সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিজ্ঞ হোন—ঈশ্বরকে ভয় করুন!

বিজ্ঞ হোন—ঈশ্বরকে ভয় করুন!

বিজ্ঞ হোন—ঈশ্বরকে ভয় করুন!

“সদাপ্রভুকে ভয় করাই প্রজ্ঞার আরম্ভ।”—হিতোপদেশ ৯:১০.

১. কেন অনেকে ঈশ্বরকে ভয় করার ধারণাটাকে দুর্বোধ্য বলে মনে করে?

 একটা সময় ছিল, যখন কাউকে ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি বলে বর্ণনা করা হলে সেটাকে প্রশংসাজনক বলে মনে করা হতো। আজকে, অনেকে ঈশ্বরকে ভয় করার ধারণাটাকে সেকেলে অথচ দুর্বোধ্য বলে মনে করে। ‘ঈশ্বর যদি প্রেম হয়ে থাকেন,’ তারা হয়তো জিজ্ঞেস করে, ‘তা হলে কেন তাঁকে ভয় করা উচিত?’ তাদের কাছে ভয় হল এক নেতিবাচক ও এমনকি অক্ষম করে দেওয়ার মতো এক আবেগ। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত ভয়ের এক ব্যাপক অর্থ রয়েছে আর আমরা যেমন দেখব যে, এটা নিছক এক অনুভূতি বা আবেগ নয়।

২, ৩. ঈশ্বরের প্রতি অকৃত্রিম ভয়ের অন্তর্ভুক্ত কী?

বাইবেলে ব্যবহৃত ঈশ্বরের প্রতি ভয় হল এক ইতিবাচক ধারণা। (যিশাইয় ১১:২) এটা হল ঈশ্বরের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান, তাঁকে অসন্তুষ্ট না করার এক দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা। (গীতসংহিতা ১১৫:১১) এর অন্তর্ভুক্ত হল, ঈশ্বরের নৈতিক মানগুলো মেনে নেওয়া ও সেগুলোর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে লেগে থাকা আর ঈশ্বর যেটাকে সঠিক অথবা ভুল বলেন, সেই অনুসারে জীবনযাপন করার এক আকাঙ্ক্ষা। একটি তথ্যগ্রন্থ বলে যে, এই ধরনের এক গঠনমূলক ভয় “ঈশ্বরের প্রতি এক অপরিহার্য মনোভাবকে” প্রকাশ করে, “যা বিজ্ঞ আচরণের দিকে এবং সমস্ত ধরনের মন্দতা এড়িয়ে চলতে পরিচালিত করে।” উপযুক্তভাবেই, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বলে: “সদাপ্রভুকে ভয় করাই প্রজ্ঞার আরম্ভ।”—হিতোপদেশ ৯:১০.

বাস্তবিকপক্ষেই, ঈশ্বরের প্রতি ভয় মানব বিষয়গুলোর বিভিন্ন দিকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এর সঙ্গে কেবল প্রজ্ঞাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আনন্দ, শান্তি, সমৃদ্ধি, দীর্ঘায়ু, আশা, নির্ভরতা এবং আস্থাও জড়িত রয়েছে। (গীতসংহিতা ২:১১; হিতোপদেশ ১:৭; ১০:২৭; ১৪:২৬; ২২:৪; ২৩:১৭, ১৮; প্রেরিত ৯:৩১) এটা বিশ্বাস ও প্রেমের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বস্তুতপক্ষে, এটা ঈশ্বর ও সহমানবদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের সমস্তকিছুকে জড়িত করে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২; ইয়োব ৬:১৪; ইব্রীয় ১১:৭) ঈশ্বরের প্রতি ভয়ের অন্তর্ভুক্ত এই দৃঢ়প্রত্যয় যে, আমাদের স্বর্গীয় পিতা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের জন্য চিন্তা করেন এবং আমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করতে তৈরি আছেন। (গীতসংহিতা ১৩০:৪) একমাত্র অনুতাপহীন দুষ্ট ব্যক্তিদেরই ঈশ্বরের ভয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে। *ইব্রীয় ১০:২৬-৩১.

যিহোবাকে ভয় করতে শেখা

৪. কী আমাদেরকে ‘সদাপ্রভুকে ভয় করা শিখিতে’ সাহায্য করতে পারে?

যেহেতু বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ও ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করার জন্য ঈশ্বরের প্রতি ভয় অপরিহার্য, তাই কীভাবে আমরা উপযুক্তভাবে ‘সদাপ্রভুকে ভয় করা শিখিতে’ পারি? (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৯) ঈশ্বরভয়শীল অনেক পুরুষ ও নারীর উদাহরণ “আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে” শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ রয়েছে। (রোমীয় ১৫:৪) ঈশ্বরকে ভয় করা বলতে আসলে কী বোঝায়, তা বোঝার জন্য আসুন আমরা সেই উদাহরণগুলো থেকে একজনের জীবন অর্থাৎ প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের উদাহরণ বিবেচনা করি।

৫. কীভাবে মেষ চরানো দায়ূদকে যিহোবাকে ভয় করা সম্বন্ধে শিখতে সাহায্য করেছিল?

লোকদের প্রতি ভয়ের কারণে ও ঈশ্বরীয় ভয়ের অভাব থাকায় ইস্রায়েলের প্রথম রাজা শৌলকে যিহোবা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৫:২৪-২৬) অন্যদিকে, দায়ূদের জীবনধারা ও যিহোবার সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তাকে একজন সত্যিকারের ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করে। দায়ূদ ছোটবেলা থেকেই, তার বাবার মেষ চরানোর জন্য প্রায়ই বাইরে থাকতেন। (১ শমূয়েল ১৬:১১) মেষ চরাতে গিয়ে তারা-ভরা আকাশের নীচে বহু রাত কাটানো নিশ্চয়ই দায়ূদকে যিহোবার প্রতি ভয় সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করেছিল। যদিও দায়ূদ নিখিলবিশ্বের বিশালত্বের সামান্যই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, তবুও তিনি সঠিক উপসংহারে এসেছিলেন—ঈশ্বর আমাদের সম্মান ও ভক্তি পাওয়ার যোগ্য। “আমি তোমার অঙ্গুলি-নির্ম্মিত আকাশমণ্ডল, তোমার স্থাপিত চন্দ্র ও তারকামালা নিরীক্ষণ করি,” পরবর্তী সময়ে তিনি লিখেছিলেন, “[বলি], মর্ত্ত্য কি যে, তুমি তাহাকে স্মরণ কর? মনুষ্য-সন্তান বা কি যে, তাহার তত্ত্বাবধান কর?”—গীতসংহিতা ৮:৩, ৪.

৬. যিহোবার মহত্ত্ব সম্বন্ধে উপলব্ধি করা দায়ূদকে কেমন বোধ করতে পরিচালিত করেছিল?

উপযুক্তভাবেই, দায়ূদ যখন তার ক্ষুদ্রাবস্থাকে বিশাল তারা-ভরা আকাশের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, তখন অনেক প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাকে ভীত করার পরিবর্তে, এই জ্ঞান তাকে যিহোবার প্রশংসা করতে ও এই বলতে অনুপ্রাণিত করেছিল: “আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের গৌরব বর্ণনা করে, বিতান তাঁহার হস্তকৃত কর্ম্ম জ্ঞাপন করে।” (গীতসংহিতা ১৯:১) ঈশ্বরের প্রতি এই শ্রদ্ধা দায়ূদকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী করেছিল এবং তাকে তাঁর সিদ্ধ পথ সম্বন্ধে জানতে ও তা অনুসরণ করতে পরিচালিত করেছিল। কল্পনা করুন যে দায়ূদ কেমন বোধ করেছিলেন, যখন তিনি গেয়েছিলেন: “তুমি মহান্‌ এবং আশ্চর্য্য-কার্য্যকারী; তুমিই একমাত্র ঈশ্বর। হে সদাপ্রভু, তোমার পথ আমাকে শিক্ষা দেও, আমি তোমার সত্যে চলিব; তোমার নাম ভয় করিতে আমার চিত্তকে একাগ্র কর।”—গীতসংহিতা ৮৬:১০, ১১.

৭. কীভাবে ঈশ্বরকে ভয় করা দায়ূদকে গলিয়াতের সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করেছিল?

পলেষ্টীয়রা যখন ইস্রায়েল আক্রমণ করেছিল, তখন তাদের প্রায় ৩ মিটার লম্বা বীর গলিয়াৎ ইস্রায়েলীয়দের টিটকারি দিয়ে বস্তুতপক্ষে এই বলেছিলেন: ‘আমার একার সঙ্গে লড়াই করার জন্য একজন ব্যক্তিকে বাছাই করো! যদি সে জয়ী হয়, তা হলে আমরা তোমাদের সেবা করব।’ (১ শমূয়েল ১৭:৪-১০) শৌল ও তার সম্পূর্ণ বাহিনী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল—কিন্তু দায়ূদ নয়। তিনি জানতেন যে, যিহোবাই হলেন সেই ব্যক্তি যাঁকে ভয় করতে হবে কিন্তু কোনো মানুষকে নয়, তা তিনি যত ক্ষমতাবানই হোন না কেন। ‘আমি বাহিনীগণের সদাপ্রভুর নামে তোমার নিকটে আসিতেছি,’ দায়ূদ গলিয়াৎকে বলেছিলেন, “আর সদাপ্রভু খড়্গ ও বড়শা দ্বারা নিস্তার করেন না, ইহাও এই সমস্ত সমাজ জানিবে; কেননা এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর।” তার ফিঙে বা গুলতি এবং একটা মাত্র পাথর নিয়ে—ও সেইসঙ্গে যিহোবার সাহায্যে—দায়ূদ সেই দৈত্যাকৃতি ব্যক্তিকে আঘাত করেছিলেন।—১ শমূয়েল ১৭:৪৫-৪৭.

৮. ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বাইবেলের উদাহরণগুলো আমাদের কী শিক্ষা দেয়?

আমরা হয়তো যে-বাধা ও শত্রুদের মোকাবিলা করি, তা দায়ূদ যে-বিষয়গুলোর সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেগুলোর চেয়ে কম ভয়ানক নয়। আমরা কী করতে পারি? দায়ূদ ও প্রাচীনকালের অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তি যেভাবে করেছিল—ঈশ্বরীয় ভয় সহকারে—আমরাও একইভাবে সেগুলোর মোকাবিলা করতে পারি। ঈশ্বরের প্রতি ভয় মনুষ্যভয়কে পরাভূত করতে পারে। ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাস নহিমিয় তার সেই সহইস্রায়েলীয়দের এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, যারা বিরোধীদের চাপের মুখে ছিল: “তোমরা উহাদের হইতে ভীত হইও না; মহান্‌ ও ভয়ঙ্কর প্রভুকে [“যিহোবাকে,” NW] স্মরণ কর।” (নহিমিয় ৪:১৪) যিহোবার সহযোগিতায় দায়ূদ, নহিমিয় এবং ঈশ্বরের অন্যান্য বিশ্বস্ত দাস তাদের ঈশ্বরদত্ত কার্যভারগুলো পালন করায় সফল হয়েছিল। ঈশ্বরীয় ভয় সহকারে আমরাও হতে পারি।

ঈশ্বরীয় ভয় সহকারে সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করা

৯. কোন কোন পরিস্থিতিতে দায়ূদ ঈশ্বরের প্রতি ভয় প্রদর্শন করেছিলেন?

গলিয়াৎকে বধ করার পর, যিহোবা দায়ূদকে আরও জয় এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু, ঈর্ষাপরায়ণ শৌল দায়ূদকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন—প্রথমে ঝোঁকের মাথায়, পরে চতুরতার সঙ্গে এবং অবশেষে সৈন্যবাহিনী নিয়ে। যদিও যিহোবা দায়ূদকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তিনি রাজা হবেন কিন্তু কয়েক বছরের জন্য দায়ূদকে পালিয়ে থাকতে, যুদ্ধ করতে ও তাকে রাজা করার বিষয়ে যিহোবার নিরূপিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এই সমস্তকিছুর মধ্যেও দায়ূদ দেখিয়েছিলেন যে, তিনি সত্য ঈশ্বরকে ভয় করেন।—১ শমূয়েল ১৮:৯, ১১, ১৭; ২৪:২.

১০. বিপদের মুখেও দায়ূদ কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভয় দেখিয়েছিলেন?

১০ একবার দায়ূদ গলিয়াতের নিজ দেশ, পলেষ্টীয় নগর গাতের রাজা আখীশের কাছে আশ্রয় লাভের চেষ্টা করেছিলেন। (১ শমূয়েল ২১:১০-১৫) রাজার দাসেরা তাকে তাদের জাতির শত্রু বলে জনসমক্ষে অভিযুক্ত করেছিল। সেই বিপদজনক পরিস্থিতিতে দায়ূদ কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি যিহোবার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন। (গীতসংহিতা ৫৬:১-৪, ১১-১৩) যদিও রেহাই পাওয়ার জন্য তাকে পাগলের ভান করতে হয়েছিল কিন্তু দায়ূদ জানতেন যে, তার প্রচেষ্টাগুলোতে আশীর্বাদ করার মাধ্যমে আসলে যিহোবাই তাকে উদ্ধার করেছিলেন। যিহোবার ওপর তার পূর্ণহৃদয়ের নির্ভরতা ও আস্থা দেখিয়েছিল যে, দায়ূদ সত্যিই ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি ছিলেন।—গীতসংহিতা ৩৪:৪-৬, ৯-১১.

১১. কীভাবে আমরা পরীক্ষার মধ্যে ঈশ্বরীয় ভয় দেখাতে পারি, যেমনটা দায়ূদ দেখিয়েছিলেন?

১১ আমাদের সমস্যাগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করার বিষয়ে তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর নির্ভর করার মাধ্যমে আমরাও দায়ূদের মতো ঈশ্বরের প্রতি ভয় দেখাতে পারি। দায়ূদ বলেছিলেন: “তোমার গতি সদাপ্রভুতে অর্পণ কর, তাঁহাতে নির্ভর কর, তিনিই কার্য্য সাধন করিবেন।” (গীতসংহিতা ৩৭:৫) এর অর্থ এই নয় যে, সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে আমরা যা করতে পারি, তা না করে আমাদের সমস্যাগুলো শুধু যিহোবার হাতে ছেড়ে দেব ও আশা করব যে, তিনি আমাদের জন্য কাজ করবেন। দায়ূদ ঈশ্বরের কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করার পর কোনোকিছু না করে বিষয়গুলো ফেলে রাখেননি। তিনি যিহোবাদত্ত শারীরিক ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়েছিলেন এবং তার সমস্যাগুলো মোকাবিলা করেছিলেন। কিন্তু দায়ূদ জানতেন যে, সাফল্যের জন্য শুধু মানবপ্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করা যেতে পারে না। তাই, আমাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় হওয়া উচিত। আমাদের ক্ষমতা অনুযায়ী সমস্তকিছু করার পর, বাকি বিষয়টা যিহোবার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। বস্তুতপক্ষে, প্রায়ই যিহোবার ওপর নির্ভর করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার থাকে না। আর তখনই আমাদের ঈশ্বরের প্রতি ব্যক্তিগত ভয় দেখানোর সময়। আমরা দায়ূদের এই আন্তরিক অভিব্যক্তি থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি: “সদাপ্রভুর গূঢ় মন্ত্রণা [“যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা,” NW] তাঁহার ভয়কারীদের অধিকার।”—গীতসংহিতা ২৫:১৪.

১২. কেন আমাদের প্রার্থনাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে আর কোন মনোভাব আমাদের কখনো রাখা উচিত নয়?

১২ তাই, আমাদের প্রার্থনা ও ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। আমরা যখন যিহোবার নিকটবর্তী হই, তখন আমাদের “বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬; যাকোব ১:৫-৮) আর তিনি যখন আমাদের সাহায্য করেন, তখন আমাদের ‘কৃতজ্ঞ হওয়া’ উচিত, যেমনটা প্রেরিত পৌল আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। (কলসীয় ৩:১৫, ১৭) আমরা কখনো সেই ব্যক্তিদের মতো হতে চাই না, যাদের সম্বন্ধে একজন অভিজ্ঞ অভিষিক্ত খ্রিস্টান বর্ণনা করেছেন: “তারা ঈশ্বরকে স্বর্গের একজন পরিচারক বলে মনে করে,” তিনি বলেছিলেন। “তাদের যখন কিছুর প্রয়োজন হয়, তখন তারা তুড়ি বাজিয়ে তাঁকে আসতে বলে। আর তারা যখন প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পেয়ে যায়, তখন চায় যেন তিনি চলে যান।” এই ধরনের মনোভাব ঈশ্বরীয় ভয়ের অভাবকে প্রকাশ করে।

যখন ঈশ্বরের প্রতি ভয় হ্রাস পায়

১৩. কখন দায়ূদ ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?

১৩ দুর্দশার সময় যিহোবার সাহায্য সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করা, ঈশ্বরের প্রতি দায়ূদের ভয়কে গভীর করেছিল এবং তাঁর প্রতি তার আস্থাকে শক্তিশালী করেছিল। (গীতসংহিতা ৩১:২২-২৪) কিন্তু, তিনটে উল্লেখযোগ্য সময়ে ঈশ্বরের প্রতি দায়ূদের ভয় হ্রাস পেয়েছিল, যা মারাত্মক পরিণতিগুলোর দিকে পরিচালিত করেছিল। প্রথমটা, ঈশ্বরের ব্যবস্থায় যেমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেই অনুযায়ী যিহোবার নিয়ম-সিন্দুক লেবীয়দের কাঁধে করে আনার পরিবর্তে শকটে করে যিরূশালেমে নিয়ে আসার বিষয়ে তার ব্যবস্থাদির সঙ্গে যুক্ত। উষ, যিনি সেই শকট পরিচালনা করছিলেন, তিনি যখন সেই সিন্দুক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ধরেছিলেন, তখন তার ‘হঠকারিতার’ জন্য সঙ্গে সঙ্গে সেখানে মারা গিয়েছিলেন। হ্যাঁ, উষ গুরুতর পাপ করেছিলেন কিন্তু মূলত ঈশ্বরের ব্যবস্থার প্রতি সঠিক সম্মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে দায়ূদের ব্যর্থতাই এই দুঃখজনক পরিণতি নিয়ে এসেছিল। ঈশ্বরকে ভয় করার অর্থ হল, তিনি যেভাবে কাজ করে থাকেন সেই অনুযায়ী কাজ করা।—২ শমূয়েল ৬:২-৯; গণনাপুস্তক ৪:১৫; ৭:৯.

১৪. দায়ূদ ইস্রায়েলকে গণনা করার ফলে কী ঘটেছিল?

১৪ পরবর্তী সময়ে, শয়তানের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে দায়ূদ ইস্রায়েলের যোদ্ধাদের গণনা করেছিলেন। (১ বংশাবলি ২১:১) তা করার মাধ্যমে দায়ূদ দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের প্রতি তার ভয় হ্রাস পেয়েছিল আর এর ফলে ৭০,০০০ ইস্রায়েলীয় মারা গিয়েছিল। যদিও দায়ূদ যিহোবার কাছে অনুতপ্ত হয়েছিলেন, তবুও তিনি ও তার আশেপাশের লোকেরা চরম কষ্টভোগ করেছিলেন।—২ শমূয়েল ২৪:১-১৬.

১৫. কোন বিষয়টা দায়ূদকে যৌন সংক্রান্ত পাপে পতিত করেছিল?

১৫ আরেকবার ঈশ্বরের প্রতি ভয় সাময়িকভাবে হ্রাস পাওয়া দায়ূদকে ঊরিয়ের স্ত্রী বৎশেবার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পরিচালিত করেছিল। দায়ূদ জানতেন যে, পারদারিকতা অথবা এমনকি আরেকজনের সঙ্গীর প্রতি লোভ করা অন্যায়। (যাত্রাপুস্তক ২০:১৪, ১৭) বৎশেবা যখন স্নান করছিলেন, তখন তাকে দেখার মাধ্যমে সমস্যার সূত্রপাত ঘটেছিল। ঈশ্বরের প্রতি উপযুক্ত ভয়ের কারণে দায়ূদের উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে তার চোখকে ও তার চিন্তাভাবনাকে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া। তা না করে, দায়ূদ স্পষ্টতই বৎশেবার প্রতি ‘দৃষ্টিপাত করিয়া’ চলেছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার কামেচ্ছা ঈশ্বরের প্রতি তার ভয়কে পরাভূত করেছিল। (মথি ৫:২৮; ২ শমূয়েল ১১:১-৪) দায়ূদ ভুলে গিয়েছিলেন যে, যিহোবা তার জীবনের প্রতিটা দিকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।—গীতসংহিতা ১৩৯:১-৭.

১৬. দায়ূদ তার অন্যায়ের জন্য কোন পরিণতিগুলো ভোগ করেছিলেন?

১৬ বৎশেবার সঙ্গে দায়ূদের অবৈধ সম্পর্কের ফলে একটা ছেলে জন্মেছিল। কিছু দিন পরেই, যিহোবা দায়ূদের পাপ প্রকাশ করার জন্য তাঁর ভাববাদী নাথনকে পাঠিয়েছিলেন। চেতনা ফিরে পাওয়ার পর, দায়ূদ ঈশ্বরের প্রতি তার ভয় ফিরে পেয়েছিলেন এবং অনুতপ্ত হয়েছিলেন। তিনি যিহোবার কাছে মিনতি করেছিলেন যেন তিনি তাকে পরিত্যাগ না করেন অথবা তার কাছ থেকে তাঁর পবিত্র আত্মা সরিয়ে না নেন। (গীতসংহিতা ৫১:৭, ১১) যিহোবা দায়ূদকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং শাস্তিকে লঘু করেছিলেন কিন্তু তিনি দায়ূদকে তার কাজের সমস্ত মন্দ পরিণতি থেকে রেহাই দেননি। দায়ূদের ছেলে মারা গিয়েছিল এবং তখন থেকে দুঃখ ও দুর্ঘটনা তার পরিবারকে জর্জরিত করেছিল। ঈশ্বরের প্রতি ভয় হ্রাস পাওয়ার ফলে কত বড় মূল্যই না দিতে হয়েছিল!—২ শমূয়েল ১২:১০-১৪; ১৩:১০-১৪; ১৫:১৪.

১৭. পাপপূর্ণ আচরণ যে-দুঃখ নিয়ে আসে, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

১৭ আজকে, নৈতিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে ভয় করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে একইরকম গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি থাকতে পারে। একজন যুবতী স্ত্রীর কষ্টের কথা চিন্তা করুন, যখন তিনি জানতে পেরেছিলেন যে তার খ্রিস্টান স্বামী বিদেশে কাজ করার সময় তার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আঘাত ও প্রচণ্ড কষ্টে নুইয়ে পড়ে তিনি দুহাত দিয়ে তার মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। তার নির্ভরতা ও সম্মান ফিরে পাওয়ার জন্য তার স্বামীর কতটা সময় লাগতে পারে? ঈশ্বরের প্রতি সত্যিকারের ভয়ের মাধ্যমে এই ধরনের দুঃখজনক পরিণতি এড়ানো যেতে পারে।—১ করিন্থীয় ৬:১৮.

ঈশ্বরের প্রতি ভয় আমাদেরকে পাপ থেকে বিরত রাখে

১৮. শয়তানের উদ্দেশ্য ও তার কাজ করার পদ্ধতি কী?

১৮ শয়তান অত্যন্ত দ্রুত গতিতে জগতের নৈতিক মূল্যবোধগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে এবং সে বিশেষভাবে সত্য খ্রিস্টানদেরকে কলুষিত করতে চায়। তা করার জন্য সে আমাদের হৃদয় ও মনের সবচেয়ে সরাসরি পথকে স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগায় আর তা হল আমাদের ইন্দ্রিয়শক্তিগুলো, বিশেষ করে আমাদের চক্ষু ও কর্ণ। (ইফিষীয় ৪:১৭-১৯) অপ্রত্যাশিতভাবে অনৈতিক ছবি, কথাবার্তা বা লোকেদের সম্মুখীন হলে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন?

১৯. কীভাবে ঈশ্বরীয় ভয় একজন খ্রিস্টানকে প্রলোভন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল?

১৯ একজন খ্রিস্টান প্রাচীন, বাবা ও ইউরোপের একজন মেডিক্যাল ডাক্তার আঁদ্রের * কথা বিবেচনা করুন। আঁদ্রে যখন হাসপাতালে নাইট ডিউটি করতেন, তখন মহিলা সহকর্মীরা তাদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করার আমন্ত্রণ জানিয়ে বার বার তার বালিশে—হার্ট দিয়ে সাজানো—বিভিন্ন নোট লাগিয়ে রাখত। তাদের এই প্রস্তাব নিয়ে চিন্তা করার বিষয়টাও আঁন্দ্রে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। অধিকন্তু, মন্দ পরিবেশ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি অন্য জায়গায় কাজ খুঁজেছিলেন। ঈশ্বরকে ভয় করা অনেক বিজ্ঞতার কাজ বলে প্রমাণিত হয়েছিল এবং অনেক আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল কারণ এখন আঁদ্রে তার দেশে যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে খণ্ডকালীন সেবা করছেন।

২০, ২১. (ক) কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভয় আমাদেরকে পাপ করা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন বিষয়টা বিবেচনা করা হবে?

২০ ভুল চিন্তাভাবনা পুষে রাখা এমন এক মনের অবস্থার দিকে পরিচালিত করতে পারে, যার ফলে একজন ব্যক্তি তার অধিকার নেই এমন কোনোকিছুর বিনিময়ে যিহোবার সঙ্গে তাঁর মূল্যবান সম্পর্ককে পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক হয়। (যাকোব ১:১৪, ১৫) অন্যদিকে, আমরা যদি যিহোবাকে ভয় করি, তা হলে আমরা সেই লোক, জায়গা, কাজকর্ম ও আমোদপ্রমোদ থেকে দূরে থাকব—এমনকি সরে আসব—যেগুলো নৈতিক দিক দিয়ে আমাদের সতর্ক থাকাকে দুর্বল করে দিতে পারে। (হিতোপদেশ ২২:৩) এর সঙ্গে যেকোনো অস্বস্তিকর অবস্থা অথবা ত্যাগস্বীকারই জড়িত থাকুক না কেন, তা ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারানোর সঙ্গে তুলনা করলে খুবই ক্ষুদ্র। (মথি ৫:২৯, ৩০) নিশ্চিতভাবেই, ঈশ্বরকে ভয় করার অন্তর্ভুক্ত কখনো স্বেচ্ছায় অনৈতিক কোনোকিছু, যার মধ্যে রয়েছে যেকোনো ধরনের অশ্লীল বিষয়, সেগুলোর সংস্পর্শে না যাওয়া কিন্তু এর পরিবর্তে “অলীকতা-দর্শন হইতে” আমাদের চোখকে ‘ফিরানো।’ আমরা যদি তা করি, তা হলে ‘আমাদিগকে সঞ্জীবিত করিবার’ এবং আমাদের সত্যিই যা প্রয়োজন, সেই সমস্তই জোগানোর বিষয়ে আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারি।—গীতসংহিতা ৮৪:১১; ১১৯:৩৭.

২১ বস্তুতপক্ষে ঈশ্বরের প্রতি অকৃত্রিম ভয় সহকারে কাজ করা সবসময়ই প্রজ্ঞার কাজ। এ ছাড়া, এটা প্রকৃত সুখের উৎস। (গীতসংহিতা ৩৪:৯) এই বিষয়টা পরের প্রবন্ধে স্পষ্ট করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি - মার্চ মাসের সচেতন থাক! পত্রিকার “বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি: আপনি কিভাবে একজন প্রেমের ঈশ্বরকে ভয় করতে পারেন?” নামক প্রবন্ধটা দেখুন।

^ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• ঈশ্বরের প্রতি ভয়ের সঙ্গে কোন খ্রিস্টীয় গুণাবলি জড়িত?

• কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভয় মনুষ্যভয়কে অকার্যকর করে?

• কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, প্রার্থনার প্রতি আমাদের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে?

• কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভয় আমাদের পাপ করা থেকে বিরত রাখতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার হস্তনির্মিত কাজ পর্যবেক্ষণ করার সময় দায়ূদ ঈশ্বরকে ভয় করতে শিখেছিলেন

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

অপ্রত্যাশিতভাবে প্রলুব্ধকর কোনো পরিস্থিতিতে পড়লে আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন?