সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যেভাবে ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ নিকটবর্তী হওয়া যায়

যেভাবে ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ নিকটবর্তী হওয়া যায়

যেভাবে ‘প্রার্থনা-শ্রবণকারীর’ নিকটবর্তী হওয়া যায়

“হে প্রার্থনা-শ্রবণকারী, তোমারই কাছে মর্ত্ত্যমাত্র আসিবে।”—গীতসংহিতা ৬৫:২.

১. কী মানুষকে পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টি থেকে পৃথক করে আর এটা কোন সুযোগ প্রদান করে?

 পৃথিবীর হাজার হাজার জীবিত প্রাণীর মধ্যে কেবল মানুষেরই সৃষ্টিকর্তাকে উপাসনা করার ক্ষমতা রয়েছে। শুধু মানুষই আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্বন্ধে সচেতন এবং তা পূরণ করার আকাঙ্ক্ষা বোধ করে থাকে। এটা আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখার চমৎকার সুযোগ প্রদান করে।

২. সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে একজন মানুষের সম্পর্কের ওপর পাপ কোন প্রতিকূল প্রভাব ফেলেছিল?

ঈশ্বর মানুষকে তার নির্মাতার নিকটবর্তী হওয়ার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আদম ও হবাকে পাপহীন অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছিল। তাই, একটা সন্তান যেমন স্বচ্ছন্দে তার বাবার নিকটবর্তী হতে পারে, তেমনই তারা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারত। কিন্তু, পাপের কারণে তাদের সেই মহান সুযোগ নিয়ে নেওয়া হয়। আদম ও হবা ঈশ্বরের অবাধ্য হয় এবং তাঁর সঙ্গে তাদের নিকট সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে। (আদিপুস্তক ৩:৮-১৩, ১৭-২৪) এর অর্থ কি এই যে, আদমের অসিদ্ধ বংশধররা আর ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে না? না, যিহোবা এখনও তাদেরকে তাঁর নিকটবর্তী হতে দেন কিন্তু একমাত্র যদি তারা কিছু চাহিদা পূরণ করে থাকে। সেই চাহিদাগুলো কী?

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য যে-চাহিদাগুলোর প্রয়োজন

৩. কীভাবে পাপী মানুষদের ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া উচিত আর কোন উদাহরণ এটা তুলে ধরে?

আদমের দুজন সন্তানের সঙ্গে যুক্ত একটা ঘটনা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, ঈশ্বর সেই অসিদ্ধ মানুষের কাছ থেকে কী চান, যে তাঁর নিকটবর্তী হতে চায়। কয়িন ও হেবল উভয়ই ঈশ্বরের কাছে বলি উৎসর্গ করে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার প্রচেষ্টা করেছিল। হেবলের বলি গ্রহণ করা হয়েছিল কিন্তু কয়িনেরটা করা হয়নি। (আদিপুস্তক ৪:৩-৫) পার্থক্যটা কী ছিল? ইব্রীয় ১১:৪ পদ বলে: “বিশ্বাসে হেবল ঈশ্বরের উদ্দেশে কয়িন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ উৎসর্গ করিলেন, এবং তদ্দ্বারা তাঁহার পক্ষে এই সাক্ষ্য দেওয়া হইয়াছিল যে, তিনি ধার্ম্মিক।” তা হলে, স্পষ্টতই গ্রহণযোগ্য উপায়ে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার একটা চাহিদা হল বিশ্বাস। আরেকটা চাহিদা কয়িনের প্রতি বলা যিহোবার কথাগুলোর মধ্যে দেখা যায়: “যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না?” হ্যাঁ, কয়িন যেভাবে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হয়েছিল, তা গ্রহণ করা হতো যদি কয়িন সদাচরণ করত। কিন্তু, কয়িন ঈশ্বরের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করে হেবলকে হত্যা করেছিল এবং সমাজ থেকে বহিষ্কৃত এক ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৪:৭-১২) এভাবে, মানব ইতিহাসের শুরুতেই বিশ্বাস সহকারে ও সেইসঙ্গে সদাচরণ করার মাধ্যমে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।

৪. ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার বিষয়ে আমাদের কী স্বীকার করা উচিত?

আমরা যদি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে চাই, তা হলে নিজেদের পাপপূর্ণ অবস্থা সম্বন্ধে স্বীকার করা আবশ্যক। সমস্ত মানুষই পাপী আর ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার ক্ষেত্রে পাপ হল এক বাধাস্বরূপ। ভাববাদী যিরমিয় ইস্রায়েল সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “আমরা অধর্ম্ম . . . করিয়াছি; . . . তুমি মেঘে আপনাকে আচ্ছাদন করিয়াছ, প্রার্থনা তাহা ভেদ করিতে পারে না।” (বিলাপ ৩:৪২, ৪৪) তা সত্ত্বেও, মানব ইতিহাস জুড়ে ঈশ্বর দেখিয়েছেন যে, তিনি সেই লোকেদের প্রার্থনা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, যারা বিশ্বাস ও হৃদয়ের সঠিক মনোভাব সহকারে তাঁর নিকটবর্তী হয় এবং তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করে। (গীতসংহিতা ১১৯:১৪৫) এদের মধ্যে কয়েক জন ব্যক্তি কারা আর তাদের প্রার্থনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

৫, ৬. অব্রাহাম যেভাবে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হয়েছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

এইরকম একজন ব্যক্তি ছিলেন অব্রাহাম। তিনি যেভাবে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হয়েছিলেন, তা গ্রহণ করা হয়েছিল কারণ ঈশ্বর অব্রাহামকে “আমার বন্ধু” বলে সম্বোধন করেছিলেন। (যিশাইয় ৪১:৮) অব্রাহাম যেভাবে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হয়েছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি? এই বিশ্বস্ত কুলপতি এক উত্তরাধিকারী সম্বন্ধে যিহোবাকে এভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুমি আমাকে কি দিবে? আমি ত নিঃসন্তান হইয়া প্রয়াণ করিতেছি।” (আদিপুস্তক ১৫:২, ৩; ১৭:১৮) আরেকবার, ঈশ্বর যখন সদোম ও ঘমোরার দুষ্ট লোকেদের ওপর বিচার নিয়ে আসেন, তখন কারা রক্ষা পাবে সেই সম্বন্ধে তিনি তার উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৮:২৩-৩৩) এ ছাড়া, অব্রাহাম অন্যদের জন্যও বিনতি করেছিলেন। (আদিপুস্তক ২০:৭, ১৭) আর হেবলের মতো অব্রাহামও মাঝে মাঝে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করার মাধ্যমে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতেন।—আদিপুস্তক ২২:৯-১৪.

এইসমস্ত মুহূর্তগুলোতে, অব্রাহাম যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেছিলেন। কিন্তু, খোলাখুলিভাবে কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার সামনে তার অবস্থানের প্রতি তার নম্র দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল। আদিপুস্তক ১৮:২৭ পদে পাওয়া তার সম্মানপূর্ণ কথাগুলো লক্ষ করুন: “দেখুন, ধূলি ও ভস্মমাত্র যে আমি, আমি প্রভুর সঙ্গে কথা কহিতে সাহসী হইয়াছি।” অনুকরণ করার মতো কী এক উত্তম মনোভাব!

৭. কুলপতিরা কোন কোন বিষয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিল?

কুলপতিরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রার্থনা করেছিল আর তাদের প্রার্থনা যিহোবা আগ্রহ সহকারে শুনেছিলেন। যাকোব মানতের আকারে প্রার্থনা করেছিলেন। ঈশ্বরের সাহায্য চাওয়ার পর তিনি গুরুগম্ভীরভাবে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “তুমি আমাকে যে কিছু দিবে, তাহার দশমাংশ আমি তোমাকে অবশ্য দিব।” (আদিপুস্তক ২৮:২০-২২) পরবর্তী সময়ে তিনি যখন তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিলেন, তখন যাকোব সুরক্ষার জন্য যিহোবার কাছে এই অনুনয় করেছিলেন: “বিনয় করি, আমার ভ্রাতার হস্ত হইতে, এষৌর হস্ত হইতে আমাকে রক্ষা কর, কেননা আমি তাহাকে ভয় করি।” (আদিপুস্তক ৩২:৯-১২) কুলপতি ইয়োব তার পরিবারের জন্য যিহোবার নিকটবর্তী হয়েছিলেন, তাদের জন্য বলি উৎসর্গ করেছিলেন। ইয়োবের তিন বন্ধু যখন তাদের কথাবার্তার মাধ্যমে পাপ করেছিল, তখন ইয়োব তাদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন আর “সদাপ্রভু ইয়োবকে গ্রাহ্য করিলেন।” (ইয়োব ১:৫; ৪২:৭-৯) এই বিবরণগুলো আমাদের সেই বিষয়গুলো শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যেগুলো সম্বন্ধে আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি। আমরা এও দেখি যে, যিহোবা তাদের প্রার্থনা গ্রহণ করতে তৈরি আছেন, যারা সঠিক উপায়ে তাঁর নিকটবর্তী হয়।

ব্যবস্থা চুক্তির অধীনে

৮. ব্যবস্থা চুক্তির অধীনে কীভাবে বিভিন্ন বিষয়কে লোকেদের পক্ষ থেকে যিহোবার কাছে নিয়ে আসা হতো?

যিহোবা ইস্রায়েলকে মিশর থেকে উদ্ধার করার পর, তিনি তাদেরকে ব্যবস্থা চুক্তি দিয়েছিলেন। ব্যবস্থার মধ্যে নিযুক্ত এক যাজকবর্গের মাধ্যমে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার পদ্ধতি সম্বন্ধে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছিল। কিছু লেবীয়কে লোকেদের জন্য যাজক হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যখন জাতিগত কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখা দিত, তখন লোকেদের একজন প্রতিনিধি—মাঝে মাঝে কোনো রাজা অথবা একজন যাজক—বিষয়টা নিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন। (১ শমূয়েল ৮:২১, ২২; ১৪:৩৬-৪১; যিরমিয় ৪২:১-৩) উদাহরণস্বরূপ, মন্দির উৎসর্গের সময় রাজা শলোমন আন্তরিক প্রার্থনায় যিহোবার নিকটবর্তী হয়েছিলেন। ফলস্বরূপ, যিহোবা যে শলোমনের প্রার্থনা গ্রহণ করেছিলেন, তা তিনি তাঁর মন্দিরকে প্রতাপে পরিপূর্ণ করার এবং এই কথা বলার মাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন: “এই স্থানে যে প্রার্থনা হইবে, তাহার প্রতি . . . আমার . . . কর্ণ অবহিত থাকিবে।”—২ বংশাবলি ৬:১২–৭:৩, ১৫.

৯. পবিত্র স্থানে সঠিকভাবে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য কীসের প্রয়োজন ছিল?

ইস্রায়েলকে যে-ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে যিহোবা পবিত্র স্থানে গ্রহণযোগ্য উপায়ে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার একটা চাহিদা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সেটা কী ছিল? রোজ সকালে ও সন্ধ্যায় পশুবলি উৎসর্গ করা ছাড়াও মহাযাজককে যিহোবার উদ্দেশে সুগন্ধি ধূপ জ্বালাতে হতো। পরে, সহযাজকরাও প্রায়শ্চিত্তের দিন বাদে অন্যান্য দিনে এই সেবা প্রদান করত। যাজকরা যদি এই ধরনের সম্মানপূর্ণ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন না করত, তা হলে যিহোবা তাদের পরিচর্যায় খুশি হতেন না।—যাত্রাপুস্তক ৩০:৭, ৮; ২ বংশাবলি ১৩:১১.

১০, ১১. যিহোবা যে ব্যক্তি বিশেষের প্রার্থনা শোনেন, তার কোন প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে?

১০ প্রাচীন ইস্রায়েলে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া কি কেবল নিযুক্ত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সম্ভব ছিল? না, শাস্ত্র দেখায় যে বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রার্থনা গ্রহণ করতে পেরেও যিহোবা খুশি ছিলেন। মন্দির উৎসর্গের সময় শলোমন তার প্রার্থনায় যিহোবার কাছে এই বলে মিনতি করেছিলেন: “কোন ব্যক্তি বা তোমার সমস্ত প্রজা ইস্রায়েল, . . . গৃহের দিকে যদি অঞ্জলি বিস্তার করিয়া কোন প্রার্থনা কি বিনতি করে; তবে তুমি . . . স্বর্গ হইতে তাহা শুনিও।” (২ বংশাবলি ৬:২৯, ৩০) লূকের বিবরণ আমাদের বলে যে, যোহন বাপ্তাইজকের বাবা সখরিয় যখন পবিত্র স্থানে ধূপদাহ করছিলেন, তখন যিহোবার অযাজকীয় অসংখ্য উপাসক “বাহিরে থাকিয়া প্রার্থনা” করছিল। স্পষ্টতই, স্বর্ণময় বেদিতে যিহোবার কাছে ধূপদাহ করার সময়, প্রার্থনার জন্য পবিত্র স্থানের বাইরে একত্রিত হওয়া, লোকেদের জন্য একটা রীতি হয়ে উঠেছিল।—লূক ১:৮-১০.

১১ তাই, যখন সঠিক উপায়ে যিহোবার নিকটবর্তী হতো, তখন তিনি পুরো জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করত এমন লোকেদের ও সেইসঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করত এমন ব্যক্তি বিশেষের যাচ্ঞাগুলো আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতেন। আজকে, আমরা আর ব্যবস্থা চুক্তির অধীন নই। তা সত্ত্বেও, প্রাচীনকালের ইস্রায়েলীয়রা যেসমস্ত উপায়ে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতো, সেগুলো থেকে প্রার্থনা সম্বন্ধে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি।

খ্রিস্টীয় ব্যবস্থার অধীনে

১২. খ্রিস্টানদের জন্য যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার কোন ব্যবস্থা রয়েছে?

১২ বর্তমানে আমরা খ্রিস্টীয় ব্যবস্থার অধীনে বাস করি। এখন আর কোনো আক্ষরিক মন্দির নেই, যেখানে যাজকরা ঈশ্বরের সমস্ত লোককে প্রতিনিধিত্ব করে অথবা যেটির দিকে আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময় তাকাতে পারি। তা সত্ত্বেও, আমরা যেন তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি, সেইজন্য এখনও যিহোবার একটা ব্যবস্থা রয়েছে। সেটা কী? সা.কা. ২৯ সালে খ্রিস্ট যখন অভিষিক্ত হয়েছিলেন এবং মহাযাজক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন, তখন এক আত্মিক মন্দির কাজ করতে শুরু করেছিল। * এই আত্মিক মন্দিরই ছিল যিশু খ্রিস্টের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্তের ভিত্তিতে উপাসনায় যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার নতুন ব্যবস্থা।—ইব্রীয় ৯:১১, ১২.

১৩. প্রার্থনা সম্বন্ধে যিরূশালেম মন্দির ও আত্মিক মন্দিরের মধ্যে একটা সাদৃশ্য কী?

১৩ যিরূশালেম মন্দিরের অনেক বৈশিষ্ট্য উপযুক্তভাবেই আত্মিক মন্দিরের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে, যেগুলোর মধ্যে প্রার্থনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোও রয়েছে। (ইব্রীয় ৯:১-১০) উদাহরণস্বরূপ, মন্দিরের পবিত্র স্থানে ধূপবেদির ওপর সকালে ও সন্ধ্যায় যে-ধূপদাহ করা হতো, সেই ধূপ দ্বারা কোন বিষয়টাকে চিত্রিত করা হয়েছিল? প্রকাশিত বাক্য বই অনুসারে, “ধূপ পবিত্রগণের প্রার্থনাস্বরূপ।” (প্রকাশিত বাক্য ৫:৮; ৮:৩, ৪) দায়ূদ লিখতে অপ্রাণিত হয়েছিলেন: “আমার প্রার্থনা তোমার সম্মুখে সুগন্ধি ধূপরূপে, . . . সাজান হউক।” (গীতসংহিতা ১৪১:২) তাই, খ্রিস্টীয় ব্যবস্থায় সুগন্ধি ধূপ উপযুক্তভাবেই যিহোবার উদ্দেশে গ্রহণযোগ্য প্রার্থনা ও প্রশংসাকে চিত্রিত করে।—১ থিষলনীকীয় ৩:১০.

১৪, ১৫. (ক) অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের? (খ) ‘আরও মেষের’ যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে?

১৪ কারা এই আত্মিক মন্দিরে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারে? আক্ষরিক মন্দিরে যাজক ও লেবীয়দের ভিতরের প্রাঙ্গণে সেবা করার বিশেষ সুযোগ ছিল কিন্তু কেবল যাজকরাই পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে পারত। স্বর্গীয় আশাসম্পন্ন অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা ভিতরের প্রাঙ্গণ ও পবিত্র স্থানের দ্বারা চিত্রিত এক অদ্বিতীয় আধ্যাত্মিক অবস্থা উপভোগ করে, যা তাদেরকে ঈশ্বরের উদ্দেশে প্রার্থনা ও তাঁর প্রশংসা করতে সমর্থ করে।

১৫ যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, সেই “আরও মেষ” সম্বন্ধে কী বলা যায়? (যোহন ১০:১৬) ভাববাদী যিশাইয় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, “শেষকালে” অনেক জাতির লোক যিহোবার উপাসনা করার জন্য আসবে। (যিশাইয় ২:২, ৩) তিনি এও লিখেছিলেন যে, “বিজাতি-সন্তানগণ” যিহোবার সঙ্গে যোগ দেবে। তাদের নিকটবর্তী হওয়াকে যে তিনি গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, সেটার ইঙ্গিত দিয়ে ঈশ্বর বলেছিলেন: “তাহাদিগকে আমি . . . আমার প্রার্থনা-গৃহে আনন্দিত করিব।” (যিশাইয় ৫৬:৬, ৭) প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৫ পদ আরও বিস্তারিত বর্ণনা দেয় ও “প্রত্যেক জাতির” মধ্যে থেকে আসা এক “বিস্তর লোক” সম্বন্ধে বলে, যারা আত্মিক মন্দিরের বহিস্থ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে “দিবারাত্র” ঈশ্বরের প্রতি উপাসনার ও প্রার্থনার জন্য একত্রিত হয়। এটা কতই না সান্ত্বনাজনক বিষয় যে, ঈশ্বরের সমস্ত দাস আজকে এই পূর্ণ আস্থা সহকারে স্বচ্ছন্দে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারে যে, তিনি তাদের প্রার্থনা শোনেন!

কোন প্রার্থনাগুলো গ্রহণ করা হয়?

১৬. প্রাথমিক খ্রিস্টানদের কাছ থেকে প্রার্থনা সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি?

১৬ প্রাথমিক খ্রিস্টানরা সবসময় প্রার্থনা করত। কোন বিষয়গুলোর জন্য তারা প্রার্থনা করত? খ্রিস্টান প্রাচীনরা সাংগঠনিক দায়িত্বগুলোর জন্য পুরুষদের বাছাই করার সময় নির্দেশনা চাইত। (প্রেরিত ১:২৪, ২৫; ৬:৫, ৬) ইপাফ্রা সহবিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। (কলসীয় ৪:১২) যিরূশালেমের মণ্ডলীর সদস্যরা পিতরের জন্য প্রার্থনা করেছিল, যখন তিনি বন্দি ছিলেন। (প্রেরিত ১২:৫) প্রাথমিক খ্রিস্টানরা বিরোধিতার মুখে তাদেরকে সাহস প্রদান করার জন্য এই বলে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিল: “হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], উহাদের ভয়প্রদর্শনের প্রতি দৃষ্টিপাত কর; এবং তোমার এই দাসদিগকে সম্পূর্ণ সাহসের সহিত তোমার বাক্য বলিবার ক্ষমতা দেও।” (প্রেরিত ৪:২৩-৩০) শিষ্য যাকোব পরীক্ষার সময় প্রজ্ঞা চেয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার জন্য খ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। (যাকোব ১:৫) যিহোবার কাছে যাচ্ঞা করার সময় আপনি কি এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেন?

১৭. যিহোবা কাদের প্রার্থনা গ্রহণ করেন?

১৭ ঈশ্বর সমস্ত প্রার্থনা গ্রহণ করেন না। তা হলে, কীভাবে আমরা এই আস্থা সহকারে প্রার্থনা করতে পারি যে, আমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করা হবে? পূর্বে যে-বিশ্বস্ত লোকেদের প্রার্থনা ঈশ্বর শুনেছিলেন, তারা আন্তরিকতা ও হৃদয়ের সঠিক মনোভাব সহকারে তাঁর নিকটবর্তী হয়েছিল। তারা বিশ্বাস দেখিয়েছিল এবং এর সঙ্গে সঙ্গে উত্তম কাজও করেছিল। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের কথা শুনবেন, যারা আজকে একইভাবে তাঁর নিকটবর্তী হয়।

১৮. খ্রিস্টানদের প্রার্থনা যাতে শোনা হয়, সেইজন্য তাদেরকে কোন চাহিদা অবশ্যই পূরণ করতে হবে?

১৮ আরও একটা চাহিদা রয়েছে। প্রেরিত পৌল এই বলে সেটা ব্যাখ্যা করেছিলেন: “তাঁহারই দ্বারা আমরা . . . এক আত্মায় পিতার নিকটে উপস্থিত হইবার ক্ষমতা পাইয়াছি।” পৌল যখন লিখেছিলেন “তাঁহারই দ্বারা,” তখন তিনি কাকে বুঝিয়েছিলেন? যিশু খ্রিস্টকে। (ইফিষীয় ২:১৩, ১৮) হ্যাঁ, একমাত্র যিশুর মাধ্যমেই আমরা স্বচ্ছন্দে পিতার নিকটবর্তী হতে পারি।—যোহন ১৪:৬; ১৫:১৬; ১৬:২৩, ২৪.

১৯. (ক) ইস্রায়েলের ধূপদাহ কখন যিহোবার কাছে ঘৃণ্য হয়ে উঠেছিল? (খ) কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, আমাদের প্রার্থনা যিহোবার কাছে সুগন্ধি ধূপের মতো?

১৯ ইতিমধ্যেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, ইস্রায়েলীয় যাজকরা যে-ধূপদাহ করত, তা ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের গ্রহণযোগ্য প্রার্থনাকে চিত্রিত করে। কিন্তু, মাঝে মাঝে ইস্রায়েলীয়দের ধূপদাহ যিহোবার কাছে ঘৃণ্য ছিল। এটা সেই সময়ে সত্য হয়েছিল, যখন ইস্রায়েলীয়রা মন্দিরে ধূপদাহ করছিল এবং একইসঙ্গে প্রতিমার কাছে প্রণিপাত করছিল। (যিহিষ্কেল ৮:১০, ১১) একইভাবে আজকেও যারা যিহোবাকে সেবা করে বলে দাবি করে ও একইসঙ্গে এমন কাজগুলো করে চলে, যা তাঁর আইনগুলোর সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে, তাদের প্রার্থনা তাঁর কাছে ঘৃণ্য ঘ্রাণের মতো। (হিতোপদেশ ১৫:৮) তা হলে, আসুন আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটা দিককে শুচি রেখে চলি, যাতে আমাদের প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে সুগন্ধি ধূপের মতো হয়। যারা তাঁর ধার্মিক পথে চলে, যিহোবা তাদের প্রার্থনা শুনে আনন্দিত হন। (যোহন ৯:৩১) কিন্তু, কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। কীভাবে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত? কীসের জন্য আমরা প্রার্থনা করতে পারি? আর কীভাবে ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন? আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধ এই প্রশ্নগুলোর ও সেইসঙ্গে অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর দেবে।

[পাদটীকা]

^ ২০০১ সালের ১৫ই মে প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ২৭ পৃষ্ঠা দেখুন।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• কীভাবে অসিদ্ধ মানুষ গ্রহণযোগ্য উপায়ে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারে?

• আমাদের প্রার্থনায় কীভাবে আমরা কুলপতিদের অনুকরণ করতে পারি?

• প্রাথমিক খ্রিস্টানদের প্রার্থনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

• কখন আমাদের প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে সুগন্ধি ধূপের মতো হয়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

কেন ঈশ্বর হেবলের বলি গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু কয়িনেরটা করেননি?

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

“ধূলি ও ভস্মমাত্র যে আমি”

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

“তাহার দশমাংশ আমি তোমাকে অবশ্য দিব”

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার প্রার্থনা কি যিহোবার কাছে সুগন্ধি ধূপের মতো?