যিহোবাকে ভয় করুন —সুখী হোন!
যিহোবাকে ভয় করুন —সুখী হোন!
“ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] সেই জন, যে সদাপ্রভুকে ভয় করে।”—গীতসংহিতা ১১২:১.
১, ২. যিহোবার প্রতি ভয় কী নিয়ে আসতে পারে?
সুখ সহজেই অর্জন করা যায় না। প্রকৃত সুখ সঠিক বাছাই করার, যা সঠিক তা করার ও যা অন্যায় তা থেকে ফিরে আসার ওপর নির্ভর করে। কীভাবে সর্বোত্তম জীবন উপভোগ করা যায়, সেই সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের নির্মাতা যিহোবা আমাদেরকে তাঁর বাক্য বাইবেল দিয়েছেন। যিহোবার নির্দেশনা অনুসন্ধান ও তা অনুসরণ করার আর এভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভয় প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা সত্যিকারভাবে পরিতৃপ্ত ও সুখী হতে পারি।—গীতসংহিতা ২৩:১; হিতোপদেশ ১৪:২৬.
২ এই প্রবন্ধে আমরা বাইবেলের সময়ের ও আধুনিক দিনের উদাহরণ বিবেচনা করব, যেগুলো দেখাবে যে কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি অকৃত্রিম ভয় একজন ব্যক্তিকে যা অন্যায়, তা করার চাপকে প্রতিরোধ করতে শক্তি দেবে ও যা সঠিক তা করার জন্য সাহস জোগাবে। আমরা দেখব যে, অন্যায় পথ সংশোধন করতে—যেমনটা দায়ূদকে করতে হয়েছিল—আমাদের পরিচালিত করার দ্বারা ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের জন্য সুখ নিয়ে আসতে পারে। এ ছাড়া আমরা দেখব যে, যিহোবার প্রতি ভয় সত্যিই এক মূল্যবান উত্তরাধিকার, যা বাবামারা তাদের সন্তানদেরকে দিতে পারে। বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয়: “সুখী সেই জন, যে সদাপ্রভুকে ভয় করে।”—গীতসংহিতা ১১২:১.
হারানো সুখ ফিরে পাওয়া
৩. কী দায়ূদকে তার পাপগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল?
৩ আগের প্রবন্ধে যেমন বিবেচনা করা হয়েছে, তিনটে উল্লেখযোগ্য সময়ে দায়ূদ উপযুক্ত ঈশ্বরীয় ভয় দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং পাপ করেছিলেন। কিন্তু, যিহোবার শাসনের প্রতি তার সাড়াদান দেখিয়েছিল যে, তিনি মূলত একজন ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তি ছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি তার শ্রদ্ধা ও সম্মান তাকে তার দোষ স্বীকার করতে, তার পথ সংশোধন করতে এবং যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করতে পরিচালিত করেছিল। যদিও তার ভুলগুলো নিজের জন্য ও সেইসঙ্গে অন্যদের জন্য দুঃখকষ্ট নিয়ে এসেছিল কিন্তু তার অকৃত্রিম অনুতাপের কারণে তিনি ক্রমাগত যিহোবার সমর্থন ও আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। দায়ূদের উদাহরণ নিশ্চিতভাবেই সেই খ্রিস্টানদের মধ্যে সাহস সঞ্চারিত করতে পারে, যারা হয়তো আজকে গুরুতর পাপে পতিত হয়েছে।
৪. কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভয় একজন ব্যক্তিকে সুখ ফিরে পেতে সাহায্য করতে পারে?
৪ জনিয়ার ঘটনা বিবেচনা করুন। * যদিও জনিয়া পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারক হিসেবে সেবা করতেন কিন্তু তিনি খারাপ বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়েন, অখ্রিস্টীয় আচরণে জড়িয়ে পড়েন এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলী থেকে তাকে সমাজচ্যুত করা হয়। চেতনা ফিরে পেয়ে জনিয়া যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ককে জোড়া লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্তকিছু করেন। একসময়, তাকে মণ্ডলীতে পুনর্বহাল করা হয়। এই সমস্তকিছুর মধ্যেও, জনিয়া যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তার আকাঙ্ক্ষাকে কখনো পরিত্যাগ করেননি। অবশেষে, তিনি আবারও পূর্ণসময়ের অগ্রগামী পরিচর্যার কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে, তিনি এক উদাহরণযোগ্য খ্রিস্টান প্রাচীনকে বিয়ে করেন আর এখন তার সঙ্গে আনন্দ সহকারে মণ্ডলীতে সেবা করছেন। খ্রিস্টীয় পথ থেকে ক্ষণিকের জন্য সরে যাওয়ার কারণে যদিও জনিয়া দুঃখ করেন কিন্তু তিনি সুখী যে, ঈশ্বরের প্রতি ভয় তাকে ফিরে আসতে সাহায্য করেছে।
পাপ করার চেয়ে বরং কষ্টভোগ করা ভাল
৫, ৬. কীভাবে এবং কেন দায়ূদ দুবার শৌলের জীবন নেওয়া থেকে বিরত হয়েছিলেন, তা ব্যাখ্যা করুন।
৫ অবশ্য, ঈশ্বরের প্রতি ভয় একজন ব্যক্তিকে যখন গুরুতর ভুল করা এড়াতে সাহায্য করে, তখন তা আরও উপকারজনক। দায়ূদের বেলায় তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। একবার, তিন হাজার সৈন্য নিয়ে দায়ূদের পিছন পিছন ধাওয়া করার সময় শৌল একটা গুহায় প্রবেশ করেছিলেন—যে-গুহাতে দায়ূদ ও তার লোকেরা লুকিয়ে ছিল। দায়ূদের লোকেরা শৌলকে আঘাত করার জন্য দায়ূদকে জোরাজুরি করেছিল। এই পরম শত্রুকে কি যিহোবাই দায়ূদের হাতে দেননি? চুপিসারে, দায়ূদ হামাগুড়ি দিয়ে শৌলের কাছে যান এবং তার বস্ত্রের অঞ্চল কেটে নেন। দায়ূদ যেহেতু ঈশ্বরকে ভয় করতেন, তাই এমনকি তুলনামূলকভাবে অক্ষতিকর সেই কাজের জন্যও তার বিবেক তাকে দংশন করেছিল। দায়ূদ তার উত্তেজিত লোকেদের শাসন করেছিলেন এই বলে: “আমার প্রভুর প্রতি, সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির প্রতি এমন কর্ম্ম করিতে, . . . সদাপ্রভু আমাকে না দিউন।” *—১ শমূয়েল ২৪:১-৭.
৬ পরবর্তী এক সময়ে, শৌল রাত কাটানোর জন্য শিবির স্থাপন করেছিলেন আর তাকে ও তার সমস্ত লোককে “সদাপ্রভু . . . অগাধ নিদ্রায়” মগ্ন করেছিলেন। দায়ূদ ও তার সাহসী ভাগনে অবীশয় চুপিসারে শিবিরের একেবারে মাঝখানে যায় এবং ঘুমন্ত শৌলের ঠিক কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অবীশয় শৌলকে চিরতরে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। দায়ূদ অবীশয়কে বাধা দেন এই কথা জিজ্ঞেস করে: “সদাপ্রভুর অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কে হস্ত বিস্তার করিয়া নির্দ্দোষ হইতে পারে?”—১ শমূয়েল ২৬:৯, ১২.
৭. কী দায়ূদকে পাপ করা থেকে বিরত করেছিল?
৭ দুবার সুযোগ আসা সত্ত্বেও কেন দায়ূদ শৌলকে আঘাত করেননি? কারণ তিনি শৌলের চেয়ে বরং যিহোবাকে আরও বেশি ভয় করতেন। ঈশ্বরের প্রতি উপযুক্ত ভয়ের কারণে দায়ূদ পাপ করার চেয়ে বরং প্রয়োজনে কষ্টভোগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। (ইব্রীয় ১১:২৫) যিহোবা যে তাঁর লোকেদের ও সেইসঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তার প্রতি যত্ন নেন, সেই বিষয়ে দায়ূদের পূর্ণ আস্থা ছিল। দায়ূদ জানতেন যে, ঈশ্বরের বাধ্য থাকা ও তাঁর ওপর নির্ভর করা সুখ ও অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসবে আর অন্যদিকে ঈশ্বরকে অগ্রাহ্য করা তাঁর অসন্তোষ নিয়ে আসবে। (গীতসংহিতা ৬৫:৪, NW) এ ছাড়া দায়ূদ জানতেন যে, তাকে রাজা করার বিষয়ে ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন এবং তাঁর নিরূপিত সময়ে ও উপায়ে শৌলকে দূর করবেন।—১ শমূয়েল ২৬:১০.
ঈশ্বরকে ভয় করা সুখ নিয়ে আসে
৮. চাপের মুখে দায়ূদের আচরণ কীভাবে একটা উদাহরণ হিসেবে কাজ করে?
৮ খ্রিস্টান হিসেবে আমরা জানি যে উপহাস, তাড়না ও অন্যান্য পরীক্ষা আসবেই। (মথি ২৪:৯; ২ পিতর ৩:৩) মাঝে মাঝে, আমরা হয়তো এমনকি সহউপাসকদের কাছ থেকে কঠিন পরিস্থিতি ভোগ করে থাকি। কিন্তু আমরা জানি যে, যিহোবা সমস্তকিছুই দেখতে পান, আমাদের প্রার্থনা শোনেন এবং একেবারে সঠিক সময়ে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী বিষয়গুলোকে সংশোধন করবেন। (রোমীয় ১২:১৭-২১; ইব্রীয় ৪:১৬) তাই, আমাদের বিরোধীদের ভয় পাওয়ার পরিবর্তে আমরা ঈশ্বরকে ভয় করি ও আমাদেরকে উদ্ধারের জন্য তাঁর ওপর নির্ভর করি। দায়ূদের মতো আমরা নিজেরা প্রতিশোধ নিই না অথবা দুঃখকষ্ট এড়ানোর জন্য তাঁর ধার্মিক নীতিগুলোর ক্ষেত্রে আপোশও করি না। আর পরিশেষে তা সুখ নিয়ে আসে। কিন্তু, কীভাবে?
৯. তাড়না সত্ত্বেও ঈশ্বরের প্রতি ভয় যেভাবে সুখ নিয়ে আসতে পারে, তার একটা উদাহরণ দিন।
৯ “আমি একজন মা ও তার কিশোরী মেয়ের কথা চিন্তা করি, যারা তাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার জন্য রাজনৈতিক দলের কার্ড কিনতে প্রত্যাখ্যান করেছিল,” আফ্রিকার দীর্ঘসময়ের একজন মিশনারি বলেন। “তাদেরকে একদল জনতা নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করেছিল আর এরপর বাড়ি চলে যেতে বলা হয়েছিল। তারা যখন হাঁটছিল, তখন মা তার ক্রন্দনরত মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যার বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল যে, কেন এমনটা ঘটল। সেই মুহূর্তে তারা আনন্দিত ছিল না কিন্তু তাদের এক শুদ্ধ বিবেক ছিল। পরবর্তী সময়ে, তারা খুবই সুখী হয়েছিল কারণ তারা ঈশ্বরের বাধ্য ছিল। তারা যদি সেই দলের কার্ড কিনত, তা হলে সেই জনতা অত্যন্ত আনন্দিত হতো। সেই লোকেরা হয়তো তাদেরকে কয়েক বোতল কোমল পানীয় দিত এবং বাড়ি ফেরার সময় সারাটা পথ তাদের চারপাশে নাচানাচি করত। কিন্তু সেই মেয়ে ও তার মা আপোশ করে ফেলেছে জেনে তারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে অসুখী লোক হতো।” ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভয় এই সমস্তকিছু থেকে তাদেরকে রক্ষা করেছিল।
১০, ১১. একজন স্ত্রীলোক ঈশ্বরকে ভয় করায় কোন উত্তম ফলাফল এসেছিল?
১০ এ ছাড়া, জীবনের পবিত্রতার প্রতি সম্মানের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হলে ঈশ্বরীয় ভয় দেখানো সুখ নিয়ে আসে। মেরি যখন তৃতীয় বারের মতো গর্ভবতী হয়েছিলেন, তখন তার ডাক্তার তাকে গর্ভপাত করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। “আপনার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক,” তিনি বলেছিলেন। “যেকোনো সময়ে আপনার সমস্যা দেখা দিতে পারে আর ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনি মারা যেতে পারেন। এতে আপনার বাচ্চাও মারা যাবে। আর পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, আপনার বাচ্চা স্বাভাবিক হবে।” মেরি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করছিলেন কিন্তু তখনও পর্যন্ত বাপ্তিস্ম নেননি। “তা সত্ত্বেও” মেরি বলেন, “যা-ই ঘটুক না কেন, আমি যিহোবাকে সেবা করা বেছে নিয়েছিলাম আর তাঁর প্রতি বাধ্য থাকতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলাম।”—যাত্রাপুস্তক ২১:২২, ২৩, NW.
১১ তার গর্ভাবস্থার সময়, মেরি বাইবেল অধ্যয়নে ও তার পরিবারের যত্ন নেওয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। অবশেষে বাচ্চাটা জন্মগ্রহণ করে। “প্রথম দুবারের চেয়ে সেই জন্মদান যদিও একটু কষ্টকর ছিল কিন্তু বড় কোনো জটিলতা দেখা যায়নি,” মেরি বলেন। ঈশ্বরের প্রতি ভয় মেরিকে এক উত্তম বিবেক বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল আর শীঘ্রই তিনি বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। সেই বাচ্চা যখন বড় হয়েছিল, সেও যিহোবাকে ভয় করতে শিখেছিল এবং এখন সে যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিসে সেবা করছে।
‘সদাপ্রভুতে আপনাকে সবল করুন’
১২. কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভয় দায়ূদকে শক্তিশালী করেছিল?
১২ যিহোবার প্রতি ভয় দায়ূদকে কেবল অন্যায় করা থেকে বিরত রাখার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছিল। এটা তাকে কঠিন পরিস্থিতিগুলোতে চূড়ান্তভাবে পদক্ষেপ নিতে ও বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করতেও শক্তিশালী করেছিল। এক বছর চার মাস, দায়ূদ ও তার লোকেরা শৌলের কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পলেষ্টীয় জনপদ সিক্লগে বাস করেছিল। (১ শমূয়েল ২৭:৫-৭) একবার পুরুষরা যখন নগরের বাইরে ছিল, তখন লুটকারী অমালেকীয়রা এসে নগর পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং সেইসমস্ত পুরুষদের স্ত্রী, সন্তান ও পশুপাল নিয়ে গিয়েছিল। ফিরে এসে এবং যা ঘটেছিল, তা দেখে দায়ূদ ও তার লোকেরা অনেক রোদন করেছিল। সেই শোক শীঘ্রই তিক্ততায় পরিণত হয়েছিল এবং দায়ূদের লোকেরা তাকে পাথর মারার বিষয়ে বলেছিল। যদিও দায়ূদ চরম কষ্ট পেয়েছিলেন কিন্তু হতাশ হয়ে পড়েননি। (হিতোপদেশ ২৪:১০) ঈশ্বরের প্রতি তার ভয় তাকে যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পরিচালিত করেছিল এবং তিনি ‘সদাপ্রভুতে আপনাকে সবল করিয়াছিলেন।’ ঈশ্বরের সাহায্যে দায়ূদ ও তার লোকেরা অমালেকীয়দের নাগাল পেয়েছিল এবং সমস্তকিছু উদ্ধার করেছিল।—১ শমূয়েল ৩০:১-২০.
১৩, ১৪. কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভয় একজন খ্রিস্টানকে উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল?
১৩ আজকে ঈশ্বরের দাসেরাও এমন পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হয়, যেগুলোর জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করার এবং চূড়ান্তভাবে কাজ করার জন্য সাহসের প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ, ক্রিস্টিনার কথা বিবেচনা করুন। তার বয়স যখন কম ছিল, তখন ক্রিস্টিনা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন। কিন্তু, তিনি এমন একজন পিয়ানোবাদক হতে চেয়েছিলেন, যিনি কনসার্টে বাজাতে পারেন আর সেই লক্ষ্যে তিনি যথেষ্ট উন্নতি করেছিলেন। অধিকন্তু, প্রচার করতে তিনি বিব্রত বোধ করতেন আর তাই বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যে-দায়িত্বগুলো আসে, সেগুলো গ্রহণ করতে ভয় পেতেন। ক্রিস্টিনা ক্রমাগত ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার সঙ্গে সঙ্গে এর ক্ষমতা সম্বন্ধে বুঝতে শুরু করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের প্রতি ভয় সম্বন্ধে শিখছিলেন এবং বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা চান যেন তার দাসেরা তাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে তাঁকে প্রেম করে। (মার্ক ১২:৩০) এটা তাকে যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে ও বাপ্তাইজিত হতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
১৪ ক্রিস্টিনা আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। “আমি জানতাম যে, কনসার্টে বাজাতে চান এমন একজন পিয়ানোবাদককে তার জীবনে সবসময় ভ্রমণ করতে হয় এবং বছরে কমপক্ষে ৪০০রও বেশি কনসার্টে বাজানোর জন্য চুক্তি করতে হয়,” ক্রিস্টিনা ব্যাখ্যা করেন। “তাই আমি বরং একজন শিক্ষক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যাতে আমি নিজের আর্থিক ভরণপোষণ জোগাতে পারি ও একজন পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারক হিসেবে সেবা করতে পারি।” সেই সময় ক্রিস্টিনা তার দেশের সবচেয়ে পরিচিত কনসার্ট হলে জনসমক্ষে তার প্রথম কৃতিত্ব প্রদর্শন করার জন্য ইতিমধ্যেই তালিকাবদ্ধ হয়েছিলেন। “জনসমক্ষে সেটাই ছিল আমার প্রথম ও শেষ কনসার্ট,” তিনি বলেন। সেই সময় ক্রিস্টিনা একজন খ্রিস্টান প্রাচীনকে বিয়ে করেন। তারা এখন একসঙ্গে যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিসে কাজ করছে। তিনি সুখী যে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যিহোবা তাকে শক্তি দিয়েছিলেন আর এখন তিনি যিহোবার সেবায় তার সময় ও শক্তিকে ব্যবহার করতে পারছেন।
এক মূল্যবান উত্তরাধিকার
১৫. দায়ূদ তার সন্তানদেরকে কোন বিষয়টা দিতে চেয়েছিলেন এবং কীভাবে তিনি তা করেছিলেন?
১৫ “আইস, বৎসগণ, আমার বাক্য শুন,” দায়ূদ লিখেছিলেন। “আমি তোমাদিগকে সদাপ্রভুর ভয় শিক্ষা দিই।” (গীতসংহিতা ৩৪:১১) একজন বাবা হিসেবে দায়ূদ তার সন্তানদের এক মূল্যবান উত্তরাধিকার—যিহোবার প্রতি অকৃত্রিম, ভারসাম্যপূর্ণ ও গঠনমূলক ভয়—দিতে চেয়েছিলেন। কথা ও কাজের মাধ্যমে দায়ূদ যিহোবাকে এমন একজন দাবিদার ও ভয়ংকর ঈশ্বর বলে তুলে ধরেননি, যিনি তাঁর আইনগুলোর কোনোরকম লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, সেই সম্বন্ধে দোষ ধরতে প্রস্তুত বরং ঈশ্বরকে তাঁর পার্থিব সন্তানদের প্রতি একজন প্রেমময়, যত্নশীল ও ক্ষমাবান পিতা হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। দায়ূদ জিজ্ঞেস করেছিলেন, “ভুল পদক্ষেপগুলোকে কেই বা অনুসরণ করতে পারে?” এরপর যিহোবা যে অবিরত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমাদের ভুলগুলো ধরেন না, সেই সম্বন্ধে তার আস্থাকে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছিলেন: “অলক্ষিত বিষয়গুলো থেকে আমাকে মুক্ত করো!” এর বিপরীতে, দায়ূদ নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি যদি তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেন, তা হলে তার বাক্য ও চিন্তাভাবনা যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।—গীতসংহিতা ১৯:১২, ১৪, বাইংটন।
১৬, ১৭. কীভাবে বাবামারা তাদের সন্তানদেরকে ঈশ্বরের প্রতি ভয় সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে পারে?
১৬ দায়ূদ আজকে বাবামাদের জন্য এক উদাহরণ স্থাপন করেন। “আমাদের বাবামা আমাদেরকে এমনভাবে মানুষ করেছে যে, সত্যে থাকা আমাদের জন্য উপভোগ্য হয়ে উঠেছে,” রাল্ফ বলেন, যিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে যিহোবার সাক্ষিদের একটা শাখা অফিসে সেবা করেন। “আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন তারা মণ্ডলীর কাজকর্ম সম্বন্ধে তাদের কথাবার্তায় আমাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করত আর আমরা সত্যের ব্যাপারে তাদের মতোই উদ্যমী হয়ে উঠেছিলাম। তারা আমাদেরকে বিশ্বাস করতে পরিচালিত করেছিল যে, যিহোবার সেবায় আমরা ভাল ভাল বিষয় করতে পারি। বস্তুতপক্ষে, আমাদের পরিবার রাজ্য প্রকাশকদের অনেক প্রয়োজন এমন একটা দেশে কয়েক বছরের জন্য বাস করেছে এবং নতুন নতুন মণ্ডলী গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
১৭ “যে-বিষয়টা আমাদেরকে সঠিক পথে থাকতে সাহায্য করেছে, সেটা অসংখ্য কড়াকড়ি নিয়ম নয়, বরং এই বিষয়টা যে আমাদের বাবামার কাছে যিহোবা অনেক বাস্তব এবং অত্যন্ত দয়ালু ও উত্তম ছিলেন। তারা যিহোবাকে আরও ভালভাবে জানতে ও তাঁকে খুশি করতে আকাঙ্ক্ষী ছিল আর আমরা ঈশ্বরের প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভয় এবং তাঁর প্রতি তাদের ভালবাসা থেকে শিক্ষা লাভ করেছি। এমনকি আমরা যখন অন্যায় কিছু করতাম, তখন আমাদের বাবামা আমাদের এইরকম মনে করতে পরিচালিত করত না যে, যিহোবা আর আমাদেরকে ভালবাসেন না; অথবা তারা আমাদের ওপর অযথা বিধিনিষেধও চাপিয়ে দিত না। বেশির ভাগ সময় তারা আমাদের সঙ্গে বসে শান্তভাবে কথা বলত আর মা মাঝে মাঝে চোখের জল ফেলে আমাদের হৃদয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করতেন। আর এটা সফল হয়েছিল। আমরা আমাদের বাবামার কথাবার্তা ও কাজের মাধ্যমে শিখেছি যে, যিহোবার প্রতি ভয় এক অপূর্ব বিষয় আর তাঁর একজন সাক্ষি হওয়া আনন্দজনক ও মনোরম, সেটা কোনো বোঝা নয়।”—১ যোহন ৫:৩.
১৮. সত্য ঈশ্বরকে ভয় করার দ্বারা আমরা কী লাভ করব?
১৮ ‘দায়ূদের শেষ বাক্যের’ মধ্যে আমরা পড়ি: “যিনি মনুষ্যদের উপরে ধার্ম্মিকতায় কর্ত্তৃত্ব করেন, যিনি ঈশ্বর-ভয়ে কর্ত্তৃত্ব করেন, তিনি প্রাতঃকালের, সুর্য্যোদয় কালের, . . . ন্যায় হইবেন।” (২ শমূয়েল ২৩:১, ৩, ৪) দায়ূদের ছেলে ও উত্তরসূরি শলোমন এই কথাগুলোর প্রজ্ঞা সম্বন্ধে শিখেছিলেন কারণ তিনি যিহোবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন যেন যিহোবা তাকে “বুঝিবার চিত্ত” ও “ভাল মন্দের বিশেষ জানিতে” ক্ষমতা দেন। (১ রাজাবলি ৩:৯) শলোমন বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবাকে ভয় করা প্রজ্ঞা ও সুখের পথ। পরবর্তী সময়ে তিনি উপদেশক বইয়ে এই কথাগুলোর দ্বারা উপসংহার করেছিলেন: “আইস, আমরা সমস্ত বিষয়ের উপসংহার শুনি; ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য। কারণ ঈশ্বর সমস্ত কর্ম্ম এবং ভাল হউক, কি মন্দ হউক, সমস্ত গুপ্ত বিষয়, বিচারে আনিবেন।” (উপদেশক ১২:১৩, ১৪) আমরা যদি সেই পরামর্শে মনোযোগ দিই, তা হলে আমরা সত্যিই দেখতে পারব যে, “নম্রতার ও সদাপ্রভুর ভয়ের পুরস্কার” কেবল প্রজ্ঞা ও সুখই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে “ধন, সম্মান ও জীবন।”—হিতোপদেশ ২২:৪.
১৯. কী আমাদেরকে “সদাপ্রভুর ভয়” বুঝতে সাহায্য করবে?
১৯ বাইবেলের উদাহরণ ও আধুনিক দিনের অভিজ্ঞতাগুলো থেকে আমরা দেখি যে, ঈশ্বরের প্রতি উপযুক্ত ভয় যিহোবার সত্য দাসদের জীবনে এক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের ভয় কেবল আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে যা অসন্তুষ্টজনক, কেবল সেটা করা থেকে আমাদের বিরতই রাখে না কিন্তু সেইসঙ্গে এটা আমাদের দুর্দশাগুলো মোকাবিলা করতে সাহসও জোগায় এবং আমাদের চলার পথে যে-পরীক্ষা ও কষ্টগুলো আসে, সেগুলো সহ্য করার জন্য শক্তি জোগায়। তাই, আসুন আমরা যুবক-বৃদ্ধ সকলে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে অধ্যয়ন করি, যা শিখেছি তা নিয়ে ধ্যান করি আর নিয়মিতভাবে ও আন্তরিক প্রার্থনায় যিহোবার নিকটবর্তী হই। তা করার মাধ্যমে আমরা কেবল “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” লাভ করব না কিন্তু সেইসঙ্গে “সদাপ্রভুর ভয়” বুঝতে পারব।—হিতোপদেশ ২:১-৫.
[পাদটীকাগুলো]
^ নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।
^ এটা হয়তো সেই অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্যে একটা, যা দায়ূদকে ৫৭ ও ১৪২ গীত রচনা করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভয়
• একজন ব্যক্তিকে গুরুতর পাপ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে?
• পরীক্ষা ও তাড়নার মধ্যে সুখ নিয়ে আসতে পারে?
• ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য আমাদেরকে শক্তিশালী করতে পারে?
• আমাদের সন্তানদের জন্য এক মূল্যবান উত্তরাধিকার হতে পারে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার প্রতি ভয় দায়ূদকে রাজা শৌলকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রেখেছিল
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ঈশ্বরের প্রতি ভয় এক মূল্যবান উত্তরাধিকার, যা বাবামারা তাদের সন্তানদেরকে দিতে পারে