সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের পবিত্র সমাবেশগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো

আমাদের পবিত্র সমাবেশগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো

আমাদের পবিত্র সমাবেশগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো

“তাহাদিগকে আমি আপন পবিত্র পর্ব্বতে আনিব, এবং আমার প্রার্থনা-গৃহে আনন্দিত করিব।”—যিশাইয় ৫৬:৭.

১. আমাদের সভাগুলোর প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখানোর কোন শাস্ত্রীয় কারণগুলো আমাদের রয়েছে?

 যিহোবা তাঁর লোকেদের অর্থাৎ অভিষিক্ত খ্রিস্টান ও তাদের সহযোগীদের তাঁর “পবিত্র পর্ব্বতে” উপাসনার জন্য একত্রিত করেছেন। তিনি তাঁর “প্রার্থনা-গৃহে” অর্থাৎ তাঁর আত্মিক মন্দিরে তাদেরকে আনন্দিত করেন, যেটা হল “সর্ব্বজাতির প্রার্থনা-গৃহ।” (যিশাইয় ৫৬:৭; মার্ক ১১:১৭) এই ঘটনাগুলো ইঙ্গিত করে যে, যিহোবার উপাসনা হল পবিত্র, শুদ্ধ ও উচ্চীকৃত। অধ্যয়ন ও উপাসনার জন্য আমাদের সভাগুলোর প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখানোর দ্বারা আমরা প্রমাণ দিই যে, পবিত্র বিষয়গুলোকে আমরা যিহোবার মতো করে দেখি।

২. কী ইঙ্গিত করে যে, যিহোবা যে-স্থানকে তাঁর উপাসনার জন্য বেছে নিয়েছিলেন, সেটাকে পবিত্র বলে গণ্য করতেন আর কীভাবে যিশু দেখিয়েছিলেন যে, তিনিও একইরকম মনে করেন?

প্রাচীন ইস্রায়েলে যে-স্থানকে যিহোবা তাঁর উপাসনার জন্য বেছে নিয়েছিলেন, সেটাকে পবিত্র বলে গণ্য করা হতো। আবাস এবং সেইসঙ্গে এর আসবাবপত্র ও সাজসরঞ্জাম এবং সকল পাত্র অভিষেক ও পবিত্র করা হতো, ‘যাহাতে তাহা অতি পবিত্র হয়।’ (যাত্রাপুস্তক ৩০:২৬-২৯) ধর্মধামের দুটো প্রকোষ্ঠকে “পবিত্র স্থান” ও “অতি পবিত্র স্থান” বলা হতো। (ইব্রীয় ৯:২, ৩) পরবর্তী সময়ে, আবাসের জায়গায় যিরূশালেমের মন্দির আসে। যিহোবার উপাসনার কেন্দ্র হিসেবে, যিরূশালেমকে “পবিত্র নগর” বলা হতো। (নহিমিয় ১১:১; মথি ২৭:৫৩) যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময়ে মন্দিরের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়েছিলেন। লোকেরা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ও সোজাপথ হিসেবে অসম্মানজনকভাবে মন্দিরের এলাকা ব্যবহার করছিল বলে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।—মার্ক ১১:১৫, ১৬.

৩. কোন বিষয়টা ইস্রায়েলীয়দের সভাগুলোর পবিত্র ধরনকে তুলে ধরে?

যিহোবাকে উপাসনা করার ও তাঁর ব্যবস্থা পাঠ শোনার জন্য ইস্রায়েলীয়রা নিয়মিতভাবে একত্রিত হতো। তাদের পর্বের নির্দিষ্ট কয়েকটা দিনকে পবিত্র সভা অথবা উৎসব-সভা বলা হতো, যা এই সমাবেশগুলোর পবিত্র ধরনকে ইঙ্গিত করে। (লেবীয় পুস্তক ২৩:২, ৩, ৩৬, ৩৭) ইষ্রা ও নহিমিয়ের দিনে জনসাধারণের এক সমাবেশে লেবীয়রা “লোকদিগকে ব্যবস্থা-পুস্তকের অর্থ বুঝাইয়া দিল।” যেহেতু “ব্যবস্থা-পুস্তকের বাক্য শ্রবণে সমস্ত লোক রোদন করিতেছিল,” তাই লেবীয়রা “লোক সকলকে শান্ত করিয়া কহিল, নীরব হও, কেননা অদ্য পবিত্র দিন।” এরপর ইস্রায়েলীয়রা “অতি বড় আনন্দ” সহকারে সাত দিনের কুটীর উৎসব পালন করেছিল। অধিকন্তু, ‘প্রথম দিন হইতে শেষ দিন পর্য্যন্ত প্রতিদিন ঈশ্বরের ব্যবস্থা-পুস্তক পাঠ করা হইল আর লোকেরা সাত দিন পর্ব্ব পালন করিল, এবং বিধি অনুসারে অষ্টম দিনে উৎসব-সভা হইল।’ (নহিমিয় ৮:৭-১১, ১৭, ১৮) এগুলো সত্যিই পবিত্র উপলক্ষ ছিল, যেখানে উপস্থিত সকলের পক্ষে সম্মানপূর্ণ মনোযোগ দেওয়া আবশ্যক ছিল।

আমাদের সভাগুলো হল পবিত্র সমাবেশ

৪, ৫. আমাদের সভাগুলোর কোন দিকগুলো প্রমাণ দেয় যে, সেগুলো পবিত্র সমাবেশ?

এটা ঠিক যে, আজকে পৃথিবীতে যিহোবার কোনো আক্ষরিক পবিত্র নগর নেই, যেখানে তাঁর উপাসনার জন্য উৎসর্গীকৃত এক বিশেষ মন্দির রয়েছে। তা সত্ত্বেও, আমাদের এই বিষয়টা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য অনুষ্ঠিত সভাগুলো হল পবিত্র সমাবেশ। সপ্তাহে তিনবার আমরা শাস্ত্র পাঠ ও অধ্যয়ন করার জন্য মিলিত হই। এখানে যিহোবার বাক্যের “অর্থ করিয়া” দেওয়া হয় এবং নহিমিয়ের দিনের মতো “পাঠ বুঝাইয়া” দেওয়া হয়। (নহিমিয় ৮:৮) আমাদের সমস্ত সভা প্রার্থনা দিয়ে শুরু ও শেষ হয় আর বেশির ভাগ সভাতেই আমরা যিহোবার উদ্দেশে প্রশংসা গান গাই। (গীতসংহিতা ২৬:১২) মণ্ডলীর সভাগুলো সত্যিই আমাদের উপাসনার অংশ এবং আমাদের এতে প্রার্থনাপূর্ণ মনোভাব দেখানো ও সম্মানপূর্ণ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

যিহোবা তাঁর লোকেদের আশীর্বাদ করেন, যখন তারা তাঁকে উপাসনা করার, তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করার এবং মনোরম খ্রিস্টীয় সাহচর্য উপভোগ করার জন্য একত্রিত হয়। সভার সময়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, সেখানে ‘সদাপ্রভু আশীর্ব্বাদ আজ্ঞা করেন।’ (গীতসংহিতা ১৩৩:১, ৩) আমরা সেই আশীর্বাদ লাভ করি, যদি আমরা আধ্যাত্মিক কার্যক্রমে উপস্থিত থাকি ও এর প্রতি মনোযোগ দিই। অধিকন্তু, যিশু বলেছিলেন: “যেখানে দুই কি তিন জন আমার নামে একত্র হয়, সেইখানে আমি তাহাদের মধ্যে আছি।” প্রসঙ্গ অনুযায়ী, এই উক্তিটা সেই খ্রিস্টান প্রাচীনদের প্রতি প্রযোজ্য, যারা বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে গুরুতর সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য মিলিত হয় কিন্তু ব্যাপক অর্থে এটা আমাদের সভাগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। (মথি ১৮:২০) খ্রিস্টানরা যখন যিশুর নামে একত্রিত হয়, তখন পবিত্র আত্মার মাধ্যমে খ্রিস্ট যদি সেখানে উপস্থিত থাকেন, তা হলে সেই সমাবেশগুলোকে কি পবিত্র বলে বিবেচনা করা উচিত নয়?

৬. ছোট ও বড় আমাদের উভয় সভাস্থল সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে?

এটা ঠিক যে, যিহোবা মনুষ্য নির্মিত মন্দিরগুলোতে বাস করেন না। তা সত্ত্বেও, আমাদের কিংডম হলগুলো হচ্ছে সত্য উপাসনার স্থান। (প্রেরিত ৭:৪৮; ১৭:২৪) আমরা সেখানে যিহোবার বাক্য অধ্যয়ন করার, তাঁর কাছে প্রার্থনা করার ও তাঁর উদ্দেশে প্রশংসা গান গাওয়ার জন্য মিলিত হই। এটা আমাদের সম্মেলন হলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমাদের সম্মেলনগুলোর জন্য ভাড়া করা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানকারী উপকরণাদি—যেমন অডিটরিয়াম, এক্সিবিশন হল বা খেলার স্টেডিয়ামগুলো—আমাদের পবিত্র সমাবেশগুলোর জন্য ব্যবহৃত হওয়ার সময় সেগুলো আমাদের উপাসনার স্থান হয়ে ওঠে। বড় বা ছোট যা-ই হোক না কেন, উপাসনার জন্য এই উপলক্ষগুলো আমাদের সম্মান পাওয়ার যোগ্য আর তা আমাদের মনোভাব ও আচারআচরণে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।

আমাদের সমাবেশগুলোর প্রতি সম্মান দেখানোর বিভিন্ন উপায়

৭. কোন বাস্তব উপায়ে আমরা আমাদের সমাবেশগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে পারি?

বিভিন্ন বাস্তব উপায় রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের সমাবেশগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে পারি। একটা উপায় হল, রাজ্যের গানগুলো গাওয়ার জন্য উপস্থিত থেকে। এগুলোর মধ্যে অনেক গানই প্রার্থনার আকারে রয়েছে আর তাই আমাদের শ্রদ্ধা সহকারে গাওয়া উচিত। প্রেরিত পৌল ২২ গীতের কথাগুলোকে যিশুর এক উক্তি হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন: “আমি আমার ভ্রাতৃগণের কাছে তোমার নাম প্রচার করিব, মণ্ডলীর মধ্যে তোমার প্রশংসা-গান করিব।” (ইব্রীয় ২:১২) তাই, সভাপতি গান সম্বন্ধে বলার আগেই জায়গায় বসাকে আমাদের অভ্যাসে পরিণত করা এবং এরপর গান গাওয়ার সময় কথাগুলোর অর্থের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের গানে যেন গীতরচকের অনুভূতি প্রকাশ পায়, যিনি লিখেছিলেন: “আমি সর্ব্বান্তঃকরণে সদাপ্রভুর স্তব করিব, সরল লোকদের সভায় ও মণ্ডলীর মধ্যে করিব।” (গীতসংহিতা ১১১:১) হ্যাঁ, যিহোবার উদ্দেশে প্রশংসা গান গাওয়া হল, আমাদের সভাগুলো শুরু হওয়ার আগেই আসার এবং শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার একটা উত্তম কারণ।

৮. বাইবেলের কোন উদাহরণ দেখায় যে, আমাদের সভাগুলোর প্রার্থনা আমাদের সম্মানপূর্ণ মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য?

আরেকটা যে-দিক আমাদের সমস্ত সভাকে আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে, সেটা হল সমবেত সকলের জন্য করা আন্তরিক প্রার্থনা। একবার, যিরূশালেমে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা একত্রে মিলিত হয়েছিল এবং “একচিত্তে ঈশ্বরের উদ্দেশে উচ্চৈঃস্বরে” আন্তরিক প্রার্থনা করেছিল। এর ফলে, তারা —তাড়না সত্ত্বেও—ক্রমাগত ‘সাহসপূর্ব্বক ঈশ্বরের বাক্য বলিয়াছিল।’ (প্রেরিত ৪:২৪-৩১) আমরা কি কল্পনা করতে পারি যে, সেখানে উপস্থিত কেউ প্রার্থনার সময় তাদের মনকে বিক্ষিপ্ত হতে দিয়েছিল? না, তারা “একচিত্তে” প্রার্থনা করেছিল। আমাদের সভাগুলোতে যে-প্রার্থনাগুলো করা হয়, সেগুলো উপস্থিত সকলের অনুভূতি প্রকাশ করে। এগুলো আমাদের সম্মানপূর্ণ মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য।

৯. কীভাবে আমরা আমাদের পোশাক-আশাক ও আচরণের মাধ্যমে পবিত্র সমাবেশগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে পারি?

অধিকন্তু, আমাদের সমাবেশের পবিত্র ধরনকে আমরা কত গভীরভাবে সম্মান করি, তা আমাদের পোশাক-আশাকের মাধ্যমে দেখাতে পারি। আমাদের বেশভূষা অর্থাৎ আমাদের পোশাক-আশাক ও চুলের স্টাইল আমাদের সভাগুলোর মর্যাদাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রেরিত পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আমার বাসনা এই, সকল স্থানে পুরুষেরা বিনা ক্রোধে ও বিনা বিতর্কে শুচি হস্ত তুলিয়া প্রার্থনা করুক। সেই প্রকারে নারীগণও সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করুক; বেণীবদ্ধ কেশপাশে ও স্বর্ণ বা মুক্তা বা বহুমূল্য পরিচ্ছদ দ্বারা নয়, কিন্তু—যাহা ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারিণী নারীগণের যোগ্য—সৎক্রিয়ায় ভূষিতা হউক।” (১ তীমথিয় ২:৮-১০) আমরা যখন উন্মুক্ত স্টেডিয়ামগুলোতে অনুষ্ঠিত বড় বড় সম্মেলনে যোগ দিই, তখন আমাদের পোশাক আবহাওয়ার উপযোগী কিন্তু একইসঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ হতে পারে। এ ছাড়া, উপলক্ষের প্রতি আমাদের সম্মান আমাদেরকে অধিবেশন চলাকালে খাওয়াদাওয়া করতে অথবা চুইংগাম চিবানো থেকে বিরত থাকতে পরিচালিত করবে। আমাদের সমাবেশগুলোতে উপযুক্ত পোশাক এবং আচরণ যিহোবা ঈশ্বর, তাঁর উপাসনা ও আমাদের সহউপাসকদের জন্য সম্মান নিয়ে আসে।

ঈশ্বরের গৃহের জন্য যথাযথ আচরণ

১০. কীভাবে প্রেরিত পৌল দেখিয়েছিলেন যে, আমাদের খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে আচরণের উচ্চমান আবশ্যক?

১০ খ্রিস্টীয় সভাগুলো কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, সেই সম্বন্ধে ১ করিন্থীয় ১৪ অধ্যায়ে আমরা প্রেরিত পৌলের বিজ্ঞ পরামর্শ পাই। তিনি উপসংহারে এই কথা বলেছিলেন: “সকলই শিষ্ট ও সুনিয়মিতরূপে করা হউক।” (১ করিন্থীয় ১৪:৪০) আমাদের সভাগুলো খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কার্যক্রমের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ আর সেখানে এমন ধরনের আচরণ আবশ্যক, যা যিহোবার গৃহের জন্য যথাযথ।

১১, ১২. (ক) যে-ছোট ছেলেমেয়েরা আমাদের সভাতে আসে, তাদের মনে কী গেঁথে দেওয়া উচিত? (খ) কোন উপযুক্ত উপায়ে ছোট ছেলেমেয়েরা আমাদের সভাগুলোতে তাদের বিশ্বাসকে প্রকাশ করতে পারে?

১১ বিশেষত, ছোট ছেলেমেয়েদের শেখাতে হবে যে, আমাদের সভাগুলোতে কীভাবে আচরণ করতে হয়। খ্রিস্টান বাবামাদের তাদের ছেলেমেয়েদের কাছে ব্যাখ্যা করা উচিত যে, কিংডম হল এবং মণ্ডলীর বই অধ্যয়নের স্থান কোনো খেলার জায়গা নয়। এগুলো হচ্ছে এমন জায়গা, যেখানে আমরা যিহোবাকে উপাসনা করি এবং তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করি। জ্ঞানী রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “তুমি ঈশ্বরের গৃহে গমন কালে তোমার চরণ সাবধানে রাখ; কারণ . . . শ্রবণার্থে উপস্থিত হওয়া ভাল।” (উপদেশক ৫:১) মোশি ইস্রায়েলীয়দের প্রাপ্তবয়স্ক ও ‘বালক-বালিকাকে’ একত্রিত হওয়ার বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: ‘লোকদিগকে একত্র কর, যেন তাহারা শুনিয়া শিক্ষা পায়, ও তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করে, এবং এই ব্যবস্থার সমস্ত কথা যত্নপূর্ব্বক পালন করে; আর তাহাদের যে সন্তানগণ এই সকল জানে না, তাহারা যেন শুনে, ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করিতে শিখে।”দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১২, ১৩.

১২ একইভাবে আজকেও, আমাদের অল্পবয়স্করা তাদের বাবামার সঙ্গে মূলত শোনারশেখার জন্য সভাতে উপস্থিত হয়। ছোট ছেলেমেয়েরা মনোযোগ দেওয়ার এবং বাইবেলের মৌলিক সত্যগুলো বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে তারা সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করে সভাতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে “স্বীকার” বা জনসাধারণ্যে ঘোষণা করতে পারে। (রোমীয় ১০:১০) একজন অল্পবয়স্ক হয়তো সে নিজে বুঝতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তর কয়েকটা শব্দে বলার মাধ্যমে শুরু করতে পারে। প্রথম প্রথম, সে হয়তো পড়ে উত্তর দিতে পারে কিন্তু পরে একসময় সে তার নিজের ভাষায় প্রকাশ করতে চেষ্টা করবে। এটা সন্তানের জন্য উপকারজনক ও উপভোগ্য আর বিশ্বাসের এই ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি উপস্থিত বড়দের হৃদয়কে আনন্দিত করে। সাধারণত, বাবামারা নিজেরা মন্তব্য দিয়ে উদাহরণ স্থাপন করে থাকে। সম্ভব হলে ছোট ছেলেমেয়েদের নিজেদের বাইবেল, গানবই এবং যে-প্রকাশনা অধ্যয়ন করা হচ্ছে, সেটির একটি কপি থাকা উত্তম। এই ধরনের প্রকাশনার প্রতি তাদের উপযুক্ত সম্মান দেখাতে শেখা উচিত। এই সমস্তকিছু ছোট ছেলেমেয়েদের মনে গেঁথে দেবে যে, আমাদের সভাগুলো হল পবিত্র সমাবেশ।

১৩. যারা প্রথমবারের মতো আমাদের সভায় আসে, তাদের সম্বন্ধে আমাদের আশা কী?

১৩ অবশ্য, আমরা চাই না যে আমাদের সভাগুলো খ্রিস্টীয়জগতের গির্জার মতো হোক। গির্জাগুলো হয় আন্তরিকতাবিহীন ও লোকদেখানো নতুবা রক কনসার্টের মতো কোলাহলপূর্ণ হতে পারে। আমরা আমাদের কিংডম হলের সভাগুলো উষ্ণ ও আকর্ষণীয় হোক বলে চাই কিন্তু তাই বলে তা যেন পাড়ার কোনো সামাজিক ক্লাবের মতো না হয়। আমরা যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য মিলিত হই, তাই আমাদের সভাগুলো সবসময় মর্যাদাপূর্ণ হওয়া উচিত। আমাদের আকাঙ্ক্ষা হল উপস্থাপিত বিষয়বস্তু শোনার পর এবং আমাদের ও আমাদের ছেলেমেয়েদের আচরণ দেখার পর, প্রথমবারের মতো উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন বলে: “ঈশ্বর বাস্তবিকই তোমাদের মধ্যবর্ত্তী।”—১ করিন্থীয় ১৪:২৫.

আমাদের উপাসনার এক স্থায়ী দিক

১৪, ১৫. (ক) কীভাবে আমরা ‘আপনাদের ঈশ্বরের গৃহ ত্যাগ না করা’ এড়িয়ে চলতে পারি? (খ) কীভাবে যিশাইয় ৬৬:২৩ পদ ইতিমধ্যেই পরিপূর্ণ হচ্ছে?

১৪ আগে যেমন বলা হয়েছে যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের একত্রিত করছেন এবং তাঁর “প্রার্থনা-গৃহে” অর্থাৎ তাঁর আত্মিক মন্দিরে তাদেরকে আনন্দিত করছেন। (যিশাইয় ৫৬:৭) বিশ্বস্ত ব্যক্তি নহিমিয় তার সহযিহুদিদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, বস্তুগতভাবে দান দেওয়ার মাধ্যমে আক্ষরিক মন্দিরের প্রতি তাদের উপযুক্ত সম্মান দেখানো উচিত। তিনি বলেছিলেন: “আমরা আপনাদের ঈশ্বরের গৃহ ত্যাগ করিব না।” (নহিমিয় ১০:৩৯) অধিকন্তু, তাঁর “প্রার্থনা-গৃহে” উপাসনা করার জন্য যিহোবার আমন্ত্রণকে আমাদের অবহেলা করা উচিত নয়।

১৫ উপাসনার জন্য নিয়মিতভাবে একত্রিত হওয়ার প্রয়োজন দেখিয়ে ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “প্রতি অমাবস্যায় ও প্রতি বিশ্রামবারে সমস্ত মর্ত্ত্য আমার সম্মুখে প্রণিপাত করিতে আসিবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন।” (যিশাইয় ৬৬:২৩) আজকে তা ঘটছে। নিয়মিতভাবে, প্রতি মাসের প্রতি সপ্তাহে উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টানরা যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য একত্রিত হয়। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিয়ে এবং পরিচর্যার রত থেকে তারা একত্রিত হয়ে থাকে। আপনি কি তাদের মধ্যে একজন, যারা নিয়মিতভাবে ‘সদাপ্রভুর সম্মুখে প্রণিপাত করিতে আইসে’?

১৬. কেন নিয়মিত সভাতে আসাকে এখনই আমাদের জীবনের এক স্থায়ী দিক করা উচিত?

১৬ যিশাইয় ৬৬:২৩ পদ, যিহোবার প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে জীবনের প্রতি পূর্ণরূপে প্রযোজ্য হবে। সেই সময় আক্ষরিক অর্থে “সমস্ত মর্ত্ত্য” সপ্তাহের পর সপ্তাহ ও মাসের পর মাস ধরে অনন্তকালের জন্য যিহোবার “সম্মুখে প্রণিপাত করিতে আসিবে” অথবা উপাসনা করবে। যেহেতু যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য একত্রিত হওয়া নতুন বিধিব্যবস্থায় আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের এক স্থায়ী দিক হবে, তাই এখনই কি আমাদের পবিত্র সমাবেশগুলোতে নিয়মিতভাবে আসাকে আমাদের জীবনের এক স্থায়ী দিক করা উচিত নয়?

১৭. কেন আমাদের ‘আমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছি, ততই’ সভাগুলোর বিষয়ে ‘অধিক তৎপর হইতে’ হবে?

১৭ শেষ যতই এগিয়ে আসছে, আমাদের উপাসনার জন্য খ্রিস্টীয় সমাবেশগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য আগের চেয়ে আরও বেশি সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত। আমাদের সভাগুলোর পবিত্র ধরনের প্রতি সম্মান থাকায় আমরা জাগতিক কাজ, স্কুলের হোমওয়ার্ক অথবা সান্ধ্যকালীন অতিরিক্ত শিক্ষার কারণে আমাদের সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে মিলিত হওয়ার সুযোগকে বাদ দিতে দিই না। আমাদের সেই শক্তি প্রয়োজন, যা মেলামেশার মাধ্যমে আসে। আমাদের মণ্ডলীর সভাগুলো আমাদের পরস্পরকে জানার, উৎসাহ দেওয়ার এবং পরস্পরকে “প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে” উদ্দীপিত করে তোলার সুযোগ করে দেয়। আমাদের তা করতে হবে, ‘আমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছি, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।’ (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) তাই, আমরা যেন নিয়মিতভাবে সভাতে উপস্থিত থেকে, উপযুক্ত পোশাক-আশাকের মাধ্যমে এবং যথাযথ আচরণ দেখিয়ে আমাদের পবিত্র সমাবেশগুলোর প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখাই। তা করার মাধ্যমে আমরা দেখাই যে, পবিত্র বিষয়গুলোকে আমরা যিহোবার মতো করে দেখি।

পুনরালোচনা

• কী দেখায় যে, যিহোবার লোকেদের সমাবেশগুলো পবিত্র বলে গণ্য করা উচিত?

• আমাদের সভাগুলোর কোন দিকগুলো প্রমাণ দেয় যে, সেগুলো পবিত্র সমাবেশ?

• কীভাবে ছোট ছেলেমেয়েরা দেখায় যে, তারা আমাদের সভাগুলোর পবিত্র ধরনকে সম্মান করে?

• কেন নিয়মিতভাবে সভাগুলোতে উপস্থিত থাকাকে আমাদের জীবনের এক স্থায়ী দিক করা উচিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য সমবেত হওয়া হল পবিত্র সমাবেশ, তা সেগুলো যেখানেই অনুষ্ঠিত হোক না কেন

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের ছোট ছেলেমেয়েরা শোনার ও শেখার জন্য সভাগুলোতে আসে