সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল

 সহস্র বছরের শেষে চূড়ান্ত পরীক্ষার পর, মানুষের পক্ষে কি পাপ করা ও মৃত্যু ভোগ করা সম্ভব হবে?

প্রকাশিত বাক্যে প্রাপ্ত দুটি পদ আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর বুঝতে সাহায্য করে: “মৃত্যু ও পাতাল অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল; তাহাই, অর্থাৎ সেই অগ্নিহ্রদ, দ্বিতীয় মৃত্যু।” (প্রকাশিত বাক্য ২০:১৪) “তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.

এখানে যে সময় সম্পর্কে বলা হয়েছে তা বিবেচনা করুন। হর্‌মাগিদোনে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, পুনরুত্থিত মৃতেরা ও হর্‌মাগিদোনের পর জন্ম নেওয়া ব্যক্তিরা “পুস্তকসমূহে লিখিত প্রমাণে” বা সহস্র বছর চলাকালে মানবজাতির জন্য যিহোবার সমস্ত চাহিদা অনুযায়ী বিচারিত হওয়ার পর ‘মৃত্যু ও পাতালকে’ অগ্নিহ্রদে নিক্ষেপ করা হবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:১২, ১৩) প্রেরিত যোহন আরেকটা দর্শনের বিষয় লিপিবদ্ধ করেন, যেটা প্রকাশিত বাক্য ২১ অধ্যায়ে পাওয়া যায় আর তা খ্রিস্ট যিশুর সহস্র বছরের রাজত্ব চলাকালে পূর্ণ হবে। কিন্তু সেই দর্শনের সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতা সহস্র বছর ব্যাপী বিচার দিনের পূর্ণ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছে। কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই যিহোবা তখন সম্পূর্ণ অর্থে মানবজাতির সঙ্গে বাস করবেন, যিশু তাঁর পিতার কাছে রাজ্যের ভার সমর্পণ করবেন। যিহোবা চিরস্থায়ী ও সরাসরিরূপে আধ্যাত্মিকভাবে ‘তাঁহার প্রজাদের’ সঙ্গে বাস করবেন। “মৃত্যু আর হইবে না,” এই কথাগুলো তখন পূর্ণ হবে, যখন মানবজাতির ওপর খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের উপকার পূর্ণরূপে প্রয়োগ হওয়ার ফলে তারা সিদ্ধতা লাভ করবে।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

তাই, ওপরে উদ্ধৃত শাস্ত্রপদে বলা মৃত্যু হল আদমজাত মৃত্যু, যা খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের দ্বারা বাতিল করা হবে। (রোমীয় ৫:১২-২১) প্রথম মানুষের কাছ থেকে মানবজাতি উত্তরাধিকারসূত্রে যে-মৃত্যু পেয়েছিল সেটা বাতিল হওয়ার ফলে মানুষ সৃষ্টির সময় আদম যেমন ছিল তেমনই হয়ে যাবে। আদম সিদ্ধ ছিল কিন্তু তার মানে এই ছিল না যে, তার মারা যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। যিহোবা আদমকে “সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ” সেটার ফল খেতে বারণ করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “যে দিন তাহার ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।” (আদিপুস্তক ২:১৭) সেটা ছিল স্বেচ্ছাকৃত পাপ। চূড়ান্ত পরীক্ষার পরে সহস্র বছরের শেষে, মানুষের তখনও নৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার অধিকার থাকবে। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৭-১০) তখনও তারা যিহোবাকে সেবা করে চলবে কি না তা বাছাই করার জন্য তারা তাদের স্বাধীন ইচ্ছাকে ব্যবহার করতে পারবে। নিশ্চিতভাবে এইরকম কিছু বলা যায় না যে, কোনো মানুষ কখনোই ঈশ্বরের কাছ থেকে সরে যাবে না, যেমন আদম করেছিল।

চূড়ান্ত পরীক্ষার পর যখন মৃত্যু বা পাতাল বলে কিছু থাকবে না, তখন যদি কেউ বিদ্রোহ করে তবে তার কী হবে? সেই সময় আদমজাত পাপ আর থাকবে না। আর পাতাল বা পুনরুত্থানের আশাযুক্ত মানবজাতির সাধারণ কবরও থাকবে না। কিন্তু, যিহোবা যেকোনো বিদ্রোহীকে অগ্নিহ্রদে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে পারেন, তাকে পুনরুত্থানের যেকোনো আশা থেকে বঞ্চিত করতে পারেন। সেই মৃত্যু আদমের কাছ থেকে মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে যে-মৃত্যু পেয়েছে সেটা নয় কিন্তু আদম-হবা যে-মৃত্যু ভোগ করেছে তা।

কিন্তু, আমাদের এই ধরনের পরিণতি আশা করার কোনো কারণ নেই। যারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তারা এক অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক দিয়ে আদমের থেকে আলাদা হবে। তারা সম্পূর্ণরূপে পরীক্ষিত হয়ে যাবে। আমরা এই চূড়ান্ত পরীক্ষার পুঙ্খানুপুঙ্খতা সম্বন্ধে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারি কারণ যিহোবা জানেন যে কীভাবে লোকেদের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় দিক দিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যারা তাদের বেছে নেওয়ার স্বাধীনতার অপব্যবহার করবে চূড়ান্ত পরীক্ষায় সেই ব্যক্তিরা বিনষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং, যারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, তাদের পক্ষে যদিও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ও এর ফলস্বরূপ ধ্বংস হয়ে যাওয়া সম্ভব কিন্তু এইরকম আদৌ ঘটবে কি না, সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

চূড়ান্ত পরীক্ষার পর, কোন অর্থে মানবজাতি আদমের সমতুল্য হবে?