সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর”

“তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর”

“তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর”

“সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর।”—ফিলিপীয় ৪:৬.

১. কার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে এবং কেন তা অনেক বিস্ময়কর?

 আপনাকে যদি আপনার দেশের শাসকের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য অনুরোধ করতে হতো, তা হলে কেমন সাড়া পেতেন? আপনি হয়তো তার অফিস থেকে সৌজন্যমূলক উত্তর পেতেন কিন্তু খুব সম্ভবত আপনাকে সেই শাসকের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হতো না। কিন্তু, সমস্তকিছুর সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক যিহোবা ঈশ্বর, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌমের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা ভিন্ন। আমরা যেকোনো জায়গায় থাকি না কেন অথবা যেকোনো সময়ই বেছে নিই না কেন, আমরা তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি। গ্রহণযোগ্য প্রার্থনা সবসময় তাঁর কাছে পৌঁছায়। (হিতোপদেশ ১৫:২৯) এটা সত্যিই চমৎকার! এই বিষয়ের প্রতি উপলব্ধি কি আমাদেরকে নিয়মিতভাবে সেই ব্যক্তির কাছে প্রার্থনা করতে পরিচালিত করে না, যাঁকে উপযুক্তভাবেই “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” বলা হয়?—গীতসংহিতা ৬৫:২.

২. প্রার্থনা যাতে ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সেটার জন্য কীসের প্রয়োজন?

কিন্তু, কেউ কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারে, ‘কোন ধরনের প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য?’ প্রার্থনা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য একটা যে-বিষয় প্রয়োজন, সেই সম্বন্ধে বাইবেল ব্যাখ্যা করে, যখন এটি বলে: “বিনা বিশ্বাসে প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়; কারণ যে ব্যক্তি ঈশ্বরের নিকটে উপস্থিত হয়, তাহার ইহা বিশ্বাস করা আবশ্যক যে ঈশ্বর আছেন, এবং যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) হ্যাঁ, আগের প্রবন্ধে যেমন ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিশ্বাস। ঈশ্বর সেইসমস্ত ব্যক্তির প্রার্থনা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, যারা তাঁর নিকটবর্তী হয় কিন্তু তাদেরকে তা বিশ্বাস ও সঠিক কাজ এবং সেইসঙ্গে আন্তরিকতা ও হৃদয়ের সঠিক মনোভাব সহকারে করতে হবে।

৩. (ক) প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত দাসদের প্রার্থনার মাধ্যমে যেমন দেখানো হয়েছে, প্রার্থনার মধ্যে কোন ধরনের অভিব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে? (খ) আমাদের প্রার্থনার বিভিন্ন ধরন কী?

প্রেরিত পৌল তার দিনে খ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর।” (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) বাইবেলে এমন অনেক ব্যক্তির উদাহরণ রয়েছে, যারা ঈশ্বরের কাছে তাদের উদ্বিগ্নতার কথা প্রকাশ করেছিল। এদের মধ্যে রয়েছে হান্না, এলিয়, হিষ্কিয় এবং দানিয়েল। (১ শমূয়েল ২:১-১০; ১ রাজাবলি ১৮:৩৬, ৩৭; ২ রাজাবলি ১৯:১৫-১৯; দানিয়েল ৯:৩-২১) আমাদের উচিত তাদের উদাহরণ অনুসরণ করা। এ ছাড়া লক্ষ করুন, প্রেরিত পৌলের কথাগুলো দেখায় যে, আমাদের প্রার্থনা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তিনি ধন্যবাদের কথা উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ যে-প্রার্থনায় আমরা ঈশ্বর আমাদের জন্য যা কিছু করেছেন, সেগুলোর জন্য উপলব্ধি প্রকাশ করতে পারি। এর সঙ্গে আমরা প্রশংসাও করতে পারি। বিনতি বলতে নম্র ও আন্তরিক মিনতিকে বোঝায়। আর নির্দিষ্ট কিছুর জন্য আমরা যাচ্ঞা অথবা অনুরোধ করতে পারি। (লূক ১১:২, ৩) এইরকম যেকোনো উপায়ে আমাদের স্বর্গীয় পিতার নিকটবর্তী হলে তিনি খুশি হন।

৪. যদিও যিহোবা আমাদের চাহিদাগুলো জানেন, তবুও কেন আমরা তাঁর কাছে যাচ্ঞা করি?

কেউ কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারে, ‘যিহোবা কি ইতিমধ্যেই আমাদের সমস্ত চাহিদা সম্বন্ধে জানেন না?’ হ্যাঁ, তিনি জানেন। (মথি ৬:৮, ৩২) তা হলে, কেন তিনি চান যেন আমরা আমাদের যাচ্ঞাসহ তাঁর নিকটবর্তী হই? এই উদাহরণটা বিবেচনা করুন: একজন দোকানের মালিক হয়তো তার কিছু ক্রেতাকে একটা উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু, এই উপহার গ্রহণ করার জন্য ক্রেতাদেরকে অবশ্যই মালিকের কাছে এসে সেটা চাইতে হবে। যারা তা করার জন্য প্রচেষ্টা করতে অনিচ্ছুক, তারা দেখাবে যে তারা আসলে সেই প্রস্তাবের প্রতি উপলব্ধি দেখায় না। একইভাবে, প্রার্থনায় আমাদের যাচ্ঞাগুলো জানাতে উপেক্ষা করা দেখাবে যে, যিহোবা যা জোগান সেটার প্রতি উপলব্ধির অভাব রয়েছে। যিশু বলেছিলেন: “যাচ্ঞা কর, তাহাতে পাইবে।” (যোহন ১৬:২৪) এভাবে আমরা ঈশ্বরের ওপর আমাদের নির্ভরতা দেখাই।

কীভাবে আমাদের ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া উচিত?

৫. কেন আমাদের যিশুর নামে প্রার্থনা করা উচিত?

কীভাবে প্রার্থনা করতে হবে, সেই সম্বন্ধে ঈশ্বর অসংখ্য কঠোর নিয়ম স্থাপন করেননি। তা সত্ত্বেও, সঠিকভাবে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার বিষয়টা আমাদের শিখতে হবে, যে-সম্বন্ধে বাইবেলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরপ, যিশু তাঁর অনুসারীদের শিখিয়েছিলেন: “পিতার নিকটে যদি তোমরা কিছু যাচ্ঞা কর, তিনি আমার নামে তোমাদিগকে তাহা দিবেন।” (যোহন ১৬:২৩) তাই, যিশুকেই একমাত্র মাধ্যম হিসেবে স্বীকার করে আমাদের যিশুর নামে প্রার্থনা করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে সমস্ত মানবজাতি ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করে থাকে।

৬. প্রার্থনা করার সময় কোন ভঙ্গিমায় আমাদের প্রার্থনা করা উচিত?

প্রার্থনা করার সময় আমাদের কোন ভঙ্গিমায় প্রার্থনা করা উচিত? বাইবেলে এমন কোনো নির্দিষ্ট ভঙ্গিমার কথা উল্লেখ করা নেই, যে-ভঙ্গিমায় প্রার্থনা করলে আমাদের প্রার্থনা শোনা হবে। (১ রাজাবলি ৮:২২; নহিমিয় ৮:৬; মার্ক ১১:২৫; লূক ২২:৪১) গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, আন্তরিকতা ও হৃদয়ের সঠিক মনোভাব সহকারে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা।—যোয়েল ২:১২, ১৩.

৭. (ক) “আমেন” শব্দটির অর্থ কী? (খ) কীভাবে এটা প্রার্থনায় উপযুক্তভাবে ব্যবহার করা হয়?

“আমেন” শব্দটি ব্যবহার করা সম্বন্ধে কী বলা যায়? শাস্ত্র ইঙ্গিত দেয় যে, সাধারণত এটা হল আমাদের প্রার্থনার উপযুক্ত উপসংহার, বিশেষভাবে যখন আমরা জনসমক্ষে প্রার্থনা করি। (গীতসংহিতা ৭২:১৯; ৮৯:৫২) ইব্রীয় আমেন শব্দটির মূল অর্থ হল “নিশ্চিতভাবে।” ম্যাকক্লিনটক এবং স্ট্রংয়ের সাইক্লোপিডিয়া ব্যাখ্যা করে যে, প্রার্থনার শেষে “আমেন” বলার তাৎপর্য হল “পূর্বে বলা কথাগুলোকে সত্য বলে স্বীকার করা এবং সেগুলোর পরিপূর্ণতার জন্য যাচ্ঞা করা।” তাই, আন্তরিকতার সঙ্গে “আমেন” বলে যে-ব্যক্তি তার প্রার্থনা শেষ করেন, তিনি সবেমাত্র যা বলেছেন, সেই সম্বন্ধে তার আন্তরিক অনুভূতির ইঙ্গিত দেন। প্রার্থনায় মণ্ডলীকে প্রতিনিধিত্ব করে একজন খ্রিস্টান যখন এই অভিব্যক্তি দ্বারা শেষ করেন, তখন যারা শোনে তারাও সবেমাত্র যা বলা হয়েছে, সেটার প্রতি তাদের আন্তরিক অনুমোদনের ইঙ্গিত হিসেবে মনে মনে অথবা জোরে জোরে “আমেন” বলতে পারে।—১ করিন্থীয় ১৪:১৬.

৮. কীভাবে আমাদের কিছু প্রার্থনা যাকোব ও অব্রাহামের প্রার্থনার মতো হতে পারে আর এটা আমাদের সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?

আমরা যে-বিষয়গুলোর জন্য প্রার্থনা করি, অনেক সময় ঈশ্বর আমাদেরকে সেগুলোর প্রতি আমাদের চিন্তার গভীরতা দেখানোর সুযোগ করে দেন। আমাদের হয়তো প্রাচীনকালের যাকোবের মতো হতে হবে, যিনি একটা আশীর্বাদ লাভ করার জন্য একজন স্বর্গদূতের সঙ্গে সারারাত লড়াই করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩২:২৪-২৬) অথবা কোনো কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের হয়তো অব্রাহামের মতো হওয়া প্রয়োজন, যিনি লোট ও সেই ধার্মিক ব্যক্তিদের জন্য বার বার আকুল আবেদন করেছিলেন, যারা হয়তো সদোমে থাকতে পারে। (আদিপুস্তক ১৮:২২-৩৩) আমরাও হয়তো একইভাবে সেই বিষয়গুলোর জন্য যিহোবার কাছে মিনতি করতে পারি, যেগুলো আমাদের কাছে মূল্যবান এবং তাঁর ন্যায়বিচার, প্রেমপূর্ণ-দয়া ও করুণার ভিত্তিতে তাঁর কাছে আকুল আবেদন জানাতে পারি।

আমরা কোন বিষয়গুলোর জন্য প্রার্থনা করতে পারি?

৯. প্রার্থনার সময় আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয় কী হওয়া উচিত?

মনে করে দেখুন যে, পৌল বলেছিলেন: “সর্ব্ববিষয়ে . . . তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর।” (ফিলিপীয় ৪:৬) তাই, ব্যক্তিগত প্রার্থনায় জীবনের প্রায় প্রত্যেকটা দিককে জড়িত করা যেতে পারে। কিন্তু, আমাদের প্রার্থনায় প্রথম চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত যিহোবার বিষয়গুলো। এই ক্ষেত্রে দানিয়েল উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেন। ইস্রায়েল যখন তাদের পাপের জন্য শাস্তি ভোগ করেছিল, তখন দানিয়েল এই বলে করুণা দেখানোর জন্য যিহোবার কাছে অনুনয় করেছিলেন: “বিলম্ব করিও না; হে আমার ঈশ্বর, তোমার নিজের অনুরোধে কার্য্য কর, কেননা তোমার নগরের ও তোমার প্রজাগণের উপরে তোমার নাম কীর্ত্তিত হইয়াছে।” (দানিয়েল ৯:১৫-১৯) আমাদের প্রার্থনাও কি একইভাবে দেখায় যে, যিহোবার নামের পবিত্রীকরণ ও তাঁর ইচ্ছা পরিপূর্ণ করা আমাদের প্রধান চিন্তার বিষয়।

১০. কীভাবে আমরা জানি যে, ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর জন্য প্রার্থনা করা উপযুক্ত?

১০ যাই হোক, ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে অনুরোধ করাও উপযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, গীতরচকের মতো আমরাও হয়তো গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের জন্য প্রার্থনা করতে পারি। তিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “আমাকে বিবেচনা দেও, আমি তোমার ব্যবস্থা মানিব, সর্ব্বান্তঃকরণে তাহা পালন করিব।” (গীতসংহিতা ১১৯:৩৩, ৩৪; কলসীয় ১:৯, ১০) যিশু “তাঁহারই নিকটে প্রার্থনা ও বিনতি উৎসর্গ করিয়াছিলেন, যিনি মৃত্যু হইতে তাঁহাকে রক্ষা করিতে সমর্থ।” (ইব্রীয় ৫:৭) তা করার মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছিলেন যে, বিপদ বা পরীক্ষার মুখোমুখি হলে শক্তি চাওয়া উপযুক্ত। শিষ্যদের আদর্শ প্রার্থনা দেওয়ার সময় যিশু ব্যক্তিগত চিন্তার বিষয়গুলো যেমন ভুলগুলো ক্ষমা করা ও রোজকার খাবার লাভ করার বিষয়টাও অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।

১১. কীভাবে প্রার্থনা আমাদেরকে প্রলোভনে না পড়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?

১১ সেই আদর্শ প্রার্থনায় যিশু এই অনুরোধ করেছিলেন: “আমাদিগকে পরীক্ষাতে [“প্রলোভনে,” NW] আনিও না, কিন্তু মন্দ হইতে রক্ষা কর।” (মথি ৬:৯-১৩) পরবর্তী সময়ে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন: “জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় [“প্রলোভনে,” NW] না পড়।” (মথি ২৬:৪১) আমরা যখন প্রলোভনের মুখোমুখি হই, তখন প্রার্থনা করা অপরিহার্য। আমরা হয়তো কর্মক্ষেত্রে অথবা স্কুলে বাইবেলের নীতিগুলো উপেক্ষা করার জন্য প্রলোভিত হতে পারি। ন-সাক্ষিরা হয়তো আমাদেরকে আপত্তিকর কাজকর্মে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারে। আমাদের হয়তো এমন কিছু করার জন্য বলা হতে পারে, যা ধার্মিক নীতিগুলো লঙ্ঘন করে। সেই মুহূর্তগুলোতে প্রার্থনা করার বিষয়ে যিশুর পরামর্শ—প্রলোভনে পড়ার আগেই এবং প্রলোভনের মুখোমুখি হলে—আমাদের অনুসরণ করা উচিত এবং আমাদের সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরের কাছে যাচ্ঞা করা উচিত, যেন আমরা প্রলোভনে না পড়ি।

১২. উদ্বিগ্নতার কোন কারণগুলো আমাদের প্রার্থনা করতে পরিচালিত করে আর যিহোবার কাছ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি?

১২ আজকে ঈশ্বরের দাসদের জীবনে বিভিন্ন ধরনের চাপ ও উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়। অসুস্থতা ও আবেগগত চাপ অনেকের জন্য উদ্বিগ্নতার বড় কারণ। আমাদের চারপাশের দৌরাত্ম্যপূর্ণ অবস্থা জীবনকে চাপগ্রস্ত করে। টাকাপয়সার কষ্ট জীবিকার্জন করাকে কঠিন করে তোলে। এটা জানা কত সান্ত্বনাজনক যে, যিহোবা তাঁর সেই দাসদের প্রার্থনা শোনেন, যারা এই বিষয়গুলো তাঁর কাছে বলে! গীতসংহিতা ১০২:১৭ পদ যিহোবা সম্বন্ধে বলে: “তিনি দীনহীনদের প্রার্থনার দিকে ফিরিয়াছেন, তাহাদের প্রার্থনা তুচ্ছ করেন নাই।”

১৩. (ক) ব্যক্তিগত কোন বিষয়গুলো প্রার্থনার জন্য উপযুক্ত বিষয়? (খ) এই ধরনের এক প্রার্থনার উদাহরণ দিন।

১৩ আসলে, যিহোবার প্রতি আমাদের সেবাকে অথবা তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন যেকোনো বিষয়ই প্রার্থনার জন্য উপযুক্ত বিষয় হতে পারে। (১ যোহন ৫:১৪) আপনাকে যদি বিয়ে, চাকরি অথবা আপনার পরিচর্যাকে বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তা হলে এই বিষয়গুলো ঈশ্বরের কাছে বলতে এবং তাঁর নির্দেশনা চাইতে দ্বিধা করবেন না। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিপিনসের একজন যুবতী পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, নিজের ভরণপোষণ জোগানোর জন্য তার কোনো চাকরি ছিল না। তিনি বলেন: “এক শনিবার আমি অগ্রগামীর কাজ করার বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি। পরে সেই একই দিনে আমি যখন প্রচার কাজ করছিলাম, তখন একজন কিশোরীকে একটা বই দিই। অপ্রত্যাশিতভাবে সেই মেয়ে বলেছিল: ‘সোমবার সকালে প্রথমেই আপনার উচিত আমার স্কুলে যাওয়া।’ আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কেন?’ সে ব্যাখ্যা করেছিল যে, সেখানে একটা কর্ম খালি আছে যা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পূরণ করা হবে। আমি গিয়েছিলাম এবং তখনই আমাকে নেওয়া হয়েছিল। এই সমস্তকিছু অত্যন্ত দ্রুত ঘটে গিয়েছিল।” সারা পৃথিবীর অসংখ্য সাক্ষির একইরকম অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই, প্রার্থনায় আপনার আন্তরিক যাচ্ঞা ঈশ্বরকে বলতে দ্বিধা করবেন না!

আমরা যদি পাপ করে থাকি, তা হলে?

১৪, ১৫. (ক) একজন ব্যক্তি পাপ করলেও কেন তার প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকা উচিত নয়? (খ) ব্যক্তিগত প্রার্থনা ছাড়াও আর কোন বিষয় একজন ব্যক্তিকে তার পাপ থেকে আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করবে?

১৪ কেউ যদি পাপ করে থাকে, তা হলে প্রার্থনা কীভাবে সাহায্য করতে পারে? পাপ করেছেন এমন কেউ কেউ হয়তো অস্বস্তিবোধের কারণে প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু, এইরকম করা বিজ্ঞতার কাজ নয়। উদাহরণস্বরূপ, বিমানের পাইলটরা জানে যে তারা যদি হারিয়ে যায়, তা হলে সাহায্য লাভ করার জন্য তারা বিমান পরিবহন নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। কিন্তু, কী হবে যদি একজন পাইলট হারিয়ে গিয়েছেন বলে অস্বস্তিবোধ করে নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করেন? এটা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে! একইভাবে, যে-ব্যক্তি পাপ করেছেন এবং ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে অস্বস্তিবোধ করেন, তিনি আরও ক্ষতি ভোগ করতে পারেন। পাপের কারণে লজ্জিত হয়ে যিহোবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বর সেই ব্যক্তিদের তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে আমন্ত্রণ জানান, যারা গুরুতর ভুল করেছে। ভাববাদী যিশাইয় তার দিনের পাপীদের যিহোবাকে ডাকতে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, “কেননা তিনি প্রচুররূপে ক্ষমা করিবেন।” (যিশাইয় ৫৫:৬, ৭) অবশ্য, একজন ব্যক্তিকে হয়তো প্রথমে নিজের হৃদয়কে প্রশমিত বা নম্র করার, পাপপূর্ণ কাজ থেকে ফিরে আসার এবং অকপটভাবে অনুতপ্ত হওয়ার মাধ্যমে “প্রভুর শ্রীমুখ প্রশমিত” করতে হবে।—গীতসংহিতা ১১৯:৫৮; দানিয়েল ৯:১৩, বাংলা জুবিলী বাইবেল।

১৫ পাপ জড়িত থাকলে আরও একটা কারণে প্রার্থনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আধ্যাত্মিক সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে এমন একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে যাকোব বলেন: “সে মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গকে আহ্বান করুক; এবং তাঁহারা . . . তাহার উপরে প্রার্থনা করুন। . . . এবং প্রভু [“যিহোবা,” NW] তাহাকে উঠাইবেন।” (যাকোব ৫:১৪, ১৫) হ্যাঁ, একজন ব্যক্তির উচিত প্রার্থনায় ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার কাছে তার পাপ স্বীকার করা কিন্তু তিনি প্রাচীনবর্গকেও তার জন্য প্রার্থনা করতে বলতে পারেন। এটা তাকে আধ্যাত্মিক আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য করবে।

প্রার্থনার উত্তর

১৬, ১৭. (ক) কীভাবে যিহোবা প্রার্থনার উত্তর দেন? (খ) কোন অভিজ্ঞতাগুলো দেখায় যে, প্রার্থনা ও প্রচার কাজ ওতপ্রোতভাবে জড়িত?

১৬ কীভাবে প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়? কিছু প্রার্থনার উত্তর হয়তো দ্রুত ও স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়। (২ রাজাবলি ২০:১-৬) অন্যান্য প্রার্থনার উত্তরের জন্য হয়তো সময় লাগে এবং উত্তরগুলো বোঝা হয়তো কঠিন হতে পারে। বার বার বিচারকের কাছে এসেছিলেন এমন একজন বিধবার বিষয়ে দেওয়া যিশুর দৃষ্টান্তে যেমন দেখানো হয়েছে যে, ঈশ্বরের কাছে বার বার প্রার্থনা করার প্রয়োজন হতে পারে। (লূক ১৮:১-৮) কিন্তু, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমরা যখন ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে প্রার্থনা করি, তখন যিহোবা কখনো আমাদের এইরকম বলেন না: “আমাকে কষ্ট দিও না।”—লূক ১১:৫-৯.

১৭ যিহোবার লোকেদের প্রার্থনার উত্তর যে দেওয়া হয়েছে, সেই সম্বন্ধে তাদের অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। এটা প্রায়ই আমাদের জনসাধারণ্যের পরিচর্যায় দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিপিনসের দুজন খ্রিস্টান বোন একটা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাইবেল সাহিত্যাদি বিতরণ করছিল। তারা যখন একজন মহিলাকে একটা ট্র্যাক্ট দেয়, তখন তার চোখ জলে ভরে ওঠে। তিনি বলেছিলেন: “গত রাতে আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যেন তিনি আমাকে বাইবেল শেখানোর জন্য কাউকে পাঠান আর আমি মনে করি যে, এটাই হল আমার প্রার্থনার উত্তর।” এর পর পরই, সেই মহিলা কিংডম হলের সভাগুলোতে যোগ দিতে শুরু করেন। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আরেকটা অংশে একজন খ্রিস্টান ভাই কড়া নিরাপত্তা রয়েছে এমন আবাসিক এলাকার বহুতল ভবনগুলোর মধ্যে প্রচার করার ব্যাপারে শঙ্কিত ছিলেন। কিন্তু, তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেন, সাহস সঞ্চয় করেন এবং বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন। তিনি একটা আ্যপার্টমেন্টের দরজায় কড়া নাড়েন আর একজন যুবতী বের হয়ে আসেন। সেই ভাই যখন তার সাক্ষাতের কারণ ব্যাখ্যা করেন, তখন তিনি কাঁদতে আরম্ভ করেন। তিনি বলেন যে, তিনি যিহোবার সাক্ষিদেরকে খুঁজছিলেন আর তাদেরকে খুঁজে বের করতে সাহায্যের জন্য প্রার্থনাও করেছিলেন। সেই ভাই যিহোবার সাক্ষিদের স্থানীয় মণ্ডলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তাকে আনন্দের সঙ্গে সাহায্য করেছিলেন।

১৮. (ক) যখন আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়, তখন কীভাবে আমাদের সাড়া দেওয়া উচিত? (খ) আমরা যদি প্রতিটা সুযোগে প্রার্থনা করি, তা হলে কোন বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?

১৮ সত্যিই প্রার্থনা এক অপূর্ব ব্যবস্থা। যিহোবা প্রার্থনা শুনতে এবং উত্তর দিতে তৈরি আছেন। (যিশাইয় ৩০:১৮, ১৯) কিন্তু, আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যে, যিহোবা কীভাবে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন। আমরা যেভাবে আশা করি, সবসময় হয়তো সেভাবে উত্তর না-ও পেতে পারি। তা সত্ত্বেও, আমরা যখন তার নির্দেশনা বুঝতে পারি, তখন আমাদের কখনো তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে ও তাঁর প্রশংসা করতে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৮) অধিকন্তু, সবসময় প্রেরিত পৌলের উপদেশ মনে রাখুন: “সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর।” হ্যাঁ, ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রতিটা সুযোগকে কাজে লাগান। এভাবে, যাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছে, তাদের সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল যা বলেছিলেন, সেই বিষয়ের সত্যতা সম্বন্ধে আপনি ক্রমাগত অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন: “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।”—ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.

আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?

• আমাদের প্রার্থনার বিভিন্ন ধরন কী?

• কীভাবে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত?

• আমাদের প্রার্থনায় আমরা কোন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে পারি?

• একজন ব্যক্তি যখন পাপ করেন, তখন প্রার্থনার কোন ভূমিকা রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আন্তরিক প্রার্থনা আমাদেরকে প্রলোভনে না পড়তে সাহায্য করে

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

প্রার্থনার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা, চিন্তা ও যাচ্ঞার কথা প্রকাশ করি