সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তারা ঈশ্বরের মনোনীত জাতির সদস্য হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিল

তারা ঈশ্বরের মনোনীত জাতির সদস্য হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিল

তারা ঈশ্বরের মনোনীত জাতির সদস্য হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিল

“আপনার নিজস্ব প্রজা করিবার জন্য তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকেই মনোনীত করিয়াছেন।” —দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৬.

১, ২. যিহোবা তাঁর লোকেদের পক্ষে কোন পরাক্রমী কাজগুলো করেছিলেন আর ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের সঙ্গে কোন সম্পর্কে প্রবেশ করেছিল?

 সাধারণ কাল পূর্ব ১৫১৩ সালে, যিহোবা পৃথিবীতে তাঁর দাসদের সঙ্গে এক নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। সেই বছর, তিনি এক বিশ্বশক্তির পতন ঘটিয়েছিলেন এবং ইস্রায়েলীয়দেরকে দাসত্ব থেকে উদ্ধার করেছিলেন। তা করার মাধ্যমে তিনি তাদের ত্রাণকর্তা ও মালিক হয়ে উঠেছিলেন। সেই পদক্ষেপ নেওয়ার আগে, ঈশ্বর মোশিকে বলেছিলেন: “ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে বল, আমি যিহোবা আমি তোমাদিগকে মিস্রীয়দের ভারের নীচে হইতে বাহির করিয়া আনিব, ও তাহাদের দাসত্ব হইতে উদ্ধার করিব, এবং প্রসারিত বাহু ও মহৎ শাসন দ্বারা তোমাদিগকে মুক্ত করিব। আর আমি তোমাদিগকে আপন প্রজারূপে গ্রাহ্য করিব, ও তোমাদের ঈশ্বর হইব।”—যাত্রাপুস্তক ৬:৬, ৭; ১৫:১-৭, ১১.

মিশর থেকে যাত্রা করার কিছু সময় পর, ইস্রায়েলীয়রা তাদের ঈশ্বর যিহোবার সঙ্গে এক চুক্তির সম্পর্কে প্রবেশ করেছিল। আলাদা আলাদা ব্যক্তি, পরিবার অথবা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরিবর্তে, সেই সময় থেকে পৃথিবীতে যিহোবার এক সংগঠিত লোকেদের দল অর্থাৎ একটা জাতি থাকবে। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬; ২৪:৭) তিনি তাঁর লোকেদের সেই আইনগুলো দিয়েছিলেন, যেগুলো তাদের সমাজব্যবস্থা ও সেইসঙ্গে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাদের উপাসনায় পরিচালনা দিয়েছিল। মোশি তাদের বলেছিলেন: “কোন্‌ বড় জাতির এমন নিকটবর্ত্তী ঈশ্বর আছেন, যেমন আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু? যখনই আমরা তাঁহাকে ডাকি, তিনি নিকটবর্ত্তী। আর আমি অদ্য তোমাদের সাক্ষাতে যে সমস্ত ব্যবস্থা দিতেছি, তাহার মত যথার্থ বিধি ও শাসন কোন্‌ বড় জাতির আছে?”—দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৭, ৮.

এক সাক্ষি জাতির সদস্য হিসেবে জন্মগ্রহণ

৩, ৪. একটা জাতি হিসেবে ইস্রায়েলের অস্তিত্বে থাকার এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ কী ছিল?

কয়েক শতাব্দী পরে, যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়দেরকে একটা জাতি হিসেবে তাদের অস্তিত্বে থাকার এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ সম্বন্ধে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। যিশাইয় বলেছিলেন: “হে যাকোব, তোমার সৃষ্টিকর্ত্তা, হে ইস্রায়েল, তোমার নির্ম্মাণকর্ত্তা সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ভয় করিও না, কেননা আমি তোমাকে মুক্ত করিয়াছি, আমি তোমার নাম ধরিয়া তোমাকে ডাকিয়াছি, তুমি আমার। কেননা আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, ইস্রায়েলের পবিত্রতম, তোমার ত্রাণকর্ত্তা; . . . আমার পুত্ত্রগণকে দূর হইতে, ও আমার কন্যাদিগকে পৃথিবীর প্রান্ত হইতে আনিয়া দেও; যে কেহ আমার নামে আখ্যাত, যাহাকে আমি আমার গৌরবার্থে সৃষ্টি করিয়াছি [সেই ব্যক্তিকে আনিয়া দেও], আমি তাহাকে নির্ম্মাণ করিয়াছি, আমি তাহাকে গঠন করিয়াছি। সদাপ্রভু কহেন, তোমরাই আমার সাক্ষী, এবং আমার মনোনীত দাস; . . . যে প্রজাবৃন্দকে আমি আপনার নিমিত্ত নির্ম্মাণ করিয়াছি, তাহারা আমার প্রশংসা প্রচার করিবে।”—যিশাইয় ৪৩:১, ৩, ৬, ৭, ১০, ২১; যাত্রাপুস্তক ৩:১৫.

যিহোবার নামের মাধ্যমে ডাকা হয় এমন লোক হিসেবে ইস্রায়েলীয়রা জাতিগুলোর সামনে তাঁর সার্বভৌমত্বের সাক্ষি হিসেবে সেবা করবে। তারা হবে ‘সদাপ্রভুর গৌরবার্থে সৃষ্ট’ লোক। তারা ‘সদাপ্রভুর প্রশংসা প্রচার করিবে’ অর্থাৎ তাঁর বিস্ময়কর উদ্ধারের কাজগুলো সম্বন্ধে বর্ণনা করবে আর এভাবে তাঁর পবিত্র নামকে গৌরবান্বিত করবে। সংক্ষেপে বললে, তারা হবে যিহোবার পক্ষে এক সাক্ষি জাতি।

৫. কোন দিক দিয়ে ইস্রায়েল এক উৎসর্গীকৃত জাতি ছিল?

সাধারণ কাল পূর্ব ১১ শতাব্দীতে, রাজা শলোমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, যিহোবা ইস্রায়েলকে একটা জাতি হিসেবে পৃথক করেছিলেন। যিহোবার কাছে প্রার্থনায় তিনি বলেছিলেন: “তুমিই আপনার অধিকার বলিয়া তাহাদিগকে পৃথিবীস্থ সকল জাতি হইতে পৃথক্‌ করিয়াছ।” (১ রাজাবলি ৮:৫৩) এ ছাড়া, আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেক ইস্রায়েলীয়রও যিহোবার সঙ্গে এক বিশেষ সম্পর্ক ছিল। আগে, মোশি তাদের বলেছিলেন: “তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সন্তান; . . . কেননা তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পবিত্র প্রজা।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৪:১, ২) তাই, অল্পবয়স্ক ইস্রায়েলীয়দের যিহোবার কাছে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার প্রয়োজন ছিল না। তারা ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত লোকেদের সদস্য হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিল। (গীতসংহিতা ৭৯:১৩; ৯৫:৭) যে-চুক্তি ইস্রায়েলকে যিহোবার কাছে আবদ্ধ করেছিল, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক নতুন বংশকে যিহোবার আইনগুলো সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এবং তারা সেগুলো পালন করতে বাধ্য ছিল।—দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১৮, ১৯.

বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন

৬. প্রত্যেক ইস্রায়েলীয়কে আলাদা আলাদাভাবে কোন বিষয়টা বেছে নিতে হয়েছিল?

যদিও ইস্রায়েলীয়রা এক উৎসর্গীকৃত জাতির সদস্য হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিল, তবুও ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে তাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার আগে, মোশি তাদের বলেছিলেন: “আমি অদ্য তোমাদের বিরুদ্ধে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি যে, আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্ব্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার; তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম কর, তাঁহার রবে অবধান কর, ও তাঁহাতে আসক্ত হও; কেননা তিনিই তোমার জীবন ও তোমার দীর্ঘ পরমায়ুস্বরূপ; তাহা হইলে সদাপ্রভু তোমার পিতৃপুরুষদিগকে, অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে, যে দেশ দিতে দিব্য করিয়াছিলেন, সেই দেশে তুমি বাস করিতে পাইবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৯, ২০) তাই, আলাদা আলাদাভাবে প্রত্যেক ইস্রায়েলীয়কে যিহোবাকে ভালবাসার, তাঁর রবে মনোযোগ দেওয়ার ও তাঁর প্রতি আসক্ত থাকার বিষয়টা মনোনয়ন করতে বা বেছে নিতে হয়েছিল। যেহেতু ইস্রায়েলীয়দের স্বাধীন ইচ্ছা ছিল, তাই তাদের বাছাইয়ের ফলাফল তাদেরকেই বহন করতে হয়েছিল।—দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১৬-১৮.

৭. যিহোশূয়ের বংশ মারা যাওয়ার পর কী ঘটেছিল?

বিশ্বস্ততা ও অবিশ্বস্ততার ফলাফল সম্বন্ধে বিচারকদের সময়কাল এক উত্তম দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। সেই সময়কাল শুরু হওয়ার ঠিক আগে, ইস্রায়েলীয়রা যিহোশূয়ের উত্তম উদাহরণ অনুসরণ করেছিল আর এর ফলে আশীর্বাদ লাভ করেছিল। “যিহোশূয়ের সমস্ত জীবনকালে, এবং যে প্রাচীনবর্গ যিহোশূয়ের মরণের পর জীবিত ছিলেন, ও ইস্রায়েলের জন্য সদাপ্রভুর কৃত সমস্ত মহাকার্য্য দেখিয়াছিলেন, তাঁহাদেরও সমস্ত জীবনকালে লোকেরা সদাপ্রভুর সেবা করিল।” কিন্তু, যিহোশূয় মারা যাওয়ার কিছু কাল পর, “নূতন বংশ উৎপন্ন হইল, ইহারা সদাপ্রভুকে জানিত না, এবং ইস্রায়েলের জন্য তাঁহার কৃত কার্য্য জ্ঞাত ছিল না। ইস্রায়েল-সন্তানগণ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিতে লাগিল।” (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:৭, ১০, ১১) স্পষ্টতই, এই নতুন অনভিজ্ঞ বংশ উৎসর্গীকৃত সেই লোকেদের সদস্য হিসেবে তাদের উত্তরাধিকারকে মূল্যবান বলে গণ্য করেনি, যে-লোকেদের জন্য তাদের ঈশ্বর যিহোবা অতীতে বিভিন্ন পরাক্রমী কাজ করেছিলেন।—গীতসংহিতা ৭৮:৩-৭, ১০, ১১.

তাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলা

৮, ৯. (ক) কোন ব্যবস্থা ইস্রায়েলীয়দেরকে যিহোবার প্রতি তাদের উৎসর্গীকরণকে প্রদর্শন করার সুযোগ করে দিয়েছিল? (খ) যারা স্বেচ্ছাকৃত বলিদান করত, তারা কী লাভ করত?

যিহোবা তাঁর লোকেদের একটা জাতি হিসেবে তাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলার সুযোগ দিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর ব্যবস্থার মধ্যে উৎসর্গ অথবা বলিদান করার পদ্ধতি ছিল, যেগুলোর মধ্যে কিছু ছিল বাধ্যতামূলক আবার অন্যগুলো ছিল স্বেচ্ছাকৃত। (ইব্রীয় ৮:৩) এই উৎসর্গের অন্তর্ভুক্ত ছিল হোম বলি, ভক্ষ্য নৈবেদ্য ও মঙ্গলার্থক বলি, যেগুলো ছিল স্বেচ্ছাকৃত—যিহোবার অনুমোদন লাভ করার ও ধন্যবাদ প্রকাশ করার জন্য নিবেদিত উপহার।—লেবীয় পুস্তক ৭:১১-১৩.

এই স্বেচ্ছাকৃত উৎসর্গগুলো যিহোবাকে খুশি করত। হোম বলি ও ভক্ষ্য নৈবেদ্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, এগুলো “সদাপ্রভুর উদ্দেশে সৌরভার্থক” ছিল। (লেবীয় পুস্তক ১:৯; ২:২) মঙ্গলার্থক বলিতে পশুর রক্ত ও মেদ যিহোবার কাছে উৎসর্গ করা হতো আর মাংসের কিছু অংশ যাজকরা ও কিছু অংশ উৎসর্গকারীরা খেত। তাই এটা ছিল এক প্রতীকী ভোজ, যা যিহোবার সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ককে চিত্রিত করত। ব্যবস্থায় বলা হয়েছিল: “আর যখন তোমরা সদাপ্রভুর উদ্দেশে মঙ্গলার্থক বলিদান কর, তখন গ্রাহ্য হইবার নিমিত্ত বলিদান করিও।” (লেবীয় পুস্তক ১৯:৫) যদিও সমস্ত ইস্রায়েলীয় জন্মসূত্রে যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত ছিল কিন্তু যারা স্বেচ্ছাকৃত বলিদানের মাধ্যমে তাদের উৎসর্গীকরণকে অর্থপূর্ণ করে তুলত, তারা ‘গ্রাহ্য হইত’ বা অনুমোদন লাভ করত ও প্রচুররূপে আশীর্বাদ পেত।—মালাখি ৩:১০.

১০. যিশাইয় ও মালাখির দিনে কীভাবে যিহোবা তাঁর অগ্রাহ্য মনোভাব বা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন?

১০ কিন্তু, উৎসর্গীকৃত ইস্রায়েল জাতি বার বার যিহোবার প্রতি অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়েছিল। যিহোবা তাঁর ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে তাদের বলেছিলেন: “তুমি আমার কাছে তোমার হোমবলির মেষাদি আন নাই, তোমার বলিদান দ্বারা আমার সমাদর কর নাই। আমি নৈবেদ্যের বিষয়ে তোমাকে দাস্যকর্ম্ম করাই নাই।” (যিশাইয় ৪৩:২৩) এ ছাড়া, যে-বলিগুলো স্বেচ্ছায় দেওয়া হতো না এবং প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল না, যিহোবার চোখে সেগুলোর কোনো মূল্যই ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, যিশাইয়ের সময় থেকে তিন শতাব্দী পর, ভাববাদী মালাখির দিনে ইস্রায়েলীয়রা খুঁতযুক্ত পশু উৎসর্গ করেছিল। কিন্তু, মালাখি তাদের বলেছিলেন: “তোমাদিগেতে আমার কিছু প্রীতি নাই, ইহা বাহিনীগণের সদাপ্রভু কহেন; এবং তোমাদের হস্ত হইতে আমি নৈবেদ্য গ্রাহ্য করিব না। . . . আর তোমরা লুটিত, খঞ্জ ও রুগ্ন পশুকে উপস্থিত করিয়াছ, এই প্রকারে নৈবেদ্য উপস্থিত করিতেছ; আমি কি তোমাদের হস্ত হইতে ইহা গ্রাহ্য করিব? ইহা সদাপ্রভু কহেন।”—মালাখি ১:১০, ১৩; আমোষ ৫:২২.

উৎসর্গীকৃত এক জাতি হিসেবে পরিত্যাগ করা হয়

১১. ইস্রায়েলকে কোন সুযোগ দেওয়া হয়েছিল?

১১ যে-সময়ে ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার প্রতি উৎসর্গীকৃত এক জাতি হয়ে উঠেছিল, তখন তিনি তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর, তবে তোমরা সকল জাতি অপেক্ষা আমার নিজস্ব অধিকার হইবে, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার; আর আমার নিমিত্তে তোমরাই যাজকদের এক রাজ্য ও পবিত্র এক জাতি হইবে।” (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬) প্রতিজ্ঞাত মশীহ তাদের মধ্যে আবির্ভূত হবেন এবং তাদেরকে প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্য সরকারের সদস্য হওয়ার সুযোগ দেবেন। (আদিপুস্তক ২২:১৭, ১৮; ৪৯:১০; ২ শমূয়েল ৭:১২, ১৬; লূক ১:৩১-৩৩; রোমীয় ৯:৪, ৫) কিন্তু, ইস্রায়েল জাতির অধিকাংশ লোকই তাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলেনি। (মথি ২২:১৪) তারা মশীহকে পরিত্যাগ করেছিল ও অবশেষে তাকে হত্যা করেছিল।—প্রেরিত ৭:৫১-৫৩.

১২. যিশুর বলা কোন উক্তিগুলো দেখায় যে, যিহোবার উৎসর্গীকৃত জাতি হিসেবে ইস্রায়েলকে পরিত্যাগ করা হয়েছিল?

১২ যিশু তাঁর মৃত্যুর কয়েক দিন আগে যিহুদি ধর্মীয় নেতাদের বলেছিলেন: “তোমরা কি কখনও শাস্ত্রে পাঠ কর নাই, ‘যে প্রস্তর গাঁথকেরা অগ্রাহ্য করিয়াছে, তাহাই কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল; ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] হইতেই হইয়াছে, ইহা আমাদের দৃষ্টিতে অদ্ভুত’? এই জন্য আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে।” (মথি ২১:৪২, ৪৩) যিহোবা যে তাদেরকে তাঁর প্রতি উৎসর্গীকৃত এক জাতি হিসেবে পরিত্যাগ করেছেন, তা দেখানোর জন্য যিশু বলেছিলেন: “হা যিরূশালেম, যিরূশালেম, তুমি ভাববাদিগণকে বধ করিয়া থাক, ও তোমার নিকটে যাহারা প্রেরিত হয়, তাহাদিগকে পাথর মারিয়া থাক! কুক্কুটী যেমন আপন শাবকদিগকে পক্ষের নীচে একত্র করে, তদ্রূপ আমিও কত বার তোমার সন্তানদিগকে একত্র করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, কিন্তু তোমরা সম্মত হইলে না। দেখ, তোমাদের গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল।”—মথি ২৩:৩৭, ৩৮.

নতুন উৎসর্গীকৃত এক জাতি

১৩. যিরমিয়ের দিনে যিহোবা কোন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক উক্তি করেছিলেন?

১৩ ভাববাদী যিরমিয়ের সময়ে যিহোবা তাঁর লোকেদের সম্বন্ধে একটা নতুন বিষয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। আমরা পড়ি: “সদাপ্রভু বলেন, দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময়ে আমি ইস্রায়েল-কুলের ও যিহূদা-কুলের সহিত এক নূতন নিয়ম স্থির করিব। মিসর দেশ হইতে তাহাদের পিতৃপুরুষদিগকে বাহির করিয়া আনিবার জন্য তাহাদের হস্ত গ্রহণ করিবার দিনে আমি তাহাদের সহিত যে নিয়ম স্থির করিয়াছিলাম, সেই নিয়মানুসারে নয়; আমি তাহাদের স্বামী হইলেও তাহারা আমার সেই নিয়ম লঙ্ঘন করিল, ইহা সদাপ্রভু কহেন। কিন্তু সেই সকল দিনের পর আমি ইস্রায়েল-কুলের সহিত এই নিয়ম স্থির করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, আমি তাহাদের অন্তরে আমার ব্যবস্থা দিব, ও তাহাদের হৃদয়ে তাহা লিখিব; এবং আমি তাহাদের ঈশ্বর হইব, ও তাহারা আমার প্রজা হইবে।”—যিরমিয় ৩১:৩১-৩৩.

১৪. কখন এবং কীসের ভিত্তিতে যিহোবার নতুন উৎসর্গীকৃত জাতি অস্তিত্বে এসেছিল? সেই নতুন জাতিকে শনাক্ত করুন।

১৪ সাধারণ কাল ৩৩ সালে এই নতুন নিয়ম বা চুক্তির ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল, যখন যিশু মারা গিয়েছিলেন ও পরে তাঁর পিতার কাছে তাঁর পাতিত রক্তের মূল্য প্রদান করেছিলেন। (লূক ২২:২০; ইব্রীয় ৯:১৫, ২৪-২৬) কিন্তু, সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মার বর্ষণ ও এক নতুন জাতি অর্থাৎ ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েলের’ জন্মের মাধ্যমে, সেই নতুন চুক্তি কার্যকর হয়েছিল। (গালাতীয় ৬:১৬; রোমীয় ২:২৮, ২৯; ৯:৬; ১১:২৫, ২৬) অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের কাছে লেখার সময় প্রেরিত পিতর ঘোষণা করেছিলেন: “তোমরা ‘মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ, যেন তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর,’ যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন। পূর্ব্বে তোমরা ‘প্রজা ছিলে না, কিন্তু এখন ঈশ্বরের প্রজা হইয়াছ।’” (১ পিতর ২:৯, ১০) যিহোবা ও মাংসিক ইস্রায়েলের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছিল। সা.কা. ৩৩ সালে, যিহোবার অনুগ্রহ পার্থিব ইস্রায়েলের কাছ থেকে স্থানান্তরিত করে খ্রিষ্টীয় মণ্ডলী, আত্মিক ইস্রায়েলকে দেওয়া হয়েছিল, “যে জাতি” মশীহ রাজ্যের “ফল দিবে।”—মথি ২১:৪৩.

আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে উৎসর্গীকরণ

১৫. সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে পিতর তার শ্রোতাদের কোন ধরনের বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন?

১৫ সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের পর, যিহুদি অথবা পরজাতি প্রত্যেককে আলাদা আলাদাভাবে ঈশ্বরের কাছে ব্যক্তিগত উৎসর্গ করতে এবং “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তাইজিত হতে হয়েছিল। * (মথি ২৮:১৯) পঞ্চাশত্তমীর দিনে সাড়া দিয়েছিল এমন যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “মন ফিরাও, এবং তোমরা প্রত্যেক জন তোমাদের পাপমোচনের নিমিত্ত যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজিত হও; তাহা হইলে পবিত্র আত্মারূপ দান প্রাপ্ত হইবে।” (প্রেরিত ২:৩৮) এই যিহুদি ও ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের তাদের বাপ্তিস্মের মাধ্যমে শুধু যিহোবার কাছে তারা যে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছে সেটাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে যিশুকে যে তারা এমন এক মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে, যার দ্বারা যিহোবা তাদের পাপের ক্ষমা করবেন, সেই বিষয়টাও দেখাতে হয়েছিল। তাদের স্বীকার করতে হয়েছিল যে, তিনিই হলেন যিহোবার মহাযাজক ও তাদের নেতা এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক।—কলসীয় ১:১৩, ১৪, ১৮.

১৬. পৌলের দিনে কীভাবে সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা—যিহুদি ও পরজাতীয়রা—আত্মিক ইস্রায়েলের অংশ হয়ে উঠেছিল?

১৬ কয়েক বছর পর, প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “প্রথমে দম্মেশকের লোকদের কাছে, পরে যিরূশালেমে ও যিহূদিয়ার সমস্ত জনপদে, এবং পরজাতিদের কাছে প্রচার করিতে লাগিলাম যে, তাহারা যেন মন ফিরায়, ও ঈশ্বরের প্রতি ফিরিয়া আইসে, মনপরিবর্ত্তনের উপযোগী কার্য্য করে।” (প্রেরিত ২৬:২০) যিশুই যে খ্রিস্ট অর্থাৎ মশীহ ছিলেন, সেই সম্বন্ধে লোকেদের—যিহুদি ও পরজাতীয়দের—দৃঢ়প্রত্যয়ী করার পর, পৌল তাদেরকে উৎসর্গীকরণ করতে ও বাপ্তিস্ম নিতে সাহায্য করেছিলেন। (প্রেরিত ১৬:১৪, ১৫, ৩১-৩৩; ১৭:৩, ৪; ১৮:৮) ঈশ্বরের প্রতি ফিরে আসার মাধ্যমে এই নতুন শিষ্যরা আত্মিক ইস্রায়েলের সদস্য হয়ে উঠেছিল।

১৭. কোন মুদ্রাঙ্কিতকরণের কাজ শেষ হতে চলেছে আর অন্য কোন কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে?

১৭ আজকে, অবশিষ্ট আত্মিক ইস্রায়েলের চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কিতকরণ খুব কাছেই। এটা যখন সম্পূর্ণ হবে, তখন “মহাক্লেশের” ধ্বংসের বায়ু ধরে থাকা ‘চারি দূতকে’ তা ছেড়ে দেওয়ার অধিকার দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে, পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে এমন ‘বিস্তর লোকের’ একত্রীকরণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এই “আরও মেষ” স্বেচ্ছায় “মেষশাবকের রক্তে” বিশ্বাস দেখিয়ে চলা বেছে নেয় এবং যিহোবার প্রতি তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে বাপ্তাইজিত হয়। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১-৪, ৯-১৫; ২২:১৭; যোহন ১০:১৬; মথি ২৮:১৯, ২০) তাদের মধ্যে এমন অনেক অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে রয়েছে, যাদেরকে খ্রিস্টান বাবামারা মানুষ করে তুলছে। তুমি যদি এইরকম একজন অল্পবয়স্ক হয়ে থাক, তা হলে পরের প্রবন্ধটা পড়ার জন্য তুমি আগ্রহী হবে।

[পাদটীকা]

^ ২০০৩ সালের ১৫ই মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩০-১ পৃষ্ঠা দেখুন।

পুনরালোচনা

• কেন অল্পবয়স্ক ইস্রায়েলীয়দের যিহোবার কাছে ব্যক্তিগত উৎসর্গীকরণ করতে হতো না?

• কীভাবে ইস্রায়েলীয়রা দেখাতে পারত যে, তারা তাদের উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে চলেছিল?

• কেন যিহোবা ইস্রায়েলকে তাঁর উৎসর্গীকৃত জাতি হিসেবে পরিত্যাগ করেছিলেন এবং কীভাবে তা স্থানান্তরিত করা হয়েছিল?

• সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে, যিহুদি ও পরজাতি উভয়কেই আত্মিক ইস্রায়েলের সদস্য হওয়ার জন্য কী করতে হয়েছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

অল্পবয়স্ক ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের মনোনীত জাতির সদস্য হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিল

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে প্রত্যেক ইস্রায়েলীয়কে ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

স্বেচ্ছাকৃত বলিদানগুলো ইস্রায়েলীয়দেরকে যিহোবার প্রতি তাদের ভালবাসা দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছিল

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের পর, খ্রিস্টের অনুসারীদের ঈশ্বরের কাছে ব্যক্তিগত উৎসর্গীকরণ করতে আর বাপ্তিস্মের মাধ্যমে তা প্রকাশ করতে হয়েছিল