সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“আসুন আমরা শাস্ত্রপদ দিয়ে শাস্ত্রপদের তুলনা করি”

“আসুন আমরা শাস্ত্রপদ দিয়ে শাস্ত্রপদের তুলনা করি”

“আসুন আমরা শাস্ত্রপদ দিয়ে শাস্ত্রপদের তুলনা করি”

 নিউ ইয়র্কগামী একটা ট্রেনের কামরায় একজন ব্যক্তি একটি ধর্মীয় প্যামফ্লেট খুঁজে পেয়েছিলেন। সেই প্যামফ্লেটটি শিক্ষা দেয় যে, মৃত্যুর পর মানুষের কোনো অংশই বেঁচে থাকে না। কৌতূহলী হয়ে সেই ব্যক্তি, যিনি একজন যাজক ছিলেন, সেটি পড়তে শুরু করেছিলেন। তিনি খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলেন কারণ মৃত্যুর পর যে আমাদের কোনো অংশ বেঁচে থাকে, সেই শিক্ষার ব্যাপারে তার কখনোই কোনো সন্দেহ ছিল না। সেই সময়ে তিনি জানতেন না যে, কে সেই প্যামফ্লেটটি লিখেছেন। তা সত্ত্বেও, তিনি দেখেছিলেন যে, সেই যুক্তিটা বিশ্বাসযোগ্য ও শাস্ত্রসম্মত এবং বিষয়টা তার কাছে গবেষণা করার যোগ্য বলে মনে হয়েছিল।

এই যাজক ছিলেন জর্জ স্টর্জ। সেই ঘটনাটা ঘটেছিল ১৮৩৭ সালে, যে-বছর চার্লস ডারউইন প্রথম তার চিন্তাভাবনা নোটবুকে লিখে রেখেছিলেন, যা পরে তার বিবর্তনবাদ হয়ে উঠেছিল। বিশ্বের অনেক লোকই তখনও পর্যন্ত ধর্মপ্রাণ ছিল এবং অধিকাংশ লোক ঈশ্বরে বিশ্বাস করত। অনেকে বাইবেল পড়ত এবং এটিকে নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস বলে মনে করত।

পরে স্টর্জ জানতে পেরেছিলেন যে, পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ার হেনরি গ্রু এই প্যামফ্লেটটি লিখেছেন। গ্রু এই নীতিটা দৃঢ়ভাবে মানতেন যে, “শাস্ত্রই . . . হল এর সর্বোত্তম ব্যাখ্যাকারী। গ্রু এবং তার সহযোগীরা এই উদ্দেশ্য নিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করত যেন তারা তাদের জীবনধারা ও কার্যকলাপে এর পরামর্শ মেনে চলতে পারে। তাদের এই অধ্যয়ন কিছু চমৎকার শাস্ত্রীয় সত্যকে প্রকাশ করেছিল।

গ্রুর লেখার দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে স্টর্জ, মৃত্যুর পর মানুষের কোনো অংশের বেঁচে থাকার বিষয়ে শাস্ত্র কিছু বলে কি না, তা সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করেছিলেন এবং সেই বিষয়টা নিয়ে সহযাজকদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। পাঁচ বছর ধরে গবেষণা করার পর, স্টর্জ অবশেষে তার নতুন পাওয়া শাস্ত্রীয় সত্যের রত্ন সম্বন্ধে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রথমে, ১৮৪২ সালের কোনো এক রবিবারে তুলে ধরার জন্য তিনি একটি ধর্মোপদেশ প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু, তিনি আলোচনাটা সঠিকভাবে শেষ করার জন্য আরও কিছু ধর্মোপদেশ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছিলেন। মানুষের মধ্যে অমর কোনো অংশের অস্তিত্ব নেই এই বিষয়ে তিনি শেষপর্যন্ত ছয়টি ধর্মোপদেশ তুলে ধরেন, যেগুলো তার ছয়টি ধর্মোপদেশ (ইংরেজি) বইয়ে তিনি প্রকাশ করেছিলেন। ঈশ্বরকে অসম্মান করে খ্রিস্টীয়জগতের এমন মতবাদগুলোর নীচে চাপা পড়া চমৎকার সত্যকে উদ্‌ঘাটন করার জন্য স্টর্জ শাস্ত্রপদ দিয়ে শাস্ত্রপদের তুলনা করেছিলেন।

বাইবেল মৃতদের সম্বন্ধে কী শিক্ষা দেয়?

যিশুর অভিষিক্ত অনুসারীরা তাদের বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে অমরত্ব লাভ করবে বলে বাইবেল উল্লেখ করে। (১ করিন্থীয় ১৫:৫০-৫৬) স্টর্জ যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, অমরত্ব যদি বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জন্য এক পুরস্কারই হয়ে থাকে, তা হলে দুষ্টরা অমর হতে পারে না। অনুমান করার পরিবর্তে তিনি বরং শাস্ত্র পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি মথি ১০:২৮ পদ এবং যিহিষ্কেল ১৮:৪ পদ বিবেচনা করেছিলেন আর এই উপসংহারে এসেছিলেন যে, মৃত্যুর পর কোনোকিছুই বেঁচে থাকে না। * যখন পুরো বাইবেল বিবেচনা করা হয়েছিল, তখন মূল্যবান সত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠেছিল। “যদি আমি এই বিষয়টাকে সঠিক বলে ধরে নিই,” স্টর্জ লিখেছিলেন, “তা হলে, শাস্ত্রের অনেক অংশ যেগুলো সাধারণ মতবাদ সম্বন্ধে অস্পষ্ট ছিল, সেগুলো সুস্পষ্ট, সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ ও জোরালো হয়ে ওঠে।”

কিন্তু, যিহূদা ৭ পদের মতো শাস্ত্রপদগুলোর বিষয়ে কী বলা যায়? এটি বলে: “সেই প্রকার সদোম ও ঘমোরা এবং তন্নিকটস্থ নগর সকল ইহাদের ন্যায় নিতান্ত বেশ্যাগামী এবং বিজাতীয় মাংসের চেষ্টায় বিপথগামী হইয়া, অনন্ত অগ্নির দণ্ড ভোগ করতঃ দৃষ্টান্তরূপে প্রত্যক্ষ রহিয়াছে।” এই পদটি পড়ে কেউ কেউ হয়তো এই উপসংহারে আসতে পারে যে, সদোম ও ঘমোরায় যারা মারা গিয়েছিল, তারা চিরকাল ধরে আগুনে যন্ত্রণা পাচ্ছে। “আসুন আমরা শাস্ত্রপদ দিয়ে শাস্ত্রপদের তুলনা করি,” স্টর্জ লিখেছিলেন। এরপর তিনি ২ পিতর ২:৫, ৬ পদ উদ্ধৃত করেছিলেন, যেখানে লেখা আছে: “আর তিনি পুরাতন জগতের প্রতি মমতা করেন নাই, কিন্তু যখন ভক্তিহীনদের জগতে জলপ্লাবন আনিলেন, তখন . . . নোহকে রক্ষা করিলেন। আর সদোম ও ঘমোরা নগর ভস্মীভূত করিয়া উৎপাটনরূপ দণ্ড দিলেন, যাহারা ভক্তিবিরুদ্ধ আচরণ করিবে, তাহাদের দৃষ্টান্তস্বরূপ করিলেন।” হ্যাঁ, সদোম ও ঘমোরা এবং এদের অধিবাসীরা ভস্মীভূত হয়েছিল, চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

“যিহূদার লেখাকে পিতর আরও স্পষ্ট করেন,” স্টর্জ ব্যাখ্যা করেছিলেন। “দুটো বইয়ের তুলনা করা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, পাপীদের বিরুদ্ধে ঈশ্বর কী ধরনের অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। . . . পুরোনো জগৎ, সদোম ও ঘমোরাকে দেওয়া শাস্তিগুলো হল জগতের শেষ সময়ের সমস্ত লোকের জন্য এক স্থায়ী এবং অশেষ বা ‘অনন্তকালীন’ হুঁশিয়ারি, সতর্কবাণী অথবা ‘দৃষ্টান্ত।’” তাই, যিহূদা সেই আগুনের প্রভাব সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন, যা সদোম ও ঘমোরাকে অনন্তকালের জন্য ধ্বংস করেছিল। এটা কোনোভাবেই এই সত্যকে পরিবর্তিত করে না যে, মৃত্যুর পর মানুষের কোনোকিছুই বেঁচে থাকে না।

স্টর্জ অন্যান্য শাস্ত্রপদ বাদ দিয়ে শুধু বেছে বেছে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে এমন শাস্ত্রপদগুলোই ব্যবহার করেননি। তিনি প্রত্যেকটি পদের প্রসঙ্গ ও সেইসঙ্গে বাইবেলের মর্মার্থ বিবেচনা করতেন। কোনো একটি পদকে যদি অন্যান্য পদের সঙ্গে পরস্পরবিরোধী বলে মনে হতো, তা হলে স্টর্জ একটা যুক্তিসংগত ব্যাখ্যার জন্য বাইবেলের বাকি অংশ পরীক্ষা করে দেখতেন।

শাস্ত্র নিয়ে রাসেলের গবেষণা

জর্জ স্টর্জের সঙ্গে যারা মেলামেশা করত তাদের মধ্যে একজন যুবক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি পেনসিলভানিয়ার পিটস্‌বার্গে একটা বাইবেল অধ্যয়ন দল গঠন করছিলেন। তার নাম ছিল চার্লস টেজ রাসেল। ১৮৭৬ সালে, শাস্ত্রীয় মূলভাবগুলোর ওপর তার একটি প্রবন্ধ স্টর্জের দ্বারা সম্পাদিত বাইবেল পরীক্ষক (ইংরেজি) পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। রাসেল স্বীকার করেছিলেন যে, প্রথম দিকের বাইবেল ছাত্ররা তার ওপর প্রভাব ফেলেছিল। পরে, জায়ন্স ওয়াচ টাওয়ার পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, স্টর্জ কথা ও লেখার দ্বারা তাকে প্রচুর সহযোগিতা করেছিলেন।

সি. টি. রাসেল ১৮ বছর বয়সে একটা গবেষণা ক্লাস গঠন করেছিলেন এবং বাইবেল নিয়ে গবেষণার জন্য একটা আদর্শ প্রবর্তন করেছিলেন। এ. এইচ. ম্যাকমিলান নামে একজন বাইবেল ছাত্র যিনি রাসেলের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, তিনি এই পদ্ধতি সম্বন্ধে এভাবে বর্ণনা করেছিলেন: “কেউ একটা প্রশ্ন উত্থাপন করত। তারপর, তারা সেটা নিয়ে আলোচনা করত। তারা সেই বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্ত শাস্ত্রপদ পরীক্ষা করত আর যখন তারা এই পদগুলোর সংগতি সম্বন্ধে নিশ্চিত হতো, তখন অবশেষে তারা তাদের উপসংহারে পৌঁছাত এবং সেটা লিখে রাখত।”

রাসেল এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, যখন বাইবেলকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করা হয়, তখন এটি নিশ্চয়ই এমন এক বার্তা প্রকাশ করে, যা এর নিজের এবং এর ঐশিক গ্রন্থকারের চরিত্রের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। যখনই বাইবেলের কোনো একটি অংশ বোঝা কঠিন বলে মনে হতো, তখন রাসেল নিশ্চিত ছিলেন যে বাইবেলের অন্যান্য অংশের দ্বারাই সেটিকে স্পষ্ট এবং ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

শাস্ত্রীয় পরম্পরা

কিন্তু রাসেল, স্টর্জ বা গ্রু-ই প্রথম ব্যক্তি ছিল না, যারা শাস্ত্রকে এর নিজস্ব ব্যাখ্যাকারী হিসেবে তুলে ধরেছিল। খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্টের সময় থেকে এই পরম্পরা শুরু হয়েছিল। একটি পদের প্রকৃত অর্থ স্পষ্ট করার জন্য যিশু কয়েকটি শাস্ত্রপদ ব্যবহার করতেন। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্রামবারে শিষ ছেঁড়ার কারণে যখন ফরীশীরা তাঁর শিষ্যদের সমালোচনা করেছিল, তখন যিশু ১ শমূয়েল ২১:৬ পদে লিপিবদ্ধ ঘটনা থেকে দেখিয়েছিলেন যে, কীভাবে বিশ্রামবার আইন প্রয়োগ করা উচিত। ধর্মীয় নেতারা সেই ঘটনার সঙ্গে সুপরিচিত ছিল, যেখানে দায়ূদ ও তার সঙ্গীরা দর্শনরুটি খেয়েছিল। এরপর, যিশু ব্যবস্থার সেই অংশ উল্লেখ করেছিলেন যেখানে বলা ছিল যে, একমাত্র হারোণ বংশীয় যাজকরাই দর্শনরুটি খেতে পারবে। (যাত্রাপুস্তক ২৯:৩২, ৩৩; লেবীয় পুস্তক ২৪:৯) তবুও, দায়ূদকে এগিয়ে গিয়ে সেই রুটি খেতে বলা হয়েছিল। হোশেয়ের বই থেকে উদ্ধৃতি করে যিশু তাঁর জোরালো যুক্তি শেষ করেছিলেন: “‘আমি দয়াই চাই, বলিদান নয়,’ এই কথার অর্থ কি, তাহা যদি তোমরা জানিতে, তবে নির্দ্দোষদিগকে দোষী করিতে না।” (মথি ১২:১-৮) শাস্ত্রপদ দিয়ে শাস্ত্রপদের তুলনা করে সঠিক বোধগম্যতায় পৌঁছানোর কী এক চমৎকার উদাহরণ!

যিশুর অনুসারীরা একটি শাস্ত্রপদ ব্যাখ্যা করার জন্য বিভিন্ন শাস্ত্রপদ ব্যবহার করার সেই আদর্শ ধরে রেখেছিল। প্রেরিত পৌল যখন থিষলনীকীর লোকেদের শিক্ষা দিয়েছিলেন, তখন তিনি “লোকদের সংগে পবিত্র শাস্ত্র থেকে আলোচনা করলেন। তিনি লোকদের বুঝালেন এবং প্রমাণ করলেন যে, মশীহের কষ্টভোগ করবার এবং মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবার দরকার ছিল।” (প্রেরিত ১৭:২, ৩, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) ঐশিক অনুপ্রেরণায় লেখা তার পত্রগুলোতে পৌলও বাইবেলকে এর নিজস্ব ব্যাখ্যাকারী হতে দিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবস্থা যে আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়াবিশিষ্ট ছিল, তা প্রমাণ করার জন্য ইব্রীয়দের কাছে লেখার সময়ে তিনি অনেক শাস্ত্রপদ উদ্ধৃত করেছিলেন।—ইব্রীয় ১০:১-১৮.

হ্যাঁ, উনবিংশ শতাব্দীতে ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের আন্তরিক বাইবেল ছাত্ররা কেবলমাত্র এই খ্রিস্টীয় আদর্শকেই পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেছিল। শাস্ত্রপদগুলোকে অন্যান্য শাস্ত্রপদ দিয়ে তুলনা করার সেই পরম্পরা প্রহরীদুর্গ পত্রিকা ধরে রেখেছে। (২ থিষলনীকীয় ২:১৫) যিহোবার সাক্ষিরা একটি শাস্ত্রপদ বিশ্লেষণ করার সময় এই নীতিটা ব্যবহার করে থাকে।

প্রসঙ্গকেই বলতে দিন

বাইবেল পড়ার সময়ে আমরা কীভাবে যিশু ও তাঁর বিশ্বস্ত অনুসারীদের চমৎকার উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি? প্রথমত, আমরা আলোচ্য শাস্ত্রপদটির প্রসঙ্গ বিবেচনা করতে পারি। আমাদেরকে অর্থ বুঝতে প্রসঙ্গ কীভাবে সাহায্য করতে পারে? উদাহরণস্বরূপ, আসুন আমরা মথি ১৬:২৮ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলো বিবেচনা করি: “আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যাহারা এখানে দাঁড়াইয়া রহিয়াছে, তাহাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে, যাহারা কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাইবে না, যে পর্য্যন্ত মনুষ্যপুত্ত্রকে আপনার রাজ্যে আসিতে না দেখিবে।” কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারে যে, এই কথাগুলো পরিপূর্ণ হয়নি কারণ তিনি সেই কথাগুলো বলার সময় যিশুর যে-শিষ্যরা সেখানে উপস্থিত ছিল, তারা সকলেই স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই মারা গিয়েছিল। এমনকি ইন্টারপ্রিটারস্‌ বাইবেল এই পদ সম্বন্ধে এভাবে বলে: “এই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হয়নি আর পরে খ্রিস্টানরা এই বিষয়টা ব্যাখ্যা করা আবশ্যক বলে মনে করেছিল যে, এই কথাগুলো আসলে রূপক ছিল।”

কিন্তু, এই পদের প্রসঙ্গ এবং সেইসঙ্গে মার্ক ও লূকের অনুরূপ বিবরণগুলো আমাদের এই শাস্ত্রপদের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সাহায্য করে। এই কথাগুলো উদ্ধৃত করার পর পরই মথি কী বলেছিলেন? তিনি লিখেছিলেন: “ছয় দিন পরে যীশু পিতর, যাকোব ও তাঁহার ভ্রাতা যোহনকে সঙ্গে করিয়া বিরলে এক উচ্চ পর্ব্বতে লইয়া গেলেন। পরে তিনি তাঁহাদের সাক্ষাতে রূপান্তরিত হইলেন।” (মথি ১৭:১, ২) মার্ক ও লূক দুজনেই রাজ্য সম্বন্ধে যিশুর মন্তব্যকে রূপান্তরের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করেছিল। (মার্ক ৯:১-৮; লূক ৯:২৭-৩৬) রাজ্য ক্ষমতায় যিশুর আগমন তাঁর রূপান্তরের দ্বারা প্রদর্শিত হয়েছিল, যে-সময়ে তিনি তিনজন প্রেরিতের উপস্থিতিতে প্রতাপান্বিত হয়েছিলেন। পিতর যে যিশুর রূপান্তরের সাক্ষি ছিলেন সেই প্রসঙ্গে “প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পরাক্রম ও আগমনের” বা উপস্থিতির বিষয় বলার মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত করেন যে, এই বোধগম্যতা সঠিক।—২ পিতর ১:১৬-১৮.

আপনি কি বাইবেলকে এর ব্যাখ্যাকারী হতে দেন?

আপনি একটি শাস্ত্রপদের প্রসঙ্গ বিবেচনা করার পরও যদি তা বুঝতে না পারেন, তা হলে কী? আপনি হয়তো বাইবেলের মর্মার্থ মাথায় রেখে এটিকে অন্যান্য শাস্ত্রপদ দিয়ে তুলনা করে উপকার পেতে পারেন। তা করার এক চমৎকার হাতিয়ার পাওয়া যেতে পারে পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেলে, যেটি এখন সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ৫৭টা ভাষায় পাওয়া যায়। এই হাতিয়ার হল মার্জিনাল রেফারেন্স বা ক্রস রেফারেন্সের এক তালিকা, যা এর অনেক সংস্করণে প্রতি পৃষ্ঠার মাঝখানের কলামে দেখা যায়। আপনি পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ—প্রাসঙ্গিক বিষয় সহ (ইংরেজি) বাইবেলে সেগুলো ১,২৫,০০০রেরও বেশি খুঁজে পাবেন, যেটি বেশ কয়েকটা প্রধান ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে। এই বাইবেলের “ভূমিকা” এভাবে ব্যাখ্যা করে: “সতর্কতার সঙ্গে এই মার্জিনাল রেফারেন্সগুলোর তুলনা করা এবং এর সঙ্গে দেওয়া পাদটীকাগুলো পরীক্ষা করা বাইবেলের ৬৬টি বইয়ের পরস্পর সম্পর্কযুক্ত সামঞ্জস্য প্রকাশ করবে, যা প্রমাণ করে যে এগুলো ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত একটি বইয়ের অংশ।”

আসুন আমরা দেখি যে, একটি শাস্ত্রপদ বোঝার ক্ষেত্রে ক্রস রেফারেন্সগুলো আমাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, অব্রাম বা অব্রাহামের ইতিহাস বিবেচনা করুন। এই প্রশ্নটা বিবেচনা করুন: অব্রাম ও তার পরিবার যখন ঊর থেকে যাত্রা করেছিলেন, তখন কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? আদিপুস্তক ১১:৩১ পদ বলে: “তেরহ আপন পুত্ত্র অব্রামকে ও . . . লোটকে এবং . . . সারী নাম্নী পুত্ত্রবধূকে সঙ্গে লইলেন; তাঁহারা একসঙ্গে কনান দেশে যাইবার নিমিত্তে কল্‌দীয় দেশের ঊর হইতে যাত্রা করিলেন; আর হারণ নগর পর্য্যন্ত গিয়া তথায় বসতি করিলেন।” শুধুমাত্র এই অংশটুকু পড়ে একজন ব্যক্তি হয়তো এই উপসংহারে আসতে পারেন যে, অব্রামের বাবা তেরহ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু, নতুন জগৎ অনুবাদ-এ আমরা এই পদের ওপর ১১টা ক্রস রেফারেন্স খুঁজে পাই। এগুলোর মধ্যে শেষেরটা আমাদেরকে প্রেরিত ৭:২ পদে নিয়ে যায়, যেখানে আমরা প্রথম শতাব্দীর যিহুদিদের প্রতি স্তিফানের পরামর্শ সম্বন্ধে পড়ি: “আমাদের পিতা অব্রাহাম হারণে বসতি করিবার পূর্ব্বে যে সময়ে মিসপতামিয়ায় ছিলেন, তৎকালে প্রতাপের ঈশ্বর তাঁহাকে দর্শন দিয়াছিলেন, আর বলিয়াছিলেন ‘তুমি স্বদেশ হইতে ও আপন জ্ঞাতি কুটুম্বদের মধ্য হইতে বাহির হও, এবং আমি যে দেশ তোমাকে দেখাই, সেই দেশে চল।’” (প্রেরিত ৭:২, ৩) স্তিফান কি অব্রামের হারণ ত্যাগ করার সঙ্গে এই বিষয়টাকে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলেন? অবশ্যই না কারণ এটি ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের অংশ।—আদিপুস্তক ১২:১-৩.

তা হলে, আদিপুস্তক ১১:৩১ পদ কেন বলে যে, “তেরহ আপন পুত্ত্র অব্রামকে” এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে ‘সঙ্গে লইয়া’ ঊর থেকে যাত্রা করেছিলেন? তেরহ তখনও পর্যন্ত প্রধান কুলপতি ছিলেন। তিনি অব্রামের সঙ্গে যেতে রাজি হয়েছিলেন আর তাই তিনিই পরিবারকে নিয়ে হারণে গিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়েছিল। আমরা এই দুটো শাস্ত্রপদ তুলনা করার ও মিলিয়ে দেখার মাধ্যমে আসলে যা ঘটেছিল, তা আমাদের মনের চোখ দিয়ে কল্পনা করতে পারি। ঈশ্বরের আদেশের সঙ্গে মিল রেখে অব্রাম ঊর ছাড়ার জন্য তার বাবাকে সম্মানপূর্বক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছিলেন।

আমরা যখন শাস্ত্র পড়ি, তখন আমাদের ঘটনার প্রসঙ্গ এবং বাইবেলের মর্মার্থ বিবেচনা করা উচিত। খ্রিস্টানদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “আমরা জগতের আত্মাকে পাই নাই, বরং ঈশ্বর হইতে নির্গত আত্মাকে পাইয়াছি, যেন ঈশ্বর অনুগ্রহপূর্ব্বক আমাদিগকে যাহা যাহা দান করিয়াছেন, তাহা জানিতে পারি। আমরা সেই সকল বিষয়েরই কথা, মানুষিক শিক্ষানুরূপ জ্ঞানের বাক্য দ্বারা নয়, কিন্তু আত্মার শিক্ষানুরূপ বাক্য দ্বারা কহিতেছি; আত্মিক বিষয় আত্মিক বিষয়ের সহিত যোগ করিতেছি।” (১ করিন্থীয় ২:১১-১৩) বস্তুতপক্ষে, আমাদের অবশ্যই তাঁর বাক্য বোঝার জন্য এবং আলোচ্য প্রশ্নের প্রসঙ্গ পরীক্ষা করার ও সম্পর্কযুক্ত শাস্ত্রপদগুলো খুঁজে দেখার মাধ্যমে ‘আত্মিক বিষয় আত্মিক বিষয়ের সহিত যোগ করিবার’ জন্য যিহোবার সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। আমরা যেন ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার মাধ্যমে সত্যের উজ্জ্বল রত্নগুলোর অনুসন্ধান করে চলি।

[পাদটীকা]

^ মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ৬ অধ্যায় দেখুন।

[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

উনবিংশ শতাব্দীর বাইবেল ছাত্ররা, যারা শাস্ত্রকেই শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করতে দিয়েছিল: জর্জ স্টর্জ, হেনরি গ্রু, চার্লস টেজ রাসেল, এ. এইচ. ম্যাকমিলান

[সৌজন্যে]

ওপরে: SIX SERMONS, by George Storrs (১৮৫৫); ওপর থেকে দ্বিতীয়টি: Collection of The New-York Historical Society/৬৯২৮৮

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রেরিত পৌল বিভিন্ন শাস্ত্রপদ দিয়ে তার শিক্ষাকে প্রমাণ করেছিলেন