সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“যে অনুযোগ মানে, সেই সতর্ক হয়”

“যে অনুযোগ মানে, সেই সতর্ক হয়”

“যে অনুযোগ মানে, সেই সতর্ক হয়”

 “তুমি শাসনে মন দেও, জ্ঞানের কথায় কর্ণ দেও,” হিতোপদেশ ২৩:১২ পদ বলে। এই শাস্ত্রপদে ব্যবহৃত ‘শাসন’ বা নৈতিক প্রশিক্ষণের সঙ্গে আত্মশাসন এবং অন্যদের কাছ থেকে আমরা যে-অনুযোগ লাভ করি, উভয়ই জড়িত। এইরকম শাসনের জন্য কোন ধরনের সংশোধন প্রয়োজন এবং কীভাবে তা প্রদান করতে হবে, সেই বিষয়ে জানা আবশ্যক। তাই, শাসনের জন্য এক নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে ‘জ্ঞানের কথা’ লাভ করা অপরিহার্য।

বাইবেলের হিতোপদেশ বইটি হচ্ছে প্রজ্ঞার বাক্যের এক চমৎকার উৎস। এর মধ্যে লিপিবদ্ধ হিতোপদেশ থেকে “প্রজ্ঞা ও উপদেশ পাওয়া যায়, . . . উপদেশ পাওয়া যায় বিজ্ঞতার আচরণ সম্বন্ধে, ধার্ম্মিকতা, বিচার ও ন্যায় সম্বন্ধে।” (হিতোপদেশ ১:১-৩) আর সেগুলোতে ‘কর্ণ দিয়া’ আমরা জ্ঞানবান হই। হিতোপদেশ ১৫ অধ্যায় ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ, জিহ্বার ব্যবহার এবং জ্ঞান বিতরণের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা প্রদান করে। আসুন আমরা সেই অধ্যায় থেকে কয়েকটি পদ বিবেচনা করি।

কী “ক্রোধ নিবারণ করে”?

ক্রোধের ক্ষেত্রে মুখের কথা কীভাবে প্রভাবিত করে, তা বর্ণনা করে প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন বলেন: “কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে, কিন্তু কটুবাক্য কোপ উত্তেজিত করে।” (হিতোপদেশ ১৫:১) “কোপ” বা ক্রোধ হচ্ছে এমন একটি শব্দ, যা কোনো তীব্র আবেগ বা অসন্তোষজনক প্রতিক্রিয়াকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। এই হিতোপদেশটি কীভাবে আমাদেরকে অন্য ব্যক্তির ক্রোধের সঙ্গে মোকাবিলা করতে এবং সেইসঙ্গে নিজেদের ক্রোধ দমনে সাহায্য করতে পারে?

কষ্ট দেয় এমন রূঢ় কথাবার্তা অপ্রীতিকর পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। অন্যদিকে, কোমল উত্তরের প্রায়ই এক প্রশান্তিজনক প্রভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও, একজন ক্রুদ্ধ ব্যক্তিকে কোমলভাবে উত্তর দেওয়া সবসময় সহজ নয়। কিন্তু, আমরা যদি বোঝার চেষ্টা করি যে কী কারণে তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তা হলে এটা সাহায্যকারী হয়ে থাকে। “মানুষের বুদ্ধি তাহাকে ক্রোধে ধীর করে,” বাইবেল বলে, “আর দোষ ছাড়িয়া দেওয়া তাহার শোভা।” (হিতোপদেশ ১৯:১১) এমনটা কি হতে পারে যে, একজন ব্যক্তি অনিশ্চয়তা বোধ করছেন বলে বা অন্যের মনোযোগ পেতে চান বলে ক্রুদ্ধ হয়েছেন? আমাদের কোনো কথা বা কাজ হয়তো তার ক্রুদ্ধ হওয়ার পিছনে মূল কারণ নয়। খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় গিয়ে আমরা যখন কোনো ক্রোধপূর্ণ সাড়া পাই, তখন সেটা প্রায়ই কি এইজন্য হয় না যে, গৃহকর্তা আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে কোনো ভুল তথ্য জেনেছেন বা কোনো ভুল ধারণার কারণে অন্ধ হয়ে আছেন? তা হলে, আমরা কি এইরকম মনে করব যে, ব্যক্তিগতভাবে আমাদেরকেই আক্রমণ করা হচ্ছে আর তাই রূঢ়ভাবে উত্তর দেব? এমনকি যখন কারো ক্রুদ্ধ হওয়ার কারণ সঙ্গে সঙ্গে বোঝা না-ও যায়, তখনও উত্তরে কষ্ট দিয়ে কথা বলা ইঙ্গিত করবে যে, আমাদের আত্মশাসনের অভাব রয়েছে। এভাবে উত্তর দেওয়া পরিহার করা উচিত।

এ ছাড়া, আমাদের নিজেদের ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করার সময়ও কোমল উত্তর দেওয়ার উপদেশটা অমূল্য প্রমাণিত হয়। শ্রোতার কাছে যেন শুনতে খারাপ না লাগে এমনভাবে আমাদের আবেগ-অনুভূতিকে প্রকাশ করতে শেখার দ্বারা আমরা এই পরামর্শ কাজে লাগাতে পারি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময়, রূঢ়ভাবে কথা বলার অথবা অপমানজনক কোনো নামে ডাকার পরিবর্তে, আমরা আমাদের অনুভূতিকে শান্তভাবে প্রকাশ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে পারি। রূঢ় কথাবার্তা সাধারণত প্রতিশোধপরায়ণ করে তোলে। একজন ব্যক্তিকে আমাদের অনুভূতি মৃদুভাবে বুঝিয়ে বললে তা কম সমালোচনামূলক শোনাবে আর তা হয়তো তাকে সংশোধিত হতে পরিচালিত করবে।

‘জ্ঞানীদের জিহ্বা উত্তমরূপে ব্যক্ত করে’

আত্মশাসন আমাদের কথা বলার ধরন ও সেইসঙ্গে আমরা যা বলি, সেটাকেও প্রভাবিত করে। “জ্ঞানীদের জিহ্বা উত্তমরূপে জ্ঞান ব্যক্ত করে,” শলোমন বলেন, “কিন্তু হীনবুদ্ধিদের মুখ অজ্ঞানতা উদ্গার করে।” (হিতোপদেশ ১৫:২) আমরা যখন অন্যদেরকে সাহায্য করার ও তাদের কাছে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ও তাঁর চমৎকার ব্যবস্থাগুলো সম্বন্ধে কথা বলার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলি, তখন আমরা কি ‘উত্তমরূপে জ্ঞান ব্যক্ত করিতেছি’ না? একজন হীনবুদ্ধি ব্যক্তি তা করতে ব্যর্থ হন কারণ তার জ্ঞানের অভাব রয়েছে।

জিহ্বার ব্যবহার সম্বন্ধে আরও নির্দেশনা প্রদান করার আগে, শলোমন ভাবিয়ে তোলার মতো এক বৈসাদৃশ্য তুলে ধরেন। “সদাপ্রভুর চক্ষু সর্ব্বস্থানেই আছে, তাহা অধম ও উত্তমদের প্রতি দৃষ্টি রাখে।” (হিতোপদেশ ১৫:৩) আমরা এতে আনন্দ করতে পারি কারণ আমাদের এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে: “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” (২ বংশাবলি ১৬:৯) যা ভাল, আমরা তা করছি কি না, ঈশ্বর তা জানেন। সেইসঙ্গে তিনি সেই ব্যক্তিদের প্রতিও লক্ষ রাখেন, যারা এমন বিষয়গুলো করছে যা মন্দ এবং তাদের কাছ থেকে তিনি নিকাশ নেবেন।

শলোমন এরপর এক অমায়িক জিহ্বার মূল্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন: “স্বাস্থ্যজনক জিহ্বা জীবনবৃক্ষ; কিন্তু তাহা বিগড়াইয়া গেলে আত্মা ভগ্ন হয়।” (হিতোপদেশ ১৫:৪) “জীবনবৃক্ষ” অভিব্যক্তিটি আরোগ্যকর ও পুষ্টিদায়ক গুণাগুণকে ইঙ্গিত করে। (প্রকাশিত বাক্য ২২:২) একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির স্বাস্থ্যজনক বা শান্ত কথাবার্তা শ্রোতাদের মনোভাবকে সতেজ করে। এটা তাদের ভাল গুণাবলিকে তুলে ধরে। অন্যদিকে, এক প্রতারণাপূর্ণ বা বিকৃত জিহ্বা শ্রোতাদের আত্মা বা মনকে ভেঙে দেয়।

শাসন লাভ করা এবং ‘জ্ঞান ছড়াইয়া দেওয়া’

“অজ্ঞান আপন পিতার শাসন অগ্রাহ্য করে,” বিজ্ঞ রাজা বলে চলেন, “কিন্তু যে অনুযোগ মানে, সেই সতর্ক হয়।” (হিতোপদেশ ১৫:৫) কীভাবে কেউ ‘অনুযোগ মানিতে’ পারে, যদি তা না-ই করা হয়? এই শাস্ত্রপদটি কি ইঙ্গিত করে না যে, প্রয়োজন হলে সংশোধনমূলক শাসন প্রদান করতেই হবে? কোনো পরিবারে বাবামার—বিশেষ করে বাবার—দায়িত্ব হচ্ছে শাসন প্রদান করা আর সন্তানের কর্তব্য হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া। (ইফিষীয় ৬:১-৩) তবে, যিহোবার সমস্ত দাসই কোনো না কোনোভাবে শাসন লাভ করে থাকে। “প্রভু [“যিহোবা,” NW] যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাসন করেন,” ইব্রীয় ১২:৬ পদ বলে, “যে কোন পুত্ত্রকে গ্রহণ করেন, তাহাকেই প্রহার করেন।” শাসনের প্রতি আমরা যেভাবে সাড়া দিই, সেটাই প্রকাশ করে যে আমরা জ্ঞানবান নাকি মূর্খ।

আরেকটা বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে শলোমন বলেন: “জ্ঞানবানদের ওষ্ঠাধর জ্ঞান ছড়াইয়া দেয়; কিন্তু হীনবুদ্ধিদের চিত্ত স্থির নয়।” (হিতোপদেশ ১৫:৭) জ্ঞান বিতরণ করা হচ্ছে বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার মতো। প্রাচীনকালে, একজন কৃষক একটা জায়গাতেই তার সমস্ত বীজ বপন করতেন না। এর পরিবর্তে, তিনি একবারে অল্প কিছু বীজ নিয়ে পুরো জমিতে ছড়িয়ে বপন করতেন। জ্ঞান বিতরণের ক্ষেত্রেও একই বিষয় বলা যায়। উদাহরণস্বরূপ, পরিচর্যায় আমাদের যখন কারো সঙ্গে দেখা হয়, তখন বাইবেল সম্বন্ধে আমরা যা জানি, তার সবটুকু একবারেই জানিয়ে দেওয়া বিজ্ঞতার কাজ হবে না। এর পরিবর্তে, জ্ঞানবান ব্যক্তি তার কথাবার্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানেন। তিনি যখন একবারে বাইবেলের শুধু একটি সত্যকে ধীরে ধীরে তুলে ধরেন এবং শ্রোতা যেভাবে সাড়া দেন, তা বিবেচনা করে তার আলোচনা চালিয়ে যান, তখন তিনি জ্ঞান ‘ছড়াইয়া দেন।’ আমাদের আদর্শ যিশু খ্রিস্ট, একজন শমরীয় স্ত্রীলোকের সঙ্গে কথা বলার সময় তা-ই করেছিলেন।—যোহন ৪:৭-২৬.

জ্ঞান প্রদান করার সঙ্গে শিক্ষণীয় ও উপকারজনক কিছু বলা জড়িত। তথ্যমূলক ও উৎসাহজনক কথা বলার জন্য চিন্তা করার প্রয়োজন হয়। তাই, “ধার্ম্মিকের মন উত্তর করিবার নিমিত্ত চিন্তা করে।” (হিতোপদেশ ১৫:২৮) এটা কত গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের কথাগুলো যেন মৃদু বৃষ্টির মতো হয়, যা ভূমিকে সিক্ত করে, তা যেন মুষলধারে পড়া এমন অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির মতো না হয়, যা এর পথের সমস্তকিছুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়!

“আচার ব্যবহারে পবিত্র”

যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া এবং “স্তব-বলি” হিসেবে তাঁকে “ওষ্ঠাধরের ফল” উৎসর্গ করা নিশ্চিতভাবেই প্রজ্ঞার কাজ। (ইব্রীয় ১৩:১৫) কিন্তু, এই ধরনের এক বলি যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য আমাদের অবশ্যই “সমস্ত আচার ব্যবহারে পবিত্র” হতে হবে। (১ পিতর ১:১৪-১৬) দুটো তুলনামূলক হিতোপদেশ তুলে ধরে শলোমন এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করান। তিনি বলেন: “দুষ্টদের বলিদান সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ; কিন্তু সরলদের প্রার্থনা তাঁহার সন্তোষজনক। দুষ্টদের পথ সদাপ্রভুর ঘৃণাস্পদ; কিন্তু তিনি ধার্ম্মিকতার অনুগামীকে ভালবাসেন।”হিতোপদেশ ১৫:৮, ৯.

যারা জীবনে যাওয়ার পথকে পরিত্যাগ করছে, তারা অনুযোগকে কীভাবে দেখে আর তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? (মথি ৭:১৩, ১৪) “সৎ-পথত্যাগীর জন্য দুঃখদায়ক শাস্তি আছে; যে অনুযোগ ঘৃণা করে, সে মরিবে।” (হিতোপদেশ ১৫:১০) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংশোধনমূলক পরামর্শ মেনে নেওয়ার এবং অকৃত্রিমভাবে অনুতপ্ত হওয়ার পরিবর্তে, অন্যায় পথে চলছে এমন কিছু ব্যক্তি ধার্মিকতার পথ পরিত্যাগ করা বেছে নেয়। কত বড় মূর্খতা!

কী হবে, যদি কেউ অনুযোগ মেনে নেওয়ার ভান করে কিন্তু আসলে মনে মনে এটাকে ঘৃণা করে? এটাও অজ্ঞানতা হবে। “পাতাল ও বিনাশস্থান সদাপ্রভুর দৃষ্টিগোচর,” ইস্রায়েলের রাজা বলেন। “তবে মনুষ্য-সন্তানদের হৃদয়ও কি তদ্রূপ নয়?” (হিতোপদেশ ১৫:১১) রূপকভাবে বলতে গেলে, জীবন্ত ঈশ্বরের কাছে মৃতদের স্থান পাতালের চেয়ে দূরবর্তী আর কোনো জায়গাই থাকতে পারে না। তা সত্ত্বেও, এটা তাঁর দৃষ্টিগোচর রয়েছে। পাতালে বিদ্যমান সকলের পরিচয় ও ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে তিনি জানেন আর তিনি তাদেরকে পুনরুত্থিত করতে সক্ষম। (গীতসংহিতা ১৩৯:৮; যোহন ৫:২৮, ২৯) তা হলে, মানুষের হৃদয়ে কী রয়েছে, তা জানা যিহোবার পক্ষে আরও কত বেশি সহজ! “তাঁহার সাক্ষাতে কোন সৃষ্ট বস্তু অপ্রকাশিত নয়; কিন্তু তাঁহার চক্ষুর্গোচরে সকলই নগ্ন ও অনাবৃত রহিয়াছে, যাঁহার কাছে আমাদিগকে নিকাশ দিতে হইবে,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন। (ইব্রীয় ৪:১৩) ভান করা মানুষকে বোকা বানাতে পারে কিন্তু ঈশ্বরকে নয়।

শাসনকে প্রত্যাখ্যান করেন এমন একজন ব্যক্তি শুধু অনুযোগকেই ঘৃণা করেন না কিন্তু সেইসঙ্গে যারা অনুযোগ করে, তাদের প্রতিও বিদ্বেষ পোষণ করে থাকেন। “নিন্দক অনুযোগ [“যে অনুযোগ করে তাকে,” NW] ভালবাসে না,” শলোমন বলেন। এই ধারণার ওপর জোর দেওয়ার জন্য এরপর তিনি এইরকমই আরেকটা বিষয় উল্লেখ করেন: “সে জ্ঞানবানের কাছে যায় না।” (হিতোপদেশ ১৫:১২) এইরকম একজন ব্যক্তি তার পথকে সরল করবেন, এমন আশা বলতে গেলে একেবারেই নেই!

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

‘হৃদয়’ বা মন শব্দটির উল্লেখ শলোমনের পরের তিনটি হিতোপদেশকে যুক্ত করে। আমাদের চেহারার ওপর আমাদের আবেগ-অনুভূতির প্রভাব সম্বন্ধে বর্ণনা করে জ্ঞানী রাজা বলেন: “আনন্দিত মন মুখকে প্রফুল্ল করে, কিন্তু মনের ব্যথায় আত্মা ভগ্ন হয়।”হিতোপদেশ ১৫:১৩.

কোন কারণে মনোব্যথা হতে পারে? “দুশ্চিন্তার ভারে মানুষের অন্তর [দুঃখে] ভেংগে পড়ে,” বাইবেল বলে। (হিতোপদেশ ১২:২৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) জীবনের নেতিবাচক দিকগুলোকে আমরা কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারি, যাতে তা আমাদের আত্মাকে ভগ্ন না করে? যে-পরিস্থিতিগুলোর ওপর আমাদের সামান্যই নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেগুলো নিয়ে ক্রমাগত চিন্তা করার পরিবর্তে, যিহোবা এখন আমাদের ওপর যে-প্রচুর আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ বর্ষণ করেছেন এবং ভবিষ্যতে তিনি আমাদের জন্য যা করবেন, তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে চিন্তা করতে পারি। এই বিষয়টা করা আমাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী করবে। হ্যাঁ, “পরম ধন্য [“সুখী,” NW]” ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া আমাদের দুঃখার্ত হৃদয়কে আনন্দিত করবেই করবে।—১ তীমথিয় ১:১১.

অধিকন্তু, বাইবেলের বার্তা হচ্ছে সান্ত্বনা ও আমোদের এক চমৎকার উৎস। গীতরচক সেই ব্যক্তিকে সুখী বলেছিলেন, যিনি ‘সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করেন, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করেন।’ (গীতসংহিতা ১:১, ২) এমনকি যখন আমরা মনোব্যথা অনুভব করি, তখন বাইবেল পড়া ও এটি যা বলে তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা আমাদের উৎসাহ দেবে। এ ছাড়া, আমাদের ঈশ্বরদত্ত পরিচর্যাও রয়েছে। আমরা নিশ্চিত যে, “যাহারা সজল নয়নে বীজ বপন করে, তাহারা আনন্দগান-সহ শস্য কাটিবে।”—গীতসংহিতা ১২৬:৫.

“বুদ্ধিমানের মন জ্ঞান অন্বেষণ করে,” শলোমন বলেন, “কিন্তু হীনবুদ্ধিদের মুখ অজ্ঞানতা-ক্ষেত্রে চরে।” (হিতোপদেশ ১৫:১৪) এই হিতোপদেশটি একজন জ্ঞানবান ব্যক্তির পরামর্শ ও একজন হীনবুদ্ধি বা মূর্খ ব্যক্তির পরামর্শের মধ্যে স্পষ্ট বৈসাদৃশ্যের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করায়। উপদেশ দেওয়ার আগে, একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির মন জ্ঞান অন্বেষণ করে। তিনি ভালমতো শোনেন এবং পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করেন। সেই পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য আইন ও নীতিগুলো নির্ণয় করার জন্য তিনি শাস্ত্র অনুসন্ধান করেন। তার পরামর্শের দৃঢ় ভিত্তি হচ্ছে ঈশ্বরের বাক্য। কিন্তু, একজন মূর্খ ব্যক্তি কোনো পরিস্থিতির আসল ঘটনাগুলো বের করে আনার ব্যাপারে মাথা ঘামান না এবং মনে যা আসে, হুট করে তা-ই বলে ফেলেন। তাই, যখন আমরা পরামর্শ খোঁজার চেষ্টা করি, তখন যে-ব্যক্তিদের হয়তো আমাদের মনঃপূত বিষয়গুলো বলার প্রবণতা রয়েছে, তাদের কাছে না গিয়ে বরং সেই ব্যক্তিদের কাছে যাওয়া বিজ্ঞতার কাজ হবে, যারা জ্ঞানী ও পরিপক্ব। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষদের পাওয়া কতই না উপকারজনক, যারা কোনো পরামর্শ দেওয়ার আগে “জ্ঞান অন্বেষণ করে”!—ইফিষীয় ৪:৮.

পরের হিতোপদেশটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার ফলে এক চমৎকার উপকার সম্বন্ধে বর্ণনা করে। ইস্রায়েলের রাজা বলেন: “দুঃখীর সকল দিনই অশুভ; কিন্তু যাহার হৃষ্ট মন, তাহার সততই ভোজ।” (হিতোপদেশ ১৫:১৫) জীবনে সুসময়-দুঃসময়, হাসি-কান্না সবই রয়েছে। যদি আমরা কেবল নেতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় চিন্তা করি, তা হলে দুঃখ আমাদের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করবে আর আমাদের সমস্ত দিনই বিষণ্ণ হবে। কিন্তু, যদি আমরা ব্যক্তিগত আশীর্বাদগুলোকে এবং ঈশ্বরদত্ত আশাকে আমাদের চিন্তার ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে দিই, তা হলে জীবনের দুর্দশা সৃষ্টিকারী দিকগুলো গৌণ বিষয় হয়ে উঠবে আর আমরা মনের শান্তি লাভ করব। এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জন্য “সততই ভোজ” উপভোগ করা সম্ভবপর করে।

তাই, আসুন আমরা যেকোনোভাবেই হোক শাসনকে উচ্চমূল্য দিই। আমরা যেন এটাকে শুধু আমাদের আবেগ, কথাবার্তা ও কাজকেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকেও প্রভাবিত করতে দিই।

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

“কোমল উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে”

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

শাসন প্রদান করা বাবামার দায়িত্ব

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

“জ্ঞানবানদের ওষ্ঠাধর জ্ঞান ছড়াইয়া দেয়”