অনন্তজীবনের জন্য মানুষের অনুসন্ধান
অনন্তজীবনের জন্য মানুষের অনুসন্ধান
প্রাচীনকাল থেকেই, মানবজাতি চিরকাল বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু, সেই স্বপ্ন কেবল স্বপ্নই রয়ে গিয়েছে—কেউই মৃত্যুকে জয় করার মতো কোনো উপায় খুঁজে পায়নি। তবে সম্প্রতি, চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা এই আশাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে যে, মানুষের আয়ুকে লক্ষণীয়ভাবে বাড়ানো হয়তো সত্যিই সম্ভব হবে। এই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্র বিবেচনা করুন।
জীববিজ্ঞানীরা কোষগুলোর নিজে নিজে পুনরুৎপাদিত হওয়ার সংখ্যাকে বাড়ানোর চেষ্টায় এনজাইম টেলোমারেস নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছে। বিজ্ঞানীরা জানে যে, পুরোনো, ক্ষয়শীল কোষগুলো মরে যায় এবং সেই জায়গায় নতুন নতুন কোষের জন্ম হয়। বস্তুতপক্ষে, একজন ব্যক্তির জীবনকালে বেশ কয়েকবার তার দেহের অধিকাংশ কোষই পুনর্নবীকৃত হয়ে থাকে। পুনর্নবীকরণের প্রক্রিয়াকে যদি দীর্ঘায়িত করা যেত, তা হলে গবেষকরা মনে করে যে, “মানব শরীর অনেক দীর্ঘ সময়—এমনকি অনন্তকাল—ধরে নিজে থেকেই পুনরুৎপন্ন হয়ে যেতে পারত।”
গবেষণার এক বিতর্কিত ক্ষেত্র, থেরাপিউটিক ক্লোনিং রোগীদের দেহে প্রতিস্থাপনের জন্য তত্ত্বগতভাবে নতুন এবং নিখুঁতভাবে প্রতিরূপ লিভার, কিডনি বা হার্টের মতো অঙ্গগুলো জোগাতে পারে, যেগুলোকে রোগীর দেহ বাতিল করে দিতে পারে না। এই প্রতিরূপ অঙ্গগুলো রোগীর নিজস্ব স্টেম সেল ব্যবহার করেই তৈরি করা যাবে।
ন্যানোটেকনোলজির গবেষকরা সেই সময়ের দিকে তাকিয়ে আছে, যখন ডাক্তাররা রক্তপ্রবাহে কোষের আকারের সমান রোবটগুলো প্রবেশ করাবে, যাতে সেগুলো ক্যান্সার কোষ ও ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়াগুলোকে খুঁজে ধ্বংস করে দিতে পারে। কেউ কেউ মনে করে যে, জিন থেরাপিসহ বিজ্ঞানের এই ক্ষেত্র, পরিশেষে মানব শরীরকে অনির্দিষ্টকাল ধরে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে।
ক্রায়োনিক্সের (হিমায়িতকরণ) সমর্থকরা মৃত ব্যক্তিদের দেহকে সংরক্ষণ করে রাখার জন্য তা হিমায়িত করে বরফে পরিণত করে রাখে। এই ধারণার উদ্দেশ্য হচ্ছে সেগুলোকে সেই পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা, যতক্ষণ না চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাফল্য ডাক্তারদেরকে রোগ নিরাময় করতে, বার্ধক্যের প্রভাবগুলোকে বিপরীতমুখী করতে এবং মৃতদের জীবন ও স্বাস্থ্য উভয়ই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম করে। আ্যমেরিকান জার্নাল অভ্ জেরিয়াট্রিক সাইকিয়েট্রি এই ধারণাকে “প্রাচীন মিশরীয়দের মৃতদেহকে মমি করার পদ্ধতির এক বর্তমান সংস্করণ” বলে উল্লেখ করে।
অমরত্ব লাভ করার জন্য মানুষের অবিরাম অনুসন্ধান দেখায় যে, তার অস্তিত্ব লোপ পাওয়ার ধারণাকে মেনে নেওয়া কতখানি কঠিন। মানবজাতির পক্ষে কি অনন্তজীবন লাভ করা আসলেই সম্ভব? এই বিষয়ে বাইবেল কী বলে? পরবর্তী প্রবন্ধ এর উত্তর দেবে।