সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহুদিদের প্রথাগত স্নান এটা কি বাপ্তিস্মের এক আদিরূপ?

যিহুদিদের প্রথাগত স্নান এটা কি বাপ্তিস্মের এক আদিরূপ?

যিহুদিদের প্রথাগত স্নান এটা কি বাপ্তিস্মের এক আদিরূপ?

 যোহন বাপ্তাইজক “মনপরিবর্ত্তনের বাপ্তিস্ম” প্রচার করতেন। যিশুও তাঁর অনুসারীদেরকে শিষ্য তৈরি করতে ও বাপ্তাইজিত করতে আদেশ দিয়েছিলেন।—মার্ক ১:৪; মথি ২৮:১৯.

বাইবেল ইঙ্গিত করে যে, খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্মের জন্য জলে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হওয়া প্রয়োজন। যিশু ও তাঁর জগৎ (ইংরেজি) শিরোনামের বইটি দাবি করে, ‘অতীত ও বর্তমানের, অনেক দেশের ও সংস্কৃতির ধর্মগুলোতে অনুরূপ প্রথা দেখা যেতে পারে।’ সেই বইটি দাবি করে যে, “খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্মের উৎপত্তি . . . যিহুদিধর্মে দেখা যায়।” কিন্তু, এই দাবি কতটা যুক্তিসংগত?

যিহুদিদের প্রথাগত স্নানের জলাধার

যে-প্রত্নতত্ত্ববিদরা যিরূশালেম মন্দিরের কাছে খনন করেছে, তারা প্রায় ১০০টা প্রথাগত স্নানাগার বা জলাধার আবিষ্কার করেছে, যেগুলো সা.কা.পূ. প্রথম শতাব্দী থেকে সা.কা. প্রথম শতাব্দীর সময়কার। সা.কা. দ্বিতীয় বা তৃতীয় শতাব্দীর একটা সমাজগৃহের অভিলিখন থেকে জানা যায় যে, এই ধরনের স্নানাগারগুলো “অতিথিদের প্রয়োজনে” জোগানো হতো। যিরূশালেমের ধনী ও যাজকীয় পরিবারগুলোর অধিকৃত জায়গাতেও আরও জলাধার পাওয়া গিয়েছিল; প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই তাদের নিজস্ব প্রথাগত স্নানাগার ছিল।

স্নানাগারগুলো ছিল পাথর কেটে তৈরি করা বা মাটি খুঁড়ে বানানো আয়তাকার জলাধার আর এগুলোর চারপাশে সারিবদ্ধভাবে ইট বা পাথর থাকত। ছিদ্র রোধ করার জন্য সেগুলোকে পাকা করা হতো। অধিকাংশ জলাধার ছিল প্রায় দৈর্ঘ্যে ১.৮ মিটার ও প্রস্থে ২.৭ মিটার। জলাধারের সঙ্গে সংযুক্ত নালাগুলো দিয়ে বৃষ্টির জল জলাধারে জমা হতো। জল কমপক্ষে ১.২ মিটার গভীর ছিল, যার ফলে নিচু হয়ে পুরোপুরিভাবে নিমজ্জিত হওয়া যেত। জলের গভীরে নেমে যাওয়ার সিঁড়িগুলো মাঝে মাঝে এক নিচু বিভাজক দেওয়ালের দ্বারা ভাগ করা থাকত। মনে করা হয় যে, সেই সিঁড়িগুলোর একপাশ অশুচি স্নানকারীরা যখন শুচি হওয়ার জন্য স্নান করতে আসত, তাদের প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হতো আর অন্য পাশটা ছিল বের হয়ে যাওয়ার জন্য, যাতে যেকোনো ধরনের দূষণ এড়ানো যায়।

স্নানাগারগুলো যিহুদিদের প্রথাগত শুচি হওয়ার ব্যাপারে ব্যবহৃত হতো। এর সঙ্গে কী কী জড়িত ছিল?

স্নানের বিষয়ে ব্যবস্থা ও পরম্পরাগত রীতি

মোশির ব্যবস্থায় ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিক ও শারীরিক উভয় দিক দিয়ে শুদ্ধ থাকার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে ইস্রায়েলীয়রা অশুচি হয়ে পড়ত, যেখান থেকে তাদেরকে স্নানের মাধ্যমে শরীরকে পরিষ্কার করে ও কাপড় ধুয়ে নিজেদের শুচি করতে হতো।—লেবীয় পুস্তক ১১:২৮; ১৪:১-৯; ১৫:১-৩১; দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:১০, ১১.

যিহোবা ঈশ্বর সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ ও পবিত্র। তাই যাজক ও লেবীয়দের, তাঁর বেদির কাছে যাওয়ার আগে তাদের হাত ও পা ধুতে হতো, তা না হলে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো।—যাত্রাপুস্তক ৩০:১৭-২১.

পণ্ডিত ব্যক্তিরা মনে করে যে, সা.কা. প্রথম শতাব্দীর মধ্যে যিহুদি ধর্মীয় ব্যবস্থা যাজকদের জন্য শুচি হওয়ার চাহিদাগুলো ন-লেবীয়দের মধ্যে প্রসারিত করেছিল। এসিন সম্প্রদায় ও ফরীশীরা উভয়েই বার বার প্রথাগত ধৌতকরণ অভ্যাস করত। একটি উৎস যিশুর সময় সম্বন্ধে জানায়: “একজন যিহুদির মন্দিরে ঢোকার আগে, বলি উৎসর্গ করার আগে, যাজকের কাছ থেকে নৈবেদ্য উৎসর্গের উপকারিতা গ্রহণের আগে এবং এইরকম অন্যান্য কাজের আগে প্রথাগত শুচি হওয়ার প্রয়োজন হতো।” তালমুডের পাঠ্যাংশ বলে যে, স্নানকারীরা সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হবে বলে আশা করা হতো।

ফরীশীরা প্রথাগত শুচিকরণের রীতির প্রতি নাছোড়বান্দা ছিল বলে যিশু তাদের সমালোচনা করেছিলেন। স্পষ্টতই তাদের মধ্যে “বিবিধ বাপ্তিস্ম” প্রচলিত ছিল, যার মধ্যে “ঘটী, ঘড়া ও পিত্তলের নানা পাত্র” ধোয়ার বিষয়টাও ছিল। যিশু বলেছিলেন যে, ফরীশীরা তাদের নিজস্ব পরম্পরাগত বিধি চাপিয়ে দেওয়ার জন্য ঈশ্বরের আদেশকে লঙ্ঘন করেছিল। (ইব্রীয় ৯:১০; মার্ক ৭:১-৯; লেবীয় পুস্তক ১১:৩২, ৩৩; লূক ১১:৩৮-৪২) মোশির ব্যবস্থার কোনো অংশেই শরীরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করার বিষয়টা ছিল না।

খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্মের উৎপত্তি কি যিহুদিদের প্রথাগত স্নানের অভ্যাসে পাওয়া যায়? না!

প্রথাগত স্নান ও খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্ম

যিহুদিরা শুচি করার প্রথাগুলো নিজেরাই নিজেদের ওপরই সম্পাদন করত। কিন্তু, যোহন যে-বাপ্তিস্ম সম্পাদন করেছিলেন, তা যিহুদিদের কাছে পরিচিত কোনো প্রথাগত স্নান ছিল না। যোহনের পরবর্তী সময়ে বাপ্তাইজক হিসেবে পরিচিত হওয়া ইঙ্গিত করে যে, তিনি যে-নিমজ্জন করেছিলেন, তা আলাদা ছিল। যিহুদি ধর্মীয় নেতারা এমনকি তাকে এই কথা জিজ্ঞেস করার জন্য লোক পাঠিয়েছিল: “আপনি . . . বাপ্তাইজ করিতেছেন কেন?”—যোহন ১:২৫.

মোশির ব্যবস্থায় যে-শুচিকরণ পদ্ধতি অত্যাবশ্যক ছিল, তা একজন উপাসক যত বার অশুচি হতো তত বারই তাকে শুচি হতে হতো। কিন্তু, যোহন যে-বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন বা পরে খ্রিস্টানরা যে-বাপ্তিস্ম দিতেন, সেই ক্ষেত্রে এমনটা ছিল না। যোহনের বাপ্তিস্ম অনুতাপ করা ও পূর্বের জীবনধারাকে পরিত্যাগ করার ইঙ্গিত দিয়েছিল। খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্ম এই বিষয়টাকে চিত্রিত করত যে, একজন ব্যক্তি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করেছে। খ্রিস্টানরা তা কেবল একবারই করত, বার বার নয়।

মন্দিরের কাছে অবস্থিত যিহুদি যাজকদের বাড়িতে ও জনসাধারণের স্নানাগারগুলোতে সম্পাদিত প্রথাগত স্নান, খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্মের শুধুমাত্র বাহ্যিক এক প্রতিরূপ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। প্রথাগত স্নান ও খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্মের স্ব স্ব অর্থ সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন ছিল। দি আ্যংকর বাইবেল ডিকশনারি বলে: “বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তি এই বিষয়ে একমত যে, যোহন [বাপ্তাইজক] তার আশেপাশের পরিবেশ থেকে” অর্থাৎ যিহুদিধর্ম থেকে “কোনো বাপ্তিস্মকে গ্রহণ বা উপযোগী করে নেননি।” খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে যে-বাপ্তিস্ম দেওয়া হয়, সেটার বেলায়ও একই বিষয় প্রযোজ্য।

খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্ম ‘ঈশ্বরের নিকটে সৎসংবেদের নিবেদনকে’ তুলে ধরে। (১ পিতর ৩:২১) এটা চিত্রিত করে যে, একজন ব্যক্তি যিহোবার পুত্রের একজন শিষ্য হিসেবে তাঁকে সেবা করার জন্য নিজেকে যিহোবার কাছে পুরোপুরিভাবে উৎসর্গ করেছেন। জলে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হওয়া হচ্ছে এই ধরনের উৎসর্গের এক উপযুক্ত প্রতীক। একজন ব্যক্তির জলের নীচে যাওয়া তার পূর্ববর্তী জীবনধারার মৃত্যুকে প্রতিনিধিত্ব করে। জল থেকে উঠে আসা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য জীবিত হওয়াকে চিহ্নিত করে।

যারা এই ধরনের উৎসর্গীকরণ করে ও বাপ্তাইজিত হয়, তাদেরকে যিহোবা ঈশ্বর এক সৎবিবেক দান করেন। অনুপ্রাণিত প্রেরিত পিতর তাই সহবিশ্বাসীদের বলতে পেরেছিলেন: ‘এখন [বাপ্তিস্ম] তোমাদিগকে পরিত্রাণ করে।’ এটা এমন কিছু, যা যিহুদিদের প্রথাগত স্নান কখনোই অর্জন করতে পারত না।