সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন

যিহোবা দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন

যিহোবা দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন

“ধার্ম্মিকের বিপদ অনেক, কিন্তু সেই সকল হইতে সদাপ্রভু তাহাকে উদ্ধার করেন।”—গীতসংহিতা ৩৪:১৯.

১, ২. একজন বিশ্বস্ত খ্রিস্টান কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন আর আমরাও কেন একইরকম অনুভূতির মুখোমুখি হতে পারি?

 কেইকো * নামে একজন অল্পবয়সি মহিলা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একজন যিহোবার সাক্ষি। কিছু সময়ের জন্য তিনি একজন নিয়মিত অগ্রগামী অথবা পূর্ণসময়ের রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে সেবা করেন। সেই বিশেষ সুযোগকে তিনি অত্যন্ত মূল্যবান বলে গণ্য করেন। কিন্তু, কয়েক দিনের মধ্যেই নিরাশা ও একাকিত্ব কেইকোকে গ্রাস করে। তিনি বলেন, “আমি সারাক্ষণ শুধু কাঁদতাম।” তার নেতিবাচক চিন্তাভাবনার সঙ্গে লড়াই করার জন্য কেইকো ব্যক্তিগত অধ্যয়নে আরও বেশি করে সময় দিতেন। “তারপরও আমি আমার অবস্থার পরিবর্তন করতে পারিনি,” তিনি বলেন। “আমি এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম যে, মরে যেতে চেয়েছিলাম।”

আপনিও কি হতাশার একই অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করেছেন? যিহোবার একজন সাক্ষি হিসেবে আপনার আনন্দ করার অনেক কারণ রয়েছে যেহেতু ঈশ্বরীয় ভক্তি “বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিজ্ঞাযুক্ত।” (১ তীমথিয় ৪:৮) এখনই আপনি এক আধ্যাত্মিক পরমদেশে বাস করছেন! কিন্তু এর অর্থ কি এই যে, আপনি সমস্ত দুর্দশা থেকে সুরক্ষিত? কখনোই না! বাইবেল বলে: “ধার্ম্মিকের বিপদ অনেক।” (গীতসংহিতা ৩৪:১৯) আর এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই কারণ “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার” অর্থাৎ শয়তান দিয়াবলের “মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) কোনো না কোনোভাবে, আমরা সকলেই এই বাস্তবতার প্রভাবগুলো সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকি।—ইফিষীয় ৬:১২.

দুদর্শার বিভিন্ন প্রভাব

৩. ঈশ্বরের দাসদের সম্বন্ধে বাইবেলের এমন কয়েকটা উদাহরণ দিন, যারা চরম কষ্টকর অভিজ্ঞতা লাভ করেছে।

দীর্ঘস্থায়ী কষ্ট আমাদের সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্ধকার করে দিতে পারে। (হিতোপদেশ ১৫:১৫) ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি ইয়োবের কথা বিবেচনা করুন। চরম পরীক্ষার মধ্যে ইয়োব বলেছিলেন: “মনুষ্য, অবলাজাত সকলে, অল্পায়ু ও উদ্বেগে পরিপূর্ণ।” (ইয়োব ১৪:১) ইয়োবের আনন্দ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি কিছু সময়ের জন্য তিনি মনে করেছিলেন যে, যিহোবা তাকে পরিত্যাগ করেছেন। (ইয়োব ২৯:১-৫) ইয়োবই ঈশ্বরের একমাত্র দাস নন, যিনি নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। বাইবেল আমাদের বলে যে, নিঃসন্তান হওয়ায় হান্না “তিক্তপ্রাণা” হয়ে পড়েছিলেন। (১ শমূয়েল ১:৯-১১) পারিবারিক অবস্থার কারণে তিক্তবিরক্ত হয়ে রিবিকা বলেছিলেন: “আমার প্রাণে ঘৃণা হইতেছে।” (আদিপুস্তক ২৭:৪৬) দায়ূদ যখন তার ভুলগুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তখন বলেছিলেন: “আমি সমস্ত দিন বিষণ্ণ হইয়া বেড়াইতেছি।” (গীতসংহিতা ৩৮:৬) এই কয়েকটা উদাহরণ স্পষ্টভাবে দেখায় যে, প্রাক্‌খ্রিস্টীয় যুগের অনেক ঈশ্বরভয়শীল নারী ও পুরুষ চরম কষ্টকর সময় ভোগ করেছিল।

৪. কেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, আজকেও খ্রিস্টানদের মধ্যে ‘বিষণ্ণরা’ রয়েছে?

খ্রিস্টানদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? প্রেরিত পৌল থিষলনীকীয়দের এই কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন যে, ‘বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বল।’ (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪, NW) একটা তথ্যগ্রন্থ বলে যে, “বিষণ্ণদের” হিসেবে অনুবাদিত ইব্রীয় শব্দটির দ্বারা সেই ব্যক্তিদেরও নির্দেশ করা যেতে পারে, “যারা জীবনের চাপের দ্বারা সাময়িকভাবে জর্জরিত হয়ে পড়েছে।” পৌলের কথাগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, থিষলনীকীর সেই মণ্ডলীতে আত্মায় অভিষিক্ত কিছু ব্যক্তি হতাশ হয়ে পড়েছিল। একইভাবে, আজকেও খ্রিস্টানদের মধ্যে বিষণ্ণ ব্যক্তিরা রয়েছে। কিন্তু, কেন তারা হতাশাগ্রস্ত? আসুন, আমরা তিনটে সাধারণ কারণ সম্বন্ধে বিবেচনা করি।

আমাদের পাপপূর্ণ স্বভাব আমাদেরকে কষ্ট দিতে পারে

৫, ৬. রোমীয় ৭:২২-২৫ পদ থেকে কোন সান্ত্বনা পাওয়া যেতে পারে?

“অসাড় হইয়া” পড়েছে এমন কলুষিত ব্যক্তিদের বিপরীতে সত্য খ্রিস্টানরা তাদের পাপপূর্ণ অবস্থার জন্য যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে। (ইফিষীয় ৪:১৯) তারা হয়তো পৌলের মতো একইরকম অনুভব করতে পারে, যিনি লিখেছিলেন: “বস্তুতঃ আন্তরিক মানুষের ভাব অনুসারে আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি। কিন্তু আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অন্য প্রকার এক ব্যবস্থা দেখিতে পাইতেছি; তাহা আমার মনের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এবং পাপের যে ব্যবস্থা আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আছে, আমাকে তাহার বন্দি দাস করে।” এরপর পৌল আক্ষেপ করে বলেছিলেন: “দুর্ভাগ্য মনুষ্য আমি!”—রোমীয় ৭:২২-২৪.

আপনি কি কখনো পৌলের মতো অনুভব করেছেন? আপনার অসিদ্ধতাগুলো সম্বন্ধে ভালভাবে অবগত হওয়া দোষের কিছু নয় কারণ এটা আপনাকে পাপের গুরুতর অবস্থা বুঝতে সাহায্য করতে পারে ও মন্দতা এড়িয়ে চলার জন্য আপনার সংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারে। কিন্তু, আপনার ভুলত্রুটিগুলো নিয়ে অবিরত কষ্ট পাওয়ার প্রয়োজন নেই। সবেমাত্র উদ্ধৃত কষ্টের কথাগুলোতে পৌল আরও যোগ করেছিলেন: “আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমি ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি।” (রোমীয় ৭:২৫) হ্যাঁ, পৌলের এই আস্থা ছিল যে, যিশুর পাতিত রক্ত তাকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ থেকে মুক্ত করতে পারে।—রোমীয় ৫:১৮.

৭. কী একজন ব্যক্তিকে তার পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলোর কারণে কষ্ট না পেতে সাহায্য করতে পারে?

আপনি যদি আপনার পাপপূর্ণ স্বভাবের দ্বারা জর্জরিত হয়ে পড়েছেন বলে বোধ করেন, তা হলে প্রেরিত যোহনের কথাগুলো থেকে সান্ত্বনা লাভ করুন, যিনি লিখেছিলেন: “যদি কেহ পাপ করে, তবে পিতার কাছে আমাদের এক সহায় আছেন, তিনি ধার্ম্মিক যীশু খ্রীষ্ট। আর তিনিই আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত, কেবল আমাদের নয়, কিন্তু সমস্ত জগতেরও পাপার্থক।” (১ যোহন ২:১, ২) আপনি যদি আপনার পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলোর কারণে কষ্ট পেয়ে থাকেন, তা হলে সবসময় মনে রাখবেন যে, যিশু সিদ্ধ লোকেদের জন্য নয় বরং পাপীদের জন্যই মারা গিয়েছিলেন। বাস্তবিকপক্ষে, “সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।”—রোমীয় ৩:২৩.

৮, ৯. কেন আমাদের নিজেদেরকে দোষ দেওয়ার চিন্তাভাবনা পরিত্যাগ করা উচিত?

কিন্তু, ধরুন অতীতে আপনি গুরুতর পাপ করেছিলেন। কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনি প্রার্থনায় হতে পারে বেশ কয়েক বার বিষয়টা যিহোবাকে জানিয়েছেন। খ্রিস্টান প্রাচীনদের কাছ থেকে আপনি আধ্যাত্মিক সাহায্য লাভ করেছেন। (যাকোব ৫:১৪, ১৫) আপনি প্রকৃতই অনুতপ্ত হয়েছিলেন আর এর ফলে মণ্ডলীর অংশ হিসেবে আছেন। অথবা আপনি হয়তো কিছু সময়ের জন্য ঈশ্বরের সংগঠন ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন কিন্তু পরে আপনি অনুতপ্ত হয়েছেন এবং পুনরায় শুদ্ধ মান অর্জন করেছেন। উভয় পরিস্থিতিতেই, আপনার অতীতের পাপ হয়তো আপনার মনে পড়ে ও আপনি কষ্ট পান। যদি তা-ই হয়ে থাকে, তা হলে মনে রাখবেন যে যিহোবা প্রকৃত অনুতপ্ত ব্যক্তিদের “প্রচুররূপে” ক্ষমা করেন। (যিশাইয় ৫৫:৭) অধিকন্তু, তিনি চান না যেন আপনি নিজেকে এমন অপরাধী বলে মনে করেন, যার কোনো আশা নেই। আসলে শয়তানই এইরকমটা চায়। (২ করিন্থীয় ২:৭, ১০, ১১) দিয়াবলকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে কারণ সে এটারই প্রাপ্য কিন্তু সে আপনাকে এইরকম মনে করাতে চায় যে, আপনিও একই বিচারের প্রাপ্য। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১০) আপনার বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেওয়ার এই পরিকল্পনায় শয়তানকে সফল হতে দেবেন না। (ইফিষীয় ৬:১১) বরং, এই বিষয়ে ‘তাহার প্রতিরোধ করুন,’ ঠিক যেমনটা অন্যান্য ক্ষেত্রেও আপনি করে থাকেন।—১ পিতর ৫:৯.

প্রকাশিত বাক্য ১২:১০ পদে শয়তানকে “আমাদের ভ্রাতৃগণের”—অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের—“উপরে দোষারোপকারী” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সে ঈশ্বরের সামনে “দিবারাত্র . . . তাহাদের নামে দোষারোপ করে।” এই পদ নিয়ে চিন্তা করা হয়তো আপনাকে এটা দেখতে সাহায্য করতে পারে যে, যদিও যিহোবা আপনাকে দোষ দেন না এবং অপরাধী বলে মনে করেন না কিন্তু আপনি যদি নিজেকে দোষ দেন ও অপরাধী বলে মনে করেন, তা হলে মিথ্যা দোষারোপকারী শয়তান খুশি হবে। (১ যোহন ৩:১৯-২২) কেন আপনার দোষত্রুটি নিয়ে সবসময় এতটাই কষ্ট পাবেন যে, আপনি হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবেন? ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে নষ্ট করার সুযোগ শয়তানকে দেবেন না। শয়তানকে কখনো এই বিষয়ে আপনাকে অন্ধ করে দিতে দেবেন না যে, যিহোবা হলেন ‘স্নেহশীল ও কৃপাময়, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে মহান্‌।’—যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬.

আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো আমাদেরকে নিরুৎসাহিত করতে পারে

১০. কোন কোন উপায়ে আমাদের সীমাবদ্ধতাগুলো আমাদেরকে নিরুৎসাহিত করতে পারে?

১০ কিছু খ্রিস্টান, তাদের সীমাবদ্ধতাগুলো ঈশ্বরের প্রতি তাদের সেবাকে যেভাবে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। আপনার বেলায় কি তা সত্য? হতে পারে যে, গুরুতর অসুস্থতা, বার্ধক্য অথবা অন্যান্য পরিস্থিতির কারণে আপনি আগের মতো পরিচর্যায় আর ততটা সময় দিতে পারেন না। এটা ঠিক যে, খ্রিস্টানদেরকে উৎসাহিত করা হয়েছে তারা যেন ঈশ্বরের সেবার জন্য সুযোগ বা সময় কিনে নেয়। (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬) কিন্তু, সীমাবদ্ধতাগুলো যদি সত্যিই আপনাকে পরিচর্যায় আরও বেশি কাজ করতে বাধা দেয় আর সেটা যদি আপনার কাছে নিরুৎসাহজনক বলে মনে হয়, তা হলে?

১১. কীভাবে গালাতীয় ৬:৪ পদে লিপিবদ্ধ পৌলের পরামর্শ আমাদের জন্য উপকার নিয়ে আসতে পারে?

১১ বাইবেল আমাদের শিথিল না হয়ে পড়তে ও “যাহারা বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা প্রতিজ্ঞা-সমূহের দায়াধিকারী, তাহাদের অনুকারী” হতে জোরালো পরামর্শ দেয়। (ইব্রীয় ৬:১২) আমরা একমাত্র তখনই তা করতে পারি, যদি আমরা তাদের উত্তম উদাহরণ পরীক্ষা করি ও তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু, আমরা যদি নিজেদেরকে অন্যদের সঙ্গে খারাপভাবে তুলনা করি এবং এই উপসংহারে আসি যে, আমরা যা-ই করি করি না কেন তা যথেষ্ট নয়, তা হলে আমরা কোনো উপকারই লাভ করতে পারব না। তাই, আমাদের পৌলের এই পরামর্শ কাজে লাগানো উচিত: “প্রত্যেক জন নিজ নিজ কর্ম্মের পরীক্ষা করুক, তাহা হইলে সে কেবল আপনার কাছে শ্লাঘা করিবার হেতু পাইবে, অপরের কাছে নয়।”—গালাতীয় ৬:৪.

১২. যিহোবাকে আমরা যে-সেবা প্রদান করি, তাতে কেন আমরা শ্লাঘা করতে পারি?

১২ এমনকি গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে সীমাবদ্ধতা থাকলেও খ্রিস্টানদের শ্লাঘা করার অনেক উত্তম কারণ রয়েছে। বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয়: “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।” (ইব্রীয় ৬:১০) হতে পারে যে, আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে বিভিন্ন পরিস্থিতি আগে আপনি যে-পরিমাণ কাজ করতে পারতেন, সেই একই পরিমাণ কাজ করাকে কঠিন করে তুলেছে। কিন্তু, যিহোবার সাহায্যে আপনি হয়তো খ্রিস্টীয় পরিচর্যার অন্যান্য দিকে যেমন টেলিফোনে সাক্ষ্যদান এবং চিঠি লেখায় আরও পূর্ণরূপে রত হতে পারেন। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনার পূর্ণহৃদয়ের সেবা এবং তাঁর ও সহমানবদের জন্য আপনি যে-প্রেম দেখান, সেটার জন্য যিহোবা আপনাকে আশীর্বাদ করবেন।—মথি ২২:৩৬-৪০.

“বিষম সময়” আমাদেরকে অবসন্ন করে দিতে পারে

১৩, ১৪. (ক) কোন কোন উপায়ে এই “বিষম সময়” হয়তো আমাদের দুর্দশাগ্রস্ত করতে পারে? (খ) কীভাবে আজকে স্নেহের অভাব স্পষ্ট দেখা যায়?

১৩ যদিও আমরা ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতে জীবনের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করে আছি, কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা ‘শেষ কালের বিষম সময়ে’ বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১) এটা জেনে আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি যে, দুর্দশামূলক ঘটনাগুলো স্পষ্ট দেখায় যে আমাদের উদ্ধার খুব কাছেই। তা সত্ত্বেও, আমাদের চারপাশের পরিস্থিতির দ্বারা আমরা প্রভাবিত হই। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি বেকার হয়ে থাকেন, তা হলে? চাকরি দুষ্প্রাপ্য হতে পারে আর মাসের পর মাস পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন যে, যিহোবা আসলেই আপনার দুরাবস্থা দেখেন কি না অথবা আপনার প্রার্থনা শোনেন কি না। অথবা আপনি হয়তো বৈষম্য বা অন্য কোনো ধরনের অবিচারের শিকার হয়েছেন। এমনকি সংবাদপত্রের শিরোনামগুলো পড়েও আপনি হয়তো ধার্মিক ব্যক্তি লোটের মতো একইরকম অনুভব করেন, যিনি তার চারপাশের লোকেদের লম্পটতা দেখে “ক্লিষ্ট” (“অবসন্ন” বাংলা জুবিলী বাইবেল) হয়েছিলেন।—২ পিতর ২:৭.

১৪ শেষকালের একটা নির্দিষ্ট দিক রয়েছে, যেটা আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, অনেকে “স্নেহরহিত” হবে। (২ তীমথিয় ৩:৩) অনেক পরিবারের মধ্যে পারিবারিক স্নেহের খুবই অভাব রয়েছে। বস্তুতপক্ষে, “সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখায় যে, লোকেরা অন্য কারো চেয়ে বরং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের দ্বারা হত, শারীরিকভাবে নির্যাতিত অথবা আবেগত বা যৌনভাবে নিপীড়িত হচ্ছে বলে মনে হয়,” পারিবারিক দৌরাত্ম্য (ইংরেজি) বই বলে। “যে-জায়গাটিতে লোকেদের ভালবাসা পাওয়া ও নিরাপদ বোধ করা উচিত, সেটাই কিছু প্রাপ্তবয়স্ক ও ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক জায়গা হয়ে উঠেছে।” গঠনমূলক নয় এমন পারিবারিক পরিবেশের মধ্যে যারা থাকে, তারা হয়তো পরবর্তী বছরগুলোতে উদ্বিগ্নতা ও হতাশার দ্বারা জর্জরিত হতে পারে। আপনার বেলায় যদি সেটা সত্য হয়ে থাকে, তা হলে কী?

১৫. কীভাবে যিহোবার প্রেম অন্য যেকোনো মানুষের প্রেমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ?

১৫ গীতরচক দায়ূদ গেয়েছিলেন: “আমার পিতামাতা আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন, কিন্তু সদাপ্রভু আমাকে তুলিয়া লইবেন।” (গীতসংহিতা ২৭:১০) এটা জানা কতই না সান্ত্বনাজনক যে, যিহোবার প্রেম যেকোনো মানব বাবামার প্রেমের চেয়ে ঊর্ধ্বে! বাবা অথবা মা প্রত্যাখ্যান করলে, খারাপ ব্যবহার করলে অথবা পরিত্যাগ করলে যত কষ্টই লাগুক না কেন, তা যিহোবা আপনার জন্য যতটা চিন্তা করেন, সেটার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। (রোমীয় ৮:৩৮, ৩৯) মনে রাখবেন যে, ঈশ্বর তাদেরকে আকর্ষিত করেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসেন। (যোহন ৩:১৬; ৬:৪৪) মানুষরা আপনার সঙ্গে যেরকম আচরণই করুক না কেন, আপনার স্বর্গীয় পিতা আপনাকে ভালবাসেন!

হতাশা থেকে মুক্ত হওয়ার ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলো

১৬, ১৭. হতাশার মুখোমুখি হলে একজন ব্যক্তি তার আধ্যাত্মিক শক্তি বজায় রাখার জন্য কী করতে পারেন?

১৬ হতাশার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য আপনি বিভিন্ন ব্যবহারিক পদক্ষেপ নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, খ্রিস্টীয় কার্যকলাপের এক গঠনমূলক কার্যক্রম অনুসরণ করুন। ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ধ্যান করুন, বিশেষভাবে যখন নিরুৎসাহিতা চরম বলে মনে হয়। গীতরচক গেয়েছিলেন: “যখন আমি বলিতাম, আমার চরণ বিচলিত হইল, তখন, হে সদাপ্রভু, তোমার দয়া আমাকে সুস্থির রাখিত। আমার আন্তরিক ভাবনার বৃদ্ধিকালে তোমার দত্ত সান্ত্বনা আমার প্রাণকে আহ্লাদিত করে।” (গীতসংহিতা ৯৪:১৮, ১৯) নিয়মিত বাইবেল পড়া আপনার মনকে সান্ত্বনামূলক বাক্য ও উৎসাহমূলক চিন্তাভাবনা দিয়ে পূর্ণ রাখতে সাহায্য করবে।

১৭ এ ছাড়া, প্রার্থনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আপনি যদি আপনার গভীর অনুভূতিগুলো ভাষায় পুরোপুরি প্রকাশ করতে না-ও পারেন, তবুও যিহোবা জানেন যে, আপনি কি বলার চেষ্টা করছেন। (রোমীয় ৮:২৬, ২৭) গীতরচক এই আশ্বাস দিয়েছিলেন: “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন, কখনও ধার্ম্মিককে বিচলিত হইতে দিবেন না।”—গীতসংহিতা ৫৫:২২.

১৮. হতাশাগ্রস্ত একজন ব্যক্তি কোন ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলো নিতে পারে?

১৮ কেউ কেউ ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের কারণে হতাশা ভোগ করে থাকে। * আপনার বেলায় যদি তা সত্য হয়ে থাকে, তা হলে আপনার মনোযোগকে ঈশ্বরের নতুন জগতের ওপর এবং যখন “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত” সেই সময়ের ওপর কিছুটা কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করুন। (যিশাইয় ৩৩:২৪) আপনার নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে যদি ক্ষণস্থায়ী হতাশার চেয়ে আরও বেশি বলে মনে হয়, তা হলে পেশাদারী ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য লাভের চেষ্টা করা বিজ্ঞতার কাজ হতে পারে। (মথি ৯:১২) এ ছাড়া, শারীরিকভাবেও আপনার যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা ও সামান্য ব্যায়াম হয়তো উপকারী হতে পারে। প্রয়োজনমতো বিশ্রাম নিচ্ছেন কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হোন। বেশি রাত পর্যন্ত টেলিভিশন দেখবেন না এবং এমন যেকোনো আমোদপ্রমোদ করা পরিহার করুন, যা আপনাকে শারীরিক ও আবেগগত দিক দিয়ে পরিশ্রান্ত করে ফেলবে। সর্বোপরি, ক্রমাগত ঈশ্বরীয় কাজ করে চলুন! যদিও এখনও সেই সময় আসেনি যখন ঈশ্বর “সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন,” তবুও তিনি আপনাকে সহ্য করতে সাহায্য করবেন।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪; ১ করিন্থীয় ১০:১৩.

“ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে” বাস করা

১৯. যারা দুর্দশাগ্রস্ত তাদের কাছে যিহোবা কী প্রতিজ্ঞা করেন?

১৯ বাইবেল আমাদের আশ্বাস দেয় যে, যদিও ধার্মিক ব্যক্তির বিপদ অনেক কিন্তু “সেই সকল হইতে সদাপ্রভু তাহাকে উদ্ধার করেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:১৯) কীভাবে ঈশ্বর তা করে থাকেন? প্রেরিত পৌল যখন তার “মাংসে একটা কন্টক” থেকে উদ্ধারের জন্য বার বার প্রার্থনা করেছিলেন, তখন যিহোবা তাঁকে বলেছিলেন: “আমার শক্তি দুর্ব্বলতায় সিদ্ধি পায়।” (২ করিন্থীয় ১২:৭-৯) যিহোবা পৌলের কাছে কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন আর আপনার কাছে তিনি কী প্রতিজ্ঞা করেন? এখানে ঈশ্বর তাৎক্ষণিক আরোগ্য সম্বন্ধে নয় বরং সহ্য করার শক্তি সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করেন।

২০. আমাদের পরীক্ষাগুলো সত্ত্বেও ১ পিতর ৫:৬, ৭ পদ আমাদের কোন বিষয়ে আশ্বাস দেয়?

২০ প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে নত হও, যেন তিনি উপযুক্ত সময়ে তোমাদিগকে উন্নত করেন; তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৬, ৭) যেহেতু যিহোবা আপনার জন্য চিন্তা করেন, তাই তিনি আপনাকে পরিত্যাগ করবেন না। আপনি যে-পরীক্ষাগুলোই ভোগ করুন না কেন, তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। মনে রাখবেন যে, বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা “ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে” রয়েছে। যিহোবাকে সেবা করার সময় তিনি আমাদের সহ্য করার শক্তি দেন। আমরা যদি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে কোনো কিছুই আমাদের স্থায়ী আধ্যাত্মিক ক্ষতি করতে পারবে না। অতএব, আমরা যেন যিহোবার প্রতি নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখি, যাতে আমরা তাঁর প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে অনন্তজীবন উপভোগ করতে পারি এবং সেই দিন দেখতে পারি যখন তিনি প্রকৃতই দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে স্থায়ীভাবে উদ্ধার করবেন!

[পাদটীকাগুলো]

^ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ কেবল হতাশার চেয়ে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন হল এক পরীক্ষিত অবস্থা, যেখানে দুঃখ অত্যন্ত তীব্র ও চলমান হয়। আরও তথ্যের জন্য ১৯৮৮ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২৫-৯ পৃষ্ঠা; ১৯৮৮ সালের ১৫ই নভেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ২১-৪ পৃষ্ঠা; এবং ১৯৯৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার ৩০-১ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কেন দুর্দশা এমনকি যিহোবার দাসদেরও প্রভাবিত করে?

• কিছু বিষয় কী, যেগুলোর কারণে ঈশ্বরের কিছু লোক হতাশা বোধ করে?

• কীভাবে যিহোবা আমাদের উদ্বিগ্নতাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করেন?

• কোন উপায়ে আমরা “ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে” রয়েছি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বিভিন্ন পরীক্ষা সত্ত্বেও যিহোবার লোকেদের আনন্দ করার কারণ রয়েছে

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবাকে আমাদের সর্বোত্তমটা দেওয়ার একটা উপায় হল টেলিফোনে সাক্ষ্যদান