সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাইবেল কি আপনার জীবনে খুব বেশি বাধানিষেধ আরোপ করে?

বাইবেল কি আপনার জীবনে খুব বেশি বাধানিষেধ আরোপ করে?

বাইবেল কি আপনার জীবনে খুব বেশি বাধানিষেধ আরোপ করে?

 “ছে লেবেলায় আমাকে বাইবেলের কোনো মান সম্বন্ধে শেখানো হয়নি। ঈশ্বরের কথা কখনোই উল্লেখ করা হয়নি,” ফিনল্যান্ডের একজন যুবক ব্যক্তি বর্ণনা করে। এইরকম এক পটভূমিতে বড় হওয়া আজকের দিনে বিরল কিছু নয়। অনেকে, বিশেষ করে অল্পবয়স্করা বাইবেলকে একেবারে সেকেলে বলে এবং এর উপদেশ জীবনে খুব বেশি বাধানিষেধ আরোপ করে বলে মনে করে। যারা বাইবেল অনুসারে চলতে চায়, তাদেরকে অন্যেরা এমন নিপীড়িত লোক হিসেবে দেখে থাকে, যাদের জীবন নানা নিষেধাজ্ঞা ও আদেশের দ্বারা জর্জরিত। তাই, অনেকে বইয়ের তাকে বাইবেল রেখে দিয়ে অন্য কোথাও নির্দেশনা খোঁজাকে শ্রেয় বলে মনে করে।

মূলত খ্রিস্টীয়জগতের গির্জাগুলোর দ্বারা নিপীড়িত হওয়ার দীর্ঘ ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে, বাইবেল সম্বন্ধে এইরকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকা যথাযথ। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ইতিহাসবেত্তা যে-সময়কে অন্ধকার যুগ বলে চিহ্নিত করেছে, সেই সময়ে ইউরোপের ক্যাথলিক গির্জা লোকেদের জীবনের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করেছিল। যেকেউ গির্জার বিরোধিতা করার স্পর্ধা দেখাত, তাকেই অত্যাচারের ও এমনকি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতো। পরবর্তীকালে উদ্ভূত প্রটেস্টান্ট গির্জাগুলোও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর বাধানিষেধ আরোপ করেছিল। বর্তমানে, “ক্যালভিনিস্ট” বা “পিউরিটান” শব্দগুলো শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ধর্মের অনুসারীদের কথাই মনে করিয়ে দেয় না কিন্তু এই ধরনের দলগুলোর সঙ্গে জড়িত কঠোর নিয়মানুবর্তিতার কথাও মনে করিয়ে দেয়। তাই, গির্জাগুলো পীড়নকর ছিল বলে লোকেরা ভুলভাবে এই উপসংহারে পৌঁছায় যে, বাইবেলের শিক্ষাগুলোও নিশ্চয়ই পীড়নকর।

সাম্প্রতিক শতাব্দীগুলোতে, অন্ততপক্ষে কিছু দেশে গির্জাগুলো লোকেদের জীবনের ওপর তাদের প্রভাব অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। পরম্পরাগত ধর্মীয় বিশ্বাসের পর পরই এই ধারণার জন্ম হয়েছে যে, কোনটা ঠিক ও কোনটা ভুল সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে লোকেদের নিজেদের অধিকার রয়েছে। এর ফল কী হয়েছে? অপরাধতত্ত্ব এবং বিচার সংক্রান্ত সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক আহ্‌তি লাইটিনেন ব্যাখ্যা করেন: “কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান হ্রাস পেয়েছে এবং কোনটা গ্রহণযোগ্য ও কোনটা গ্রহণযোগ্য নয়, সেই ক্ষেত্রে লোকেদের বোধশক্তি অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।” আশ্চর্যের বিষয় যে, এমনকি গির্জার নেতারাও এই ধারণার কাছে নতিস্বীকার করেছে। একজন বিশিষ্ট লুথারেন বিশপ বলেছিলেন: “আমি এই মতামতকে এড়িয়ে চলি যে, নৈতিকতার প্রশ্নগুলো বাইবেলের সাহায্যে অথবা কোনো ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা সমাধান করা যেতে পারে।”

অবাধ স্বাধীনতা কি কাম্য?

অবাধ স্বাধীনতার ধারণাটা আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে, বিশেষ করে অল্পবয়সিদের কাছে। অধিকাংশ লোকই নিজেদের কম বুদ্ধিমান হিসেবে বিবেচিত হতে দিতে বা কী করা উচিত ও কী করা উচিত নয়, সেই তালিকা অনুসারে চলতে পছন্দ করবে না। কিন্তু, প্রত্যেকেরই কি যা ইচ্ছে তা-ই করার জন্য স্বাধীনতা থাকা উচিত? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য, একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। একটা শহরের কথা কল্পনা করুন, যেখানে কোনো ট্র্যাফিক আইন নেই। গাড়ির চালকদের কোনো লাইসেন্স বা গাড়ি চালক হিসেবে পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। লোকেরা গতিসীমা, থামুন চিহ্ন, ট্র্যাফিক লাইট, একমুখী রাস্তা অথবা পথচারী পারাপারের বিষয় চিন্তা না করেই যেদিকে খুশি গাড়ি চালাতে পারে, এমনকি মাতাল অবস্থায়ও। এই ধরনের “স্বাধীনতা” কি কাম্য? অবশ্যই না! কারণ এর ফল হবে বিশৃঙ্খলা, বিভ্রান্তি এবং দুর্ঘটনা। যদিও ট্র্যাফিক আইন, লোকেদের স্বাধীনতার ওপর বাধানিষেধ আরোপ করে কিন্তু আমরা বুঝতে পারি যে, এই আইনগুলো চালক ও সেইসঙ্গে পথচারীদের রক্ষা করে।

একইভাবে, আমাদের কীভাবে জীবনযাপন করা উচিত সেই সম্পর্কে যিহোবা নির্দেশনা দেন। এটা আমাদের উপকৃত করে। এইরকম নির্দেশনা ছাড়া, আমাদের ওই বিষয়গুলো বার বার ভুল করার দ্বারা শিখতে হতো আর তা করতে গিয়ে, আমরা হয়তো নিজেদের ও অন্যদের ক্ষতি করতাম। এইরকম নৈতিক অরাজকতার এক পরিবেশ, ট্র্যাফিক আইনহীন এক শহরের মতোই অবাঞ্ছিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সত্য বিষয়টা হচ্ছে, আমাদের কোনো না কোনো ধরনের নিয়ম ও আইনের প্রয়োজন—এটা এমন একটা বিষয়, যা বেশির ভাগ লোকই অকপটে স্বীকার করে।

“আমার ভার লঘু”

ট্রাফিক আইনগুলোর সঙ্গে হয়তো এক দীর্ঘ ও বিস্তারিত নিয়মের তালিকা জড়িত থাকতে পারে—কিছু কিছু জায়গায় শুধুমাত্র গাড়ি পার্ক করার নিয়মগুলো দেখেই একজন অবাক হয়ে যাবেন। এর বৈসাদৃশ্যে, বাইবেল কোনো নিয়মের এক দীর্ঘ তালিকা প্রদান করে না। পরিবর্তে, এটা মৌলিক নীতিগুলো প্রদান করে আর সেগুলো বোঝাস্বরূপ বা পীড়নকর নয়। যিশু খ্রিস্ট তাঁর সমসাময়িক ব্যক্তিদের কাছে এক সনির্বন্ধ আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন: “হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। কারণ আমার যোঁয়ালি সহজ ও আমার ভার লঘু।” (মথি ১১:২৮, ৩০) করিন্থের খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যেখানে প্রভুর [“যিহোবার,” NW] আত্মা, সেইখানে স্বাধীনতা।”—২ করিন্থীয় ৩:১৭.

কিন্তু, সেই স্বাধীনতা অবাধ নয়। যিশু স্পষ্ট করে দেখিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের চাহিদা কিছু সাধারণ আজ্ঞাকে অন্তর্ভুক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “আমার আজ্ঞা এই, তোমরা পরস্পর প্রেম কর, যেমন আমি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি।” (যোহন ১৫:১২) প্রত্যেকেই যদি সেই আজ্ঞা পালন করত, তা হলে জীবন কেমন হতো, তা একটু কল্পনা করে দেখুন! তাই, খ্রিস্টানরা যে-স্বাধীনতা উপভোগ করে তা সীমাহীন নয়। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “আপনাদিগকে স্বাধীন জান; আর স্বাধীনতাকে দুষ্টতার আবরণ করিও না, কিন্তু আপনাদিগকে ঈশ্বরের দাস জান।”—১ পিতর ২:১৬.

তাই, যদিও খ্রিস্টানরা নিয়মকানুনের এক বিস্তারিত তালিকা দ্বারা আবদ্ধ নয়, তবুও তারা কোনটা ঠিক ও কোনটা ভুল, সেই সম্পর্কে তাদের নিজস্ব ধারণা অনুসারে কাজ করে না। মানুষের সেই নির্দেশনা প্রয়োজন, যা শুধুমাত্র ঈশ্বরই তাদেরকে দিতে পারেন। বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে: “মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” (যিরমিয় ১০:২৩) আমরা যদি ঈশ্বরের নির্দেশনা মেনে চলি, তা হলে আমরা প্রচুররূপে উপকৃত হব।—গীতসংহিতা ১৯:১১.

উপকারগুলোর মধ্যে একটা হল সুখ। উদাহরণস্বরূপ, শুরুতে বলা যুবক ব্যক্তিটি একজন চোর এবং মিথ্যাবাদী ছিল। এ ছাড়া, সে বাছবিচারহীনভাবে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত ছিল। বাইবেলের উচ্চ মানগুলো শেখার পর, সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করার জন্য সে তার জীবনধারাকে পরিবর্তন করেছিল। “যদিও আমি বাইবেলের সমস্ত মান তৎক্ষণাৎ মেনে চলতে পারিনি,” সে বলে, “কিন্তু, আমি সেগুলোর মূল্য বুঝতে পেরেছিলাম। আমার আগের জীবনধারা আমাকে এতটা সুখ দিতে পারেনি, যা এখন আমি উপভোগ করছি। বাইবেলের মানগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করা আপনার জীবনকে সাধাসিধে করে। আপনি জানেন যে, আপনার জীবন কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং কোনটা ঠিক ও কোনটা ভুল।”

লক্ষ লক্ষ লোকের একইরকম অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্যান্য উপকারের মধ্যে বাইবেলে পাওয়া নির্দেশনা হল একটা বিষয়, যেটা তাদেরকে মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে, কাজের প্রতি এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে, ক্ষতিকর অভ্যাসগুলোকে পরিত্যাগ করতে এবং আরও সুখী জীবনযাপন করতে সাহায্য করেছে। মার্কুস * নামে এক যুবক ব্যক্তি, যে বাইবেলের মানগুলো অনুযায়ী ও সেগুলো বাদ দিয়ে দুভাবেই জীবনযাপন করেছে, সে তার নিজের জীবন সম্পর্কে বলে: “বাইবেলের মানগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করার দ্বারা আমি আমার আত্মসম্মানকে বাড়াতে পেরেছি।” *

আপনি কোনটা বেছে নেবেন?

তা হলে, বাইবেল কি আপনার জীবনে বাধানিষেধ আরোপ করে? উত্তরটা হল হ্যাঁ—তবে আমাদের সকলের উপকারের জন্য। কিন্তু বাইবেল কি আপনার জীবনে খুব বেশি বাধানিষেধ আরোপ করে? উত্তর হল না। অবাধ স্বাধীনতা কেবল নানা সমস্যার দিকে পরিচালিত করতে পারে। বাইবেলের মানগুলো হল ভারসাম্যপূর্ণ আর সেগুলো আমাদের মঙ্গল ও সুখকে বৃদ্ধি করে। মার্কুস বলে: “সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, ঈশ্বরের বাক্য জীবনে প্রয়োগ করা বিজ্ঞতার কাজ। যদিও অধিকাংশ লোকের চেয়ে আমার জীবন অনেক দিক দিয়ে আলাদা, তবুও আমি কখনো এক মুহূর্তের জন্যও চিন্তা করি না যে আমার জীবন থেকে আমি মূল্যবান কিছু হারিয়েছি।”

যখন আপনি বাইবেলের মানগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করার আশীর্বাদ উপভোগ করতে শুরু করেন, তখন ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আপনার উপলব্ধি বৃদ্ধি পাবে। এটা এমনকি আরও মহত্তর আশীর্বাদের দিকে পরিচালিত করবে—আপনি এর ঐশিক উৎস, যিহোবা ঈশ্বরকে ভালবাসতে শুরু করবেন। “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।”—১ যোহন ৫:৩.

যিহোবা হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও স্বর্গীয় পিতা উভয়ই। তিনি জানেন যে, কোনটা আমাদের জন্য সর্বোত্তম। তাই আমাদের জীবনে বাধানিষেধ আরোপ করার পরিবর্তে, তিনি আমাদের মঙ্গলের জন্য আমাদেরকে প্রেমময় নির্দেশনা দেন। কাব্যিক ভাষায় যিহোবা আমাদের জোরালোভাবে পরামর্শ দেন: “আহা! তুমি কেন আমার আজ্ঞাতে অবধান কর নাই? করিলে তোমার শান্তি নদীর ন্যায়, তোমার ধার্ম্মিকতা সমুদ্র-তরঙ্গের ন্যায় হইত।”—যিশাইয় ৪৮:১৮.

[পাদটীকাগুলো]

^ নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

^ বাইবেলে বর্ণিত জীবনধারা সম্বন্ধে আরও তথ্য জানার জন্য, যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয় বইয়ের ১২ অধ্যায় দেখুন।

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু বলেছিলেন যে, ঈশ্বরের চাহিদাগুলো সতেজতাদায়ক হবে

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের নির্দেশনা মেনে চলা সুখ ও আত্মসম্মান নিয়ে আসে