোমার ব্যবস্থা আমার অন্তরে আছে।”—গীতসংহিতা ৪০:৮; ইব্রীয় ১০:৯, ১০.

১০. যিহোবাকে গ্রহণযোগ্যভাবে সেবা করার ভিত্তি কী?

১০ যিহোবা চান যেন যারা তাঁর পুত্রের নির্দেশনার অধীনে সেবা করে, তারাও তাঁর ইচ্ছার প্রতি একইরকম ইচ্ছুকভাবে বশীভূত হওয়ার মনোভাব দেখায়। ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে গীতরচক গেয়েছিলেন: “তোমার বিক্রম-দিনে তোমার প্রজাগণ স্বেচ্ছায় দত্ত উপহার হইবে; পবিত্র শোভায়, ঊষার গর্ব্ভ হইতে, তোমার যুবকেরা তোমার কাছে শিশিরতুল্য।” (গীতসংহিতা ১১০:৩) যিহোবার সমগ্র সংগঠন অর্থাৎ স্বর্গীয় ও পার্থিব উভয় অংশ ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি প্রেমের সঙ্গে বশীভূত হওয়ার ওপর ভিত্তি করে কাজ করে থাকে।

১১. উৎসর্গীকৃত বাবামারা যে-অল্পবয়স্কদের মানুষ করে তোলে, তাদের সামনে কোন বাছাইটা রাখা হয়েছে?

১১ তাই অল্পবয়স্করা, তোমাদের বোঝা উচিত যে তোমাদের বাবামা অথবা মণ্ডলীর খ্রিস্টান প্রাচীনরা কেউই তোমাকে বাপ্তিস্ম নিতে জোর করবে না। যিহোবাকে সেবা করার আকাঙ্ক্ষা তোমার নিজের মধ্যে থেকেই আসতে হবে। প্রাচীনকালের যিহোশূয় ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “সরলতায় ও সত্যে [সদাপ্রভুর] সেবা কর . . . যাহার সেবা করিবে, তাহাকে অদ্য মনোনীত কর।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৪-২২) একইভাবে, যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার ও তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য তোমার জীবনকে সঁপে দেওয়ার মনোনয়ন বা বাছাইটা তোমাকেই করতে হবে।

তোমার দায়িত্বকে স্বীকার করা

১২. (ক) যদিও বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে কিন্তু তাদের হয়ে তারা কী করতে পারে না? (খ) একজন অল্পবয়স্ক যে-বাছাইগুলো করে থাকে, সেটার জন্য কখন সে ঈশ্বরের কাছে দায়ী হয়?

১২ এমন একটা সময় আসে যখন অল্পবয়স্করা, তোমরা আর তোমাদের বাবামার বিশ্বস্ততার দ্বারা সুরক্ষা লাভ করতে পারো না। (১ করিন্থীয় ৭:১৪) শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “যে কেহ সৎকর্ম্ম করিতে জানে, অথচ না করে, তাহার পাপ হয়।” (যাকোব ৪:১৭) বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের হয়ে ঈশ্বরকে সেবা করতে পারে না, ঠিক যেমন ছেলেমেয়েরাও তাদের বাবামার হয়ে ঈশ্বরকে সেবা করতে পারে না। (যিহিষ্কেল ১৮:২০) তুমি কি যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে শিখেছ? তুমি যা শিখেছ, তা বোঝার ও তাঁর সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে শুরু করার মতো যথেষ্ট বড় কি তুমি হয়েছ? তা হলে, এটা চিন্তা করা কি যুক্তিযুক্ত হবে না যে, ঈশ্বর তোমাকে তাঁর সেবা করার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো যোগ্য বলে মনে করেন?

১৩. অবাপ্তাইজিত অল্পবয়স্কদের নিজেদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

১৩ তুমি কি এমন একজন অবাপ্তাইজিত অল্পবয়স্ক, যাকে ঈশ্বরভয়শীল বাবামা মানুষ করে তুলেছে, যে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছ ও এমনকি রাজ্যের সুসমাচার প্রচারে অংশ নিচ্ছ? যদি তা-ই হয়, তা হলে নিজেকে অকপটভাবে জিজ্ঞেস করো: ‘কেন আমি তা করছি? আমার বাবামা চায় বলে নাকি যিহোবাকে খুশি করতে চাই বলে আমি সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছি ও প্রচার কাজে অংশ নিচ্ছি?’ তুমি কি পরীক্ষা করে দেখেছ যে, “ঈশ্বর কি চান, কোনটা ভাল, কোনটা তাকে খুশী করে ও কোনটা সিদ্ধ”?—রোমীয় ১২:২, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন।

বাপ্তাইজিত হতে দেরি কেন?

১৪. বাইবেলের কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, বাপ্তিস্ম নিতে অযথা দেরি করা উচিত নয়?

১৪ “আমার বাপ্তাইজিত হইবার বাধা কি?” যে-ইথিওপীয় ব্যক্তি সুসমাচার প্রচারক ফিলিপকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি সবেমাত্র শিখেছিলেন যে, যিশুই ছিলেন মশীহ। কিন্তু, এই বিষয়টা বোঝার জন্য শাস্ত্র থেকে যথেষ্ট জ্ঞান ইথিওপীয় ব্যক্তির ছিল যে, তখন থেকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অংশ হিসেবে যিহোবাকে সেবা করার বিষয়টা খোলাখুলিভাবে প্রমাণ করার জন্য তার দেরি করা উচিত নয় আর এটা তার জন্য অনেক আনন্দ নিয়ে এসেছিল। (প্রেরিত ৮:২৬-৩৯) একইভাবে, লুদিয়া নামে একজন স্ত্রীলোক, যার হৃদয় খুলে দেওয়া হয়েছিল “যেন তিনি পৌলের কথায় মনোযোগ করেন,” তিনি ও তার পরিবার সঙ্গে সঙ্গে ‘বাপ্তাইজিত হইয়াছিলেন।’ (প্রেরিত ১৬:১৪, ১৫) অনুরূপভাবে, পৌল ও সীল যখন ফিলিপীর কারারক্ষককে ‘ঈশ্বরের বাক্য বলিয়াছিলেন,’ তখন তিনি তাদের কথায় মনোযোগ দিয়েছিলেন এবং ‘সে আপনি ও তাহার সকল লোক অবিলম্বে বাপ্তাইজিত হইয়াছিলেন।’ (প্রেরিত ১৬:২৫-৩৪) তাই, যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে তোমার যদি মৌলিক জ্ঞান থাকে, তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা ও মণ্ডলীতে তোমার সুনাম থাকে এবং তুমি যদি বিশ্বস্তভাবে সভাগুলোতে যোগ দিয়ে থাকো ও রাজ্যের সুসমাচার প্রচার কাজে অংশ নিয়ে থাকো, তা হলে তুমি বাপ্তাইজিত হতে দেরি করছ কেন?—মথি ২৮:১৯, ২০.

১৫, ১৬. (ক) কোন ভুল যুক্তি হয়তো কিছু অল্পবয়স্ককে বাপ্তাইজিত হতে বাধা দিতে পারে? (খ) কীভাবে উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম অল্পবয়স্কদের জন্য এক সুরক্ষা হিসেবে কাজ করতে পারে?

১৫ এটা কি হতে পারে যে, ভুল আচরণ করলে নিকাশ দিতে হবে এই ভয়ে তুমি এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করছ? যদি তা-ই হয়, তা হলে এই বিষয়টা চিন্তা করো: কোনো একদিন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, কেবল এই ভয়েই কি তুমি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা বাদ দেবে? অবশ্যই না! যোগ্য হয়ে থাকলে তোমারও বাপ্তাইজিত হতে দ্বিধা করা উচিত নয়। বাস্তবিকপক্ষে, তুমি যদি তোমার জীবনকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করে থাকো এবং তাঁর ইচ্ছা পালন করতে সম্মত হও, তা হলে তুমি অন্যায় কাজ প্রতিরোধ করার জন্য তোমার যথাসাধ্য করতে দৃঢ়ভাবে অনুপ্রাণিত হবে। (ফিলিপীয় ৪:১৩) অল্পয়বস্করা, দয়া করে তোমরা এইরকম মনে করবে না যে, বাপ্তিস্ম নিতে দেরি করে তুমি নিকাশ দেওয়া এড়াতে পারছ। দায়িত্ব নেওয়ার মতো বয়স যখন তোমার হবে, তখন বাপ্তাইজিত হও বা না হও, তুমি যেভাবে আচরণ করে থাকো সেটার জন্য যিহোবার কাছে দায়ী থাকবে।—রোমীয় ১৪:১১, ১২.

১৬ সারা পৃথিবীর অসংখ্য সাক্ষি মনে করে যে, তারা যখন অল্পবয়স্ক ছিল, তখন বাপ্তাইজিত হওয়ার বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত তাদেরকে অনেক সাহায্য করেছে। উদাহরণ হিসেবে পশ্চিম ইউরোপের ২৩ বছর বয়সি একজন সাক্ষির কথা বিবেচনা করো। সে স্মরণ করে বলে যে, ১৩ বছর বয়সে বাপ্তাইজিত হওয়া তাকে ‘যৌবনকালের অভিলাষে’ ভেসে না যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে অনুপ্রাণিত করেছে। (২ তীমথিয় ২:২২) একেবারে ছোটবেলা থেকেই, সে পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে সেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখন সে যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিসে আনন্দের সঙ্গে সেবা করছে। তুমিসহ যে-অল্পবয়স্করা যিহোবাকে সেবা করা বেছে নেয়, তাদের সকলের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ রয়েছে।

১৭. কোন ক্ষেত্রগুলোতে “যিহোবার ইচ্ছা” কি, তা বোঝার প্রয়োজন রয়েছে?

১৭ উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম হল এমন একটা জীবনের শুরু, যেখানে আমরা আমাদের প্রতিটা কাজের ক্ষেত্রে যিহোবার ইচ্ছাকে বিবেচনা করে থাকি। আমাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপ চলার সঙ্গে “সুযোগ” বা সময় ‘কিনিয়া লওয়া’ জড়িত। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? আমরা হয়তো যে-নিষ্ফল বিষয়গুলোর পিছনে সময় ব্যয় করতাম, সেই সময়টা গুরুত্বের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করায়, নিয়মিতভাবে সভাতে উপস্থিত থাকায় এবং যতটা সম্ভব পূর্ণরূপে ‘রাজ্যের সুসমাচার’ প্রচার করায় ব্যয় করে। (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬; মথি ২৪:১৪) যিহোবার প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণ ও তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য আমাদের আকাঙ্ক্ষা আমাদের জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে উপকার নিয়ে আসবে, যেগুলোর অন্তর্ভুক্ত যেভাবে আমরা অবসর সময় কাটাই, যেভাবে আমরা খাওয়াদাওয়া করি এবং যেধরনের গানবাজনা আমরা শুনি। এমন ধরনের বিনোদন বাছাই করো না কেন, যা তুমি চিরকাল ধরে উপভোগ করতে পারবে? হাজার হাজার অল্পবয়স্ক আনন্দিত সাক্ষি তোমাকে বলবে যে, ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] ইচ্ছার’ মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেই মজা করার অনেক উপকারজনক উপায় রয়েছে।—ইফিষীয় ৫:১৭-১৯.

“আমরা তোমাদের সহিত যাইব”

১৮. অল্পবয়স্কদের নিজেদেরকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত?

১৮ সাধারণ কাল পূর্ব ১৫১৩ থেকে সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন পর্যন্ত, পৃথিবীতে যিহোবার এক সংগঠিত লোকেদের দল ছিল, যাদেরকে তিনি তাঁকে উপাসনা করার ও তাঁর সাক্ষি হওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন। (যিশাইয় ৪৩:১২) অল্পবয়স্ক ইস্রায়েলীয়রা সেই জাতির মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিল। কিন্তু, পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে পৃথিবীতে যিহোবার এক নতুন “জাতি,” আত্মিক ইস্রায়েল, “আপন নামের জন্য . . . এক দল” রয়েছে। (১ পিতর ২:৯, ১০; প্রেরিত ১৫:১৪; গালাতীয় ৬:১৬) প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, খ্রিস্ট নিজের জন্য “নিজস্ব প্রজাবর্গকে, সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী প্রজাবর্গকে” শুচি করেছেন। (তীত ২:১৪) অল্পবয়স্করা, তোমরা এই বিষয়টা নির্ধারণ করার জন্য স্বাধীন যে, কোথায় সেই লোকেদের পাওয়া যাবে। কাদের নিয়ে আজকে “বিশ্বস্ততা-পালনকারী ধার্ম্মিক জাতি” গঠিত, কারা বাইবেলের নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করে, যিহোবার জন্য বিশ্বস্ত সাক্ষি হিসেবে কাজ করে এবং মানবজাতির একমাত্র আশা হিসেবে তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে? (যিশাইয় ২৬:২-৪) খ্রিস্টীয়জগতের বিভিন্ন গির্জা ও অন্যান্য ধর্ম লক্ষ করো আর তাদের আচরণের সঙ্গে বাইবেল ঈশ্বরের সত্য দাসদের কাছ থেকে কী চায়, তা তুলনা করে দেখো।

১৯. কোন বিষয়ে সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ লোক দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছে?

১৯ বহু অল্পবয়স্কসহ সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ লোক এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছে যে, যিহোবার সাক্ষিদের অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের নিয়ে এই “ধার্ম্মিক জাতি” গঠিত। তারা এই আত্মিক ইস্রায়েলীয়দের বলে: “আমরা তোমাদের সহিত যাইব, কেননা আমরা শুনিলাম, ঈশ্বর তোমাদের সহবর্ত্তী।” (সখরিয় ৮:২৩) আমরা সত্যিই আশা রাখি ও প্রার্থনা করি যেন অল্পবয়স্করা, তোমরা ঈশ্বরের লোকেদের মাঝে থাকার সিন্ধান্ত নেবে আর এভাবে “জীবন”—যিহোবার নতুন জগতে অনন্তজীবন—‘মনোনীত করিবে।’—দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৫-২০; ২ পিতর ৩:১১-১৩.

পুনরালোচনা

• চেতনা প্রদানের সঙ্গে কী জড়িত?

• কোন ধরনের সেবা যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য?

• উৎসর্গীকৃত বাবামারা যে-অল্পবয়স্কদের মানুষ করে তোলে, তাদের সকলের সামনে কোন বাছাইটা রাখা হয়েছে?

• কেন বাপ্তিস্ম নিতে অযথা দেরি করা উচিত নয়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

তুমি কার কথায় মনোযোগ দেবে?

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

কীভাবে উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম তোমার জন্য এক সুরক্ষা হিসেবে কাজ করতে পারে?

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

কী তোমাকে বাপ্তাইজিত হতে বাধা দিচ্ছে?