সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জ্ঞানালোকের অনুসন্ধান

জ্ঞানালোকের অনুসন্ধান

জ্ঞানালোকের অনুসন্ধান

 “অজ্ঞতা কখনোই জ্ঞানের চেয়ে উৎকৃষ্ট হতে পারে না,” বিখ্যাত পদার্থবিদ এনরিকো ফারমির স্ত্রী লৌরা ফারমি বলেছিলেন। কিছু লোক হয়তো দ্বিমত পোষণ করে এভাবে বলতে পারে যে, আপনি যা জানেন না সেটা আপনার কোনো ক্ষতিই করবে না। কিন্তু, অধিকাংশই এই মন্তব্যটাকে সঠিক বলে মনে করে আর সেটা শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও। সত্য সম্বন্ধে অজানা থাকার অর্থে অজ্ঞতা, অনেক লোককে শত শত বছর ধরে মেধাগত, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে অন্ধকারে নিমগ্ন করে রেখেছে।—ইফিষীয় ৪:১৮.

এই জন্য যুক্তবাদী লোকেরা জ্ঞানালোকের অনুসন্ধান করে। তারা জানতে চায় যে, কেন আমরা এখানে রয়েছি এবং ভবিষ্যতে আমাদের কী হবে। জ্ঞানালোকের অনুসন্ধান তাদের বিভিন্ন পথ বেছে নিতে পরিচালিত করেছে। আসুন, আমরা এগুলোর কয়েকটা বিবেচনা করে দেখি।

এক ধর্মীয় পথে কি পাওয়া যাবে?

বৌদ্ধদের বিশ্বাস অনুযায়ী, বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা, সিদ্ধার্থ গৌতম মানুষের দুঃখকষ্ট ও মৃত্যু দেখে গভীর যন্ত্রণাবোধ করেছিলেন। তিনি হিন্দু ধর্মীয় গুরুদেরকে “সত্যের পথ” খুঁজে পেতে তাকে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কেউ কেউ তাকে যোগাভ্যাস করার এবং চরম আত্মত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছিল। পরিশেষে, গৌতম ব্যক্তিগতভাবে গভীর ধ্যান করার প্রক্রিয়াকে প্রকৃত জ্ঞানালোকের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

অন্যেরা জ্ঞানালোকের অনুসন্ধান করতে গিয়ে ভ্রমোৎপাদক মাদক দ্রব্যগুলো ব্যবহার করেছে। উদাহরণ হিসেবে, বর্তমানে নেটিভ আমেরিকান চার্চ এর সদস্যরা পেয়োটিকে—এক ধরনের ক্যাকটাস যেটাতে ভ্রমোৎপাদক দ্রব্য রয়েছে, সেটাকে—“গুপ্ত জ্ঞানের উদ্ঘাটক” বলে বর্ণনা করে থাকে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর ফরাসি দার্শনিক জাঁ-জাক রুসো মনে করতেন যে, আন্তরিকভাবে অনুসন্ধান করলে যেকোনো ব্যক্তিই ঈশ্বরের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে জানতে পারেন। কীভাবে? “ঈশ্বর অন্তরে যা বলে দেন” তা শুনে। তা হলে, বিষয়গুলো সম্বন্ধে আপনি যেমন বোধ করেন—আপনার আবেগ ও বিবেক আপনাকে যা বলে—তা “মানুষের ভিন্ন মতামতের বিরাট জটিলতার মধ্যে এক নির্ভরযোগ্য নির্দেশিকা” হয়ে উঠবে, রুসো বলেছিলেন।—পাশ্চাত্য দর্শনশাস্ত্রের ইতিহাস (ইংরেজি)।

যুক্তি করার ক্ষমতা ব্যবহার করে কি পাওয়া যাবে?

রুসোর সমসাময়িক ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে অনুসন্ধানের এই ধর্মীয় পদ্ধতি সম্বন্ধে দ্বিমত পোষণ করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, আরেকজন ফরাসি ব্যক্তি ভলতেয়ার মনে করেছিলেন যে, ধর্ম আসলে লোকেদের জ্ঞানালোকিত করা তো দূরের কথা বরং তা শত শত বছর ধরে ইউরোপকে অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও পরমত অসহিষ্ণুতার মনোভাবের মধ্যে ডুবিয়ে রাখার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে, যে-সময়টাকে কিছু ইতিহাসবেত্তা অন্ধকারময় যুগ বলে থাকে।

ভলতেয়ার এনলাইটেনমেন্ট নামে পরিচিত যুক্তি ও বিজ্ঞানের বিকাশের এক ইউরোপীয় আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। এর অনুসারীরা প্রাচীন গ্রিকদের মতবাদগুলো গ্রহণ করেছিল—মূলত এই মতবাদ যে, মানব যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা হল প্রকৃত জ্ঞানালোকের চাবিকাঠি। যুক্তি ও বিজ্ঞানের বিকাশের ইউরোপীয় আন্দোলনের আরেকজন সদস্য বেরনার ডে ফোন্টনেল মনে করেছিলেন যে, মানব যুক্তি মানবজাতিকে এমন ‘এক শতাব্দীর’ দিকে নিয়ে যাবে, ‘যে-শতাব্দী দিন দিন আরও বেশি জ্ঞানালোকিত হয়ে উঠবে, যার ফলে তুলনা করলে বিগত শতাব্দীগুলো অজ্ঞতার সময় বলে বিবেচিত হবে।”—এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা।

জ্ঞানালোক কীভাবে অর্জন করা যায়, সেই ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী যে-অনেক ধারণা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এগুলো হচ্ছে মাত্র কয়েকটা। সত্যের অনুসন্ধানে সাহায্য পেতে পারি এমন কোনো “নির্ভরযোগ্য নির্দেশিকা” কি সত্যিই আছে? জ্ঞানালোকের নির্ভরযোগ্য উৎস সম্বন্ধে পরের প্রবন্ধ কী বলে, তা বিবেচনা করুন।

[৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

গৌতম (বুদ্ধ), রুসো এবং ভলতেয়ার জ্ঞানালোকের অনুসন্ধান করার জন্য বিভিন্ন পথ বেছে নিয়েছিল