সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ”

“তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ”

“তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ”

“তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ; প্রভুর [“যিহোবার,” NW] পরিণামও দেখিয়াছ, ফলতঃ প্রভু [“যিহোবা,” NW] স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়।”—যাকোব ৫:১১.

১, ২. পোল্যান্ডের এক দম্পতি কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল?

 হ্যারল্ট আ্যপ্ট এক বছরেরও কম সময় ধরে যিহোবার একজন সাক্ষি, যখন হিটলারের সৈন্যরা পোল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের ড্যানজিগ (বর্তমানে গুডান্সক্‌) দখল করেছিল। এর পর পরই সেখানকার সত্য খ্রিস্টানদের জন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন, হ্যাঁ বিপদজনক হয়ে ওঠে। গেসটাপো (জার্মানির গোয়েন্দা পুলিশ) হ্যারল্টকে তার বিশ্বাস অস্বীকার করে একটা প্রমাণপত্রে সই করতে জোর করে কিন্তু তিনি সেটা প্রত্যাখ্যান করেন। জেলে কয়েক সপ্তাহ কাটানোর পর, হ্যারল্টকে জ্যাক্‌সেনহোজেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়, যেখানে তাকে বার বার ভয় দেখানো হয় ও মারধর করা হয়। একজন কর্মকর্তা শবচুল্লির চিমনি দেখিয়ে হ্যারল্টকে বলেছিলেন: “তুই যদি তোর বিশ্বাসে অটল থাকিস, তা হলে ১৪ দিনের মধ্যে তোকে তোর যিহোবার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

হ্যারল্টকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেই সময় তার স্ত্রী এল্জা তখনও তাদের দশ মাসের মেয়েকে স্তন্যপান করাতেন। কিন্তু, গেসটাপো এল্জাকেও রেহাই দেয়নি। খুব শীঘ্রই, তার বাচ্চাকে তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয় এবং তাকে আউশভিটসের মৃত্যুশিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে টিকে থাকতে পেরেছিলেন, যেমনটা হ্যারল্টও পেরেছিলেন। তারা কীভাবে ধৈর্য ধরেছিল, সেই সম্বন্ধে আপনি ১৯৮০ সালের ১৫ই এপ্রিল প্রহরীদুর্গ (ইংরেজি) পত্রিকার মধ্যে আরও পড়তে পারেন। হ্যারল্ট লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাসের কারণে আমি আমার জীবনে সবমিলিয়ে মোট ১৪ বছর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে ও জেলে কাটিয়েছি। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: ‘এই সমস্তকিছু সহ্য করার পিছনে আপনার স্ত্রী কি আপনাকে সাহায্য করেছিল?’ সত্যিই সে সাহায্য করেছিল! আমি প্রথম থেকেই জানতাম যে, সে কখনোই তার বিশ্বাসের ব্যাপারে আপোশ করবে না আর তা জানা আমাকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। আমি জানতাম যে, আপোশ করে আমি মুক্ত হয়েছি তা জানার চেয়ে সে বরং আমাকে স্ট্রেচারের মধ্যে মৃত অবস্থায় দেখে আরও বেশি খুশি হবে। . . . জার্মান কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সেই বছরগুলোতে এল্জা অনেক কষ্ট সহ্য করেছিল।”

৩, ৪. (ক) কাদের উদাহরণ খ্রিস্টানদেরকে ধৈর্য ধরার জন্য উৎসাহিত করতে পারে? (খ) কেন বাইবেল আমাদেরকে ইয়োবের অভিজ্ঞতা পরীক্ষা করতে জোরালো পরামর্শ দেয়?

অনেক সাক্ষি যেমন সাক্ষ্য দিতে পারে যে, দুঃখভোগ করা কোনোভাবেই সহজ নয়। এই কারণে বাইবেল সমস্ত খ্রিস্টানকে পরামর্শ দেয়: “যে ভাববাদীরা প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে কথা বলিয়াছিলেন, তাঁহাদিগকে দুঃখভোগের ও দীর্ঘসহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত বলিয়া মান।” (যাকোব ৫:১০) শত শত বছর ধরে ঈশ্বরের অনেক দাসকে অকারণেই তাড়না করা হয়েছে। এই বৃহৎ ‘সাক্ষিমেঘের’ দ্বারা স্থাপিত উদাহরণগুলো আমাদেরকে খ্রিস্টীয় ধাবনক্ষেত্রে ধৈর্যপূর্বক দৌড়ে চলার জন্য উৎসাহ দিতে পারে।—ইব্রীয় ১১:৩২-৩৮; ১২:১.

বাইবেলের বিবরণে ইয়োব ধৈর্যের এক অসাধারণ উদাহরণ। “দেখ, যাহারা স্থির রহিয়াছে, তাহাদিগকে আমরা ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] বলি,” যাকোব লিখেছিলেন। “তোমরা ইয়োবের ধৈর্য্যের কথা শুনিয়াছ; যিহোবার পরিণামও দেখিয়াছ, ফলতঃ যিহোবা স্নেহপূর্ণ ও দয়াময়।” (যাকোব ৫:১১) ইয়োবের অভিজ্ঞতা আমাদেরকে সেই পুরস্কারের আভাস দেয়, যা সেইসমস্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তির জন্য রয়েছে, যাদেরকে যিহোবা আশীর্বাদ করেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটা সেই সত্যগুলোকে প্রকাশ করে যা চরম দুর্দশার সময় আমাদের উপকার করবে। ইয়োব বইটি আমাদেরকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সাহায্য করে: পরীক্ষার সময় কেন আমাদের এর সঙ্গে জড়িত মূল বিচার্য বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করতে হবে? কোন গুণাবলি ও মনোভাবগুলো আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে? যে-সহখ্রিস্টানরা দুঃখকষ্ট ভোগ করে, তাদেরকে কীভাবে আমরা শক্তিশালী করতে পারি?

পূর্ণাঙ্গ চিত্রটা বোঝা

৫. আমরা যখন পরীক্ষা অথবা প্রলোভনগুলোর সম্মুখীন হই, তখন কোন মূল বিচার্য বিষয়টা মনে রাখতে হবে?

চরম দুর্দশার মুখে আধ্যাত্মিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে সামগ্রিক চিত্রটা বুঝতে হবে। নতুবা ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো আমাদের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে ম্লান করে দিতে পারে। ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের বিচার্য বিষয়টা হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্বর্গীয় পিতা এক সনির্বন্ধ আবেদন করেন, যেটার প্রতি আমরা ব্যক্তিগতভাবে মনোযোগ দিতে পারি: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্‌কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” (হিতোপদেশ ২৭:১১) এটা কী এক অদ্বিতীয় সুযোগ! আমাদের দুর্বলতা ও অসিদ্ধতাগুলো সত্ত্বেও, আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে আনন্দিত করতে পারি। আমরা তা করি, যখন যিহোবার প্রতি আমাদের ভালবাসা আমাদেরকে পরীক্ষা ও প্রলোভনগুলো প্রতিরোধ করতে সমর্থ করে। প্রকৃত খ্রিস্টীয় প্রেম সমস্তকিছু ধৈর্যপূর্বক সহ্য করে। তা কখনো শেষ হয় না।—১ করিন্থীয় ১৩:৭, ৮.

৬. কীভাবে শয়তান যিহোবাকে টিটকারি দেয় এবং তা কতটা প্রসারিত?

ইয়োব বইটি শয়তানকে স্পষ্টভাবে সেই ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করে, যে যিহোবাকে টিটকারি দেয়। এ ছাড়া, বইটি এই অদৃশ্য শত্রুর মন্দ স্বভাব ও ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করে দেওয়ার বিষয়ে তার আকাঙ্ক্ষা সম্বন্ধে প্রকাশ করে। ইয়োবের ঘটনার মাধ্যমে যেমন দেখানো হয়েছে যে, শয়তান মূলত যিহোবার সমস্ত দাসেরই স্বার্থপর মনোভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করে এবং ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালবাসা শীতল হয়ে পড়তে পারে বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। হাজার হাজার বছর ধরে সে ঈশ্বরকে টিটকারি দিয়েছে। শয়তানকে যখন স্বর্গ থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তখন স্বর্গ থেকে একটা রব তাকে “আমাদের ভ্রাতৃগণের উপরে দোষারোপকারী” বা অভিযোগকারী হিসেবে বর্ণনা করেছিল এবং বলেছিল যে, সে “দিবারাত্র আমাদের ঈশ্বরের সম্মুখে” এই ধরনের অভিযোগ করে থাকে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১০) বিশ্বস্ততা সহকারে ধৈর্য ধরে আমরা দেখাতে পারি যে, তার অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।

৭. কীভাবে আমরা শারীরিক দুর্বলতার প্রতি সর্বোত্তমভাবে সাড়া দিতে পারি?

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা যে-ক্লেশের সম্মুখীন হতে পারি, সেগুলোকে দিয়াবল যিহোবার কাছ থেকে আমাদের দূরে সরানোর চেষ্টা করার জন্য কাজে লাগাবে। সে কখন যিশুকে প্রলুব্ধ করেছিল? সেই সময়ে, যখন অনেক দিন ধরে উপবাস করার পর যিশু ক্ষুধার্ত ছিলেন। (লূক ৪:১-৩) কিন্তু, যিশুর আধ্যাত্মিক শক্তি তাঁকে শয়তানের প্রলোভনগুলোকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করতে সমর্থ করেছিল। আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারা যেকোনো—হতে পারে রোগ বা বার্ধ্যকের কারণে ঘটা—শারীরিক দুর্বলতা প্রতিহত করা কতই না গুরুত্বপূর্ণ! যদিও “আমাদের বাহ্য মনুষ্য . . . ক্ষীণ হইতেছে” কিন্তু আমরা নিরুৎসাহিত হই না কারণ আমাদের “আন্তরিক মনুষ্য দিন দিন নূতনীকৃত হইতেছে।”—২ করিন্থীয় ৪:১৬.

৮. (ক) কীভাবে নেতিবাচক আবেগের এক ধ্বংসাত্মক প্রভাব থাকতে পারে? (খ) যিশুর কোন মনোভাব ছিল?

এ ছাড়া, নেতিবাচক আবেগ একজন ব্যক্তির আধ্যাত্মিকতাকে নষ্ট করে দিতে পারে। ‘কেন যিহোবা এটা ঘটতে দিলেন?’ একজন ব্যক্তি হয়তো চিন্তা করতে পারেন। ‘কীভাবে একজন ভাই আমার সঙ্গে এইরকম আচরণ করতে পারলেন?’ নির্দয় আচরণের শিকার হয়ে আরেকজন ব্যক্তি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন। এই ধরনের অনুভূতির জন্য আমরা হয়তো মূল বিচার্য বিষয়গুলো উপেক্ষা করতে পারি এবং সম্পূর্ণরূপে আমাদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতিগুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে পারি। তিন বিপথগামী সঙ্গীর কারণে ইয়োবের হতাশা আবেগগতভাবে ঠিক ততটাই ক্ষতি করেছিল বলে মনে হয়, যতটা তার দুর্বলতা শারীরিকভাবে তাকে করেছিল। (ইয়োব ১৬:২০; ১৯:২) একইভাবে, প্রেরিত পৌল ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, দীর্ঘস্থায়ী ক্রোধ “দিয়াবলকে স্থান [বা এক সুযোগ]” করে দিতে পারে। (ইফিষীয় ৪:২৬, ২৭) ব্যক্তি বিশেষের ওপর হতাশা বা ক্রোধ প্রকাশ করার অথবা কোনো একটা পরিস্থিতির অবিচারের ওপর অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে, খ্রিস্টানরা “যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁহার” অর্থাৎ যিহোবা ঈশ্বরের ‘উপর ভার রাখিবার’ ক্ষেত্রে যিশুকে অনুকরণ করলে আরও উপকার লাভ করবে। (১ পিতর ২:২১-২৩) যিশুর ‘ভাব’ বা মানসিক প্রবণতা বজায় রাখা, শয়তানের আক্রমণের বিরুদ্ধে এক বড় প্রতিরক্ষা হতে পারে।—১ পিতর ৪:১.

৯. আমাদের যে-বোঝা বহন করতে হয় অথবা যে-প্রলোভনগুলোর সম্মুখীন আমরা হই, সেই সম্বন্ধে ঈশ্বর আমাদের কোন আশ্বাস দেন?

সর্বোপরি, আমাদের সমস্যাগুলোকে কখনোই ঈশ্বরের অসন্তোষের নিশ্চিত প্রমাণ হিসেবে দেখা উচিত নয়। এই ধরনের ভুল বোঝাবুঝি ইয়োবকে সেই সময়ে কষ্ট দিয়েছিল, যখন তিনি তার নামমাত্র সান্ত্বনাকারীদের রূঢ় কথাবার্তার দ্বারা জর্জরিত হচ্ছিলেন। (ইয়োব ১৯:২১, ২২) বাইবেল আমাদেরকে এই কথাগুলোর দ্বারা আশ্বাস দেয়: “মন্দ বিষয়ের দ্বারা ঈশ্বরের পরীক্ষা করা যাইতে পারে না, আর তিনি কাহারও পরীক্ষা করেন না।” (যাকোব ১:১৩) এর বিপরীতে, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি আমাদের ওপরে আসা যেকোনো বোঝা বহন করতে সাহায্য করবেন এবং আমাদের ওপর আসা যেকোনো পরীক্ষা বা প্রলোভন থেকে রক্ষা করবেন। (গীতসংহিতা ৫৫:২২; ১ করিন্থীয় ১০:১৩) দুর্দশার সময় ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার মাধ্যমে আমরা বিষয়গুলোর প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে পারি ও সফলভাবে দিয়াবলের প্রতিরোধ করতে পারি।—যাকোব ৪:৭, ৮.

ধৈর্য ধরার সহায়কগুলো

১০, ১১. (ক) কী ইয়োবকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছিল? (খ) কীভাবে উত্তম বিবেক বজায় রাখা ইয়োবকে সাহায্য করেছিল?

১০ ইয়োবের ভয়াবহ পরিস্থিতি—ও সেইসঙ্গে তার ‘সান্ত্বনাকারীদের’ খারাপ কথাবার্তা এবং তার বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ সম্বন্ধে বিভ্রান্তি সত্ত্বেও—ইয়োব তার নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিলেন। তার ধৈর্য থেকে আমরা কী শিখতে পারি? নিঃসন্দেহে, তার সফলতার মূল কারণ ছিল যিহোবার প্রতি তার বিশ্বস্ততা। ‘তিনি ঈশ্বরকে ভয় করিতেন ও কুক্রিয়াত্যাগী ছিলেন।’ (ইয়োব ১:১) এটাই ছিল তার জীবনধারা। ইয়োব এমনকি সেই সময়েও যিহোবাকে পরিত্যাগ করা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যখন তিনি বুঝতে পারেননি যে, কেন হঠাৎ করে মন্দ বিষয়গুলো ঘটেছে। ইয়োব বিশ্বাস করতেন যে, সুসময় এবং দুঃসময় উভয় সময়ই যিহোবাকে তার সেবা করা উচিত।—ইয়োব ১:২১; ২:১০.

১১ এ ছাড়া, এক উত্তম বিবেক বজায় রাখাও ইয়োবের জন্য সান্ত্বনাজনক হয়েছিল। একটা সময়ে যখন মনে হয়েছিল যে তার জীবন শেষ হতে চলেছে, তখন এটা জানা তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিল যে, তিনি অন্যদেরকে সাহায্য করার জন্য তার সর্বোত্তমটা করেছেন, তিনি যিহোবার ধার্মিক মানগুলো অনুযায়ী চলেছেন এবং যেকোনো ধরনের মিথ্যা উপাসনা তিনি এড়িয়ে চলেছেন।—ইয়োব ৩১:৪-১১.

১২. ইলীহূর কাছ থেকে ইয়োব যে-সাহায্য লাভ করেছিলেন, সেটার প্রতি তিনি কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন?

১২ অবশ্য এটা ঠিক যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইয়োবের দৃষ্টিভঙ্গি রদবদল করার জন্য তার সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছিল। আর তিনি নম্রভাবে সেই সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন—সফলভাবে ধৈর্য ধরার আরেকটা চাবিকাঠি। ইয়োব সম্মানপূর্বক ইলীহূর বিজ্ঞ পরামর্শ শুনেছিলেন এবং যিহোবার সংশোধনের প্রতি তিনি ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। “আমি তাহাই বলিয়াছি, যাহা বুঝি নাই,” তিনি স্বীকার করেছিলেন। “আমি আপনাকে ঘৃণা করিতেছি, ধূলায় ও ভস্মে বসিয়া অনুতাপ করিতেছি।” (ইয়োব ৪২:৩, ৬) তাকে তখনও কষ্ট দিচ্ছিল এমন রোগ সত্ত্বেও ইয়োব আনন্দিত ছিলেন যে, তার চিন্তাভাবনার এই রদবদল তাকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী করেছে। “আমি জানি, তুমি [সদাপ্রভু] সকলই করিতে পার,” ইয়োব বলেছিলেন। (ইয়োব ৪২:২) তাঁর মহিমা সম্বন্ধে যিহোবা বর্ণনা করেছিলেন বলে ইয়োব সৃষ্টিকর্তার তুলনায় তার নিজের অবস্থান সম্বন্ধে আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।

১৩. কীভাবে করুণা দেখানো ইয়োবের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছিল?

১৩ সর্বশেষ বিষয়টা হল, ইয়োব করুণার এক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেন। তার মিথ্যা সান্ত্বনাকারীরা তাকে অনেক আঘাত দিয়েছিল অথচ যিহোবা যখন ইয়োবকে তাদের জন্য প্রার্থনা করতে বলেছিলেন, তখন তিনি তা করেছিলেন। এরপর, যিহোবা তাকে সুস্থ করেছিলেন। (ইয়োব ৪২:৮, ১০) স্পষ্টতই, তিক্ততা আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবে না কিন্তু অন্যদিকে প্রেম ও করুণা সাহায্য করবে। হতাশাকে রোধ করা আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সতেজ করে আর এই কাজকেই যিহোবা আশীর্বাদ করেন।—মার্ক ১১:২৫.

যে-বিজ্ঞ পরামর্শদাতারা আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করে

১৪, ১৫. (ক) কোন গুণাবলি একজন পরামর্শদাতাকে অন্যদের আরোগ্য করতে সমর্থ করবে? (খ) ব্যাখ্যা করুন যে, ইলীহূ কেন ইয়োবকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সফল হয়েছিলেন।

১৪ ইয়োবের বিবরণ থেকে আরও যে-শিক্ষা আমরা শিখতে পারি, সেটা হল বিজ্ঞ পরামর্শদাতাদের মূল্য। এই ধরনের ব্যক্তিরা হল এমন ভাই, যারা “থাকে দুর্দশার সময়ে সাহায্য করবার জন্য।” (হিতোপদেশ ১৭:১৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) কিন্তু, ইয়োবের অভিজ্ঞতা যেমন দেখায় যে, কিছু পরামর্শদাতা আরোগ্য করার চেয়ে বরং আঘাত দিতে পারে। একজন উত্তম পরামর্শদাতা সহমর্মিতা, সম্মান ও দয়া দেখাবেন, যেমনটা ইলীহূ দেখিয়েছিলেন। প্রাচীন ও অন্যান্য পরিপক্ব খ্রিস্টানকে হয়তো এমন ভাইবোনদের চিন্তাভাবনাকে রদবদল করতে হতে পারে, যারা সমস্যার কারণে ভারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে আর এই ক্ষেত্রে সেই পরামর্শদাতারা ইয়োবের বই থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে।—গালাতীয় ৬:১; ইব্রীয় ১২:১২, ১৩.

১৫ ইলীহূ যেভাবে বিষয়টা পরিচালনা করেছিলেন, সেটার মধ্যে অনেক উত্তম শিক্ষা রয়েছে। ইয়োবের তিন সঙ্গীর ভুল মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার আগে তিনি অনেক সময় ধরে শুনেছিলেন। (ইয়োব ৩২:১১; হিতোপদেশ ১৮:১৩) ইলীহূ ইয়োবের নাম ব্যবহার করেছিলেন এবং এক বন্ধু হিসেবে তার কাছে আবেদন করেছিলেন। (ইয়োব ৩৩:১) তিন মিথ্যা সান্ত্বনাকারীদের বিপরীতে, ইলীহূ নিজেকে ইয়োবের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেননি। “আমিও মৃত্তিকা হইতে গঠিত হইয়াছি,” তিনি বলেছিলেন। অবিবেচনাপূর্ণ কথার দ্বারা তিনি ইয়োবের কষ্টকে আরও বাড়াতে চাননি। (ইয়োব ৩৩:৬, ৭; হিতোপদেশ ১২:১৮) ইয়োবের পূর্বের আচরণের জন্য তার সমালোচনা করার পরিবর্তে, ইলীহূ ইয়োবের ধার্মিকতার জন্য তার প্রশংসা করেছিলেন। (ইয়োব ৩৩:৩২, NW) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ইলীহূ বিষয়গুলোকে যিহোবার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিলেন এবং তিনি ইয়োবকে এই বিষয়ের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করেছিলেন যে, যিহোবা কখনো অন্যায়ভাবে কাজ করেন না। (ইয়োব ৩৪:১০-১২) ইয়োবকে তার নিজের ধার্মিকতা দেখানোর চেষ্টা করার পরিবর্তে তিনি তাকে যিহোবার ওপর নির্ভর করতে উৎসাহিত করেছিলেন। (ইয়োব ৩৫:২; ৩৭:১৪, ২৩) নিশ্চিতভাবেই খ্রিস্টান প্রাচীনরা ও অন্যেরা এই শিক্ষাগুলো থেকে উপকার লাভ করতে পারে।

১৬. কীভাবে ইয়োবের তিন মিথ্যা সান্ত্বনাকারী শয়তানের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল?

১৬ ইলীহূর বিজ্ঞ পরামর্শ ইলীফস, বিল্‌দদ ও সোফরের বেদনাদায়ক কথাগুলোর বিপরীত ছিল। “তোমরা আমার বিষয়ে তদ্রূপ যথার্থ কথা বল নাই,” যিহোবা তাদেরকে বলেছিলেন। (ইয়োব ৪২:৭) এমনকি যদিও তারা দাবি করেছিল যে, তাদের উত্তম উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু তারা বিশ্বস্ত সঙ্গী হওয়ার পরিবর্তে বরং শয়তানের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছিল। শুরু থেকে তিনজনই ধরে নিয়েছিল যে, ইয়োব নিজেই তার বিপর্যয়গুলোর জন্য দায়ী। (ইয়োব ৪:৭, ৮; ৮:৬; ২০:২২, ২৯) ইলীফসের কথা অনুযায়ী, তাঁর দাসদের ওপর ঈশ্বরের কোনো আস্থা নেই আর আমরা ধার্মিক হই বা না হই, তাতে ঈশ্বরের কিছু আসে যায় না। (ইয়োব ১৫:১৫; ২২:২, ৩) ইলীফস এমনকি ইয়োবকে সেই ভুলগুলোর জন্য অভিযোগ করেছিলেন যেগুলো তিনি করেননি। (ইয়োব ২২:৫, ৯) অন্যদিকে, ইলীহূ ইয়োবকে আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করেছিলেন, যা সবসময়ই একজন প্রেমময় পরামর্শদাতার লক্ষ্য হয়ে থাকে।

১৭. পরীক্ষার মধ্যে আমাদের কী মনে রাখা উচিত?

১৭ ধৈর্য সম্বন্ধে আরও একটা শিক্ষা রয়েছে, যা আমরা ইয়োবের বই থেকে শিখতে পারি। আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর আমাদের পরিস্থিতি লক্ষ করেন এবং তিনি বিভিন্ন উপায়ে আমাদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক ও সেইসঙ্গে সমর্থও আছেন। আগে আমরা এল্জা আ্যপ্টের অভিজ্ঞতা লক্ষ করেছি। তিনি যে-উপসংহারে পৌঁছেছিলেন, তা চিন্তা করে বলেন: “গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আমি একজন বোনের চিঠি পড়েছিলাম, যেখানে লেখা ছিল যে চরম পরীক্ষার মধ্যে যিহোবার আত্মা আপনার ওপর শান্তভাব নিয়ে আসে। আমি মনে করেছিলাম যে, তিনি নিশ্চয়ই একটু বাড়িয়ে বলেছেন। কিন্তু আমি নিজে যখন পরীক্ষার মধ্যে পড়েছিলাম, তখন জানতে পারি যে, তিনি যা বলেছিলেন তা সত্য। সত্যিই তা-ই ঘটে থাকে। আপনি যদি সেই সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করে না থাকেন, তা হলে এটা কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু, আমার বেলায় সত্যিই তা হয়েছিল। যিহোবা সাহায্য করেন।” যিহোবা যা করতে পারেন অথবা হাজার হাজার বছর আগে ইয়োবের দিনে তিনি যা করেছিলেন, এল্জা সেই সম্বন্ধে বলছিলেন না। তিনি আমাদের সময় সম্বন্ধে বলছিলেন। হ্যাঁ, “যিহোবা সাহায্য করেন”!

সুখী সেই ব্যক্তি, যিনি ধৈর্য ধরেন

১৮. ধৈর্য বজায় রাখার ফলে ইয়োব কোন উপকারগুলো লাভ করেছিলেন?

১৮ আমাদের মধ্যে খুব কম ব্যক্তিকেই ইয়োবের মতো চরম ক্লেশের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু, এই বিধিব্যবস্থা আমাদের ওপর যে-পরীক্ষাই নিয়ে আসুক না কেন, ইয়োবের মতো আমাদেরও নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার বিভিন্ন উপযুক্ত কারণ রয়েছে। বস্তুতপক্ষে, ধৈর্য ইয়োবের জীবনকে সমৃদ্ধ করেছিল। এটা তাকে নিখুঁত ও সম্পূর্ণ করে তুলেছিল। (যাকোব ১:২-৪) এটা ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্ককে শক্তিশালী করেছিল। “পূর্ব্বে তোমার বিষয় কর্ণে শুনিয়াছিলাম, কিন্তু সম্প্রতি আমার চক্ষু তোমাকে দেখিল,” ইয়োব দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন। (ইয়োব ৪২:৫) শয়তান এই অর্থে মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হয়েছিল যে, সে ইয়োবের নীতিনিষ্ঠাকে ভাঙতে পারেনি। শত শত বছর পর, যিহোবা এখনও তাঁর দাস ইয়োবকে ধার্মিকতার এক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। (যিহিষ্কেল ১৪:১৪) তার নীতিনিষ্ঠা ও ধৈর্যের নথি এমনকি আজকেও ঈশ্বরের লোকেদের অনুপ্রাণিত করে।

১৯. কেন আপনি মনে করেন যে, ধৈর্য ধরা যথার্থ?

১৯ যাকোব যখন প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদেরকে ধৈর্য সম্বন্ধে লিখেছিলেন, তখন তিনি ধৈর্য যে-পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে, সেই সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। আর তাদেরকে এই কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ইয়োবের উদাহরণ ব্যবহার করেছিলেন যে, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের প্রচুররূপে পুরস্কৃত করেন। (যাকোব ৫:১১) ইয়োব ৪২:১২ পদে আমরা পড়ি: “আর সদাপ্রভু ইয়োবের প্রথম অবস্থা হইতে শেষাবস্থা অধিক আশীর্ব্বাদযুক্ত করিলেন।” ইয়োব যা হারিয়েছিলেন, ঈশ্বর তাকে সেটার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আর তিনি এক দীর্ঘ, সুখী জীবনযাপন করেছিলেন। (ইয়োব ৪২:১৬, ১৭) একইভাবে, এই বিধিব্যবস্থার শেষে আমরা যেকোনো বেদনা, কষ্ট অথবা মনোব্যথাই সহ্য করি না কেন, সেগুলো দূর হয়ে যাবে এবং ঈশ্বরের নতুন জগতে সেগুলো ভুলে যাওয়া হবে। (যিশাইয় ৬৫:১৭; প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) আমরা ইয়োবের ধৈর্যের কথা শুনেছি আর যিহোবার সাহায্যে আমরা ইয়োবের উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে: “ধন্য [“সুখী,” বাংলা জুবিলী বাইবেল] সেই ব্যক্তি, যে পরীক্ষা সহ্য করে; কারণ পরীক্ষাসিদ্ধ হইলে পর সে জীবনমুকুট প্রাপ্ত হইবে, তাহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] তাহাদিগকেই দিতে অঙ্গীকার করিয়াছেন, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে।”—যাকোব ১:১২.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কীভাবে আমরা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করতে পারি?

• কেন আমাদের এই উপসংহারে আসা উচিত নয় যে, আমাদের সমস্যাগুলো ঈশ্বরের অসন্তোষের প্রমাণ?

• কোন বিষয়গুলো ইয়োবকে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছিল?

• সহবিশ্বাসীদের শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা ইলীহূর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন উত্তম পরামর্শদাতা সহমর্মিতা, সম্মান এবং দয়া দেখান

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

এল্জা ও হ্যারল্ট আ্যপ্ট