সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়া কীভাবে?

ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়া কীভাবে?

ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়া কীভাবে?

কেউ কেউ হয়তো এই বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করতে পারে যে, ঈশ্বর আদৌ নিজেকে মানুষের কাছে প্রকাশ করতে আগ্রহী কি না। যদি হয়ে থাকেন, তা হলে কীভাবে তিনি তা প্রকাশ করেন?

 ষোড়শ শতাব্দীর প্রটেস্টান্ট সংস্কারক জন ক্যালভিন সঠিকভাবে এই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে, ঈশ্বর যদি মানবজাতির কাছে নিজেকে প্রকাশ না করেন, তা হলে মানুষ কখনো একা একা ঈশ্বরকে জানতে পারে না। কিন্তু, কেউ কেউ হয়তো ভেবে থাকে যে, ঈশ্বর আদৌ নিজেকে মানুষের কাছে প্রকাশ করতে আগ্রহী কি না। আর যদি হয়ে থাকেন, তা হলে কীভাবে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন?

“সৃষ্টিকর্ত্তা” যিহোবা যা কিছুই করেন, সমস্তকিছুর পিছনে একটা কারণ রয়েছে। এ ছাড়া, “সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বর” হিসেবে নিজ উদ্দেশ্যগুলো সম্পাদন করার পূর্ণ ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। (উপদেশক ১২:১; যাত্রাপুস্তক ৬:৩) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি মানুষের কাছে তাঁর উদ্দেশ্যগুলো প্রকাশ করতে ইচ্ছুক কারণ তাঁর ভাববাদী আমোষকে তিনি এই কথা লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “নিশ্চয়ই প্রভু সদাপ্রভু আপনার দাস ভাববাদিগণের নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না।” তবে লক্ষ করুন যে, ঈশ্বর তাঁর উদ্দেশ্যগুলো শুধুমাত্র তাঁর দাসদের কাছে, যারা তাঁকে আন্তরিকভাবে ভালবাসে, তাদের কাছেই প্রকাশ করেন বলে বলা হয়েছে। এটা কি যুক্তিসংগত নয়? আপনার গূঢ় বা গোপন বিষয়গুলো আপনি কার কাছে প্রকাশ করে থাকেন? যেকারো কাছে নাকি আপনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের কাছে?—আমোষ ৩:৭; যিশাইয় ৪০:১৩, ২৫, ২৬.

ঈশ্বরের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান নম্র ব্যক্তিদেরকে শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয়ে পূর্ণ করে আর তা উপযুক্তও। তবে, আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে ঐশিক প্রজ্ঞা ও জ্ঞান থেকে উপকৃত হতে চাই, তা হলে আমাদের শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয়ের চেয়ে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন। বাইবেল জোর দিয়ে বলে যে, ঈশ্বরের চিন্তাধারা জানার জন্য আমাদের এক নম্র হৃদয়ের প্রয়োজন: ‘আমার আজ্ঞা সকল তোমার কাছে সঞ্চয় কর। প্রজ্ঞার দিকে কর্ণপাত কর। বুদ্ধিতে মনোনিবেশ কর। সুবিবেচনাকে আহ্বান কর, বুদ্ধির জন্য উচ্চৈঃস্বর কর। রৌপ্যের ন্যায় তাহার অন্বেষণ কর।’—হিতোপদেশ ২:১-৪.

একজন নম্র ব্যক্তি, যিনি এই ধরনের প্রচেষ্টা করে থাকেন, তিনি বাস্তবিকই ঈশ্বরকে জানতে পারবেন। হিতোপদেশ বইয়ের সেই বাক্যাংশ বলে চলে: “সদাপ্রভুই প্রজ্ঞা দান করেন, তাঁহারই মুখ হইতে জ্ঞান ও বুদ্ধি নির্গত হয়।” হ্যাঁ, আন্তরিকভাবে যারা সত্য অন্বেষণ করে, তারা ‘ধার্ম্মিকতা ও বিচার, ন্যায় ও সমস্ত উত্তম পথ বুঝিতে’ পারে।—হিতোপদেশ ২:৬-৯.

সত্যের অন্বেষণে

দি এনসাইক্লোপিডিয়া অভ্‌ রিলিজিয়ন বলে: “মানুষের জীবনকে বাস্তব ও অবাস্তব, ক্ষমতাবান ও ক্ষমতাহীন, অকৃত্রিম ও প্রতারণাপূর্ণ, বিশুদ্ধ ও কলুষিত, স্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর এবং সেইসঙ্গে যে-পর্যায়ে ন্যায়-অন্যায়ের ধরাবাঁধা নিয়ম নেই, এমন বিষয়গুলোর মধ্যে পার্থক্য করার স্পষ্ট চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।” এই চাহিদাকে পূরণ করার জন্য মানুষ দীর্ঘসময় ধরে সত্য অন্বেষণ করছে। আর তারা যতই যিহোবার প্রতি তাদের অনুসন্ধান চালিয়েছে, যাঁকে গীতরচক “সত্যের ঈশ্বর” বলেছেন, ততই তারা খোঁজার ব্যাপারে উন্নতি করেছে।—গীতসংহিতা ৩১:৫.

মূল ইব্রীয় ভাষায় যিহোবা নামের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে, “তিনি অস্তিত্বে আনেন।” (আদিপুস্তক ২:৪, পাদটীকা, NW) তাই, ঈশ্বরের নামের অর্থই সৃষ্টিকর্তা হিসেবে তাঁর ভূমিকার ও তাঁর উদ্দেশ্যের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করায়। বাস্তবে, যিহোবার নাম জানা ও ব্যবহার করা সত্য ধর্মের এক শনাক্তিকরণ চিহ্ন। যিশু স্পষ্টভাবে এই বিষয়টা শনাক্ত করেছিলেন। তাঁর অনুসারীদের বিষয় উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি প্রার্থনায় ঈশ্বরকে বলেছিলেন: “আমি ইহাদিগকে তোমার নাম জানাইয়াছি, ও জানাইব; যেন তুমি যে প্রেমে আমাকে প্রেম করিয়াছ, তাহা তাহাদিগেতে থাকে, এবং আমি তাহাদিগেতে থাকি।”—যোহন ১৭:২৬.

প্রাচীনকালের যোষেফ নামে একজন ইব্রীয় ব্যক্তিকে যখন স্বপ্নের অর্থ প্রকাশ করার কাজ দেওয়া হয়েছিল, তখন ঈশ্বরের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের ওপর নির্ভর করে আস্থার সঙ্গে তিনি বলেছিলেন: “অর্থ করিবার শক্তি কি ঈশ্বর হইতে হয় না?”—আদিপুস্তক ৪০:৮; ৪১:১৫, ১৬.

কয়েক শতাব্দী পর, বাবিলের রাজা নবূখদ্‌নিৎসর একটা স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেটা তার দেশের বিদ্বান ব্যক্তিরা ব্যাখ্যা করতে পারেনি। ভাববাদী দানিয়েল রাজাকে বলেছিলেন: “ঈশ্বর স্বর্গে আছেন, তিনি নিগূঢ় বিষয় প্রকাশ করেন, আর উত্তরকালে যাহা যাহা ঘটিবে, তাহা তিনি মহারাজ নবূখদ্‌নিৎসরকে জানাইয়াছেন।”—দানিয়েল ২:২৮.

যোষেফ ও দানিয়েলের উদাহরণ দেখায় যে, ঈশ্বরের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান শুধুমাত্র তারাই জানতে পারে, যারা যিহোবা ঈশ্বরকে সেবা করছে। অবশ্য, ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করার জন্য আমাদের হয়তো পূর্বে ধরে রাখা দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে পরিত্যাগ করতে হতে পারে। প্রথম শতাব্দীর যিহুদিদের ঠিক সেটাই করতে হয়েছিল, যারা খ্রিস্টান হয়েছিল। যিহুদি বিধিব্যবস্থার অধীনে স্থাপিত আইনগুলোর প্রতি সম্মান ও বাধ্যতা দেখানোর মাধ্যমে বড় হয়ে ওঠায় তাদের জন্য যিশুকে মশীহ হিসেবে মেনে নিতে সময় লেগেছিল। যিশু মোশির ব্যবস্থা পূর্ণ করার জন্য এসেছিলেন, যে-ব্যবস্থা ‘আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়া’ হিসেবে কাজ করেছিল। (ইব্রীয় ১০:১; মথি ৫:১৭; লূক ২৪:৪৪, ৪৫) এর স্থলে “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা” এসেছিল, যা মোশির ব্যবস্থার চেয়ে অনেক গুণ শ্রেষ্ঠ।—গালাতীয় ৬:২; রোমীয় ১৩:১০; যাকোব ২:৮.

আমরা সকলেই ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এক জগতে জন্মগ্রহণ করেছি। প্রথম মানব দম্পতির কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের কারণে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে শত্রুতাপূর্ণ অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে আমাদের সঠিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া, আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে এক বঞ্চক হৃদয়ও পেয়েছি। (যিরমিয় ১৭:৯; ইফিষীয় ২:১২; ৪:১৮; কলসীয় ১:২১) ঈশ্বরের বন্ধুত্ব অর্জন করার জন্য আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের মতো করে চিন্তা করা শিখতে হবে। তবে তা করা সহজ নয়।

মিথ্যা ধর্মীয় ধারণা বা অভ্যাসগুলোকে পরিত্যাগ করা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে যদি এই ধরনের ধারণাগুলো একেবারে ছেলেবেলা থেকে আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে থাকে। কিন্তু, ভুল পথে ক্রমাগত চলা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? কখনোই না! একজনের চিন্তাধারাকে বদলানো ও এর মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করা নিশ্চয়ই আরও বেশি বিজ্ঞতার কাজ হবে।

ঈশ্বরের নির্দেশনা দানের মাধ্যমকে শনাক্ত করা

সত্যের বাক্য সম্বন্ধে বোধগম্যতা লাভ করতে ও এরপর সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে আমরা কোথায় সাহায্য পেতে পারি? প্রাচীন ইস্রায়েলে, ঈশ্বর দায়িত্বপূর্ণ পদে নির্ভরযোগ্য এবং অনুগত ব্যক্তিদের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আজকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক, খ্রিস্টও একইভাবে সেই ব্যক্তিদের পরিচালনা দেন, যারা আন্তরিকভাবে সত্যের অন্বেষণ করে। তিনি তাঁর সেই নির্ভরযোগ্য এবং অনুগত অনুসারীদের মাধ্যমে তা করে থাকেন, যারা সত্যের ঐকান্তিক অন্বেষণকারীদের পরিচালনা দিতে ও সুরক্ষা জোগাতে দায়িত্বপূর্ণ মাধ্যম গঠন করে। (মথি ২৪:৪৫-৪৭; কলসীয় ১:১৮) কিন্তু, কীভাবে একজন ব্যক্তি ঈশ্বরের নির্দেশনা দানের মাধ্যমকে শনাক্ত করতে পারেন?

যিশু খ্রিস্টের প্রকৃত অনুসারীরা, ঠিক সেই একই গুণাবলি প্রকাশ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, যেগুলো মানুষ হিসেবে যিশু প্রকাশ করেছিলেন। ক্রমবর্ধিষ্ণুভাবে দুষ্ট এক জগতে, এই ধরনের আধ্যাত্মিক গুণাবলি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তাদের অদ্বিতীয়তা এই অনুসারীদের শনাক্ত করাকে সহজ করে তোলে। (৬ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।) আপনি যে-ধর্মের সঙ্গে যুক্ত আছেন বা আপনার প্রতিবেশীরা যে-ধর্ম পালন করে, তাদের মধ্যে কি এই গুণাবলি দেখা যায়? বাইবেলের আলোকে এই বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখা আপনার পক্ষে যথার্থ হবে।

আপনারা যারা আমাদের পাঠক, আমরা আপনাদেরকে বাইবেল অধ্যয়ন কোর্সের মাধ্যমে তা করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। গত বছর, দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৫টা জায়গায় গড়ে প্রায় ৬০,০০,০০০রেও বেশি ব্যক্তি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার এই ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করেছে। ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান অর্জন করা হচ্ছে এক ক্রমাগত, পরিতৃপ্তিদায়ক ও উত্তম ফলদায়ক কাজ। ঈশ্বর সম্বন্ধে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান অর্জন করার এই যাত্রা শুরু করুন না কেন? এটা এমন এক যাত্রা, যেটার জন্য আপনি কখনো আপশোস করবেন না। হ্যাঁ, আমরা সত্যিই ঈশ্বরকে জানতে পারি!

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স]

যারা ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছে তারা . . .

রাজনৈতিক সংঘর্ষগুলোতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।—যিশাইয় ২:৪.

ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার দ্বারা উত্তম ফল উৎপন্ন করে।—মথি ৭:১৩-২৩.

নিজেদের মধ্যে প্রকৃত প্রেম প্রদর্শন করে।—যোহন ১৩:৩৫; ১ যোহন ৪:২০.

সব জায়গায় ঐক্য বজায় রেখে কথা বলে।—মীখা ২:১২.

তাদের চারপাশের জগতের ভুল মনোভাব ও আচরণকে অনুকরণ করে না।—যোহন ১৭:১৬.

সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেয় এবং শিষ্য তৈরি করে। —মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.

পারস্পরিক উৎসাহের জন্য নিয়মিত সভা উপভোগ করে।—ইব্রীয় ১০:২৫.

এক আন্তর্জাতিক দল হিসেবে ঈশ্বরের প্রশংসা করে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০.

[৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান ব্যক্তিগতভাবে, পরিবারগতভাবে এবং মণ্ডলীগতভাবে অর্জন করা হয়