যে-উপাসনা আপনার জন্য উপকারজনক
যে-উপাসনা আপনার জন্য উপকারজনক
“ঈশ্বরের নিকটে থাকা আমারই পক্ষে মঙ্গল,” গীতরচক আসফ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি সেই ব্যক্তিদের অনুকরণ করা উপকারজনক বলে মনে করেছিলেন, যারা আরাম-আয়েশের জীবন অনুধাবন করতে গিয়ে ঈশ্বরের সম্বন্ধে উদাসীন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু পরে আসফ ঈশ্বরের নিকটে থাকার উপকারিতা সম্বন্ধে চিন্তা করেছিলেন এবং এই উপসংহারে এসেছিলেন যে, সেটাই ছিল তার পক্ষে মঙ্গলজনক। (গীতসংহিতা ৭৩:২, ৩, ১২, ২৮) আজকেও কি সত্য উপাসনা আপনার জন্য উপকারজনক? এটা আপনাকে কীভাবে উপকৃত করতে পারে?
সত্য ঈশ্বরকে উপাসনা করা আপনাকে সম্পূর্ণরূপে আত্মকেন্দ্রিক এক জীবনধারা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে। যেহেতু ‘প্রেমের ঈশ্বরের’ দ্বারা আমরা সৃষ্ট হয়েছি, তাই যারা শুধুমাত্র স্বার্থের পিছনে ছোটে তারা কখনো সুখী হতে পারে না। (২ করিন্থীয় ১৩:১১) মানুষের স্বভাব সম্বন্ধে যিশু এক মৌলিক সত্য শিক্ষা দিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “পাওয়ার চেয়ে দেওয়ারই মধ্যে বেশি সুখ।” (প্রেরিত [শিষ্যচরিত] ২০:৩৫, বাংলা জুবিলী বাইবেল) এইজন্যই আমাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের জন্য কাজ করা আমরা উপভোগ করি। কিন্তু ঈশ্বরের জন্য কাজ করা প্রচুর সুখ নিয়ে আসে। তিনি অন্য যেকারো চেয়ে আরও বেশি আমাদের ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য। বিভিন্ন পটভূমির লক্ষ লক্ষ লোক ঈশ্বর যেভাবে চান সেইভাবে তাঁকে উপাসনা করার দ্বারা গভীর পরিতৃপ্তি খুঁজে পেয়েছে।—১ যোহন ৫:৩.
জীবনে এক উদ্দেশ্য পাওয়া
এ ছাড়া, সত্য উপাসনা আপনার জন্য উপকারজনক কারণ এটা আপনার জীবনে এক উদ্দেশ্য এনে দেয়। আপনি কি লক্ষ করেছেন যে, মূল্যবান কোনোকিছু লাভ করলে প্রায়ই সুখ পাওয়া যায়? বেশির ভাগ লোকের জীবনে একটা লক্ষ্য রয়েছে, তা সেটা পরিবার, বন্ধুবান্ধব, ব্যাবসা অথবা আমোদপ্রমোদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যা-ই হোক না কেন। জীবনের অনিশ্চয়তাগুলোর কারণে, এই বিষয়গুলো প্রায়ই তাদেরকে সুখী করতে ব্যর্থ হয়। (উপদেশক ৯:১১) কিন্তু, সত্য উপাসনা আপনাকে আরও মহৎ উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে, যা এমনকি তখনও পরিতৃপ্তিদায়ক হয়ে থাকে, যখন জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্র হতাশাজনক বলে প্রমাণিত হয়।
সত্য উপাসনার সঙ্গে যিহোবাকে জানা এবং তাঁকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করা জড়িত। যারা তা করে চলে, তারা ঈশ্বরের খুবই নিকটবর্তী হয়। (উপদেশক ১২:১৩; যোহন ৪:২৩; যাকোব ৪:৮) ঈশ্বরকে আপনি এত ভালভাবে জানতে পারেন যে, তিনি আপনার বন্ধু হয়ে ওঠেন, এইরকম চিন্তা করা আপনার কাছে কঠিন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু লোকেদের সঙ্গে তাঁর আচরণ সম্বন্ধীয় বিবরণ গভীরভাবে চিন্তা করা ও তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তা বিবেচনা করার দ্বারা, আপনি তাঁর ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক উপলব্ধি করতে পারবেন। (রোমীয় ১:২০) অধিকন্তু, ঈশ্বরের বাক্য পড়ার দ্বারা আপনি বুঝতে পারবেন যে কেন আমরা এখানে আছি, কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট ভোগ করতে দেন, কীভাবে তিনি দুঃখকষ্ট শেষ করবেন এবং সম্ভবত সবচেয়ে আগ্রহজনক বিষয়টি হল যে, ঈশ্বর যা করছেন তাতে আপনি কীভাবে এক অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন? (যিশাইয় ৪৩:১০; ১ করিন্থীয় ৩:৯) এই ধরনের বোধগম্যতা আপনাকে বেঁচে থাকার জন্য এক নতুন প্রেরণা জোগাতে পারে!
আরও ভাল এক ব্যক্তি হয়ে ওঠা
সত্য উপাসনা আপনার জন্য উপকারজনক কারণ এটা আপনাকে আরও ভাল ব্যক্তি হয়ে উঠতে সাহায্য করে। আপনি যখন সত্য উপাসনা করে চলেন, তখন আপনি এমন এক ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলেন যা অন্যদের সঙ্গে আপনাকে আরও সুখী সম্পর্কের দিকে পরিচালিত করে। আপনি ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের কাছ থেকে সৎভাবে চলতে, সদয়ভাবে কথা বলতে ও দায়িত্ববান হয়ে উঠতে শেখেন। (ইফিষীয় ৪:২০–৫:৫) যখন আপনি ঈশ্বরকে এতটাই ভালভাবে জানেন যে আপনি তাঁকে ভালবাসতে শুরু করেন, তখন তাঁকে অনুকরণ করার জন্য আপনি অনুপ্রেরণা বোধ করেন। বাইবেল বলে: “প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও আর প্রেমে চল।”—ইফিষীয় ৫:১, ২.
১ করিন্থীয় ১৪:৩৩) অন্যান্য লক্ষ লক্ষ লোকের মতো আপনিও হয়তো দেখেছেন যে, খ্রিস্টানদের এক সুসংগঠিত দলের সঙ্গে মেলামেশা করা আপনার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর মনোরম প্রভাব ফেলে।
ঈশ্বরের প্রেমকে যারা অনুকরণ করে তাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়া কি আনন্দের বিষয় হবে না? আনন্দের বিষয় হচ্ছে, সত্য ঈশ্বরের উপাসনা একা একা করার মতো কোনো কাজ নয়। এটা আপনাকে অন্যান্য ব্যক্তির সংস্পর্শে নিয়ে আসে, যারা যা সঠিক ও উপকারজনক তা-ই ভালবাসে। অবশ্য, আপনি হয়তো কোনো সংগঠিত ধর্মের ধারণাতে অস্বস্তিবোধ করতে পারেন। কিন্তু, আগের প্রবন্ধে আমরা যেমন দেখেছি যে, বেশির ভাগ ধর্ম যে সংগঠিত তাতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে তারা সঠিক পদ্ধতি ও সঠিক উদ্দেশ্যে সংগঠিত নয়। অনেক সংগঠিত ধর্ম অখ্রিস্টীয় উদ্দেশ্যসাধন করে। ঈশ্বরের লোকেরা এক মহৎ উদ্দেশ্যে স্বয়ং যিহোবার দ্বারা সংগঠিত। বাইবেল বলে: “ঈশ্বর গোলযোগের ঈশ্বর নহেন, কিন্তু শান্তির।” (ভবিষ্যতের জন্য আশা
পবিত্র শাস্ত্র দেখায় যে, ঈশ্বর সত্য উপাসকদের সংগঠিত করছেন যাতে তারা বর্তমান বিধিব্যবস্থার শেষ থেকে রক্ষা পেতে পারে এবং এক নতুন পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হতে পারে, যেখানে “ধার্ম্মিকতা বসতি করে।” (২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯-১৭) তাই, আপনার জন্য উপকারজনক উপাসনা আশা প্রদান করে, যা সুখের জন্য অপরিহার্য। কিছু লোক তাদের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশাগুলো সরকারের স্থিতিশীলতা, ব্যাবসার সম্ভাবনা অথবা উত্তম স্বাস্থ্য ও পরিতৃপ্তিদায়ক অবসর গ্রহণের আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে অল্প কয়েকটাই এক সুখী ভবিষ্যতের প্রত্যাশা করার এক দৃঢ় ভিত্তি জোগায়। অন্যদিকে, প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমরা সেই জীবন্ত ঈশ্বরের প্রত্যাশা করিয়া আসিতেছি।”—১ তীমথিয় ৪:১০.
যদি আপনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অন্বেষণ করেন, তা হলে আপনি সত্য উপাসকদের খুঁজে পেতে পারেন। বর্তমানে এই বিভক্ত পৃথিবীতে, প্রেম ও একতা যিহোবার সাক্ষিদের স্পষ্টভাবে আলাদা হিসেবে তুলে ধরে। তারা প্রায় সমস্ত জাতি ও পটভূমি থেকে এসেছে; তা সত্ত্বেও, তারা একে অন্যের এবং যিহোবার প্রতি প্রেমের দ্বারা একতাবদ্ধ। (যোহন ১৩:৩৫) তারা যা অভিজ্ঞতা লাভ করেছে তা আপনাকে নিজে থেকে আবিষ্কার করার জন্য তারা আপনাকে আমন্ত্রণ জানায়। আসফ লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের নিকটে থাকা আমারই পক্ষে মঙ্গল।”—গীতসংহিতা ৭৩:২৮.
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি ঈশ্বরের বন্ধু হতে পারেন