পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
একজন ব্যক্তিকে কি অশুচিতায় রত হওয়ার কারণে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত করা হতে পারে, যেমনটা ব্যভিচার অথবা স্বৈরিতার ক্ষেত্রে ঘটতে পারে?
হ্যাঁ, একজন ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে যদি তিনি অনুতাপহীনভাবে ব্যভিচার বা বেশ্যাগমন, কিছু কিছু অশুচিতা অথবা স্বৈরিতা অভ্যাস করেই চলেন। প্রেরিত পৌল সমাজচ্যুত হওয়ার যোগ্য আরও অন্যান্য পাপ কাজের সঙ্গে এই তিনটে বিষয়কেও অন্তর্ভুক্ত করেন, যখন তিনি লেখেন: “মাংসের কার্য্য সকল প্রকাশ আছে; সেগুলি এই—বেশ্যাগমন, অশুচিতা, স্বৈরিতা . . . আমি তোমাদিগকে অগ্রে বলিতেছি, . . . যাহারা এই প্রকার আচরণ করে, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।”—গালাতীয় ৫:১৯-২১.
ব্যভিচার (গ্রিক, পরনিয়া) বলতে শাস্ত্রসম্মত বিবাহের বাইরে অবৈধ যৌনসম্পর্ককে বোঝায়। এটা পারদারিকতা, বেশ্যাবৃত্তি এবং অবিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে যৌনসম্পর্ক এবং সেইসঙ্গে মৌখিক ও পায়ু যৌনতা আর সেই ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহিত নন এমন কোনো ব্যক্তির যৌনাঙ্গের অপব্যবহারকেও অন্তর্ভুক্ত করে। অনুতাপহীনভাবে ব্যভিচার করে চলেন এমন একজন ব্যক্তি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অংশ হতে পারেন না।
স্বৈরিতা (গ্রিক, আসেলিয়া) হল “লম্পটতা; চরিত্রহীনতা; নির্লজ্জ আচরণ, কামাতুর আচরণ।” দ্যা নিউ থেয়ারস্
গ্রিক-ইংলিশ লেক্সিকন, গ্রিক শব্দটিকে “অসংযত কামলালসা, . . . নীতি-বিগর্হিত, নির্লজ্জতা, ঔদ্ধত্য” হিসেবে বর্ণনা করে। অন্য আরেকটি অভিধান অনুসারে, স্বৈরিতা হল এমন এক আচারব্যবহার, যা “সমাজে গ্রহণযোগ্য সমস্ত সীমাকে লঙ্ঘন করে।”উল্লেখিত সংজ্ঞাগুলো যেমন দেখায়, “স্বৈরিতা” দুটো বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে: (১) এইরকম আচরণ হচ্ছে ঈশ্বরের আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং (২) অন্যায়কারীর মনোভাব হল অসম্মানজনক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ।
অতএব, “স্বৈরিতা” ছোটখাটো কোনো মন্দ আচরণকে বোঝায় না। এটা এমন বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে, যেগুলো হচ্ছে ঈশ্বরের আইনের গুরুতর লঙ্ঘন আর তা এক উদ্ধত বা চরম অসম্মানজনক মনোভাবকে—কর্তৃত্ব, আইন এবং মানগুলোর প্রতি অসম্মান অথবা এমনকি ঘৃণা প্রদর্শন করে এমন মনোভাবকে—প্রতিফলিত করে থাকে। পৌল স্বেচ্ছাচারিতা বা স্বৈরিতাকে অবৈধ যৌন সহবাসের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। (রোমীয় ১৩:১৩, ১৪, NW) যেহেতু গালাতীয় ৫:১৯-২১ পদ স্বৈরিতাকে এমন কিছু পাপপূর্ণ অভ্যাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে, যেগুলো একজন ব্যক্তিকে ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকার লাভ করার অযোগ্য করে তুলতে পারে, তাই স্বৈরিতার কারণে তিরস্কার করা যায় এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে সমাজচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অশুচিতা (গ্রিক, আকাথারসিয়া) হিসেবে অনুবাদিত শব্দটি “বেশ্যাগমন,” “অশুচিতা” এবং “স্বৈরিতা,” এই তিনটে শব্দের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক অর্থ বহন করে। এটা যেকোনো ধরনের—যৌনতার বিষয়ে, কথাবার্তায়, কাজকর্মে এবং আধ্যাত্মিক কলুষতার—অশুদ্ধতাকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। “অশুচিতা” চরম গুরুতর পাপগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে।
পৌল ২ করিন্থীয় ১২:২১ পদে লিপিবদ্ধ কথাগুলোতে তাদের সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, “যাহারা পূর্ব্বে পাপ করিয়াছিল, তথাপি আপনাদের কৃত অশুচি ক্রিয়া, ব্যভিচার ও লম্পটাচার বিষয়ে অনুতাপ করে নাই।” যেহেতু ‘অশুচিতাকে’ ‘ব্যভিচার ও লম্পটাচারের’ বা স্বৈরিতার সঙ্গে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, তাই কিছু কিছু অশুচিতার কারণে বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। কিন্তু, অশুচিতার ব্যাপক অর্থ রয়েছে যেগুলো বিচার সংক্রান্ত নয় এমন বিভিন্ন বিষয়কেও অন্তর্ভুক্ত করে। ঠিক যেমন একটা বাড়ি হয়তো কিছুটা অপরিষ্কার বা একেবারে নোংরা হতে পারে, তেমনই অশুচিতারও বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে।
ইফিষীয় ৪:১৯ পদ অনুসারে পৌল বলেছিলেন যে, কিছু ব্যক্তিরা “অসাড় হইয়া” এবং “সলোভে সর্ব্বপ্রকার অশুচি ক্রিয়া করিবার জন্য আপনাদিগকে স্বৈরিতায় সমর্পণ করিয়াছে।” এভাবে পৌল ‘সলোভে অশুচিতাকে’ স্বৈরিতার সঙ্গে একই শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করেন। যদি একজন বাপ্তাইজিত ব্যক্তি অনুতাপহীনভাবে ‘সলোভে অশুচিতা’ অভ্যাস করে চলেন, তবে তাকে গুরুতর অশুচিতার কারণে মণ্ডলী থেকে বহিষ্কার করা যেতে পারে।
ধরুন, বাগ্দানে আবদ্ধ এক যুগল বেশ কয়েকবার পরস্পরকে কামনা উদ্রেককারী আলিঙ্গন ও চুম্বন করায় রত হয়েছে। প্রাচীনরা হয়তো নির্ধারণ করতে পারে যে, এই ব্যক্তিরা যদিও এমন কোনো উদ্ধত মনোভাব প্রকাশ করেনি যা স্বৈরিতাকে চিহ্নিত করে, তবুও তাদের আচরণের মধ্যে কিছুটা লোভ জড়িত ছিল। সুতরাং, প্রাচীনরা হয়তো বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিতে পারে, কারণ এতে গুরুতর অশুচিতা অন্তর্ভুক্ত আছে। যে-ব্যক্তি অন্য আরেকজন ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে বার বার খোলাখুলিভাবে যৌনতা বিষয়ক কথাবার্তা বলে থাকেন, তার ক্ষেত্রে গুরুতর অশুচিতার দায়ে বিচার সংক্রান্ত বিষয় পরিচালনা করা উপযুক্ত হবে, বিশেষভাবে তাকে যদি এই বিষয়ে আগেই পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
এই ধরনের বিচার করার ক্ষেত্রে প্রাচীনদের বিচক্ষণতা দরকার। বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার যথাযথ কারণ আছে কি না, তা নির্ধারণ করার জন্য তাদেরকে অবশ্যই যা ঘটেছিল এবং যতটা ব্যাপকভাবে তা করা হয়েছিল সেগুলো সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করতে হবে। তার মানে এই নয় যে, একজন ব্যক্তি শাস্ত্রীয় উপদেশ গ্রহণ না করলেই তাকে স্বৈরিতার দোষে দোষী করা হবে; অথবা এটা গাণিতিক উপায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতোও এমন কোনো বিষয় নয় যে, একজন ব্যক্তি কতবার একটা নির্দিষ্ট পাপপূর্ণ কাজ করার পর বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। প্রাচীনদের উচিত হবে সতর্কতার সঙ্গে ও প্রার্থনাপূর্বক প্রতিটা পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং কী ঘটেছিল, কতবার ঘটেছিল, অশোভন আচরণের প্রকৃতি ও মাত্রা এবং অন্যায়কারীর উদ্দেশ্য ও মনোভাব খুঁজে দেখা।
গুরুতর অশুচিতা যৌনতা বিষয়ক পাপের চেয়েও বেশি কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন বাপ্তাইজিত ছেলে হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকটা সিগারেট খেতে পারে এবং সেটা তার বাবামার কাছে স্বীকার করতে পারে। সে আর কখনো ধূমপান না করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এটা ২ করিন্থীয় ৭:১) যদি সেই ছেলেটি অনুতপ্ত না হয়, তবে সে সমাজচ্যুত হবে।
অশুচিতা কিন্তু তা এতটা ব্যাপক মাত্রায় পৌঁছায়নি যে, সেটা গুরুতর অশুচিতা বা ‘সলোভে অশুচিতা’ বলা যায়। ওই ছেলের জন্য তার বাবামাসহ একজন বা দুজন প্রাচীনের দেওয়া শাস্ত্রীয় পরামর্শই যথেষ্ট হবে। কিন্তু, সেই ছেলেটি যদি একজন নিয়মিত ধূমপায়ী হয়, তবে সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে মাংসের মালিন্য বলে বিবেচিত হবে এবং গুরুতর অশুচিতার এই বিষয়টা বিবেচনা করার জন্য বিচার সংক্রান্ত কমিটি ডাকা হবে। (কিছু খ্রিস্টান অশ্লীল ছবি দেখায় জড়িত হয়ে পড়েছে। এটা ঈশ্বরের কাছে অসন্তোষজনক এবং একজন সহবিশ্বাসী এমন কাজ করেছে বলে প্রাচীনরা হয়তো আশ্চর্য হতে পারে। কিন্তু, যেকোনো অশ্লীল ছবি দেখার ফলেই একজন ব্যক্তিকে বিচার সংক্রান্ত কমিটির সামনে শুনানির জন্য ডাকা হয় না। উদাহরণ হিসেবে, ধরুন একজন ভাই বিভিন্ন সময়ে হালকা ধরনের অশ্লীল বিষয় দেখেছেন। তিনি এর জন্য লজ্জিত হয়ে একজন প্রাচীনের কাছে তা স্বীকার করেছেন এবং এই পাপ পুনরাবৃত্তি না করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়েছেন। সেই প্রাচীন হয়তো এই উপসংহারে আসতে পারেন যে, ওই ভাইয়ের আচরণ এতটা চরমে পৌঁছায়নি যে, তিনি ‘সলোভে অশুচিতায়’ রত হয়েছেন; অথবা তিনি উদ্ধত মনোভাবও দেখাননি যে, তা স্বৈরিতাকে চিত্রিত করে। যদিও কোনো বিচার সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন নেই তবুও এই ধরনের অশুচিতার জন্য জোরালো শাস্ত্রীয় পরামর্শ এবং সম্ভবত প্রাচীনদের কাছ থেকে ক্রমাগত সাহায্যের দরকার হতে পারে।
কিন্তু ধরুন, একজন খ্রিস্টান বছরের পর বছর ধরে গোপনে জঘন্য, যৌনতা বিষয়ক নিকৃষ্ট মানের অশ্লীল ছবি দেখেছেন ও সেই পাপ লুকিয়ে রাখার জন্য যথাসম্ভব সবকিছু করেছেন। এই ধরনের অশ্লীল ছবিতে হয়তো গণধর্ষণ, একজন ব্যক্তিকে বেঁধে যৌন সহবাস করা, যৌনপীড়ন, মহিলাদের ওপর নিষ্ঠুর অত্যাচার অথবা শিশুদের নিয়ে তৈরি অশ্লীল দৃশ্য রয়েছে। যখন অন্যেরা তার আচরণ সম্বন্ধে জানতে পারে, তখন তিনি লজ্জিত হন। তিনি উদ্ধত হয়ে পড়েননি কিন্তু প্রাচীনরা হয়তো নির্ধারণ করতে পারে যে, এই নোংরা অভ্যাসে তিনি ‘নিজেকে সমর্পণ করেছেন’ এবং ‘সলোভে অশুচিতা’ অভ্যাস করছেন, যা হল গুরুতর অশুচিতা। এতে গুরুতর অশুচিতা জড়িত থাকার কারণে একটা বিচার সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেই অন্যায়কারী যদি ঈশ্বরীয় অনুতাপ প্রদর্শন না করে থাকেন এবং পুনরায় কখনো অশ্লীল ছবি না দেখার বিষয় সংকল্পবদ্ধ না হন, তা হলে তাকে সমাজচ্যুত করা হবে। অশ্লীল ছবি দেখার জন্য তিনি যদি তার ঘরে অন্যদেরকেও আমন্ত্রণ জানান—মূলত এই বিষয়ে উৎসাহ দেন—তা হলে তিনি উদ্ধত মনোভাবের প্রমাণ দেবেন, যা স্বৈরিতাকে চিত্রিত করে।
শাস্ত্রীয় শব্দ “স্বৈরিতা” সবসময় গুরুতর পাপকে অন্তর্ভুক্ত করে আর প্রায়ই তা যৌন প্রকৃতির। স্বৈরিতাকে নির্ণয় করার সময় প্রাচীনদের দেখা উচিত যে, বিষয়টাতে উদ্ধতভাব, চরিত্রহীনতা, অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা রয়েছে কি না এবং সকলের নীতিবোধের কাছে কোন বিষয়টা আঘাতজনক। অন্য দিকে, উদ্ধত মনোভাব প্রকাশ করেননি এমন একজন ব্যক্তির দ্বারা যিহোবার আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের মধ্যে ‘লোভ’ জড়িত থাকতে পারে। এই ধরনের বিষয়গুলো তারা যে-গুরুতর অশুচিতার সঙ্গে যুক্ত, সেটার ভিত্তিতে প্রাচীনদের মীমাংসা করতে হবে।
কোনো ব্যক্তি গুরুতর অশুচিতা অথবা স্বৈরিতার দোষে দোষী হওয়ার মতো পর্যায়ে পৌঁছেছে কি না, তা নির্ণয় করা এক গুরু দায়িত্ব, কারণ এর সঙ্গে জীবন জড়িত রয়েছে। যারা এই বিষয়গুলো বিচার করে থাকে তাদের তা প্রার্থনাপূর্বক করা উচিত এবং ঈশ্বরের কাছে পবিত্র আত্মা, বিচক্ষণতা এবং বোঝার ক্ষমতা চাওয়া উচিত। প্রাচীনদের মণ্ডলীর শুদ্ধতা বজায় রাখতে হবে এবং তাদের অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য ও সেইসঙ্গে ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসের’ নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে বিচার করতে হবে। (মথি ১৮:১৮; ২৪:৪৫) আর এই মন্দ সময়ে, আগের চেয়ে অনেক বেশি করে প্রাচীনদের এই কথাগুলো মনে রাখতে হবে: “তোমরা যাহা করিবে, সাবধান হইয়া করিও, কেননা তোমরা মনুষ্যদের জন্য নয়, কিন্তু সদাপ্রভুর জন্য বিচার করিবে।”—২ বংশাবলি ১৯:৬.