সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গীতসংহিতা বইয়ের তৃতীয় এবং চতুর্থ বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো

গীতসংহিতা বইয়ের তৃতীয় এবং চতুর্থ বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো

যিহোবার বাক্য জীবন্ত

গীতসংহিতা বইয়ের তৃতীয় এবং চতুর্থ বিভাগের প্রধান বিষয়গুলো

 একটা প্রার্থনায় ঈশ্বরের কাছে গীতরচক জিজ্ঞেস করেন: “কবরের মধ্যে কি তোমার দয়া, বিনাশস্থানে কি তোমার বিশ্বস্ততা প্রচারিত হইবে?” (গীতসংহিতা ৮৮:১১) অবশ্যই উত্তরটা হচ্ছে, না। মৃত অবস্থায় আমরা যিহোবার প্রশংসা করতে পারি না। যিহোবার প্রশংসা করা হচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকার এক উত্তম কারণ এবং বেঁচে থাকা আমাদেরকে তাঁকে প্রশংসা করার জন্য প্রেরণা দেয়।

গীতসংহিতা ৭৩ থেকে ১০৬ অধ্যায় নিয়ে গঠিত গীতসংহিতা বইয়ের তৃতীয় এবং চতুর্থ বিভাগ, সৃষ্টিকর্তাকে প্রশংসা করার এবং তাঁর নামের ধন্যবাদ করার বহু কারণ জোগায়। এই গীতগুলোর ওপর ধ্যান করা ‘ঈশ্বরের বাক্যের’ প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে গভীর করে তুলবে এবং তাঁর প্রতি আমাদের প্রশংসার অভিব্যক্তিগুলোকে আরও বাড়াতে এবং উন্নত করতে পরিচালিত করবে। (ইব্রীয় ৪:১২) অধীর আগ্রহ নিয়ে আসুন আমরা প্রথমে গীতসংহিতা বইয়ের তৃতীয় বিভাগটি দেখি।

“ঈশ্বরের নিকটে থাকা আমারই পক্ষে মঙ্গল”

(গীতসংহিতা ৭৩:১–৮৯:৫২)

তৃতীয় বিভাগের প্রথম ১১টি গীত আসফ অথবা আসফের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা রচিত হয়েছে। শুরুর গীতটি ব্যাখ্যা করে যে, কী আসফকে ভুল চিন্তাধারার দ্বারা বিপথে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছে। তিনি সঠিক উপসংহারে পৌঁছেছিলেন। তিনি গেয়ে ওঠেন, “ঈশ্বরের নিকটে থাকা আমারই পক্ষে মঙ্গল।” (গীতসংহিতা ৭৩:২৮) ৭৪ গীতে যিরূশালেমের ধ্বংস সম্বন্ধে বিলাপ রয়েছে। ৭৫, ৭৬ ও ৭৭ গীত যিহোবাকে ন্যায্য বিচারকর্তা, মৃদুশীল লোকেদের পরিত্রাতা এবং প্রার্থনা শ্রবণকারী হিসেবে চিত্রিত করে। ৭৮ গীত মোশির সময় থেকে দায়ূদের সময় পর্যন্ত ইস্রায়েলের বিগত দিনগুলো সম্বন্ধে পুনরালোচনা করে। ৭৯তম গীত মন্দিরের ধ্বংস সম্বন্ধে বিলাপ করে। এরপরের গীতটি হচ্ছে, ঈশ্বরের লোকেদের পুনর্স্থাপনের জন্য করা এক প্রার্থনা। ৮১ গীতটি যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করে। ৮২ ও ৮৩ গীত হল যথাক্রমে ভ্রষ্ট বিচারক এবং ঈশ্বরের শত্রুদের ওপর ঐশিক বিচার আনার জন্য করা প্রার্থনা।

“আমার প্রাণ সদাপ্রভুর প্রাঙ্গণের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে, এমন কি, মূর্চ্ছিত হয়,” কোরহ সন্তানদের একটি সংগীত এভাবে উল্লেখ করে। (গীতসংহিতা ৮৪:২) ৮৫ গীতটি হচ্ছে নির্বাসন থেকে ফিরে আসা ইস্রায়েলীয়দের ওপর ঈশ্বরের আশীর্বাদের জন্য করা এক অনুরোধ। এই গীতটি এই বিষয়ের ওপর জোর দেয় যে, বস্তুগত আশীর্বাদের চেয়ে আধ্যাত্মিক আশীর্বাদই অনেক অনেক গুণ বেশি মূল্যবান। ৮৬ গীতে, দায়ূদ তাকে রক্ষা করার এবং শিক্ষা দেওয়ার জন্য ঈশ্বরকে অনুরোধ জানান। ৮৭ গীত হচ্ছে সিয়োন ও যারা সেখানে জন্মগ্রহণ করে তাদের সম্বন্ধে একটি সংগীত আর এরপর ৮৮ গীত হচ্ছে যিহোবার কাছে করা এক প্রার্থনা। ৮৯ গীতে দায়ূদের সঙ্গে করা চুক্তিতে ব্যক্ত যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়ার ওপর আবার জোর দেওয়া হয়েছে এবং এই গীতটির রচনা করেছেন এথন, যিনি সম্ভবত শলোমনের দিনে চারজন জ্ঞানী পুরুষের মধ্যে একজন ছিলেন।—১ রাজাবলি ৪:৩১.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৭৩:৯—কীভাবে দুষ্টরা “আকাশে মুখ রাখিয়াছে, এবং তাহাদের জিহ্বা পৃথিবীতে বিহার করে”? যেহেতু দুষ্ট ব্যক্তিদের স্বর্গ বা পৃথিবীর কারো প্রতি কোনোরকম সম্মান নেই, তাই তারা তাদের মুখ দিয়ে ঈশ্বরের নিন্দা করতে দ্বিধাবোধ করে না। এ ছাড়া, তারা তাদের জিহ্বা দিয়ে মানুষকে অপবাদ দেয়।

৭৪:১৩, ১৪, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন—কেন যিহোবা ‘সাগরের মধ্যে জল-দানবদের মাথা ভেংগে দিয়েছিলেন, লিবিয়াথনের মাথাগুলো চুরমার করে দিয়েছিলেন’? ‘মিশরের রাজা ফরৌণকে নীলনদের মাঝখানে শুয়ে থাকা সেই সামুদ্রিক দানব’ বলা হয়। (যিহিষ্কেল ২৯:৩, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন) লিবিয়াথন হয়তো ফরৌণের পরাক্রমী ব্যক্তিদের চিত্রিত করে। তাদের মাথা চুরমার করা বলতে সম্ভবত ফরৌণ এবং তার সৈন্যবাহিনীর পরাজিত হওয়াকে বোঝায়, যে-সময়ে যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের মিশরের বন্দিত্ব থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

৭৫:৪, ৫, ১০—“শৃঙ্গ” শব্দটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? একটা পশুর শৃঙ্গ বা শিং হচ্ছে এক শক্তিশালী হাতিয়ার। তাই, “শৃঙ্গ” শব্দটি রূপকভাবে ক্ষমতা বা শক্তিকে বোঝায়। যিহোবা তাঁর লোকেদের শিংগুলো তোলেন, তাদেরকে উচ্চীকৃত করেন কিন্তু ‘দুষ্টগণের সমস্ত শৃঙ্গ কাটিয়া ফেলেন।’ “শৃঙ্গ উচ্চে তুলিও না” বলে আমাদের সাবধান করা হয়েছে, অর্থাৎ আমাদের গর্বিত বা উদ্ধত মনোভাব রাখা উচিত নয়। যেহেতু যিহোবা উচ্চীকৃত করেন, তাই মণ্ডলীতে দেওয়া দায়িত্বভারগুলোকে তাঁর কাছ থেকে পাওয়া দায়িত্ব হিসেবে দেখা উচিত।—গীতসংহিতা ৭৫:৭.

৭৬:১০—কীভাবে “মনুষ্যের ক্রোধ” যিহোবার স্তব করে? আমরা ঈশ্বরের দাস বলে তিনি যখন মানুষকে আমাদের প্রতি তাদের ক্রোধ প্রকাশ করার অনুমতি দিয়ে থাকেন, তখন এক ভাল পরিণতি আসতে পারে। আমাদের যে ধরনের কষ্টভোগই করতে হোক না কেন, তা আমাদের কোনো না কোনোভাবে শিক্ষা প্রদান করে। যিহোবা ততক্ষণ পর্যন্ত কষ্টভোগের অনুমতি দিয়ে থাকেন, যতক্ষণ না আমরা এই ধরনের শিক্ষা লাভ করি। (১ পিতর ৫:১০) ‘মানুষের ক্রোধের অবশেষ দ্বারা ঈশ্বর কটিবন্ধন করিবেন।’ কষ্টভোগ করে আমরা যদি মারা পড়ি, তা হলে কী? এটাও যিহোবার স্তব করতে পারে কারণ যারা আমাদের বিশ্বস্তভাবে সহ্য করতে দেখে, তারাও হয়তো ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করতে শুরু করবে।

৭৮:২৪, ২৫—কেন মান্নাকে “স্বর্গের শস্য” এবং “পরাক্রমীদের খাদ্য [“স্বর্গদূতের খাবার,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]” বলা হয়েছে? এই দুটি অভিব্যক্তির কোনোটাই বোঝায় না যে, মান্না স্বর্গদূতদের খাবার ছিল। এটা এই অর্থে “স্বর্গের শস্য” ছিল যে, এটার উৎস ছিল স্বর্গে। (গীতসংহিতা ১০৫:৪০) যেহেতু স্বর্গদূতেরা বা ‘পরাক্রমীরা’ স্বর্গে বাস করে, তাই “স্বর্গদূতের খাবার” অভিব্যক্তিটি হয়তো সাধারণভাবে বোঝাতে পারে যে, এটি ঈশ্বর জুগিয়েছিলেন যিনি স্বর্গে বাস করেন। (গীতসংহিতা ১১:৪) এ ছাড়া, ইস্রায়েলীয়দের মান্না জোগানোর জন্য যিহোবা স্বর্গদূতদেরও হয়তো ব্যবহার করেছিলেন।

৮২:১, ৬—কাদেরকে “ঈশ্বরদের” এবং “পরাৎপরের সন্তান” বলা হয়? এই দুটি অভিব্যক্তিই ইস্রায়েলের মানব বিচারকদের নির্দেশ করে। এটা উপযুক্ত কারণ তাদের ঈশ্বরের মুখপাত্র ও প্রতিনিধি হিসেবে সেবা করার কথা ছিল।—যোহন ১০:৩৩-৩৬.

৮৩:২—‘একজনের মস্তক তোলা’ বলতে কী ইঙ্গিত করে? এই অঙ্গভঙ্গি, ক্ষমতা ব্যবহার করা বা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকাকে বোঝায়, সাধারণত যে-পদক্ষেপ বিরোধিতা, লড়াই বা অত্যাচার করার জন্য নেওয়া হয়ে থাকে।

আমাদের জন্য শিক্ষা:

৭৩:২-৫, ১৮-২০, ২৫, ২৮. আমাদের দুষ্ট লোকেদের সাফল্য দেখে ঈর্ষা করা এবং তাদের অধার্মিক পথ অনুসরণ করা উচিত নয়। দুষ্ট লোকেরা পিচ্ছল ভূমিতে রয়েছে। তাদেরকে নিশ্চিতভাবেই ‘বিনাশে ফেলিয়া দেওয়া হইবে।’ অধিকন্তু, অসিদ্ধ মানব শাসনের অধীনে যেহেতু দুষ্টতাকে সরানো যাবে না, তাই সেটা নির্মূল করার জন্য আমাদের করা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। আসফের মতো আমরাও বিজ্ঞ হই, যদি আমরা ‘ঈশ্বরের নিকটে থাকিয়া’ এবং তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার দ্বারা আনন্দিত হয়ে দুষ্টতার সঙ্গে মোকাবিলা করি।

৭৩:৩, ৬, ৮, ২৭. আমাদের গর্ব, অহংকার, বিদ্রূপ ও উপদ্রব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে। এমনকি এই ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা উপকারজনক বলে মনে হলেও আমাদের নিজেদেরকে রক্ষা করতে হবে।

৭৩:১৫-১৭. আমরা যখন মানসিকভাবে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি, তখন আমাদের বিভ্রান্তিকর চিন্তাধারাকে জনসাধারণ্যে প্রকাশ করা এড়িয়ে চলা উচিত। ‘এইরূপ বর্ণনা’ করা শুধু অন্যদের নিরুৎসাহিতই করবে। তাই, শান্তভাবে আমাদের দুশ্চিন্তা নিয়ে অবশ্যই ধ্যান করা এবং সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করে সেটা মিটমাট করা উচিত।—হিতোপদেশ ১৮:১.

৭৩:২১-২৪. দুষ্ট লোকের আপাত সুখভোগের কারণে “চিত্ত তাপিত” হওয়াকে মূর্খ পশুর প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে আবেগতাড়িত, কেবলমাত্র অনুভূতির বশে করা। এর বিপরীতে, আমাদের উচিত যিহোবার মন্ত্রণা বা পরামর্শ দ্বারা চালিত হওয়া ও পূর্ণ আস্থা রাখা যে, তিনি আমাদের “দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া” রাখবেন এবং আমাদের সমর্থন করবেন। এ ছাড়া, যিহোবা ‘সপ্রতাপে আমাদের গ্রহণ করিবেন,’ অর্থাৎ তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে নিয়ে আসবেন।

৭৭:৬. আধ্যাত্মিক সত্য সম্বন্ধে জিজ্ঞাসু হতে অধ্যয়ন ও ধ্যান করার জন্য সময় দরকার। এইজন্য আমাদের জীবনে কিছুক্ষণের নিরিবিলি পাওয়ার জন্য সময় করে নেওয়া কতই না প্রয়োজন!

৭৯:৯. যিহোবা আমাদের প্রার্থনা শোনেন, বিশেষ করে যখন তা তাঁর নামের পবিত্রীকরণ সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত থাকে।

৮১:১৩, ১৬. যিহোবার কথা শোনা এবং তাঁর পথে চলা প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসে।—হিতোপদেশ ১০:২২.

৮২:২, ৫. অন্যায় বিষয়গুলো ‘পৃথিবীর ভিত্তিমূলকে’ টলটলায়মান করে। অন্যায্য কাজগুলো মানবসমাজে অস্থিরতা নিয়ে আসে।

৮৪:১-৪, ১০-১২. যিহোবার উপাসনা স্থানের প্রতি গীতরচকদের উপলব্ধিবোধ এবং সেবার বিশেষ সুযোগগুলোর প্রতি তাদের পরিতৃপ্তির অনুভূতি আমাদের জন্য উদাহরণযোগ্য।

৮৬:৫. যিহোবা “ক্ষমাবান্‌” বলে আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি! তিনি এমন যেকোনো প্রমাণের সন্ধান করেন, যেটা তাঁকে একজন অনুতপ্ত অন্যায়কারীর প্রতি করুণা দেখানোর ভিত্তি জোগাবে।

৮৭:৫, ৬. যারা পার্থিব পরমদেশে জীবন পাবে তারা কি কখনো সেই ব্যক্তিদের নাম জানতে পারবে, যারা স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থিত হবে? এই পদগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, এটার কেবল এক সম্ভাবনা রয়েছে।

৮৮:১৩, ১৪. কোনো নির্দিষ্ট সমস্যা সম্বন্ধে আমাদের প্রার্থনার উত্তর পেতে বিলম্ব হওয়া সম্ভবত বোঝাতে পারে যে, যিহোবা চান যে, তাঁর প্রতি আমাদের ভক্তি কতটা অকৃত্রিম তা যেন আমরা প্রদর্শন করি।

“তাঁহার স্তব কর, তাঁহার নামের ধন্যবাদ কর”

(গীতসংহিতা ৯০:১–১০৬:৪৮)

যিহোবাকে প্রশংসা করার বিভিন্ন কারণ সম্বন্ধে গীতসংহিতা বইয়ের চতুর্থ বিভাগ যা উল্লেখ করে, তা বিবেচনা করুন। ৯০ গীতে, মোশি মানুষের ক্ষণস্থায়ী জীবনের সঙ্গে ‘যুগপর্য্যায়ের রাজার’ অস্তিত্বকে তুলনা করেন। (১ তীমথিয় ১:১৭) গীত ৯১:২ পদ অনুযায়ী, মোশি যিহোবাকে ‘তাহার আশ্রয়, তাহার দুর্গ’—তার সুরক্ষার উৎস—বলে উল্লেখ করেন। পরের কয়েকটি গীত ঈশ্বরের অপূর্ব গুণাবলি, উৎকৃষ্ট চিন্তাভাবনা এবং চমৎকার কাজগুলো সম্বন্ধে বলে। তিনটি গীত “সদাপ্রভু রাজত্ব করেন” এই অভিব্যক্তি দিয়ে শুরু হয়। (গীতসংহিতা ৯৩:১; ৯৭:১; ৯৯:১) যিহোবাকে আমাদের নির্মাতা হিসেবে বলে গীতরচক আমাদেরকে ‘তাঁহার স্তব করিতে, তাঁহার নামের ধন্যবাদ করিতে’ আমন্ত্রণ জানান।—গীতসংহিতা ১০০:৪.

যিহোবাকে ভয় করেন এমন একজন রাজার তার কাজকর্মকে কীভাবে পরিচালনা করা উচিত? রাজা দায়ূদের দ্বারা রচিত ১০১ গীত এর উত্তর দেয়। পরের গীতটি আমাদের জানায় যে, যিহোবা “দীনহীনদের প্রার্থনার দিকে ফিরিয়াছেন, তাহাদের প্রার্থনা তুচ্ছ করেন নাই।” (গীতসংহিতা ১০২:১৭) ১০৩ গীতটি যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়া এবং করুণার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পৃথিবীতে ঈশ্বরের সৃষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ করে গীতরচক উল্লাসে বলে ওঠেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার নির্ম্মিত বস্তু কেমন বহুবিধ! তুমি প্রজ্ঞা দ্বারা সে সমস্ত নির্ম্মাণ করিয়াছ।” (গীতসংহিতা ১০৪:২৪) গীতসংহিতা বইয়ের চতুর্থ বিভাগের শেষ দুটি গীত যিহোবাকে তাঁর চমৎকার কাজগুলোর জন্য প্রশংসা করে।—গীতসংহিতা ১০৫:২, ৫; ১০৬:৭, ২২.

শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:

৯১:১, ২—‘পরাৎপরের অন্তরাল’ কী আর কীভাবে আমরা সেখানে “বসতি” করতে পারি? এটা হচ্ছে আধ্যাত্মিক নিরাপত্তার এক রূপক স্থান—আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার এক অবস্থা। এটা অন্তরাল কারণ যারা ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে না, তাদের কাছে এটা অজানা। আমাদের আশ্রয় ও দুর্গ হিসেবে তাঁর ওপর নির্ভর করে, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম শাসক হিসেবে তাঁর প্রশংসা করে এবং রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে আমরা যিহোবাকে আমাদের বসতি করি। আমরা আধ্যাত্মিকভাবে নিরাপদবোধ করি কারণ আমরা জানি যে, যিহোবা আমাদের সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছেন।—গীতসংহিতা ৯০:১, NW.

৯২:১২—কীভাবে ধার্মিক ব্যক্তিরা “তালতরুর ন্যায় উৎফুল্ল হইবে”? তাল গাছ এর ফলদানের জন্য উল্লেখযোগ্য। একজন ধার্মিক ব্যক্তি এই অর্থে একটা তাল গাছের সদৃশ যে, তিনি যিহোবার দৃষ্টিতে সরলসিধে এবং “ভাল ফল” উৎপন্ন করেন অর্থাৎ ভাল কাজগুলো করে থাকেন।—মথি ৭:১৭-২০.

আমাদের জন্য শিক্ষা:

৯০:৭, ৮, ১৩, ১৪. আমাদের মন্দ কাজ সবসময় সত্য ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে। আর গুপ্ত পাপগুলোকে তাঁর কাছ থেকে লুকানো যায় না। কিন্তু, আমরা যদি সত্যিই অনুতপ্ত হই এবং আমাদের মন্দ কাজগুলো পরিত্যাগ করি, তা হলে যিহোবা আবার আমাদের প্রতি অনুগ্রহ দেখাবেন, ‘আমাদিগকে তাঁহার দয়াতে তৃপ্ত করিবেন।’

৯০:১০, ১২. যেহেতু জীবন ক্ষণস্থায়ী, তাই ‘আমাদের দিন গণনা করা’ উচিত? কীভাবে? “প্রজ্ঞার চিত্ত” লাভ করার দ্বারা অথবা প্রজ্ঞা কাজে লাগানোর দ্বারা যাতে আমাদের বাকি দিনগুলো নষ্ট না হয় কিন্তু যেন এমনভাবে কাজে লাগানো হয়, যা যিহোবাকে সন্তুষ্ট করে। এর জন্য আধ্যাত্মিক বিষয়ে অগ্রাধিকার স্থাপন করা এবং আমাদের সুযোগ বা সময়কে জ্ঞানবানের ন্যায় ব্যয় করা উচিত।—ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬; ফিলিপীয় ১:১০, NW.

৯০:১৭. এটা প্রার্থনা করা উপযুক্ত যে, যিহোবা যেন ‘আমাদের হস্তের কর্ম্ম স্থায়ী করেন’ এবং পরিচর্যায় আমাদের প্রচেষ্টাকে আশীর্বাদ করেন।

৯২:১৪, ১৫. ঈশ্বরের বাক্যের অধ্যবসায়ী ছাত্র হওয়ার এবং যিহোবার লোকেদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে মেলামেশা করার দ্বারা বয়স্ক ব্যক্তিরা সর্বদাই “সরস ও তেজস্বী”—আধ্যাত্মিকভাবে সক্রিয়—থাকে এবং মণ্ডলীর জন্য মূল্যবান সম্পদ প্রমাণিত হয়।

৯৪:১৯. আমাদের “আন্তরিক ভাবনার” কারণ হয়তো যা-ই হোক না কেন, বাইবেলে প্রাপ্ত “সান্ত্বনা” সম্বন্ধে পড়া ও তা নিয়ে ধ্যান করা আমাদের উৎসাহ দেবে।

৯৫:৭, ৮. শাস্ত্রীয় পরামর্শ শ্রবণ করা, সেটার প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং সঙ্গে সঙ্গে সেটার বাধ্য হওয়া আমাদের হৃদয়কে কঠিন করা রোধ করতে সাহায্য করবে।—ইব্রীয় ৩:৭, ৮.

১০৬:৩৬, ৩৭. এই পদগুলো প্রতিমাপূজাকে ভূতদের বা মন্দ দূতদের উদ্দেশে করা বলিদানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করে। এটা ইঙ্গিত দেয় যে, যে-ব্যক্তি প্রতিমা ব্যবহার করেন, তিনি হয়তো মন্দ দূতদের প্রভাবে পড়তে পারেন। বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয়: “তোমরা প্রতিমাগণ হইতে আপনাদিগকে রক্ষা কর।”—১ যোহন ৫:২১.

“তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর”

গীতসংহিতা বইয়ের চতুর্থ বিভাগের শেষ তিনটি গীত, এই পরামর্শ দিয়ে শেষ হয়: “তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর।” এ ছাড়া, এই বিভাগের শেষ গীতটি এই কথাগুলো দিয়ে শুরুও হয়। (গীতসংহিতা ১০৪:৩৫; ১০৫:৪৫; ১০৬:১, ৪৮) বস্তুত, “তোমরা সদাপ্রভুর প্রশংসা কর” অভিব্যক্তিটি গীতসংহিতা বইয়ের চতুর্থ বিভাগে প্রায়ই পাওয়া যায়।

নিঃসন্দেহে, আমাদের যিহোবাকে প্রশংসা করার বহু কারণ রয়েছে। ৭৩ থেকে ১০৬ গীতগুলো আমাদেরকে ধ্যান করার অনেক বিষয় জুগিয়েছে এবং আমাদের হৃদয়কে আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধে ভরে দিয়েছে। তিনি আমাদের জন্য ইতিমধ্যেই যা কিছু করেছেন এবং ভবিষ্যতে যা করতে চলেছেন, সেটা যখন আমরা চিন্তা করি তখন আমরা কি প্রাণপণে “সদাপ্রভুর প্রশংসা” করতে পরিচালিত হই না?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আসফের মতো আমরা ‘ঈশ্বরের নিকটে থাকিবার’ দ্বারা দুষ্টতাকে মোকাবিলা করতে পারি

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফরৌণ লোহিত সমুদ্রে (সূফ-সাগরে) পরাজিত হয়েছিলেন

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি জানেন, কেন মান্নাকে “পরাক্রমীদের খাদ্য” বলা হয়েছে?

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

কী আমাদের ‘আন্তরিক ভাবনাকে’ দূর করতে সাহায্য করে?