সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমার একজন মিশনারি হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে যিহোবা প্রচুররূপে পুরস্কৃত করেছেন

আমার একজন মিশনারি হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে যিহোবা প্রচুররূপে পুরস্কৃত করেছেন

জীবন কাহিনী

আমার একজন মিশনারি হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে যিহোবা প্রচুররূপে পুরস্কৃত করেছেন

বলেছেন শীলা উইনফিল্ড ডা কোনসেসাউ

আফ্রিকা থেকে পরিদর্শন করতে আসা একজন মিশনারি আমাদেরকে একবার বলেছিলেন যে, তার কার্যভারে প্রত্যেকেই তাকে ভিতরে আমন্ত্রণ জানাত এবং মনোযোগ দিয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার শুনত। ‘ওইরকম এলাকায় কাজ করতে পারলে আমি কতই না আনন্দিত হব!’ আমি মনে মনে চিন্তা করেছিলাম। সেই সময় ১৩ বছর বয়সে, সেই কথোপকথন আমার মধ্যে একজন মিশনারি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা গেঁথে দিয়েছিল।

 তবে আমাদের পরিবার অনেক আগেই যিহোবার সম্বন্ধে শিখতে শুরু করেছিল। ১৯৩৯ সালের এক সকালে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা দুজন যুবক ইংল্যান্ডের গ্রেটার লন্ডনের ঠিক কাছাকাছি, হিমাল হিমস্টেডে আমাদের দরজায় কড়া নাড়ে। তারা ছিল যিহোবার সাক্ষি। আমি ঠিক তার আগের বছর জন্মগ্রহণ করি, তাই সেই পরিদর্শনের কথা আমার মনে নেই। তাদেরকে বিদায় করার জন্য মা তাদের বলেছিলেন যে, বাবা হয়তো আগ্রহী হতে পারেন কিন্তু তিনি রাত ৯টার আগে বাড়ি ফিরবেন না। মা কতই না অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, যখন তারা সেই রাতেই আবার ফিরে এসেছিল! রাজনৈতিক ও জাতীয়তাবাদের বিষয়গুলোতে তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর আমার বাবা হেনরি উইনফিল্ড তাদেরকে ভিতরে আমন্ত্রণ জানান এবং বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হন। তিনি দ্রুত উন্নতি করে বাপ্তিস্মের নেওয়ার দিকে এগিয়ে যান। কয়েক বছর পর, আমার মা ক্যাথলিনও অধ্যয়ন শুরু করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে বাপ্তিস্ম নেন।

১৯৪৮ সালে, আমি নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচারে অংশ নিতে শুরু করি। আমি মনে করেছিলাম যে, পরিচর্যায় আমি যে-সময় ব্যয় করি সঠিকভাবে তার রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আমার একটা হাতঘড়ির প্রয়োজন। আমরা যদি দুষ্টুমি না করতাম, তা হলে আমরা ভাইবোনেরা প্রতি শনিবার হাতখরচ হিসেবে ছয়পেনি (ছয় পেনি মূল্যের একটা মুদ্রা) পেতাম। সেই সময়ে প্রাপ্তিসাধ্য সবচেয়ে সস্তা একটা ঘড়ি কেনার জন্য আমি প্রায় দুবছর ধরে আমার ছয়পেনি জমিয়েছিলাম। কিন্তু আমার দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট ভাই রে বাবার কাছে কখনো ছয়পেনির একটা মুদ্রা নয় কিন্তু সবসময়ই দুটো তিনপেনি (তিন পেনি মূল্যের দুটো মুদ্রা) চাইত। একদিন সে দুটো মুদ্রার জন্য এতই জেদ করেছিল যে, বাবা রেগে গিয়েছিলেন। রে কাঁদতে শুরু করেছিল এবং বলেছিল যে, যিহোবা এবং তার মধ্যে এক গোপন বিষয়ের কারণে তার দুটো তিনপেনি দরকার। শেষে রে বুঝিয়ে বলেছিল: “একটা তিনপেনি মুদ্রা দানবাক্সে ফেলার জন্য আর আরেকটা আমার নিজের জন্য।” মা আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন, বাবা সঙ্গে সঙ্গে পেনি ভাঙানোর ব্যবস্থা করেছিলেন আর আমি রাজ্যের কাজে আর্থিকভাবে সাহায্য করার গুরুত্ব সম্বন্ধে শিখেছিলাম।

এই সময়ে, বাবা যেখানে রাজ্য ঘোষণাকারীদের বেশি প্রয়োজন সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ১৯৪৯ সালে, তিনি তার খামার এবং বালি ও পাথরের খনিটা বিক্রি করে অগ্রগামীর কাজ শুরু করেন আর যিহোবার সাক্ষিদের একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে সেবা করে চলেন। আমি ১৯৫০ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর যিহোবার কাছে আমার উৎসর্গীকরণের প্রতীকস্বরূপ বাপ্তিস্ম নিই। সেই সময় থেকে আমাদের স্কুলের গ্রীষ্মের ছুটিগুলোতে, আমি অবকাশ (এখন সহায়ক) অগ্রগামী হিসেবে কাজ শুরু করি এবং মাসে ১০০ ঘন্টা পরিচর্যায় ব্যয় করি। কিন্তু, সেটা কেবল একটা শুরু ছিল। বিশুদ্ধ উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তখনও আরও কিছু করার জন্য শীঘ্রই আমার হৃদয়ে এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে।

আমার একজন মিশনারি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা

১৯৫১ সালে, বাবাকে নর্থ ডিভানের বিডাফার্ডে কার্যভার দেওয়া হয়। আমরা সেখানে পৌঁছানোর অল্পদিন পরেই, যে-মিশনারিটি আফ্রিকায় সেবা করছিলেন তিনি আমাদের মণ্ডলী পরিদর্শন করতে আসেন, যেমন শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর, আমার একজন মিশনারি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার সমস্ত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমার লক্ষ্য সম্বন্ধে জানত আর তাই তারা আমাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য সবরকম চেষ্টা করে, এই আশা করে যে, আমি জাগতিক কোনো পেশা অনুধাবন করব। কিন্তু আমার স্কুলের শেষ দিনে, আমি যখন ধন্যবাদ ও বিদায় জানানোর জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্টাফ রুমে যাই, তখন তাদের একজন বলেন: “তোমাকে অভিনন্দন! তুমিই একমাত্র ছাত্রী যার জীবনে প্রকৃতপক্ষে একটা লক্ষ্য রয়েছে। তুমি যেন তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারো, আমরা সেই কামনাই করি।”

সময় নষ্ট না করে, আমি একটা পার্টটাইমের চাকরি খুঁজে নিই আর ১৯৫৫ সালের ১লা ডিসেম্বরে একজন নিয়মিত অগ্রগামী হই। পরে, মা ও আমার ভাইয়েরাও অগ্রগামী হয়। তাই বেশ কয়েক বছর ধরে, পরিবারের সকলে পূর্ণসময়ের পরিচারক ছিল।

আয়ার্ল্যান্ডে

এক বছর পর, আমি আয়ার্ল্যান্ডে সেবা করার এক আমন্ত্রণ পাই। এটা ছিল আমার একজন মিশনারি হয়ে ওঠার লক্ষ্যে পৌঁছানোর এক পদক্ষেপ। ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, অন্য দুজন অল্পবয়স্ক অগ্রগামী জুন ন্যাপিয়ার এবং বেরিল বার্কারের সঙ্গে আমি দক্ষিণ আয়ার্ল্যান্ডের কর্কে এসে পৌঁছাই।

আয়ার্ল্যান্ডে ক্ষেত্রের পরিচর্যা কঠিন ছিল। সেখানে রোমান ক্যাথলিক গির্জার কাছ থেকে অনেক বিরোধিতা আসত। আমাদের যদি কোনো আ্যপার্টমেন্ট বিল্ডিং অথবা দোকানপাট সমন্বিত আবাসন থেকে তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে আসতে হয়, সেই কথা ভেবে আমরা আগে থেকে সেখান থেকে পালিয়ে আসার পথটা জেনে নিতাম। আমরা একটু দূরে আমাদের সাইকেলগুলোকে লুকিয়ে রাখতাম কিন্তু প্রায় সময়ই দেখা যেত কেউ একজন সেগুলোকে খুঁজে বের করে টায়ার কেটে দিত অথবা হাওয়া বের করে দিত।

একবার, বেরিল ও আমি যখন দোকানপাট সমন্বিত এক আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছিলাম, তখন এক দল বাচ্চা আমাদের অপমান করার জন্য চিৎকার করতে এবং আমাদের দিকে পাথর ছুড়তে শুরু করে। তাই আমরা একজনের বাড়ি সংলগ্ন একটা দোকানে ঢুকে পড়ি, যেখানে দুধ বিক্রি করা হতো। এক উচ্ছৃঙ্খল জনতা বাইরে জড়ো হতে শুরু করে। যেহেতু বেরিল দুধ খেতে ভালবাসে, তাই সে খুব আস্তে আস্তে দুই-তিন গ্লাস দুধ খায়, এই আশা করে যে, জনতা চলে যাবে। কিন্তু তারা চলে যায়নি। এরপর, একজন যুবক যাজক সেই দোকানে ঢোকেন। যেহেতু তিনি মনে করেছিলেন যে, আমরা বেড়াতে এসেছি, তাই তিনি বলেন যে, তিনি আমাদেরকে চারদিক ঘুরিয়ে দেখাতে চান। কিন্তু, প্রথমে তিনি আমাদেরকে বাড়ির আরেকটা ঘরে নিয়ে যান আর আমরা যখন সেখানে চুপচাপ বসে থাকি, তখন তিনি মৃত্যুশয্যায় থাকা একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির অন্তিম লেপন দেন। এরপর আমরা যাজকের সঙ্গে সেই বাড়ি থেকে চলে যাই। তার সঙ্গে আমাদেরকে কথাবার্তা বলতে দেখে, জনতা চলে যায়।

গিলিয়েডে

১৯৫৮ সালে, নিউ ইয়র্কে ঈশ্বরের ইচ্ছা শিরোনামের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল। বাবা যাচ্ছিলেন আর আমিও যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার যাওয়ার পয়সা ছিল না। এরপর, হঠাৎ করে আমার ঠাকুরমা মারা যান আর তিনি আমার জন্য ১০০ পাউন্ড (২৮০ মার্কিন ডলার) রেখে যান। সম্মেলনে যাওয়া-আসার খরচ ছিল ৯৬ পাউন্ড, তাই আমি দেরি না করে প্লেনের টিকিট কাটি।

এর অল্পদিন পরেই, ব্রিটেনের যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিস থেকে একজন প্রতিনিধি আমাদের পরিদর্শন করতে আসেন এবং তিনি সেইসব বিশেষ অগ্রগামীকে ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অভ্‌ গিলিয়েডে মিশনারি প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে আমন্ত্রণ জানান, যারা সম্মেলনে যাচ্ছিল। আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না! আমাকে ছাড়া প্রত্যেককেই তিনি আবেদনপত্র দেন। সেই সময় আমার গিলিয়েডে যাওয়ার বয়স হয়নি। আমি ইতিমধ্যেই নিজের দেশ ছেড়ে প্রকৃতপক্ষে মিশনারি কার্যভারে রয়েছি তা ব্যাখ্যা করে, আমাকেও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলি। আমার দৃঢ়সংকল্প দেখে, তিনি আমাকে একটা আবেদনপত্র দেন। আমাকে যাতে গ্রহণ করা হয় তার জন্য আমি কতই না প্রার্থনা করেছিলাম! সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এসেছিল আর আমাকে গিলিয়েডে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

আমি খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম যে, ১৪টা দেশ থেকে আরও ৮১ জন অগ্রগামীর সঙ্গে আমাকে ৩৩তম গিলিয়েড ক্লাসের জন্য ডাকা হয়েছিল। পাঁচ মাসের কোর্স দ্রুত কেটে যায়। কোর্সের শেষের দিকে, ভাই নেথেন এইচ. নর আমাদের উদ্দেশে চার ঘন্টার একটা প্রেরণাদায়ক বক্তৃতা দেন। যারা অবিবাহিত থাকতে পারে তাদেরকে তিনি অবিবাহিত থাকার জন্য উৎসাহিত করেন। (১ করিন্থীয় ৭:৩৭, ৩৮) কিন্তু আমাদের মধ্যে যারা ভবিষ্যতে বিয়ে করতে চায়, তিনি তাদের পরামর্শ দেন যে, উপযুক্ত বিবাহ সাথির জন্য আমরা যেন আমাদের ব্যক্তিগত চাহিদাগুলোর একটা তালিকা বানাই। এরপর, কোনো ভাবী সাথি পাওয়া গেলে আমরা সেই চাহিদাগুলোর আলোকে ব্যক্তিটিকে পরীক্ষা করতে পারব।

একজন ভাবী স্বামীর জন্য আমার ব্যক্তিগত চাহিদাগুলোর তালিকায় নীচের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত: তাকে একজন সহমিশনারি হতে হবে এবং তিনি যিহোবাকে ভালবাসবেন, বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে তিনি আমার চেয়ে আরও বেশি জানবেন, পূর্ণসময়ের পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য হর্‌মাগিদনের আগে সন্তান চাওয়া পরিত্যাগ করতে ইচ্ছুক থাকবেন, সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারবেন এবং আমার চেয়ে বয়সে বড় হবেন। আমার মতো ২০ বছর বয়সি এক মেয়ে যে দূরবর্তী এক দেশে কার্যভার পেতে চলেছে, তার জন্য এই তালিকা খুবই সাহায্যে এসেছিল।

ব্রাজিলে

১৯৫৯ সালের ২রা আগস্ট, রবিবার আমরা গ্র্যাজুয়েট হই আর আমাদের কার্যভার সম্বন্ধে আমাদেরকে জানানো হয়। ভিহিনুশ ইয়াজেদজিয়েন, সারা গ্রেকো, রে এবং ইঙ্গার হ্যাটফিল্ড, সোনিয়া স্প্রিংগেট, ডরিন হাইঞ্জ এবং আমাকে ব্রাজিলে কার্যভার দেওয়া হয়। আমরা রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। আমি বনজঙ্গল, সাপ, রবার গাছ এবং স্থানীয় আদিবাসীদের কথা কল্পনা করেছিলাম। কিন্তু আমি যখন পৌঁছাই, তখন কতই না অবাক হই! আমাজনের বৃষ্টিবহুল অরণ্যাঞ্চলের পরিবর্তে, আমি রোদ-ঝলমল ও আধুনিক এক শহর, রিও ডি জেনিরোতে এসে পৌঁছাই, যেটা সেই সময়ে দেশের রাজধানী ছিল।

আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল পর্তুগিজ ভাষা শেখা। প্রথম মাসে, আমরা প্রতিদিন ১১ ঘন্টা করে অধ্যয়ন করতাম। রিওতে প্রচার করার এবং সেখানে যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে কিছুদিন থাকার পর, আমাকে সাও পাওলো রাজ্যের পিরাসিকাবায় এক মিশনারি হোমে এবং পরে রিও-গ্রাণ্ডি ডো-সুল রাজ্যের পোর্টো আ্যলেগ্রের এক মিশনারি হোমে পাঠানো হয়।

তারপর, ১৯৬৩ সালের প্রথম দিকে, আমি শাখা অফিসের অনুবাদ বিভাগে কাজ করার আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। ফ্লরিয়ানু ইগনেজ ডা কোনসেসাউ এই বিভাগ দেখাশোনা করতেন, যিনি আমাদের আমরা যখন প্রথম এসেছিলাম, তখন পর্তুগিজ শিখিয়েছিলেন। তিনি ১৯৪৪ সালে সত্য শিখেছিলেন, যখন ব্রাজিলে মাত্র ৩০০-র মতো সাক্ষি ছিল আর তিনি ২২তম গিলিয়েড ক্লাসে যোগদান করেছিলেন। কয়েক মাস পর, একদিন ভাই কোনসেসাউ আমার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন বলে আমাকে দুপুরের খাওয়ার ঘন্টা বাজার সময় অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। প্রথমে, আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। আমি কি কিছু ভুল করেছি? শেষে যখন খাওয়ার ঘন্টা বাজে, তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তিনি আমাকে কী বলতে চান। উত্তরে, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?” আমি বিস্ময়ে কথা হারিয়ে ফেলেছিলাম। বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার জন্য আমি সময় চেয়েছিলাম এবং তাড়াহুড়ো করে দুপুরের খাবার খেতে চলে গিয়েছিলাম।

ফ্লরিয়ানুই প্রথম ভাই নন, যিনি আমার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সেই মুহূর্ত পর্যন্ত, উপযুক্ত বিবাহ সাথির জন্য আমার ব্যক্তিগত চাহিদাগুলো কেউই পূরণ করতে পারেনি। আমি বিশ্বাস করি যে, আমার তালিকা আমাকে ভুল সিদ্ধান্ত এড়াতে সাহায্য করেছে। এই সময়, বিষয়টা অন্যরকম ছিল। ফ্লরিয়ানু আমার সমস্ত চাহিদাই পূরণ করেছেন! তাই ১৯৬৫ সালের ১৫ই মে আমরা বিয়ে করি।

অসুস্থতার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়া

বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, ফ্লরিয়ানু ও আমার কাছে বিবাহিত জীবন এক সুখের অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মধ্যে একটা ছিল ফ্লরিয়ানুর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা, যা আমাদের বিয়ের অল্পদিন আগেই শুরু হয়েছিল। কয়েক বছর আগে, তার বাঁদিকের ফুসফুসটা একেবারে কাজ করছিল না আর এর ফলে তাকে তখন অনেক কষ্টভোগ করতে হয়েছে। ফলস্বরূপ, আমরা বেথেল ছেড়ে চলে যাই এবং আমাদেরকে রিও ডি জেনিরো রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলের টেরেজপুলিস শহরে বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে কার্যভার দেওয়া হয়। আমরা আশা করেছিলাম যে, সেখানকার আবহাওয়া তাকে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

তার ওপর ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা খবর পাই যে, আমার মা ক্যান্সারে গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আমাদের মধ্যে নিয়মিতভাবে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ ছিল কিন্তু সাত বছর ধরে আমি মাকে দেখিনি। তাই ইংল্যান্ডে তাকে দেখতে যাওয়ার জন্য তিনি আমাদের খরচ দেন। মায়ের অস্ত্রোপচার করা হয় কিন্তু ডাক্তাররা ক্যান্সার আক্রান্ত অংশগুলোকে বাদ দিতে অসমর্থ হয়। যদিও তিনি শয্যাশায়ী ও খুবই অসুস্থ ছিলেন, তবুও তিনি প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার তার আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে রেখেছিলেন। তিনি তার শোবার ঘরে একটা টাইপরাইটার রেখেছিলেন যাতে তিনি কাউকে দিয়ে তার বলা চিঠিগুলো টাইপ করাতে পারেন। এ ছাড়া, যারা তাকে দেখতে আসত তাদের কাছেও তিনি সংক্ষেপে সাক্ষ্যদান করতেন। ১৯৬৬ সালের ২৭শে নভেম্বর তিনি মারা যান। সেই মাসে তিনি দশ ঘন্টা ক্ষেত্রের পরিচর্যার রিপোর্ট করেন! ১৯৭৯ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত বাবা বিশ্বস্তভাবে অগ্রগামীর কাজ করে গিয়েছিলেন।

মায়ের মৃত্যুর পর ফ্লরিয়ানু ও আমি ব্রাজিলে ফিরে যাই, যেখানে আমরা তখন থেকেই রিও ডি জেনিরো রাজ্যে সেবা করে এসেছি। প্রথমে আমাদের সেই রাজ্যের রাজধানীতে সীমার কাজের কার্যভার দেওয়া হয় কিন্তু এই আনন্দ ক্ষণস্থায়ী ছিল কারণ ফ্লরিয়ানু আবারও খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর আমরা বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে টেরেজপুলিসে ফিরে যাই।

১৯৭৪ সালে, বেশ কয়েক বছর ধরে কষ্টদায়ক চিকিৎসার পর, ডাক্তাররা শেষে ফ্লরিয়ানুর বাঁদিকের ফুসফুসটা কেটে বাদ দিয়ে দেয়। সেই সময়ে, তিনি পরিচালক অধ্যক্ষ অথবা একজন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করতে অসমর্থ হন কিন্তু হাসপাতালে রোগী দেখার সময়গুলোতে তিনি বাইবেল অধ্যয়নগুলো পরিচালনা করতে সমর্থ ছিলেন—এগুলোর মধ্যে একটা ছিল একজন আমেরিকান অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি ববের সঙ্গে ইংরেজিতে অধ্যয়ন পরিচালনা করা। বব সত্য গ্রহণ করেন এবং পরে বাপ্তিস্ম নেন। ফ্লরিয়ানু ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং তখন থেকে একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে আসছেন।

যিহোবা আমার পরিচর্যাকে আশীর্বাদ করেছেন

বছরের পর বছর ধরে, আমি একজন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে এসেছি আর যিহোবা আমার পরিচর্যাকে আশীর্বাদ করেছেন। টেরেজপুলিসে, ৬০ জনেরও বেশি লোককে যিহোবার কাছে তাদের জীবন উৎসর্গ করতে সাহায্য করার অপূর্ব সুযোগ আমার হয়েছে। তাদের মধ্যে ছিলেন জুপিরা নামে একজন মহিলা, যাকে আমি লিখতে ও পড়তেও শিখিয়েছিলাম। পরে, আমি তার আটজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ের সঙ্গে অধ্যয়ন করেছিলাম। এর ফলে, আজকে জুপিরা ও তার ২০ জনেরও বেশি আত্মীয় সক্রিয়ভাবে যিহোবার সেবা করছে। একজন প্রাচীন, তিনজন পরিচারক দাস এবং দুজন অগ্রগামী।

লোকেদের সত্য শেখার সম্ভাবনা সম্বন্ধে আমি এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে শিখেছি। একবার, আলজেমিরা নামে একজন যুবতী স্ত্রীর সঙ্গে আমি বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করছিলাম, যখন তার স্বামী আন্তনিয়ু এই বলে আমাকে ভয় দেখান যে, আমি যদি সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাড়ি থেকে চলে না যাই, তা হলে তিনি আমার দিকে দুটো বড় কুকুর লেলিয়ে দেবেন। এরপর, প্রায় সাত বছর পর্যন্ত, আলজেমিরার সঙ্গে আমার কেবল মাঝেমধ্যে যোগাযোগ হয়েছিল, যখন আমি তার সঙ্গে আবারও অধ্যয়ন করার জন্য আন্তনিয়ুর অনুমতি আদায় করতে পেরেছিলাম।। তখনও, আন্তনিয়ু আমাকে তার কাছে বাইবেল সম্বন্ধে কথা বলতে মানা করেছিলেন। কিন্তু এক বর্ষণমুখর দিনে, আমি আন্তনিয়ুকে অধ্যয়নে বসতে বলেছিলাম। তখন আমি জানতে পেরেছিলাম যে, তার সমস্যাটা ছিল যে, তিনি আসলে নিরক্ষর ছিলেন। সেই সময় থেকে, ফ্লরিয়ানু ও অন্যেরা তার সঙ্গে অধ্যয়ন করে এবং তাকে লিখতে ও পড়তে শেখায়। আজকে আলজেমিরা ও আন্তনিয়ু উভয়েই বাপ্তাইজিত সাক্ষি। তিনি মণ্ডলীতে অনেক ভাবে সাহায্য করেন এবং পরিচর্যায় অনেক অল্পবয়স্কের সঙ্গে একত্রে কাজ করছেন।

অনেক অভিজ্ঞতার মধ্যে এগুলো হচ্ছে মাত্র কয়েকটা, যেগুলো আমরা টেরেজপুলিসে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেবা করার সময় লাভ করেছি। ১৯৮৮ সালের প্রথম দিকে, আমরা নিটোরোই শহরে এক নতুন কার্যভার পাই, যেখানে আমরা সান্টু আলেশুতে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত পাঁচ বছর ধরে সেবা করেছি। এরপর রাজ্যের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জাপুইবা মণ্ডলীতে আমরা চলে যাই এবং রিবেরা মণ্ডলী স্থাপন করার বিশেষ সুযোগ আমাদের হয়।

এক সাধাসিধে অথচ পুরস্কারদায়ক জীবন

বছরের পর বছর ধরে ফ্লরিয়ানু ও আমার, ৩০০ জনেরও বেশি লোককে যিহোবার কাছে তাদের জীবন উৎসর্গ করতে সাহায্য করার বিশেষ সুযোগ হয়েছে। বর্তমানে, তাদের কয়েকজন শাখা অফিসে সেবা করছে এবং কয়েকজন অগ্রগামী, প্রাচীন এবং পরিচারক দাস। আমি কতই না কৃতজ্ঞ যে, ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মার দ্বারা আমাকে এত লোককে সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করেছেন!—মার্ক ১০:২৯, ৩০.

এটা ঠিক যে, ফ্লরিয়ানুকে গুরুতর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছে। তার এইরকম অবস্থা সত্ত্বেও, তিনি অটল, আনন্দিত রয়েছেন এবং যিহোবার ওপর আস্থা বজায় রেখেছেন। তিনি প্রায়ই বলেন: “আজ এক সমস্যামুক্ত জীবনযাপন করার মাধ্যমে সুখ আসে না। আমাদের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য যিহোবার সাহায্য পাওয়া থেকে তা আসে।”—গীতসংহিতা ৩৪:১৯.

২০০৩ সালে, আমার বাঁ চোখে ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমার অস্ত্রোপচার করা হয় আর আমার চোখে একটা কৃত্রিম চোখ বসানো হয়, যেটাকে দিনে অনেক বার পরিষ্কার করতে হয়। তা সত্ত্বেও, একজন বিশেষ অগ্রগামী হিসেবে যিহোবাকে সেবা করে চলার জন্য শক্তি দিয়ে তিনি আমাকে আশীর্বাদ করেছেন।

বস্তুগত বিষয়গুলোর ব্যাপারে, আমি এক সাধাসিধে জীবনযাপন করেছি। কিন্তু, যিহোবা আমার কার্যভারে আমাকে আশীর্বাদ করেছেন এবং আমাকে আধ্যাত্মিকভাবে ধনী করেছেন। আফ্রিকায় প্রচার কাজ সম্বন্ধে সেই মিশনারি বোনের মন্তব্য ব্রাজিলে আমাদের কার্যভারের ক্ষেত্রে এক উপযুক্ত বর্ণনা বলে প্রমাণিত হয়েছে। বস্তুতপক্ষে, আমার একজন মিশনারি হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে যিহোবা প্রচুররূপে পুরস্কৃত করেছেন!

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫৩ সালে আমার পরিবারের সঙ্গে

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫৭ সালে আয়ার্ল্যান্ডে সাক্ষ্য দিচ্ছি

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

১৯৫৯ সালে ব্রাজিলে সহমিশনারিদের সঙ্গে। বাঁদিক থেকে ডানদিকে, আমি, ইঙ্গার হ্যাটফিল্ড, ডরিন হাইঞ্জ এবং সোনিয়া স্প্রিংগেট

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার স্বামীর সঙ্গে