সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“বিশেষজ্ঞদের” উত্থান-পতন

“বিশেষজ্ঞদের” উত্থান-পতন

“বিশেষজ্ঞদের” উত্থান-পতন

 আজকের জগতে যে-লোকেদের কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, তারা যেটাকে ইন্টারনেট বলা হয় সেখানে বাবামাদের জন্য উপদেশ খুঁজে দেখতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়বস্তুর ওপরে ২ কোটি ৬০ লক্ষেরও বেশি তথ্য পেতে পারে। প্রতিটা তথ্য দেখার ও পড়ার জন্য আপনি যদি কেবল এক মিনিট করে সময় নেন, তা হলে এমনকি আপনি তা পড়ে শেষ করার আগেই আপনার সন্তান বড় হয়ে উঠবে এবং বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।

শিশু বিশেষজ্ঞ, শিশু মনোবিজ্ঞানী এবং ইন্টারনেটের যুগ আসার আগে উপদেশের জন্য বাবামারা কোথায় যেত? সাধারণত, তারা তাদের যৌথ পরিবারের ওপর নির্ভর করত। মা, বাবা, মাসি-পিসি এবং মামা-কাকারা নির্দেশনা দেওয়ার, আর্থিক সাহায্য জোগানোর ও বাচ্চার দেখাশোনা করার জন্য তৈরি ও সমর্থ ছিল। কিন্তু, অনেক দেশে এক বিরাট সংখ্যক জনসংখ্যা গ্রাম থেকে শহুরে জীবনে প্রবেশ করায় এই ধরনের দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন বলতে গেলে প্রায় ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। আজকে প্রায় সময়ই সন্তান প্রতিপালন করার কঠিন কাজটা বাবামাকে একাই সামলাতে হয়।

নিঃসন্দেহে এটা হল একটা কারণ, যেজন্য আধুনিক শিশু-তত্ত্বাবধায়ক শিল্প এত দ্রুত গড়ে উঠেছে। আরেকটা কারণ হল বিজ্ঞানের ওপর অগাধ বিশ্বাস। ১৮০০ সালের শেষের দিকে আমেরিকার লোকেরা ইতিমধ্যেই দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে উঠেছিল যে, বিজ্ঞান মানুষের জীবনের প্রতিটা দিককে উন্নত করতে পারে। তা হলে, সন্তান লালনপালন করার ক্ষেত্রে পারবে না কেন? তাই, ১৮৯৯ সালে আ্যমেরিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস অভ্‌ মাদারস্‌ যখন জনসমক্ষে “বাবামাদের অযোগ্যতা” সম্বন্ধে দুঃখ করে বলেছিল, তখন অনেক “বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞর” আবির্ভাব হয়েছিল। তারা সংগ্রামরত বাবামাকে উপায় খুঁজে বের করতে সাহায্য করার প্রতিজ্ঞা করেছিল।

বইয়ের সাহায্যে সন্তান প্রতিপালন করা

কিন্তু, এই বিশেষজ্ঞরা কী সম্পাদন করেছে? বিগত বছরগুলোর চেয়ে আজকে কি বাবামারা সন্তান মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে কম উদ্বিগ্ন এবং আরও বেশি সুসজ্জিত? ব্রিটেনের একটা সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, না। এটা দেখায় যে, ছোট ছেলেমেয়ে রয়েছে এমন প্রায় ৩৫ শতাংশ বাবামা এখনও এমন উপদেশ খুঁজছে, যেটার ওপর তারা নির্ভর করতে পারে। অন্যেরা মনে করে যে, নিজেদের সহজাত প্রবণতা অনুযায়ী চলা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।

আমেরিকায় সন্তান মানুষ করে তোলা: সন্তান সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ, বাবামা এবং এক শতাব্দীর উপদেশ (ইংরেজি) নামক তার বইয়ে আ্যন হলবার্ট সন্তান লালনপালন করা সম্বন্ধীয় পেশাদারি বইগুলোর ইতিহাস পর্যালোচনা করেন। হলবার্ট, যিনি নিজে দুই সন্তানের মা, তিনি উল্লেখ করেন যে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মাত্র কয়েক জনের তথ্য সুপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আসলে, তাদের উপদেশ কোনো বাস্তবধর্মী তথ্যের চেয়ে বরং নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতার দ্বারাই বেশি প্রভাবিত হয়েছে বলে মনে হয়। অতীত পর্যালোচনা করে মনে হয় যে, তারা যা লিখেছে সেগুলোর বেশির ভাগই খেয়ালিপনা, পরস্পরবিরোধী এবং কখনো কখনো পুরোপুরি উদ্ভট।

তাই, আজকে বাবামারা কোন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে? খোলাখুলিভাবে বললে, আগের চেয়ে এখন আরও বেশি উপদেশ, মতামত এবং মতবিরোধের মুখোমুখি হওয়ায় অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু, সব বাবামাই মনে করে না যে, তারা ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। সারা পৃথিবীর বাবামারা প্রজ্ঞার এক প্রাচীন উৎস থেকে উপকার লাভ করছে, যা এখনও নির্ভরযোগ্য উপদেশের উৎস বলে প্রমাণিত হচ্ছে, যা পরের প্রবন্ধে দেখা যাবে।