সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বারূক যিরমিয়ের বিশ্বস্ত সচিব

বারূক যিরমিয়ের বিশ্বস্ত সচিব

বারূক যিরমিয়ের বিশ্বস্ত সচিব

 আপনি কি “নেরিয়ের পুত্ত্র বারূককে” চেনেন? (যিরমিয় ৩৬:৪) যদিও বাইবেলের মাত্র চারটে অধ্যায়ে তার সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু বাইবেলের পাঠকদের কাছে তিনি ভাববাদী যিরমিয়ের ব্যক্তিগত লেখক বা সচিব এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে সুপরিচিত। তারা একসঙ্গে যিহূদা রাজ্যের শেষ ১৮ বছরের অশান্ত সময়ের, সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে বাবিলীয়দের দ্বারা যিরূশালেমের শোচনীয় ধ্বংসের এবং পরবর্তী সময়ে মিশরে নির্বাসিত হওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে “প্রতিলিপিকারী নেরিয়েহুর [নেরিয়ের ইব্রীয় নাম] ছেলে বেরেখিয়েহুর [বারূকের ইব্রীয় নাম]” এই বাক্যাংশ লেখা সা.কা.পূ. সপ্তম শতাব্দীর দুটো কাদামাটির সিলমোহর * আবিষ্কার, বাইবেলের এই চরিত্র সম্বন্ধে পণ্ডিত ব্যক্তিদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে। বারূক কে ছিলেন? তার পারিবারিক পটভূমি, শিক্ষা ও পদমর্যাদা কী ছিল? যিরমিয়ের পক্ষে তার দৃঢ় অবস্থান কী প্রকাশ করে? তার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? বাইবেল ও ইতিহাস থেকে প্রাপ্তিসাধ্য তথ্য বিবেচনা করার মাধ্যমে আসুন আমরা সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করি।

পটভূমি এবং পদমর্যাদা

আজকে অনেক পণ্ডিত ব্যক্তিই মনে করে যে, বারূক যিহূদার এক বিশিষ্ট প্রতিলিপিকারী পরিবার থেকে এসেছিলেন। তারা এই উপসংহারে আসার পিছনে বেশ কয়েকটা যুক্তি দেখিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেলের বিবরণের কিছু অনুবাদে বারূককে একটা বিশেষ উপাধি দেওয়া হয়েছে, যেটা হল “লেখক” বা “প্রতিলিপিকারী।” শাস্ত্র আরও উল্লেখ করে যে, তার ভাই সরায় রাজা সিদিকিয়ের রাজসভায় একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ছিলেন।—যিরমিয় ৩৬:৩২; ৫১:৫৯.

যিরমিয়ের সময়ের প্রতিলিপিকারীদের সম্বন্ধে প্রত্নতত্ত্ববিদ ফিলিপ জে. কিং লেখেন: “সা.কা.পূ. সপ্তম শতাব্দীর শেষের দিকে ও ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুর দিকে, এক পেশাজীবী শ্রেণীর সদস্য অর্থাৎ প্রতিলিপিকারীরা সুপরিচিত ছিল। . . . উচ্চপদস্থ রাজকর্মকর্তাদের এই উপাধি দেওয়া হতো।”

এ ছাড়া যিরমিয় ৩৬ অধ্যায়ের বিবরণ, যা আমরা বিস্তারিতভাবে বিবেচনা করব, তা এই ধারণা প্রদান করে যে, বারূকের রাজার উপদেষ্টাদের কাছে যাওয়ার অধিকার এবং গমরিয় নামের একজন অধ্যক্ষ বা কর্মকর্তার কুঠরি বা মন্ত্রণা কক্ষ ব্যবহার করার অনুমতি ছিল। বাইবেল পণ্ডিত জেমস মিউলেনবার্গ যুক্তি করেন: “বারূক প্রতিলিপিকারীর মন্ত্রণা কক্ষে প্রবেশ করতে পারতেন কারণ তার সেই অধিকার ছিল এবং তিনি ছিলেন সেই রাজকর্মকর্তাদের মধ্যে একজন, যারা চূড়ান্ত সময়ে জনসাধারণ্যে গুটানো পুস্তক পড়ার জন্য সমবেত হয়েছিল। তিনি তার সহকর্মকর্তাদের মধ্যেই ছিলেন।”

করপাস অভ্‌ ওয়েস্ট সেমিটিক স্ট্যাম্প সিলস্‌ (ইংরেজি) নামক প্রকাশনাটি বারূকের পদমর্যাদা সম্বন্ধে আরেকটা যুক্তি তুলে ধরে: “বেরিখিয়েহুর কাদামাটির সিলমোহরটা যেহেতু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একটা বিরাট দলের কাদামাটির সিলমোহরের সঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল, তাই এটা ধরে নেওয়া যুক্তিসংগত যে বারূক/বেরিখিয়েহু অন্যান্য কর্মকর্তাদের মতো একই পদে কাজ করছিলেন।” প্রাপ্তিসাধ্য তথ্য ইঙ্গিত করে যে, সম্ভবত বারূক ও তার ভাই সরায় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিল, যারা যিরূশালেম ধ্বংসের আগের ঘটনাবহুল বছরগুলোতে বিশ্বস্ত ভাববাদী যিরমিয়কে সমর্থন করেছিল।

যিরমিয়ের জনসমর্থন

যিরমিয় ৩৬ অধ্যায়ে কালানুক্রমিকভাবে, “যিহোয়াকীমের চতুর্থ বৎসরে” অর্থাৎ সা.কা.পূ. প্রায় ৬২৫ সালে বারূক প্রথম আবির্ভূত হন। যিরমিয় ইতিমধ্যেই ২৩ বছর ধরে একজন ভাববাদী হিসেবে সেবা করেছিলেন।—যিরমিয় ২৫:১-৩; ৩৬:১, ৪.

যিহোবা সেই সময়ে যিরমিয়কে বলেছিলেন: “তুমি একখানি জড়ান পুস্তক লও, . . . যোশিয়ের সময় অবধি, অদ্য পর্য্যন্ত ইস্রায়েলের, যিহূদার ও সমস্ত জাতির বিরুদ্ধে তোমাকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সেই সমস্ত বাক্য উহাতে লিখ।” বিবরণটি বলে চলে: “যিরমিয় নেরিয়ের পুত্ত্র বারূককে ডাকিলেন; এবং বারূক যিরমিয়ের প্রতি কথিত সদাপ্রভুর সমস্ত বাক্য . . . এক জড়ান পুস্তকে লিখিলেন।”—যিরমিয় ৩৬:২-৪.

কেন বারূককে ডাকা হয়েছিল? যিরমিয় তাকে বলেছিলেন: “আমি রুদ্ধ আছি, সদাপ্রভুর গৃহে যাইতে পারি না।” (যিরমিয় ৩৬:৫) স্পষ্টতই, মন্দির এলাকায় যেখানে যিহোবার বার্তা পড়া হতো, সেখান থেকে যিরমিয়কে বহিষ্কার করা হয়েছিল কারণ সম্ভবত তার আগের বার্তাগুলো কর্তৃপক্ষকে ক্রুদ্ধ করেছিল। (যিরমিয় ২৬:১-৯) কোনো সন্দেহ নেই যে, বারূক যিহোবার একজন আন্তরিক উপাসক ছিলেন এবং তিনি “যিরমিয় ভাববাদীর আজ্ঞানুসারে সমস্ত কার্য্য করিলেন।”—যিরমিয় ৩৬:৮.

তেইশ বছর ধরে যে-সতর্কবাণীগুলো দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো লেখার জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল আর সম্ভবত যিরমিয়ও উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু, সা.কা.পূ. ৬২৪ সালের নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাসে বারূক সাহসের সঙ্গে ‘সদাপ্রভুর গৃহে গমরিয়ের কুঠরীতে ঐ পুস্তক লইয়া সমস্ত লোকের কর্ণগোচরে যিরমিয়ের কথা সকল পাঠ করিলেন।’—যিরমিয় ৩৬:৮-১০.

গমরিয়ের পুত্র মীখায়, যা ঘটেছিল সেই বিষয়ে তার বাবাকে এবং কয়েক জন অধ্যক্ষকে জানিয়েছিলেন আর তারা তাদের সামনে দ্বিতীয়বার সেই পুস্তক পড়ার জন্য বারূককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। বিবরণটি বলে, “তখন ঐ সকল কথা শুনিয়া তাঁহারা সকলে ভয় প্রযুক্ত পরস্পর তাকাতাকি করিলেন, এবং বারূককে কহিলেন, আমরা এই সকল কথার বিষয় অবশ্য রাজাকে জানাইব। . . . তুমি ও যিরমিয় যাইয়া লুকাইয়া থাক; কেহ যেন তোমাদের সন্ধান না পায়।”—যিরমিয় ৩৬:১১-১৯.

রাজা যিহোয়াকীম যখন শুনেছিলেন যে, যিরমিয়ের কথা শুনে বারূক কী লিখেছিলেন, তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে সেই পুস্তক ছিঁড়ে আগুনে ফেলে দিয়েছিলেন এবং যিরমিয় ও বারূককে গ্রেপ্তার করার জন্য তার লোকেদের আদেশ দিয়েছিলেন। লুকিয়ে থাকার সময়, যিহোবার আদেশে এই দুই ব্যক্তি সেই পুস্তকের আরেকটা প্রতিলিপি তৈরি করেছিলেন।—যিরমিয় ৩৬:২১-৩২.

এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, বারূক এই কার্যভারের সঙ্গে জড়িত বিপদগুলো সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিলেন। কয়েক বছর আগে যিরমিয়কে যে-হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তিনি নিশ্চয়ই তা জানতেন। এ ছাড়া, তিনি ঊরিয়ের পরিণতি সম্বন্ধেও শুনেছিলেন, যিনি “যিরমিয়ের সমস্ত বাক্যের ন্যায়” ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন কিন্তু রাজা যিহোয়াকীম তাকে হত্যা করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, বারূক তার পেশাগত দক্ষতা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার জানাশোনাকে এই কার্যভারের ক্ষেত্রে যিরমিয়কে সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করতে ইচ্ছুক ছিলেন।—যিরমিয় ২৬:১-৯; ২০-২৪.

“মহৎ মহৎ বিষয়” চেষ্টা করবেন না

প্রথম পুস্তকটি লেখার সময়ে বারূক অনেক দুর্দশার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আর্তনাদ করে বলেছিলেন: “হায় হায়, ধিক্‌ আমাকে! কেননা সদাপ্রভু আমার ব্যথার উপরে দুঃখ যোগ করিয়াছেন; আমি কোঁকাইতে কোঁকাইতে শ্রান্ত হইয়াছি, কিছুমাত্র বিশ্রাম পাইতেছি না।” এই ধরনের সংকটের কারণ কী ছিল?—যিরমিয় ৪৫:১-৩.

কোনো সরাসরি উত্তর দেওয়া নেই। কিন্তু, বারূকের পরিস্থিতিটা কল্পনা করার চেষ্টা করুন। ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেদের কাছে ২৩ বছরের সতর্কবাণী সম্বন্ধে বলার সময় নিশ্চয়ই তাদের ধর্মভ্রষ্টতা এবং যিহোবাকে প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টা তার কাছে অনেক স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যিরূশালেম ও যিহূদার ধ্বংস এবং সেই জাতিকে ৭০ বছরের জন্য বাবিলে নির্বাসিত করার বিষয়ে যিহোবার সিদ্ধান্ত—যে-তথ্য যিহোবা সেই একই বছরে প্রকাশ করেছিলেন এবং সম্ভবত যা পুস্তকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল—নিশ্চয়ই বারূককে মর্মাহত করেছিল। (যিরমিয় ২৫:১-১১) অধিকন্তু এই ঝুঁকি ছিল যে, সেই সংকটপূর্ণ সময়ে যিরমিয়কে দৃঢ় সমর্থন করার কারণে তাকে তার পদমর্যাদা ও কর্মজীবনে উন্নতির ক্ষেত্রে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।

যা-ই হোক না কেন, বারূককে আসন্ন বিচারের বিষয়ে মনে রাখতে সাহায্য করার জন্য যিহোবা নিজে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। “আমি যাহা গাঁথিয়াছি, তাহা আমি ভাঙ্গিয়া ফেলিব; যাহা রোপণ করিয়াছি, তাহা আমি উৎপাটন করিব; আর এই সমগ্র দেশে উহা করিব,” যিহোবা বলেছিলেন। তারপর তিনি বারূককে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তবে তুমি কি আপনার জন্য মহৎ মহৎ বিষয় চেষ্টা করিবে? সে চেষ্টা করিও না।”—যিরমিয় ৪৫:৪, ৫.

যিহোবা বলেননি যে এই “মহৎ মহৎ বিষয়” কী ছিল কিন্তু সেগুলো স্বার্থপর উচ্চাকাঙ্ক্ষা, খ্যাতি অথবা বস্তুগত সমৃদ্ধি ছিল কি না, বারূক নিশ্চয়ই তা জানতেন। যিহোবা তাকে বাস্তববাদী হতে এবং সামনে যা রয়েছে, তা মনে রাখতে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আমি সমস্ত মর্ত্ত্যের প্রতি অমঙ্গল ঘটাইব, . . . কিন্তু তুমি যে সকল স্থানে যাইবে, সে সকল স্থানে লুট দ্রব্যের ন্যায় তোমার প্রাণ তোমাকে দিব।” যেখানেই যান না কেন, বারূকের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ অর্থাৎ তার জীবন রক্ষা করা হবে।—যিরমিয় ৪৫:৫.

যিরমিয় ৩৬ ও ৪৫ অধ্যায়ে বর্ণিত এই ঘটনাগুলো যেগুলো সা.কা.পূ. ৬২৫ থেকে ৬২৪ সাল পর্যন্ত ঘটেছিল, সেই সময়ের পর থেকে সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে বাবিলীয়রা যিরূশালেম ও যিহূদা ধ্বংস করার কয়েক মাস আগে পর্যন্ত বাইবেল বারূক সম্বন্ধে আর কিছু উল্লেখ করে না। তারপর কী ঘটেছিল?

বারূক আবারও যিরমিয়কে সমর্থন করেন

বাবিলীয়রা যিরূশালেম অবরোধ করার সময় বাইবেলের বিবরণে বারূক আবারও আবির্ভূত হন। যিহোবা যখন পুনর্স্থাপনের একটা চিহ্ন হিসেবে যিরমিয়কে অনাথোতে তার কাকাতো ভাইয়ের যে-জমি ছিল তা কেনার জন্য বলেছিলেন, তখন তিনি “রাজবাটীস্থিত রক্ষীদের প্রাঙ্গণে বদ্ধ ছিলেন।” বারূককে আইনগত বিষয়গুলোতে সাহায্য করতে বলা হয়েছিল।—যিরমিয় ৩২:১, ২, ৬, ৭.

যিরমিয় ব্যাখ্যা করেন: “আমি ক্রয়পত্রে স্বাক্ষর করিলাম, মুদ্রাঙ্ক করিলাম, ও সাক্ষী রাখিলাম, এবং তাহাকে সেই রৌপ্য নিক্তিতে তৌল করিয়া দিলাম। পরে . . . ক্রয়পত্রের দুই কেতা, অর্থাৎ মুদ্রাঙ্কিত এক পত্র ও খোলা এক পত্র লইলাম। পরে . . . আমি সেই ক্রয়পত্র . . . বারূকের হস্তে সমর্পণ করিলাম।” এরপর তিনি সেই ক্রয়পত্র বা দলিলগুলো একটা মাটির পাত্রে নিরাপদে সংরক্ষণ করার জন্য বারূককে আদেশ দিয়েছিলেন। কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি মনে করে, যিরমিয় যখন বলেছিলেন যে তিনি দলিলে “স্বাক্ষর” করেছিলেন, তখন সেটা ইঙ্গিত করে যে, তিনি একজন পেশাদারি প্রতিলিপিকারী বারূককে তা বলেছিলেন, যিনি আসল লেখার কাজটা করেছিলেন।—যিরমিয় ৩২:১০-১৪; ৩৬:৪, ১৭, ১৮; ৪৫:১.

বারূক ও যিরমিয় সেই সময়কার প্রচলিত আইনগত প্রথা অনুসরণ করেছিল। এর একটা বৈশিষ্ট্য ছিল দুটো দলিল রাখা। করপাস অভ্‌ ওয়েস্ট সেমিটিক স্ট্যাম্প সিলস্‌ বইটি ব্যাখ্যা করে: “প্রথম দলিলটাকে ‘মুদ্রাঙ্কিত পত্র’ বলা হতো কারণ এটাকে গুটিয়ে রাখা হতো এবং একটা কাদামাটির সিলমোহরে মুদ্রাঙ্কিত করা হতো; এখানে চুক্তির মূল সংস্করণটা থাকত। . . . দ্বিতীয়টা অর্থাৎ ‘খোলা পত্র’ সেই বেঁধে রাখা মুদ্রাঙ্কিত সংস্করণের প্রতিলিপি ছিল এবং তা সাধারণ পাঠের জন্য ছিল। এভাবে একটা মূললিপি এবং একটা প্রতিলিপিসহ দুটো লিপি থাকত, যেগুলো প্যাপিরাসের দুটো আলাদা পাতায় লেখা হতো।” প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলো, একটা মাটির পাত্রে দলিলপত্র সংরক্ষণ করে রাখার প্রথা যে বিদ্যমান ছিল, সেটাকে সত্য বলে সমর্থন করে।

শেষপর্যন্ত বাবিলীয়রা যিরূশালেম আক্রমণ করেছিল, এটাকে পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং কিছু দরিদ্র লোক বাদে সকলকে নির্বাসনে নিয়ে গিয়েছিল। নবূখদ্‌নিৎসর দেশাধ্যক্ষ হিসেবে গদলিয়কে নিযুক্ত করেছিলেন। তাকে দুমাস পর হত্যা করা হয়েছিল। যিরমিয়ের অনুপ্রাণিত উপদেশের বিপরীতে, অবশিষ্ট যিহুদিরা মিশরে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল আর এই প্রসঙ্গেই বারূকের সম্বন্ধে আবারও উল্লেখ করা হয়।—যিরমিয় ৩৯:২, ৮; ৪০:৫; ৪১:১, ২; ৪২:১৩-১৭.

যিহুদি নেতারা যিরমিয়কে বলেছিল: “তুমি মিথ্যা বলিতেছ; মিসরে প্রবাস করিতে যাইও না, এই কথা বলিতে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে পাঠান নাই। কিন্তু নেরিয়ের পুত্ত্র বারূক আমাদের বিরুদ্ধে তোমাকে প্রবর্ত্তনা করিয়াছে, আমাদিগকে কল্‌দীয়দের হস্তে সমর্পণ করিবার জন্যই তাহা করিয়াছে, যেন তাহারা আমাদিগকে বধ করে, কিম্বা বন্দি করিয়া বাবিলে লইয়া যায়।” (যিরমিয় ৪৩:২, ৩) এই অভিযোগ স্পষ্টতই প্রকাশ করে, যিহুদি নেতাদের মধ্যে এই বিশ্বাস ছিল যে যিরমিয়ের ওপর বারূক যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতেন। তারা কি এইরকমটা মনে করেছিল যে, বারূকের পদমর্যাদা অথবা যিরমিয়ের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের কারণে তিনি ভাববাদীর পক্ষে শুধুমাত্র একজন প্রতিলিপিকারীই নয় কিন্তু তার চেয়েও আরও বেশি কিছু হিসেবে কাজ করছিলেন? তা হতে পারে কিন্তু যিহুদি নেতারা যা-ই চিন্তা করুক না কেন, সেই বার্তা যিহোবার কাছ থেকেই এসেছিল।

ঐশিক সতর্কবাণী সত্ত্বেও, অবশিষ্ট যিহুদিরা চলে গিয়েছিল এবং “যিরমিয় ভাববাদীকে ও নেরিয়ের পুত্ত্র বারূককে” তাদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল। যিরমিয় লিখেছিলেন: তারা ‘মিসর দেশে প্রবেশ করিল; কারণ তাহারা সদাপ্রভুর রবে অবধান করিল না। তাহারা তফন্‌হেষ পর্য্যন্ত গেল,’ যে-শহরটা সীনয়ের সীমান্তে নীল ব-দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এরপর, বাইবেলের বিবরণে বারূক সম্বন্ধে আর উল্লেখ করা হয়নি।—যিরমিয় ৪৩:৫-৭.

বারূকের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

বারূকের কাছ থেকে আমরা অনেক মূল্যবান বিষয় শিখতে পারি। একটা উল্লেখযোগ্য শিক্ষা হল, পরিণতি যা-ই হোক না কেন, তার পেশাগত দক্ষতা ও অন্যদের সঙ্গে জানাশোনাকে যিহোবার সেবায় ব্যবহার করার জন্য তার ইচ্ছুক মনোভাব। আজকে অনেক যিহোবার সাক্ষি—নারী ও পুরুষ—তাদের দক্ষতাগুলোকে বেথেল সেবা, নির্মাণ কাজ ও এই ধরনের কাজে ব্যবহার করার মাধ্যমে একই মনোভাব দেখিয়ে থাকে। আপনি কীভাবে বারূকের মতো মনোভাব দেখাতে পারেন?

বারূককে যখন মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, যিহূদার শেষের দিনগুলোতে ব্যক্তিগতভাবে “মহৎ মহৎ বিষয়” নিয়ে চিন্তা করার মতো কোনো সময় ছিল না, তখন স্পষ্টতই তিনি এক ইতিবাচক উপায়ে সাড়া দিয়েছিলেন কারণ তার প্রাণ রক্ষা করা হয়েছিল। আমাদের জন্য এই পরামর্শ কাজে লাগানো যুক্তিসংগত কারণ আমরাও বিধিব্যবস্থার শেষকালে বাস করছি। আমাদের কাছেও যিহোবা একই প্রতিজ্ঞা করেছেন—আমাদের জীবন রক্ষা করা হবে। বারূক যেমন দিয়েছিলেন, তেমনই আমরাও কি এই ধরনের অনুস্মারকের প্রতি সাড়া দিতে পারি?

এ ছাড়া, এই ঘটনা থেকে একটা ব্যবহারিক বিষয়ও শেখা যেতে পারে। যিরমিয় ও তার কাকাতো ভাইয়ের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেনের সময়ে বারূক প্রয়োজনীয় আইনগত বিষয়গুলোর ব্যবস্থা করেছিলেন, যদিও এই দুজন ব্যক্তি পরস্পর আত্মীয় ছিল। যে-খ্রিস্টানদের তাদের আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে, তাদের জন্য এটা এক শাস্ত্রীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করে। লিখিত ব্যবসায়িক চুক্তি রাখার এই উদাহরণটা অনুসরণ করা শাস্ত্রসংগত, ব্যবহারিক এবং প্রেমময় কাজ।

যদিও বাইবেলে বারূক সম্বন্ধে বেশ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা পাওয়া যায় কিন্তু তিনি আজকে সমস্ত খ্রিস্টানের মনোযোগ লাভের যোগ্য। আপনি কি যিরমিয়ের এই বিশ্বস্ত সচিবের চমৎকার উদাহরণ অনুকরণ করবেন?

[পাদটীকা]

^ এই ধরনের সিলমোহর হল একটা ছোট মাটির টুকরো, যেটাকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বেঁধে রাখার সুতো মুদ্রাঙ্কিত করার জন্য ব্যবহার করা হতো। কাদামাটির ওপরে এমন একটা সিলমোহরের ছাপ দেওয়া হতো, যেটাতে মালিক অথবা প্রেরকের নাম লেখা থাকত।

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

বারূকের কাদামাটির সিলমোহর

[সৌজন্যে]

কাদামাটির সিলমোহর: Courtesy of Israel Museum, Jerusalem