সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কোনো প্রিয়জন যখন যিহোবাকে ত্যাগ করে

কোনো প্রিয়জন যখন যিহোবাকে ত্যাগ করে

কোনো প্রিয়জন যখন যিহোবাকে ত্যাগ করে

 মার্ক ও লুইজ যিহোবার সাক্ষি দম্পতি। * বাইবেল খ্রিস্টান বাবামাদের যেমন পরামর্শ দেয়, সেভাবেই তারা প্রেম ও যত্নের সঙ্গে তাদের সন্তানদের শাস্ত্র সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিল। (হিতোপদেশ ২২:৬; ২ তীমথিয় ৩:১৫) কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, বড় হয়ে তাদের সব সন্তান যিহোবাকে সেবা করেনি। “যে-সন্তানরা বিপথে গিয়েছে, তাদের জন্য আমার অনেক কষ্ট হয়,” লুইজ বলেন। “আমি কীভাবে দেখাব যে, এই বিষয়টা দিনের পর দিন আমাকে প্রচণ্ড কষ্ট দিচ্ছে না? অন্যেরা যখন তাদের ছেলেদের সম্বন্ধে কথা বলে, তখন দুঃখে আমার গলা ধরে আসে আর আমি আমার কান্না চেপে রাখি।”

হ্যাঁ, একজন ব্যক্তি যখন যিহোবাকে এবং শাস্ত্রে বর্ণিত জীবনধারাকে ত্যাগ করা বেছে নেয়, তখন তার পরিবারের বিশ্বস্ত সদস্যরা স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড মানসিক কষ্ট পায়। “আমি আমার দিদিকে অনেক ভালবাসি,” ইরিন বলেন। “সে যিহোবার কাছে ফিরে এসেছে, তা দেখার জন্য আমি আমার যথাসাধ্য করব!” মারিয়া, যার ভাই অনৈতিক বিষয়ের পিছনে ছুটতে গিয়ে যিহোবার কাছ থেকে সরে গিয়েছিলেন, তিনি বলেন: “আমার পক্ষে তা সহ্য করা খুবই কষ্টকর ছিল কারণ অন্যান্য সব দিক দিয়েই সে চমৎকার একজন ভাই ছিল। বিশেষভাবে বড় বড় পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমি তার অভাব বোধ করি।”

কেন এতটা কষ্টদায়ক?

একজন সন্তান অথবা অন্যান্য প্রিয়জনকে আধ্যাত্মিকভাবে হারানো, খ্রিস্টান আত্মীয়স্বজনদের কেন এতটা কষ্ট দেয়? কারণ তারা জানে যে, যারা যিহোবার প্রতি অনুগত থাকবে তাদের জন্য শাস্ত্র এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের প্রতিজ্ঞা করে। (গীতসংহিতা ৩৭:২৯; ২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩-৫) তারা তাদের সাথি, সন্তান, বাবামা, ভাইবোন এবং নাতি-নাতনিদের সঙ্গে এই আশীর্বাদগুলো ভাগ করে নেওয়ার জন্য সানন্দে অপেক্ষা করে আছে। তাদের যেসমস্ত প্রিয়জন যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছে, তারা সেগুলো থেকে বঞ্চিত হতে পারে এই বিষয়টা চিন্তা করা তাদেরকে কতই না কষ্ট দেয়! এমনকি যিহোবার আইন ও নীতিগুলো যে এই বর্তমান জীবনেও উপকারজনক, তা খ্রিস্টানরা উপলব্ধি করতে পারে। তাই খ্রিস্টানরা মর্মাহত হয় যখন তারা দেখে যে, তাদের প্রিয়জনেরা এমনভাবে বপন করছে, যার ফলে তাদের তিক্ত শস্য কাটতে হবে।—যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮; গালাতীয় ৬:৭, ৮.

এভাবে কাউকে হারানো যে কতটা কষ্টের হতে পারে, তা এমন কারো পক্ষে বোঝা হয়তো কঠিন, যিনি কখনো এই ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করেননি। এর ফলে জীবনের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রই প্রভাবিত হয়। “খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে গিয়ে অন্যান্য বাবামাকে তাদের সন্তানদের সঙ্গে হাসতে ও কথা বলতে দেখাটা দিন দিন আরও কষ্টকর হয়ে উঠছে,” লুইজ বলেন। “যেকোনো সুখকর মুহূর্তই প্রিয়জনদের অনুপস্থিতিতে শূন্যতার আড়ালে চাপা পড়ে যায়।” একজন খ্রিস্টান প্রাচীন সেই চার বছরের কথা স্মরণ করেন, যে-সময়ে তার সৎমেয়ে তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি বলেন: “প্রায়ই, এমনকি ‘আনন্দের সময়গুলোও’ কষ্টকর হয়ে উঠত। যখন আমি আমার স্ত্রীকে কোনো উপহার দিতাম অথবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সুন্দর কোনো জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেতাম, তখন তার মেয়ে আমাদের সঙ্গে এই আনন্দের ভাগী হতে পারছে না, তা মনে করে সে কান্নায় ভেঙে পড়ত।”

এই খ্রিস্টানরা কি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে? অবশ্যই না। তারা আসলে কিছুটা হলেও যিহোবার গুণাবলিই প্রতিফলিত করে থাকে, যাঁর প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। (আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭) এর অর্থ কী? তাঁর লোকেরা অর্থাৎ ইস্রায়েল জাতি যখন তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, তখন যিহোবা কেমন বোধ করেছিলেন? গীতসংহিতা ৭৮:৩৮-৪১ পদ থেকে আমরা জানতে পারি যে, যিহোবা মনঃপীড়া পেয়েছিলেন এবং অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি তাদেরকে ধৈর্যপূর্বক সতর্ক ও শাসন করেছিলেন আর তারা যখন অনুতাপ প্রকাশ করেছিল, সেই সময়ে বার বার তিনি তাদের ক্ষমা করেছিলেন। স্পষ্টতই, যিহোবা তাঁর সৃষ্টির প্রতি, “আপন হস্তকৃতের প্রতি” ব্যক্তিগত আসক্তি বোধ করেন এবং তাদের সহজেই পরিত্যাগ করেন না। (ইয়োব ১৪:১৫; যোনা ৪:১০, ১১) তিনি মানুষের মধ্যে একই ধরনের অনুগত আসক্তি বোধের ক্ষমতা গেঁথে দিয়েছেন এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধন বিশেষভাবে দৃঢ় হতে পারে। তাই, কোনো প্রিয় আত্মীয়কে আধ্যাত্মিকভাবে হারানোর ফলে মানুষ যে দুঃখ করবে, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই।

বস্তুতপক্ষে, কোনো প্রিয়জনকে আধ্যাত্মিকভাবে হারানো হল, সত্য উপাসনাকারীদের ওপর আসা সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলোর মধ্যে একটা। (প্রেরিত ১৪:২২) যিশু বলেছিলেন যে, তাঁর বার্তা গ্রহণ করলে, তা কিছু পরিবারের মধ্যে বিভেদ নিয়ে আসবে। (মথি ১০:৩৪-৩৮) এর কারণ এই নয় যে, বাইবেলের বার্তাই পারিবারিক বিভেদ নিয়ে আসে। বরং, পরিবারের অবিশ্বাসী অথবা অবিশ্বস্ত সদস্যরা খ্রিস্টধর্মের পথকে প্রত্যাখ্যান, পরিত্যাগ অথবা এমনকি বিরোধিতা করার মাধ্যমে ভাঙন সৃষ্টি করে। কিন্তু আমরা কৃতজ্ঞ হতে পারি যে, তাঁর দাসদের যে-পরীক্ষাগুলো জর্জরিত করে, সেগুলোর মোকাবিলা করার জন্য কোনো সাহায্য প্রদান করা ছাড়াই যিহোবা তাদেরকে পরিত্যাগ করেন না। সম্প্রতি কোনো প্রিয়জনকে আধ্যাত্মিকভাবে হারানোর কারণে আপনি যদি দুঃখ পেয়ে থাকেন, তা হলে বাইবেলের কোন নীতিগুলো আপনাকে সেই শোক সহ্য করতে এবং অনেক আনন্দ ও পরিতৃপ্তি পেতে সাহায্য করতে পারে?

মোকাবিলা করা

“আপনাদিগকে গাঁথিয়া তুলিতে তুলিতে, . . . ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর।” (যিহূদা ২০, ২১) আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে মনে হতে পারে যে, আপনার পরিবারের যে-সদস্য যিহোবাকে সেবা করা বন্ধ করে দিয়েছেন, তাকে এই সময়ে সাহায্য করার জন্য আপনি কিছুই করতে পারেন না। তা সত্ত্বেও, আপনি নিজেকে ও সেইসঙ্গে পরিবারের অবশিষ্ট বিশ্বস্ত সদস্যদের গড়ে তুলতে পারেন আর আপনার তা করা উচিত। ভেরনিকা, যিনি তার তিন ছেলের মধ্যে দুজনকে সত্য ত্যাগ করতে দেখেছেন, তিনি বলেন: “আমার স্বামী ও আমাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, যদি আমরা এক দৃঢ় আধ্যাত্মিক অবস্থা বজায় রাখি, তা হলে আমাদের ছেলেরা যখন তাদের চেতনা ফিরে পাবে, তখন আমরা তাদেরকে স্বাগত জানানোর মতো উত্তম অবস্থানে থাকব। তার বাবা যদি তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার মতো অবস্থানে না থাকতেন, তা হলে সেই অপব্যয়ী পুত্র কোথায় থাকত?”

নিজের দৃঢ় অবস্থা বজায় রাখার জন্য আধ্যাত্মিক কাজে নিবিষ্ট থাকুন। এর অন্তর্ভুক্ত হল গভীরভাবে বাইবেল অধ্যয়ন করার ও খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য একটা তালিকা বজায় রাখা। আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী যতটা সম্ভব মণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যকে সাহায্য করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিন। এটা ঠিক যে, প্রথম প্রথম এই ধরনের কাজ করা আপনার পক্ষে কঠিন বলে মনে হতে পারে। ভেরনিকা বলেন: “সবচেয়ে প্রথমে আমি যা করতে চেয়েছিলাম, তা হল একটা আহত পশুর মতো নিজেকে পৃথক করে ফেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, আমার স্বামী আমাদের উত্তম আধ্যাত্মিক তালিকা বজায় রাখার ব্যাপারে জোর দিয়েছিলেন। আমরা সভাগুলোতে যাচ্ছি কি না, সেই বিষয়ে তিনি খেয়াল রাখতেন। যখন একটা সম্মেলন এসেছিল, তখন সেখানে যাওয়ার এবং লোকেদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমার অনেক সাহসের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু, সেই কার্যক্রম আমাদেরকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী করেছিল। আমাদের যে-সন্তান বিশ্বস্ত ছিল, সেই সম্মেলন বিশেষভাবে তাকে আরও গেঁথে তুলেছিল।”

মারিয়া, যার সম্বন্ধে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ক্ষেত্রের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকাকে বিশেষভাবে সাহায্যকারী বলে মনে করেন এবং তিনি বর্তমানে চারজন ব্যক্তিকে বাইবেল জানতে সাহায্য করছেন। একইভাবে লরা বলেন: “যদিও আমি এখনও প্রতিদিন কাঁদি, তবুও আমি যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই যে, সন্তানদের মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে কিছু বাবামা যে-সফলতা লাভ করেছে আমি তা করতে না পারলেও, আমার কাছে বাইবেলের সেই উৎকৃষ্ট বার্তা রয়েছে, যা এই শেষকালে পরিবারগুলোকে সাহায্য করতে পারে।” কেন্‌ ও ইলেনর, যাদের প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা মণ্ডলী ছেড়ে চলে গিয়েছে, তারা যেখানে রাজ্য ঘোষণাকারীদের বেশি প্রয়োজন সেখানে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল এবং পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় রত ছিল। এটা তাদেরকে বিভিন্ন বিষয় বাস্তবসম্মতভাবে দেখতে এবং দুঃখে জর্জরিত হয়ে না পড়তে সাহায্য করেছিল।

আশা ছেড়ে দেবেন না। প্রেম “সকলই প্রত্যাশা করে।” (১ করিন্থীয় ১৩:৭) ওপরে উল্লেখিত কেন্‌ বলেন: “আমাদের সন্তানরা যখন সত্যের পথ ছেড়ে চলে যায়, তখন আমি চিন্তা করেছিলাম যেন তাদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, আমার বোনের মৃত্যুর পর আমার সেই ধারণা পালটে যায়। আমার সন্তানরা সত্যি সত্যি মারা যায়নি বলে এবং যিহোবা তাদের জন্য তাঁর কাছে ফিরে আসার দরজা সবসময় খোলা রেখেছেন বলে আমি তাঁর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।” সত্যি বলতে কী, অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে, যারা সত্য ত্যাগ করে চলে গিয়েছে, তাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত ফিরে এসেছে।—লূক ১৫:১১-২৪.

নিজেকে দোষ দেবেন না। বিশেষভাবে বাবামারা হয়তো অতীতের বিষয় চিন্তা করে এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতিগুলোকে তারা ভিন্নভাবে পরিচালনা করেনি বলে অনুশোচনা করে। কিন্তু, যিহিষ্কেল ১৮:২০ পদে যে-চিন্তাধারা তুলে ধরা হয়েছে তা হল, ভুল বিষয় বাছাই করার জন্য যিহোবা পাপীকে দায়ী করেন, তার বাবামাকে নয়। আগ্রহের বিষয় যে, হিতোপদেশ বই সন্তানদের সঠিক পথে মানুষ করার ক্ষেত্রে বাবামার বাধ্যবাধকতা সম্বন্ধে অনেক মন্তব্য করে, সেই একই বইয়ে বাবামার কথা শোনা ও তাদের বাধ্য থাকার ব্যাপারে অল্পবয়সিদের জন্য চার গুণ বেশি পরামর্শ রয়েছে। হ্যাঁ, সন্তানদের তাদের অসিদ্ধ বাবামার বাইবেলভিত্তিক প্রশিক্ষণের প্রতি সাড়া দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই বিষয়ে সম্ভবত আপনি আপনার যথাসাধ্য করেছিলেন। কিন্তু তারপরও যদি আপনার মনে হয় যে, আপনি কিছু ভুল করেছেন এবং এগুলো আসলে আপনারই দোষ, তা হলেও এর অর্থ এই নয় যে, আপনার ভুলগুলোই আপনার প্রিয়জনকে সত্য ত্যাগ করতে পরিচালিত করেছে। যা-ই হোক না কেন, “যদি আমি সেটা করতাম,” এই ধরনের চিন্তা করে কিছুই লাভ করা যায় না। আপনার ভুলগুলো থেকে শিখুন, আবারও সেগুলো না করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন এবং যিহোবার কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা করুন। (গীতসংহিতা ১০৩:৮-১৪; যিশাইয় ৫৫:৭)) এরপর ভবিষ্যতের দিকে তাকান, অতীতের দিকে নয়।

অন্যদের প্রতি সহনশীল হোন। কীভাবে আপনাকে উৎসাহ ও সান্ত্বনা দেওয়া যায়, তা বোঝা হয়তো কারো কারো পক্ষে কঠিন হতে পারে, বিশেষভাবে যদি তারা কখনো একই ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করে না থাকে। তা ছাড়া, তারা কোন বিষয়টাকে উৎসাহজনক ও সান্ত্বনাদায়ক বলে মনে করে, সেই ব্যাপারে লোকেদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা থাকতে পারে। তাই, কেউ যদি এমন কিছু বলে যা আপনাকে কষ্ট দেয়, তা হলে কলসীয় ৩:১৩ পদে পাওয়া প্রেরিত পৌলের পরামর্শ কাজে লাগান: “পরস্পর সহনশীল হও, এবং যদি কাহাকেও দোষ দিবার কারণ থাকে, তবে পরস্পর ক্ষমা কর।”

শাসন করার বিষয়ে যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। যদি আপনার কোনো আত্মীয় মণ্ডলীর কাছ থেকে শাসন লাভ করে থাকেন, তা হলে মনে রাখুন যে, এটা যিহোবার ব্যবস্থার অংশ এবং সেই অন্যায়কারীসহ সকলের মঙ্গলের জন্যই তা করা হয়েছে। (ইব্রীয় ১২:১১) তাই, এর সঙ্গে জড়িত প্রাচীনদের এবং তারা যে-সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দোষ খোঁজার প্রবণতা প্রতিরোধ করুন। মনে রাখবেন যে, যিহোবার পথানুযায়ী কাজ করা উত্তম ফলাফল নিয়ে আসে কিন্তু যিহোবার ব্যবস্থার বিরোধিতা করা কেবল দুঃখই বাড়াবে।

ইস্রায়েলীয়রা মিশর থেকে উদ্ধার লাভ করার পর, মোশি নিয়মিতভাবে বিচারক হিসেবে সেবা করেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ১৮:১৩-১৬) যেহেতু একটা বিচারের রায় একজন ব্যক্তির পক্ষে এবং সম্ভবত অন্য একজনের বিপক্ষে দেওয়া হতো, তাই এটা কল্পনা করা কঠিন নয় যে, কেউ কেউ মোশির সিদ্ধান্তগুলোর কারণে হতাশ হয়েছিল। মোশির বিচারের মধ্যে দোষ খোঁজা সম্ভবত কোনো কোনো ঘটনায় তার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পরিচালিত করেছিল। তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মোশিকে ব্যবহার করছিলেন আর তিনি মোশিকে নয় বরং সেই বিদ্রোহীদের ও তাদের পরিবারকে শাস্তি দিয়েছিলেন, যারা তাদের সমর্থন করেছিল। (গণনাপুস্তক ১৬:৩১-৩৫) আজকে যারা ঈশতান্ত্রিক কর্তৃত্বে রয়েছে, তাদের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোকে সম্মান ও সহযোগিতা করার আপ্রাণ চেষ্টা করে আমরা এখান থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি।

এই বিষয়ে ডেলোরেস স্মরণ করেন যে, যখন তার মেয়েকে মণ্ডলী থেকে শাসন করা হয়েছিল, তখন এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা তার পক্ষে কতটা কঠিন ছিল। “যে-বিষয়টা আমাকে সাহায্য করেছিল,” তিনি বলেন, “তা হল, যিহোবার ব্যবস্থার যুক্তিবাদিতা সম্বন্ধে প্রবন্ধগুলো বার বার পড়া। বিভিন্ন বক্তৃতা ও প্রবন্ধের সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমি একটা বিশেষ নোটবুক তৈরি করেছিলাম, যেগুলো আমার এই অবস্থাকে সহ্য করতে ও যিহোবার সেবা করা চালিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।” এই বিষয়টা, মোকাবিলা করার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ উপায়ের দিকে পরিচালিত করে।

আপনার অনুভূতি প্রকাশ করুন। যাদের ওপর আপনার আস্থা রয়েছে এমন দুএকজন বন্ধুর কাছে মনের কথা খুলে বলা আপনার পক্ষে সাহায্যকারী হতে পারে। তা করার সময় এমন বন্ধুবান্ধব বাছাই করুন, যারা আপনাকে ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করবে। যিহোবার কাছে প্রার্থনায় ‘মনের কথা ভাঙ্গিয়া বলা’ নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে বেশি কার্যকারী হবে। * (গীতসংহিতা ৬২:৭, ৮) কেন? কারণ তিনি আপনার অনুভূতির তীব্রতা সম্বন্ধে পুরোপুরি বোঝেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে আপনাকে যে-মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে, তা অন্যায্য। কারণ আপনি তো যিহোবাকে পরিত্যাগ করেননি। যিহোবাকে আপনার এই অনুভূতি জানান এবং আপনাকে সাহায্য করার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন যেন সেই পরিস্থিতিকে আপনি এমনভাবে দেখতে পারেন, যা কম দুঃখদায়ক।—গীতসংহিতা ৩৭:৫.

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, আপনি সম্ভবত আরও ভালভাবে আপনার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন। এই সময়ের মধ্যে, আপনার স্বর্গীয় পিতার কাছে সন্তোষজনক হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা করায় হাল ছেড়ে দেবেন না এবং কখনো এমনটা মনে করবেন না যে, সেগুলো নিষ্ফল। (গালাতীয় ৬:৯) মনে রাখবেন, যদি আমরা যিহোবাকে ত্যাগ করতাম, তা হলেও আমাদের সমস্যাগুলো থাকত। অন্যদিকে, তাঁর প্রতি অনুগত থেকে আমরা আমাদের পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সাহায্য লাভ করি। নিশ্চিত থাকুন যে, যিহোবা আপনার পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝেন এবং উপযোগী বা উপযুক্ত সময়ে আপনাকে প্রয়োজনীয় শক্তি জুগিয়ে যাবেন।—২ করিন্থীয় ৪:৭; ফিলিপীয় ৪:১৩; ইব্রীয় ৪:১৬.

[পাদটীকাগুলো]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ সমাজচ্যুত আত্মীয়ের জন্য প্রার্থনা করার বিষয়ে ২০০১ সালের ১লা ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৩০-১ পৃষ্ঠা দেখুন।

[১৯ পৃষ্ঠার বাক্স]

যেভাবে মোকাবিলা করা যায়

◆ “আপনাদিগকে গাঁথিয়া তুলিতে তুলিতে, . . . ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর।” —যিহূদা ২০, ২১.

◆ আশা ছেড়ে দেবেন না।—১ করিন্থীয় ১৩:৭.

◆ নিজেকে দোষ দেবেন না।—যিহিষ্কেল ১৮:২০.

◆ অন্যদের প্রতি সহনশীল হোন।—কলসীয় ৩:১৩.

◆ শাসন করার বিষয়ে যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন।—ইব্রীয় ১২:১১.

◆ আপনার অনুভূতি প্রকাশ করুন। —গীতসংহিতা ৬২:৭, ৮.

[২১ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

আপনি কি যিহোবাকে ত্যাগ করেছেন?

যদি করে থাকেন, তা হলে কারণ যা-ই হোক না কেন যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক এবং আপনার অনন্তকালীন প্রত্যাশাগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। সম্ভবত আপনি যিহোবার কাছে ফিরে আসতে চান। আপনি কি এখনই তা করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন? নাকি আপনি ‘উপযোগী সময়ের’ জন্য অপেক্ষা করছেন? মনে রাখবেন যে, আরমাগিদোনের ঝড়ো মেঘ দ্রুত এগিয়ে আসছে। অধিকন্তু, এই বিধিব্যবস্থায় জীবন সংক্ষিপ্ত এবং অনিশ্চিত। এমনকি আপনি আগামীকাল বেঁচে থাকবেন কি না, তা-ও আপনি জানেন না। (গীতসংহিতা ১০২:৩; যাকোব ৪:১৩, ১৪) একজন ব্যক্তি যার একটা মারাত্মক রোগ ধরা পড়েছিল, তিনি বলেছিলেন: “আমি এই ব্যাপারে কোনোরকম রাখঢাক করতে চাই না যে, যিহোবাকে পূর্ণসময়ের সেবা করার সময়ই আমার এই রোগ হয়। আর সেই কাজ করার সময়ই তা হয়েছে জানা সান্ত্বনাদায়ক।” একটু কল্পনা করুন যে, তার কেমন লাগত যদি তার সেই রোগটা এমন এক সময়ে হতো, যখন তিনি বলতেন যে, “কোনো একদিন আমি যিহোবার কাছে ফিরে আসব!” আপনি যদি যিহোবাকে ত্যাগ করে থাকেন, তা হলে ফিরে আসার সময় এখনই।

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আধ্যাত্মিক কাজকর্মে নিবিষ্ট থাকা আপনাকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে