সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ইয়োব—ধৈর্যশীল ও নীতিনিষ্ঠ এক ব্যক্তি

ইয়োব—ধৈর্যশীল ও নীতিনিষ্ঠ এক ব্যক্তি

ইয়োব—ধৈর্যশীল ও নীতিনিষ্ঠ এক ব্যক্তি

“আমার দাস ইয়োবের উপরে কি তোমার মন পড়িয়াছে? কেননা তাহার তুল্য সিদ্ধ [“নির্দোষ,” NW] ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী লোক পৃথিবীতে কেহই নাই।”—ইয়োব ১:৮.

১, ২. (ক) ইয়োব অপ্রত্যাশিত কোন দুঃখজনক ঘটনাগুলো ভোগ করেছিলেন? (খ) দুঃখজনক ঘটনাগুলো ঘটার আগে ইয়োবের জীবন কেমন ছিল, তা বর্ণনা করুন।

 একজন ব্যক্তি ছিলেন, যার সবকিছুই ছিল বলে মনে হয়—ধনসম্পদ, প্রতিপত্তি, সুস্বাস্থ্য ও সুখী পারিবারিক জীবন। এরপর, মুহূর্তের মধ্যে এক এক করে তিনবার দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যায়। রাতারাতি তিনি তার ধনসম্পদ হারান। পর মুহূর্তেই, এক অস্বাভাবিক ঝড় তার সমস্ত সন্তানের জীবন কেড়ে নেয়। এর পর পরই তার এক অসহনীয় রোগ হয়, যার ফলে তার সারা শরীর যন্ত্রণাদায়ক ফোড়াতে ভরে যায়। সম্ভবত আপনি বুঝতে পারছেন যে, সেই ব্যক্তি ছিলেন ইয়োব, যিনি বাইবেলের ইয়োব বইয়ের এক প্রধান চরিত্র।—ইয়োব ১ এবং অধ্যায়।

“আহা! যদি আমি সেইরূপ থাকিতাম, যেমন পূর্ব্বকার মাসপর্য্যায়ে ছিলাম!” (ইয়োব ৩:৩; ২৯:২) যখন বিপর্যয় ঘটে, তখন অতীতের দিনগুলোর কথা মনে করে কেই বা না আপশোস করে থাকে? ইয়োবের বেলায়, তিনি এক ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপন করেছিলেন, যা আপাতদৃষ্টিতে দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষিত ছিল বলে মনে হয়েছিল। গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে সম্মান করত এবং তার কাছে পরামর্শ চাইত। (ইয়োব ২৯:৫-১১) তিনি ধনী ছিলেন ঠিকই কিন্তু টাকাপয়সার প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছিলেন। (ইয়োব ৩১:২৪, ২৫, ২৮) অভাবী বিধবা অথবা অনাথদের সঙ্গে যখন তার দেখা হতো, তখন তিনি তাদের সাহায্য করতেন। (ইয়োব ২৯:১২-১৬) আর তিনি তার স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন।—ইয়োব ৩১:১, ৯, ১১.

৩. ইয়োবকে যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন?

ইয়োব এক নির্দোষ জীবনযাপন করতেন কারণ তিনি ঈশ্বরকে উপাসনা করতেন। যিহোবা বলেছিলেন, “তাহার তুল্য নির্দোষ ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী লোক পৃথিবীতে কেহই নাই।” (ইয়োব ১:১, NW, ৮) কিন্তু ইয়োবের নৈতিক নীতিনিষ্ঠা সত্ত্বেও, দুঃখজনক ঘটনাগুলো তার স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনধারাকে বিনষ্ট করে দিয়েছিল। তার অর্জিত ও সম্পাদিত সমস্তকিছু নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল আর তার প্রকৃত স্বভাব কষ্ট, যন্ত্রণা ও হতাশার দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছিল।

৪. ইয়োবের চরম পরীক্ষা বিবেচনা করা কেন সাহায্যকারী হবে?

অবশ্য ইয়োবই ঈশ্বরের একমাত্র দাস নন, যিনি ব্যক্তিগতভাবে দুর্যোগ ভোগ করেছিলেন। আজকে, অনেক খ্রিস্টান সহজেই তাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে ইয়োবের অভিজ্ঞতার সামঞ্জস্য দেখতে পারে। এই কারণে, দুটো প্রশ্ন আমাদের বিবেচনার যোগ্য: আমরা যখন দুঃখজনক ঘটনার সম্মুখীন হই, তখন কীভাবে ইয়োবের চরম পরীক্ষা স্মরণ করা আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে? আর কীভাবে এটা যারা কষ্টভোগ করে, তাদের প্রতি আরও বেশি সহমর্মী হওয়ার জন্য শিক্ষা দিতে পারে?

আনুগত্যের এক বিচার্য বিষয় ও নীতিনিষ্ঠার এক পরীক্ষা

৫. শয়তানের কথা অনুযায়ী, কেন ইয়োব ঈশ্বরকে সেবা করছিলেন?

ইয়োবের ঘটনাটা ছিল ব্যতিক্রম। ইয়োবের অজান্তে, দিয়াবল ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে ইয়োবের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। স্বর্গে এক সমাবেশের সময় যিহোবা যখন ইয়োবের উত্তম গুণাবলির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন, তখন শয়তান উত্তর দিয়েছিল: “তুমি তাহার চারিদিকে, তাহার বাটীর চারিদিকে ও তাহার সর্ব্বস্বের চারিদিকে কি বেড়া দেও নাই?” এভাবে শয়তান দাবি করেছিল যে, স্বার্থপরতাই ইয়োবকে—অনুরূপভাবে ঈশ্বরের সমস্ত দাসকে—পরিচালিত করেছিল। “তুমি একবার হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার সর্ব্বস্ব স্পর্শ কর, তবে সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে,” শয়তান যিহোবাকে বলেছিল।—ইয়োব ১:৮-১১.

৬. শয়তান কোন গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয় উত্থাপন করেছিল?

এই বিচার্য বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যিহোবা যেভাবে তাঁর সার্বভৌমত্বকে ব্যবহার করেন, সেটা নিয়ে শয়তান প্রশ্ন তুলেছিল। আসলেই কি ঈশ্বরের পক্ষে প্রেমের দ্বারা নিখিলবিশ্বকে শাসন করা সম্ভব? নাকি শয়তানের ইঙ্গিত অনুযায়ী, পরিশেষে স্বার্থপরতাই জয়ী হবে? যিহোবা তাঁর দাসের নীতিনিষ্ঠা ও আনুগত্যের ওপর আস্থা রেখে দিয়াবলকে ইয়োবের ওপর পরীক্ষা ঘটাতে দিয়েছিলেন। এভাবে, নিমিষের মধ্যেই ইয়োবের ওপর এক এক করে যে-বিপর্যয় এসেছিল, সেগুলো শয়তানই এনেছিল। শয়তান যখন তার প্রাথমিক আক্রমণে ব্যর্থ হয়েছিল, তখন সে ইয়োবকে বেদনাদায়ক রোগ দ্বারা আক্রান্ত করেছিল। শয়তান দাবি করেছিল, “চর্ম্মের জন্য চর্ম্ম, আর প্রাণের জন্য লোক সর্ব্বস্ব দিবে।”—ইয়োব ২:৪.

৭. কোন কোন উপায়ে আজকে ঈশ্বরের দাসেরা ইয়োবের মতো একই ধরনের পরীক্ষা ভোগ করে থাকে?

যদিও আজকে খ্রিস্টানরা ইয়োবের মতো এতটা কষ্ট ভোগ করে না কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ক্লেশ তাদেরকে জর্জরিত করে। অনেকে তাড়না অথবা পারিবারিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। আর্থিক কষ্ট বা দুর্বল স্বাস্থ্য মারাত্মক হতে পারে। কেউ কেউ তাদের বিশ্বাসের জন্য জীবন হারিয়েছে। অবশ্য, আমাদের এইরকম ধরে নেওয়া উচিত নয় যে, আমরা যে-দুঃখজনক ঘটনাগুলো ভোগ করে থাকি, সেগুলোর সবই শয়তান ব্যক্তিগতভাবে ঘটিয়ে থাকে। আসলে, কিছু কিছু সমস্যা এমনকি আমাদের নিজেদের ভুলগুলোর জন্য অথবা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আমাদের শারীরিক অবস্থার জন্য হয়ে থাকে। (গালাতীয় ৬:৭) আর আমরা সকলে বার্ধক্য এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসাত্মক পরিণতি ভোগ করে থাকি। বাইবেল স্পষ্ট করে দেয় যে, বর্তমান সময়ে যিহোবা তাঁর দাসদের এই ধরনের দুঃখদুর্দশা থেকে অলৌকিকভাবে সুরক্ষা করেন না।—উপদেশক ৯:১১.

৮. আমরা যে-ক্লেশগুলো ভোগ করি, সেগুলোকে শয়তান কীভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারে?

তা সত্ত্বেও, আমরা যে-ক্লেশগুলো ভোগ করে থাকি, সেগুলোকে শয়তান আমাদের বিশ্বাস নষ্ট করে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে। প্রেরিত পৌল ‘মাংসে একটা কন্টক, শয়তানের এক দূতের’ দ্বারা জর্জরিত হওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন, যা তাকে “মুষ্ট্যাঘাত” করে চলেছিল। (২ করিন্থীয় ১২:৭) এটা কোনো শারীরিক সমস্যা, হতে পারে দুর্বল দৃষ্টিশক্তি বা অন্যকিছু, যা-ই হোক না কেন পৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে, শয়তান সেই সমস্যাকে ব্যবহার করতে পারে আর এর ফলে আসা হতাশার দ্বারা তার আনন্দ ও নীতিনিষ্ঠাকে নিঃশেষ করে দিতে পারে। (হিতোপদেশ ২৪:১০) আজকে, শয়তান হয়তো ঈশ্বরের দাসদের কোনো না কোনোভাবে তাড়না করার জন্য পরিবারের সদস্য, সহছাত্র-ছাত্রী অথবা এমনকি একনায়কতন্ত্রী সরকারকে উসকে দিতে পারে।

৯. কেন চরম দুর্দশা অথবা তাড়না আসলে আমাদের অযথা আশ্চর্য হওয়া উচিত নয়?

কীভাবে আমরা এই সমস্যাগুলোকে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি? সেগুলোকে যিহোবার প্রতি আমাদের ভালবাসা ও তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি আমাদের বশ্যতা যে পরিবর্তনশীল নয়, তা প্রদর্শন করার একটা সুযোগ হিসেবে দেখার মাধ্যমে। (যাকোব ১:২-৪) আমাদের দুর্দশার কারণ যা-ই হোক না কেন, ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব সম্বন্ধে বোঝা আমাদেরকে আধ্যাত্মিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। প্রেরিত পিতর খ্রিস্টানদের লিখেছিলেন: “প্রিয়েরা, তোমাদের পরীক্ষার্থে যে আগুন তোমাদের মধ্যে জ্বলিতেছে, ইহা বিজাতীয় ঘটনা বলিয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না।” (১ পিতর ৪:১২) আর পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন: “যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে।” (২ তীমথিয় ৩:১২) শয়তান এখনও যিহোবার সাক্ষিদের নীতিনিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, যেমনটা সে ইয়োবের বেলায় তুলেছিল। বস্তুতপক্ষে বাইবেল ইঙ্গিত দেয় যে, এই শেষকালে শয়তান ঈশ্বরের লোকেদের ওপর তার আক্রমণকে আরও জোরদার করেছে।—প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১৭.

এক ভুল বোঝাবুঝি ও কিছু ভুল পরামর্শ

১০. ইয়োব কোন অসুবিধা ভোগ করেছিলেন?

১০ ইয়োবকে একটা অসুবিধা ভোগ করতে হয়েছিল, যা আমাদের করতে হয় না। তিনি জানতেন না যে, কেন এই বিপর্যয়গুলো তার ওপর এসেছিল। ইয়োব ভুলভাবে এই উপসংহারে এসেছিলেন যে, কোনো না কোনোভাবে “সদাপ্রভু দিয়াছিলেন, সদাপ্রভুই লইয়াছেন।” (ইয়োব ১:২১) সম্ভবত, শয়তান উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইয়োবের মধ্যে এই ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল যে, ঈশ্বরই তার ওপর দুঃখদুর্দশা নিয়ে এসেছেন।

১১. ইয়োবের বিপর্যয়গুলোর প্রতি তার প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করুন।

১১ ইয়োব অত্যন্ত নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন, যদিও তিনি তার স্ত্রীর পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও ঈশ্বরকে জলাঞ্জলি দেওয়া প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (ইয়োব ২:৯, ১০) ‘দুর্জ্জনদের আমার চেয়ে আরও সফল বলে মনে হয়,’ তিনি বলেছিলেন। (ইয়োব ২১:৭-৯) ‘কেন ঈশ্বর আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন?’ তিনি নিশ্চয়ই এইরকমটা ভেবেছিলেন। এমন সময়ও এসেছিল, যখন তিনি কেবল মৃত্যুবরণ করতে চেয়েছিলেন। “হায়, তুমি আমাকে পাতালে লুকাইয়া রাখিও, গুপ্ত রাখিও, যাবৎ তোমার ক্রোধ গত না হয়,” তিনি আর্তনাদ করে বলেছিলেন।—ইয়োব ১৪:১৩.

১২, ১৩. ইয়োবের তিন সঙ্গীর মন্তব্য তাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

১২ ইয়োবের যে-তিন সঙ্গী তাকে দেখতে এসেছিল, তারা নামমাত্র “তাঁহার সহিত শোক ও তাঁহাকে সান্ত্বনা করিবার” জন্য এসেছিল। (ইয়োব ২:১১) যা-ই হোক, তারা “কষ্টজনক সান্ত্বনাকারী” হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। (ইয়োব ১৬:২) ইয়োব হয়তো সেই বন্ধুদের দ্বারা উপকৃত হতে পারতেন, যাদের কাছে তিনি তার সমস্যাগুলোর কথা বলতে পারতেন কিন্তু এই তিন বন্ধু ইয়োবের বিভ্রান্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তার হতাশাকে আরও তীব্র করে তুলেছিল।—ইয়োব ১৯:২; ২৬:২.

১৩ স্বাভাবিকভাবেই, ইয়োব হয়তো নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কেন আমিই ভোগ করছি? আমি এমন কী করেছি, যার জন্য আমার ওপর এই বিপর্যয় এসেছে?’ তার সঙ্গীরা যে-ব্যাখ্যাগুলো দিয়েছিল, সেগুলো সম্পূর্ণরূপে ভুল ছিল। তারা ধরে নিয়েছিল যে, কোনো গুরুতর পাপ করে ইয়োবই নিজের ওপর দুঃখকষ্ট নিয়ে এসেছে। “কে নির্দ্দোষ হইয়া বিনষ্ট হইয়াছে?” ইলীফস জিজ্ঞেস করেছিলেন। “আমি দেখিয়াছি, যাহারা অধর্ম্মরূপ চাষ করে, যাহারা অনিষ্ট-বীজ বপন করে, তাহারা তাহাই কাটে।”—ইয়োব ৪:৭, ৮.

১৪. কেন আমাদের দুঃখকষ্টকে সহজেই অনুপযুক্ত আচরণের কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া উচিত নয়?

১৪ এটা ঠিক যে, আমরা যদি আত্মার উদ্দেশে না বুনে মাংসের উদ্দেশে বুনি, তা হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। (গালাতীয় ৬:৭, ৮) কিন্তু, এই বর্তমান বিধিব্যবস্থায় আমাদের আচরণ যেমনই হোক না কেন, সমস্যা দেখা দিতে পারে। অধিকন্তু, কোনোভাবেই বলা যেতে পারে না যে, নির্দোষ ব্যক্তিরা সমস্ত ধরনের বিপর্যয় থেকে মুক্ত। যিশু খ্রিস্ট, যিনি “বিমল, পাপিগণ হইতে পৃথক্‌কৃত” ছিলেন, তিনি যাতনাদণ্ডে বেদনাদায়ক মৃত্যু ভোগ করেছিলেন এবং প্রেরিত যাকোব একজন শহীদের মতো মৃত্যুবরণ করেছিলেন। (ইব্রীয় ৭:২৬; প্রেরিত ১২:১, ২) ইলীফস ও তার দুই সঙ্গীর ভুল যুক্তি ইয়োবকে তার সুনাম রক্ষা করতে ও তিনি যে-নির্দোষ, সেই বিষয়ের ওপর জোর দিতে পরিচালিত করেছিল। তা সত্ত্বেও, তাদের এই একগুঁয়ে অভিযোগ যে, ইয়োবের দুঃখকষ্ট ভোগ করা উপযুক্ত ছিল, তা ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের প্রতি ইয়োবের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রভাব ফেলেছিল।—ইয়োব ৩৪:৫; ৩৫:২.

ক্লেশের সম্মুখীন হলে সাহায্য খোঁজা

১৫. দুঃখকষ্টের সম্মুখীন হলে কোন যুক্তি আমাদের সাহায্য করবে?

১৫ এখানে কি আমাদের জন্য কোনো শিক্ষা রয়েছে? দুঃখজনক ঘটনা, অসুস্থতা অথবা তাড়নাকে হয়তো খুবই অন্যায্য বলে মনে হতে পারে। অন্য লোকেরা হয়তো এই ধরনের অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পেয়ে যায় বলে মনে হয়। (গীতসংহিতা ৭৩:৩-১২) মাঝে মাঝে আমাদের হয়তো নিজেদেরকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে হতে পারে: ‘যা-ই ঘটুক না কেন, ঈশ্বরের প্রতি আমার ভালবাসা কি তাঁকে সেবা করার জন্য আমাকে পরিচালিত করে? আমি কি যিহোবাকে একটা উত্তর জোগানোর আকাঙ্ক্ষা করি, যাতে তিনি “যে তাঁহাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে” পারেন?’ (হিতোপদেশ ২৭:১১; মথি ২২:৩৭) আমরা অন্যদের অবিবেচনাপূর্ণ মন্তব্যকে কখনোই আমাদের স্বর্গীয় পিতা সম্বন্ধে আমাদেরকে সন্দিহান করতে দেব না। বহু বছর ধরে অসুস্থতা ভোগ করছেন এমন একজন বিশ্বস্ত খ্রিস্টান একবার বলেছিলেন: “আমি জানি যে যিহোবা যা-ই ঘটার অনুমতি দিন না কেন, আমি তা সহ্য করতে পারব। আমি জানি যে, তিনি আমাকে প্রয়োজনীয় সাহায্য জোগাবেন। তিনি সবসময়ই তা জুগিয়েছেন।”

১৬. কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করে, যারা দুঃখকষ্টের সম্মুখীন হচ্ছে?

১৬ শয়তানের কলাকৌশল সম্বন্ধে আমাদের যে-বোধগম্যতা রয়েছে, তা ইয়োবের ছিল না। “তাহার কল্পনা সকল” বা মন্দ পরিকল্পনা “আমরা অজ্ঞাত নই।” (২ করিন্থীয় ২:১১) অধিকন্তু, আমাদের কাছে ব্যবহারিক প্রজ্ঞার এক প্রাচুর্য রয়েছে, যেখান থেকে আমরা তা পেতে পারি। বাইবেলে আমরা সেইসব বিশ্বস্ত নারী-পুরুষের বিবরণ পাই, যারা সমস্ত ধরনের কষ্ট সহ্য করেছিল। প্রেরিত পৌল, যিনি অনেকের চেয়ে আরও বেশি কষ্ট ভোগ করেছিলেন, তিনি লিখেছিলেন: “পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল, যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” (রোমীয় ১৫:৪) ইউরোপের একজন সাক্ষি, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার বিশ্বাসের কারণে জেলে গিয়েছিলেন, তিনি একটা বাইবেলের জন্য তিন দিনের রেশন বিনিময় করেছিলেন। “সেই বিনিময় কত মূল্যবান বলেই না প্রমাণিত হয়েছিল!” তিনি বলেন। “আমার দৈহিক ক্ষুধা সত্ত্বেও, আমি সেই আধ্যাত্মিক খাবার পেয়েছিলাম, যা ওই কঠিন সময়ে আমাদের পরীক্ষার মধ্যে আমাকে ও সেইসঙ্গে অন্যদেরকে টিকিয়ে রেখেছিল। আমি এখনও পর্যন্ত সেই বাইবেল রেখে দিয়েছি।”

১৭. কোন ঐশিক ব্যবস্থাগুলো আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করতে পারে?

১৭ শাস্ত্র থেকে সান্ত্বনা ছাড়াও, আমাদের কাছে অনেক বাইবেল অধ্যয়ন সহায়ক রয়েছে, যেগুলো সমস্যাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য আমাদেরকে উপকারী নির্দেশনা প্রদান করে। আপনি যদি ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্‌ ইনডেক্স ঘাঁটান, তা হলে আপনি হয়তো এমন কোনো সহখ্রিস্টানের অভিজ্ঞতা খুঁজে পাবেন, যাকে আপনার মতো একই পরীক্ষা ভোগ করতে হয়েছিল। (১ পিতর ৫:৯) এ ছাড়া, সহমর্মিতাপূর্ণ প্রাচীন অথবা অন্যান্য পরিপক্ব খ্রিস্টানের সঙ্গে আপনার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করাও সাহায্যকারী হতে পারে। সর্বোপরি, প্রার্থনার মাধ্যমে আপনি যিহোবা ও তাঁর পবিত্র আত্মার সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে পারেন। কীভাবে পৌল শয়তানের ‘মুষ্ট্যাঘাতের’ প্রতিরোধ করেছিলেন? ঈশ্বরের শক্তির ওপর নির্ভর করতে শেখার মাধ্যমে। (২ করিন্থীয় ১২:৯, ১০) “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি,” তিনি লিখেছিলেন।—ফিলিপীয় ৪:১৩.

১৮. কীভাবে সহখ্রিস্টানরা অমূল্য উৎসাহ প্রদান করতে পারে?

১৮ তাই, চাইলেই সাহায্য পাওয়া যায় আর সেগুলো পাওয়ার চেষ্টা করার ক্ষেত্রে আপনার কখনো দ্বিধা করা উচিত নয়। “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত,” একটা প্রবাদবাক্য বলে। (হিতোপদেশ ২৪:১০) ঘুণপোকা যেমন একটা কাঠের বাড়িকে ধ্বংস করে দিতে পারে, তেমনই নিরুৎসাহিতা একজন খ্রিস্টানের নীতিনিষ্ঠাকে নষ্ট করতে দিতে পারে। এই বিপদকে প্রতিহত করার জন্য ঈশ্বরের সহদাসদের মাধ্যমে যিহোবা আমাদেরকে সাহায্য করেন। যে-রাতে যিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেই রাতে একজন দূত দেখা দিয়ে যিশুকে সবল করেছিলেন। (লূক ২২:৪৩) বন্দি হিসেবে রোমে যাত্রা করার সময় পৌল “ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিয়া সাহস প্রাপ্ত” হয়েছিলেন, যখন তিনি অপ্পিয়ের হাট ও তিন সরাইয়ে ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। (প্রেরিত ২৮:১৫) একজন জার্মান সাক্ষি যখন কিশোরী ছিলেন, সেই সময় শঙ্কিত অবস্থায় রেভেন্সব্রুক কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর যে-সাহায্য লাভ করেছিলেন, সেই কথা এখনও মনে করেন। “একজন সহখ্রিস্টান অবিলম্বে আমাকে খুঁজে বের করেছিলেন এবং আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন,” তিনি স্মরণ করে বলেন। “আরেকজন বিশ্বস্ত বোন আমার দেখাশোনা করেছিলেন এবং তিনি আমার আধ্যাত্মিক মা হয়ে উঠেছিলেন।”

“বিশ্বস্ত থাক”

১৯. কী ইয়োবকে শয়তানের প্রচেষ্টাগুলোর প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেছিল?

১৯ যিহোবা ইয়োবকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যিনি “সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] রক্ষা” করেছিলেন। (ইয়োব ২:৩) নিরুৎসাহ বোধ করা এবং কেন তিনি কষ্ট ভোগ করছিলেন, তা না বোঝা সত্ত্বেও ইয়োব কখনো আনুগত্যের গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয় থেকে টলে যাননি। ইয়োব সেই সমস্তকিছু অস্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যেগুলোর জন্য তিনি বেঁচে ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন: “প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা [“নীতিনিষ্ঠা,” NW] ত্যাগ করিব না।”—ইয়োব ২৭:৫.

২০. কেন ধৈর্য ধরা যথার্থ?

২০ একই ধরনের দৃঢ়সংকল্প আমাদেরকে যেকোনো পরিস্থিতিতে—প্রলোভন, বিরোধিতা ও দুর্দশার সময়ে—আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে সাহায্য করবে। “তোমাকে যে সকল দুঃখ ভোগ করিতে হইবে, তাহাতে ভয় করিও না,” স্মুর্ণার মণ্ডলীকে যিশু বলেছিলেন। “দেখ, তোমাদের পরীক্ষার জন্য দিয়াবল তোমাদের কাহাকেও কাহাকেও কারাগারে নিক্ষেপ করিতে উদ্যত আছে, তাহাতে দশ দিন পর্য্যন্ত তোমাদের ক্লেশ হইবে। তুমি মরণ পর্য্যন্ত বিশ্বস্ত থাক, তাহাতে আমি তোমাকে জীবন-মুকুট দিব।”—প্রকাশিত বাক্য ২:১০.

২১, ২২. ক্লেশ সহ্য করার সময় কী জানা আমাদেরকে সান্ত্বনা দিতে পারে?

২১ শয়তান দ্বারা শাসিত এই বিধিব্যবস্থায়, আমাদের ধৈর্য ও নীতিনিষ্ঠা পরীক্ষিত হবে। তা সত্ত্বেও যিশু আমাদের আশ্বাস দেন যে, ভবিষ্যতের দিকে তাকালে আমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিশ্বস্ত থাকা। পৌল বলেছিলেন, ‘ক্লেশ আপাততঃ’ বা ক্ষণস্থায়ী কিন্তু “প্রতাপ” বা যিহোবা আমাদের কাছে যে-পুরস্কারের প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা “উত্তর উত্তর অনুপমরূপে . . . অনন্তকালস্থায়ী।” (২ করিন্থীয় ৪:১৭, ১৮) এমনকি ইয়োব তার পরীক্ষার আগে ও পরে যে-আনন্দ উপভোগ করেছিলেন, সেটার সঙ্গে তুলনা করলে তার ক্লেশও ক্ষণস্থায়ী ছিল।—ইয়োব ৪২:১৬.

২২ তা সত্ত্বেও, আমাদের জীবনে এমন অনেক মুহূর্ত রয়েছে, যখন আমাদের পরীক্ষাগুলোকে চিরস্থায়ী ও কষ্টগুলোকে প্রায় দুর্বহ বলে মনে হয়। পরের প্রবন্ধে আমরা বিবেচনা করব যে, কীভাবে ইয়োবের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে ধৈর্য সম্বন্ধে আরও শিক্ষা দিতে পারে। এ ছাড়া, আমরা সেই উপায়গুলোও দেখব, যেগুলোর দ্বারা যারা চরম দুর্দশার সম্মুখীন হয়, তাদেরকে আমরা শক্তিশালী করতে পারি।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ইয়োবের নীতিনিষ্ঠা সম্বন্ধে শয়তান কোন মৌলিক বিচার্য বিষয়টা উত্থাপন করেছিল?

• কেন চরম দুর্দশা আসলে আমাদের অযথা আশ্চর্য হওয়া উচিত নয়?

• কীভাবে যিহোবা আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

গবেষণা করা, পরিপক্ব খ্রিস্টানদের সঙ্গে কথা বলা এবং হৃদয় উজাড় করে প্রার্থনা করা আমাদেরকে ধৈর্য ধরার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে